ভিটেমাটি
কালীকৃষ্ণ গুহ
ভিটেমাটি কারো নয়
কারো নয় শূন্যতা
শুধু অনুভব করা
আর শুধু কথকতা-
কত কলরব ওঠে
জীবনের পথে-ঘাটে
কত যে জয়ের নিশান
ফুল ফোটে তারা ফোটে।
দিন চলে যায় দ্রুত
চিনতে পারি না কিছু
রাতগুলি অবিরত
প্রবাহিত- মাথা নিচু-
অভাবিত কত আলো
তবু কেন জানি আসে-
ফুল ফোটে তারা ফোটে
সেই ভালো সেই ভালো।
নীলিমা ও সদুত্তর
হাসান হাফিজ
একটি কবিতা পেতে
কতো রক্ত ঝরবে আর
দিনান্তে কী তপস্যা ফুরায়
উপবাস পথশ্রম গ্লানির আঁচড়
কতো নিয়ামক আছে ক্রিয়াশীল
সবারই কি ক্রীড়নক হতে হবে
এই প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি চরাচরে
দিগন্তের ধু ধু নীলিমায়
সদ্য জেগে ওঠা কোনো অনাঘ্রাতা
সোঁদামাটি সংবলিত চরের সবুজে
সদুত্তর পেতে পেতে
কতো কতো শতাব্দী পেরোতে হবে
কে করে শুমার
ঘরেরটা খেয়ে পরে তাড়াবো যে বনের মহিষ!
ডিজিটাল ক্রিয়েটর
মোহাম্মদ হোসাইন
দৈনিকের পাতায় গুচ্ছ গুচ্ছ কবিতা পড়ি
এসব পড়ে এখন আর বুক জ্বালা করে না।
আমি এখন বেশ বাস্তববাদী
শব্দ দিয়ে রিলস বানাই, লাইভ করি আর মগজের
ভিতর ছাই চাপা আগুন, পোড়া আলুর গন্ধ হাসিমাখা
দস্তানার ভিতর ভরে দিয়ে স্টোরি করে রাখি।
লোকে আমাকে হা হা দেয় আর ডিজিটাল
ক্রিয়েটর বলে ডাকে!
কাব্য ও টুকটুকি
রকিবুল হাসান
টুকটুকি,বলো তো কেমন আছো তুমি!
ভালো আছো তো কাব্যকে ছেড়ে!
কতদূর আছো! কতদূর তোমার গহিনশয্যা!
জবাফুলের ছায়ায় এ কেমন অবুঝ শীতলঘুম!
শিলাইদহ কুঠিবাড়ির ঘ্রাণভরা জবাফুল
তোমার শরীরে ছায়া-পরীর বাড়িতে
কাব্যর জন্মঠিকানা- সেখানেই চিরঘুমে
লুকিয়েছ নিজেকে শুভ্রতার ওড়নায়।
অনেক কী ঘুম! ক্লান্ত চোখ-গভীর আকুতি
কাব্যর দুচোখ সমুদ্রবেদনা
বুকভাঙা কান্না সবই কী নিরর্থক!
বসবে না আর মায়ার চাদরে কোলঘেঁষে!
কতোটা যে নিয়েছ হরণ করে হৃদয়সমুদ্র
কতোটা যে নিয়েছ দখল বালিকার কাঁচাপ্রাণ !
সবটুকু! সবুজ জমিন এখন বিষণœ নগর
করুণচোখে এ কেমন বিবর্ণ কাব্যকথা!
টুকটুকি! কেন যেন মনে হয় কোনোকালে
মানুষই ছিলে তুমি। খুব আপন ছিলে
কী যে মায়ায় ফিরলে অনীহার কবিতায়,
ফেরালেও তোমার কাব্যকে পুরনো সুঘ্রাণে!
টুকটুকি, ভালো আছো তো! কতদূর আছো!
জবাফুলের ছায়ায় এ কেমন গভীর শীতলঘুম!
সত্য এক উচ্ছিন্ন যাযাবর
কুমার দীপ
সত্য আমার বন্ধু
অনেকদিন দেখা হয় না ওর সাথে।
সবশেষ কবে দেখেছিলাম, কোথায় দেখেছিলাম-
স্মৃতির ক্যালেন্ডারে তার কোনো চিহ্ন নেই
হতে পারে, দু-একবার দূর থেকে ওকে দেখে
হেঁটে গেছি দ্রুতপায়ে
কিন্তু মেলার হাটের সেই তরুণীর মতো
সে-ও মিলিয়ে গেছে সহসাই;
পুলিশ যেরকম করে ধাওয়া করে দাগী আসামির পিছু
কখনও-বা তেমনি করেছি ধাওয়া
দূর থেকে সত্য সত্য মনে হলেও
খুব কাছে গিয়ে দেখেছি- সে যেন অন্য কেউ!
হাতের তালুর চেয়ে ছোটো হয়ে আসা একুশ শতকের
এই অঙ্গুলিনিয়ন্ত্রিত পৃথিবীতেও যে ওকে খুঁজে পাবো
এমন ভরসা আজ আর নেই;
শুনেছি- সত্যের কোনো গেজেট নেই
বসবাসের কোনো ঘর-বাড়ি নেই
স্থায়ী কোনো ঠিকানা নেই
শূন্য, একেবারে নি-কপর্দক, উদ্বাস্তু জীবন নিয়ে
সত্য, আমার সেই খরশান বন্ধুটি
আজ এক উচ্ছিন্ন যাযাবর;
আপাতত নিরুদ্দেশ
ওকে খুঁজতে যাওয়া বৃথা...
আসুন, শুকতারা দেখি
অদ্বৈত মারুত
ভাবি, তোমাকে বলা যাবে সব
না-বলবার মতো সব কথা-ই
মনবন্দি করে রাখবে জমিয়ে
পাথরে না ফোটা পর্যন্ত ফুল...।
এই যে ভোর থেকে কাক-উল্লাস
জমে ওঠা মেঘের সঘন হুইসেল
মানুষের মগজে কারফিউ জারি
কেন বুভুক্ষু হৃদয়ে চোট কবির
এসব তোমাকে বলিনি আগে।
পরাহত বলে মনে হয় জন্ম কাটা;
লুক্রেতিউসকে যেন অনুসরণ-
না করে ধৈর্য ধরে থাকি
সূর্যের সুষমা বুকে ধরে রাখি
আরও আনন্দদায়ক করি
পিপাসিত চেতনার ভ্রমণ
এ-সব এড়িয়ে গিয়েছি আগে।
এখন বলবার আগ্রহ বাড়ছেই
কত অভিশাপ; গাছ ভেঙে গুড়ি-
হয়ে পড়ে রয়েছে পুঁজিবাজার
অস্থিরতা বিনিয়োগ করছে কেউ
সব বলব বলে ভেবে রেখেছি আজ।
তার আগে চলো, শুকতারা দেখি।
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
ভিটেমাটি
কালীকৃষ্ণ গুহ
ভিটেমাটি কারো নয়
কারো নয় শূন্যতা
শুধু অনুভব করা
আর শুধু কথকতা-
কত কলরব ওঠে
জীবনের পথে-ঘাটে
কত যে জয়ের নিশান
ফুল ফোটে তারা ফোটে।
দিন চলে যায় দ্রুত
চিনতে পারি না কিছু
রাতগুলি অবিরত
প্রবাহিত- মাথা নিচু-
অভাবিত কত আলো
তবু কেন জানি আসে-
ফুল ফোটে তারা ফোটে
সেই ভালো সেই ভালো।
নীলিমা ও সদুত্তর
হাসান হাফিজ
একটি কবিতা পেতে
কতো রক্ত ঝরবে আর
দিনান্তে কী তপস্যা ফুরায়
উপবাস পথশ্রম গ্লানির আঁচড়
কতো নিয়ামক আছে ক্রিয়াশীল
সবারই কি ক্রীড়নক হতে হবে
এই প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি চরাচরে
দিগন্তের ধু ধু নীলিমায়
সদ্য জেগে ওঠা কোনো অনাঘ্রাতা
সোঁদামাটি সংবলিত চরের সবুজে
সদুত্তর পেতে পেতে
কতো কতো শতাব্দী পেরোতে হবে
কে করে শুমার
ঘরেরটা খেয়ে পরে তাড়াবো যে বনের মহিষ!
ডিজিটাল ক্রিয়েটর
মোহাম্মদ হোসাইন
দৈনিকের পাতায় গুচ্ছ গুচ্ছ কবিতা পড়ি
এসব পড়ে এখন আর বুক জ্বালা করে না।
আমি এখন বেশ বাস্তববাদী
শব্দ দিয়ে রিলস বানাই, লাইভ করি আর মগজের
ভিতর ছাই চাপা আগুন, পোড়া আলুর গন্ধ হাসিমাখা
দস্তানার ভিতর ভরে দিয়ে স্টোরি করে রাখি।
লোকে আমাকে হা হা দেয় আর ডিজিটাল
ক্রিয়েটর বলে ডাকে!
কাব্য ও টুকটুকি
রকিবুল হাসান
টুকটুকি,বলো তো কেমন আছো তুমি!
ভালো আছো তো কাব্যকে ছেড়ে!
কতদূর আছো! কতদূর তোমার গহিনশয্যা!
জবাফুলের ছায়ায় এ কেমন অবুঝ শীতলঘুম!
শিলাইদহ কুঠিবাড়ির ঘ্রাণভরা জবাফুল
তোমার শরীরে ছায়া-পরীর বাড়িতে
কাব্যর জন্মঠিকানা- সেখানেই চিরঘুমে
লুকিয়েছ নিজেকে শুভ্রতার ওড়নায়।
অনেক কী ঘুম! ক্লান্ত চোখ-গভীর আকুতি
কাব্যর দুচোখ সমুদ্রবেদনা
বুকভাঙা কান্না সবই কী নিরর্থক!
বসবে না আর মায়ার চাদরে কোলঘেঁষে!
কতোটা যে নিয়েছ হরণ করে হৃদয়সমুদ্র
কতোটা যে নিয়েছ দখল বালিকার কাঁচাপ্রাণ !
সবটুকু! সবুজ জমিন এখন বিষণœ নগর
করুণচোখে এ কেমন বিবর্ণ কাব্যকথা!
টুকটুকি! কেন যেন মনে হয় কোনোকালে
মানুষই ছিলে তুমি। খুব আপন ছিলে
কী যে মায়ায় ফিরলে অনীহার কবিতায়,
ফেরালেও তোমার কাব্যকে পুরনো সুঘ্রাণে!
টুকটুকি, ভালো আছো তো! কতদূর আছো!
জবাফুলের ছায়ায় এ কেমন গভীর শীতলঘুম!
সত্য এক উচ্ছিন্ন যাযাবর
কুমার দীপ
সত্য আমার বন্ধু
অনেকদিন দেখা হয় না ওর সাথে।
সবশেষ কবে দেখেছিলাম, কোথায় দেখেছিলাম-
স্মৃতির ক্যালেন্ডারে তার কোনো চিহ্ন নেই
হতে পারে, দু-একবার দূর থেকে ওকে দেখে
হেঁটে গেছি দ্রুতপায়ে
কিন্তু মেলার হাটের সেই তরুণীর মতো
সে-ও মিলিয়ে গেছে সহসাই;
পুলিশ যেরকম করে ধাওয়া করে দাগী আসামির পিছু
কখনও-বা তেমনি করেছি ধাওয়া
দূর থেকে সত্য সত্য মনে হলেও
খুব কাছে গিয়ে দেখেছি- সে যেন অন্য কেউ!
হাতের তালুর চেয়ে ছোটো হয়ে আসা একুশ শতকের
এই অঙ্গুলিনিয়ন্ত্রিত পৃথিবীতেও যে ওকে খুঁজে পাবো
এমন ভরসা আজ আর নেই;
শুনেছি- সত্যের কোনো গেজেট নেই
বসবাসের কোনো ঘর-বাড়ি নেই
স্থায়ী কোনো ঠিকানা নেই
শূন্য, একেবারে নি-কপর্দক, উদ্বাস্তু জীবন নিয়ে
সত্য, আমার সেই খরশান বন্ধুটি
আজ এক উচ্ছিন্ন যাযাবর;
আপাতত নিরুদ্দেশ
ওকে খুঁজতে যাওয়া বৃথা...
আসুন, শুকতারা দেখি
অদ্বৈত মারুত
ভাবি, তোমাকে বলা যাবে সব
না-বলবার মতো সব কথা-ই
মনবন্দি করে রাখবে জমিয়ে
পাথরে না ফোটা পর্যন্ত ফুল...।
এই যে ভোর থেকে কাক-উল্লাস
জমে ওঠা মেঘের সঘন হুইসেল
মানুষের মগজে কারফিউ জারি
কেন বুভুক্ষু হৃদয়ে চোট কবির
এসব তোমাকে বলিনি আগে।
পরাহত বলে মনে হয় জন্ম কাটা;
লুক্রেতিউসকে যেন অনুসরণ-
না করে ধৈর্য ধরে থাকি
সূর্যের সুষমা বুকে ধরে রাখি
আরও আনন্দদায়ক করি
পিপাসিত চেতনার ভ্রমণ
এ-সব এড়িয়ে গিয়েছি আগে।
এখন বলবার আগ্রহ বাড়ছেই
কত অভিশাপ; গাছ ভেঙে গুড়ি-
হয়ে পড়ে রয়েছে পুঁজিবাজার
অস্থিরতা বিনিয়োগ করছে কেউ
সব বলব বলে ভেবে রেখেছি আজ।
তার আগে চলো, শুকতারা দেখি।