alt

মাদাগাস্কারের কবি

জাঁ জোসেফ রাবেয়ারিভেলোর কবিতা

অনুবাদ: চরু হক

: বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

জাঁ জোসেফ রাবেয়ারিভেলো

রাতের খাবার

অদৃশ্য ইঁদুর

রাত্রির দেয়াল থেকে বের হয়ে আসে

ধবধবে পিঠার মতো চাঁদ খেতে চেয়ে

কাতরায়

আগামী সকালে

আর তাকে দেখা যাবে না

কেবল দেখা যাবে তার দাঁতের দাগ,

রক্তমাখা।

রাতে যারা বেঘোর হয়ে পড়েছিল সুরাপানের

মধ্যে

আর সারারাত কেবল জুয়ার দান ঢেলেছে

হেরেছে আর হেরেছে

তারা চাঁদের দিকে তাকিয়ে তোঁতলাতে তোঁতলাতে বলবে,

“সবুজ টেবিলের উপর গড়িয়ে যাওয়া

এই ছক্কাটা কার?”

“আহ!” আরেকজন যোগ করবে

“আমাদের প্রিয় বন্ধুটি তার জীবনের সব হারিয়ে

এখন নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছে।”

টলতে টলতে সবাই মাটিতে পড়ে যাবে

তখন চাঁদকে আর দেখা যাবে না।

ইঁদুর তাকে নিয়ে যাবে গর্তে

রাতের খাবার হিসাবে।

কালো গরুটা

কালো গরুটার পেছনভাগ ছড়িয়ে আছে

ছড়িয়ে আছে, তবে তা শুকানোর জন্য নয়

শুধু সাত ভাঁজ ছায়ার মধ্যে

লম্বা হয়ে আছে

কিন্তু কে এই গরুটা মেরেছে?

মৃত, তাই হাম্বা আর ডাকছেনা

মৃত,তাই গর্জে আর উঠছেনা

কেউ তার পেছনে ছুটবেনা আর

ছুটবেনা তারায় তারায় খচিত

প্রেইরির ফুলের মধ্যে দিয়ে।

সে এখন বিয়োচ্ছে দূরের আকাশের আধটুকু জুড়ে

লম্বা হয়ে আছে তার পশ্চাৎ-ভাগ

বাতাসের শব্দের বাক্সের মধ্যে

ঘুমনগরীর ভাস্কর্যের মধ্যে...

এবং ঢাক প্রস্তুত

যখন সদ্যোজাত বাছুর

তরুণ ঘাসের বুকে তার শিং ঘষছে

আর লাফাচ্ছে

খাচ্ছে পাহাড়ি ঘাস খুঁটে খুঁটে

যেন জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে

তার এই নবজন্ম কেবল স্বপ্নই

থেকে যাবে

যতক্ষণ না তার মা ফিরে আসে

সাদা আর গোলাপি হয়ে রবে

আলোর জলধারায়।

মাত্র সতেরো বছর বয়সে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা ত্যাগ করেন এবং শুরু করেন কবিতা লেখা, হ্যাঁ, কবিতা। তাঁর জীবনের সবটুকু সাধনা নিবেদিত করেন কাব্যদেবীর পায়ে।এ মহান সাধক কবির জন্ম আফ্রিকার মাদাগাস্কারে, ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে। ফ্রান্সের সিম্বোলিস্টদের (প্রতীকবাদী) দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাঁর কাব্যযাত্রা শুরু। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর কিছুসংখ্যক কবিতা কবি লিওপল্ড সেডর সেঙ্ঘরের হাতে পড়ে।গভীর আবেগতাড়িত, অস্থির স্বভাবের এই কবি বারবার এক পেশা থেকে ছুটে যান আরেক পেশায়। এই তৃষ্ণা, এই সর্বগ্রাসী অস্থিরতাই একসময় গ্রাস করে তাঁর জীবন। ড্রাগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ তাঁকে ফ্রান্স ভ্রমণে অনুমতি প্রদানে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে এ অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। ১৯৩৭ সালে বিপুল নৈরাশ্য নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহ হলো : ‘লা ক্যু দ্যে সেন্ড্রা(১৯২৪), ‘সিলভেস’ ১৯২৭ ও ‘ভলিউমস’ ১৯২৮।

ছবি

দিনু বিল্লাহ: জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে

জেলার সিরিজ কবিতা

ছবি

লাল লুঙ্গি

সাময়িকী কবিতা

ছবি

নির্মলেন্দু গুণের রাজনৈতিক বলয় অতিক্রমের ক্ষমতা

ছবি

কেরাসিন বাত্তি ও লালচুলা মেয়েটি

ছবি

তাঁর সমকালীনদের চোখে

ছবি

নিজের মতো করেই সঠিক পথটি বেছে নিতে হবে

ছবি

সুকান্ত ভট্টাচার্য: বহুচর্চিত, বহুপঠিত এক অনন্য কবি

ছবি

চিত্রাঙ্গদা: দ্বৈত সত্তার শিল্পস্মারক

ছবি

খালেদ হামিদীর দৌত্যে ওরহান পামুক

সাময়িকী কবিতা

ছবি

মেঘলা আকাশ বৃষ্টি

ছবি

স্মৃতি ভদ্র

ছবি

হৃদয়রেখা

ছবি

সুরমা বুজি অথবা কাচপোকা

ছবি

শ্রাবণের জোছনায় হেসেছিল নার্গিস

ছবি

যোগাযোগ

ছবি

বাংলাদেশের স্বাপ্নিক কবি নজরুল

ছবি

ইলিয়াসের আশ্চর্য নিরীক্ষা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

মাটি ও মানুষের কথক

ছবি

অনাবিল প্রাচুর্যে ঋদ্ধ নজরুল প্রতিভা

ছবি

নজরুল: চির-বিস্ময়

ছবি

জীবনের সাথে সংযোগ ঘটল কই

পোয়েমস দ্যাট কেম টু মি

ছবি

লালন ও রবীন্দ্রনাথ অন্তর্জগতের আলাপন

ছবি

বংশধারা

ছবি

অনন্ত নক্ষত্র বিথিতে এক নির্বাসিত কবির যাত্রা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

তিন প্রহরের শকুন

ছবি

ইলিয়াসের আশ্চর্য নিরীক্ষা

ছবি

যতীন সরকার : সাম্যবাদের চেতনায় একজীবন

ছবি

‘প্রান্তিক মানুষের হারানোর কিছু নেই’

ছবি

ভাঙা ছাদ

ছবি

চন্দ্রাবতী : মধ্যযুগের প্রথম মহিলা কবি

tab

literature » samoeky

মাদাগাস্কারের কবি

জাঁ জোসেফ রাবেয়ারিভেলোর কবিতা

অনুবাদ: চরু হক

জাঁ জোসেফ রাবেয়ারিভেলো

বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

রাতের খাবার

অদৃশ্য ইঁদুর

রাত্রির দেয়াল থেকে বের হয়ে আসে

ধবধবে পিঠার মতো চাঁদ খেতে চেয়ে

কাতরায়

আগামী সকালে

আর তাকে দেখা যাবে না

কেবল দেখা যাবে তার দাঁতের দাগ,

রক্তমাখা।

রাতে যারা বেঘোর হয়ে পড়েছিল সুরাপানের

মধ্যে

আর সারারাত কেবল জুয়ার দান ঢেলেছে

হেরেছে আর হেরেছে

তারা চাঁদের দিকে তাকিয়ে তোঁতলাতে তোঁতলাতে বলবে,

“সবুজ টেবিলের উপর গড়িয়ে যাওয়া

এই ছক্কাটা কার?”

“আহ!” আরেকজন যোগ করবে

“আমাদের প্রিয় বন্ধুটি তার জীবনের সব হারিয়ে

এখন নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছে।”

টলতে টলতে সবাই মাটিতে পড়ে যাবে

তখন চাঁদকে আর দেখা যাবে না।

ইঁদুর তাকে নিয়ে যাবে গর্তে

রাতের খাবার হিসাবে।

কালো গরুটা

কালো গরুটার পেছনভাগ ছড়িয়ে আছে

ছড়িয়ে আছে, তবে তা শুকানোর জন্য নয়

শুধু সাত ভাঁজ ছায়ার মধ্যে

লম্বা হয়ে আছে

কিন্তু কে এই গরুটা মেরেছে?

মৃত, তাই হাম্বা আর ডাকছেনা

মৃত,তাই গর্জে আর উঠছেনা

কেউ তার পেছনে ছুটবেনা আর

ছুটবেনা তারায় তারায় খচিত

প্রেইরির ফুলের মধ্যে দিয়ে।

সে এখন বিয়োচ্ছে দূরের আকাশের আধটুকু জুড়ে

লম্বা হয়ে আছে তার পশ্চাৎ-ভাগ

বাতাসের শব্দের বাক্সের মধ্যে

ঘুমনগরীর ভাস্কর্যের মধ্যে...

এবং ঢাক প্রস্তুত

যখন সদ্যোজাত বাছুর

তরুণ ঘাসের বুকে তার শিং ঘষছে

আর লাফাচ্ছে

খাচ্ছে পাহাড়ি ঘাস খুঁটে খুঁটে

যেন জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে

তার এই নবজন্ম কেবল স্বপ্নই

থেকে যাবে

যতক্ষণ না তার মা ফিরে আসে

সাদা আর গোলাপি হয়ে রবে

আলোর জলধারায়।

মাত্র সতেরো বছর বয়সে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা ত্যাগ করেন এবং শুরু করেন কবিতা লেখা, হ্যাঁ, কবিতা। তাঁর জীবনের সবটুকু সাধনা নিবেদিত করেন কাব্যদেবীর পায়ে।এ মহান সাধক কবির জন্ম আফ্রিকার মাদাগাস্কারে, ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে। ফ্রান্সের সিম্বোলিস্টদের (প্রতীকবাদী) দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাঁর কাব্যযাত্রা শুরু। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর কিছুসংখ্যক কবিতা কবি লিওপল্ড সেডর সেঙ্ঘরের হাতে পড়ে।গভীর আবেগতাড়িত, অস্থির স্বভাবের এই কবি বারবার এক পেশা থেকে ছুটে যান আরেক পেশায়। এই তৃষ্ণা, এই সর্বগ্রাসী অস্থিরতাই একসময় গ্রাস করে তাঁর জীবন। ড্রাগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ তাঁকে ফ্রান্স ভ্রমণে অনুমতি প্রদানে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে এ অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। ১৯৩৭ সালে বিপুল নৈরাশ্য নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহ হলো : ‘লা ক্যু দ্যে সেন্ড্রা(১৯২৪), ‘সিলভেস’ ১৯২৭ ও ‘ভলিউমস’ ১৯২৮।

back to top