alt

সাময়িকী

আহমদুল কবির স্মরণে

কে. জি. মুস্তাফা

: বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

আহমদুল কবিরের জন্মদিনে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন সন্তোষ গুপ্ত (বাঁয়ে) ও বজলুর রহমান

‘সংবাদ’-এর প্রধান সম্পাদক আহমদুল কবির ঢাকার সংবাদপত্র সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন একজন বহুমুখী জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপাশি প্রগতিশীল রাজনীতির অঙ্গনেও তিনি তাঁর মেধার সুস্পষ্ট স্বাক্ষর রেখে গেছেন। অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ আহমদুল কবির তাঁর পত্রিকা ‘সংবাদ’কে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিবর্জিত দৈনিকে পরিণত করেন। আওয়ামী মুসলিম লীগকে ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রেও সংবাদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ‘সংবাদ’-এর তৎকালীন পরিচালকম-লীতে ফাইন্যান্স ডিরেক্টর ছিলেন আহমদুল কবির, পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন জহুর হোসেন চৌধুরী, প্রশাসনের দায়িত্বে ছিলেন অন্যতম ডিরেক্টর এক প্রখ্যাত ছাত্রনেতা আনোয়ার হোসেন এবং সাবেক বার্তা সম্পাদক সৈয়দ নুরুদ্দিন ছিলেন অন্যতম ডিরেক্টর ও যুগ্ম সম্পাদক। অন্যতম ডিরেক্টর ও জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন নাসিরুদ্দিন আহমদ।

উল্লেখ্য, ১৯৫১ সালে সংবাদ প্রকাশ করেন আহমদুল কবিরের জ্যেষ্ঠভ্রাতা স্বনামধন্য সাংবাদিক খায়রুল কবির। তিনি ছিলেন পত্রিকাটির সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনার সার্বিক দায়িত্বে নিযুক্ত। নাসিরুদ্দিন আহমদের জ্যেষ্ঠভ্রাতা গিয়াসুদ্দিন আহমদ ছিলেন প্রথম দিকের ফিনান্সিয়ার। পরে মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ‘সংবাদ’ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগের নামে। ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর লিয়াকত আলী খানকে রাওয়ালপিন্ডির এক জনসভায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর সংবাদ পরিচালনা করতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীন এবং প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সভাপতি আবদুল্লাহেল বাকি। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিরুদ্ধে মুসলিম লীগের ভরাডুবি হয়। সে সময় খায়রুল কবির ‘সংবাদ’ থেকে পদত্যাগ করেন। পরাজিত মুসলিম লীগ ‘সংবাদ’ চালাতে ব্যর্থ হয়। সে সময় আহমদুল কবির ‘সংবাদ’-এর মালিকানা কিনে নেন সামান্য মূল্যের বিনিময়ে। তারই উদ্যোগে গঠিত হয় দি সংবাদ লিমিটেড কোম্পানি, ১৯৫৪ সালেই।

এ সময় আহমদুল কবির সংবাদ পরিচালনা ছাড়াও এসেন্সিয়াল ইন্ডাস্ট্রিজ ও বেঙ্গল বেভারেজ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করেন। শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পদার্পণের আগে তিনি অবিভক্ত ভারতে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ায় যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) পাস করার পর। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন। ১৯৫৪ সালের ৩০ মে কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ববঙ্গে ৯২ক ধারা জারি করে সরকার বরখাস্ত করে আইনসভা স্থগিত ঘোষণা করে। দমননীতি চলে তীব্র বেগে। ১৯৫৪ সালে ‘সংবাদ’-এর সাংবাদিক ও কর্মচারীদের এক যৌথসভায় কর্তৃপক্ষের ব্যয়হ্রাসের উদ্যোগ মেনে নেয়া হয়। পরিস্থিতির আলোকে কর্তৃপক্ষের শতকরা ৫০ ভাগ বেতন কর্তনের প্রস্তাব সাংবাদিক-কর্মচারীরা গ্রহণ করেন। সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেস কর্মচারী ইউনিয়ন পত্রিকাটির বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দূর করার জন্যই অর্ধেক বেতনে কাজ করার প্রস্তাবটি মেনে নেয়। কিন্তু চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় শ্রমিক-কর্মচারী-সাংবাদিক সবাই চরম সঙ্কটে নিপতিত হন। ইতোমধ্যে ১৯৫৪ সালের ৩০ মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট সরকার বাতিল ঘোষণা করে। জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা নিযুক্ত হন গভর্নর।

১৯৫৫ সালে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্টে ভাঙন শুরু হয়। এ কে ফজলুল হক তাঁর কেএসপি নিয়ে পাঞ্জাবের চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কোয়ালিশন করে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করেন এবং প্রদেশে আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকার গঠিত হয়; কিন্তু আবু হোসেন সরকার বেশিদিন টিকতে পারেনি। ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান ক্ষমতায় এসে রাজবন্দিদের মুক্তি দেন এবং বেঙ্গল স্পেশাল পাওয়ার্স অর্ডিন্যান্স (বিএসপিও) বাতিল করেন। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার ভয়ানক কুপিত হয় প্রাদেশিক সরকারের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে কেন্দ্র সরকারও গঠন করে আওয়ামী লীগ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে।

১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে। ১৯৫৭ সালের ২৫ জুলাই নিখিল পাকিস্তান ভিত্তিতে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠিত হয়। বামঘেঁষা সব দল ও গ্রুপ আওয়ামী লীগ ছেড়ে ন্যাপে যোগ দিতে থাকে। এ সময় ‘সংবাদ’-এর ফাইন্যান্স ডিরেক্টর আহমদুল কবির, সম্পাদক জহুর হোসেন চৌধুরী ও যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ নুরুদ্দিন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করেন। আহমদুল কবির পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান লাভ করেন।

পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে এসে আহমদুল কবির তাঁর গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও অপূর্ব বাকচাতুর্যের কারণে সারা দেশে সুনাম অর্জন করেন।

ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্তে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৭ সালের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেন। প্রদেশে আবু হোসেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করে আতাউর রহমান মুখ্যমন্ত্রী পদে টিকে থাকেন। তিনি ক্ষমতা হারান প্রধান সেনাপতি জেনারেল আইয়ুব খান এবং প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জার সামরিক শাসন জারির কারণে। এই দুই মিলিটারি নেতা দেশে সেনাশাসন পাকাপোক্ত করার জন্য সামরিক আইন জারি করেন। আইয়ুব খান নিজেকে সামরিক শাসক হিসেবে ঘোষণা করেন ১৯৫৮ সালের ১৮ অক্টোবর। তিনি ২৭ অক্টোবর নিজেকে ফিল্ড মার্শাল ঘোষণা করেন এবং জেনারেলমির্জাকে লন্ডনে নির্বাসনে পাঠান। ফলে পাকিস্তানে আইনের শাসনের রাজনীতি রুদ্ধ হয়ে যায়। মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবসহ হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক কারারুদ্ধ হন।

সামরিক শাসন জারি হওয়ার ফলে দেশের সব পত্রপত্রিকা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সংবাদপত্র তার অভিমত প্রকাশের স্বাধীনতা হারায়, সাংবাদিকরা পদে পদে সামরিক অফিসারদের নিগ্রহে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে প্রগতিশীল পত্রিকা ‘সংবাদ’ চরম বিপদের সম্মুখীন হয়। ‘সংবাদ’-এর মফস্বল পাতায় সামান্য একটি সিঙ্গল কলাম নিউজের হেডিং ছিলÑ রামগতিতে চালের দর ৪২ টাকা। তার জন্য সম্পাদক জহুর হোসেন চৌধুরী এবং ফাইন্যান্স ডিরেক্টর আহমদুল কবিরকে গভর্নমেন্ট হাউজে জবাবদিহি করতে ডাকেন খাদ্যমন্ত্রী হাফিজুর রহমান। তিনি সরেজমিন তদন্তের জন্য নিজে ও হেলিকপ্টার নিয়ে রামগতি সফর করেন। ‘সংবাদ’-এর কপাল ভালো, এলাকার বাজারে মন্ত্রী জানতে পারেন, ‘সংবাদ’-এ প্রকাশিত খবরে নির্দিষ্ট দিনে চালের যে দর উল্লেখ করা হয়েছে তা ছিল মণপ্রতি আট আনা কম। ওইদিন চালের দর ছিল সাড়ে ৪২ টাকা।

১৯৬২ সালে আইয়ুব খান মনোনীত সংবিধান চালু করা হয় যাতে বুনিয়াদি গণতন্ত্র বা বেসিক ডেমোক্র্যাসি (বিডি) সিস্টেম গ্রহণ করা হয়। দেশের নাগরিকদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়। তার পরিবর্তে ৮০ হাজার বিডিকে আইয়ুব খানের পক্ষে ভোটদানের জন্য নির্বাচিত করা হয়। তারা আবার পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক আইনসভা নির্বাচিত করবেন আইয়ুব খান মুসলিম লীগ সমর্থকদের কনভেনশন ডেকে মুসলিম লীগ দল গঠন করেন। তার বিরুদ্ধ পক্ষ মুসলিম লীগের একাংশকে ‘কাউন্সিল মুসলিম লীগ’ নামে অভিহিত করে টিকে থাকার চেষ্টা করে। ওই দলের নেতা ছিলেন পাঞ্জাবের মমতাজ দৌলতানা। বিডি সিস্টেমে ১৯৬৫ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আহমদুল কবির জয়লাভ করেন এবং পাঁচ বছর পরিষদের আলোচনায় তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। সামরিক আইন প্রত্যাহার করার পরও স্বৈরশাসন চালু থাকে আইয়ুব শাসনের সর্বস্তরে। ফলে ইত্তেফাক, সংবাদ ও অবজারভার নানাবিধ বিধি-নিষেধের নিগড়ে আবদ্ধ হয়। তাদের ললাটের লিখন ছিল কথায় কথায় জামানত তলব, জামানত বাজেয়াপ্ত, প্রকাশনা নিষিদ্ধ ইত্যাকার শাস্তি। তাদের সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। শুধু বেসরকারি খাতের বিজ্ঞাপন দিয়ে ইত্তেফাক চালাতে পারত যেহেতু তার সার্কুলেশন ছিল বেশি : অবজারভারও মোটামুটি চলত ব্যয় সংকোচ করে। কিন্তু ‘সংবাদ’-এর সার্কুলেশন যথেষ্ট ছিল না বলে তার বেসরকারি বিজ্ঞাপনের আয়ও ছিল খুবই কম। আইয়ুব শাসনামলে ‘সংবাদ’-এর অবস্থা ছিল খুবই সঙ্গিন।

আহমদুল কবিরের গড়ে তোলা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোও ভালোভাবে টিকে থাকতে পারেনি। পরে তিনি নিজস্ব চা বাগান গড়ে তোলেন। তাঁর সহধর্মিণী লায়লা রহমান কবির পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত চা বাগানের যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেন। তিনি মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্সের সাবেক সভাপতি।

আহমদুল কবির ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সঙ্গে বেশি দিন সংশ্লিষ্ট থাকতে পারেননি। পরবর্তীকালে তিনি গণতন্ত্রী দলে যোগদান করেন এবং দলীয় সভাপতি সৈয়দ আলতাফ হোসেনের মৃত্যুর পর ওই দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। উল্লেখ করা যেতে পারে, গণতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫২ সালের শেষে। দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ। আহমদুল কবির ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি স্তরে এবং সে কারণে তাঁকে একাত্তরের জুন মাসে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে পাঠায়। জেনারেল ইয়াহিয়া খান একাত্তরের সেপ্টেম্বরে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়। তার বন্ধু ও আত্মীয় সাইদুল হাসান ছিলেন ন্যাপের (ভাসানী) কোষাধ্যক্ষ পাকিস্তান সেনাবাহিনী সাইদুল হাসানকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তার কোন সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি। সাইদুল হাসান ছিলেন মিসেস লায়লা কবিরের বড় বোন ফরিদা হাসানের স্বামী। ফরিদা হাসান বিএনপির এমপি ছিলেন ১৯৯১-৯৬ সালে।

আহমদুল কবির সংবাদপত্র পরিচালক হিসেবে ছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত। তিনি কমনওয়েলথ প্রেস ইউনিয়ন (সিপিইউ)-এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যে ক’টি সংবাদপত্রে পাকিস্তান মিলিটারি ট্যাংক হামলা চালায় ‘সংবাদ’ ছিল তার অন্যতম। দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পরও সংবাদ প্রকাশে বিলম্ব হয়। ‘সংবাদ’-এর সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আহমদুল কবির নিজে। জহুর হোসেন চৌধুরী কলামিস্ট হিসেবে ‘সংবাদ’-এ বহাল থাকেন। তাঁর কলাম ‘দরবার-ই-জহুর’ প্রচুর সুখ্যাতি লাভ করে। বাংলাদেশে সংবাদপত্রের সংখ্যা হ্রাস করার জন্য তদানীন্তন সরকার মাত্র ৪টি সংবাদপত্র প্রকাশের অনুমতি দেয়। এই চারটি দৈনিক ছিলÑ অবজারভার, ইত্তেফাক, বাংলার বাণী ও বাংলাদেশ টাইমস। রাজনৈতিক দলের সংখ্যা নিম্নতম পর্যায়ে রাখার জন্য খবরের কাগজের সংখ্যাও সীমিত করা হয়। এর ফল ভালো হয়নি। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ যেমন একটিমাত্র রাজনৈতিক দল অপছন্দ করেছে, তেমনি মাত্র ৪টি সংবাদপত্র তাদের খবরের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়।

এ সময় চারদিকে বঙ্গবন্ধুর প্রাণনাশের চক্রান্ত চলতে থাকে। তার প্রিয় সহকর্মীদেরও পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। চক্রান্তকারীরা জয়লাভ করে, বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। তাঁর চার সহকর্মী তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও কামরুজ্জামানকে হত্যা করা হয় কারাগারের অভ্যন্তরে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর বঙ্গভবন থেকে জল্লাদ পাঠিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের এই চার বীর সেনানীকে। খন্দকার মোশতাক আহমদ মাত্র ৮৩ দিন ক্ষমতায় ছিল। জেনারেল জিয়াউর রহমান ৬ বছর নাগাদ ক্ষমতা ভোগ করেছেন। তারই হাতে গড়া সৈন্যদের বুলেটের আঘাতে তার দেহ ছিন্নভিন্ন হয় ১৯৮১ সালের মে মাসে। এক বছর বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সামনে রেখে নিশানা প্র্যাকটিস করেন জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তিনি ক্ষমতা দখল করেন সামরিক আইন জারি করে। প্রবল গণআন্দোলনের মুখে এরশাদের প্রায় ৯ বছরের সরকার ধরণীর ধুলায় মিশে যায়।

জিয়াউর রহমানের আমলে সব সংবাদপত্র প্রকাশিত হতে থাকে সরকারের সম্মতিক্রমে। এসব ‘এমবেডেড’ পত্রিকা এরশাদের আমলেও একই ভূমিকা পালন করে। স্বল্পসংখ্যক সংবাদপত্র নিজেদের কথা পত্রিকায় প্রকাশ করার হিম্মত দেখায়। তারা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ধমকের মুখে পড়ে। একপর্যায়ে এরশাদ তিনটি আওয়ামীগন্ধী দৈনিক বন্ধ করে দেয়। চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার বিশাল মিছিলে গুলিবর্ষণ করে এরশাদের সরকার ২৪ জনকে হত্যা করে বলে বেসরকারি তদন্ত রিপোর্টে প্রকাশ। এরশাদের সরকার দাবি করে, শেখ হাসিনার মিছিলে মাত্র ৫ জন নিহত হয়েছে। কিন্তু সারা দেশ বিশ্বাস করে, এরশাদের পুলিশ ২৪ জন মানুষ হত্যা করেছে চট্টগ্রামে। এই হত্যাকা-কে ঘিরে এরশাদবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদ জানান। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার জন্য এরশাদ ইমার্জেন্সি জারি করেন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম ফুঁসে ওঠে এরশাদের পদত্যাগ দাবিতে।

এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ‘সংবাদ’ অভূতপূর্ব পাঠক সংহতি গড়ে তোলে। এ সময় ‘সংবাদ’-এর প্রচার সংখ্যা দৈনিক ৮০ হাজার অতিক্রম করে! ইত্তেফাকের প্রচার সংখ্যা দু’লাখ অতিক্রম করে। একই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ায় গর্বাচেভ ক্ষমতাচ্যুত হন। সোভিয়েতবিরোধী ইয়েলৎসিন ক্ষমতা হস্তগত করার ফলে মস্কোতে কমিউনিস্ট পার্টির শাসনের অবসান ঘটে। এই ডেভেলপমেন্টের ফলে ‘সংবাদ’-এর প্রচার সংখ্যা কমতে আরম্ভ করে। এরশাদের পতনের পর অনেক পত্রিকার সার্কুলেশন কমতে থাকে। একটা কারণ এই হতে পারে যে, আন্দোলনের খবর মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, তাই তারা আরও জানতে চায়। এরশাদের পতনের পর বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ায় মানুষের মনে কিঞ্চিৎ হলেও স্বস্তি ফিরে আসে। ফলে সার্কুলেশন মোটামুটি থাকে। কিন্তু ‘সংবাদ’-এর ক্ষেত্রে আরও একটি ঘটনা সার্কুলেশনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। মস্কোতে সোভিয়েতবিরোধী ইয়েলৎসিন জয়লাভ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য মদদে। ‘সংবাদ’-এর পাঠকদের মধ্যে বিরাটসংখ্যক ছিলেন সোভিয়েত সমর্থক। তারা মনোক্ষুণœœ হয়ে পড়েন গর্বাচেভের বিদায়ে এবং সোভিয়েত সিস্টেমের অবসান ঘটায়।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে কমিউনিস্টদের মধ্যে প্রচ- উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। উৎসাহীদের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য স্থানে স্থানে উগ্রপন্থীরা বোমা হামলা চালায়। যশোরে উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলা, ঢাকায় পল্টন ময়দানে সিপিবির জনসভায় বোমা বিস্ফোরণ, রমনা বটমূলে ছায়ানটের সঙ্গীতানুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণ, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাস্থলে বোমা পেতে রাখা, ফরিদপুরের পল্লী অঞ্চলে গির্জায় বোমা ফাটানো, খুলনায় আহমদিয়া মসজিদে বোমা বিস্ফোরণ ইত্যাদি ঘটনা প্রমাণ করে কোন এক অশুভ শক্তি বাংলাদেশে বিরাট চক্রান্তের জাল বিস্তৃত করেছে। চক্রান্তকারীদের হাতে দেশের অনেক কর্মক্ষম যুবক প্রাণ হারিয়েছে, অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুকে টার্গেট করে। পরোক্ষভাবে ‘সংবাদ’ এসব হামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সংবাদ পত্রিকার অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আহমদুল কবির ছিলেন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির সবচেয়ে নির্ভরশীল প্রবক্তা। তার ‘সংবাদ’ ঘিরে গড়ে উঠেছে সুস্থ, সাম্প্রদায়িকতাশূন্য নিষ্কলঙ্কক রাজনীতি ও সমাজনীতির বিদ্যাপীঠ। আহমদুল কবিরের মৃত্যুতে এ বিদ্যাপীঠ আরও অধিক সংখ্যক অনুসারী আকৃষ্ট করতে সমর্থ হবে এই আশা পোষণ করেন অনেকেই।

[আহমদুল কবির স্মারকগ্রন্থ থেকে পুনর্মুদ্রণ]

ছবি

শামসুর রাহমানের কবিতা বৈভব ও বহুমাত্রিকতা

ছবি

উইলিয়াম রাদিচের অধ্যয়নে অনন্য রবীন্দ্রনাথ

দিলারা হাফিজের কবিতা

ছবি

অবরুদ্ধ বর্ণমালার শৃঙ্খলমুক্তি

ছবি

আহমদুল কবিরের সদাশয়তা

ছবি

রবীন্দ্রসংগীতের অপাপভূমি

ছবি

স্বপ্ন অথবা বিপন্ন বিস্ময়

ছবি

রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

ছবি

ছাতিম যেন হেমন্তেরই গায়ের গন্ধ

ছবি

সমরেশ মজুমদার স্মারকগ্রন্থ

ছবি

সমকালিক ঘটনাবলির রূপকার

ছবি

হেমন্ত পদাবলি

ছবি

আমার রমণীর ফল

ছবি

রূপান্তরিত

সাময়িকী কবিতা

ছবি

আমেরিকার কবিতাকাশে এক স্বতন্ত্র নক্ষত্র

ছবি

কবি বেলাল চৌধুরী কাছ থেকে দেখা

ছবি

ফিওদর দস্তয়েভস্কি রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

ছবি

কামুর ‘দ্য স্ট্রেইঞ্জার’-এ প্রকৃতি ও সূর্য

ছবি

দোজখের ঘাম

ছবি

‘ব্যাস’ সম্পর্কে কিছু অনিবার্য কথা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

সমর সেন : কেন প্রাসঙ্গিক

ছবি

কবিতার রাজপুত্র

ছবি

অস্কার ওয়াইল্ড : সৌন্দর্য ও বেদনার শিল্পিত রূপকার

ছবি

কথা কম কাজ বেশি

ছবি

সম্পাদনার পেশাদারিত্ব ও আবুল হাসনাত

ছবি

সৈয়দ আবদুস সাদিক শোক-পঙ্ক্তি

ছবি

আমার রমণীর ফল

ছবি

প্রসঙ্গ : লেখকের বুদ্ধিবৃৃত্তিক দায় ও দর্শনের খোঁজে

সাময়িকী কবিতা

ছবি

অর্বাচীন নোঙর

ছবি

যে কবিতায় শামসুর রাহমানকে চিনেছি

ছবি

শামসুর রাহমানের রাজনীতির কবিতা, কবিতার রাজনীতি

ছবি

জীবনানন্দ দাশ: শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

আহমদ ছফা ও অলাতচক্র

tab

সাময়িকী

আহমদুল কবির স্মরণে

কে. জি. মুস্তাফা

আহমদুল কবিরের জন্মদিনে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন সন্তোষ গুপ্ত (বাঁয়ে) ও বজলুর রহমান

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

‘সংবাদ’-এর প্রধান সম্পাদক আহমদুল কবির ঢাকার সংবাদপত্র সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন একজন বহুমুখী জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপাশি প্রগতিশীল রাজনীতির অঙ্গনেও তিনি তাঁর মেধার সুস্পষ্ট স্বাক্ষর রেখে গেছেন। অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ আহমদুল কবির তাঁর পত্রিকা ‘সংবাদ’কে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিবর্জিত দৈনিকে পরিণত করেন। আওয়ামী মুসলিম লীগকে ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রেও সংবাদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ‘সংবাদ’-এর তৎকালীন পরিচালকম-লীতে ফাইন্যান্স ডিরেক্টর ছিলেন আহমদুল কবির, পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন জহুর হোসেন চৌধুরী, প্রশাসনের দায়িত্বে ছিলেন অন্যতম ডিরেক্টর এক প্রখ্যাত ছাত্রনেতা আনোয়ার হোসেন এবং সাবেক বার্তা সম্পাদক সৈয়দ নুরুদ্দিন ছিলেন অন্যতম ডিরেক্টর ও যুগ্ম সম্পাদক। অন্যতম ডিরেক্টর ও জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন নাসিরুদ্দিন আহমদ।

উল্লেখ্য, ১৯৫১ সালে সংবাদ প্রকাশ করেন আহমদুল কবিরের জ্যেষ্ঠভ্রাতা স্বনামধন্য সাংবাদিক খায়রুল কবির। তিনি ছিলেন পত্রিকাটির সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনার সার্বিক দায়িত্বে নিযুক্ত। নাসিরুদ্দিন আহমদের জ্যেষ্ঠভ্রাতা গিয়াসুদ্দিন আহমদ ছিলেন প্রথম দিকের ফিনান্সিয়ার। পরে মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ‘সংবাদ’ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগের নামে। ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর লিয়াকত আলী খানকে রাওয়ালপিন্ডির এক জনসভায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর সংবাদ পরিচালনা করতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীন এবং প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সভাপতি আবদুল্লাহেল বাকি। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিরুদ্ধে মুসলিম লীগের ভরাডুবি হয়। সে সময় খায়রুল কবির ‘সংবাদ’ থেকে পদত্যাগ করেন। পরাজিত মুসলিম লীগ ‘সংবাদ’ চালাতে ব্যর্থ হয়। সে সময় আহমদুল কবির ‘সংবাদ’-এর মালিকানা কিনে নেন সামান্য মূল্যের বিনিময়ে। তারই উদ্যোগে গঠিত হয় দি সংবাদ লিমিটেড কোম্পানি, ১৯৫৪ সালেই।

এ সময় আহমদুল কবির সংবাদ পরিচালনা ছাড়াও এসেন্সিয়াল ইন্ডাস্ট্রিজ ও বেঙ্গল বেভারেজ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করেন। শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পদার্পণের আগে তিনি অবিভক্ত ভারতে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ায় যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) পাস করার পর। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন। ১৯৫৪ সালের ৩০ মে কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ববঙ্গে ৯২ক ধারা জারি করে সরকার বরখাস্ত করে আইনসভা স্থগিত ঘোষণা করে। দমননীতি চলে তীব্র বেগে। ১৯৫৪ সালে ‘সংবাদ’-এর সাংবাদিক ও কর্মচারীদের এক যৌথসভায় কর্তৃপক্ষের ব্যয়হ্রাসের উদ্যোগ মেনে নেয়া হয়। পরিস্থিতির আলোকে কর্তৃপক্ষের শতকরা ৫০ ভাগ বেতন কর্তনের প্রস্তাব সাংবাদিক-কর্মচারীরা গ্রহণ করেন। সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেস কর্মচারী ইউনিয়ন পত্রিকাটির বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দূর করার জন্যই অর্ধেক বেতনে কাজ করার প্রস্তাবটি মেনে নেয়। কিন্তু চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় শ্রমিক-কর্মচারী-সাংবাদিক সবাই চরম সঙ্কটে নিপতিত হন। ইতোমধ্যে ১৯৫৪ সালের ৩০ মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট সরকার বাতিল ঘোষণা করে। জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা নিযুক্ত হন গভর্নর।

১৯৫৫ সালে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্টে ভাঙন শুরু হয়। এ কে ফজলুল হক তাঁর কেএসপি নিয়ে পাঞ্জাবের চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কোয়ালিশন করে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করেন এবং প্রদেশে আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকার গঠিত হয়; কিন্তু আবু হোসেন সরকার বেশিদিন টিকতে পারেনি। ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান ক্ষমতায় এসে রাজবন্দিদের মুক্তি দেন এবং বেঙ্গল স্পেশাল পাওয়ার্স অর্ডিন্যান্স (বিএসপিও) বাতিল করেন। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার ভয়ানক কুপিত হয় প্রাদেশিক সরকারের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে কেন্দ্র সরকারও গঠন করে আওয়ামী লীগ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে।

১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে। ১৯৫৭ সালের ২৫ জুলাই নিখিল পাকিস্তান ভিত্তিতে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠিত হয়। বামঘেঁষা সব দল ও গ্রুপ আওয়ামী লীগ ছেড়ে ন্যাপে যোগ দিতে থাকে। এ সময় ‘সংবাদ’-এর ফাইন্যান্স ডিরেক্টর আহমদুল কবির, সম্পাদক জহুর হোসেন চৌধুরী ও যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ নুরুদ্দিন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করেন। আহমদুল কবির পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান লাভ করেন।

পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে এসে আহমদুল কবির তাঁর গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও অপূর্ব বাকচাতুর্যের কারণে সারা দেশে সুনাম অর্জন করেন।

ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্তে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৭ সালের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেন। প্রদেশে আবু হোসেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করে আতাউর রহমান মুখ্যমন্ত্রী পদে টিকে থাকেন। তিনি ক্ষমতা হারান প্রধান সেনাপতি জেনারেল আইয়ুব খান এবং প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জার সামরিক শাসন জারির কারণে। এই দুই মিলিটারি নেতা দেশে সেনাশাসন পাকাপোক্ত করার জন্য সামরিক আইন জারি করেন। আইয়ুব খান নিজেকে সামরিক শাসক হিসেবে ঘোষণা করেন ১৯৫৮ সালের ১৮ অক্টোবর। তিনি ২৭ অক্টোবর নিজেকে ফিল্ড মার্শাল ঘোষণা করেন এবং জেনারেলমির্জাকে লন্ডনে নির্বাসনে পাঠান। ফলে পাকিস্তানে আইনের শাসনের রাজনীতি রুদ্ধ হয়ে যায়। মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবসহ হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক কারারুদ্ধ হন।

সামরিক শাসন জারি হওয়ার ফলে দেশের সব পত্রপত্রিকা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সংবাদপত্র তার অভিমত প্রকাশের স্বাধীনতা হারায়, সাংবাদিকরা পদে পদে সামরিক অফিসারদের নিগ্রহে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে প্রগতিশীল পত্রিকা ‘সংবাদ’ চরম বিপদের সম্মুখীন হয়। ‘সংবাদ’-এর মফস্বল পাতায় সামান্য একটি সিঙ্গল কলাম নিউজের হেডিং ছিলÑ রামগতিতে চালের দর ৪২ টাকা। তার জন্য সম্পাদক জহুর হোসেন চৌধুরী এবং ফাইন্যান্স ডিরেক্টর আহমদুল কবিরকে গভর্নমেন্ট হাউজে জবাবদিহি করতে ডাকেন খাদ্যমন্ত্রী হাফিজুর রহমান। তিনি সরেজমিন তদন্তের জন্য নিজে ও হেলিকপ্টার নিয়ে রামগতি সফর করেন। ‘সংবাদ’-এর কপাল ভালো, এলাকার বাজারে মন্ত্রী জানতে পারেন, ‘সংবাদ’-এ প্রকাশিত খবরে নির্দিষ্ট দিনে চালের যে দর উল্লেখ করা হয়েছে তা ছিল মণপ্রতি আট আনা কম। ওইদিন চালের দর ছিল সাড়ে ৪২ টাকা।

১৯৬২ সালে আইয়ুব খান মনোনীত সংবিধান চালু করা হয় যাতে বুনিয়াদি গণতন্ত্র বা বেসিক ডেমোক্র্যাসি (বিডি) সিস্টেম গ্রহণ করা হয়। দেশের নাগরিকদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়। তার পরিবর্তে ৮০ হাজার বিডিকে আইয়ুব খানের পক্ষে ভোটদানের জন্য নির্বাচিত করা হয়। তারা আবার পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক আইনসভা নির্বাচিত করবেন আইয়ুব খান মুসলিম লীগ সমর্থকদের কনভেনশন ডেকে মুসলিম লীগ দল গঠন করেন। তার বিরুদ্ধ পক্ষ মুসলিম লীগের একাংশকে ‘কাউন্সিল মুসলিম লীগ’ নামে অভিহিত করে টিকে থাকার চেষ্টা করে। ওই দলের নেতা ছিলেন পাঞ্জাবের মমতাজ দৌলতানা। বিডি সিস্টেমে ১৯৬৫ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আহমদুল কবির জয়লাভ করেন এবং পাঁচ বছর পরিষদের আলোচনায় তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। সামরিক আইন প্রত্যাহার করার পরও স্বৈরশাসন চালু থাকে আইয়ুব শাসনের সর্বস্তরে। ফলে ইত্তেফাক, সংবাদ ও অবজারভার নানাবিধ বিধি-নিষেধের নিগড়ে আবদ্ধ হয়। তাদের ললাটের লিখন ছিল কথায় কথায় জামানত তলব, জামানত বাজেয়াপ্ত, প্রকাশনা নিষিদ্ধ ইত্যাকার শাস্তি। তাদের সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। শুধু বেসরকারি খাতের বিজ্ঞাপন দিয়ে ইত্তেফাক চালাতে পারত যেহেতু তার সার্কুলেশন ছিল বেশি : অবজারভারও মোটামুটি চলত ব্যয় সংকোচ করে। কিন্তু ‘সংবাদ’-এর সার্কুলেশন যথেষ্ট ছিল না বলে তার বেসরকারি বিজ্ঞাপনের আয়ও ছিল খুবই কম। আইয়ুব শাসনামলে ‘সংবাদ’-এর অবস্থা ছিল খুবই সঙ্গিন।

আহমদুল কবিরের গড়ে তোলা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোও ভালোভাবে টিকে থাকতে পারেনি। পরে তিনি নিজস্ব চা বাগান গড়ে তোলেন। তাঁর সহধর্মিণী লায়লা রহমান কবির পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত চা বাগানের যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেন। তিনি মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্সের সাবেক সভাপতি।

আহমদুল কবির ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সঙ্গে বেশি দিন সংশ্লিষ্ট থাকতে পারেননি। পরবর্তীকালে তিনি গণতন্ত্রী দলে যোগদান করেন এবং দলীয় সভাপতি সৈয়দ আলতাফ হোসেনের মৃত্যুর পর ওই দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। উল্লেখ করা যেতে পারে, গণতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫২ সালের শেষে। দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ। আহমদুল কবির ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি স্তরে এবং সে কারণে তাঁকে একাত্তরের জুন মাসে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে পাঠায়। জেনারেল ইয়াহিয়া খান একাত্তরের সেপ্টেম্বরে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়। তার বন্ধু ও আত্মীয় সাইদুল হাসান ছিলেন ন্যাপের (ভাসানী) কোষাধ্যক্ষ পাকিস্তান সেনাবাহিনী সাইদুল হাসানকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তার কোন সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি। সাইদুল হাসান ছিলেন মিসেস লায়লা কবিরের বড় বোন ফরিদা হাসানের স্বামী। ফরিদা হাসান বিএনপির এমপি ছিলেন ১৯৯১-৯৬ সালে।

আহমদুল কবির সংবাদপত্র পরিচালক হিসেবে ছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত। তিনি কমনওয়েলথ প্রেস ইউনিয়ন (সিপিইউ)-এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যে ক’টি সংবাদপত্রে পাকিস্তান মিলিটারি ট্যাংক হামলা চালায় ‘সংবাদ’ ছিল তার অন্যতম। দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পরও সংবাদ প্রকাশে বিলম্ব হয়। ‘সংবাদ’-এর সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আহমদুল কবির নিজে। জহুর হোসেন চৌধুরী কলামিস্ট হিসেবে ‘সংবাদ’-এ বহাল থাকেন। তাঁর কলাম ‘দরবার-ই-জহুর’ প্রচুর সুখ্যাতি লাভ করে। বাংলাদেশে সংবাদপত্রের সংখ্যা হ্রাস করার জন্য তদানীন্তন সরকার মাত্র ৪টি সংবাদপত্র প্রকাশের অনুমতি দেয়। এই চারটি দৈনিক ছিলÑ অবজারভার, ইত্তেফাক, বাংলার বাণী ও বাংলাদেশ টাইমস। রাজনৈতিক দলের সংখ্যা নিম্নতম পর্যায়ে রাখার জন্য খবরের কাগজের সংখ্যাও সীমিত করা হয়। এর ফল ভালো হয়নি। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ যেমন একটিমাত্র রাজনৈতিক দল অপছন্দ করেছে, তেমনি মাত্র ৪টি সংবাদপত্র তাদের খবরের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়।

এ সময় চারদিকে বঙ্গবন্ধুর প্রাণনাশের চক্রান্ত চলতে থাকে। তার প্রিয় সহকর্মীদেরও পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। চক্রান্তকারীরা জয়লাভ করে, বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। তাঁর চার সহকর্মী তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও কামরুজ্জামানকে হত্যা করা হয় কারাগারের অভ্যন্তরে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর বঙ্গভবন থেকে জল্লাদ পাঠিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের এই চার বীর সেনানীকে। খন্দকার মোশতাক আহমদ মাত্র ৮৩ দিন ক্ষমতায় ছিল। জেনারেল জিয়াউর রহমান ৬ বছর নাগাদ ক্ষমতা ভোগ করেছেন। তারই হাতে গড়া সৈন্যদের বুলেটের আঘাতে তার দেহ ছিন্নভিন্ন হয় ১৯৮১ সালের মে মাসে। এক বছর বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সামনে রেখে নিশানা প্র্যাকটিস করেন জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তিনি ক্ষমতা দখল করেন সামরিক আইন জারি করে। প্রবল গণআন্দোলনের মুখে এরশাদের প্রায় ৯ বছরের সরকার ধরণীর ধুলায় মিশে যায়।

জিয়াউর রহমানের আমলে সব সংবাদপত্র প্রকাশিত হতে থাকে সরকারের সম্মতিক্রমে। এসব ‘এমবেডেড’ পত্রিকা এরশাদের আমলেও একই ভূমিকা পালন করে। স্বল্পসংখ্যক সংবাদপত্র নিজেদের কথা পত্রিকায় প্রকাশ করার হিম্মত দেখায়। তারা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ধমকের মুখে পড়ে। একপর্যায়ে এরশাদ তিনটি আওয়ামীগন্ধী দৈনিক বন্ধ করে দেয়। চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার বিশাল মিছিলে গুলিবর্ষণ করে এরশাদের সরকার ২৪ জনকে হত্যা করে বলে বেসরকারি তদন্ত রিপোর্টে প্রকাশ। এরশাদের সরকার দাবি করে, শেখ হাসিনার মিছিলে মাত্র ৫ জন নিহত হয়েছে। কিন্তু সারা দেশ বিশ্বাস করে, এরশাদের পুলিশ ২৪ জন মানুষ হত্যা করেছে চট্টগ্রামে। এই হত্যাকা-কে ঘিরে এরশাদবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদ জানান। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার জন্য এরশাদ ইমার্জেন্সি জারি করেন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম ফুঁসে ওঠে এরশাদের পদত্যাগ দাবিতে।

এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ‘সংবাদ’ অভূতপূর্ব পাঠক সংহতি গড়ে তোলে। এ সময় ‘সংবাদ’-এর প্রচার সংখ্যা দৈনিক ৮০ হাজার অতিক্রম করে! ইত্তেফাকের প্রচার সংখ্যা দু’লাখ অতিক্রম করে। একই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ায় গর্বাচেভ ক্ষমতাচ্যুত হন। সোভিয়েতবিরোধী ইয়েলৎসিন ক্ষমতা হস্তগত করার ফলে মস্কোতে কমিউনিস্ট পার্টির শাসনের অবসান ঘটে। এই ডেভেলপমেন্টের ফলে ‘সংবাদ’-এর প্রচার সংখ্যা কমতে আরম্ভ করে। এরশাদের পতনের পর অনেক পত্রিকার সার্কুলেশন কমতে থাকে। একটা কারণ এই হতে পারে যে, আন্দোলনের খবর মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, তাই তারা আরও জানতে চায়। এরশাদের পতনের পর বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ায় মানুষের মনে কিঞ্চিৎ হলেও স্বস্তি ফিরে আসে। ফলে সার্কুলেশন মোটামুটি থাকে। কিন্তু ‘সংবাদ’-এর ক্ষেত্রে আরও একটি ঘটনা সার্কুলেশনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। মস্কোতে সোভিয়েতবিরোধী ইয়েলৎসিন জয়লাভ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য মদদে। ‘সংবাদ’-এর পাঠকদের মধ্যে বিরাটসংখ্যক ছিলেন সোভিয়েত সমর্থক। তারা মনোক্ষুণœœ হয়ে পড়েন গর্বাচেভের বিদায়ে এবং সোভিয়েত সিস্টেমের অবসান ঘটায়।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে কমিউনিস্টদের মধ্যে প্রচ- উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। উৎসাহীদের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য স্থানে স্থানে উগ্রপন্থীরা বোমা হামলা চালায়। যশোরে উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলা, ঢাকায় পল্টন ময়দানে সিপিবির জনসভায় বোমা বিস্ফোরণ, রমনা বটমূলে ছায়ানটের সঙ্গীতানুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণ, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাস্থলে বোমা পেতে রাখা, ফরিদপুরের পল্লী অঞ্চলে গির্জায় বোমা ফাটানো, খুলনায় আহমদিয়া মসজিদে বোমা বিস্ফোরণ ইত্যাদি ঘটনা প্রমাণ করে কোন এক অশুভ শক্তি বাংলাদেশে বিরাট চক্রান্তের জাল বিস্তৃত করেছে। চক্রান্তকারীদের হাতে দেশের অনেক কর্মক্ষম যুবক প্রাণ হারিয়েছে, অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুকে টার্গেট করে। পরোক্ষভাবে ‘সংবাদ’ এসব হামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সংবাদ পত্রিকার অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আহমদুল কবির ছিলেন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির সবচেয়ে নির্ভরশীল প্রবক্তা। তার ‘সংবাদ’ ঘিরে গড়ে উঠেছে সুস্থ, সাম্প্রদায়িকতাশূন্য নিষ্কলঙ্কক রাজনীতি ও সমাজনীতির বিদ্যাপীঠ। আহমদুল কবিরের মৃত্যুতে এ বিদ্যাপীঠ আরও অধিক সংখ্যক অনুসারী আকৃষ্ট করতে সমর্থ হবে এই আশা পোষণ করেন অনেকেই।

[আহমদুল কবির স্মারকগ্রন্থ থেকে পুনর্মুদ্রণ]

back to top