দরবেশ আলী
বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদারকে নিয়ে এত বিশাল কলেবরে স্মারকগ্রন্থ লেখকের জন্মস্থান ভারত থেকেও প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা নেই; যেমনটা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। সমরেশ মজুমদার অবশ্য বারবার তাঁর লেখায় এবং বক্তৃতায় বলেছেন, আমার লেখার ভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, কলকাতা, জলপাইগুড়ির চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ বেশি। আমি জলপাইগুড়ির গয়েরকাটায় যেমন প্রাণের ছোঁয়া পাই; ঢাকায় আসলে, পদ্মার পাড়ে দাঁড়ালে, নরসিংদীর রায়পুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামের পাহাড়ের পাদদেশে, নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যার পাড়ে দাঁড়ালে সেই ঘ্রাণ খুঁজে পাই। আমার কাছে খুবই আপন স্মৃতিময় মনে হয় জলপাইগুড়ির চা-বাগানের মানুষগুলো, কলকাতার এবং ঢাকার ব্যস্ততম নগরীর মানুষগুলোর জীবনযাত্রা পরিবেশ।
বাংলাদেশের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আবিষ্কারের কর্ণধার দেলোয়ার হাসান সম্পাদনা করেছেন সমরেশ স্মারকগ্রন্থটি। স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমরেশ মজুমদার-কন্যা দোয়েল মজুমদার, পত্রভারতীর প্রকাশক লেখক ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কন্যা দেবলিয়া মুখোপাধ্যায়।
স্মারক গ্রন্থটি সমৃদ্ধ হয়েছে যাদের স্মৃতিচারণমূলক লেখায় তাঁরা হচ্ছেন দোয়েল মজুমদার/ বাবা, আনিসুজ্জামান/ সমরেশ সাহিত্য, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়/বাবলু বলে ডাকতাম, ইমদাদুল হক মিলন/ সমরেশ মজুমদার প্রিয় অগ্রজ, সবিতেন্দ্রনাথ রায়/ আমার বন্ধু সমরেশ, রঞ্জিত মল্লিক/ সমরেশ মজুমদার সত্য বলার মানুষ, নবকুমার বসু/সহজ সুজন, রমাপদ পাহাড়ি/ দাপুটে সমরেশ কেন হয়ে উঠলেন অনুরোধ কাতর, উমেশ শর্মা, স্মৃতির সরণি বেয়ে, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়/ সমরেশ তাড়াতাড়িই চলে গেল, পল্টু দত্ত/আমার দেখা সমরেশ বাবু, প্রচেত গুপ্ত/ গভীর কথা বলতে জটিলতার অশ্রু নেননি, অনিন্দ সেনগুপ্ত/ অনিমেষের স্বর্গছেঁড়ায় গায়েরকাটার বাবলু, আশিষ ভট্টাচার্য/ অস্ট্রেলিয়ার সমরেশ মজুমদার, ত্রিদিবকুমার চট্টপাধ্যায়/ দাদার সঙ্গে দেশ বিদেশে, গৌতম ঘোষ/ আমার মাধবীলতা এখন তোমার মাধবীলতা, ফরিদ আহমদ দুলাল/ সমরেশ মজুমদার সান্নিধ্যস্মৃতি, সাইফুল আলম/স্বর্গচেঁড়ার মায়ায় মোড়ানো বাবলু তুই, অভিজিত সেন/ সমরেশ মজুমদার ও বাংলা টেলিভিশন, কিন্নর রায়/স্বর্গছেঁড়ার অনিমেষ ও কিছু কথা বার্তা, অশোক রায় নন্দী/ সমরেশ দা ও কিছু কথা, অপু দে/ এখানে এসে বয়স কমাই, মাজহারুল ইসলাম/ সমরেশদা আছেন, নাইস নূর/ অনিমেষের সঙ্গে আর হবে না দেখা, দাহেকা আঞ্জুম/ আংকেল জেগে রয়, দেলোয়ার হাসান সমরেশ দা ও আবিষ্কার প্রমুখ।
স্মারকগ্রন্থটিকে আরও ওজনদার করেছে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য মন্ত্রীর আবেগাশ্রিত স্মৃতিকাতর বাণী। মে ২০২৩ সমরেশ মজুমদারের মৃত্যুর পর পরই বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করে বার্তা পাঠান, ১৬ মে বার্তা পাঠান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ১৮ মে সমরেশ শোকে বিহ্বল হয়ে স্মৃতিবাণী পাঠান মমতা ব্যানার্জী। সেই বাণীগুলো সমরেশ কন্যা দোয়েল মজুমদার তার বাবার স্মারকগ্রন্থে সংযোজন করেন। দোয়েল মজুমদার সমরেশ মজুমদার স্মারকগ্রন্থের সম্পাদনা পরিষদের অন্যতম সদস্য।
বাংলা সাহিত্যে যে ক’জন লেখক দীর্ঘকাল বেঁচে থাকবেন সমরেশ মজুমদার তাঁদেরই একজন। বিশেষ করে তার উপন্যাস, নাটক এবং কিশোর রোমাঞ্চকর লেখার আবেদন কখনোই ফুরাবে না। তার কালবেলা, কালপুরুষ, গর্ভধারিণী, সাতকাহন, মৌষলকাল, আটকুঠুরী নয় দরজা, স্বপ্নেই এমন হয়, যার যেমন জীবন, একূল নেই ওকূল নেই প্রভৃতি উপন্যাস বাংলাদেশ ও ভারতের পাঠকের হৃদয়ে থাকবে বছরের পর বছর। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সমরেশ সাহিত্য প্রবন্ধে বলেছেন, উনিশ শতকে নবীনচন্দ্র সেন ত্রয়ী কাব্য-রৈবতক-কুরুক্ষেত্র-প্রভাস রচনা করেছিলেন মহাভারতের কাহিনী নিয়ে। বিংশ শতাব্দীতে শরৎচন্দ্র চার পর্বে লেখেন শ্রীকান্ত, তাতে মানব সম্পর্কে বৈচিত্র্য ও সামাজিক জীবনের পরিচয় আছে। তবে নেই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। এমনিভাবে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্নদাশঙ্কর প্রমুখ দুই দেশের পটভূতিতে এত বিশাল কাজ তেমন করেনটি যেটা সমরেশ মজুমদার তাঁর উপন্যাসে করতে সক্ষম হয়েছেন। সমরেশ মজুমদারের ত্রয়ী উপন্যাসের চাহিদা সমাজকে পথ দেখাবে যুগ যুগ।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ‘বাবলু বলে ডাকতাম’ প্রবন্ধে বলেছেন, সাগরদা জহুরী সম্পাদক সাগরদা সমরেশ মুজমদারকে কয়েকটা গল্প লেখার পর ওকে দিয়ে একটি উপন্যাস লিখিয়ে নেন। ‘দৌড়’। সে ভারী ভালো লেখা। কলমের জোর বোঝা গিয়েছিল তখনই। তারপর তো ধারাবাহিক ওর বিখ্যাত সেই ট্রিলজি, ‘উত্তরাধিকার’,‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’। সমরেশ ইতিহাস রচনা করে ফেলল। এত জনপ্রিয়তা যে ভাবাই যায় না। তখনই সে ইনকাম ট্যাক্সের অফিসের চাকরি ছেড়ে দেয়। সমরেশ সিনেমা সিরিয়াল করতে বেশি আগ্রহী ছিল। সমরেশের বড় গুণ তরতরে গতিময় গদ্য। যেখানে রয়েছে তীক্ষè অনুসন্ধানী চোখ।’
শক্তিমান ও জনপ্রিয় অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের ভাষায়, ‘সমরেশ মজুমদারের মত বিনয়ী এবং রসিকতার মানুষ সমাজে খুবই কম।’
চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান মানুষ গৌতম ঘোষ বলেছেন, সমরেশ মজুমদারের লেখায় বাংলাদেশের এবং ভারতের অসংখ্য মানুষের চরিত্র চিত্রিত হলেও কোথাও তা অবহেলার চোখে দেখা হয়নি। সমরেশের কাছে যতটা প্রিয় ছিল কলকাতা জলপাইগুড়ি তার চেয়ে কম প্রিয় ছিল না ঢাকা।
সমরেশ মজুমদারকে নিয়ে হয়তো ভবিষ্যতে আরও বিশাল কাজ হবে। হয়ত হবে না। তবে বাংলাদেশে এর আগে পশ্চিমবঙ্গের কোন লেখককে নিয়ে এ ধরনের উদ্যোগ চোখে পড়েনি। আমার এ লেখার সমাপ্তি টানতে চাই দোয়েল মুজমদারের লেখা ‘বাবা’ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে, “কখনো আমি ভাবিনি যে, গত ২১ মে যখন জিডিবিড়লা সভাঘরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, সবাইকে অভ্যর্থনা জানালাম। সবাই এলেন, নিজের থেকে, মন থেকে এলেন প্রত্যেকে। কাউকেই আমার দু-বার ফোন করতে হয়নি। কিন্তু বাবা-ই নেই, মানে এতকাজ যার জন্য সেই মানুষটাই নেই আজকে।”
যারা সমরেশ মজুমদারকে এক মলাটে আরো জানতে চান তাঁদের জন্য খুবই প্রয়োজন এই স্মারকগ্রন্থ। প্রকাশক: আবিষ্কার প্রকাশনা। দাম ১০০০টাকা।
দরবেশ আলী
বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪
বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদারকে নিয়ে এত বিশাল কলেবরে স্মারকগ্রন্থ লেখকের জন্মস্থান ভারত থেকেও প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা নেই; যেমনটা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। সমরেশ মজুমদার অবশ্য বারবার তাঁর লেখায় এবং বক্তৃতায় বলেছেন, আমার লেখার ভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, কলকাতা, জলপাইগুড়ির চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ বেশি। আমি জলপাইগুড়ির গয়েরকাটায় যেমন প্রাণের ছোঁয়া পাই; ঢাকায় আসলে, পদ্মার পাড়ে দাঁড়ালে, নরসিংদীর রায়পুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামের পাহাড়ের পাদদেশে, নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যার পাড়ে দাঁড়ালে সেই ঘ্রাণ খুঁজে পাই। আমার কাছে খুবই আপন স্মৃতিময় মনে হয় জলপাইগুড়ির চা-বাগানের মানুষগুলো, কলকাতার এবং ঢাকার ব্যস্ততম নগরীর মানুষগুলোর জীবনযাত্রা পরিবেশ।
বাংলাদেশের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আবিষ্কারের কর্ণধার দেলোয়ার হাসান সম্পাদনা করেছেন সমরেশ স্মারকগ্রন্থটি। স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমরেশ মজুমদার-কন্যা দোয়েল মজুমদার, পত্রভারতীর প্রকাশক লেখক ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কন্যা দেবলিয়া মুখোপাধ্যায়।
স্মারক গ্রন্থটি সমৃদ্ধ হয়েছে যাদের স্মৃতিচারণমূলক লেখায় তাঁরা হচ্ছেন দোয়েল মজুমদার/ বাবা, আনিসুজ্জামান/ সমরেশ সাহিত্য, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়/বাবলু বলে ডাকতাম, ইমদাদুল হক মিলন/ সমরেশ মজুমদার প্রিয় অগ্রজ, সবিতেন্দ্রনাথ রায়/ আমার বন্ধু সমরেশ, রঞ্জিত মল্লিক/ সমরেশ মজুমদার সত্য বলার মানুষ, নবকুমার বসু/সহজ সুজন, রমাপদ পাহাড়ি/ দাপুটে সমরেশ কেন হয়ে উঠলেন অনুরোধ কাতর, উমেশ শর্মা, স্মৃতির সরণি বেয়ে, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়/ সমরেশ তাড়াতাড়িই চলে গেল, পল্টু দত্ত/আমার দেখা সমরেশ বাবু, প্রচেত গুপ্ত/ গভীর কথা বলতে জটিলতার অশ্রু নেননি, অনিন্দ সেনগুপ্ত/ অনিমেষের স্বর্গছেঁড়ায় গায়েরকাটার বাবলু, আশিষ ভট্টাচার্য/ অস্ট্রেলিয়ার সমরেশ মজুমদার, ত্রিদিবকুমার চট্টপাধ্যায়/ দাদার সঙ্গে দেশ বিদেশে, গৌতম ঘোষ/ আমার মাধবীলতা এখন তোমার মাধবীলতা, ফরিদ আহমদ দুলাল/ সমরেশ মজুমদার সান্নিধ্যস্মৃতি, সাইফুল আলম/স্বর্গচেঁড়ার মায়ায় মোড়ানো বাবলু তুই, অভিজিত সেন/ সমরেশ মজুমদার ও বাংলা টেলিভিশন, কিন্নর রায়/স্বর্গছেঁড়ার অনিমেষ ও কিছু কথা বার্তা, অশোক রায় নন্দী/ সমরেশ দা ও কিছু কথা, অপু দে/ এখানে এসে বয়স কমাই, মাজহারুল ইসলাম/ সমরেশদা আছেন, নাইস নূর/ অনিমেষের সঙ্গে আর হবে না দেখা, দাহেকা আঞ্জুম/ আংকেল জেগে রয়, দেলোয়ার হাসান সমরেশ দা ও আবিষ্কার প্রমুখ।
স্মারকগ্রন্থটিকে আরও ওজনদার করেছে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য মন্ত্রীর আবেগাশ্রিত স্মৃতিকাতর বাণী। মে ২০২৩ সমরেশ মজুমদারের মৃত্যুর পর পরই বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করে বার্তা পাঠান, ১৬ মে বার্তা পাঠান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ১৮ মে সমরেশ শোকে বিহ্বল হয়ে স্মৃতিবাণী পাঠান মমতা ব্যানার্জী। সেই বাণীগুলো সমরেশ কন্যা দোয়েল মজুমদার তার বাবার স্মারকগ্রন্থে সংযোজন করেন। দোয়েল মজুমদার সমরেশ মজুমদার স্মারকগ্রন্থের সম্পাদনা পরিষদের অন্যতম সদস্য।
বাংলা সাহিত্যে যে ক’জন লেখক দীর্ঘকাল বেঁচে থাকবেন সমরেশ মজুমদার তাঁদেরই একজন। বিশেষ করে তার উপন্যাস, নাটক এবং কিশোর রোমাঞ্চকর লেখার আবেদন কখনোই ফুরাবে না। তার কালবেলা, কালপুরুষ, গর্ভধারিণী, সাতকাহন, মৌষলকাল, আটকুঠুরী নয় দরজা, স্বপ্নেই এমন হয়, যার যেমন জীবন, একূল নেই ওকূল নেই প্রভৃতি উপন্যাস বাংলাদেশ ও ভারতের পাঠকের হৃদয়ে থাকবে বছরের পর বছর। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সমরেশ সাহিত্য প্রবন্ধে বলেছেন, উনিশ শতকে নবীনচন্দ্র সেন ত্রয়ী কাব্য-রৈবতক-কুরুক্ষেত্র-প্রভাস রচনা করেছিলেন মহাভারতের কাহিনী নিয়ে। বিংশ শতাব্দীতে শরৎচন্দ্র চার পর্বে লেখেন শ্রীকান্ত, তাতে মানব সম্পর্কে বৈচিত্র্য ও সামাজিক জীবনের পরিচয় আছে। তবে নেই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। এমনিভাবে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্নদাশঙ্কর প্রমুখ দুই দেশের পটভূতিতে এত বিশাল কাজ তেমন করেনটি যেটা সমরেশ মজুমদার তাঁর উপন্যাসে করতে সক্ষম হয়েছেন। সমরেশ মজুমদারের ত্রয়ী উপন্যাসের চাহিদা সমাজকে পথ দেখাবে যুগ যুগ।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ‘বাবলু বলে ডাকতাম’ প্রবন্ধে বলেছেন, সাগরদা জহুরী সম্পাদক সাগরদা সমরেশ মুজমদারকে কয়েকটা গল্প লেখার পর ওকে দিয়ে একটি উপন্যাস লিখিয়ে নেন। ‘দৌড়’। সে ভারী ভালো লেখা। কলমের জোর বোঝা গিয়েছিল তখনই। তারপর তো ধারাবাহিক ওর বিখ্যাত সেই ট্রিলজি, ‘উত্তরাধিকার’,‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’। সমরেশ ইতিহাস রচনা করে ফেলল। এত জনপ্রিয়তা যে ভাবাই যায় না। তখনই সে ইনকাম ট্যাক্সের অফিসের চাকরি ছেড়ে দেয়। সমরেশ সিনেমা সিরিয়াল করতে বেশি আগ্রহী ছিল। সমরেশের বড় গুণ তরতরে গতিময় গদ্য। যেখানে রয়েছে তীক্ষè অনুসন্ধানী চোখ।’
শক্তিমান ও জনপ্রিয় অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের ভাষায়, ‘সমরেশ মজুমদারের মত বিনয়ী এবং রসিকতার মানুষ সমাজে খুবই কম।’
চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান মানুষ গৌতম ঘোষ বলেছেন, সমরেশ মজুমদারের লেখায় বাংলাদেশের এবং ভারতের অসংখ্য মানুষের চরিত্র চিত্রিত হলেও কোথাও তা অবহেলার চোখে দেখা হয়নি। সমরেশের কাছে যতটা প্রিয় ছিল কলকাতা জলপাইগুড়ি তার চেয়ে কম প্রিয় ছিল না ঢাকা।
সমরেশ মজুমদারকে নিয়ে হয়তো ভবিষ্যতে আরও বিশাল কাজ হবে। হয়ত হবে না। তবে বাংলাদেশে এর আগে পশ্চিমবঙ্গের কোন লেখককে নিয়ে এ ধরনের উদ্যোগ চোখে পড়েনি। আমার এ লেখার সমাপ্তি টানতে চাই দোয়েল মুজমদারের লেখা ‘বাবা’ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে, “কখনো আমি ভাবিনি যে, গত ২১ মে যখন জিডিবিড়লা সভাঘরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, সবাইকে অভ্যর্থনা জানালাম। সবাই এলেন, নিজের থেকে, মন থেকে এলেন প্রত্যেকে। কাউকেই আমার দু-বার ফোন করতে হয়নি। কিন্তু বাবা-ই নেই, মানে এতকাজ যার জন্য সেই মানুষটাই নেই আজকে।”
যারা সমরেশ মজুমদারকে এক মলাটে আরো জানতে চান তাঁদের জন্য খুবই প্রয়োজন এই স্মারকগ্রন্থ। প্রকাশক: আবিষ্কার প্রকাশনা। দাম ১০০০টাকা।