alt

রফিক আজাদের কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নগর ধ্বংসের আগে
নগর বিধ্বস্ত হ’লে, ভেঙে গেলে শেষতম ঘড়ি

উলঙ্গ ও মৃতদের সুখে শুধু ঈর্ষা করা চলে।

‘জাহাজ, জাহাজ’- ব’লে আর্তনাদ সকলেই করি-

তবুও জাহাজ কোনো ভাসবে না এই পচা জলে।

সমুদ্র অনেক দূর, নগরের ধারে-কাছে নেই:

চারপাশে অগভীর অস্বচ্ছ মলিন জলরাশি।

রক্ত-পুঁজে মাখামাখি আমাদের ভালোবাসাবাসি;

এখন পাবো না আর সুস্থতার আকাক্সক্ষার খেই।

যেখানে রয়েছো স্থির- মূল্যবান আসবাব, বাড়ি;

কিছুতে প্রশান্তি তুমি এ-জীবনে কখনো পাবে না।

শব্দহীন চ’লে যাবে জীবনের দরকারি গাণ্ডি

কেননা, ধ্বংসের আগে সাইরেন কেউ বাজাবে না।

প্রোথিত বৃক্ষের মতো বদ্ধমূল আমার প্রতিভা-

সাধ ছিল বেঁচে থেকে দেখে যাবো জিরাফের গ্রীবা।

আমাকে খুঁজো না বৃথা
আমাকে খুঁজো না বৃথা কাশ্মীরের স্বচ্ছ ডাল হ্রদে,

সুইৎজারল্যান্ডের নয়নলোভন কোনো পর্যটন স্পটে,

গ্রান্ড ক্যানালের গন্ডোলায়ও নয়,

খুঁজো না ফরাসি দেশে পারীর কাফেতে, মধ্যরাতে;

রাইন বা মাইনের তীরে, সুবিস্তীর্ণ ফলের বাগানে...

আমাকে খুঁজো না জাম্বো জেটে,

দ্রুতগামী যাত্রীবাহী জাহাজের কিংবা কোনো

বৃহৎ সমুদ্রগামী যাত্রীবাহী জাহাজের ডেকে...

ভুল করে অন্ধ গলি-ঘুঁজি পার হয়ে, যদি এই

আঁধার প্রকোষ্ঠে আসো

দেখবে উবুড় হয়ে বাংলার এই মানচিত্রে

মুখ থুবড়ে প’ড়ে আছে চল্লিশ বছর...

আমার তৃষ্ণার্ত ঠোঁট ঠেকে আছে

পদ্মার ওপর

এবং আমার দু’চোখের অবিরল ধারা বয়ে গিয়ে

কানায়-কানায় ভ’রে দিচ্ছে সব ক’টি শুষ্ক নদী,

এবং দেখতে পাবে

শ্যামল শস্যের মাঠ

আমার বুকের নিচে আগলে রেখেছি...

দুঃখকষ্ট
পাখি উড়ে চ’লে গেলে পাখির পালক প’ড়ে থাকে।

পাখি উড়ে গেলে তার নরম পালক

কঠিন মাটিতে প’ড়ে থাকা ঠিক নয়-

এই ভেবে কষ্ট পেয়েছিলে;

তুমি চ’লে গেলে দূরে

নিঃস্ব, রিক্ত পাখির পালকসম একা প’ড়ে থাকি।

পরিত্যক্ত পালকের প্রতি মমতাবশত

একদিন, কোনো-এক কালে, তুমি কষ্ট পেয়েছিলে;

নাকি খুব সাধারণভাবে বলেছিলে-

‘পাখির পালক খ’সে গেলে কষ্ট পাই’?

দুঃখ নয়, সাধারণ কষ্টের কথাই বলেছিলে?

দুঃখ ও কষ্টের মধ্যে পার্থক্য অনেক:

বহু রক্তক্ষরণের পর শব্দ-দু’টির যাথার্থ্য বোঝা যায়!

আমার তো অর্ধেক জীবন চ’লে গেল

নেহাত মামুলি দু’টি শব্দ আর তার মানে খুঁজে পেতে।

বুকের গোপনে আজো খুব দুঃখ পাই,

পনেরো বছর আগে তুমি খুব সাধারণ ‘কষ্ট’ পেয়েছিলে?

উচ্চারিত তোমার শব্দের বড় ভুল মানে ক’রে

আজো আমি ‘দুঃখ’- এই দুঃখজনক শব্দের সাথে

ভাগ করে নিই রাতে আমার বালিশ।

তোমার কথা ভেবে
তোমার কথা ভেবে রক্তে ঢেউ ওঠে-

তোমাকে সর্বদা ভাবতে ভালো লাগে,

আমার পথজুড়ে তোমারই আনাগোনা-

তোমাকে মনে এলে রক্তে আজও ওঠে

তুমুল তোলপাড় হৃদয়ে সর্বদা...

হলো না পাশাপাশি বিপুল পথ-হাঁটা,

এমন কথা ছিল চলব দুজনেই

জীবনজোড়া পথ যে-পথ দিকহীন

মিশেছে সম্মুখে আলোর গহ্বরে...।

ছবি

দিনু বিল্লাহ: জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে

জেলার সিরিজ কবিতা

ছবি

লাল লুঙ্গি

সাময়িকী কবিতা

ছবি

নির্মলেন্দু গুণের রাজনৈতিক বলয় অতিক্রমের ক্ষমতা

ছবি

কেরাসিন বাত্তি ও লালচুলা মেয়েটি

ছবি

তাঁর সমকালীনদের চোখে

ছবি

নিজের মতো করেই সঠিক পথটি বেছে নিতে হবে

ছবি

সুকান্ত ভট্টাচার্য: বহুচর্চিত, বহুপঠিত এক অনন্য কবি

ছবি

চিত্রাঙ্গদা: দ্বৈত সত্তার শিল্পস্মারক

ছবি

খালেদ হামিদীর দৌত্যে ওরহান পামুক

সাময়িকী কবিতা

ছবি

মেঘলা আকাশ বৃষ্টি

ছবি

স্মৃতি ভদ্র

ছবি

হৃদয়রেখা

ছবি

সুরমা বুজি অথবা কাচপোকা

ছবি

শ্রাবণের জোছনায় হেসেছিল নার্গিস

ছবি

যোগাযোগ

ছবি

বাংলাদেশের স্বাপ্নিক কবি নজরুল

ছবি

ইলিয়াসের আশ্চর্য নিরীক্ষা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

মাটি ও মানুষের কথক

ছবি

অনাবিল প্রাচুর্যে ঋদ্ধ নজরুল প্রতিভা

ছবি

নজরুল: চির-বিস্ময়

ছবি

জীবনের সাথে সংযোগ ঘটল কই

পোয়েমস দ্যাট কেম টু মি

ছবি

লালন ও রবীন্দ্রনাথ অন্তর্জগতের আলাপন

ছবি

বংশধারা

ছবি

অনন্ত নক্ষত্র বিথিতে এক নির্বাসিত কবির যাত্রা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

তিন প্রহরের শকুন

ছবি

ইলিয়াসের আশ্চর্য নিরীক্ষা

ছবি

যতীন সরকার : সাম্যবাদের চেতনায় একজীবন

ছবি

‘প্রান্তিক মানুষের হারানোর কিছু নেই’

ছবি

ভাঙা ছাদ

ছবি

চন্দ্রাবতী : মধ্যযুগের প্রথম মহিলা কবি

tab

রফিক আজাদের কবিতা

বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নগর ধ্বংসের আগে
নগর বিধ্বস্ত হ’লে, ভেঙে গেলে শেষতম ঘড়ি

উলঙ্গ ও মৃতদের সুখে শুধু ঈর্ষা করা চলে।

‘জাহাজ, জাহাজ’- ব’লে আর্তনাদ সকলেই করি-

তবুও জাহাজ কোনো ভাসবে না এই পচা জলে।

সমুদ্র অনেক দূর, নগরের ধারে-কাছে নেই:

চারপাশে অগভীর অস্বচ্ছ মলিন জলরাশি।

রক্ত-পুঁজে মাখামাখি আমাদের ভালোবাসাবাসি;

এখন পাবো না আর সুস্থতার আকাক্সক্ষার খেই।

যেখানে রয়েছো স্থির- মূল্যবান আসবাব, বাড়ি;

কিছুতে প্রশান্তি তুমি এ-জীবনে কখনো পাবে না।

শব্দহীন চ’লে যাবে জীবনের দরকারি গাণ্ডি

কেননা, ধ্বংসের আগে সাইরেন কেউ বাজাবে না।

প্রোথিত বৃক্ষের মতো বদ্ধমূল আমার প্রতিভা-

সাধ ছিল বেঁচে থেকে দেখে যাবো জিরাফের গ্রীবা।

আমাকে খুঁজো না বৃথা
আমাকে খুঁজো না বৃথা কাশ্মীরের স্বচ্ছ ডাল হ্রদে,

সুইৎজারল্যান্ডের নয়নলোভন কোনো পর্যটন স্পটে,

গ্রান্ড ক্যানালের গন্ডোলায়ও নয়,

খুঁজো না ফরাসি দেশে পারীর কাফেতে, মধ্যরাতে;

রাইন বা মাইনের তীরে, সুবিস্তীর্ণ ফলের বাগানে...

আমাকে খুঁজো না জাম্বো জেটে,

দ্রুতগামী যাত্রীবাহী জাহাজের কিংবা কোনো

বৃহৎ সমুদ্রগামী যাত্রীবাহী জাহাজের ডেকে...

ভুল করে অন্ধ গলি-ঘুঁজি পার হয়ে, যদি এই

আঁধার প্রকোষ্ঠে আসো

দেখবে উবুড় হয়ে বাংলার এই মানচিত্রে

মুখ থুবড়ে প’ড়ে আছে চল্লিশ বছর...

আমার তৃষ্ণার্ত ঠোঁট ঠেকে আছে

পদ্মার ওপর

এবং আমার দু’চোখের অবিরল ধারা বয়ে গিয়ে

কানায়-কানায় ভ’রে দিচ্ছে সব ক’টি শুষ্ক নদী,

এবং দেখতে পাবে

শ্যামল শস্যের মাঠ

আমার বুকের নিচে আগলে রেখেছি...

দুঃখকষ্ট
পাখি উড়ে চ’লে গেলে পাখির পালক প’ড়ে থাকে।

পাখি উড়ে গেলে তার নরম পালক

কঠিন মাটিতে প’ড়ে থাকা ঠিক নয়-

এই ভেবে কষ্ট পেয়েছিলে;

তুমি চ’লে গেলে দূরে

নিঃস্ব, রিক্ত পাখির পালকসম একা প’ড়ে থাকি।

পরিত্যক্ত পালকের প্রতি মমতাবশত

একদিন, কোনো-এক কালে, তুমি কষ্ট পেয়েছিলে;

নাকি খুব সাধারণভাবে বলেছিলে-

‘পাখির পালক খ’সে গেলে কষ্ট পাই’?

দুঃখ নয়, সাধারণ কষ্টের কথাই বলেছিলে?

দুঃখ ও কষ্টের মধ্যে পার্থক্য অনেক:

বহু রক্তক্ষরণের পর শব্দ-দু’টির যাথার্থ্য বোঝা যায়!

আমার তো অর্ধেক জীবন চ’লে গেল

নেহাত মামুলি দু’টি শব্দ আর তার মানে খুঁজে পেতে।

বুকের গোপনে আজো খুব দুঃখ পাই,

পনেরো বছর আগে তুমি খুব সাধারণ ‘কষ্ট’ পেয়েছিলে?

উচ্চারিত তোমার শব্দের বড় ভুল মানে ক’রে

আজো আমি ‘দুঃখ’- এই দুঃখজনক শব্দের সাথে

ভাগ করে নিই রাতে আমার বালিশ।

তোমার কথা ভেবে
তোমার কথা ভেবে রক্তে ঢেউ ওঠে-

তোমাকে সর্বদা ভাবতে ভালো লাগে,

আমার পথজুড়ে তোমারই আনাগোনা-

তোমাকে মনে এলে রক্তে আজও ওঠে

তুমুল তোলপাড় হৃদয়ে সর্বদা...

হলো না পাশাপাশি বিপুল পথ-হাঁটা,

এমন কথা ছিল চলব দুজনেই

জীবনজোড়া পথ যে-পথ দিকহীন

মিশেছে সম্মুখে আলোর গহ্বরে...।

back to top