অলঙ্করণ : শতাব্দী জাহিদ
হরমোন
গোলাম কিবরিয়া পিনু
এই পরিবেশ-এই প্রতিবেশে
আমি যেন এক দূরের মানুষ-
মনে হয় ভিনগ্রহ থেকে এই ধরাধামে এসেছি,
সবকিছু অপরিচিত ও নতুন!
ভিন্ন ভিন্ন সংকেত নিয়ে চলতে হচ্ছে
মিথস্ক্রিয়ায় আমার হরমোনও পরিবর্তন হচ্ছে-
আমার কণ্ঠস্বরও চিনতে পারছে না
মা ও বাবা, ভাই ও বোন, বন্ধুরা!
আমি নিজে নিজের মত হাঁটতে পারছি না
ট্রফিক পুলিশ বলে দিচ্ছে-
ওপথে রিক্সায় চড়ে যেতে পারবো না!
এমনকি হেঁটেও যেতে পারবো না!
বড় সেতুতে তো গাড়ি ছাড়া উঠতেই পারবো না!
গাঁইগুঁই করে গাইবান্ধায় পর্যন্ত যেতে পারবো না!
নিজের ইচ্ছেমতো স্পর্শ ও ছোঁয়ার শক্তি হারিয়ে
ভূতগ্রস্ত হয়ে ভূতের রাজত্বে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে যাচ্ছি,
নিজের আশ্রমে-নিজের আশ্রয় নেই!
শুধু মার্কেটের কনজিউমার হয়ে-
এ-মার্কেটে ও-মার্কেটে ঘুরছি,
নিজে পুতুল হয়ে-সেক্সডলের দিকে নজর রাখছি!
সঙ্গীতের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করতে পারছিনে!
অশ্বী অবতার
সুস্মিতা বিশ্বাস
মৃদু কুয়াশার ভোরে ঘুণধরা এ পৃথিবী জাদুরাজ্য হয়
ঘাসবনে ঢাল বেয়ে ভেজা পায়ে নেমে আসে অশ্বী অবতার!
ডুবজলে নুয়ে পড়ে আশ্বিনের ঘন চাঁদ, কপালের টিপ...
ঘোড়ার মেয়ের পায়ে ধানের শীষের মতো নূপুরবাহার।
অশ্বীর ডানা নেই, চরাচর জুড়ে তবু পূর্বাকাশে ভেসে আছে চুপ!
গাছের পাতার রঙে কাজল মাখানো তার শিশিরনরম দুটি চোখ-
হেমন্ততৃষ্ণিকা সে, ঢেউতোলা চুলে তার ভরামাঠ ফসলের ঘ্রাণ
আদি প্রস্তর যুগে তার হাতে হাত ঘষে আগুন শিখেছে নরলোক।
আগুন অনন্তসহা, অগ্নির লেলিহানে পৃথিবীর জন্মমৃত্যুঋণ...
আগুনের সিঁথিপথে অশ্বকন্যা ফিরে যায়-
এক হাতে রাত্রি এঁকে, অন্য হাতে দিন।
ধূসর শিশির
ফারজানা ফেরদৌস
আশ্রিত শালিক শেষ রাতে অন্ধকারে,
উড়ে গেল অজানা কোথাও। ফিরে এলো পায়ে
শিশির জড়িয়ে,
পশমে গতির রং। বয়ে আনে
ঠোঁটে করে মৃত্যুর খবর।
ঊষার আলো ধূসর রঙে ঢেকে দিয়ে ঘরবাড়ি
গাছপালা
ক্রমশ আনছে জীবন জীবনের কাছে।
কেবল জানবে না কেউ আঁধারের আর
এক মৃত্যু খবর।
সমর্পণ
শরীফ আস্-সাবের
আয়নাতে প্রসন্ন চোখ রেখে দেখো মেয়ে,
চেয়ে দেখো তোমার চারুতা, হাসির চমক-
কারুময়মুখ, মরালীর মত গ্রীবা, ঠোঁট,
আর অঙ্গে জড়ানো যত গহনার ঠাম।
তন্ময়হয়েআমি শুধু তোমাকেই দেখি,
তোমার কুন্তলরাশি, বুকের ক?্যানভাস:
গোলাপি গাল, আলুথালু নিতম্বের ঢেউ,
দেখি মায়াবী চোখের ঠারে নাচের ঠমক!
রোম কিংবা এথেন্সের অবাক নগরে
পাথরে খোদাই করা পুরনারী যেন তুমি!
তোমার নিটোল হাতের বাজুতে খেলা করে
প্রণয়ের উন্মাতাল মদির উচ্ছ্বাস।
ফুল আর আভরণ কপটে আড়াল করে
তোমার মায়াবী শরীরের সুনিপুণ ভাঁজ;
উষসী বাতাসে অমল মাধুরী উবে যায়,
দুঃসহ জ্বরে কামুক হৃদয়পুড়েছাই!
দিগন্তের সূর্যধোয়া আবীরের রাগে
তোমার রূপের কুহক সাজে দুর্বিনীত!
কী করে যৌবন ভার আগলে তুমি রাখো?
চৈত্রের দাবদাহে চাতকের মিটে না তিয়াস।
মেঘেরা বেড়াতে গেলে আকাশ চকিতে হাসে,
নিজেকে উজাড়করে ছড়ায়নীলের প্রভা;
তুমিও বাদামী ভোরে যা কিছু অহংকার
নিসর্গের মিনারে এসে করো সমর্পণ!
তারপর, পেট্রা কিংবা উজ্জয়িনীর
প্রাচীন মানবী হয়েকাছে আসো একবার-
আফ্রোদিতির মতো দেহের পসরা মেলে
ছুড়ে ফেলো অনাবশ্যক বসন ভূষণ!
জখম
আরণ্যক শামছ
এই যে তুমি হঠাৎ করে এলেই চলে
নদীতে তাই উঠলো জলের ঢেউ,
বিশ্বে এখন বোমায় বোমায় বারুদ খেলা
আসার খবর জানলো না তাই কেউ।
তুমি যখন আসলে এবার খুব নীরবে
বিশ্বে তখন আকাশচুম্বী মুদ্রাস্ফীতি,
আমি তখন বাঁচার জন্য করছি লড়াই
লোহিত সাগর দিচ্ছে পাড়ি প্রেমের রীতি।
যেই দেশেতে আছো তুমি সেথায় থাকো
সেইখানে হয় মধ্যরাতে বেচাকেনা,
পারবে না তো ছুঁতে তোমায় শেয়ারবাজার
থাক না পড়ে সকল তোমার পাওনা-দেনা।
হিসেবেনিকেশ দেবার যখন সময় হবে
ওয়ার্ল্ডস্ট্রিটের খবর তখন জেনে নিও,
তারপরে তে ইকোনমির হিসেব কষে
আসবে কি না সমাচারে জানিয়ে দিও।
হয়তো তখন আবার দেখা হতেও পারে
হয়তো তখন নতুন বিশ্ব অন্যরকম,
হয়তো তখন এই পৃথিবী জেনেই যাবে
রাখবে ঢেকে সকল খুনের গোপন জখম।
গন্ধম গ্রামে
নূরে জান্নাত
ঝরা ফুলের ঘ্রাণ ঘোর হয়ে ঢোকে
জীবনের জালানায়
প্রসবের বীভৎস মুহূর্তই যেন
ঘরভর্তি কচি সুখে বেণী
খুলে বসে কিশোরী হাঁসের মতো।
নরম পালকে চোখের পলকে
শামুকের কৌশল বড়ো ভাল লাগে!
ফুড়–ৎ ফুরসতে উড়ে আসে চড়–ই
মাটির পুতুল নিয়ে
জীবন ফের হাঁটে যায় মিছেমিছি
বেঁচে খায় দুঃখের বদলে!
বনে-বন্দরে নগর-অন্দরে
চুড়ি চুরি হয়, নূপুর বেজে যায়,
কান্নার কাতরতায়... ঐ একই ছবি আঁকে
যে ছবির আদি উৎস গন্ধম গ্রামে।
বাংলাদেশ
সাইয়্যিদ মঞ্জু
মানুষ আবার নাকি মানুষের মতো হবে
আগুনের যে ফেরেস্তা বিশ্বাস করেনি
আবারও-
প্রদীপ্ত পিদিম হাতে জেগে ওঠে রাত
দেখি-
আছিয়ার নাম ধরে কাঁদে বাংলাদেশ
অলঙ্করণ : শতাব্দী জাহিদ
বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
হরমোন
গোলাম কিবরিয়া পিনু
এই পরিবেশ-এই প্রতিবেশে
আমি যেন এক দূরের মানুষ-
মনে হয় ভিনগ্রহ থেকে এই ধরাধামে এসেছি,
সবকিছু অপরিচিত ও নতুন!
ভিন্ন ভিন্ন সংকেত নিয়ে চলতে হচ্ছে
মিথস্ক্রিয়ায় আমার হরমোনও পরিবর্তন হচ্ছে-
আমার কণ্ঠস্বরও চিনতে পারছে না
মা ও বাবা, ভাই ও বোন, বন্ধুরা!
আমি নিজে নিজের মত হাঁটতে পারছি না
ট্রফিক পুলিশ বলে দিচ্ছে-
ওপথে রিক্সায় চড়ে যেতে পারবো না!
এমনকি হেঁটেও যেতে পারবো না!
বড় সেতুতে তো গাড়ি ছাড়া উঠতেই পারবো না!
গাঁইগুঁই করে গাইবান্ধায় পর্যন্ত যেতে পারবো না!
নিজের ইচ্ছেমতো স্পর্শ ও ছোঁয়ার শক্তি হারিয়ে
ভূতগ্রস্ত হয়ে ভূতের রাজত্বে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে যাচ্ছি,
নিজের আশ্রমে-নিজের আশ্রয় নেই!
শুধু মার্কেটের কনজিউমার হয়ে-
এ-মার্কেটে ও-মার্কেটে ঘুরছি,
নিজে পুতুল হয়ে-সেক্সডলের দিকে নজর রাখছি!
সঙ্গীতের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করতে পারছিনে!
অশ্বী অবতার
সুস্মিতা বিশ্বাস
মৃদু কুয়াশার ভোরে ঘুণধরা এ পৃথিবী জাদুরাজ্য হয়
ঘাসবনে ঢাল বেয়ে ভেজা পায়ে নেমে আসে অশ্বী অবতার!
ডুবজলে নুয়ে পড়ে আশ্বিনের ঘন চাঁদ, কপালের টিপ...
ঘোড়ার মেয়ের পায়ে ধানের শীষের মতো নূপুরবাহার।
অশ্বীর ডানা নেই, চরাচর জুড়ে তবু পূর্বাকাশে ভেসে আছে চুপ!
গাছের পাতার রঙে কাজল মাখানো তার শিশিরনরম দুটি চোখ-
হেমন্ততৃষ্ণিকা সে, ঢেউতোলা চুলে তার ভরামাঠ ফসলের ঘ্রাণ
আদি প্রস্তর যুগে তার হাতে হাত ঘষে আগুন শিখেছে নরলোক।
আগুন অনন্তসহা, অগ্নির লেলিহানে পৃথিবীর জন্মমৃত্যুঋণ...
আগুনের সিঁথিপথে অশ্বকন্যা ফিরে যায়-
এক হাতে রাত্রি এঁকে, অন্য হাতে দিন।
ধূসর শিশির
ফারজানা ফেরদৌস
আশ্রিত শালিক শেষ রাতে অন্ধকারে,
উড়ে গেল অজানা কোথাও। ফিরে এলো পায়ে
শিশির জড়িয়ে,
পশমে গতির রং। বয়ে আনে
ঠোঁটে করে মৃত্যুর খবর।
ঊষার আলো ধূসর রঙে ঢেকে দিয়ে ঘরবাড়ি
গাছপালা
ক্রমশ আনছে জীবন জীবনের কাছে।
কেবল জানবে না কেউ আঁধারের আর
এক মৃত্যু খবর।
সমর্পণ
শরীফ আস্-সাবের
আয়নাতে প্রসন্ন চোখ রেখে দেখো মেয়ে,
চেয়ে দেখো তোমার চারুতা, হাসির চমক-
কারুময়মুখ, মরালীর মত গ্রীবা, ঠোঁট,
আর অঙ্গে জড়ানো যত গহনার ঠাম।
তন্ময়হয়েআমি শুধু তোমাকেই দেখি,
তোমার কুন্তলরাশি, বুকের ক?্যানভাস:
গোলাপি গাল, আলুথালু নিতম্বের ঢেউ,
দেখি মায়াবী চোখের ঠারে নাচের ঠমক!
রোম কিংবা এথেন্সের অবাক নগরে
পাথরে খোদাই করা পুরনারী যেন তুমি!
তোমার নিটোল হাতের বাজুতে খেলা করে
প্রণয়ের উন্মাতাল মদির উচ্ছ্বাস।
ফুল আর আভরণ কপটে আড়াল করে
তোমার মায়াবী শরীরের সুনিপুণ ভাঁজ;
উষসী বাতাসে অমল মাধুরী উবে যায়,
দুঃসহ জ্বরে কামুক হৃদয়পুড়েছাই!
দিগন্তের সূর্যধোয়া আবীরের রাগে
তোমার রূপের কুহক সাজে দুর্বিনীত!
কী করে যৌবন ভার আগলে তুমি রাখো?
চৈত্রের দাবদাহে চাতকের মিটে না তিয়াস।
মেঘেরা বেড়াতে গেলে আকাশ চকিতে হাসে,
নিজেকে উজাড়করে ছড়ায়নীলের প্রভা;
তুমিও বাদামী ভোরে যা কিছু অহংকার
নিসর্গের মিনারে এসে করো সমর্পণ!
তারপর, পেট্রা কিংবা উজ্জয়িনীর
প্রাচীন মানবী হয়েকাছে আসো একবার-
আফ্রোদিতির মতো দেহের পসরা মেলে
ছুড়ে ফেলো অনাবশ্যক বসন ভূষণ!
জখম
আরণ্যক শামছ
এই যে তুমি হঠাৎ করে এলেই চলে
নদীতে তাই উঠলো জলের ঢেউ,
বিশ্বে এখন বোমায় বোমায় বারুদ খেলা
আসার খবর জানলো না তাই কেউ।
তুমি যখন আসলে এবার খুব নীরবে
বিশ্বে তখন আকাশচুম্বী মুদ্রাস্ফীতি,
আমি তখন বাঁচার জন্য করছি লড়াই
লোহিত সাগর দিচ্ছে পাড়ি প্রেমের রীতি।
যেই দেশেতে আছো তুমি সেথায় থাকো
সেইখানে হয় মধ্যরাতে বেচাকেনা,
পারবে না তো ছুঁতে তোমায় শেয়ারবাজার
থাক না পড়ে সকল তোমার পাওনা-দেনা।
হিসেবেনিকেশ দেবার যখন সময় হবে
ওয়ার্ল্ডস্ট্রিটের খবর তখন জেনে নিও,
তারপরে তে ইকোনমির হিসেব কষে
আসবে কি না সমাচারে জানিয়ে দিও।
হয়তো তখন আবার দেখা হতেও পারে
হয়তো তখন নতুন বিশ্ব অন্যরকম,
হয়তো তখন এই পৃথিবী জেনেই যাবে
রাখবে ঢেকে সকল খুনের গোপন জখম।
গন্ধম গ্রামে
নূরে জান্নাত
ঝরা ফুলের ঘ্রাণ ঘোর হয়ে ঢোকে
জীবনের জালানায়
প্রসবের বীভৎস মুহূর্তই যেন
ঘরভর্তি কচি সুখে বেণী
খুলে বসে কিশোরী হাঁসের মতো।
নরম পালকে চোখের পলকে
শামুকের কৌশল বড়ো ভাল লাগে!
ফুড়–ৎ ফুরসতে উড়ে আসে চড়–ই
মাটির পুতুল নিয়ে
জীবন ফের হাঁটে যায় মিছেমিছি
বেঁচে খায় দুঃখের বদলে!
বনে-বন্দরে নগর-অন্দরে
চুড়ি চুরি হয়, নূপুর বেজে যায়,
কান্নার কাতরতায়... ঐ একই ছবি আঁকে
যে ছবির আদি উৎস গন্ধম গ্রামে।
বাংলাদেশ
সাইয়্যিদ মঞ্জু
মানুষ আবার নাকি মানুষের মতো হবে
আগুনের যে ফেরেস্তা বিশ্বাস করেনি
আবারও-
প্রদীপ্ত পিদিম হাতে জেগে ওঠে রাত
দেখি-
আছিয়ার নাম ধরে কাঁদে বাংলাদেশ