পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি নতুন কোন বিষয় নয়। এটা ওপেনসিক্রেট যে, সড়ক-মহাসড়কে পরিবহন নামাতে ও চালাতে হলে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদাবাজির মূলে আছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। তাদের বিভিন্ন সংগঠনের নামে রীতিমতো রশিদ কেটে চাঁদা আদায় করা হয়। বিভিন্ন পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতি, রাজনৈতিক দল বা সংগঠন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন পরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে স্থায়ী রূপ দিয়েছে।
পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি নিয়ে প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন সংগঠন চাঁদাবাজির তথ্য জানায়। সম্প্র্রতি যাত্রী কল্যাণ সমিতি নামে একটি সংগঠন জানিয়েছে, পরিবহন খাত থেকে প্রতি মাসে ৩০০ কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয়। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিবহন খাতে বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয়। আর হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, শুধু মহাসড়কে চলাচলকারী ৫৮ হাজার ৭১৯টি যানবাহন থেকে বছরে ৮৭ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হচ্ছে।
পরিবহনখাতে চাঁদাবাজির শুরু হয় সড়কে গাড়ি নামানোর আগেই। জানা গেছে, ঢাকাসহ সারা দেশে বাস নামানোর আগেই মালিক সমিতির সদস্য পদ নিতে হয়। এর জন্য দুই থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এরপর দৈনিক মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নামে এবং বাস-মিনিবাস নির্দিষ্ট পথে নামানোর জন্য মালিক সমিতিকে চাঁদা দিতে হয়। তাছাড়া রাজধানী ও এর আশপাশে কোম্পানির অধীনে বাস চালাতে দৈনিক ওয়েবিল বা গেট পাস (জিপি) হিসেবেও চাঁদা দিতে হয়। আর পণ্যবাহী পরিবহনের বিভিন্ন স্তরে এবং জায়গায় চাঁদা তো রয়েছেই।
সড়কে বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি। আর সড়কে প্রাণহানির জন্য দায়ী চালকের বেপরোয়া গতি। যারা চাঁদা দেয় তারা সড়কের আইনকানুন কিছুই মানে না, যারা চাঁদা নেয় তারা আইন বাস্তবায়ন হতে দেয় না। বরং আইনকে কীভাবে দুর্বল করা যায় সেই ফন্দিফিকির করে।
শেষ পর্যন্ত এই চাঁদাবাজির মাশুল দিতে হয় যাত্রী সাধারণকেই। তবে এর বিনিময়ে যাত্রীসাধারণ ন্যূনতম সেবা পায় না। বরং পদে পদে মালিক-শ্রমিকের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হতে হয় তাদের। সারা দেশে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির কারণে বাসের ভাড়া ও পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যায়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখিও হয় বিস্তর, কিন্তু সরকারের চাঁদাবাজি বন্ধ করার কার্যকর কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না। বরং সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব করা হয় বলে অভিযোগ মেলে।
পরিবহন খাতে শতকোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়, বিভিন্ন সংগঠনের রশিদ দিয়ে এসব টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু এই টাকা দিয়ে কখনো কোন শ্রমিকের কল্যাণ করা হয়েছে বলে জানা যায় না। বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময় কয়েক দফায় পরিবহন বন্ধ থাকায় চরম বিপর্যয়ে পড়ে শ্রমিকরা। পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, একদিকে যেমন তাদের কোন আয় ছিল না তেমনি মালিক বা প্রশাসনও তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। চাঁদা আদায়ের টাকা দিয়ে চালক ও শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কিছু করা হলেও বোঝা যেত। বাস্তবতা হচ্ছে এই চাঁদাবাজির মাধ্যমে একটি শ্রেণি তাদের নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে।
পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। কারা চাঁদাবাজি করে সেটা প্রশাসনের অজানা নয়। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে এর বিরুদ্ধে কার্যকার কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। বরং খোদ প্রশাসনের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। চাঁদাবাজির এই দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে। এছাড়া পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়।
বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি নতুন কোন বিষয় নয়। এটা ওপেনসিক্রেট যে, সড়ক-মহাসড়কে পরিবহন নামাতে ও চালাতে হলে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদাবাজির মূলে আছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। তাদের বিভিন্ন সংগঠনের নামে রীতিমতো রশিদ কেটে চাঁদা আদায় করা হয়। বিভিন্ন পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতি, রাজনৈতিক দল বা সংগঠন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন পরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে স্থায়ী রূপ দিয়েছে।
পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি নিয়ে প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন সংগঠন চাঁদাবাজির তথ্য জানায়। সম্প্র্রতি যাত্রী কল্যাণ সমিতি নামে একটি সংগঠন জানিয়েছে, পরিবহন খাত থেকে প্রতি মাসে ৩০০ কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয়। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিবহন খাতে বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয়। আর হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, শুধু মহাসড়কে চলাচলকারী ৫৮ হাজার ৭১৯টি যানবাহন থেকে বছরে ৮৭ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হচ্ছে।
পরিবহনখাতে চাঁদাবাজির শুরু হয় সড়কে গাড়ি নামানোর আগেই। জানা গেছে, ঢাকাসহ সারা দেশে বাস নামানোর আগেই মালিক সমিতির সদস্য পদ নিতে হয়। এর জন্য দুই থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এরপর দৈনিক মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নামে এবং বাস-মিনিবাস নির্দিষ্ট পথে নামানোর জন্য মালিক সমিতিকে চাঁদা দিতে হয়। তাছাড়া রাজধানী ও এর আশপাশে কোম্পানির অধীনে বাস চালাতে দৈনিক ওয়েবিল বা গেট পাস (জিপি) হিসেবেও চাঁদা দিতে হয়। আর পণ্যবাহী পরিবহনের বিভিন্ন স্তরে এবং জায়গায় চাঁদা তো রয়েছেই।
সড়কে বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি। আর সড়কে প্রাণহানির জন্য দায়ী চালকের বেপরোয়া গতি। যারা চাঁদা দেয় তারা সড়কের আইনকানুন কিছুই মানে না, যারা চাঁদা নেয় তারা আইন বাস্তবায়ন হতে দেয় না। বরং আইনকে কীভাবে দুর্বল করা যায় সেই ফন্দিফিকির করে।
শেষ পর্যন্ত এই চাঁদাবাজির মাশুল দিতে হয় যাত্রী সাধারণকেই। তবে এর বিনিময়ে যাত্রীসাধারণ ন্যূনতম সেবা পায় না। বরং পদে পদে মালিক-শ্রমিকের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হতে হয় তাদের। সারা দেশে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির কারণে বাসের ভাড়া ও পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যায়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখিও হয় বিস্তর, কিন্তু সরকারের চাঁদাবাজি বন্ধ করার কার্যকর কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না। বরং সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব করা হয় বলে অভিযোগ মেলে।
পরিবহন খাতে শতকোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়, বিভিন্ন সংগঠনের রশিদ দিয়ে এসব টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু এই টাকা দিয়ে কখনো কোন শ্রমিকের কল্যাণ করা হয়েছে বলে জানা যায় না। বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময় কয়েক দফায় পরিবহন বন্ধ থাকায় চরম বিপর্যয়ে পড়ে শ্রমিকরা। পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, একদিকে যেমন তাদের কোন আয় ছিল না তেমনি মালিক বা প্রশাসনও তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। চাঁদা আদায়ের টাকা দিয়ে চালক ও শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কিছু করা হলেও বোঝা যেত। বাস্তবতা হচ্ছে এই চাঁদাবাজির মাধ্যমে একটি শ্রেণি তাদের নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে।
পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। কারা চাঁদাবাজি করে সেটা প্রশাসনের অজানা নয়। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে এর বিরুদ্ধে কার্যকার কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। বরং খোদ প্রশাসনের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। চাঁদাবাজির এই দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে। এছাড়া পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়।