মাহমুদুল হাছান
বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে, যার দৃশ্যমান উদাহরণ হলো করোনাকালীন শিক্ষা ধারায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষায় ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাটফর্ম আবিষ্কার করা হয়েছে। বাংলা ভাষাভাষী কিশোর-কিশোরী ছাত্রছাত্রীরা বিশ্বের যে কোন স্থানে বসে অনলাইনে ‘কিশোর বাতায়ন’ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে সক্ষম। এটি তরুণদের জন্য অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করে। এর লক্ষ্য ৩৬ মিলিয়ন কিশোর-কিশোরীদের এ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা যাতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং দক্ষতা উন্নয়ন করে তারা দেশের অগ্রগতি তথা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনে অবদান রাখতে পারে। কিশোর-কিশোরীদের জ্ঞানচর্চায় আগ্রহী করে তুলতে বিভিন্ন বিষয় দিয়ে সাজানো হয়েছে ‘কিশোর বাতায়ন’। শড়হহবপঃ.বফঁ.নফ লিংকটির মাধ্যমে ওয়েবপেজটিতে প্রবেশ করতে হবে এবং যুক্ত হওয়া যাবে।
শিক্ষার্থীরা এই ওয়েবপেইজে বই পড়া থেকে শুরু করে ডাউনলোড করা, মুভি দেখা ও কনটেন্ট তৈরি করে আপলোড করাসহ দৈনন্দিন জীবনের নানা সমস্যাকে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান দিয়ে বিশ্লেষণ করা ও হাতেকলমে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাই শুধু ওয়েবপেজটিতে যুক্ত হতে পারবে। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীরা কানেক্টের সদস্য হতে পারে। বর্তমানে এই পোর্টালে ৩৫,০০,০০০ জন শিক্ষার্থী ব্যবহারকারী হিসেবে নিবন্ধিত রয়েছে। ওয়েবসাইটটি শিশু কিশোরদের উপযোগী কন্টেন্ট আছে ৩০,০০০টি।
শিক্ষকদের প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে আধুনিক, সময়সাশ্রয়ী এবং মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ ও যুগোপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এটুআইএর যৌথ উদ্যোগে ২০১৩ সালের ১৬ মে শিক্ষক বাতায়নের যাত্রা শুরু হয়েছে। ‘শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনে শিক্ষক’ সেøাগানে ৯ লাখ শিক্ষককে এ বাতায়নে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে এ ওয়েবসাইট সাজানো হয়েছে। শিক্ষকদের জন্য তৈরি ডিজিটাল বিষয়বস্তু বা কনটেন্টভিত্তিক এ ওয়েবসাইটে িি.িঃবধপযবৎং.মড়া.নফ এই লিংকের মাধ্যমে এতে প্রবেশ করা যাবে।
শিক্ষক বাতায়ন প্রশিক্ষণের প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। পূর্বে একজন শিক্ষকের কয়েক বছরে একবার প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার সুযোগ হতো। কিন্তু এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বর্তমানে যে কোন সময় যে কোন প্রান্তে বসে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারেন তারা। স্কুল-কলেজের সব বিষয়ের ওপর কাস্টমাইজযোগ্য ৯৫৩টি মডেল কন্টেন্ট আছে শিক্ষক বাতায়নে। এই কন্টেন্টগুলোর অফঅলাইন সংস্করণ সারা দেশে স্কুল কলেজগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এতে করে ইন্টারনেট সংযোগবিহীন অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বেশ লাভবান হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষক বাতায়নে সাধারণ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের উন্নতমানের ডিজিটাল কনটেন্ট রয়েছে এই পোর্টালে।
এছাড়া রয়েছে শিক্ষকদের শেয়ার করা বিভিন্ন ব্লগ, ভিডিও কন্টেন্ট ও প্রেজেন্টেশন। এ পর্যন্ত ১,৬২,২১৬টি ব্লগ, ২,৩৩,৬৫৭টি প্রেজেন্টেশন এবং ৫৭,০২৯টি ভিডিও কন্টেন্ট এই পোর্টালে আপলোড করা হয়েছে। শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর এই ওয়েবসাইটের খবর-দার অংশে যুক্ত করা যায়। ব্যবহারকারীরা এ পর্যন্ত ১৮,২১১টি খবর যুক্ত করেছেন এই অংশে। মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষের জন্য শিক্ষকের তৈরি ডিজিটাল কনটেন্ট অনলাইনে আদান-প্রদান, বিষয়ভিত্তিক কনটেন্ট সংরক্ষরণের একটি অনন্য জায়গা এই ওয়েবসাইট। তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা নয় বরং শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এমন ধারণা থেকে এটুআই প্রকল্পের উদ্যোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও শিক্ষক কর্তৃক ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি নামে দুটি মডেল তৈরি করা হয়েছে। দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে বর্তমানে ৩৫,০০০ হাজার এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ১৪,০০০ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম আছে। প্রশিক্ষিত শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের উপযোগী কনটেন্ট তৈরি করে ক্লাসে ব্যবহার করছেন। শিক্ষকেরা তাদের তৈরি এসব কন্টেন্ট ওয়েবপেইজের কন্টেন্ট ব্লগে রাখেন।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, রোবোটিক্সের মতো প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে দক্ষ জনবলের কোন বিকল্প নাই। অবকাঠামো উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সারা দেশে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কানেকটিভিটি স্থাপনের জন্য বাংলা গভনেট ও ইনফো সরকার-২ প্রকল্প বাস্তাবায়ন করছে। ফলে ৫৮টি মন্ত্রণালয়, ২২৭টি অধিদপ্তর, ৬৪টি জেলার প্রশাসকের কার্যালয় এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ১৮ হাজার ৫০০টি সরকারি অফিস নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। ৮০০টি সরকারি অফিসে ভিডিও কনফারেন্স সিস্টেম, ২৫৪টি অ্যাগ্রিকালচার ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সেন্টার (এআইসিসি) ও ২৫টি টেলিমেডিসিন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা যাতে অফিসের বাইরে থেকেও দাপ্তরিক কাজ সুচারুভাবে সম্পাদন করতে পারেন, সেজন্য তাদের মাঝে ২৫ হাজার ট্যাব বিতরণ করা হয়েছে। দেশের ১৬ কোটি ২৯ লাখ মোবাইল গ্রাহকদের মধ্যে ১০ কোটি ৩৪ লাখের বেশি মানুষকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল কানেকটিভিটি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করার ফলে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, রোবোটিক্সের মতো প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে দক্ষ জনবলের কোন বিকল্প নাই
আইসিটি শিক্ষার বিস্তার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭,৭২৮টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। তার মধ্যে জেলা পর্যায়ে ৬৫টি ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব এবং ১০০টি শেখ রাসেল ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থাপিত শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবগুলো স্থায়ীভাবে সাইবার সেন্টার, প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও আইসিটি ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত স্থাপিত ল্যাবসমূহের মাধ্যমে এলাকার তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে। ২০২০-২৩ মেয়াদে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব (২য় পর্যায়) প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ৫০০০টি ল্যাব প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি সংসদীয় আসনে একটি করে মোট ৩০০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আধুনিক সুবিধা-সংবলিত স্কুল অব ফিউচার প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাবের মাধ্যমে ৯টি ভাষা- ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, জার্মান, জাপানিজ, কোরিয়ান, রাশিয়ান, আরবি ও চাইনিজ শেখানোর লক্ষ্যে ভাষাগুরু সফটওয়ার তৈরি করা হয়েছে।
বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর প্রকোপ থেকে শিক্ষা খাতকে নিরাপদ ও শিক্ষা কার্যক্রমকে চলমান রাখতে অনলাইন শিক্ষার ওপর যে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, সেটি সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল সেবার প্রভূত উন্নতির ফলে। বিগত দশকে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তির সমন্বয় ও ব্যবহারে যুগান্তকারী নানাবিধ পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখা আমাদের দেশে ডিজিটাল সেবায় শিক্ষার অগ্রগতির বিষয়টি স্পষ্ট করে। তাই প্রসারে এগিয়ে থাকা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম উঠে এসেছে। আগের তুলনায় বর্তমানে ব্রডব্যান্ড, ইন্টারনেট অব থিংক্স (আইওটি) এবং আটিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স (এআই) ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এর বিষয়ে বাংলাদেশ বেশ অগ্রসরমান। বৈশ্বিক প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ের গ্লোবাল কানেকটিভিটি ইনডেক্স-২০২০ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি ৭৯টি দেশের ডিজিটাল ক্ষেত্রে অবকাঠামো ও সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে এটি প্রকাশ করা হয়।
করোনা অতিমারির এ সংকটাবস্থায় ডিজিটাল সেবায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। কারণ, দীর্ঘকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে একেবারেই স্থবির হয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে একমাত্র ডিজিটাল সেবার উন্নতিতে শিক্ষাধারাকে সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। তদুপরি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে গতানুগতিক প্রশ্নপত্র তৈরি ও মূল্যায়নের পদ্ধতিতে বিকল্প কোন ব্যবস্থা আবিষ্কার করলে শিক্ষায় ডিজিটাল সেবার অগ্রগতিকে আরও তরান্বিত করা সম্ভব হতো। তবে আশার কথা হলো, আভ্যন্তরীণভাবে এখন অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনলাইন পাঠদান করে যথারীতি মূল্যায়ন পরীক্ষাও চালিয়ে যাচ্ছে এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইউজিসিও এখন ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে পরীক্ষার বিকল্প কি পদ্ধতি হতে পারে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। সুতরাং অপার সম্ভাবনার এ দেশে ডিজিটাল সেবার উন্নতিতে শিক্ষার আরও অগ্রগতি সাধিত হোক, সেটি আমাদের প্রত্যাশা।
[লেখক : প্রিন্সিপাল,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা]
মাহমুদুল হাছান
সোমবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে, যার দৃশ্যমান উদাহরণ হলো করোনাকালীন শিক্ষা ধারায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষায় ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাটফর্ম আবিষ্কার করা হয়েছে। বাংলা ভাষাভাষী কিশোর-কিশোরী ছাত্রছাত্রীরা বিশ্বের যে কোন স্থানে বসে অনলাইনে ‘কিশোর বাতায়ন’ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে সক্ষম। এটি তরুণদের জন্য অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করে। এর লক্ষ্য ৩৬ মিলিয়ন কিশোর-কিশোরীদের এ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা যাতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং দক্ষতা উন্নয়ন করে তারা দেশের অগ্রগতি তথা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনে অবদান রাখতে পারে। কিশোর-কিশোরীদের জ্ঞানচর্চায় আগ্রহী করে তুলতে বিভিন্ন বিষয় দিয়ে সাজানো হয়েছে ‘কিশোর বাতায়ন’। শড়হহবপঃ.বফঁ.নফ লিংকটির মাধ্যমে ওয়েবপেজটিতে প্রবেশ করতে হবে এবং যুক্ত হওয়া যাবে।
শিক্ষার্থীরা এই ওয়েবপেইজে বই পড়া থেকে শুরু করে ডাউনলোড করা, মুভি দেখা ও কনটেন্ট তৈরি করে আপলোড করাসহ দৈনন্দিন জীবনের নানা সমস্যাকে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান দিয়ে বিশ্লেষণ করা ও হাতেকলমে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাই শুধু ওয়েবপেজটিতে যুক্ত হতে পারবে। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীরা কানেক্টের সদস্য হতে পারে। বর্তমানে এই পোর্টালে ৩৫,০০,০০০ জন শিক্ষার্থী ব্যবহারকারী হিসেবে নিবন্ধিত রয়েছে। ওয়েবসাইটটি শিশু কিশোরদের উপযোগী কন্টেন্ট আছে ৩০,০০০টি।
শিক্ষকদের প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে আধুনিক, সময়সাশ্রয়ী এবং মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ ও যুগোপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এটুআইএর যৌথ উদ্যোগে ২০১৩ সালের ১৬ মে শিক্ষক বাতায়নের যাত্রা শুরু হয়েছে। ‘শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনে শিক্ষক’ সেøাগানে ৯ লাখ শিক্ষককে এ বাতায়নে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে এ ওয়েবসাইট সাজানো হয়েছে। শিক্ষকদের জন্য তৈরি ডিজিটাল বিষয়বস্তু বা কনটেন্টভিত্তিক এ ওয়েবসাইটে িি.িঃবধপযবৎং.মড়া.নফ এই লিংকের মাধ্যমে এতে প্রবেশ করা যাবে।
শিক্ষক বাতায়ন প্রশিক্ষণের প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। পূর্বে একজন শিক্ষকের কয়েক বছরে একবার প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার সুযোগ হতো। কিন্তু এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বর্তমানে যে কোন সময় যে কোন প্রান্তে বসে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারেন তারা। স্কুল-কলেজের সব বিষয়ের ওপর কাস্টমাইজযোগ্য ৯৫৩টি মডেল কন্টেন্ট আছে শিক্ষক বাতায়নে। এই কন্টেন্টগুলোর অফঅলাইন সংস্করণ সারা দেশে স্কুল কলেজগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এতে করে ইন্টারনেট সংযোগবিহীন অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বেশ লাভবান হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষক বাতায়নে সাধারণ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের উন্নতমানের ডিজিটাল কনটেন্ট রয়েছে এই পোর্টালে।
এছাড়া রয়েছে শিক্ষকদের শেয়ার করা বিভিন্ন ব্লগ, ভিডিও কন্টেন্ট ও প্রেজেন্টেশন। এ পর্যন্ত ১,৬২,২১৬টি ব্লগ, ২,৩৩,৬৫৭টি প্রেজেন্টেশন এবং ৫৭,০২৯টি ভিডিও কন্টেন্ট এই পোর্টালে আপলোড করা হয়েছে। শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর এই ওয়েবসাইটের খবর-দার অংশে যুক্ত করা যায়। ব্যবহারকারীরা এ পর্যন্ত ১৮,২১১টি খবর যুক্ত করেছেন এই অংশে। মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষের জন্য শিক্ষকের তৈরি ডিজিটাল কনটেন্ট অনলাইনে আদান-প্রদান, বিষয়ভিত্তিক কনটেন্ট সংরক্ষরণের একটি অনন্য জায়গা এই ওয়েবসাইট। তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা নয় বরং শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এমন ধারণা থেকে এটুআই প্রকল্পের উদ্যোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও শিক্ষক কর্তৃক ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি নামে দুটি মডেল তৈরি করা হয়েছে। দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে বর্তমানে ৩৫,০০০ হাজার এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ১৪,০০০ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম আছে। প্রশিক্ষিত শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের উপযোগী কনটেন্ট তৈরি করে ক্লাসে ব্যবহার করছেন। শিক্ষকেরা তাদের তৈরি এসব কন্টেন্ট ওয়েবপেইজের কন্টেন্ট ব্লগে রাখেন।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, রোবোটিক্সের মতো প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে দক্ষ জনবলের কোন বিকল্প নাই। অবকাঠামো উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সারা দেশে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কানেকটিভিটি স্থাপনের জন্য বাংলা গভনেট ও ইনফো সরকার-২ প্রকল্প বাস্তাবায়ন করছে। ফলে ৫৮টি মন্ত্রণালয়, ২২৭টি অধিদপ্তর, ৬৪টি জেলার প্রশাসকের কার্যালয় এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ১৮ হাজার ৫০০টি সরকারি অফিস নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। ৮০০টি সরকারি অফিসে ভিডিও কনফারেন্স সিস্টেম, ২৫৪টি অ্যাগ্রিকালচার ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সেন্টার (এআইসিসি) ও ২৫টি টেলিমেডিসিন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা যাতে অফিসের বাইরে থেকেও দাপ্তরিক কাজ সুচারুভাবে সম্পাদন করতে পারেন, সেজন্য তাদের মাঝে ২৫ হাজার ট্যাব বিতরণ করা হয়েছে। দেশের ১৬ কোটি ২৯ লাখ মোবাইল গ্রাহকদের মধ্যে ১০ কোটি ৩৪ লাখের বেশি মানুষকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল কানেকটিভিটি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করার ফলে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, রোবোটিক্সের মতো প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে দক্ষ জনবলের কোন বিকল্প নাই
আইসিটি শিক্ষার বিস্তার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭,৭২৮টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। তার মধ্যে জেলা পর্যায়ে ৬৫টি ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব এবং ১০০টি শেখ রাসেল ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থাপিত শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবগুলো স্থায়ীভাবে সাইবার সেন্টার, প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও আইসিটি ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত স্থাপিত ল্যাবসমূহের মাধ্যমে এলাকার তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে। ২০২০-২৩ মেয়াদে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব (২য় পর্যায়) প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ৫০০০টি ল্যাব প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি সংসদীয় আসনে একটি করে মোট ৩০০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আধুনিক সুবিধা-সংবলিত স্কুল অব ফিউচার প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাবের মাধ্যমে ৯টি ভাষা- ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, জার্মান, জাপানিজ, কোরিয়ান, রাশিয়ান, আরবি ও চাইনিজ শেখানোর লক্ষ্যে ভাষাগুরু সফটওয়ার তৈরি করা হয়েছে।
বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর প্রকোপ থেকে শিক্ষা খাতকে নিরাপদ ও শিক্ষা কার্যক্রমকে চলমান রাখতে অনলাইন শিক্ষার ওপর যে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, সেটি সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল সেবার প্রভূত উন্নতির ফলে। বিগত দশকে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তির সমন্বয় ও ব্যবহারে যুগান্তকারী নানাবিধ পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখা আমাদের দেশে ডিজিটাল সেবায় শিক্ষার অগ্রগতির বিষয়টি স্পষ্ট করে। তাই প্রসারে এগিয়ে থাকা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম উঠে এসেছে। আগের তুলনায় বর্তমানে ব্রডব্যান্ড, ইন্টারনেট অব থিংক্স (আইওটি) এবং আটিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স (এআই) ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এর বিষয়ে বাংলাদেশ বেশ অগ্রসরমান। বৈশ্বিক প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ের গ্লোবাল কানেকটিভিটি ইনডেক্স-২০২০ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি ৭৯টি দেশের ডিজিটাল ক্ষেত্রে অবকাঠামো ও সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে এটি প্রকাশ করা হয়।
করোনা অতিমারির এ সংকটাবস্থায় ডিজিটাল সেবায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। কারণ, দীর্ঘকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে একেবারেই স্থবির হয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে একমাত্র ডিজিটাল সেবার উন্নতিতে শিক্ষাধারাকে সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। তদুপরি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে গতানুগতিক প্রশ্নপত্র তৈরি ও মূল্যায়নের পদ্ধতিতে বিকল্প কোন ব্যবস্থা আবিষ্কার করলে শিক্ষায় ডিজিটাল সেবার অগ্রগতিকে আরও তরান্বিত করা সম্ভব হতো। তবে আশার কথা হলো, আভ্যন্তরীণভাবে এখন অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনলাইন পাঠদান করে যথারীতি মূল্যায়ন পরীক্ষাও চালিয়ে যাচ্ছে এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইউজিসিও এখন ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে পরীক্ষার বিকল্প কি পদ্ধতি হতে পারে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। সুতরাং অপার সম্ভাবনার এ দেশে ডিজিটাল সেবার উন্নতিতে শিক্ষার আরও অগ্রগতি সাধিত হোক, সেটি আমাদের প্রত্যাশা।
[লেখক : প্রিন্সিপাল,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা]