alt

সাময়িকী কবিতা

: শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

ভাসান

শফিক ইমতিয়াজ

এক রাতুল অধ্যায়ে এসে প্রায়শ দুচোখ ভিজে যায়Ñ

মাটি আর ফসলের ঘ্রাণ ছুঁয়ে বেড়ে ওঠা দুঃখপোড়া জল

হঠাৎ দুকূল ভাঙা প্রবল প্রাবৃট

অতঃপর শীতের জাজিমে একটানা কাঁথামুড়ি ঘুম!

নরম পলিমাটির সীমাবদ্ধতা নিশ্চয় আছে

সহজ ফসলপ্রাপ্তি, সেও বটে লাগাতার দৃঢ়তার অন্তরায়

তথাপি জড়তাহিম, কোন পাপে দ্রুত শিলীভূত হয়ে

অন্বেষার গতি রুখে দেয়?

ইতরসম্ভব খেয়োখেয়ি নিয়ে অন্ধ হয় প্রশ্নবিমুখ নগর!

আছে কোনো গভীর কারণ।

রাজ-তরঙ্গের গালগল্পে ধুম মজে থাকা আশ্চর্য বিলাস

লড়ে পাওয়া সোনার মুকুট নিজে পরবে না!

কী যে এক লেলানো কুহক তার উদাস মননে

সূর্যের বিমুখ হয়ে

নিজের ছায়ার পিছে দৌড়ানোর আদিখ্যেতা।

কবে কোন অধীন-অতীতে এই শীর্ণপাঠ খেয়ালি প্রান্তরে

সুকৌশলে রেখে গেছে কারা পতিতের মৃতদেহ

সেটিকেই লখিন্দর ভেবে কতবার ভাসলো যে ভেলা!

বেহুলা মা, এতটা ভাসান ক্যানে বৃথা যায়

এ যদি লখাই তবে ক্যানে তার জীবন ফেরে না?

হিম আর উষ্ণতা

হাইকেল হাশমী

ভোর নরম সুরে হিম গান গায়

কুয়াশায় ভেজা গাছের লতা-পাতা

মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনে যায়।

সবুজ ঘাসের উপর

শিশিরের রুপালি মুক্তগুলো

শীতল চাদর বিছিয়ে যায়।

নদী কুয়াশার কাথা মুড়ি দিয়ে

নিজের বুকে রুপালি মাছ আগলে রেখে

নিঃশব্দে আরামে ঘুমায়।

ক্ষেত আর মাঠগুলো

শান্ত সবুজ আবরণে ঢাকা

হিমশীতল আকাশের নিচে ঝিমায়।

বাতাস ধারালো ছুড়ির মতো

মাংসপেশীর ভিতরে

কাঁপুনি হয়ে বিঁধে যায়।

এই হিমশীতল দিনে রাতে

তোমার উষ্ণ ভাবনাগুলো

আমার শিরায় শিরায়

আগুনের ফুলকি হয়ে

নদীর ¯্রােতের মতো বয়ে যায়।

কাচের চিৎকার ১৭

রেহমান সিদ্দিক

অন্তহীন জলে ভিজে পৃথিবীতে পা রাখি মানব

শ্রাবণের বর্ষণমুখর এক রুপালি বিকেলে

প্রথম ত্রন্দনধ্বনি মিশেছিল তামায়-নিকেলে

ঘোষণার ঢোলবাদ্য সম্ভবত শোনেনি দানব

কেবল শ্রাবণ জানে বৃষ্টিতত্ত্ব, আদ্যকথা, পাশে

মগ্ন হয়ে কান পেতে কেউ শোনে বিভোর বাজনা

আমার ঘোষণাপত্র পড়ে দেখা যাদের কাজ না

সেদিন বিকেলে তারা হেসেছিল, আজও তারা হাসে

যে-কথা দিয়েছি আমি, সে-কথা তো রাখতে পারিনি

কপালে কলঙ্কচিহ্ন আঁকা আছে, সারাদিন রাত

অবিরাম দুঃখ কাটি আমি আজও আশার করাতে

নিরন্তর চলে এই কাটাকুটি, কখনও ছাড়িনি

জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখি, দেখি ধু-ধু মাঠ

আকাশে কে যেন করে অনন্তের বর্ষাপুঁথি পাঠ

গণতন্ত্র

আদিত্য নজরুল

হঠাৎ পা

রাজনীতি শুরু করে দিলো!

জনসভা

ডেকে তার ইচ্ছে

জানিয়ে দিল কর্মীদের

অর্থাৎ

সমাবেশ অলংকৃত করল

নামীদামী জুতো

এবং কতিপয় চটি!

পা বলল

আমি গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি

সঙ্গে সঙ্গে

জুতো স্বাধীনতা চাইল

এবং বললÑ

আমরা তোমার পায়ে আর পদদলিত হয়ে চাই না!

পা এখন বোল পাল্টে

সমাবেশে

জুতো, চটিকে শেখাচ্ছে

সেবা এবং

অনুগত হওয়ার গল্প!

নিঃশব্দ পা-ুলিপি

এলিজা খাতুন

রাষ্ট্রজুড়ে একগুচ্ছ কবিতা ছাপা হবে ভেবে

অজ¯্র কাগজ এমনকি মস্ত মস্ত রাত পুড়িয়েছি

রোদের ওমলিপি সম্পাদনায় সংযোজন-বিয়োজনে

হাত ধরতে চাওয়া বিভোরতা যোগ হতে না হতেই

ধাওয়া পাল্টাধাওয়ায় দৌড়াচ্ছে সময়

অথচ পৃষ্ঠাগুলোর কেমন দ্বৈতরূপ!

শুষ্ক, তবু অন্তসলিল। নরমে নন্দিত কঠিন

প্রয়োগ ও উচ্চারণের মাত্রাজ্ঞানে

বিপরীতার্থক শব্দসমূহের অনির্বাদ নিবাস

ডাহুক ডাকা রাত

বহ্নি কুসুম

আজও ডাহুক ডাকা রাতে ঘুম ভেঙে যায়

অভ্যাসবশত দাঁড়াই খোলা জানালায়

কান পেতে রাখি, রাখি ঘ্রাণেন্দ্রিয় সজাগ

তুমি এলে বুঝি?

মেঠোপথে কোমর ভাসিয়ে

ধুলো উড়িয়ে গ্রামীণ মাঠপ্রান্তে

অরণ্যে কম্পন তুলে

ঘুম পাখিদের নিদ্রা ভেঙে এলে?

ঘরে ঘরে ঘুমন্ত মানুষ রেখে

হরিহরের দু’পাড়Ñ ঢেউ স্তব্ধ করে

মাঠময় ধানে সবুজ দোলনা দিয়ে

রেললাইন সমুখে রেখে।

তোমার ফেরার প্রতীক্ষায়

নিঝুম নির্ঘুম হাহাকারে

শূন্য বিছানা হাতড়াই

নাগরিক ঘরে জ্বালাই জোছনা বাতি

নগরের পিচঢালা পথে

ঢেলে দিই গ্রামীণ শিশির

বস্তিতে বস্তিতে ছড়াই জাগরূক পদ্মসুবাস

যাবতীয় বিলাসিতায় সরেস সারল্য ছড়াই

আজও তোমার প্রতীক্ষায়।

ছবি

শিল্পের স্বাধীনতা মানেই মানুষের স্বাধীনতা

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

বনানীর ঢালু রাস্তা বেয়ে

দিলারা হাফিজ-এর কবিতা

ছবি

বাংলা কবিতার উদ্ভাসিত স্বর

ছবি

শরীরী অশরীরী

ছবি

বিষণ্ণতার কবি আবুল হাসান

ছবি

উত্তরাধুনিক সাহিত্যের সুলুক সন্ধান

দূরের পথ বাতিঘর

কচুরিপানা

অল্প-স্বল্প : মিথ্যা-সত্য

মানুষ চাই

বাঘ

বিষাদমন্ত্রী

বুকের রেহেলে

নবান্ন

জলের নক্ষত্র

সততাও লুপ্ত হচ্ছে লুপ্তবংশে

ছবি

বিলেতে বাঙালির শিল্পসাহিত্যের প্রতিনিধি

ছবি

বিপন্ন সময়ের জীবনশিল্পী

ছবি

লাল ফুলের খোঁপা

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

জনপ্রিয় সাহিত্যের জাদুকর

ছবি

দেশ ভাগের আর্তনাদ

ছবি

অনুবাদকের দায় : বিশ্বস্ততা নাকি সরলতা?

কার্তিকের স্নান

আমি- শেষ

ছবি

মহিবুল আলমের কবিতায় নদী ও নারী

ছবি

কবি মাহমুদ কামাল ও নিমগ্ন আত্মার সাধক

ছবি

স্পর্শ

ছবি

নুরুন্নাহার মুন্নির গল্প

ছবি

মাটির মমতায় হেমন্ত বিকেল

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

জীবনানন্দ দাশ দূর-সময়ের সার্বভৌম কবি

ছবি

পথ ভিন্ন : প্রসঙ্গ লালন

ছবি

মার্গারেট অ্যাটউড ‘রানিং দ্য ব্যাট’

tab

সাময়িকী কবিতা

শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

ভাসান

শফিক ইমতিয়াজ

এক রাতুল অধ্যায়ে এসে প্রায়শ দুচোখ ভিজে যায়Ñ

মাটি আর ফসলের ঘ্রাণ ছুঁয়ে বেড়ে ওঠা দুঃখপোড়া জল

হঠাৎ দুকূল ভাঙা প্রবল প্রাবৃট

অতঃপর শীতের জাজিমে একটানা কাঁথামুড়ি ঘুম!

নরম পলিমাটির সীমাবদ্ধতা নিশ্চয় আছে

সহজ ফসলপ্রাপ্তি, সেও বটে লাগাতার দৃঢ়তার অন্তরায়

তথাপি জড়তাহিম, কোন পাপে দ্রুত শিলীভূত হয়ে

অন্বেষার গতি রুখে দেয়?

ইতরসম্ভব খেয়োখেয়ি নিয়ে অন্ধ হয় প্রশ্নবিমুখ নগর!

আছে কোনো গভীর কারণ।

রাজ-তরঙ্গের গালগল্পে ধুম মজে থাকা আশ্চর্য বিলাস

লড়ে পাওয়া সোনার মুকুট নিজে পরবে না!

কী যে এক লেলানো কুহক তার উদাস মননে

সূর্যের বিমুখ হয়ে

নিজের ছায়ার পিছে দৌড়ানোর আদিখ্যেতা।

কবে কোন অধীন-অতীতে এই শীর্ণপাঠ খেয়ালি প্রান্তরে

সুকৌশলে রেখে গেছে কারা পতিতের মৃতদেহ

সেটিকেই লখিন্দর ভেবে কতবার ভাসলো যে ভেলা!

বেহুলা মা, এতটা ভাসান ক্যানে বৃথা যায়

এ যদি লখাই তবে ক্যানে তার জীবন ফেরে না?

হিম আর উষ্ণতা

হাইকেল হাশমী

ভোর নরম সুরে হিম গান গায়

কুয়াশায় ভেজা গাছের লতা-পাতা

মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনে যায়।

সবুজ ঘাসের উপর

শিশিরের রুপালি মুক্তগুলো

শীতল চাদর বিছিয়ে যায়।

নদী কুয়াশার কাথা মুড়ি দিয়ে

নিজের বুকে রুপালি মাছ আগলে রেখে

নিঃশব্দে আরামে ঘুমায়।

ক্ষেত আর মাঠগুলো

শান্ত সবুজ আবরণে ঢাকা

হিমশীতল আকাশের নিচে ঝিমায়।

বাতাস ধারালো ছুড়ির মতো

মাংসপেশীর ভিতরে

কাঁপুনি হয়ে বিঁধে যায়।

এই হিমশীতল দিনে রাতে

তোমার উষ্ণ ভাবনাগুলো

আমার শিরায় শিরায়

আগুনের ফুলকি হয়ে

নদীর ¯্রােতের মতো বয়ে যায়।

কাচের চিৎকার ১৭

রেহমান সিদ্দিক

অন্তহীন জলে ভিজে পৃথিবীতে পা রাখি মানব

শ্রাবণের বর্ষণমুখর এক রুপালি বিকেলে

প্রথম ত্রন্দনধ্বনি মিশেছিল তামায়-নিকেলে

ঘোষণার ঢোলবাদ্য সম্ভবত শোনেনি দানব

কেবল শ্রাবণ জানে বৃষ্টিতত্ত্ব, আদ্যকথা, পাশে

মগ্ন হয়ে কান পেতে কেউ শোনে বিভোর বাজনা

আমার ঘোষণাপত্র পড়ে দেখা যাদের কাজ না

সেদিন বিকেলে তারা হেসেছিল, আজও তারা হাসে

যে-কথা দিয়েছি আমি, সে-কথা তো রাখতে পারিনি

কপালে কলঙ্কচিহ্ন আঁকা আছে, সারাদিন রাত

অবিরাম দুঃখ কাটি আমি আজও আশার করাতে

নিরন্তর চলে এই কাটাকুটি, কখনও ছাড়িনি

জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখি, দেখি ধু-ধু মাঠ

আকাশে কে যেন করে অনন্তের বর্ষাপুঁথি পাঠ

গণতন্ত্র

আদিত্য নজরুল

হঠাৎ পা

রাজনীতি শুরু করে দিলো!

জনসভা

ডেকে তার ইচ্ছে

জানিয়ে দিল কর্মীদের

অর্থাৎ

সমাবেশ অলংকৃত করল

নামীদামী জুতো

এবং কতিপয় চটি!

পা বলল

আমি গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি

সঙ্গে সঙ্গে

জুতো স্বাধীনতা চাইল

এবং বললÑ

আমরা তোমার পায়ে আর পদদলিত হয়ে চাই না!

পা এখন বোল পাল্টে

সমাবেশে

জুতো, চটিকে শেখাচ্ছে

সেবা এবং

অনুগত হওয়ার গল্প!

নিঃশব্দ পা-ুলিপি

এলিজা খাতুন

রাষ্ট্রজুড়ে একগুচ্ছ কবিতা ছাপা হবে ভেবে

অজ¯্র কাগজ এমনকি মস্ত মস্ত রাত পুড়িয়েছি

রোদের ওমলিপি সম্পাদনায় সংযোজন-বিয়োজনে

হাত ধরতে চাওয়া বিভোরতা যোগ হতে না হতেই

ধাওয়া পাল্টাধাওয়ায় দৌড়াচ্ছে সময়

অথচ পৃষ্ঠাগুলোর কেমন দ্বৈতরূপ!

শুষ্ক, তবু অন্তসলিল। নরমে নন্দিত কঠিন

প্রয়োগ ও উচ্চারণের মাত্রাজ্ঞানে

বিপরীতার্থক শব্দসমূহের অনির্বাদ নিবাস

ডাহুক ডাকা রাত

বহ্নি কুসুম

আজও ডাহুক ডাকা রাতে ঘুম ভেঙে যায়

অভ্যাসবশত দাঁড়াই খোলা জানালায়

কান পেতে রাখি, রাখি ঘ্রাণেন্দ্রিয় সজাগ

তুমি এলে বুঝি?

মেঠোপথে কোমর ভাসিয়ে

ধুলো উড়িয়ে গ্রামীণ মাঠপ্রান্তে

অরণ্যে কম্পন তুলে

ঘুম পাখিদের নিদ্রা ভেঙে এলে?

ঘরে ঘরে ঘুমন্ত মানুষ রেখে

হরিহরের দু’পাড়Ñ ঢেউ স্তব্ধ করে

মাঠময় ধানে সবুজ দোলনা দিয়ে

রেললাইন সমুখে রেখে।

তোমার ফেরার প্রতীক্ষায়

নিঝুম নির্ঘুম হাহাকারে

শূন্য বিছানা হাতড়াই

নাগরিক ঘরে জ্বালাই জোছনা বাতি

নগরের পিচঢালা পথে

ঢেলে দিই গ্রামীণ শিশির

বস্তিতে বস্তিতে ছড়াই জাগরূক পদ্মসুবাস

যাবতীয় বিলাসিতায় সরেস সারল্য ছড়াই

আজও তোমার প্রতীক্ষায়।

back to top