alt

সাময়িকী

দ্য ভেজিটেরিয়ান

নিরামিষ চর্চার বিরল আখ্যান

রুমা আক্তার

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নোবেল বিজয়ী লেখক হান কাং

উপন্যাস মানব জীবন রূপায়ণের সমগ্রতাস্পর্শী ক্যানভাস। যেখানে ব্যক্তির যাপিত জীবনের সূক্ষ্মতম অভিব্যক্তি পারঙ্গমতার সাথে রূপায়িত। বহু বর্ণিল জীবন ও জগতের বৈচিত্র্যময় লীলাকে শিল্পসম্মতভাবে মূর্র্তায়ণ উপন্যাসের প্রধান অনুষঙ্গ। নোবেল বিজয়ী কথাচিত্রী হ্যান কাং (জন্ম: ১৯৭০) এর পাঠক আদৃত উপন্যাস দ্য ভেজিটেরিয়ান (২০০৭)। এ উপন্যাসে তিনি ব্যক্তিক জীবনবোধের বহু বর্ণিল উত্থান-পতন, আনন্দ-বেদনার অনুভূতিতে, ট্রমা এবং এক অদৃশ্য অনুশাসনে আলোর পাদপ্রদীপ নিয়ে আসে। তাঁর স্বকীয় শৈলী ও কাব্যময় গদ্য যা ইতিহাসের যন্ত্রণাদগ্ধ ঘটনাকে উপজীব্য করে মানবজীবনের ভঙ্গুরতাকে উন্মোচিত করে। ফলে ব্যক্তিক প্রাত্যহিক নানাবিধ টানাপোড়েন ও শৈল্পিক অভিক্ষেপ মূলত ব্যক্তিকে শিল্পানুগামী করে তোলে।

১৯৯৩ সালে ‘লিটারেচার অ্যান্ড সোসাইটি’ ম্যাগাজিনে কিছু কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে তাঁর লেখক জীবনের সূচনা। তিনি লেখার পাশাপাশি নিজেকে শিল্প ও সঙ্গীতে আত্মনিয়োগ করেন। যার প্রতিফলন তাঁর সমগ্র সাহিত্যে সাধনায় প্রতিভাত। দ্যা ভেজিটেরিয়ানউপন্যাসটি তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। এটি মূলত ১৯৯৭ সালে কোরীয় ভাষায় তাঁর লেখা ছোটোগল্প দ্য ফরুট অব মাই ওম্যান-এর পরিশীলিত রূপ। এ উপন্যাসটি লিখতে তাঁর সময় লেগেছে প্রায় তিন বছর। ২০০৭ সালে এ উপন্যাসটি কোরিয়ান ভাষায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছে এবং ২০১৫ সালে এ উপন্যাসটি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেছেন ডেবোর স্মিথ। ইংরেজি অনুবাদের পর ২০১৬ সালে এ উপন্যাসটি আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারে ভূষিত হয়। এ উপন্যাসটি ইংরেজি ভাষা ছাড়াও আরো ১৩ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০০৯ সালে এ উপন্যাসটি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এছাড়াও তাঁর অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে-দ্য হোয়াইট বুক, হিউম্যান অ্যাক্টস, উই ডু নট পার্টি এবং গ্রিক লেসনস।

ভেজিটেরিয়ান বা নিরামিষভোজী বলতে বোঝায় ব্যক্তির যাপিত জীবনে নিরামিষ চর্চাকে। নিরামিষভোজীরা সাধারণত সব ধরনের আমিষ থেকে নিজেদের বিরত রাখেন। তবে এর সাধারণত দুটি কারণ থাকে এক ধর্মীয় অনুশাসন দ্বিতীয়ত সংবেদনশীল প্রাণি ও জীবনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য। তারা জীবন্ত প্রাণিকে হত্যা করে না, নেশা জাতীয় মদ পান করে না, পেঁয়াজ বা রসুন খায় না। হেলেনিস মিশরীয় এবং অন্যদের মধ্যে নিরামিষবাদের চিকিৎসা বা ধর্মীয় শুদ্ধিকরণের উদ্দেশ্য ছিলো। বর্তমানে অনেকে নিজের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য নিরামিষ ভোজন করে থাকে। তবে ভোজন ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক বিকাশে কতটুকু ভূমিকা পালন করে? নাকি কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হয়? এ নিয়ে নানা কল্পনা ও বোধের সৃষ্টি হয় ব্যক্তির মননে। কারণ একজন ব্যক্তির সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন সুষম খাবার এবং এ সুষম খাবারের যখন ঘাটতি দেখা যায়, তখন ব্যক্তির স্বাস্থ্য ও মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়। ব্যক্তি স্বাভাবিক আচরণ করতে পারে না। স্বাভাবিকভাবে যখন মানুষের শরীর ও মন অসুস্থ থাকে তখন তার আচরণও রুক্ষ হয়ে ওঠে।

দ্য ভেজিটেরিয়ান উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ইয়ং হ্যায়ের উপন্যাসটি তার নিরামিষাশী হয়ে ওঠার গল্প। যিনি কিছু অদ্ভুত স্বপ্ন দেখার পর মাংস খেতে অস্বীকৃতি জানান। একদিকে তার উদ্ভিদময় জীবনের প্রতি দুর্বার অভীপ্সা, অন্যদিকে অন্ধকার ও বিপজ্জনক জীবনের হাতছানি এ দুইয়ের মিথস্ক্রিয়া উপন্যাসটিকে করেছে তাৎপর্যম-িত ও শৈল্পিক। ইয়ং হ্যায়ের ভিতরে তার বর মি. ছেউ কোনো প্রাণচাঞ্চল্য বা বিমোহিত হওয়ার কিছু খুঁজে পাননি। তবুও তিনি তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। কারণ, সংসার করার জন্য শব্দ সঞ্চয়ী জীবন সঙ্গী অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিন কর্মক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পর তাকে যেনো জবাবদিহি করার কিংবা বিরক্ত করার কেউ না থাকে। কোনো রকম উটকো ঝামেলা ছাড়া সবকিছু মেনে নেওয়ার জন্য তিনি ইয়ং হ্যায়েরকে নির্বাচন করেছেন। ছিপ-ফেলে মাছ ধরার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) ‘সুভা’ গল্পে যেমন প্রতাপ তার নির্বাক বন্ধু সুভাকে নির্বাচন করেছেন, তেমনি ইয়ং হ্যায়েরকে তার স্বামী নির্বাচন করেছেন। তার সাজানো অস্তিত্বকে কেউ যেনো টানাহেঁচড়া না করে।

ইয়ং হ্যায়ের নিরুত্তাপ, শান্ত এবং কম কথা বলার নারী। সে তার বর থেকে কোনো কিছু বায়না করা কিংবা বাসায় দেরি করে ফিরলে কোনো প্রকার বাক্যব্যয় করে না। সে নিজেকে ঘরের ভিতরে গৃহবন্দি করে রাখে অথবা বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকে। তার একমাত্র শখ বই পড়া। তাই তো তাদের দাম্পত্য জীবনে তেমন কোলাহল নেই। তাদের এ একঘেয়ে দাম্পত্য জীবন মি. ছেউর কাছে খুব বিরক্তিকর মনে হতো। কারণ, তার স্ত্রী এতটাই আত্মমগ্ন যে তার কাঁধে তিনি হাত রাখলে কিংবা স্পর্শ করলে কোনো প্রকারের সাড়া মেলে না। এর থেকে একটা বিষয় প্রতিভাত হয়েছে যে, ইয়ং হ্যায়ের আত্মিক বিনাশ তাকে সমস্ত অনুভূতি থেকে মুক্তি দিয়েছে। সে শুধু দেহ নামের খোলস নিয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করছে।

সেই শৈশব থেকে সে একমাত্র সন্তান যে বাবার হাতে অধিক মার খেয়েছে। বাবার এ কর্তৃত্ববাদী মনোভাব তার মনকে বহু পূর্বেই বিনাশ করে দিয়েছে। তাইতো মানুষ হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করতে তার খুব কষ্ট হয়। সে উদ্ভিদ বা বৃক্ষ হয়ে বেঁচে থাকতে চায়। আত্মজৈবনিক এমনি কিছু দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি নিরামিষকে বেছে নিয়েছেন। কারণ, আমিষের প্রতি তার প্রচ- অনীহা। আমিষে প্রাণি হত্যা এবং এ প্রাণি হত্যায় প্রচুর রক্ত-ক্ষরণ হয়ে থাকে। যে রক্তপ্রবাহ তাকে শয়নে-স্বপ্নে তাড়া করে, তাকে আন্দোলিত করে, তাকে পীড়িত করে এবং এ বোধ থেকে তিনি উদ্ভিজ জীবনের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন। হানাহানি, মারামারি, রক্তপাত জীবনের থেকে এ জীবন অমূল্য।

এ উপন্যাসটি পুরুষতন্ত্রের অনুশানের মূর্ত প্রতীক। যেখানে নারীর কোনো বাক্ স্বাধীনতা কিংবা পোশাকের স্বাধীনতার নির্বাক দলিল। ইয়ং হ্যায়ের স্বামী তার স্ত্রীর বক্ষযুগল নিয়ে চিন্তিত। তার স্ত্রীর স্তনবৃন্ত কিংবা তার পরিহিত অন্তর্বাস এ দুই নিয়ে তার অন্বেষণ। নারীর শরীরকে ঘিরে এ নেতিবাচক মানসিকতা যুগান্তরে প্রবাহমান। নারীর শরীরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, নারীর শরীরকে ঘিরেই সর্ব আচার। এর সফল উদাহরণ হতে পারে- “আপনা মাংসে হরিণা বৈরী।” হরিণ যেমন তার মাংসের জন্য শিকারীর শিকাড়, তেমনি নারী তার শরীরের জন্য। হান ক্যাং তাঁর উপন্যাসে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এ নগ্নরূপটি পাঠক সম্মুখে শিল্পসম্মতভাবে তুলে ধরেন। এভাবে এক এক করে যখন সমস্ত স্বাধীনতা স্খলিত হয়, তখন সে জাগতিক সকল মোহ থেকে মুক্তি লাভ করে। সে রাতে কখনো ঘুম আসে না। সে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেই দুঃস্বপ্ন তাকে তাড়া করে বেড়ায়। এ যেন স্বপ্ন নয়, কোনো এক বোধ। যে বোধ তাকে সবার থেকে স্বতন্ত্র করে দেয় এবং এ বোধের কারণেই তার রূপান্তর। ফ্রাৎনজ কাফকা (১৮৮৩-১৯২৪) ‘মেটামরফোসিস’ গল্পের প্রধান চরিত্র গ্রেগর সামসা যেমন পুঁজিবাদী অভিঘাত এবং বহুবিধ টানাপোড়েন থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য কীটে রূপান্তরিত হয়, তেমনি ইয়ং হ্যায়ের। এ রূপান্তর যেমন গ্রেগর সামসাকে মুক্তি দিতে পারেনি, তেমনি ইয়ং হ্যায়ের নিজেকে এ বোধ থেকে পৃথক করতে পারেনি। উভয়ের পরিণতি প্রায় সাযুজ্য।

ইয়ং হ্যানয়ের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা দিন দিন লাগামহীন হয়ে পড়ে, কখনো তার স্বামীর থেকে দূরে সরে যায় কখনো প্রচন্ড শীতে নিজের পোশাক খুলে বসে থাকে, কখনো বা খুনের স্বপ্ন দেখে। তার মধ্যে প্রচন্ড রকম অ্যাবসার্ড কাজ করে। জীবনের নানা প্রতিকূলতা জীবনবোধ তাকে ভিন্নতর জগতে ধাবিত করে যেখান থেকে তার উঠে আসা সম্ভব হয় না। তাইতো যখনই দাম্পত্য জীবনকে মধুময় করার জন্য একে অপরের কাছে আসে তখনই ইয়ং হ্যান তার স্বামীর শরীর থেকে দুর্গন্ধ পায়, যে দুর্গন্ধ তাদের স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনে বড়ো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে, ইয়ং হ্যানয়ের স্বামীর মধ্যে দোলাচলবৃত্তি পরিলক্ষিত এ দোলাচলবৃত্তির দুটি কারণ, প্রথমত তার স্ত্রীর আত্মিক বিনাশ দ্বিতীয়ত তার বড় শ্যালিকার চঞ্চলতা। একই পরিবারে জন্মগ্রহণ করে তার বোন পৃথক জগতের মানুষ, ইয়ং হ্যানয়ে শুষ্ক মরভূমির রুক্ষ মতো নিশ্চল নির্মোহ অপরদিকে তার বড়ো শ্যালিকা প্রাণবন্ত ও চঞ্চল।

ইয়ং হ্যায়ের চরিত্রে ঔপন্যাসিক মানব মনের অন্তর্লীন সত্যকে বাস্তবতার দারপ্রান্তে দাঁড় করান। মাঝে মাঝে ইয়ং হ্যায়ের ভিতরে এতটাই বিচ্ছিন্নতা কাজ করে যে, জাগতিক সবকিছু থেকে সে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। সে শুধু ভাবে এক ঘণ্টার জন্য যদি সে ঘুমাতে পারত এবং নিজের চেতনা থেকে মুক্তি পেত তাহলে স্বাভাবিক জীবন হয়তো ফিরে পেত। কিন্তু এমনটি হয়নি বরং তার স্বপ্ন নামক বোধ তাকে সর্বদাই তাড়া করে বেরিয়েছে, মানুষের জগত থেকে। যে জগৎ শুধু হিংসা, পাপ পঙ্কিলতায় পরিপূর্ণ। এ রক্তপাত হানাহানির জগতে থেকে তিনি মুক্তি চান। তাইতো তার পরিবার যখন তাকে জোর করে আমিষ খাওয়াতে চায়, তখন সে হিং¯্র হয়ে ওঠে। কারণ মানুষ যখন মন থেকে কোনো কিছুকে দূরে রাখতে চায় তখন বাহ্যিক কোনো শক্তির কাছে তিনি পরাভূত হন না। তেমনি প্রতিভাত হয় ইয়ং হ্যায়ের জীবনে। ইয়ং হ্যায়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে ভর্তি, তার মা তাকে সুজির কথা বলে কখনো ভেষজ ঔষধ বলে বিভিন্ন উপায়ে আমিষ খাওয়ানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়। জোর করে কেউ তাকে খাওয়ালে সে খাবার ইয়ং হ্যায়ে বমি করে ফেলে দিত। এমনকি ডাক্তার যখন তাকে নলের সাহায্যে খাওয়নোর চেষ্টা করেন সে খাবারও তার পাকস্থলি পর্যন্ত পৌঁছাতো না। সে রক্তবমি করে সব ফেলে দেয়। ডাক্তার কিছুতেই সেই রক্ত থামাতে পারে না, এ যেন রক্ত নয়। এটা তার শৈল্পিক প্রতিবাদ এ পৃথিবীর হিংসাত্মক মানুষের বিরুদ্ধে। এ প্রতিবাদ তাদের বিরুদ্ধে যারা জীব হত্যা করে জীবনধারণ করে। তার সংবেদনশীল মনে এ বোধটি সদা জাগ্রত কেনো একটি জীবনকে নিধন করে অন্য জীবনের প্রাণ ধারণ করতে হবে? তার থেকে অনেক ভালো উদ্ভিদ জীবন। তাই তিনি এ জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হন। তার অ্যাম্বুলেন্সের উইন্ডশিল্ডের বাইরের জঙ্গলকে মানুষের পৃথিবী থেকে ঘন এবং উর্বর মনে হয়। তিনি তার সমস্ত সত্তা দিয়ে উদ্ভিদ জীবনকে অনুভব করেন। যেখানে তিনি তার নগ্ন শরীরে বুনো লতাকে পেঁচিয়ে নেবেন।

বিশেষত তাঁর লেখক সত্তায় পরিলক্ষিত তীব্র মানবিক ও আবেগী আবেদন যা তাঁর শিল্পভূমকে নান্দনিক ও আগ্রহব্যঞ্জক করেছে এবং এ শৈল্পিক অভিঘাত ব্যক্তির জীবনবোধ ও চিন্তাউৎসকে কল্লোলিত করেছে। তাঁর প্রথম উপন্যাস দ্য ভেজিটেরিয়ান যা তাঁকে বৈশি^ক করে তোলে।

ছবি

প্রতিবাদী চেতনার উর্বর ময়দান

ছবি

রবীন্দ্রনাথের আদি পুরুষের শেকড়

ছবি

ভেঙে পড়ে অন্তর্গহনের প্রগাঢ় অনুভূতি

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফ্রিদা কাহলো : আত্মপ্রকাশের রঙিন ক্যানভাস

ছবি

জ্যাজ সংঙ্গীতের তাৎক্ষণিক সৃষ্টিশীলতা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

নক্ষত্রের ধ্রুবতারা অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী

ছবি

নজরুল ও তাঁর সুন্দর

ছবি

নতুন বইয়ের খবর

ছবি

‘আমার চোখ যখন আমাকেই দেখে’- প্রেম ও প্রকৃতির সেতুবন্ধ

ছবি

পূষন ও বৃষ্টির গল্প

ছবি

‘আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ভ্রম

ছবি

পালকের চিহ্নগুলো

ছবি

নতুন বইয়ের খবর

ছবি

রফিক আজাদের কবিতা

ছবি

ধূসর পাণ্ডুলিপি পরিবহন

ছবি

চৈত্রের কোনো এক মধ্যরাতে

ছবি

দেশভাগের বিপর্যয় ও ‘জলপাইহাটি’র জীবনানন্দ দাশ

ছবি

সামান্য ভুল

সাময়িকী কবিতা

ছবি

আধুনিক বাংলা কবিতার প্রথাভাঙা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত

ছবি

ধুলোময় জীবনের মেটাফর

ছবি

স্কুলটি ছোট্ট বটে

ছবি

নতুন বইয়ের খবর

ছবি

পালকের চিহ্নগুলো

ছবি

আদোনিসের কবিতা

ছবি

আড়াই লেনের কৃষ্ণচূড়া

ছবি

গিরিশচন্দ্র ঘোষের নাটক ইতিহাস ও দেশপ্রেম

ছবি

নিজস্বতার অনন্য প্রমাণ

ছবি

বইমেলায় আসছে নতুন বই

ছবি

সরল প্রাণের সোপান

ছবি

হাসান আজিজুল হকের দর্শনচিন্তা

ছবি

শীতের পদাবলি

tab

সাময়িকী

দ্য ভেজিটেরিয়ান

নিরামিষ চর্চার বিরল আখ্যান

রুমা আক্তার

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

নোবেল বিজয়ী লেখক হান কাং

শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

উপন্যাস মানব জীবন রূপায়ণের সমগ্রতাস্পর্শী ক্যানভাস। যেখানে ব্যক্তির যাপিত জীবনের সূক্ষ্মতম অভিব্যক্তি পারঙ্গমতার সাথে রূপায়িত। বহু বর্ণিল জীবন ও জগতের বৈচিত্র্যময় লীলাকে শিল্পসম্মতভাবে মূর্র্তায়ণ উপন্যাসের প্রধান অনুষঙ্গ। নোবেল বিজয়ী কথাচিত্রী হ্যান কাং (জন্ম: ১৯৭০) এর পাঠক আদৃত উপন্যাস দ্য ভেজিটেরিয়ান (২০০৭)। এ উপন্যাসে তিনি ব্যক্তিক জীবনবোধের বহু বর্ণিল উত্থান-পতন, আনন্দ-বেদনার অনুভূতিতে, ট্রমা এবং এক অদৃশ্য অনুশাসনে আলোর পাদপ্রদীপ নিয়ে আসে। তাঁর স্বকীয় শৈলী ও কাব্যময় গদ্য যা ইতিহাসের যন্ত্রণাদগ্ধ ঘটনাকে উপজীব্য করে মানবজীবনের ভঙ্গুরতাকে উন্মোচিত করে। ফলে ব্যক্তিক প্রাত্যহিক নানাবিধ টানাপোড়েন ও শৈল্পিক অভিক্ষেপ মূলত ব্যক্তিকে শিল্পানুগামী করে তোলে।

১৯৯৩ সালে ‘লিটারেচার অ্যান্ড সোসাইটি’ ম্যাগাজিনে কিছু কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে তাঁর লেখক জীবনের সূচনা। তিনি লেখার পাশাপাশি নিজেকে শিল্প ও সঙ্গীতে আত্মনিয়োগ করেন। যার প্রতিফলন তাঁর সমগ্র সাহিত্যে সাধনায় প্রতিভাত। দ্যা ভেজিটেরিয়ানউপন্যাসটি তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। এটি মূলত ১৯৯৭ সালে কোরীয় ভাষায় তাঁর লেখা ছোটোগল্প দ্য ফরুট অব মাই ওম্যান-এর পরিশীলিত রূপ। এ উপন্যাসটি লিখতে তাঁর সময় লেগেছে প্রায় তিন বছর। ২০০৭ সালে এ উপন্যাসটি কোরিয়ান ভাষায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছে এবং ২০১৫ সালে এ উপন্যাসটি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেছেন ডেবোর স্মিথ। ইংরেজি অনুবাদের পর ২০১৬ সালে এ উপন্যাসটি আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারে ভূষিত হয়। এ উপন্যাসটি ইংরেজি ভাষা ছাড়াও আরো ১৩ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০০৯ সালে এ উপন্যাসটি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এছাড়াও তাঁর অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে-দ্য হোয়াইট বুক, হিউম্যান অ্যাক্টস, উই ডু নট পার্টি এবং গ্রিক লেসনস।

ভেজিটেরিয়ান বা নিরামিষভোজী বলতে বোঝায় ব্যক্তির যাপিত জীবনে নিরামিষ চর্চাকে। নিরামিষভোজীরা সাধারণত সব ধরনের আমিষ থেকে নিজেদের বিরত রাখেন। তবে এর সাধারণত দুটি কারণ থাকে এক ধর্মীয় অনুশাসন দ্বিতীয়ত সংবেদনশীল প্রাণি ও জীবনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য। তারা জীবন্ত প্রাণিকে হত্যা করে না, নেশা জাতীয় মদ পান করে না, পেঁয়াজ বা রসুন খায় না। হেলেনিস মিশরীয় এবং অন্যদের মধ্যে নিরামিষবাদের চিকিৎসা বা ধর্মীয় শুদ্ধিকরণের উদ্দেশ্য ছিলো। বর্তমানে অনেকে নিজের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য নিরামিষ ভোজন করে থাকে। তবে ভোজন ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক বিকাশে কতটুকু ভূমিকা পালন করে? নাকি কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হয়? এ নিয়ে নানা কল্পনা ও বোধের সৃষ্টি হয় ব্যক্তির মননে। কারণ একজন ব্যক্তির সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন সুষম খাবার এবং এ সুষম খাবারের যখন ঘাটতি দেখা যায়, তখন ব্যক্তির স্বাস্থ্য ও মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়। ব্যক্তি স্বাভাবিক আচরণ করতে পারে না। স্বাভাবিকভাবে যখন মানুষের শরীর ও মন অসুস্থ থাকে তখন তার আচরণও রুক্ষ হয়ে ওঠে।

দ্য ভেজিটেরিয়ান উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ইয়ং হ্যায়ের উপন্যাসটি তার নিরামিষাশী হয়ে ওঠার গল্প। যিনি কিছু অদ্ভুত স্বপ্ন দেখার পর মাংস খেতে অস্বীকৃতি জানান। একদিকে তার উদ্ভিদময় জীবনের প্রতি দুর্বার অভীপ্সা, অন্যদিকে অন্ধকার ও বিপজ্জনক জীবনের হাতছানি এ দুইয়ের মিথস্ক্রিয়া উপন্যাসটিকে করেছে তাৎপর্যম-িত ও শৈল্পিক। ইয়ং হ্যায়ের ভিতরে তার বর মি. ছেউ কোনো প্রাণচাঞ্চল্য বা বিমোহিত হওয়ার কিছু খুঁজে পাননি। তবুও তিনি তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। কারণ, সংসার করার জন্য শব্দ সঞ্চয়ী জীবন সঙ্গী অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিন কর্মক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পর তাকে যেনো জবাবদিহি করার কিংবা বিরক্ত করার কেউ না থাকে। কোনো রকম উটকো ঝামেলা ছাড়া সবকিছু মেনে নেওয়ার জন্য তিনি ইয়ং হ্যায়েরকে নির্বাচন করেছেন। ছিপ-ফেলে মাছ ধরার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) ‘সুভা’ গল্পে যেমন প্রতাপ তার নির্বাক বন্ধু সুভাকে নির্বাচন করেছেন, তেমনি ইয়ং হ্যায়েরকে তার স্বামী নির্বাচন করেছেন। তার সাজানো অস্তিত্বকে কেউ যেনো টানাহেঁচড়া না করে।

ইয়ং হ্যায়ের নিরুত্তাপ, শান্ত এবং কম কথা বলার নারী। সে তার বর থেকে কোনো কিছু বায়না করা কিংবা বাসায় দেরি করে ফিরলে কোনো প্রকার বাক্যব্যয় করে না। সে নিজেকে ঘরের ভিতরে গৃহবন্দি করে রাখে অথবা বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকে। তার একমাত্র শখ বই পড়া। তাই তো তাদের দাম্পত্য জীবনে তেমন কোলাহল নেই। তাদের এ একঘেয়ে দাম্পত্য জীবন মি. ছেউর কাছে খুব বিরক্তিকর মনে হতো। কারণ, তার স্ত্রী এতটাই আত্মমগ্ন যে তার কাঁধে তিনি হাত রাখলে কিংবা স্পর্শ করলে কোনো প্রকারের সাড়া মেলে না। এর থেকে একটা বিষয় প্রতিভাত হয়েছে যে, ইয়ং হ্যায়ের আত্মিক বিনাশ তাকে সমস্ত অনুভূতি থেকে মুক্তি দিয়েছে। সে শুধু দেহ নামের খোলস নিয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করছে।

সেই শৈশব থেকে সে একমাত্র সন্তান যে বাবার হাতে অধিক মার খেয়েছে। বাবার এ কর্তৃত্ববাদী মনোভাব তার মনকে বহু পূর্বেই বিনাশ করে দিয়েছে। তাইতো মানুষ হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করতে তার খুব কষ্ট হয়। সে উদ্ভিদ বা বৃক্ষ হয়ে বেঁচে থাকতে চায়। আত্মজৈবনিক এমনি কিছু দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি নিরামিষকে বেছে নিয়েছেন। কারণ, আমিষের প্রতি তার প্রচ- অনীহা। আমিষে প্রাণি হত্যা এবং এ প্রাণি হত্যায় প্রচুর রক্ত-ক্ষরণ হয়ে থাকে। যে রক্তপ্রবাহ তাকে শয়নে-স্বপ্নে তাড়া করে, তাকে আন্দোলিত করে, তাকে পীড়িত করে এবং এ বোধ থেকে তিনি উদ্ভিজ জীবনের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন। হানাহানি, মারামারি, রক্তপাত জীবনের থেকে এ জীবন অমূল্য।

এ উপন্যাসটি পুরুষতন্ত্রের অনুশানের মূর্ত প্রতীক। যেখানে নারীর কোনো বাক্ স্বাধীনতা কিংবা পোশাকের স্বাধীনতার নির্বাক দলিল। ইয়ং হ্যায়ের স্বামী তার স্ত্রীর বক্ষযুগল নিয়ে চিন্তিত। তার স্ত্রীর স্তনবৃন্ত কিংবা তার পরিহিত অন্তর্বাস এ দুই নিয়ে তার অন্বেষণ। নারীর শরীরকে ঘিরে এ নেতিবাচক মানসিকতা যুগান্তরে প্রবাহমান। নারীর শরীরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, নারীর শরীরকে ঘিরেই সর্ব আচার। এর সফল উদাহরণ হতে পারে- “আপনা মাংসে হরিণা বৈরী।” হরিণ যেমন তার মাংসের জন্য শিকারীর শিকাড়, তেমনি নারী তার শরীরের জন্য। হান ক্যাং তাঁর উপন্যাসে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এ নগ্নরূপটি পাঠক সম্মুখে শিল্পসম্মতভাবে তুলে ধরেন। এভাবে এক এক করে যখন সমস্ত স্বাধীনতা স্খলিত হয়, তখন সে জাগতিক সকল মোহ থেকে মুক্তি লাভ করে। সে রাতে কখনো ঘুম আসে না। সে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেই দুঃস্বপ্ন তাকে তাড়া করে বেড়ায়। এ যেন স্বপ্ন নয়, কোনো এক বোধ। যে বোধ তাকে সবার থেকে স্বতন্ত্র করে দেয় এবং এ বোধের কারণেই তার রূপান্তর। ফ্রাৎনজ কাফকা (১৮৮৩-১৯২৪) ‘মেটামরফোসিস’ গল্পের প্রধান চরিত্র গ্রেগর সামসা যেমন পুঁজিবাদী অভিঘাত এবং বহুবিধ টানাপোড়েন থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য কীটে রূপান্তরিত হয়, তেমনি ইয়ং হ্যায়ের। এ রূপান্তর যেমন গ্রেগর সামসাকে মুক্তি দিতে পারেনি, তেমনি ইয়ং হ্যায়ের নিজেকে এ বোধ থেকে পৃথক করতে পারেনি। উভয়ের পরিণতি প্রায় সাযুজ্য।

ইয়ং হ্যানয়ের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা দিন দিন লাগামহীন হয়ে পড়ে, কখনো তার স্বামীর থেকে দূরে সরে যায় কখনো প্রচন্ড শীতে নিজের পোশাক খুলে বসে থাকে, কখনো বা খুনের স্বপ্ন দেখে। তার মধ্যে প্রচন্ড রকম অ্যাবসার্ড কাজ করে। জীবনের নানা প্রতিকূলতা জীবনবোধ তাকে ভিন্নতর জগতে ধাবিত করে যেখান থেকে তার উঠে আসা সম্ভব হয় না। তাইতো যখনই দাম্পত্য জীবনকে মধুময় করার জন্য একে অপরের কাছে আসে তখনই ইয়ং হ্যান তার স্বামীর শরীর থেকে দুর্গন্ধ পায়, যে দুর্গন্ধ তাদের স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনে বড়ো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে, ইয়ং হ্যানয়ের স্বামীর মধ্যে দোলাচলবৃত্তি পরিলক্ষিত এ দোলাচলবৃত্তির দুটি কারণ, প্রথমত তার স্ত্রীর আত্মিক বিনাশ দ্বিতীয়ত তার বড় শ্যালিকার চঞ্চলতা। একই পরিবারে জন্মগ্রহণ করে তার বোন পৃথক জগতের মানুষ, ইয়ং হ্যানয়ে শুষ্ক মরভূমির রুক্ষ মতো নিশ্চল নির্মোহ অপরদিকে তার বড়ো শ্যালিকা প্রাণবন্ত ও চঞ্চল।

ইয়ং হ্যায়ের চরিত্রে ঔপন্যাসিক মানব মনের অন্তর্লীন সত্যকে বাস্তবতার দারপ্রান্তে দাঁড় করান। মাঝে মাঝে ইয়ং হ্যায়ের ভিতরে এতটাই বিচ্ছিন্নতা কাজ করে যে, জাগতিক সবকিছু থেকে সে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। সে শুধু ভাবে এক ঘণ্টার জন্য যদি সে ঘুমাতে পারত এবং নিজের চেতনা থেকে মুক্তি পেত তাহলে স্বাভাবিক জীবন হয়তো ফিরে পেত। কিন্তু এমনটি হয়নি বরং তার স্বপ্ন নামক বোধ তাকে সর্বদাই তাড়া করে বেরিয়েছে, মানুষের জগত থেকে। যে জগৎ শুধু হিংসা, পাপ পঙ্কিলতায় পরিপূর্ণ। এ রক্তপাত হানাহানির জগতে থেকে তিনি মুক্তি চান। তাইতো তার পরিবার যখন তাকে জোর করে আমিষ খাওয়াতে চায়, তখন সে হিং¯্র হয়ে ওঠে। কারণ মানুষ যখন মন থেকে কোনো কিছুকে দূরে রাখতে চায় তখন বাহ্যিক কোনো শক্তির কাছে তিনি পরাভূত হন না। তেমনি প্রতিভাত হয় ইয়ং হ্যায়ের জীবনে। ইয়ং হ্যায়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে ভর্তি, তার মা তাকে সুজির কথা বলে কখনো ভেষজ ঔষধ বলে বিভিন্ন উপায়ে আমিষ খাওয়ানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়। জোর করে কেউ তাকে খাওয়ালে সে খাবার ইয়ং হ্যায়ে বমি করে ফেলে দিত। এমনকি ডাক্তার যখন তাকে নলের সাহায্যে খাওয়নোর চেষ্টা করেন সে খাবারও তার পাকস্থলি পর্যন্ত পৌঁছাতো না। সে রক্তবমি করে সব ফেলে দেয়। ডাক্তার কিছুতেই সেই রক্ত থামাতে পারে না, এ যেন রক্ত নয়। এটা তার শৈল্পিক প্রতিবাদ এ পৃথিবীর হিংসাত্মক মানুষের বিরুদ্ধে। এ প্রতিবাদ তাদের বিরুদ্ধে যারা জীব হত্যা করে জীবনধারণ করে। তার সংবেদনশীল মনে এ বোধটি সদা জাগ্রত কেনো একটি জীবনকে নিধন করে অন্য জীবনের প্রাণ ধারণ করতে হবে? তার থেকে অনেক ভালো উদ্ভিদ জীবন। তাই তিনি এ জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হন। তার অ্যাম্বুলেন্সের উইন্ডশিল্ডের বাইরের জঙ্গলকে মানুষের পৃথিবী থেকে ঘন এবং উর্বর মনে হয়। তিনি তার সমস্ত সত্তা দিয়ে উদ্ভিদ জীবনকে অনুভব করেন। যেখানে তিনি তার নগ্ন শরীরে বুনো লতাকে পেঁচিয়ে নেবেন।

বিশেষত তাঁর লেখক সত্তায় পরিলক্ষিত তীব্র মানবিক ও আবেগী আবেদন যা তাঁর শিল্পভূমকে নান্দনিক ও আগ্রহব্যঞ্জক করেছে এবং এ শৈল্পিক অভিঘাত ব্যক্তির জীবনবোধ ও চিন্তাউৎসকে কল্লোলিত করেছে। তাঁর প্রথম উপন্যাস দ্য ভেজিটেরিয়ান যা তাঁকে বৈশি^ক করে তোলে।

back to top