alt

সাময়িকী

কমল চক্রবর্তী, আদি ও অকৃত্রিম রিংমাস্টার

গৌতম গুহ রায়

: বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কমল চক্রবর্তী

‘দীর্ঘদিন কবিতা লিখতে না পারলে / আমি অহেতুক শয়তান হয়ে উঠি / মনুমেন্টের পর মনুমেন্ট ভেঙে খোঁজ করি / কোনো আত্মা আছে কিনা / ছুড়ি দিয়ে ফালা-ফালা করে ফেলি কবিতার খাতা...’।

১৯৭১-এ প্রকাশিত ‘চার নম্বর ফার্নেস’ আমার হাতে আসে এরও ১২ বছর পরে, ১৯৮৩’র বর্ষায়। সেইদিন ও এইদিন, মাঝের চল্লিশ বছরে কবি-ভাষার আলো-আধাঁরির কুহকী মায়ার এক রম্য সার্কাসের দর্শকাসন থেকে মুখ উঁচু করে দেখেছি কি নিপুণ দক্ষতায় ট্রাপিজের এক ‘বার’ থেকে অন্য ‘বারে’ অনায়াসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, হাতল ছেড়ে আবার শূন্য থেকেই অন্য হাতল মুঠোতে ধরছেন।

‘কৌরব’ থেকে ‘ভালো পাহাড়’, ক্রমশ সময় এগিয়ে যায় ও তিনি নিজেকে পাল্টাতে থাকেন, একসময় তিনি কবিতার অক্ষর-ধ্বনির ট্যাপিজ থেকে নেমে আসেন মাটিতে, ‘ভালোপাহাড়’-এর বৃক্ষনাথ তিনি, ছায়া দেন ছায়হীন নারী ও শিশুদের। লেখেন-

“এবার যদি আমি ফিরে আসি তবে নীল রঙ হয়ে ফিরে আসব।”

বৃষ্টিশেষে মেঘের ফাঁক দিয়ে বাংলার আকাশে যে নীল রঙটুকু দেখা যায়

আমি তারই মতো হাল্কা কিছু বলার চেষ্টা করব-” (প্রেমের কবিতা ৯)

তাঁর ‘চার নম্বর ফার্নেস চার্জড’ ২০১৬তে দ্বিতীয় সংস্করণ ‘পাঠক’ থেকে প্রকাশিত হয়। বইটি তিনি উৎসর্গ করেছিলেন ‘মা’কে। দ্বিতীয় সংস্করণে কমল চক্রবর্তী ‘জয় বৃক্ষনাথ’ শিরোনামে বইয়ের শুরুতে লিখেছেন, ‘...এবং নকশাল, আবেগতারিত। বিপর্যয়-রঙিন-বিস্মিত। চোখে লাগছে শালবন, দলমা পাহাড়, স্ল্যাগ পাহারের আগুন, গুলিবিদ্ধ পুলিশ, কখনও পরিচিতের মৃতদেহ।’... এরপর পাতা উল্টে যাই, ১৮ পাতার ‘যখন কবিতা লিখতে পারি না-১’ কবিতাটি-

‘...কবিতা মানে ধ্বংস

কবিতা মানেও নিরর্থক রক্তক্ষরণ

কবিতা মানে সঙ্গমনিরত হয়ে স্বাপ্নিক আলাপ

কবিতা মানে নির্বীর্য হিজড়ার মৈথুন যন্ত্রণা

পচে যাওয়া রে-ির চাম

আমাকে কোথাও নিয়ে যায় না

কোথাও না...’।

এই পাঠ আমাকে সময়চ্যুত করে। মজ্জায় রোপিত বিশ্বাস তখন ব্যবহৃত হতে হতে পচন আক্রান্ত, যুক্তিবোধ ও মানবিক উত্তাপ- এই দুয়ের মাঝের সম্পর্ক যখন উধাও হয়ে যায় তখন প্রতিবাদই প্রকৃত আধুনিকতা। কিন্তু, প্রতিবাদ মানবের, সভ্যতার জীবনী শক্তি, তা কখনই নৈরাজ্যের অজুহাত হতে পারে না। কমল চক্রবর্তী যখন দেখেন- ‘এবং নকশাল, আবেগতাড়িত। বিপর্যয়-রঙিন-বিস্মিত।... গুলিবিদ্ধ পুলিশ, কখনও পরিচিতের মৃতদেহ...’, এই পঙ্ক্তির সামনে তখন অবক্ষয়ী এই আধুনিকতার পুরোধা কবিদের ‘তেজী বিদ্রোহজাত সেই সময় শাসন আজ, কয়েক দশক পেরিয়ে এসে হয়ে ওঠে মূলত তাৎপর্যহীন, এক কুহকী বিভ্রমে আচ্ছন্ন প্রজন্ম। তাই অনায়াসে পাশাপাশি এসে দাঁড়ায় ‘আবেগতাড়িত নকশাল’ ও ‘গুলিবিদ্ধ পুলিশ’। এভাবেই আপাত বিপ্রতীপ, যুযধান দুই দৃশ্যের অবতারণায় ধূলিস্যাৎ হয়ে যায় বহু বিজ্ঞাপনে জন্ম নেওয়া কিংবদন্তি। কমল চক্রবর্তী এখানেই ব্যতিক্রমী বাঁক নেয়, পঞ্চাশের কবিদের একাংশ যখন সুবিধাবাদী ভঙ্গি-প্রবণ ছদ্ম-বিদ্রোহ প্রদর্শন উন্মুখ তখন তিনি শব্দসজ্জার আড়ম্বর ভেঙ্গে লেখেন-

‘টাটা বাবা, আগুন দিলে

লোহা লিলে

দুখার মায়ের বুক থিকে

মহুয়া গাছের ছায়া লিলে কেন?

বিয়ান বেলায় উঠে দেখি

পালক মেলা পইরে আছে

কুঁকড়া দুটা নাই সেঠিন কেন?’

এই উচ্চারণেই রোপিত আছে সেই ‘বীজ’ যা তাঁকে একদিন ‘ভালোপাহাড়’-এর বৃক্ষনাথ করে তোলে।

১৯৬৮ থেকে ১৯৭০, এই কয়েক বছরে লেখা কবিতা নিয়ে ১৯৭১-এ ‘চার নম্বর ফার্নেস চার্জড’ হয়। কমল চক্রবর্তীর আর যে বইটি আমাকে তীব্র বৈদ্যুতিক তরঙ্গে ‘চার্চড’ করে সেটি হলো ‘স্বপ্ন’।

“...পাতা ও পরাগের ছাওয়া তুলো থেকে

এই মস্ত করোটি ও ঘিলু

একেক দিন মুঠো ভর্তি ঘিলু নিয়ে স্তব্ধ এই বাতায়নে একা

...অবিরাম বৃষ্টির ধারার মধ্যে একাধিক শ্রাবণ রজনী

গনগনে আঁচের পিচ গর্ভে স্বপ্নাতুর উঠতে পারি না-

...

সবারই দুহাত ভরা আউশের চারা

ইঁদুরের কষা মাংস, ভাতে তৈরি ঘন-সাদা-মদ...”

এই ‘স্বপ্ন’ নিয়ে কথোপকথনে সহযোদ্ধা বারীন ঘোষাল তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- ‘...বেহালা-ছড়ের-ঘোড়া মর্তে আসুক লিখলে কী করে? ইঁদুরের কষা মাংস, ভাতে তৈরি ঘন-সাদা মদ, সন্ধ্যা, আলু সেদ্ধ, ডাল, পান্তা, কাচা লংকা, গন্ধলেবুপাতা- এই মুহূর্তে এই রসালো পরিবেশে ঘোড়াকে ডাকলে কীভাবে?”

কমল দার উত্তর ছিলো- “জানি না। কিছু না ভেবেই। এই পরিবেশে সর্বোৎকৃষ্ট নাচ, আমার মনে হলো কোন নাচুনী নয়, একটা ঘোড়ার পক্ষেই সম্ভব। হ্যাঁ, আমি দেখলাম গান গাইয়ে ঘোড়াটার উদয় হলো এবং নাচল। মনে মনে। অবশ্যই। আসলে চমকপ্রদ দুর্দান্ত চঞ্চল এক মানসিক নাচ চেয়েছি ওই পরিবেশে। মনটাই নাচছে।”

কবি কমল চক্রবর্তীর এই ‘মনটাই’ যাবতীয় সৃজন নির্মাণের ভিত গড়ে, যার নিয়ন্ত্রণ তাঁর কাছেও থাকে কি? মনে হয় থাকে না! কমল চক্রবর্তীর কবিতার দর্শন ও তাঁর কবি হয়ে ওঠার যাত্রাকে ধরতে হলে তাঁর ‘কথাবার্তা’র পথ ধরে এগোনো যেতে পারে। রঞ্জন মৈত্র সম্পাদিত ‘নতুন কবিতা’র ১ম বর্ষ-২য় সংখ্যায় কমল চক্রবর্তীর সঙ্গে কথোপকথন থেকে কিছু অংশ তুলে আনা যায়। “একটা এভারেস্টের মতো শাদা শ্বেতপাথরের বারীন আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে। যাকে ক্রল করে করে স্পিটন দিয়ে আইস অ্যাকস দিয়ে উঠতে হবে। সাধারণ মানুষ কোনও দিনও উঠতে পারে না। ওটা ওঠার জন্য একটা কমল চক্রবর্তী দরকার হয়।” এই কথোপকথনে কমল চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, “আমরা তখন সাহিত্য করব বলে ঠিক করেছি। একটা দুটো কি পাঁচটা ছ’টা কবিতা লিখেছি। তখন সুভাষ ভটচাজ বলল যে, বারীন কবিতা লেখে। তো আমি বললুম, কোন বারীন? তা, ও চেনাল, আমার চেয়ে এক বছরের সিনিয়র, আমারই স্কুলের। এগ্রিকোর ছেলে। আমি নিজে ছিলুম পাশের গ্রাম সিদ্গোড়ার ছেলে।... বারীন কবিতা লেখে শুনে তখন আমি আঁতকে উঠেছিলাম। কিন্তুই দ্যাখ, এতদিন আস্তে আস্তে কী হয়েছে, আমরা কেউ কাউকে খোঁড়ার চেষ্টা করিনি। বেশিরভাগ মানুষই যা করে, দুটো পাশাপশি বন্ধুও, লিটল ম্যাগাজিন যে জন্য ভেঙে যায়, একটা বন্ধু- সে কোথায় কী পেল, অন্যজন কেন পেল না, ও ওখানে কী করে গেল, কিসের জন্য, এ এখানে কাল্ট ফিগার কি না, ও ওখানে ফেল মারে কি না, এসব কুৎসিত রসায়ন। আমাদের প্রথম থেকেই আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল- সাহিত্যের জন্য যা যা করণীয়, বই পড়া, শ্রম দেয়া, মানুষের কাছে কবিতাকে নিয়ে যাওয়া, আলোচনা করা, যাবতীয় কাজ যে যতটা পারি করব। আমাদের গ্রোথের মধ্যে কোনও চালাকি নেই।... যে যতটুকু কাজ করতে পারবে, যদি যথার্থ কাজ হয়, চেঁচামেচি লাগবে না।... দ্যাখ, যতটুকু যে কটা পাঠক আমার বা বারীনের, সে তো এই জামসেদপুরের কাগজ কৌরব-এ লিখেই হয়েছে।... জীবনানন্দকে ৫৫-৫৬ পর্যন্ত কবিতা বগলদাবা করে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। সুধীন্দ্রনাথ দত্তকেও তাই। বুদ্ধদেব বসুকেও কাঁপতে কাঁপতে যেতে হয়েছে...।” এমন নানা কথার তানাবানায় আমরা কবি ও কবিতার জন্য উৎসর্গিত প্রাণ কমল চক্রবর্তীর কাছে পৌঁছে যাই। যে মানুষটি বলতে পারেন, ‘দ্যাখ, আমি ইমপালসিভ, অ্যাডভেনচারিস্ট। এই ষাট বছর বয়সেও অ্যাডভেনচারের জন্য আমি সব ত্যাগ করতে পারি, হতে পারি লোন-ফাইটার। ...আমি আমার মতো। আমি কারখানার জীবনযাত্রা, গ্রামীণ শব্দ, আদিবাসী জীবনযাপন- এসব লিখি।”। (নতুন কবিতা /১ম বর্ষ-২য় সংখ্যা) অনায়াসে লিখে ফেলেন-

“যেমন ভার্জিন বাঘিনী থাকে দাঁড়িয়ে সুঠাম / যৌবন মুখিয়ে স্থির- / থির থির কাঁপে শুধু নরম নাসিকা / ... টালমাতাল খুঁজে ফেরে ঘাসের দেয়াল / নখ দাঁত ঝরে যায়- / ফোলা ফোলা মুখিয়ে যৌবন / এবং সমস্ত ভয় আজীবন পরাজয়- / সব একেকার / শুধু পানাগার / শুধু যোজন যোজন পথ স্থির পানাগার।” (ভার্জিন বাঘিনী)

কমল চক্রবর্তী তাঁর ‘স্বপ্ন’কে কবিতার বৃত্তে সীমায়িত রাখেন নি, কবিতা যাপন থেকে অনেকটা প্রসারিত করে সেই বৃত্তের বাইরে নিয়ে এসেছেন। সেখানে মানব সভ্যতার সুস্থতার জন্য একজন ‘ভ্যানগার্ড’ তিনি, ভালো পাহাড় তাঁর সেই বিচরণ ক্ষেত্র। কবিতার ভাষায় তিনি তাই স্থাপন করেন এই নবরূপান্তরিত নিজেকেই,

‘কবি পঞ্চম স্তরের সাধনার অব্যাহতিতে দিব্যদৃষ্টি। তখন তিনি গদ্য, নাটক, প্রবন্ধ, দর্শন, বোধ পারেন। নির্মাণগুলি আর কেবলমাত্র নির্মাণ থাকে না, আরও দিব্য, প্রগাঢ়। তাঁর স্পর্শে জাগ্রত হয় পরিবেশ, মরা মাটি, অসুস্থ, অশিক্ষিত, অস্পৃশ্য, অপটু, অন্ধকার। তিনি মরা-মাটিতে গাছ লাগান, জড়ে চেতনা, মৃতকে অমৃত। নতুন জনপদ, জীবন সৃষ্টি। নতুন আকাশ বাতাস অসীম অনন্তের সূচনা।...” (নৌকোর ছায়া ২)

কবিতা, কৌরব, গদ্যকার কমল চক্রবর্তী তাঁর ‘সঙ্ঘ’ সংস্কৃতির কথা বারেবারে উচ্চারণ করেছেন, এই সঙ্ঘ তাঁদের ‘কৌরব’। তাদের ‘ভালোপাহাড়’।

কবিতা, সাহিত্যের অন্তর্মুখী নির্মাণ ও সামাজিক জীবনের স্বপ্নভূমের বহির্মুখী সক্রিয়তা, এই স্থানান্তরের জন্যই হয়তো তাঁর কবিতায়, গদ্যে বারংবার ফিরে ফিরে আসে ব্যক্তি কবির কবিতা বিষয়ক চিন্তার একথা সেকথা। তাঁর নিজের কথায়, “(কবিতায়) অন্তর্মুখী তো হতেই হবে প্রত্যেককে। লেখার টেবিল তো এই টেবিলটা না। সেখানে তো সিরিয়াস, লিখিতে লিখিতে মগ্নতায় চলে আসছি। বহুকাল আগেই বলেছিলাম, আমি তো লিখতে জানি না, লেখে আমার কলমটা।” (নতুন কবিতা) “অধিকাংশ কবি মৃত্যু বা কবিতা লেখা অব্যাহতি বা ছাপাখানার কৃপা বঞ্চিত হবার সঙ্গে সঙ্গে আঁস্তাকুড়ে। অর্থাৎ যিনি ছবি বা ছায়াছবি, নাটক বা গান, একই, ভবিষ্যৎ। যদিও অমরত্ব লক্ষ্য নয়। তবু যাত্রী যখন দীর্ঘ পথের তখন অমৃত ভুবনে তাঁর পথ চলা।...”

২০০২-এ প্রকাশিত ‘নতুন কবিতা’র প্রথম সংখায় ‘আগামী প্রজন্মের কবিতা’ শীর্ষক গদ্যে তিনি লিখছেন, ‘...সে তো আদিম কালে, একজন বলেছিলেন, ‘কবিকে নির্বাসন দাও’। সত্যি ওরা কবিতার বহিরঙ্গ যত বোঝেন তত অন্তরঙ্গ নয়। সম্ভব নয়। যেমন আমরা মেসিন, যন্ত্র, ঠিক ততটা নয়। আজ যারা নিয়মিত বিদেশে যাতায়াত করেন বলেন, ওদেশে কবিতা শেষ। আর তেমন পাঠকও নেই। কবিতার দিন শেষ।... জনগন পড়বে বলে কবিতা লেখা হয় না। বারবার বলছি, ‘কবিতা’ মন্ত্র। পড়া, বোঝা, লেখা সবই কঠিন। ...পশ্চিম-মানুষের মনন, শিক্ষা, সমাজব্যবস্থা, প্রাত্যহিকতা কবিতার পরিপন্থী। আস্তে আস্তে এমন একদিন আসবে যেদিন পৃথিবী, ভারতের কাছে ‘কবিতা’ ভিক্ষে চাইবে। আগত প্রায় সেই দিন। তার আগে আমাদের বোঝা দরকার শব্দ যোজনা ও আত্মা-আনুসন্ধান।” যাপনের অভ্যস্থতা ও রুক্ষতা জাত কার্যকারণ, যা কিছু কবিতাকে ব্যহত করে সেই সবই তাঁর কাছে পরিত্যজ্য। চিন্তার প্রাতিষ্ঠানিকতাকে মান্যতা দেন নি, আবার বিপরীতে সামাজিক বা রাষ্ট্রিক প্রাতিষ্ঠানিকতার কাছে কবিতার পরাজয় মানতে পারেননি তিনি।

কমল চক্ররর্তীর দীর্ঘ সময়কালীন সাহিত্যযাপনে প্রবল বৈচিত্র্য যেমন রয়েছে তেমন রয়েছে বিপুল অভিজ্ঞতা। কবিতায়, গানে, গদ্যে, নাটকে, পত্রিকা সম্পাদনার নানা ক্ষেত্রে তিনি চলাফেলা করেছেন। এই কারণে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে সেই অভিজ্ঞতা তিনি ঝেড়ে ফেলেন না, তার লেখার মধ্যে রেখে দেন। একসময় গান রচনা করার কাজ করেছেন। গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র জন্য বেশ কিছু গান লিখেছিলান। এই গানগুলোর মধ্যে ‘সাততলা বাড়ি’ জনপ্রিয় হয়েছিলো।

‘মনে করো সাততলা বাড়িটার / একতলা হাতি আর ইঁদুরের / দোতলায় বুড়ো থাকে রিটায়ারড / লাল নীল উপ বোনে বুড়ি তার / তিনতলা ছবি আঁকে গ্যালারি / পিকাসো রুবেন্স দালি রেনোয়া / চারতলা কথা বলে ফিস্ফাস / পাখি যদি উড়ে যায় ঘাবড়ে... তারাদের দুপুরের ভাতঘুম / সেখানে খোকন-সোনা মামণি, / চাঁদ ধরে সূর্যের সাথি হয় / সেখানে খোকন-সোনা মামণি।/ চাঁদ ধরে সূর্যের সাথি হয়...”

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ও কণ্ঠে মহীনের ঘোড়াগুলি সম্পাদিত ‘খ্যাপার গান’ অ্যালবামে গানটি রয়েছে।

বুকভরা ভালোবাসার আকুতি না থাকলে কবি ও বিপ্লবী হওয়া যায় না, এটা কমলদা মানেন কিনা জানি না, কিন্তু তাঁর যাবতীয় কাব্যিক মুন্সিয়ানা এসে জমা হয় প্রেমের কায়ামূলে। তান্ত্রিক সুলভ সান্ধ্যভাষার বুনন থেকে তখন তিনি অনেক দূরে, এক প্রেমউন্মাদের কড়চা লেখেন।

প্রেম ও মৃত্যু কমল চক্রবর্তীর কবিতা ভাবনার একটা বড় অংশ জুড়ে আছে, তিনি লিখছেন- “মৃত্যু দেখেনি কেউ / ভাবধারা জানে মরীচিকা, ডাগর-কামান-বাহু / নিভে গেছে আয়ুষ্মান শিখা”। মৃত্যুকে জীবনের পাশে রেখে কবিতার যাত্রা করেন তিনি, এই মরণ চেতনা জীবনের বিপরীতে যাত্রা করার নয়, জীবন সত্যকে আরো নিবিড় তীব্রতায় উপভোগ্য করে তোলার চেতনা, তার আবশ্যিকতা ও সত্যকে আগলে নিয়ে জীবনকে দেখা। মানুষ যখন বলে এই তো বেঁচে আছি, তখন সে আসলে এক মৃত্যুর আবশ্যিকতার কথাই বলে, তেমনি কমল চক্রবর্তী যখন ভালোবাসার কথা বলেন সেখানেও কোথাও মৃত্যুর ধ্বনি লীন হয়ে থাকে। প্রথম কবিতার বই থেকে তাঁর সাম্প্রতিক কবিতা ও গদ্যের মাঝে সেই পরতে পরতে ‘মরণ-কথা’ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

“মানুষ মরে না / তাই নানা ছলে, নানা ফন্দি এঁটে মেরে ফেলা হয়...” এই অভিব্যক্তিতে বাচনের মধ্য থেকেই উঠে আসে প্রতিবাচন। কারণ সামাজিক মানুষের সংবেদনী মন-কখনও নির্জনে (শোনো ‘কালাচাঁদ হাঁক’) সম্পর্কের প্রত্যাশিত অভিব্যক্তি ভেঙে অপ্রত্যাশিত জায়গায় এসে পাঠককে দাঁড় করায়। শক্তি চাটুজ্জ্যে যখন মৃত্যুকে নিয়ে কাব্য লেখেন-; মৃত্যু, তুমি অঙ্গভঙ্গি/ মৃত্যু, তুমি রাসবিহারীর ট্রামলাইন / মৃত্যু, তুমি মেয়েদের চুলে-ভরা নীল কাঁচপোকা / আমার বারোটা রোদ, আনার বারোটা ঘোর ‘আঁধার’, আত্মঘাতী সময়ের উচ্চারণে যে রোমাটিসিজম সেখান থেকে অনেকটা বিপ্রতীপে কমল চক্রবর্তীর মৃত্যুর চেতনা দাঁড়িয়ে থাকে।

কমল চক্রবর্তী একবার সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “দ্যুস শালা! কবি তো সেই, যে সমস্ত শিল্প থেকেই কিছু না কিছু পায়। ফুটবল কিংবা উপনিষদ, বিবেকানন্দ কিংবা পেইন্টিং, বক্সিং থেকে ব্রোথেল। কবিতা লিখব আর ব্রোথেল যাব, এ তো দ্য আগলিয়েস্ট পোয়েট। আমরা তো চেষ্টা করিনি রে কবি হবার। টিক মার্ক দে রে, কী কী হলো, ওহো, পটারিটা হয়নি এখনো, টেরাকোটাটা একটু ওখানে মেরে দে গুরু- এরকম নয় কোনওভাবেই।” (নতুন কবিতা /১ম বর্ষ-২য় সংখ্যা)

যে ‘ফার্নেস’-এর কথা, দহনের বয়ানে যাত্রা শুরু করেছিলেন কমল চক্রবর্তী তিনি অবশেষে আশ্রয় নিলেন সবুজ ‘বৃক্ষ’ছায়ায়। দিগন্ত বিস্তৃত পাথুরে বিস্তারকে সবুজের আস্তরণে ঢেকে ফেলার ব্রত নিয়ে গড়েছেন তাঁর স্বপ্নের ‘ভালোপাহাড়’। কবিতাতেও সেই যাত্রার চিহ্ন দেখা যায়।...

প্রেমিকার জন্য আমি ঝরাপাতা-বন লাগিয়েছি

আমারও রক্তে ছিল জোড়াসাঁকো-ব্যাধি।

কবিমনে প্রশ্ন জাগে- এই সবুজ পৃথিবী বাসযোগ্য থাকবে তো? কমল চক্রবর্তী এই সংশয়ী চেতনা নিয়ে প্রকৃতির বুকে সবুজ রোপণ করেন, কবিতায় প্রাণ সঞ্চার করেন। এই আলোচনার অন্তিমে কমল চক্রবর্তীর লেখা থেকেই উদ্ধৃতি তুলে ধরছি, ‘আগামী প্রজন্মের কবিতা’ শীর্ষক গদ্যে তিনি লিখছেন: ‘এই দৃশ্যমান পৃথিবীর বাইরে, আরও বহু, অদ্ভুত, অপূর্ব পৃথিবী বর্তমান। সুন্দর নতুন, অনাবিষ্কৃত, দূষণহীন, রম্য ভুবন। যে আবিষ্কার মহাকাশ বিজ্ঞানী বা বস্তু বিজ্ঞানীর কর্ম নয়, একজন কবির। শব্দবন্ধ এমন এক জায়গায় চলে যাবে, হয়ে উঠবে মন্ত্র। সেই মন্ত্র উচ্চারণেই নতুন পৃথিবীর ‘চিচিংফাক’।... মানুষ কাঁদছে। আনন্দ ভুবনের ঠিকানা হাতছাড়া। দুঃখ, দুর্দশা, হতাশা ক্রমে মানুষের নিত্যসঙ্গী। না, এভাবে নয়। যেভাবে একদা বেদ, উপনিষদ, গীতা থেকে মেঘদূত, আখ্যান মঞ্জুরী হয়েছে, সেইভাবে আনন্দ-ভুবনের খোঁজ দিতে হবে।’ (নতুন কবিতা /প্রথম বর্ষ, ১ম সংখ্যা)। এই আনন্দ-ভুবন কোনো মনরঞ্জক পঙ্ক্তি নির্মাণের অভিমুখী নয়, মহানাগরিক জীবনের গতির তীব্রতা যে নিয়ত অস্থির আধুনিকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে পুষ্ট করে, তার উল্ট পক্ষে দাঁড়িয়ে সদর্থক সমাজবৃত্ত তৈরি করেন তিনি। কমল চক্রবর্তী সেই আনন্দ-ভুবনের খোঁজ দিতেই উৎসর্গিত।

ছবি

অর্ধেক জীবন

ছবি

ক্যান্ডি, শ্রীলঙ্কায় বেড়ানোর আদর্শ জায়গা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

‘দূরের কার্নিশ’

ছবি

কবিতায় উড়ন্ত সারস

ছবি

সাহিত্যের দর্শনানুসন্ধান

ছবি

রবীন্দ্রসংগীত চর্চা, বাংলাদেশে-

শক্তিমান কবির কলমে গল্প

ছবি

শহীদুল হকের জীবন ও আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতা

ছবি

জলবন্দী স্বপ্ন

সাময়িকী কবিতা

ছবি

নূরুল হক : আধুনিক মরমি কবি

ছবি

ও. হেনরি : ছোটগল্পের কালজয়ী অগ্রদূত

ছবি

নজরুল : বিশ্বতোরণে বৈজয়ন্তী মানব-বিজয়-কেতন

ছবি

নিছক সাজুর গল্প

সাময়িকী কবিতা

ছবি

কবিতায় বিশ্বস্ত স্বর

ছবি

স্মৃতির আয়নাজুড়ে শহীদ ভাই

ছবি

ব্যক্তিগত শহীদ

ছবি

দূরের তারাটিকে

ছবি

একটি দুর্বিনীত নাশকতার অন্তিম চিৎকার

ছবি

যেদিন সুবিমল মিশ্র চলে গেলেন

ছবি

ফিরবে না তা জানি

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

tab

সাময়িকী

কমল চক্রবর্তী, আদি ও অকৃত্রিম রিংমাস্টার

গৌতম গুহ রায়

কমল চক্রবর্তী

বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘দীর্ঘদিন কবিতা লিখতে না পারলে / আমি অহেতুক শয়তান হয়ে উঠি / মনুমেন্টের পর মনুমেন্ট ভেঙে খোঁজ করি / কোনো আত্মা আছে কিনা / ছুড়ি দিয়ে ফালা-ফালা করে ফেলি কবিতার খাতা...’।

১৯৭১-এ প্রকাশিত ‘চার নম্বর ফার্নেস’ আমার হাতে আসে এরও ১২ বছর পরে, ১৯৮৩’র বর্ষায়। সেইদিন ও এইদিন, মাঝের চল্লিশ বছরে কবি-ভাষার আলো-আধাঁরির কুহকী মায়ার এক রম্য সার্কাসের দর্শকাসন থেকে মুখ উঁচু করে দেখেছি কি নিপুণ দক্ষতায় ট্রাপিজের এক ‘বার’ থেকে অন্য ‘বারে’ অনায়াসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, হাতল ছেড়ে আবার শূন্য থেকেই অন্য হাতল মুঠোতে ধরছেন।

‘কৌরব’ থেকে ‘ভালো পাহাড়’, ক্রমশ সময় এগিয়ে যায় ও তিনি নিজেকে পাল্টাতে থাকেন, একসময় তিনি কবিতার অক্ষর-ধ্বনির ট্যাপিজ থেকে নেমে আসেন মাটিতে, ‘ভালোপাহাড়’-এর বৃক্ষনাথ তিনি, ছায়া দেন ছায়হীন নারী ও শিশুদের। লেখেন-

“এবার যদি আমি ফিরে আসি তবে নীল রঙ হয়ে ফিরে আসব।”

বৃষ্টিশেষে মেঘের ফাঁক দিয়ে বাংলার আকাশে যে নীল রঙটুকু দেখা যায়

আমি তারই মতো হাল্কা কিছু বলার চেষ্টা করব-” (প্রেমের কবিতা ৯)

তাঁর ‘চার নম্বর ফার্নেস চার্জড’ ২০১৬তে দ্বিতীয় সংস্করণ ‘পাঠক’ থেকে প্রকাশিত হয়। বইটি তিনি উৎসর্গ করেছিলেন ‘মা’কে। দ্বিতীয় সংস্করণে কমল চক্রবর্তী ‘জয় বৃক্ষনাথ’ শিরোনামে বইয়ের শুরুতে লিখেছেন, ‘...এবং নকশাল, আবেগতারিত। বিপর্যয়-রঙিন-বিস্মিত। চোখে লাগছে শালবন, দলমা পাহাড়, স্ল্যাগ পাহারের আগুন, গুলিবিদ্ধ পুলিশ, কখনও পরিচিতের মৃতদেহ।’... এরপর পাতা উল্টে যাই, ১৮ পাতার ‘যখন কবিতা লিখতে পারি না-১’ কবিতাটি-

‘...কবিতা মানে ধ্বংস

কবিতা মানেও নিরর্থক রক্তক্ষরণ

কবিতা মানে সঙ্গমনিরত হয়ে স্বাপ্নিক আলাপ

কবিতা মানে নির্বীর্য হিজড়ার মৈথুন যন্ত্রণা

পচে যাওয়া রে-ির চাম

আমাকে কোথাও নিয়ে যায় না

কোথাও না...’।

এই পাঠ আমাকে সময়চ্যুত করে। মজ্জায় রোপিত বিশ্বাস তখন ব্যবহৃত হতে হতে পচন আক্রান্ত, যুক্তিবোধ ও মানবিক উত্তাপ- এই দুয়ের মাঝের সম্পর্ক যখন উধাও হয়ে যায় তখন প্রতিবাদই প্রকৃত আধুনিকতা। কিন্তু, প্রতিবাদ মানবের, সভ্যতার জীবনী শক্তি, তা কখনই নৈরাজ্যের অজুহাত হতে পারে না। কমল চক্রবর্তী যখন দেখেন- ‘এবং নকশাল, আবেগতাড়িত। বিপর্যয়-রঙিন-বিস্মিত।... গুলিবিদ্ধ পুলিশ, কখনও পরিচিতের মৃতদেহ...’, এই পঙ্ক্তির সামনে তখন অবক্ষয়ী এই আধুনিকতার পুরোধা কবিদের ‘তেজী বিদ্রোহজাত সেই সময় শাসন আজ, কয়েক দশক পেরিয়ে এসে হয়ে ওঠে মূলত তাৎপর্যহীন, এক কুহকী বিভ্রমে আচ্ছন্ন প্রজন্ম। তাই অনায়াসে পাশাপাশি এসে দাঁড়ায় ‘আবেগতাড়িত নকশাল’ ও ‘গুলিবিদ্ধ পুলিশ’। এভাবেই আপাত বিপ্রতীপ, যুযধান দুই দৃশ্যের অবতারণায় ধূলিস্যাৎ হয়ে যায় বহু বিজ্ঞাপনে জন্ম নেওয়া কিংবদন্তি। কমল চক্রবর্তী এখানেই ব্যতিক্রমী বাঁক নেয়, পঞ্চাশের কবিদের একাংশ যখন সুবিধাবাদী ভঙ্গি-প্রবণ ছদ্ম-বিদ্রোহ প্রদর্শন উন্মুখ তখন তিনি শব্দসজ্জার আড়ম্বর ভেঙ্গে লেখেন-

‘টাটা বাবা, আগুন দিলে

লোহা লিলে

দুখার মায়ের বুক থিকে

মহুয়া গাছের ছায়া লিলে কেন?

বিয়ান বেলায় উঠে দেখি

পালক মেলা পইরে আছে

কুঁকড়া দুটা নাই সেঠিন কেন?’

এই উচ্চারণেই রোপিত আছে সেই ‘বীজ’ যা তাঁকে একদিন ‘ভালোপাহাড়’-এর বৃক্ষনাথ করে তোলে।

১৯৬৮ থেকে ১৯৭০, এই কয়েক বছরে লেখা কবিতা নিয়ে ১৯৭১-এ ‘চার নম্বর ফার্নেস চার্জড’ হয়। কমল চক্রবর্তীর আর যে বইটি আমাকে তীব্র বৈদ্যুতিক তরঙ্গে ‘চার্চড’ করে সেটি হলো ‘স্বপ্ন’।

“...পাতা ও পরাগের ছাওয়া তুলো থেকে

এই মস্ত করোটি ও ঘিলু

একেক দিন মুঠো ভর্তি ঘিলু নিয়ে স্তব্ধ এই বাতায়নে একা

...অবিরাম বৃষ্টির ধারার মধ্যে একাধিক শ্রাবণ রজনী

গনগনে আঁচের পিচ গর্ভে স্বপ্নাতুর উঠতে পারি না-

...

সবারই দুহাত ভরা আউশের চারা

ইঁদুরের কষা মাংস, ভাতে তৈরি ঘন-সাদা-মদ...”

এই ‘স্বপ্ন’ নিয়ে কথোপকথনে সহযোদ্ধা বারীন ঘোষাল তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- ‘...বেহালা-ছড়ের-ঘোড়া মর্তে আসুক লিখলে কী করে? ইঁদুরের কষা মাংস, ভাতে তৈরি ঘন-সাদা মদ, সন্ধ্যা, আলু সেদ্ধ, ডাল, পান্তা, কাচা লংকা, গন্ধলেবুপাতা- এই মুহূর্তে এই রসালো পরিবেশে ঘোড়াকে ডাকলে কীভাবে?”

কমল দার উত্তর ছিলো- “জানি না। কিছু না ভেবেই। এই পরিবেশে সর্বোৎকৃষ্ট নাচ, আমার মনে হলো কোন নাচুনী নয়, একটা ঘোড়ার পক্ষেই সম্ভব। হ্যাঁ, আমি দেখলাম গান গাইয়ে ঘোড়াটার উদয় হলো এবং নাচল। মনে মনে। অবশ্যই। আসলে চমকপ্রদ দুর্দান্ত চঞ্চল এক মানসিক নাচ চেয়েছি ওই পরিবেশে। মনটাই নাচছে।”

কবি কমল চক্রবর্তীর এই ‘মনটাই’ যাবতীয় সৃজন নির্মাণের ভিত গড়ে, যার নিয়ন্ত্রণ তাঁর কাছেও থাকে কি? মনে হয় থাকে না! কমল চক্রবর্তীর কবিতার দর্শন ও তাঁর কবি হয়ে ওঠার যাত্রাকে ধরতে হলে তাঁর ‘কথাবার্তা’র পথ ধরে এগোনো যেতে পারে। রঞ্জন মৈত্র সম্পাদিত ‘নতুন কবিতা’র ১ম বর্ষ-২য় সংখ্যায় কমল চক্রবর্তীর সঙ্গে কথোপকথন থেকে কিছু অংশ তুলে আনা যায়। “একটা এভারেস্টের মতো শাদা শ্বেতপাথরের বারীন আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে। যাকে ক্রল করে করে স্পিটন দিয়ে আইস অ্যাকস দিয়ে উঠতে হবে। সাধারণ মানুষ কোনও দিনও উঠতে পারে না। ওটা ওঠার জন্য একটা কমল চক্রবর্তী দরকার হয়।” এই কথোপকথনে কমল চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, “আমরা তখন সাহিত্য করব বলে ঠিক করেছি। একটা দুটো কি পাঁচটা ছ’টা কবিতা লিখেছি। তখন সুভাষ ভটচাজ বলল যে, বারীন কবিতা লেখে। তো আমি বললুম, কোন বারীন? তা, ও চেনাল, আমার চেয়ে এক বছরের সিনিয়র, আমারই স্কুলের। এগ্রিকোর ছেলে। আমি নিজে ছিলুম পাশের গ্রাম সিদ্গোড়ার ছেলে।... বারীন কবিতা লেখে শুনে তখন আমি আঁতকে উঠেছিলাম। কিন্তুই দ্যাখ, এতদিন আস্তে আস্তে কী হয়েছে, আমরা কেউ কাউকে খোঁড়ার চেষ্টা করিনি। বেশিরভাগ মানুষই যা করে, দুটো পাশাপশি বন্ধুও, লিটল ম্যাগাজিন যে জন্য ভেঙে যায়, একটা বন্ধু- সে কোথায় কী পেল, অন্যজন কেন পেল না, ও ওখানে কী করে গেল, কিসের জন্য, এ এখানে কাল্ট ফিগার কি না, ও ওখানে ফেল মারে কি না, এসব কুৎসিত রসায়ন। আমাদের প্রথম থেকেই আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল- সাহিত্যের জন্য যা যা করণীয়, বই পড়া, শ্রম দেয়া, মানুষের কাছে কবিতাকে নিয়ে যাওয়া, আলোচনা করা, যাবতীয় কাজ যে যতটা পারি করব। আমাদের গ্রোথের মধ্যে কোনও চালাকি নেই।... যে যতটুকু কাজ করতে পারবে, যদি যথার্থ কাজ হয়, চেঁচামেচি লাগবে না।... দ্যাখ, যতটুকু যে কটা পাঠক আমার বা বারীনের, সে তো এই জামসেদপুরের কাগজ কৌরব-এ লিখেই হয়েছে।... জীবনানন্দকে ৫৫-৫৬ পর্যন্ত কবিতা বগলদাবা করে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। সুধীন্দ্রনাথ দত্তকেও তাই। বুদ্ধদেব বসুকেও কাঁপতে কাঁপতে যেতে হয়েছে...।” এমন নানা কথার তানাবানায় আমরা কবি ও কবিতার জন্য উৎসর্গিত প্রাণ কমল চক্রবর্তীর কাছে পৌঁছে যাই। যে মানুষটি বলতে পারেন, ‘দ্যাখ, আমি ইমপালসিভ, অ্যাডভেনচারিস্ট। এই ষাট বছর বয়সেও অ্যাডভেনচারের জন্য আমি সব ত্যাগ করতে পারি, হতে পারি লোন-ফাইটার। ...আমি আমার মতো। আমি কারখানার জীবনযাত্রা, গ্রামীণ শব্দ, আদিবাসী জীবনযাপন- এসব লিখি।”। (নতুন কবিতা /১ম বর্ষ-২য় সংখ্যা) অনায়াসে লিখে ফেলেন-

“যেমন ভার্জিন বাঘিনী থাকে দাঁড়িয়ে সুঠাম / যৌবন মুখিয়ে স্থির- / থির থির কাঁপে শুধু নরম নাসিকা / ... টালমাতাল খুঁজে ফেরে ঘাসের দেয়াল / নখ দাঁত ঝরে যায়- / ফোলা ফোলা মুখিয়ে যৌবন / এবং সমস্ত ভয় আজীবন পরাজয়- / সব একেকার / শুধু পানাগার / শুধু যোজন যোজন পথ স্থির পানাগার।” (ভার্জিন বাঘিনী)

কমল চক্রবর্তী তাঁর ‘স্বপ্ন’কে কবিতার বৃত্তে সীমায়িত রাখেন নি, কবিতা যাপন থেকে অনেকটা প্রসারিত করে সেই বৃত্তের বাইরে নিয়ে এসেছেন। সেখানে মানব সভ্যতার সুস্থতার জন্য একজন ‘ভ্যানগার্ড’ তিনি, ভালো পাহাড় তাঁর সেই বিচরণ ক্ষেত্র। কবিতার ভাষায় তিনি তাই স্থাপন করেন এই নবরূপান্তরিত নিজেকেই,

‘কবি পঞ্চম স্তরের সাধনার অব্যাহতিতে দিব্যদৃষ্টি। তখন তিনি গদ্য, নাটক, প্রবন্ধ, দর্শন, বোধ পারেন। নির্মাণগুলি আর কেবলমাত্র নির্মাণ থাকে না, আরও দিব্য, প্রগাঢ়। তাঁর স্পর্শে জাগ্রত হয় পরিবেশ, মরা মাটি, অসুস্থ, অশিক্ষিত, অস্পৃশ্য, অপটু, অন্ধকার। তিনি মরা-মাটিতে গাছ লাগান, জড়ে চেতনা, মৃতকে অমৃত। নতুন জনপদ, জীবন সৃষ্টি। নতুন আকাশ বাতাস অসীম অনন্তের সূচনা।...” (নৌকোর ছায়া ২)

কবিতা, কৌরব, গদ্যকার কমল চক্রবর্তী তাঁর ‘সঙ্ঘ’ সংস্কৃতির কথা বারেবারে উচ্চারণ করেছেন, এই সঙ্ঘ তাঁদের ‘কৌরব’। তাদের ‘ভালোপাহাড়’।

কবিতা, সাহিত্যের অন্তর্মুখী নির্মাণ ও সামাজিক জীবনের স্বপ্নভূমের বহির্মুখী সক্রিয়তা, এই স্থানান্তরের জন্যই হয়তো তাঁর কবিতায়, গদ্যে বারংবার ফিরে ফিরে আসে ব্যক্তি কবির কবিতা বিষয়ক চিন্তার একথা সেকথা। তাঁর নিজের কথায়, “(কবিতায়) অন্তর্মুখী তো হতেই হবে প্রত্যেককে। লেখার টেবিল তো এই টেবিলটা না। সেখানে তো সিরিয়াস, লিখিতে লিখিতে মগ্নতায় চলে আসছি। বহুকাল আগেই বলেছিলাম, আমি তো লিখতে জানি না, লেখে আমার কলমটা।” (নতুন কবিতা) “অধিকাংশ কবি মৃত্যু বা কবিতা লেখা অব্যাহতি বা ছাপাখানার কৃপা বঞ্চিত হবার সঙ্গে সঙ্গে আঁস্তাকুড়ে। অর্থাৎ যিনি ছবি বা ছায়াছবি, নাটক বা গান, একই, ভবিষ্যৎ। যদিও অমরত্ব লক্ষ্য নয়। তবু যাত্রী যখন দীর্ঘ পথের তখন অমৃত ভুবনে তাঁর পথ চলা।...”

২০০২-এ প্রকাশিত ‘নতুন কবিতা’র প্রথম সংখায় ‘আগামী প্রজন্মের কবিতা’ শীর্ষক গদ্যে তিনি লিখছেন, ‘...সে তো আদিম কালে, একজন বলেছিলেন, ‘কবিকে নির্বাসন দাও’। সত্যি ওরা কবিতার বহিরঙ্গ যত বোঝেন তত অন্তরঙ্গ নয়। সম্ভব নয়। যেমন আমরা মেসিন, যন্ত্র, ঠিক ততটা নয়। আজ যারা নিয়মিত বিদেশে যাতায়াত করেন বলেন, ওদেশে কবিতা শেষ। আর তেমন পাঠকও নেই। কবিতার দিন শেষ।... জনগন পড়বে বলে কবিতা লেখা হয় না। বারবার বলছি, ‘কবিতা’ মন্ত্র। পড়া, বোঝা, লেখা সবই কঠিন। ...পশ্চিম-মানুষের মনন, শিক্ষা, সমাজব্যবস্থা, প্রাত্যহিকতা কবিতার পরিপন্থী। আস্তে আস্তে এমন একদিন আসবে যেদিন পৃথিবী, ভারতের কাছে ‘কবিতা’ ভিক্ষে চাইবে। আগত প্রায় সেই দিন। তার আগে আমাদের বোঝা দরকার শব্দ যোজনা ও আত্মা-আনুসন্ধান।” যাপনের অভ্যস্থতা ও রুক্ষতা জাত কার্যকারণ, যা কিছু কবিতাকে ব্যহত করে সেই সবই তাঁর কাছে পরিত্যজ্য। চিন্তার প্রাতিষ্ঠানিকতাকে মান্যতা দেন নি, আবার বিপরীতে সামাজিক বা রাষ্ট্রিক প্রাতিষ্ঠানিকতার কাছে কবিতার পরাজয় মানতে পারেননি তিনি।

কমল চক্ররর্তীর দীর্ঘ সময়কালীন সাহিত্যযাপনে প্রবল বৈচিত্র্য যেমন রয়েছে তেমন রয়েছে বিপুল অভিজ্ঞতা। কবিতায়, গানে, গদ্যে, নাটকে, পত্রিকা সম্পাদনার নানা ক্ষেত্রে তিনি চলাফেলা করেছেন। এই কারণে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে সেই অভিজ্ঞতা তিনি ঝেড়ে ফেলেন না, তার লেখার মধ্যে রেখে দেন। একসময় গান রচনা করার কাজ করেছেন। গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র জন্য বেশ কিছু গান লিখেছিলান। এই গানগুলোর মধ্যে ‘সাততলা বাড়ি’ জনপ্রিয় হয়েছিলো।

‘মনে করো সাততলা বাড়িটার / একতলা হাতি আর ইঁদুরের / দোতলায় বুড়ো থাকে রিটায়ারড / লাল নীল উপ বোনে বুড়ি তার / তিনতলা ছবি আঁকে গ্যালারি / পিকাসো রুবেন্স দালি রেনোয়া / চারতলা কথা বলে ফিস্ফাস / পাখি যদি উড়ে যায় ঘাবড়ে... তারাদের দুপুরের ভাতঘুম / সেখানে খোকন-সোনা মামণি, / চাঁদ ধরে সূর্যের সাথি হয় / সেখানে খোকন-সোনা মামণি।/ চাঁদ ধরে সূর্যের সাথি হয়...”

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ও কণ্ঠে মহীনের ঘোড়াগুলি সম্পাদিত ‘খ্যাপার গান’ অ্যালবামে গানটি রয়েছে।

বুকভরা ভালোবাসার আকুতি না থাকলে কবি ও বিপ্লবী হওয়া যায় না, এটা কমলদা মানেন কিনা জানি না, কিন্তু তাঁর যাবতীয় কাব্যিক মুন্সিয়ানা এসে জমা হয় প্রেমের কায়ামূলে। তান্ত্রিক সুলভ সান্ধ্যভাষার বুনন থেকে তখন তিনি অনেক দূরে, এক প্রেমউন্মাদের কড়চা লেখেন।

প্রেম ও মৃত্যু কমল চক্রবর্তীর কবিতা ভাবনার একটা বড় অংশ জুড়ে আছে, তিনি লিখছেন- “মৃত্যু দেখেনি কেউ / ভাবধারা জানে মরীচিকা, ডাগর-কামান-বাহু / নিভে গেছে আয়ুষ্মান শিখা”। মৃত্যুকে জীবনের পাশে রেখে কবিতার যাত্রা করেন তিনি, এই মরণ চেতনা জীবনের বিপরীতে যাত্রা করার নয়, জীবন সত্যকে আরো নিবিড় তীব্রতায় উপভোগ্য করে তোলার চেতনা, তার আবশ্যিকতা ও সত্যকে আগলে নিয়ে জীবনকে দেখা। মানুষ যখন বলে এই তো বেঁচে আছি, তখন সে আসলে এক মৃত্যুর আবশ্যিকতার কথাই বলে, তেমনি কমল চক্রবর্তী যখন ভালোবাসার কথা বলেন সেখানেও কোথাও মৃত্যুর ধ্বনি লীন হয়ে থাকে। প্রথম কবিতার বই থেকে তাঁর সাম্প্রতিক কবিতা ও গদ্যের মাঝে সেই পরতে পরতে ‘মরণ-কথা’ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

“মানুষ মরে না / তাই নানা ছলে, নানা ফন্দি এঁটে মেরে ফেলা হয়...” এই অভিব্যক্তিতে বাচনের মধ্য থেকেই উঠে আসে প্রতিবাচন। কারণ সামাজিক মানুষের সংবেদনী মন-কখনও নির্জনে (শোনো ‘কালাচাঁদ হাঁক’) সম্পর্কের প্রত্যাশিত অভিব্যক্তি ভেঙে অপ্রত্যাশিত জায়গায় এসে পাঠককে দাঁড় করায়। শক্তি চাটুজ্জ্যে যখন মৃত্যুকে নিয়ে কাব্য লেখেন-; মৃত্যু, তুমি অঙ্গভঙ্গি/ মৃত্যু, তুমি রাসবিহারীর ট্রামলাইন / মৃত্যু, তুমি মেয়েদের চুলে-ভরা নীল কাঁচপোকা / আমার বারোটা রোদ, আনার বারোটা ঘোর ‘আঁধার’, আত্মঘাতী সময়ের উচ্চারণে যে রোমাটিসিজম সেখান থেকে অনেকটা বিপ্রতীপে কমল চক্রবর্তীর মৃত্যুর চেতনা দাঁড়িয়ে থাকে।

কমল চক্রবর্তী একবার সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “দ্যুস শালা! কবি তো সেই, যে সমস্ত শিল্প থেকেই কিছু না কিছু পায়। ফুটবল কিংবা উপনিষদ, বিবেকানন্দ কিংবা পেইন্টিং, বক্সিং থেকে ব্রোথেল। কবিতা লিখব আর ব্রোথেল যাব, এ তো দ্য আগলিয়েস্ট পোয়েট। আমরা তো চেষ্টা করিনি রে কবি হবার। টিক মার্ক দে রে, কী কী হলো, ওহো, পটারিটা হয়নি এখনো, টেরাকোটাটা একটু ওখানে মেরে দে গুরু- এরকম নয় কোনওভাবেই।” (নতুন কবিতা /১ম বর্ষ-২য় সংখ্যা)

যে ‘ফার্নেস’-এর কথা, দহনের বয়ানে যাত্রা শুরু করেছিলেন কমল চক্রবর্তী তিনি অবশেষে আশ্রয় নিলেন সবুজ ‘বৃক্ষ’ছায়ায়। দিগন্ত বিস্তৃত পাথুরে বিস্তারকে সবুজের আস্তরণে ঢেকে ফেলার ব্রত নিয়ে গড়েছেন তাঁর স্বপ্নের ‘ভালোপাহাড়’। কবিতাতেও সেই যাত্রার চিহ্ন দেখা যায়।...

প্রেমিকার জন্য আমি ঝরাপাতা-বন লাগিয়েছি

আমারও রক্তে ছিল জোড়াসাঁকো-ব্যাধি।

কবিমনে প্রশ্ন জাগে- এই সবুজ পৃথিবী বাসযোগ্য থাকবে তো? কমল চক্রবর্তী এই সংশয়ী চেতনা নিয়ে প্রকৃতির বুকে সবুজ রোপণ করেন, কবিতায় প্রাণ সঞ্চার করেন। এই আলোচনার অন্তিমে কমল চক্রবর্তীর লেখা থেকেই উদ্ধৃতি তুলে ধরছি, ‘আগামী প্রজন্মের কবিতা’ শীর্ষক গদ্যে তিনি লিখছেন: ‘এই দৃশ্যমান পৃথিবীর বাইরে, আরও বহু, অদ্ভুত, অপূর্ব পৃথিবী বর্তমান। সুন্দর নতুন, অনাবিষ্কৃত, দূষণহীন, রম্য ভুবন। যে আবিষ্কার মহাকাশ বিজ্ঞানী বা বস্তু বিজ্ঞানীর কর্ম নয়, একজন কবির। শব্দবন্ধ এমন এক জায়গায় চলে যাবে, হয়ে উঠবে মন্ত্র। সেই মন্ত্র উচ্চারণেই নতুন পৃথিবীর ‘চিচিংফাক’।... মানুষ কাঁদছে। আনন্দ ভুবনের ঠিকানা হাতছাড়া। দুঃখ, দুর্দশা, হতাশা ক্রমে মানুষের নিত্যসঙ্গী। না, এভাবে নয়। যেভাবে একদা বেদ, উপনিষদ, গীতা থেকে মেঘদূত, আখ্যান মঞ্জুরী হয়েছে, সেইভাবে আনন্দ-ভুবনের খোঁজ দিতে হবে।’ (নতুন কবিতা /প্রথম বর্ষ, ১ম সংখ্যা)। এই আনন্দ-ভুবন কোনো মনরঞ্জক পঙ্ক্তি নির্মাণের অভিমুখী নয়, মহানাগরিক জীবনের গতির তীব্রতা যে নিয়ত অস্থির আধুনিকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে পুষ্ট করে, তার উল্ট পক্ষে দাঁড়িয়ে সদর্থক সমাজবৃত্ত তৈরি করেন তিনি। কমল চক্রবর্তী সেই আনন্দ-ভুবনের খোঁজ দিতেই উৎসর্গিত।

back to top