alt

সাময়িকী

জলবন্দী স্বপ্ন

পারভীন সুলতানা

: বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিল্পী : সঞ্জয় দে রিপন

চাঁদের পতনশীল আলো ঘোলাটে পানিতে ভিজে উপায়হীন চিৎ সাঁতারে ভাসতে থাকে। দৃষ্টি সীমানার সমস্তটুকুজুড়ে জলের ধাববান ধারা। পরী স্থৈর্যহীন ক্রোধে, পানির সমান্তরাল ধারায় গর্ত না করেও পা দুটো ঢুকিয়ে দেয়। যেন কংসের পাষাণ বুক ক্ষত করে, খুন করে ফেলবে। হায়! কন্যা জানে না নদী কখনো খুন হয় না! জলরাশির চোখ ক্লান্তিকর ব্যাপ্তির দিকে তাকিয়ে তীব্র কষ্টে পরী একবার ডুকরে কেঁদেও ওঠে। মাচানের ভেতর মানুষগুলো মড়া ঘুমে অচেতন। অথচ এক রাতের ছবি-চাঁদ ও জলের নিবিড় আলিঙ্গন, ঝুম জ্যোৎস্নার জলজ ধবল রূপ পরীর কাছে ছিল অলৌকিক স্বপ্নের মতো।

উজান দেশের মেয়ে পরী। পুকুর ছাড়া জলের বড় কোনো উৎসের অস্তিত্ব সে কখনো চোখে দেখেনি। নদী তাদের গ্রাম থেকে ছ/সাত মাইল দূরে। কোনো আত্মীয় কুটুমের বাড়িতে আসা-যাওয়ার পথে সেই নদীও পড়ে না। পরীর পড়ার ঘরে নীল সমুদ্রের আছড়ে পড়া বড় একটা ছবি টাঙ্গানো ছিল। ছবিটা পরীকে শহরে বাস করা ফুপাতো ভাইয়ের দেয়া। আকাশ ও সমুদ্রের মিলিত সৌন্দর্য পরীর মনে ঘোর স্বপ্ন হয়ে ঢুকে যায়। পরীদের শুকনো দেশে স্তূপ স্তূপ মাটির চাষাড়ে জমিন আর আকাশ ঢেকে দেয়া বড় বড় বৃক্ষ, আম, জাম, কাঁঠাল, অশ্বথ শুধু।

নিরন্তর বয়ে যাওয়া জলের মিহিন শব্দে ছাল-ওঠা হৃৎপি-ের রক্তপাত উপেক্ষা করেও গীতের চরণ দুটো ভোঁতা মাথায় ঝুম ঝুম বেজে ওঠে-

“জল ভর সুন্দরী কইন্যা জলে দিছ মন

কাইল যে কইছিলাম কতা, আছেনি স্মরণ”

ভিন গ্রাম থেকে আসা পালা গায়েন রহিমের ভরাট গলার এই গীত পরীর সমস্ত চৈতন্যে ডাকাতের মতো ঢুকে পড়ে। জলে মন দেয়া এই কইন্যার সমস্ত অনুভূতিতে আনচান করা অনুভব। মন শুধু পবনের নাও হয়ে অস্থির ধাপাধাপি করে। স্মৃতিচারণের এই পর্বে প্রবল আক্রোশে মুখে জমে-ওঠা থুথু পানির নরম পাটাতনে বমি মতো উগরে দেয়। পরী। বিকারগ্রস্ত হয়ে ফিসফিস? করে- হায়রে পানি সরবোনাইশ্যা, সুখহননকারী!

টুকরো টুকরো গ্রামগুলো ডুব ডুব পানির তলে ঢুকে সমান্তরাল হয়ে আছে। গোরস্থানের উঁচু জমিনের বুক সমান পানির উপর মাচান বেঁধে রহিমদের পুরো পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। নিশুতি রাত। সবাই বেঘোর ঘুমে জব্?জব্?। পরীর ঘুম আসে না। নিজের গ্রামের দিশা হারিয়ে অজানা গাঁয়ের ঘোর দারিদ্র্যপীড়িত এই জলবন্দী জীবন বড় দুর্বিষহ লাগে তার কাছে। চারিদিকের পরিপাটি নির্জনতা, চাঁদ ও জলের নিবিড় আলিঙ্গন কিছুই ভাল্লাগেনা না পরীর কাছে। চৌদ্দ দিন বয়সের বিয়ের গন্ধ ঘটি ঘটি পানির ধারায় ধুয়েমুছে সাফ করে ফেলতে চায় পরী। তার স্বামী উন্মাতাল যৌবনের নবীন সুখে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। মাচানের ভেতর উঁকি মেরে ঢুকে যাওয়া জ্যোৎস্নার আলোয় রহিমের রূপবান নাক মুখ স্পষ্ট। কিন্তু সেই রূপে বিন্দুমাত্র কাঁপন ধরে না বুকে। এই নবীন যুবক পালাগানের দলের সাথে তাদের গাঁয়ে গিয়েছিলো। মেম্বার বাড়ির কাচারি ঘরেই তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়। পালাটিতে রহিমের অভিনয় দক্ষতা ও গানের সুরেলা কণ্ঠ নৈপুণ্য গ্রামের বেভুলা মানুষদের মন হরণের জন্য ছিল যথেষ্ট। তার সদ্য যুবক হওয়া দেহে সৌন্দর্যের ষোলকলা ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। পালার সেই চরণ...

“জল ভর সুন্দরী কইন্যা...

জলে দিছ মন

কাইল যে কইছিলাম কতা,

আছেনি স্মরণ...”

শোনার পর রাতের বালিশে সুস্থির হয়ে মাথা থিতু করতে পারেনি পরী। আঁঠালো আবেশে ক্লাস নাইনের সহজ অঙ্কও তার মতো মেধাবী ছাত্রীর কাছে দুর্ভেদ্য হয়ে ওঠে। পালার মেয়াদ আরো বাড়ানো হয়। ক্রমশ মেম্বার বাড়ির অন্দর মহলে, স্নেহের অন্ধ ফাঁকফোকর গলিয়ে অনুপ্রবেশের অধিকার পায় রহিম। পরীর সাথেও তার সখ্য রচিত হয় একটু একটু করে। রাতের থিতোনো নির্জনতায় ভাটি দেশের গল্প শোনায় রহিম... চারিদিকে থৈ থৈ পানি। মাঝেমধ্যে জলপদ্মের মতো ভাসা ভাসা এক একটা গ্রাম। রিকশার টুঙটুঙানি নাই, ট্রাক বাসের হর্ন নাই! খালি আছে নৌকার তির তির বৈঠা মারার চিকন শব্দ। ধবল জ্যোৎস্নায় বিলে নামে সাদা বকের ঝাঁক যেন আসমান থেকে নামা দুধ সাদা পথ...। পরী প্রায় দম বন্ধ করা নিশ্বাসে সেই রূপকথার গল্প শুনে শুনে রাতে ভোর করে ফেলে। ভয় খাওয়া চৈতন্যে পেছনের খিড়কি দিয়ে ঘরে এসেও শান্তি পায় না পরী। স্মৃতি মন্থনের ফোকর গলে জলে ঝপ্? ঝ্?প বৈঠা টানার শব্দ ঢুকে পড়ে। আলোকিত জ্যোৎস্নায় পরী তাকিয়ে দেখে দূরে একটা নৌকা যায়। জলের তোড়, দূরের সেই শব্দ ঘুরপাক খাইয়ে পরীর কানে ঢুকিয়ে দেয়। একসময় কালো বিন্দুর অবয়ব নিয়ে আরো দূরে চলে যায় নৌকা। বিষাদের ঘন আস্তরে ভারি হতে থাকে পরীর যন্ত্রণাকাতর মন। ঠোঁটে রিন্? রিন্? করে দুঃখের সুর বাজে-

“ঐ যে দেহা যায় রেলের গাড়ি আইতাছে

রেলের গাড়ির বিতরে বাজান বইয়া রইছে

ও বাজান বাজান গো মায়া কিতা করে?

তোমার মায়ের কান্দনে ?দুঃকের পাতা ঝরে।”

পরী সাঁতারও জানে না। জানলে নদী সাঁতরে খুঁজে নিতো নিজের গ্রামের ঠিকানা। রাতে নিপাট নির্জনতায় পরীর নিশ্বাস প্রলম্বিত হতে থাকে। জলের উপর গলা ডুবে থাকা মান্দার গাছের মগডালে লাল টক্?টকে ফুল ফুটে আছে। বিছানো কাঁটার মাঝখানে কঠিন লাল সৌন্দর্য পরীর মনকে আরো বৃত্তবন্দী করে তোলে- হায়, সেদিন ছিল ঘোর অমাবস্যা, নিরাপদ অন্ধকারে রহিমের তাজা পৌরুষদীপ্ত হাতের উষ্ণতা মনের শেষ দ্বিধাকেও দ্বিখ-িত করে ফেলে। দুর্মর সাহসের ফেনা পরীর ভেতর ভালোবাসার কঠিন লৌহবর্ম পরিয়ে দেয়। ঘুমন্ত গ্রামকে পিছে ফেলে এগিয়ে চলা। বাস, রিকসা দু’দু’বার ট্রেন বদল। ঘিঞ্জি ট্রেনের ভেতর ঘামগন্ধ মানুষের চাপে চেপ্টা পরীর চোখে তখনও জলের সূক্ষ্ম কারুকাজময় ছবি। তারপর একটা জীর্ণ স্টেশনে নামে দু’জন, তবু ফুরোয় না পথ। ইঞ্জিন নৌকার ভট্? ভট্? আওয়াজে বিরক্ত পরী রহিমের পাশে ঘন হয়ে বসে স্বস্তি খোঁজে। তখন মনে বিন্দু বিন্দু করে বাড়ির মানুষের জন্য “মন কেমন করে”-এর জল জমা হতে থাকে। ইঞ্জিন নৌকা তাদের যেখানে নামায় তা ছোট একটা হাট। যেন পুকুরে ভেসে থাকা কাছিমের পিঠ। সেখান থেকে কুশায় চড়ে তারা। রহিমের তেইশ দিনের পরিচিত মুখে ঘন আন্ধার দেখে পরী। কোথায় গ্রাম? শুধুই থই থই পানি। পরী রহিমের হলুদ পাঞ্জাবীর খুট ধরে টানে : “কোনখানে তোমাগর গেরাম?” রহিমের ভরাট গলা ভেঙ্গে ফ্যাঁসফেসে হয়ে ওঠে: গেরামে বান ঢুইক্যা গেছে। পাহাড়ের ঢল আর কংসের বাড়তি পানি আমাগর সর্বনাশ করছে পরী। ‘নেভা নেভা সন্ধ্যায় পরিবারের খোঁজ পায় রহিম। উঁচু এক গোরস্থানের বুক পানির উপর বাঁশ কাঠের শক্ত গাঁথুনিতে তৈরি মাচানে যখন নবদম্পতি প্রবেশ করে ভেতরে তখন তা-ব চলছে। রিলিফে পাওয়া খাদ্যের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের তীক্ষè গলার ঝাঁঝ আরো ভয়াবহ। রহিমের সঙ্গে ঘোমটা টানা পুঁটলি দেখে শাশুড়ির গলা বাজপাখির তীক্ষèতায় ঝনঝন করে ওঠে : নয়া বউ বুঝি? হাংগা করনের আর সময় পাইলি না অবাগির পোলা? যে রিলিফ পাই তা দিয়া ষোলডা পেডের কানিকুনাও ভরে না, সোনার চানরে খাওয়াইবি কি? আতঙ্কে মাথার ঘোমটা খসে পড়ে পরীর- তার মেম্বার পিতার বাড়িতে সারা বছর থাকে মণ মণ ধানের টাল। তারপরও ঘুমন্ত রাতের নিঃশব্দ মুহূর্তে রহিমের ঘন বাহুতে মুখ গুঁজে খড়কুটোর মতো জীবন খুঁজে সে। এক দংগল লোকজনের ভেতর রচিত বাসরঘরে ডোরাকাটা শাড়ির দেয়াল বানিয়ে বন্য ষাঁড়ের মতো অস্থির হয়ে ওঠে রহিম। পরদিন রোদ ওঠা ভোরে মহিলা কণ্ঠের একগাদা ছি ছি কানের ফুটোয় ভরতে ভরতে তেতো হয়ে ওঠে পরী। এভাবে টানা চৌদ্দদিন। ভালোবাসার সমস্ত রোমকূপ উঠে গলাছিলা মুরগির কুৎসিত ঘেন্না প্রকট হয়ে উঠেছে।

পরিবারটি একদিন শিশুদের রহিম ও পরীর তত্ত্বাবধানে রেখে রিলিফ আনতে গঞ্জে যায়। পরী জবাই করা হরিণের মতো তড়পায়। বিলাপের উঁচু স্বরে ডুকরে ওঠে: তুমি আমারে কুন দোজখে নিয়া আইছো। অসহায় রহিমের ফর্সা গোল মুখে দ্বিধা ফুটে ওঠে : “বান না আইলে তুমারে আমি যেই রকম বর্ণনা দিছিলাম- সবকিছু ঠিক সেই রকমই আছিলো।” পরীর ডুবে যাওয়া গলায় মিনতি ফুটে ওঠে- “তোমার পায়ে পড়ি, আমারে আমার গেরামে লয়া যাও, আমি কতদিন আমার মায়েরে দেহি না! আমারে বাজানের কাছে লয়া চল।” রহিমের নিরুপায় গলা জলের ঘোলা শরীরে ধাক্কা মারে, বলে, “তোমার গেরাম সেই কোন উজান দেশে। আইতে যাইতে মেলা ভাড়া লাগে। অতো টেকা তো আমার কাছে নাই। পালাগানের এই পর্যন্ত পাওয়া টেকা আসনের সময়ই খরচ হয়া গেছে। বান কমুক, আমি একটা কিছু ব্যবস্থা কইরা তুমারে ঠিক লয়া যামু।” পরীর গলায় জেদ খড়খড়ে হয়ে ওঠে। একরোখা ভঙ্গিতে সে বলে : “আমি এইসব কিছু জানি না, এই রাক্ষসী পানির দেশে আর থাকতে পারতাম না আমি চইলা যামু...!” কোন কথা খুঁজে পায় না রহিম। ভিজা, নেতানো ভঙ্গিতে ঘোলা পানির দিকে শুধু তাকিয়ে থাকে।

মাচানের চৌদ্দ দিন বয়সী অবস্থানে পরীর এই নিশি জাগা অনুভবে এক কণা ভয়ের মিশেল নেই। ছোটবেলা থেকেই এই কন্যা দুর্মর সাহসী। তাদের গ্রামে কালিন্দীর মঠে যেখানে গায়ের হিন্দুরা মারা গেলে মড়া পোড়ানো হয় সেখানে একটা সিন্দুরে আমগাছ আছে। ঘোর আন্ধারে শুধু আজানটা পড়লেই মনে হতো- একা একা কোচড় ভরে সেই আম চুরি করে নিয়ে আসতো পরী। তাদের বাড়ির পেছনের ঝাঁকড়া গাবগাছটা স্বরচিত ভুতের গল্পে আবিল। একদিন গাছে চড়ে পেতœী হয়ে ভয় দেখিয়ে বেহুঁশ করে ফেলেছিল রাতে পেশাব করতে আসা বজ্জাত মায়মুনা বুড়িকে। বুড়ির ঝোলায় থাকতো তাবৎ গাঁয়ের যুবতী মেয়েদের রসালো গিবতের কুৎসিত সব কেচ্ছা। মধ্যরাতের সঞ্চিত পেশাব উঠানের মাঝখানে ঢাললেও গাব গাছটা ছিল চোখের উদোম নজরে। পরীর সাহসের ডালপালা এমনই বিস্তৃত!

খুনখুনে বুড়ি জ্যোৎস্না ফজরের আজানের সময় জলে নেতিয়ে পড়ে। রাত জাগা ক্লান্ত পরী, মাথায় আকাশ ঝুলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে একসময়। তার সুন্দর বিমর্ষ মুখে সূর্যের প্রথম আলো এসে যখন পড়ে মাচানজুড়ে তখন আতঙ্কের হুটোপুটি। কালনাগিনীর বিষাক্ত ছোবলে নীল হয়ে যাওয়া পরীর দেহটা ঘিরে বসে থাকা মানুষের মধ্যে শোকের চেয়েও ঘোলাটে বিহ্বলতা কাজ করে। রহিম বুকের মধ্যে বিন্দু বিন্দু করে জমে ওঠা শোকের ব্যাপ্তি টের পায় একসময়। মাটি উপড়ে নিয়ে আসা এই মেয়েটির মৃত্যুর সব দায়ভার নিজের মধ্যে ধারণ করে পাথর স্তব্ধতায় বসে থাকে সে। গোরস্থানের আশ্রয় ডুবে গেছে। একশো বছর পুরানো জমিদার বাড়ির ক্ষয়িষ্ণু দোতলায় আশ্রয় নিয়েছিলো গ্রামের কিছু পরিবার। ১০/১২ মাইলের মধ্যে মাটি নাই।

ধবল জ্যোৎস্নায় দুই পহর রাতে কংসের কঠিন বুকে প্রবল জোয়ার ওঠে। উজানের পানে বয়ে যাওয়া ঢলে সাঁতার না জানা কন্যাটি দিব্যি সাঁতারুর ভঙ্গিতে ওর যাত্রা শুরু করে। রহিমের প্রত্যয় জন্মে; নিশ্চয় পরীর এ সাঁতার খুঁজে পাবে ডাঙা। সেখানে আছে মাথা উঁচু সবুজের সমারোহ। আম, জাম, কাঁঠাল ও অশ্বথবৃক্ষ।

ছবি

অর্ধেক জীবন

ছবি

ক্যান্ডি, শ্রীলঙ্কায় বেড়ানোর আদর্শ জায়গা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

‘দূরের কার্নিশ’

ছবি

কবিতায় উড়ন্ত সারস

ছবি

সাহিত্যের দর্শনানুসন্ধান

ছবি

রবীন্দ্রসংগীত চর্চা, বাংলাদেশে-

শক্তিমান কবির কলমে গল্প

ছবি

শহীদুল হকের জীবন ও আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

কমল চক্রবর্তী, আদি ও অকৃত্রিম রিংমাস্টার

ছবি

নূরুল হক : আধুনিক মরমি কবি

ছবি

ও. হেনরি : ছোটগল্পের কালজয়ী অগ্রদূত

ছবি

নজরুল : বিশ্বতোরণে বৈজয়ন্তী মানব-বিজয়-কেতন

ছবি

নিছক সাজুর গল্প

সাময়িকী কবিতা

ছবি

কবিতায় বিশ্বস্ত স্বর

ছবি

স্মৃতির আয়নাজুড়ে শহীদ ভাই

ছবি

ব্যক্তিগত শহীদ

ছবি

দূরের তারাটিকে

ছবি

একটি দুর্বিনীত নাশকতার অন্তিম চিৎকার

ছবি

যেদিন সুবিমল মিশ্র চলে গেলেন

ছবি

ফিরবে না তা জানি

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

tab

সাময়িকী

জলবন্দী স্বপ্ন

পারভীন সুলতানা

শিল্পী : সঞ্জয় দে রিপন

বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চাঁদের পতনশীল আলো ঘোলাটে পানিতে ভিজে উপায়হীন চিৎ সাঁতারে ভাসতে থাকে। দৃষ্টি সীমানার সমস্তটুকুজুড়ে জলের ধাববান ধারা। পরী স্থৈর্যহীন ক্রোধে, পানির সমান্তরাল ধারায় গর্ত না করেও পা দুটো ঢুকিয়ে দেয়। যেন কংসের পাষাণ বুক ক্ষত করে, খুন করে ফেলবে। হায়! কন্যা জানে না নদী কখনো খুন হয় না! জলরাশির চোখ ক্লান্তিকর ব্যাপ্তির দিকে তাকিয়ে তীব্র কষ্টে পরী একবার ডুকরে কেঁদেও ওঠে। মাচানের ভেতর মানুষগুলো মড়া ঘুমে অচেতন। অথচ এক রাতের ছবি-চাঁদ ও জলের নিবিড় আলিঙ্গন, ঝুম জ্যোৎস্নার জলজ ধবল রূপ পরীর কাছে ছিল অলৌকিক স্বপ্নের মতো।

উজান দেশের মেয়ে পরী। পুকুর ছাড়া জলের বড় কোনো উৎসের অস্তিত্ব সে কখনো চোখে দেখেনি। নদী তাদের গ্রাম থেকে ছ/সাত মাইল দূরে। কোনো আত্মীয় কুটুমের বাড়িতে আসা-যাওয়ার পথে সেই নদীও পড়ে না। পরীর পড়ার ঘরে নীল সমুদ্রের আছড়ে পড়া বড় একটা ছবি টাঙ্গানো ছিল। ছবিটা পরীকে শহরে বাস করা ফুপাতো ভাইয়ের দেয়া। আকাশ ও সমুদ্রের মিলিত সৌন্দর্য পরীর মনে ঘোর স্বপ্ন হয়ে ঢুকে যায়। পরীদের শুকনো দেশে স্তূপ স্তূপ মাটির চাষাড়ে জমিন আর আকাশ ঢেকে দেয়া বড় বড় বৃক্ষ, আম, জাম, কাঁঠাল, অশ্বথ শুধু।

নিরন্তর বয়ে যাওয়া জলের মিহিন শব্দে ছাল-ওঠা হৃৎপি-ের রক্তপাত উপেক্ষা করেও গীতের চরণ দুটো ভোঁতা মাথায় ঝুম ঝুম বেজে ওঠে-

“জল ভর সুন্দরী কইন্যা জলে দিছ মন

কাইল যে কইছিলাম কতা, আছেনি স্মরণ”

ভিন গ্রাম থেকে আসা পালা গায়েন রহিমের ভরাট গলার এই গীত পরীর সমস্ত চৈতন্যে ডাকাতের মতো ঢুকে পড়ে। জলে মন দেয়া এই কইন্যার সমস্ত অনুভূতিতে আনচান করা অনুভব। মন শুধু পবনের নাও হয়ে অস্থির ধাপাধাপি করে। স্মৃতিচারণের এই পর্বে প্রবল আক্রোশে মুখে জমে-ওঠা থুথু পানির নরম পাটাতনে বমি মতো উগরে দেয়। পরী। বিকারগ্রস্ত হয়ে ফিসফিস? করে- হায়রে পানি সরবোনাইশ্যা, সুখহননকারী!

টুকরো টুকরো গ্রামগুলো ডুব ডুব পানির তলে ঢুকে সমান্তরাল হয়ে আছে। গোরস্থানের উঁচু জমিনের বুক সমান পানির উপর মাচান বেঁধে রহিমদের পুরো পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। নিশুতি রাত। সবাই বেঘোর ঘুমে জব্?জব্?। পরীর ঘুম আসে না। নিজের গ্রামের দিশা হারিয়ে অজানা গাঁয়ের ঘোর দারিদ্র্যপীড়িত এই জলবন্দী জীবন বড় দুর্বিষহ লাগে তার কাছে। চারিদিকের পরিপাটি নির্জনতা, চাঁদ ও জলের নিবিড় আলিঙ্গন কিছুই ভাল্লাগেনা না পরীর কাছে। চৌদ্দ দিন বয়সের বিয়ের গন্ধ ঘটি ঘটি পানির ধারায় ধুয়েমুছে সাফ করে ফেলতে চায় পরী। তার স্বামী উন্মাতাল যৌবনের নবীন সুখে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। মাচানের ভেতর উঁকি মেরে ঢুকে যাওয়া জ্যোৎস্নার আলোয় রহিমের রূপবান নাক মুখ স্পষ্ট। কিন্তু সেই রূপে বিন্দুমাত্র কাঁপন ধরে না বুকে। এই নবীন যুবক পালাগানের দলের সাথে তাদের গাঁয়ে গিয়েছিলো। মেম্বার বাড়ির কাচারি ঘরেই তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়। পালাটিতে রহিমের অভিনয় দক্ষতা ও গানের সুরেলা কণ্ঠ নৈপুণ্য গ্রামের বেভুলা মানুষদের মন হরণের জন্য ছিল যথেষ্ট। তার সদ্য যুবক হওয়া দেহে সৌন্দর্যের ষোলকলা ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। পালার সেই চরণ...

“জল ভর সুন্দরী কইন্যা...

জলে দিছ মন

কাইল যে কইছিলাম কতা,

আছেনি স্মরণ...”

শোনার পর রাতের বালিশে সুস্থির হয়ে মাথা থিতু করতে পারেনি পরী। আঁঠালো আবেশে ক্লাস নাইনের সহজ অঙ্কও তার মতো মেধাবী ছাত্রীর কাছে দুর্ভেদ্য হয়ে ওঠে। পালার মেয়াদ আরো বাড়ানো হয়। ক্রমশ মেম্বার বাড়ির অন্দর মহলে, স্নেহের অন্ধ ফাঁকফোকর গলিয়ে অনুপ্রবেশের অধিকার পায় রহিম। পরীর সাথেও তার সখ্য রচিত হয় একটু একটু করে। রাতের থিতোনো নির্জনতায় ভাটি দেশের গল্প শোনায় রহিম... চারিদিকে থৈ থৈ পানি। মাঝেমধ্যে জলপদ্মের মতো ভাসা ভাসা এক একটা গ্রাম। রিকশার টুঙটুঙানি নাই, ট্রাক বাসের হর্ন নাই! খালি আছে নৌকার তির তির বৈঠা মারার চিকন শব্দ। ধবল জ্যোৎস্নায় বিলে নামে সাদা বকের ঝাঁক যেন আসমান থেকে নামা দুধ সাদা পথ...। পরী প্রায় দম বন্ধ করা নিশ্বাসে সেই রূপকথার গল্প শুনে শুনে রাতে ভোর করে ফেলে। ভয় খাওয়া চৈতন্যে পেছনের খিড়কি দিয়ে ঘরে এসেও শান্তি পায় না পরী। স্মৃতি মন্থনের ফোকর গলে জলে ঝপ্? ঝ্?প বৈঠা টানার শব্দ ঢুকে পড়ে। আলোকিত জ্যোৎস্নায় পরী তাকিয়ে দেখে দূরে একটা নৌকা যায়। জলের তোড়, দূরের সেই শব্দ ঘুরপাক খাইয়ে পরীর কানে ঢুকিয়ে দেয়। একসময় কালো বিন্দুর অবয়ব নিয়ে আরো দূরে চলে যায় নৌকা। বিষাদের ঘন আস্তরে ভারি হতে থাকে পরীর যন্ত্রণাকাতর মন। ঠোঁটে রিন্? রিন্? করে দুঃখের সুর বাজে-

“ঐ যে দেহা যায় রেলের গাড়ি আইতাছে

রেলের গাড়ির বিতরে বাজান বইয়া রইছে

ও বাজান বাজান গো মায়া কিতা করে?

তোমার মায়ের কান্দনে ?দুঃকের পাতা ঝরে।”

পরী সাঁতারও জানে না। জানলে নদী সাঁতরে খুঁজে নিতো নিজের গ্রামের ঠিকানা। রাতে নিপাট নির্জনতায় পরীর নিশ্বাস প্রলম্বিত হতে থাকে। জলের উপর গলা ডুবে থাকা মান্দার গাছের মগডালে লাল টক্?টকে ফুল ফুটে আছে। বিছানো কাঁটার মাঝখানে কঠিন লাল সৌন্দর্য পরীর মনকে আরো বৃত্তবন্দী করে তোলে- হায়, সেদিন ছিল ঘোর অমাবস্যা, নিরাপদ অন্ধকারে রহিমের তাজা পৌরুষদীপ্ত হাতের উষ্ণতা মনের শেষ দ্বিধাকেও দ্বিখ-িত করে ফেলে। দুর্মর সাহসের ফেনা পরীর ভেতর ভালোবাসার কঠিন লৌহবর্ম পরিয়ে দেয়। ঘুমন্ত গ্রামকে পিছে ফেলে এগিয়ে চলা। বাস, রিকসা দু’দু’বার ট্রেন বদল। ঘিঞ্জি ট্রেনের ভেতর ঘামগন্ধ মানুষের চাপে চেপ্টা পরীর চোখে তখনও জলের সূক্ষ্ম কারুকাজময় ছবি। তারপর একটা জীর্ণ স্টেশনে নামে দু’জন, তবু ফুরোয় না পথ। ইঞ্জিন নৌকার ভট্? ভট্? আওয়াজে বিরক্ত পরী রহিমের পাশে ঘন হয়ে বসে স্বস্তি খোঁজে। তখন মনে বিন্দু বিন্দু করে বাড়ির মানুষের জন্য “মন কেমন করে”-এর জল জমা হতে থাকে। ইঞ্জিন নৌকা তাদের যেখানে নামায় তা ছোট একটা হাট। যেন পুকুরে ভেসে থাকা কাছিমের পিঠ। সেখান থেকে কুশায় চড়ে তারা। রহিমের তেইশ দিনের পরিচিত মুখে ঘন আন্ধার দেখে পরী। কোথায় গ্রাম? শুধুই থই থই পানি। পরী রহিমের হলুদ পাঞ্জাবীর খুট ধরে টানে : “কোনখানে তোমাগর গেরাম?” রহিমের ভরাট গলা ভেঙ্গে ফ্যাঁসফেসে হয়ে ওঠে: গেরামে বান ঢুইক্যা গেছে। পাহাড়ের ঢল আর কংসের বাড়তি পানি আমাগর সর্বনাশ করছে পরী। ‘নেভা নেভা সন্ধ্যায় পরিবারের খোঁজ পায় রহিম। উঁচু এক গোরস্থানের বুক পানির উপর বাঁশ কাঠের শক্ত গাঁথুনিতে তৈরি মাচানে যখন নবদম্পতি প্রবেশ করে ভেতরে তখন তা-ব চলছে। রিলিফে পাওয়া খাদ্যের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের তীক্ষè গলার ঝাঁঝ আরো ভয়াবহ। রহিমের সঙ্গে ঘোমটা টানা পুঁটলি দেখে শাশুড়ির গলা বাজপাখির তীক্ষèতায় ঝনঝন করে ওঠে : নয়া বউ বুঝি? হাংগা করনের আর সময় পাইলি না অবাগির পোলা? যে রিলিফ পাই তা দিয়া ষোলডা পেডের কানিকুনাও ভরে না, সোনার চানরে খাওয়াইবি কি? আতঙ্কে মাথার ঘোমটা খসে পড়ে পরীর- তার মেম্বার পিতার বাড়িতে সারা বছর থাকে মণ মণ ধানের টাল। তারপরও ঘুমন্ত রাতের নিঃশব্দ মুহূর্তে রহিমের ঘন বাহুতে মুখ গুঁজে খড়কুটোর মতো জীবন খুঁজে সে। এক দংগল লোকজনের ভেতর রচিত বাসরঘরে ডোরাকাটা শাড়ির দেয়াল বানিয়ে বন্য ষাঁড়ের মতো অস্থির হয়ে ওঠে রহিম। পরদিন রোদ ওঠা ভোরে মহিলা কণ্ঠের একগাদা ছি ছি কানের ফুটোয় ভরতে ভরতে তেতো হয়ে ওঠে পরী। এভাবে টানা চৌদ্দদিন। ভালোবাসার সমস্ত রোমকূপ উঠে গলাছিলা মুরগির কুৎসিত ঘেন্না প্রকট হয়ে উঠেছে।

পরিবারটি একদিন শিশুদের রহিম ও পরীর তত্ত্বাবধানে রেখে রিলিফ আনতে গঞ্জে যায়। পরী জবাই করা হরিণের মতো তড়পায়। বিলাপের উঁচু স্বরে ডুকরে ওঠে: তুমি আমারে কুন দোজখে নিয়া আইছো। অসহায় রহিমের ফর্সা গোল মুখে দ্বিধা ফুটে ওঠে : “বান না আইলে তুমারে আমি যেই রকম বর্ণনা দিছিলাম- সবকিছু ঠিক সেই রকমই আছিলো।” পরীর ডুবে যাওয়া গলায় মিনতি ফুটে ওঠে- “তোমার পায়ে পড়ি, আমারে আমার গেরামে লয়া যাও, আমি কতদিন আমার মায়েরে দেহি না! আমারে বাজানের কাছে লয়া চল।” রহিমের নিরুপায় গলা জলের ঘোলা শরীরে ধাক্কা মারে, বলে, “তোমার গেরাম সেই কোন উজান দেশে। আইতে যাইতে মেলা ভাড়া লাগে। অতো টেকা তো আমার কাছে নাই। পালাগানের এই পর্যন্ত পাওয়া টেকা আসনের সময়ই খরচ হয়া গেছে। বান কমুক, আমি একটা কিছু ব্যবস্থা কইরা তুমারে ঠিক লয়া যামু।” পরীর গলায় জেদ খড়খড়ে হয়ে ওঠে। একরোখা ভঙ্গিতে সে বলে : “আমি এইসব কিছু জানি না, এই রাক্ষসী পানির দেশে আর থাকতে পারতাম না আমি চইলা যামু...!” কোন কথা খুঁজে পায় না রহিম। ভিজা, নেতানো ভঙ্গিতে ঘোলা পানির দিকে শুধু তাকিয়ে থাকে।

মাচানের চৌদ্দ দিন বয়সী অবস্থানে পরীর এই নিশি জাগা অনুভবে এক কণা ভয়ের মিশেল নেই। ছোটবেলা থেকেই এই কন্যা দুর্মর সাহসী। তাদের গ্রামে কালিন্দীর মঠে যেখানে গায়ের হিন্দুরা মারা গেলে মড়া পোড়ানো হয় সেখানে একটা সিন্দুরে আমগাছ আছে। ঘোর আন্ধারে শুধু আজানটা পড়লেই মনে হতো- একা একা কোচড় ভরে সেই আম চুরি করে নিয়ে আসতো পরী। তাদের বাড়ির পেছনের ঝাঁকড়া গাবগাছটা স্বরচিত ভুতের গল্পে আবিল। একদিন গাছে চড়ে পেতœী হয়ে ভয় দেখিয়ে বেহুঁশ করে ফেলেছিল রাতে পেশাব করতে আসা বজ্জাত মায়মুনা বুড়িকে। বুড়ির ঝোলায় থাকতো তাবৎ গাঁয়ের যুবতী মেয়েদের রসালো গিবতের কুৎসিত সব কেচ্ছা। মধ্যরাতের সঞ্চিত পেশাব উঠানের মাঝখানে ঢাললেও গাব গাছটা ছিল চোখের উদোম নজরে। পরীর সাহসের ডালপালা এমনই বিস্তৃত!

খুনখুনে বুড়ি জ্যোৎস্না ফজরের আজানের সময় জলে নেতিয়ে পড়ে। রাত জাগা ক্লান্ত পরী, মাথায় আকাশ ঝুলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে একসময়। তার সুন্দর বিমর্ষ মুখে সূর্যের প্রথম আলো এসে যখন পড়ে মাচানজুড়ে তখন আতঙ্কের হুটোপুটি। কালনাগিনীর বিষাক্ত ছোবলে নীল হয়ে যাওয়া পরীর দেহটা ঘিরে বসে থাকা মানুষের মধ্যে শোকের চেয়েও ঘোলাটে বিহ্বলতা কাজ করে। রহিম বুকের মধ্যে বিন্দু বিন্দু করে জমে ওঠা শোকের ব্যাপ্তি টের পায় একসময়। মাটি উপড়ে নিয়ে আসা এই মেয়েটির মৃত্যুর সব দায়ভার নিজের মধ্যে ধারণ করে পাথর স্তব্ধতায় বসে থাকে সে। গোরস্থানের আশ্রয় ডুবে গেছে। একশো বছর পুরানো জমিদার বাড়ির ক্ষয়িষ্ণু দোতলায় আশ্রয় নিয়েছিলো গ্রামের কিছু পরিবার। ১০/১২ মাইলের মধ্যে মাটি নাই।

ধবল জ্যোৎস্নায় দুই পহর রাতে কংসের কঠিন বুকে প্রবল জোয়ার ওঠে। উজানের পানে বয়ে যাওয়া ঢলে সাঁতার না জানা কন্যাটি দিব্যি সাঁতারুর ভঙ্গিতে ওর যাত্রা শুরু করে। রহিমের প্রত্যয় জন্মে; নিশ্চয় পরীর এ সাঁতার খুঁজে পাবে ডাঙা। সেখানে আছে মাথা উঁচু সবুজের সমারোহ। আম, জাম, কাঁঠাল ও অশ্বথবৃক্ষ।

back to top