alt

‘ধুলোয় সব মলিন’, পাঠকের কথা

আহমেদ ফাইয়াজ

: বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

গল্প পড়ি। পড়তে ভালো লাগে। কিন্তু সবার সব গল্প পড়তে ভালো লাগে না। শুরু করতে না করতেই ক্লান্তি ধরে যায়। আবার কখনও কখনও জোরজবরদস্তি পড়া শেষ করে মনে হয়, ধুর এটা কী পড়লাম! সময়টা গেলো অনর্থক। বই পড়ার পর মনের এই অবস্থা বিচার করেও শিল্প আর অশিল্পের ব্যবধান বোধহয় করা যায়। প্রতি বছর গল্পের বই অনেক বেরোয়। তাহলেও ভালো পাঠক মনভরানো গল্পের অভাববোধ করেন। সেই শ্রেণির খুঁতখুঁতে পাঠক ‘ধুলোয় সব মলিন’Ñ গল্পের এই বইটি পড়ে দেখতে পারেন। অনুমান করি তারা শিল্পের স্বাদ পাবেন। সম্প্রতি বইটি হাতের কাছে পেয়ে পড়া হয়ে গেলো। নাম গল্পটিসহ ২৩টি গল্প জায়গা করে নিয়েছে এই বইয়ে। বেশিরভাগ গল্পের আয়তন ছোট। অপেক্ষাকৃত বড় আয়তনের দুয়েকটি গল্পের সাক্ষাতও অবশ্য মেলে। খুব সহজ-সরল ভাষায় গল্পকার পাঠককে টেনে নিয়ে যান গল্পান্ত পর্যন্ত। গল্প বলতে সাধারণত ছোট একটা অসমাপ্ত কাহিনী বা কাহিনীর একটা টুকরো বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশান্ত মৃধা সেই ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যতিক্রম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সোনার তরীর বর্ষা যাপন কবিতায় ‘অবিরত আপনার মনোমত একেকটি করে গল্প’ লেখার যেমন বাসনা পোষণ করেন; ঠিক তেমন নিটোল গল্প রচনা করা মোটেও সহজ নয়। সেই রকম গল্প বোনার জন্যে যেমন দরকার বাচনিক সংযম তেমনই প্রয়োজন সংযত প্রকাশের মুন্সিয়ানা, কাহিনী জরুরি নয়।

রবীন্দ্রনাথের অভিপ্রেত গল্পের মতো ধাবমান কালের যাপিত জীবনের ‘সহ¯্র বিস্মৃতরাশি’ হতে তুলে আনা ছোট ছোট দুঃখকথা পাঠক চিত্ত ছুঁয়ে যায় সহজেই। গ্রন্থভুক্ত ‘হাতে হাতে’ গল্পটি পড়তে গিয়ে পাঠকের মনে হবে সুশীলা ও কৃষ্ণপদের স্বর্গীয় প্রেমকাহিনী পড়ছেন; কেবলই যেন বা এক রোমান্টিক গল্প এই দু’জনের। কিন্তু সেই রকম গভীর প্রেমের কোনো টানটান গল্প এখানে নেই। আছে শুধু অবিরাম ভালবাসা। কোনো ছেদ নেই। হয়তো এই নিটোল ভালবাসাই অন্য দুই নারী মনোয়ারা ও মনোরমার গোপন কোনো কষ্ট জাগিয়ে তোলে। এখানেই লুকিয়ে রয়েছে গল্প। যে গল্প পাঠককে না বলেই কম্যুনিকেট করেন এই গল্পকার।

‘আবছায়া’ গল্পটি ললিতা আর কমলের। তারিক এই গল্পে আবছায়া প্রতিনায়ক। প্রতি নায়কÑ এই কথাটি লেখক নিশ্চিত করে বলেন না। পাঠক অনুমান করবেন। গল্পকার সুকৌশলে পাঠকের জন্যে সেই স্কোপ তৈরি করেছেন। ‘আবছায়া’ কৌতূহল উদ্দীপক ছোটগল্প। ‘জানালার সামনে’ শিরোনামের গল্পে ছেলেটি জানালায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির উদ্দেশে কথা বলে আপন মনে। একদিন জানালার ধার হতে চলে যাওয়ার আগে মেয়েটি মনে হয় কিছু বলেছিলো! কী বলেছিলো? এই না জানা জিজ্ঞাসাটাই একটা সুন্দর গল্প। হয়তো প্লেটোনিক; হয়তো জীবনঘটিত।

এই বইয়ের প্রতিটি গল্পই পাঠকচিত্তে ভিন্ন রকমের দোলা দিয়ে যায়। নানারকম মানুষের দেখা পাওয়া যায়। পাত্রপাত্রীর মনের গহীনে আলোকপাত করেন লেখক কোনো রকম কসরৎ ছাড়াই। ছোট ছোট বাক্য, ছোট ছোট সংলাপের মাধ্যমে তিনি গল্পাতিরিক্ত আবহ তৈরি করেন, যা একজন জীবনবাদী কথাশিল্পীর প্রমাণ বহন করে। ভ্রমণে কিংবা অবসরে এই বইটি হতে পারে কৌতূহলী পাঠকের প্রিয় সঙ্গী।

‘ধুলোয় সব মলিন’Ñ প্রশান্ত মৃধার এই গল্পগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে গ্রন্থ কুটির। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। দেড় শতাধিক পৃষ্ঠার বইটির দাম রাখা হয়েছে দুইশত পঞ্চাশ টাকা।

ছবি

মাহফুজ আল-হোসেন-এর দশটি কবিতা

ছবি

মনোজগতের অন্বেষায়

সাময়িকী কবিতা

ছবি

এক ঘর রোদ

ছবি

দ্রোহের রম্য পঙ্ক্তিমালা

ছবি

সংবেদী রঙে ও রেখায় প্রাণের উন্মোচন

ছবি

অলস দিনের হাওয়া

ছবি

লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের মর্মস্পর্শী ও দূরদর্শী সাহিত্যকর্ম

ছবি

‘ভাষার আরোপিত কারুকাজে খেই হারিয়ে ফেলি’

ছবি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের জিন্দা লাশ কি প্রকৃত লাশ

ছবি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের শিক্ষা দর্শন ও অলস দিনের হাওয়া

ছবি

ধ্রুপদী বোধ ও ব্যাধির কবিতা

ছবি

সুকান্তর কবিতায় বিপ্লবী চেতনা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

মগ্নচৈতন্যে সৌন্দর্যধ্যান

ছবি

অধুনাবাদী নিরীক্ষার অগ্রসাধক

ছবি

‘বায়ান্নর আধুনিকতা ও প্রগতিশীল ধারাকে বহন করতে চেয়েছি’

ছবি

জাতীয় চেতনার অমলিন ধারক

ছবি

নক্ষত্রের অনন্ত যাত্রা

ছবি

আহমদ রফিক ও ভাষামুক্তি সাধনা

ছবি

কবি আসাদ চৌধুরী : ঘরে ফেরা হলো না তাঁর

ছবি

জীবনবোধের অনবদ্য চিত্ররূপ ‘স্বপ্নছোঁয়ার পদযাত্রা’

ছবি

অনালোকিত ইতিহাসের সন্ধানে

ছবি

কবিরের দোঁহা

ছবি

আকবর হোসেন ও ‘যৌবনটাই জীবন নয়’

ছবি

স্বোপার্জিত

ছবি

সংগ্রামের অগ্নিশিখা থেকে হেলাল হাফিজ

ছবি

কোনো এক শরৎসন্ধ্যা : কোথায় পাব তারে

শারদ পদাবলি

ছবি

লক্ষীপুর-হ

ছবি

যে জীবন ফড়িংয়ের

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বিশাল ডানাওলা এক থুত্থুরে বুড়ো মানুষ

ছবি

খুদে গল্পের যাদুকর ওসামা অ্যালোমার

ছবি

নিমগ্ন লালন সাধক ফরিদা পারভীন

ছবি

কেন তিনি লালনকন্যা

tab

‘ধুলোয় সব মলিন’, পাঠকের কথা

আহমেদ ফাইয়াজ

বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

গল্প পড়ি। পড়তে ভালো লাগে। কিন্তু সবার সব গল্প পড়তে ভালো লাগে না। শুরু করতে না করতেই ক্লান্তি ধরে যায়। আবার কখনও কখনও জোরজবরদস্তি পড়া শেষ করে মনে হয়, ধুর এটা কী পড়লাম! সময়টা গেলো অনর্থক। বই পড়ার পর মনের এই অবস্থা বিচার করেও শিল্প আর অশিল্পের ব্যবধান বোধহয় করা যায়। প্রতি বছর গল্পের বই অনেক বেরোয়। তাহলেও ভালো পাঠক মনভরানো গল্পের অভাববোধ করেন। সেই শ্রেণির খুঁতখুঁতে পাঠক ‘ধুলোয় সব মলিন’Ñ গল্পের এই বইটি পড়ে দেখতে পারেন। অনুমান করি তারা শিল্পের স্বাদ পাবেন। সম্প্রতি বইটি হাতের কাছে পেয়ে পড়া হয়ে গেলো। নাম গল্পটিসহ ২৩টি গল্প জায়গা করে নিয়েছে এই বইয়ে। বেশিরভাগ গল্পের আয়তন ছোট। অপেক্ষাকৃত বড় আয়তনের দুয়েকটি গল্পের সাক্ষাতও অবশ্য মেলে। খুব সহজ-সরল ভাষায় গল্পকার পাঠককে টেনে নিয়ে যান গল্পান্ত পর্যন্ত। গল্প বলতে সাধারণত ছোট একটা অসমাপ্ত কাহিনী বা কাহিনীর একটা টুকরো বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশান্ত মৃধা সেই ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যতিক্রম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সোনার তরীর বর্ষা যাপন কবিতায় ‘অবিরত আপনার মনোমত একেকটি করে গল্প’ লেখার যেমন বাসনা পোষণ করেন; ঠিক তেমন নিটোল গল্প রচনা করা মোটেও সহজ নয়। সেই রকম গল্প বোনার জন্যে যেমন দরকার বাচনিক সংযম তেমনই প্রয়োজন সংযত প্রকাশের মুন্সিয়ানা, কাহিনী জরুরি নয়।

রবীন্দ্রনাথের অভিপ্রেত গল্পের মতো ধাবমান কালের যাপিত জীবনের ‘সহ¯্র বিস্মৃতরাশি’ হতে তুলে আনা ছোট ছোট দুঃখকথা পাঠক চিত্ত ছুঁয়ে যায় সহজেই। গ্রন্থভুক্ত ‘হাতে হাতে’ গল্পটি পড়তে গিয়ে পাঠকের মনে হবে সুশীলা ও কৃষ্ণপদের স্বর্গীয় প্রেমকাহিনী পড়ছেন; কেবলই যেন বা এক রোমান্টিক গল্প এই দু’জনের। কিন্তু সেই রকম গভীর প্রেমের কোনো টানটান গল্প এখানে নেই। আছে শুধু অবিরাম ভালবাসা। কোনো ছেদ নেই। হয়তো এই নিটোল ভালবাসাই অন্য দুই নারী মনোয়ারা ও মনোরমার গোপন কোনো কষ্ট জাগিয়ে তোলে। এখানেই লুকিয়ে রয়েছে গল্প। যে গল্প পাঠককে না বলেই কম্যুনিকেট করেন এই গল্পকার।

‘আবছায়া’ গল্পটি ললিতা আর কমলের। তারিক এই গল্পে আবছায়া প্রতিনায়ক। প্রতি নায়কÑ এই কথাটি লেখক নিশ্চিত করে বলেন না। পাঠক অনুমান করবেন। গল্পকার সুকৌশলে পাঠকের জন্যে সেই স্কোপ তৈরি করেছেন। ‘আবছায়া’ কৌতূহল উদ্দীপক ছোটগল্প। ‘জানালার সামনে’ শিরোনামের গল্পে ছেলেটি জানালায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির উদ্দেশে কথা বলে আপন মনে। একদিন জানালার ধার হতে চলে যাওয়ার আগে মেয়েটি মনে হয় কিছু বলেছিলো! কী বলেছিলো? এই না জানা জিজ্ঞাসাটাই একটা সুন্দর গল্প। হয়তো প্লেটোনিক; হয়তো জীবনঘটিত।

এই বইয়ের প্রতিটি গল্পই পাঠকচিত্তে ভিন্ন রকমের দোলা দিয়ে যায়। নানারকম মানুষের দেখা পাওয়া যায়। পাত্রপাত্রীর মনের গহীনে আলোকপাত করেন লেখক কোনো রকম কসরৎ ছাড়াই। ছোট ছোট বাক্য, ছোট ছোট সংলাপের মাধ্যমে তিনি গল্পাতিরিক্ত আবহ তৈরি করেন, যা একজন জীবনবাদী কথাশিল্পীর প্রমাণ বহন করে। ভ্রমণে কিংবা অবসরে এই বইটি হতে পারে কৌতূহলী পাঠকের প্রিয় সঙ্গী।

‘ধুলোয় সব মলিন’Ñ প্রশান্ত মৃধার এই গল্পগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে গ্রন্থ কুটির। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। দেড় শতাধিক পৃষ্ঠার বইটির দাম রাখা হয়েছে দুইশত পঞ্চাশ টাকা।

back to top