বরিশালের হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীবেষ্টিত গৌরবদী ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল চরমেঘা। সেখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সমস্যা হচ্ছে, মেঘনার এই অঞ্চলটি ইলিশের অভয়াশ্রম। সেখানকার নদীর পানির গুণাগুণ ও প্রবাহ ইলিশের প্রজননের জন্য অনুকূলে। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, চর মেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হলে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হবে। এ নিয়ে গতকাল সোমবার সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত ইলিশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। মেঘনার এ অংশটি ইলিশসহ দেশের সব প্রজাতির মৎস্যসম্পদের বড় প্রজননক্ষেত্র। বরিশালের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর পর সম্প্রতি তিনি জানতে পেরেছেন এলাকাটি ইলিশসহ অন্যান্য মাছেরও প্রজননক্ষেত্র।
একটি জেলার কোথায় মাছের অভয়াশ্রম বিশেষ করে ইলিশের- সেটা ডিসি জানেন না কেন, সেই প্রশ্ন আমরা করতে চাই। ইলিশসহ অন্য মাছ প্রজননের জন্য নদীর নির্জন এলাকা প্রয়োজন। আর চরমেঘাসংলগ্ন মেঘনা তেমনই একটি নির্জন নদী। এ কারণে শুধু ইলিশ নয়, ক্যাটফিস প্রজাতির পাঙ্গাস, আইড়, বোয়াল মাছেরও বড় প্রজননক্ষেত্র এটি। এমন একটা গুরত্বপূর্ণ অঞ্চল সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের না জানার কথা নয়। এর আগে ২০১৭ সালে পরমাণু শক্তি কমিশন এখানে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু মৎস্য অধিদপ্তরের তীব্র আপত্তির মুখে ইলিশের অভয়াশ্রমের কথা চিন্তা করে সেখান থেকে পিছু হটে তারা। একই জায়গায় আবার কীভাবে এমন একটা পরিকল্পনা নেয়া হলো, যাতে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হয়- সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।
দেশে ইলিশের উৎপাদন একপর্যায়ে উদ্বেগজনক হারে কমে গিয়েছিল। বহু সাধ্য-সাধনার পরে এ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে নাগরিকদেরও অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করতে হয়েছে। বিশেষ করে, জেলে সম্প্রদায়ের ত্যাগের কথা উল্লেখ করার মতো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হলে শুধু ইলিশ নয়, মেঘনার জীববৈচিত্র্যই হুমকির মুখে পড়বে। সেখানে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানার প্রয়োজনে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের নৌযান আসা-যাওয়া করবে। এতে ওই অঞ্চলের নীরবতা নষ্ট হবে। কলকারখানার বর্জ্য নদীতে পড়বে, মেঘনার পানি উষ্ণ হবে। দীর্ঘমেয়াদে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে মৎস্যসম্পদের ওপর।
জানা গেছে, স্থানীয় একজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির আগ্রহে বেজা সেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা করে। আমরা বলতে চাই, যে কোন পরিকল্পনা নেয়ার আগে সেখানকার প্রাণ-প্রকৃতির কথা বিবেচনা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে হবে। চরমেঘায় এমন কিছু করা যাবে না, যার ফলে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের প্রজননস্থল ধ্বংস হয়। আমরা আশা করব, মন্ত্রণালয়ে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে তাতে সরকার সায় দেবে না।
মঙ্গলবার, ০৫ অক্টোবর ২০২১
বরিশালের হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীবেষ্টিত গৌরবদী ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল চরমেঘা। সেখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সমস্যা হচ্ছে, মেঘনার এই অঞ্চলটি ইলিশের অভয়াশ্রম। সেখানকার নদীর পানির গুণাগুণ ও প্রবাহ ইলিশের প্রজননের জন্য অনুকূলে। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, চর মেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হলে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হবে। এ নিয়ে গতকাল সোমবার সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত ইলিশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। মেঘনার এ অংশটি ইলিশসহ দেশের সব প্রজাতির মৎস্যসম্পদের বড় প্রজননক্ষেত্র। বরিশালের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর পর সম্প্রতি তিনি জানতে পেরেছেন এলাকাটি ইলিশসহ অন্যান্য মাছেরও প্রজননক্ষেত্র।
একটি জেলার কোথায় মাছের অভয়াশ্রম বিশেষ করে ইলিশের- সেটা ডিসি জানেন না কেন, সেই প্রশ্ন আমরা করতে চাই। ইলিশসহ অন্য মাছ প্রজননের জন্য নদীর নির্জন এলাকা প্রয়োজন। আর চরমেঘাসংলগ্ন মেঘনা তেমনই একটি নির্জন নদী। এ কারণে শুধু ইলিশ নয়, ক্যাটফিস প্রজাতির পাঙ্গাস, আইড়, বোয়াল মাছেরও বড় প্রজননক্ষেত্র এটি। এমন একটা গুরত্বপূর্ণ অঞ্চল সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের না জানার কথা নয়। এর আগে ২০১৭ সালে পরমাণু শক্তি কমিশন এখানে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু মৎস্য অধিদপ্তরের তীব্র আপত্তির মুখে ইলিশের অভয়াশ্রমের কথা চিন্তা করে সেখান থেকে পিছু হটে তারা। একই জায়গায় আবার কীভাবে এমন একটা পরিকল্পনা নেয়া হলো, যাতে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হয়- সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।
দেশে ইলিশের উৎপাদন একপর্যায়ে উদ্বেগজনক হারে কমে গিয়েছিল। বহু সাধ্য-সাধনার পরে এ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে নাগরিকদেরও অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করতে হয়েছে। বিশেষ করে, জেলে সম্প্রদায়ের ত্যাগের কথা উল্লেখ করার মতো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হলে শুধু ইলিশ নয়, মেঘনার জীববৈচিত্র্যই হুমকির মুখে পড়বে। সেখানে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানার প্রয়োজনে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের নৌযান আসা-যাওয়া করবে। এতে ওই অঞ্চলের নীরবতা নষ্ট হবে। কলকারখানার বর্জ্য নদীতে পড়বে, মেঘনার পানি উষ্ণ হবে। দীর্ঘমেয়াদে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে মৎস্যসম্পদের ওপর।
জানা গেছে, স্থানীয় একজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির আগ্রহে বেজা সেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা করে। আমরা বলতে চাই, যে কোন পরিকল্পনা নেয়ার আগে সেখানকার প্রাণ-প্রকৃতির কথা বিবেচনা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে হবে। চরমেঘায় এমন কিছু করা যাবে না, যার ফলে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের প্রজননস্থল ধ্বংস হয়। আমরা আশা করব, মন্ত্রণালয়ে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে তাতে সরকার সায় দেবে না।