alt

উপ-সম্পাদকীয়

ই কমার্স : আমাদের ভরসা যেন কাচের দেয়াল

মোহাম্মদ আবু নোমান

: শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১

ক্ষুধা ও চাহিদার কোন সীমা আজ পর্যন্ত কোন বিজ্ঞানীও বের করতে পারেনি। বেঁচে থাকার জন্য একজন মানুষের কত সম্পদ/ টাকার প্রয়োজন? একজন পুলিশ কর্মকর্তার সরকারের দেয়া যথেষ্ট বেতন, বোনাস, রেশন, পোশাক ছাড়াও সম্মান, ক্ষমতা, সবকিছুই থাকে। অবসরের পরও পেয়ে থাকেন অনেক টাকা। তারপরও তিনি আরও চান! একটা জীবনে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে কত টাকার প্রয়োজন? সম্প্রতি দেশ ছেড়ে পালানোর পর ভারতে গ্রেপ্তার ঢাকার বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানার চারটি দেশসহ বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে। তার এ বিপুল সম্পদের কথা শুনে খোঁদ পুলিশের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিস্মিত। এই সোহেল রানা আলোচনায় আসেন ই-অরেঞ্জ নামের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হওয়ার পর। ওই মামলায় তার বোন সোনিয়া মেহেজাবিন ও ভগ্নিপতি মাসুকুর রহমান এখন কারাগারে। তার চতুর্থ স্ত্রী নাজনীন নাহার (বীথি) পলাতক। পুলিশের গুলশান বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সোহেল রানা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রতীয়মান হয় যে তিনি ই-অরেঞ্জের অপকর্মে জড়িত।

‘ডাবল ভাউচার’ অফার দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেয় ই-অরেঞ্জ। অফারের ভাষ্য ছিল, কেউ ১ লাখ টাকা জমা দিলে ২ লাখ টাকার ভাউচার পাবেন। ওই ভাউচার দিয়ে আমানতকারী প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে পণ্য কিনতে পারবেন। কিন্তু দ্বিগুণ অর্থের পণ্য কেনা তো দূরের কথা বরং মূল অর্থেই গ্রাহকরা পণ্য বুঝে পাচ্ছেন না। বর্তমানে পৃথিবীটিতে অনলাইন শপিং একটি দারুণ কম্পিটিশন মার্কেট। কোন কোম্পানি কত দ্রুত প্রোডাক্ট ডেলিভারি ও সেবা দেবে এ প্রতিযোগিতা। আর আমাদের দেশে মাসের পর মাস বসে থাকার পরে শোনা যায় পণ্য আসবে না! কী সেলুকাস! বিশ্বে অনলাইন ব্যবসায়ীরা সততা, আস্থা, স্বচ্ছতা ও দ্রুত হস্তান্তরের কম্পিটিশন করে। আর আমরা আছি চুরি আর ফাঁদের কম্পিটিশন নিয়ে! আমরা বলতে চাই, ই-অরেঞ্জ ও ইভ্যালিকে কোন মান ও দিক দিয়ে ‘ই-কমার্স’ বলে মনে করা যায় কী? বিশ্বে এমন কোন ই-কমার্স কোম্পানি আছে যারা ২ মাস, ৬ মাসে পণ্য ডেলিভারি দেয়? আবার কোন কোন ক্ষেত্রে বছর ফুরিয়ে গেলেও পণ্য ডেলিভারি দিতে অপারগ। তাছাড়া এমন কোথাও আছে কী, যারা নতুনদের টাকায় পুরোনোদের পণ্য দেয়?

দেশের স্বনামধন্য গ্রুপ অব কোম্পানি যমুনা গ্রুপ ই-ভ্যালিতে বিনিয়োগ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কথা দিয়ে কথা না রাখলে কেমন লাগে এখন নিশ্চয়ই বুঝছেন ই-ভ্যালির প্রধান নির্বাহী ও সিইও রাসেল সাহেব। আমরা মনে করি ব্যবসায়িক খাতে বিনিয়োগজনিত ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না করে বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়া ঠিক হয়নি যমুনা গ্রুপের। যমুনা গ্রুপ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে বলে সর্বসাধারণ হার্ড ব্রেক খেয়ে ই-ভ্যালিতে ফের অর্ডার করে দ্বিতীয়বার প্রতারণার স্বীকার হয়েছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে অনলাইনে কী কী পণ্য কেনাবেচা হয় না বলে, বলতে হবে কী নেই সেখানে! বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, পোশাক, প্রসাধনী ও কসমেটিকস এসব তো নস্যি! এগুলো পুরোনো খবর। যারা সময়ের স্বল্পতার জন্য ছোট মাছ কাটতে পারেন না, সবজি সঠিক সাইজে কাটতে পারেন না তাদের জন্য চালু হয়েছে রেডি টু কুক নামের এক ধরনের উদ্যোগ। সেখানে মাছ, গরু-ছাগলের বট, কেটে, ধুয়ে, পরিষ্কার করে রান্নার উপযোগী করে ডেলিভারি দেয়া হয়। বলতে গেলে জীবনযাপন সহজ ও ঝামেলামুক্ত করতে যত ধরনের পণ্য ও সেবা প্রয়োজন তার সবই এখন অনলাইন বিজনেসের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা প্রদান করে যাচ্ছেন। খাবার, শাক-সবজি, ফল, মাছ, গোশত, গরু, ছাগল, শুঁটকি থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছু নিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করছেন উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ঘরে বসে অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা বা ই-কমার্স ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর গোটা খাতটি এখন ভুগছে আস্থার সংকটে।

ই-কমার্সে ভোক্তার আস্থা সবচেয়ে বড় শর্ত। কিন্তু এমন অঘটন ঘটলে মানুষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা হারাবে যা এই শিল্পকে ক্ষতির মুখে ফেলবে বলে আমরা মনে করি। আমাদের দেশের ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-বাণিজ্য এখন অকল্যাণের অনুসঙ্গেও রূপ নিয়েছে। শ্রেণী বিশেষের কারণে পুরো পদ্ধতিকেই এখন সন্দেহের চোখে দেখছে সাধারণ মানুষ। অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে ব্যবসার পদ্ধতি, ধরন এক সময়ের আলোচিত এমএলএম কেলেঙ্কারির কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। বড় অঙ্কের ক্যাশব্যাক, অফারের নামে ক্রেতাকে সময়মতো পণ্য না দেয়া ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অর্থ না দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিসহ অন্তত ১৫ প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশে ই-কমার্সের কার্যক্রম যেভাবে ধোকা ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে গেছে, তাতে অতি শিগগিরই বিদেশি প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়ে নেবে। ই-কমার্সের বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়ায় বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশর ব্যাপারে আগ্রহী। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনও বাংলাদেশ তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ভ্যাট নিবন্ধন করেছে। ইউরোপের আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান কিউবি বাংলাদেশের বাজারে আসার আগ্রহ নিয়ে স্বল্প পরিসরে কাজ করছে। চীনের আরেক বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান টেনসেন্টও বাংলাদেশের বাজারে আগ্রহী। ই-কমার্স সময়ের চাহিদা। মানুষ ই-কমার্সে যাচ্ছে। প্রচলিত ব্যবসার জায়গা করে নেবে ই-কমার্স। এ জন্য স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রস্তুত হতে হবে। তা না হলে নতুন বিদেশি প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়ে নেবে।

শুধু জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরেই ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত চার বছরে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, আলেশা মার্ট, ধামাকা, প্রিয়শপসহ ১৯টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৩ হাজার ৩১৭টি অভিযোগ দায়ের করেছেন গ্রাহকরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল, দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, র‌্যাব, সিআইডির সাইবার ইউনিট, ডিবি, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরগুলো কী করছে? ই-কমার্স কোম্পানির পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের নামে প্রতারণার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এসব সংস্থাগুলো বিভিন্ন অভিযান ও তদন্তে প্রাপ্ত অপরাধের তথ্য নিজ নিজ আইনের আওতায় না পড়লে অন্য সংস্থাকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলতে পারে। সরকারের উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পরস্পর সমন্বয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে একযোগে কাজ করলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্য বিক্রির নামে গ্রাহক প্রতারণা রোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে অবশ্যই।

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

একটি সফর, একাধিক সংকেত : কে পেল কোন বার্তা?

দেশের কারা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণ : আস্থা ফেরাতে সংস্কার, না দায়মুক্তির প্রহসন?

রম্যগদ্য : চাঁদাবাজি চলছে, চলবে

বায়ুদূষণ : নীরব ঘাতক

ইসরায়েলের কৌশলগত ঔদ্ধত্য

পরিবার : সুনাগরিক ও সুশাসক তৈরির ভিত্তিমূল

শিল্পে গ্যাস সংকট : দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিন

আমাদের লড়াইটা আমাদের লড়তে দিন

ব্যাকবেঞ্চারদের পৃথিবী : ব্যর্থতার গায়ে সাফল্যের ছাপ

আমের অ্যানথ্রাকনোজ ও বোঁটা পঁচা রোগ

শিশুদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি : স্কুল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা ও সংকট

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ই কমার্স : আমাদের ভরসা যেন কাচের দেয়াল

মোহাম্মদ আবু নোমান

শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১

ক্ষুধা ও চাহিদার কোন সীমা আজ পর্যন্ত কোন বিজ্ঞানীও বের করতে পারেনি। বেঁচে থাকার জন্য একজন মানুষের কত সম্পদ/ টাকার প্রয়োজন? একজন পুলিশ কর্মকর্তার সরকারের দেয়া যথেষ্ট বেতন, বোনাস, রেশন, পোশাক ছাড়াও সম্মান, ক্ষমতা, সবকিছুই থাকে। অবসরের পরও পেয়ে থাকেন অনেক টাকা। তারপরও তিনি আরও চান! একটা জীবনে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে কত টাকার প্রয়োজন? সম্প্রতি দেশ ছেড়ে পালানোর পর ভারতে গ্রেপ্তার ঢাকার বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানার চারটি দেশসহ বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে। তার এ বিপুল সম্পদের কথা শুনে খোঁদ পুলিশের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিস্মিত। এই সোহেল রানা আলোচনায় আসেন ই-অরেঞ্জ নামের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হওয়ার পর। ওই মামলায় তার বোন সোনিয়া মেহেজাবিন ও ভগ্নিপতি মাসুকুর রহমান এখন কারাগারে। তার চতুর্থ স্ত্রী নাজনীন নাহার (বীথি) পলাতক। পুলিশের গুলশান বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সোহেল রানা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রতীয়মান হয় যে তিনি ই-অরেঞ্জের অপকর্মে জড়িত।

‘ডাবল ভাউচার’ অফার দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেয় ই-অরেঞ্জ। অফারের ভাষ্য ছিল, কেউ ১ লাখ টাকা জমা দিলে ২ লাখ টাকার ভাউচার পাবেন। ওই ভাউচার দিয়ে আমানতকারী প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে পণ্য কিনতে পারবেন। কিন্তু দ্বিগুণ অর্থের পণ্য কেনা তো দূরের কথা বরং মূল অর্থেই গ্রাহকরা পণ্য বুঝে পাচ্ছেন না। বর্তমানে পৃথিবীটিতে অনলাইন শপিং একটি দারুণ কম্পিটিশন মার্কেট। কোন কোম্পানি কত দ্রুত প্রোডাক্ট ডেলিভারি ও সেবা দেবে এ প্রতিযোগিতা। আর আমাদের দেশে মাসের পর মাস বসে থাকার পরে শোনা যায় পণ্য আসবে না! কী সেলুকাস! বিশ্বে অনলাইন ব্যবসায়ীরা সততা, আস্থা, স্বচ্ছতা ও দ্রুত হস্তান্তরের কম্পিটিশন করে। আর আমরা আছি চুরি আর ফাঁদের কম্পিটিশন নিয়ে! আমরা বলতে চাই, ই-অরেঞ্জ ও ইভ্যালিকে কোন মান ও দিক দিয়ে ‘ই-কমার্স’ বলে মনে করা যায় কী? বিশ্বে এমন কোন ই-কমার্স কোম্পানি আছে যারা ২ মাস, ৬ মাসে পণ্য ডেলিভারি দেয়? আবার কোন কোন ক্ষেত্রে বছর ফুরিয়ে গেলেও পণ্য ডেলিভারি দিতে অপারগ। তাছাড়া এমন কোথাও আছে কী, যারা নতুনদের টাকায় পুরোনোদের পণ্য দেয়?

দেশের স্বনামধন্য গ্রুপ অব কোম্পানি যমুনা গ্রুপ ই-ভ্যালিতে বিনিয়োগ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কথা দিয়ে কথা না রাখলে কেমন লাগে এখন নিশ্চয়ই বুঝছেন ই-ভ্যালির প্রধান নির্বাহী ও সিইও রাসেল সাহেব। আমরা মনে করি ব্যবসায়িক খাতে বিনিয়োগজনিত ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না করে বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়া ঠিক হয়নি যমুনা গ্রুপের। যমুনা গ্রুপ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে বলে সর্বসাধারণ হার্ড ব্রেক খেয়ে ই-ভ্যালিতে ফের অর্ডার করে দ্বিতীয়বার প্রতারণার স্বীকার হয়েছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে অনলাইনে কী কী পণ্য কেনাবেচা হয় না বলে, বলতে হবে কী নেই সেখানে! বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, পোশাক, প্রসাধনী ও কসমেটিকস এসব তো নস্যি! এগুলো পুরোনো খবর। যারা সময়ের স্বল্পতার জন্য ছোট মাছ কাটতে পারেন না, সবজি সঠিক সাইজে কাটতে পারেন না তাদের জন্য চালু হয়েছে রেডি টু কুক নামের এক ধরনের উদ্যোগ। সেখানে মাছ, গরু-ছাগলের বট, কেটে, ধুয়ে, পরিষ্কার করে রান্নার উপযোগী করে ডেলিভারি দেয়া হয়। বলতে গেলে জীবনযাপন সহজ ও ঝামেলামুক্ত করতে যত ধরনের পণ্য ও সেবা প্রয়োজন তার সবই এখন অনলাইন বিজনেসের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা প্রদান করে যাচ্ছেন। খাবার, শাক-সবজি, ফল, মাছ, গোশত, গরু, ছাগল, শুঁটকি থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছু নিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করছেন উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ঘরে বসে অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা বা ই-কমার্স ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর গোটা খাতটি এখন ভুগছে আস্থার সংকটে।

ই-কমার্সে ভোক্তার আস্থা সবচেয়ে বড় শর্ত। কিন্তু এমন অঘটন ঘটলে মানুষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা হারাবে যা এই শিল্পকে ক্ষতির মুখে ফেলবে বলে আমরা মনে করি। আমাদের দেশের ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-বাণিজ্য এখন অকল্যাণের অনুসঙ্গেও রূপ নিয়েছে। শ্রেণী বিশেষের কারণে পুরো পদ্ধতিকেই এখন সন্দেহের চোখে দেখছে সাধারণ মানুষ। অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে ব্যবসার পদ্ধতি, ধরন এক সময়ের আলোচিত এমএলএম কেলেঙ্কারির কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। বড় অঙ্কের ক্যাশব্যাক, অফারের নামে ক্রেতাকে সময়মতো পণ্য না দেয়া ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অর্থ না দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিসহ অন্তত ১৫ প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশে ই-কমার্সের কার্যক্রম যেভাবে ধোকা ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে গেছে, তাতে অতি শিগগিরই বিদেশি প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়ে নেবে। ই-কমার্সের বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়ায় বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশর ব্যাপারে আগ্রহী। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনও বাংলাদেশ তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ভ্যাট নিবন্ধন করেছে। ইউরোপের আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান কিউবি বাংলাদেশের বাজারে আসার আগ্রহ নিয়ে স্বল্প পরিসরে কাজ করছে। চীনের আরেক বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান টেনসেন্টও বাংলাদেশের বাজারে আগ্রহী। ই-কমার্স সময়ের চাহিদা। মানুষ ই-কমার্সে যাচ্ছে। প্রচলিত ব্যবসার জায়গা করে নেবে ই-কমার্স। এ জন্য স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রস্তুত হতে হবে। তা না হলে নতুন বিদেশি প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়ে নেবে।

শুধু জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরেই ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত চার বছরে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, আলেশা মার্ট, ধামাকা, প্রিয়শপসহ ১৯টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৩ হাজার ৩১৭টি অভিযোগ দায়ের করেছেন গ্রাহকরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল, দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, র‌্যাব, সিআইডির সাইবার ইউনিট, ডিবি, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরগুলো কী করছে? ই-কমার্স কোম্পানির পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের নামে প্রতারণার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এসব সংস্থাগুলো বিভিন্ন অভিযান ও তদন্তে প্রাপ্ত অপরাধের তথ্য নিজ নিজ আইনের আওতায় না পড়লে অন্য সংস্থাকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলতে পারে। সরকারের উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পরস্পর সমন্বয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে একযোগে কাজ করলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্য বিক্রির নামে গ্রাহক প্রতারণা রোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে অবশ্যই।

back to top