জিয়াউদ্দীন আহমেদ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অর্ধশতাধিক শ্রমিক পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। জীবন্ত মানুষগুলো এত বীভৎভাবে পুড়েছে যে, কোন মরদেহকে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না, মরদেহ শনাক্ত করার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা স্বজনদের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা নেয়া হয়েছে। কেউ কেউ প্রাণ বাঁচাতে লাফিয়ে নিচে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। ভবনে বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট ২১ ঘণ্টা ধরে কাজ করেছে। ছয়তলা বিশিষ্ট ফ্যাক্টরি ভবনের তৃতীয় তলা থেকে গ্যাস লাইন লিকেজ কিংবা বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভবনের ফ্লোরের ভেতরে প্রবেশপথগুলো সরু ও বাঁকা; কোন কোন প্রবেশপথে আবার নেট দেয়া থাকায় শ্রমিকরা বের হতে পারেনি। এছাড়াও আগুনের লেলিহান শিখা কারখানা থেকে নির্গমনের দুটি ইমারজেন্সি দরজা পর্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় শ্রমিকরা যেখানে ছিল সেখানেই পুড়ে দগ্ধ হয়েছে, ইমারজেন্সি গেট ব্যবহার করে কেউ ছাদ, অন্য ফ্লোর বা বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগই পায়নি। ঘটনাটি হৃদয়বিদারক ও দুঃখজনক; সারাদেশের মানুষ ঘটনার ভয়াবহতা দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছে।
সেজান জুস কারখানায় আগুন নেভানো ও উদ্ধার অভিযান শুরু হয় আগুন লাগার আধঘণ্টা পর থেকে এবং ফায়ার সার্ভিসের লোকদের অভিমত হচ্ছে দ্রুততম সময়ে তারা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে পেরেছে। কিন্তু আগুনের জন্য আধঘণ্টা যে অনেক সময়। ফায়ার সার্ভিসের লোকদের এক্ষেত্রে দোষারোপ করার কোন সুযোগ নেই। কারণ চলাচলে দমকল বাহিনীর গাড়ি অগ্রাধিকার পেলেও দ্রুত দৌড়ানোর জন্য রাস্তা খালি না থাকলে এই অগ্রাধিকার ভোগ করার উপায় থাকে না। যত তড়িঘড়ি করা হোক না কেন, ফায়ার সার্ভিসের লোক আসতে একটু বিলম্ব হবেই এবং এজন্য প্রতিটি ভবনে আগুনের বিস্তৃতি রোধে নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং ক্যাপাসিটি থাকা বাঞ্ছনীয়। জুস কারখানায় মৃত্যু পথযাত্রী মানুষগুলোর হাহাকার রাস্তায় দন্ডায়মান মানুষদের বেদনার্ত করলেও তাদের উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা বা প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সংশ্লিষ্ট ভবনে অথবা দমকল বাহিনীর ছিল বলে মনে হয় না। মাটিতে বায়ুভর্তি ম্যাট্রেস দেয়া হলেও লাফ দেয়া মানুষগুলো এভাবে গুরুতর আহত হতো না।
সেজান জুসের কারখানা ভবনে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ফায়ার ফাইটিংয়ের সরঞ্জামাদি পর্যাপ্ত ছিল বলে মনে হয় না। অবশ্য থাকলেও যে কোন কাজে লাগতো তা কিন্তু নয়। কারণ বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে আগুন নেভানোর স্বয়ংক্রিয় সরঞ্জামাদি থাকা সত্ত্বেও কোন কাজে আসেনি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আগুন নেভানোর কিছু সরঞ্জাম দেয়ালে টাঙিয়ে রাখা হয়, এগুলোর ব্যবহারের কলাকৌশল ভবনবাসীদের শেখানোর কোন কার্যক্রম কোথাও নেয়া হয় বলে আমার জানা নেই। সেজান জুস ভবনে বিকল্প সিঁড়ি থাকলেও তা আগুন ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ছিল। ভবনটিতে ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম ছিল বলে মনে হয় না; ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম থাকলে ভবনে আগুন লাগার সংবাদ তাৎক্ষণিক সব কর্মী জানতে পারে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে।
আগুন লাগার পর জানা গেল জুস ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। নক্সায় রাজউকের অনুমোদনের পর ভবনটি তদনুযায়ী নির্মাণ করা হচ্ছে কি না-তা দেখার জন্য রাজউকের পরিদর্শক রয়েছে; এ ব্যাপারে রাজউককে দোষারোপ করা হলে বিএসটিআই-এর মতো বলা হবে, পর্যাপ্ত পরিদর্শক নেই। ঢাকা শহরে ভবন নির্মাণে বিচ্যুতি হয়েছে শুধু পরিদর্শকের পরিদর্শন করার কারণেই, সবার ধারণা পরিদর্শন না থাকলে এত অনিয়ম হতো না। অনেক পরিদর্শক নিজ স্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্মাণে বিচ্যুতি ঘটাতে নির্মাতাকে প্ররোচিত করে থাকতে পারে। কারণ অনুমোদন-বহির্ভূত কাজ হলেই দুর্নীতি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর সবার প্রত্যাশা ছিল রাজউক বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো মনিটর করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। বিল্ডিং কোড মেনে ভবনের নকশা এমনভাবে প্রণয়ন করতে হয় যাতে ভবনের ভেতরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকে, শব্দ চলাচল সীমিত হয়, আগুন লাগলে তার বিস্তার শ্লথ করা সম্ভব হয়, ভবনে অবস্থানরত লোকদের দ্রুততম সময়ে প্রাণহানি ছাড়া নিরাপদে ভবনের বাইরে আনার সুবন্দোবস্ত থাকে। এমন নকশার ওপর ভিত্তি করে স্ট্রাকচারাল-মেকানিক্যাল-ইলেকট্রিক্যাল এবং ফায়ার ফাইটিং ইঞ্জিনিয়াররা স্ব-স্ব ডিজাইন দাঁড় করান। ডিজাইন অনুযায়ী ভবন হলেই শুধু সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার অনুমোদিত অভিজ্ঞ প্রকৌশলী অকুপেন্সি সার্টিফিকেট ইস্যু করে থাকেন। এই প্রক্রিয়া-পদ্ধতি অনুসরণ করা না হলে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট ইস্যু করার কথা নয়; তাই ভবন নির্মাণ ও ব্যবহারের বহু বছর পর ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করার অভিযোগ তোলা অর্থহীন।
বাংলাদেশের মানুষের মানসিকতার ভিন্নতা অদ্ভুত। অপরাধী ধরা পড়ার পর জানা যায় তার বিরুদ্ধে হত্যা, রাহাজানি, ধর্ষণের অসংখ্য মামলা রয়েছে, দুর্ঘটনা ঘটার পর জানা যায় গাড়ির ফিটনেস বা ড্রাইভারের লাইসেন্স ছিল না, রোগীর মৃত্যুর পর উদ্ঘাটিত হয় চিকিৎসক ভুয়া, গ্রেপ্তার হওয়ার পর জানা যায় লোকটি দুর্নীতির মাধ্যমে অগাধ সম্পত্তির মালিক, স্থাপনা উচ্ছেদকালীন জানা যায় নদীর পাড়ে সরকারের জায়গায় ১২ তলা ভবন নির্মাণ হয়েছে, দল থেকে বহিষ্কারের পর জানা যায় বহিষ্কৃত নেতা বিরোধী দলের দালাল ও দুর্নীতিবাজ ছিল, আগুন লাগার পর জানা যায় বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। ঢাকা শহরে নাকি ৫০টি খাল ছিল, এই খালগুলো কখন কীভাবে ভরাট হয়ে গেল, এই খালের ওপর রাজউকের অনুমোদিত বাড়িঘর কীভাবে নির্মিত হলো তা কেউ জানে না। জানে না বলেই এখন সব দোষ সেজান জুস কোম্পানির মালিকের।
বাংলাদেশে আগুন লাগা বন্ধ করা যাবে না। দাহ্য পদার্থ ব্যবহারে বাংলাদেশের অধিকাংশ লোক সচেতন নয়। তাই আগুন লাগলে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর ব্যবস্থা নেয়াই উত্তম; ভবনের নকশায় ফায়ার অ্যালার্ম, ফায়ার একজিট, আগুন ও ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকলে জানমালের ক্ষতি কম হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, দু’দিন পরে সবাই সবকিছু ভুলে যাবে, আরেকটি ভবনে আগুন লেগে মানুষ মরলে আবার কয়েকদিনের জন্য সরকারি সংস্থাগুলো সক্রিয় হবে। রানা প্লাজা ধসের পর আইএলও এবং পোশাক আমদানিকারকের চাপে পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে প্রচুর কাজ করা হয়েছে, এখন অন্যান্য কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নেও অনুরূপ একটি ড্রাইভ জরুরি।
[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]
ahmedzeauddin0@gmail.com
জিয়াউদ্দীন আহমেদ
শনিবার, ১৭ জুলাই ২০২১
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অর্ধশতাধিক শ্রমিক পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। জীবন্ত মানুষগুলো এত বীভৎভাবে পুড়েছে যে, কোন মরদেহকে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না, মরদেহ শনাক্ত করার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা স্বজনদের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা নেয়া হয়েছে। কেউ কেউ প্রাণ বাঁচাতে লাফিয়ে নিচে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। ভবনে বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট ২১ ঘণ্টা ধরে কাজ করেছে। ছয়তলা বিশিষ্ট ফ্যাক্টরি ভবনের তৃতীয় তলা থেকে গ্যাস লাইন লিকেজ কিংবা বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভবনের ফ্লোরের ভেতরে প্রবেশপথগুলো সরু ও বাঁকা; কোন কোন প্রবেশপথে আবার নেট দেয়া থাকায় শ্রমিকরা বের হতে পারেনি। এছাড়াও আগুনের লেলিহান শিখা কারখানা থেকে নির্গমনের দুটি ইমারজেন্সি দরজা পর্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় শ্রমিকরা যেখানে ছিল সেখানেই পুড়ে দগ্ধ হয়েছে, ইমারজেন্সি গেট ব্যবহার করে কেউ ছাদ, অন্য ফ্লোর বা বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগই পায়নি। ঘটনাটি হৃদয়বিদারক ও দুঃখজনক; সারাদেশের মানুষ ঘটনার ভয়াবহতা দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছে।
সেজান জুস কারখানায় আগুন নেভানো ও উদ্ধার অভিযান শুরু হয় আগুন লাগার আধঘণ্টা পর থেকে এবং ফায়ার সার্ভিসের লোকদের অভিমত হচ্ছে দ্রুততম সময়ে তারা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে পেরেছে। কিন্তু আগুনের জন্য আধঘণ্টা যে অনেক সময়। ফায়ার সার্ভিসের লোকদের এক্ষেত্রে দোষারোপ করার কোন সুযোগ নেই। কারণ চলাচলে দমকল বাহিনীর গাড়ি অগ্রাধিকার পেলেও দ্রুত দৌড়ানোর জন্য রাস্তা খালি না থাকলে এই অগ্রাধিকার ভোগ করার উপায় থাকে না। যত তড়িঘড়ি করা হোক না কেন, ফায়ার সার্ভিসের লোক আসতে একটু বিলম্ব হবেই এবং এজন্য প্রতিটি ভবনে আগুনের বিস্তৃতি রোধে নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং ক্যাপাসিটি থাকা বাঞ্ছনীয়। জুস কারখানায় মৃত্যু পথযাত্রী মানুষগুলোর হাহাকার রাস্তায় দন্ডায়মান মানুষদের বেদনার্ত করলেও তাদের উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা বা প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সংশ্লিষ্ট ভবনে অথবা দমকল বাহিনীর ছিল বলে মনে হয় না। মাটিতে বায়ুভর্তি ম্যাট্রেস দেয়া হলেও লাফ দেয়া মানুষগুলো এভাবে গুরুতর আহত হতো না।
সেজান জুসের কারখানা ভবনে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ফায়ার ফাইটিংয়ের সরঞ্জামাদি পর্যাপ্ত ছিল বলে মনে হয় না। অবশ্য থাকলেও যে কোন কাজে লাগতো তা কিন্তু নয়। কারণ বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে আগুন নেভানোর স্বয়ংক্রিয় সরঞ্জামাদি থাকা সত্ত্বেও কোন কাজে আসেনি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আগুন নেভানোর কিছু সরঞ্জাম দেয়ালে টাঙিয়ে রাখা হয়, এগুলোর ব্যবহারের কলাকৌশল ভবনবাসীদের শেখানোর কোন কার্যক্রম কোথাও নেয়া হয় বলে আমার জানা নেই। সেজান জুস ভবনে বিকল্প সিঁড়ি থাকলেও তা আগুন ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ছিল। ভবনটিতে ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম ছিল বলে মনে হয় না; ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম থাকলে ভবনে আগুন লাগার সংবাদ তাৎক্ষণিক সব কর্মী জানতে পারে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে।
আগুন লাগার পর জানা গেল জুস ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। নক্সায় রাজউকের অনুমোদনের পর ভবনটি তদনুযায়ী নির্মাণ করা হচ্ছে কি না-তা দেখার জন্য রাজউকের পরিদর্শক রয়েছে; এ ব্যাপারে রাজউককে দোষারোপ করা হলে বিএসটিআই-এর মতো বলা হবে, পর্যাপ্ত পরিদর্শক নেই। ঢাকা শহরে ভবন নির্মাণে বিচ্যুতি হয়েছে শুধু পরিদর্শকের পরিদর্শন করার কারণেই, সবার ধারণা পরিদর্শন না থাকলে এত অনিয়ম হতো না। অনেক পরিদর্শক নিজ স্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্মাণে বিচ্যুতি ঘটাতে নির্মাতাকে প্ররোচিত করে থাকতে পারে। কারণ অনুমোদন-বহির্ভূত কাজ হলেই দুর্নীতি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর সবার প্রত্যাশা ছিল রাজউক বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো মনিটর করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। বিল্ডিং কোড মেনে ভবনের নকশা এমনভাবে প্রণয়ন করতে হয় যাতে ভবনের ভেতরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকে, শব্দ চলাচল সীমিত হয়, আগুন লাগলে তার বিস্তার শ্লথ করা সম্ভব হয়, ভবনে অবস্থানরত লোকদের দ্রুততম সময়ে প্রাণহানি ছাড়া নিরাপদে ভবনের বাইরে আনার সুবন্দোবস্ত থাকে। এমন নকশার ওপর ভিত্তি করে স্ট্রাকচারাল-মেকানিক্যাল-ইলেকট্রিক্যাল এবং ফায়ার ফাইটিং ইঞ্জিনিয়াররা স্ব-স্ব ডিজাইন দাঁড় করান। ডিজাইন অনুযায়ী ভবন হলেই শুধু সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার অনুমোদিত অভিজ্ঞ প্রকৌশলী অকুপেন্সি সার্টিফিকেট ইস্যু করে থাকেন। এই প্রক্রিয়া-পদ্ধতি অনুসরণ করা না হলে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট ইস্যু করার কথা নয়; তাই ভবন নির্মাণ ও ব্যবহারের বহু বছর পর ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করার অভিযোগ তোলা অর্থহীন।
বাংলাদেশের মানুষের মানসিকতার ভিন্নতা অদ্ভুত। অপরাধী ধরা পড়ার পর জানা যায় তার বিরুদ্ধে হত্যা, রাহাজানি, ধর্ষণের অসংখ্য মামলা রয়েছে, দুর্ঘটনা ঘটার পর জানা যায় গাড়ির ফিটনেস বা ড্রাইভারের লাইসেন্স ছিল না, রোগীর মৃত্যুর পর উদ্ঘাটিত হয় চিকিৎসক ভুয়া, গ্রেপ্তার হওয়ার পর জানা যায় লোকটি দুর্নীতির মাধ্যমে অগাধ সম্পত্তির মালিক, স্থাপনা উচ্ছেদকালীন জানা যায় নদীর পাড়ে সরকারের জায়গায় ১২ তলা ভবন নির্মাণ হয়েছে, দল থেকে বহিষ্কারের পর জানা যায় বহিষ্কৃত নেতা বিরোধী দলের দালাল ও দুর্নীতিবাজ ছিল, আগুন লাগার পর জানা যায় বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। ঢাকা শহরে নাকি ৫০টি খাল ছিল, এই খালগুলো কখন কীভাবে ভরাট হয়ে গেল, এই খালের ওপর রাজউকের অনুমোদিত বাড়িঘর কীভাবে নির্মিত হলো তা কেউ জানে না। জানে না বলেই এখন সব দোষ সেজান জুস কোম্পানির মালিকের।
বাংলাদেশে আগুন লাগা বন্ধ করা যাবে না। দাহ্য পদার্থ ব্যবহারে বাংলাদেশের অধিকাংশ লোক সচেতন নয়। তাই আগুন লাগলে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর ব্যবস্থা নেয়াই উত্তম; ভবনের নকশায় ফায়ার অ্যালার্ম, ফায়ার একজিট, আগুন ও ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকলে জানমালের ক্ষতি কম হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, দু’দিন পরে সবাই সবকিছু ভুলে যাবে, আরেকটি ভবনে আগুন লেগে মানুষ মরলে আবার কয়েকদিনের জন্য সরকারি সংস্থাগুলো সক্রিয় হবে। রানা প্লাজা ধসের পর আইএলও এবং পোশাক আমদানিকারকের চাপে পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে প্রচুর কাজ করা হয়েছে, এখন অন্যান্য কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নেও অনুরূপ একটি ড্রাইভ জরুরি।
[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]
ahmedzeauddin0@gmail.com