alt

সাময়িকী

গণহত্যার বিরুদ্ধে কবিতা

: শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫

প্রচ্ছদ সূত্র ইন্টারনেট

অস্ত্র নয়, কলমই সংখ্যায় অধিক
ফারুক মাহমুদ

মূলছিন্ন মানুষের ঠিকানা থাকে না

দায় শুধু অনুগ্রহের পথচিহ্ন আঁকা

করুণা, তাচ্ছিল্যঝড়- আসে ঝাঁকে-ঝাঁকে

মাটিদেশ, চিন্তামূলে অস্তিত্ববিহীন

নররক্ত, নারীরক্ত, শিশুরক্তধারা

সকল উদ্যান আজ হাড়ের পাহাড়

ধ্বংসভাষা উচ্চকিত বিষাক্ত-প্রকট

মৃত্যুর পেছনে মৃত্যু অন্ধ অন্ধকার

তবু সত্য- যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়

ভুল চালে হেরে যায় দাবাড়–র ঘুঁটি

সম্ভাবনা জেগে থাকে- দাঁড়িয়ে দাঁড়াও

দূরে রাখো ক্ষত-ক্ষতি, রুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস

অস্ত্র নয়, কলমই সংখ্যায় অধিক

এসো জন্ম, এসো স্বপ্ন- দলবদ্ধ বাঁচি

উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে
জিললুর রহমান

বিস্ফারিত লাল রঙে ভাসছে আকাশ-

কমলা মেঘের ফাঁকে ফাঁকে

ধোঁয়ার কু-লী সব গগন ছুঁয়েছে,

তার সাথে পাল্লা দিয়ে ওড়ে মানুষ- বোকাট্টা ঘুড়ি,

ধোঁয়ার স্তম্ভের চারপাশে চলে মু-ুহীন মানুষের

অশেষ তওয়াফ উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে-

সুফিনৃত্যে নিমগ্ন সামান্য লোক

অসামান্য এবাদতের ভঙ্গিতে...

শত শাদা পুঁটলির ভেতরে

শায়িত নিস্তব্ধ শিশু-

কারও হাত কারও পা কারওবা মাথাই উড়েছে লাল আসমানে,

যেন সব ভলিবল নেতানিয়াহুর।

গর্জমান বিমানের ফুঁয়ে ধ্বসে পড়ে

সুউচ্চ দালানগুলো, বালুকাবেলার ঘর-

কালের পাউডার...

আমার মেয়ের কসম
মোহাম্মদ হোসাইন

কাঁদতে কাঁদতে আমার ছোট্ট শিশুটি ফিলিস্তিনের বিধ্বস্ত মাটির কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছে। তার মায়ের ছিন্নভিন্ন দেহের পাশে। আমার মেয়ের নাম ফাতেমা। তার দাদু খুব আদর করে এই নাম রেখেছিল। ফাতেমা মানে বিরত রাখা বা দুধ ছাড়ানো। ফাতেমা এখন ঘুমুচ্ছে। গতকালও সে গম খেতে দৌড়াতে চেয়েছে, হাওয়ার পিছন পিছন, প্রজাপতি কিংবা ভেড়ার পিছন পিছন।

এখন সে ঘুমুচ্ছে...ঘুমুচ্ছে কি না ঠিক বলতে পারব না

তবে সে জাগছে না। তার চোখগুলো খোলা আকাশের দিকে, মেঘের দিকে, তারার দিকে চেয়ে আছে যেন দেব শিশু যেন সে সমগ্র পৃথিবী... পৃথিবী মানে ফাতেমা...জগতের সমস্ত নির্মমতার চিহ্ন।

একটু আগে ফাতেমার মা পৃথিবীর গরাদ ভেঙে জালিমের কারাগার ভেঙে ঊর্ধ্ব আকাশের দিকে উড়ে গেছে- পাষ- ইসরাইলীদের বোমার আঘাতে। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার ছিন্নভিন্ন দেহ, তার রক্ত, পাঁজর, অস্থি-মজ্জাসমেত ফিলিস্তিনের মমতা মাখা গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল, রক্তশোভিত ফুলেল সৌরভ...

আমি এখনো বেঁচে আছি।

ফিলিস্তিন আমার জন্মভূমি। ফাতেমা আমার একমাত্র মেয়ে। গাজা কিংবা ফিলিস্তিনই শেষ কথা নয়।

আমার মেয়ের কসম পবিত্র জেরুজালেমের কসম

আমি আমার দেহকে ছড়িয়ে দেব ফিনিক্স পাখির মতো সমস্ত ধ্বংসের বিরুদ্ধে...!

অশ্রুত এই ক্রন্দন
তাপস গায়েন

আহা কী যে এক উন্মাদনা

রক্তের মধ্যে রঙের উন্মেষ, তার আন্দোলিত উদ্ভাস

সুর এসে তাকে ভাঙ্গে, তাকে করে ব্যাপ্ত

কে যে নাচে, আর কী যে নেচে ওঠে

দুপুর ভেসে গেছে দিনান্তে, আর ভাঙ্গা আয়নায়

প্রতিফলিত জগৎ ভেসে যায় অনন্ত জোয়ারে

এই মধ্যরাতে কে একাকী- তুমি না তুমিহীন এই জগৎ

কেউ আর তোমার নাম ধরে ডাকে না

অনেক নক্ষত্রের ভিড়ে তুমি কি আর এক নক্ষত্র

এখনো রয়ে গেছে অনেক অসমাপ্ত যুদ্ধ

মৃত শিশুর মুষ্টিবদ্ধ হাত-

তুমিহীন এই গ্রহ ভেসে যায় অদৃশ্যমান এই নক্ষত্র বাতাসে...

হারানো বিজ্ঞপ্তি
ভাগ্যধন বড়ুয়া

শিশু নেই, ঘর নেই, চেনা মানচিত্র উধাও

চারিদিকে ধোঁয়া আর রক্তের গন্ধ

শ্বাস নিতে পারছি না,

মা গো... পুড়ে যাচ্ছি...

কেউ শোনে না ক্ষীণ ডাক!

বোমার আঘাতে বোবা ক্ষণ, শোকের স্তূপ!

কান্না-হাহাকার, পোড়া ছাই, জ্বলন্ত জনপদ

কোথায় আশ্রয়? কার কাছে যাই? ছিন্নভিন্ন স্বপ্ন

অন্ধকারে মিসাইল আলো; দানবের ধনুক

বুকে চাপ, বেঁচে আছি কি?

শরণার্থী মন প্রিয়জন খোঁজে,

অথচ খবর আসে শুধু হারানোর...

দারবিশের স্বপ্ন
মাহফুজ আল-হোসেন

কালরাতে স্বপ্নে দারবিশকে দেখলাম

রক্তের নদী সাঁতরে রিটার বাড়ির দিকে যেতে;

ওদের মাঝখানে গাজায় দাঁড়িয়ে থাকা গালিল এইস্ অ্যাসল্ট রাইফেলটা নদীটিকে মুহূর্তেই মহাসাগর বানিয়ে দিলো।

আর তারই পাড় ঘেঁষে ক’দিন আগে রাফায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স কনভয়ের মধ্যে পড়ে থাকা কয়েক জোড়া কানের দুল থেকে মাথা তোলা এক আজদাহা অজগর তরু দত্তের ক্যাসুয়ারিনার মতোই স্মৃতিকাতরতায় ভুগছে!

সেই সরীসৃপ এখন মুক্তি উপত্যকার দ্বারপ্রান্তে;

আর দারবিশকে নাকি হিস হিস শব্দে জানিয়ে দিয়েছে প্রণয়ী রিটার কাছে পাওয়া বিষাক্ত প্রতিটি চুমুই সে অবধারিতভাবে ফিরিয়ে দেবে এডওয়ার্ড সাঈদীয় অপরতায়...

স্টপ জেনোসাইড
ওবায়েদ আকাশ

স্টপ জেনোসাইড: বাস্তুচ্যুত নারী সন্তান প্রসব করছে

স্টপ জেনোসাইড: মা তাঁর নবজাত খুঁজছে

স্টপ জেনোসাইড: অগণ্য সদ্যোজাত মাতৃস্তন খাচ্ছে

স্টপ জেনোসাইড: শিশুটি মাতৃক্রোড়ে নিভৃতে আছে

স্টপ জেনোসাইড: বাবার আতঙ্ক ফুঁড়ে পৃথিবী ঘামছে

স্টপ জেনোসাইড: বৃদ্ধটি ইতিউতি আশ্রয় খুঁজছে

স্টপ জেনোসাইড: কিশোরটি খেলার মাঠ দাবড়ে বেড়াচ্ছে

স্টপ জেনোসাইড: যুবকটি বিভোর স্বপ্নে আগামী দেখছে

স্টপ জেনোসাইড: সদ্য পরিণীতা মধুচন্দ্রিমার প্রহর গুনছে

স্টপ জেনোসাইড: কৃষক দুহাতে ফসল তুলছে

স্টপ সেনোসাইড: শ্রমিক কপালের ঘাম মুছছে

স্টপ জেনোসাইড: ¯্রষ্টার সৃষ্টিতে পৃথিবী ভরছে

স্টপ জেনোসাইড: বিজ্ঞানীর চোখে বিস্ময় জাগছে

স্টপ জেনোসাইড: কবির কলমে কবিতা নামছে

স্টপ জেনোসাইড: পিতামাতাশিক্ষক মানুষ গড়ছে

স্টপ জেনোসাইড: বোমার আঘাতে উড়ছে হাত-পা-মগজ

স্টপ সেনোসাইড: সারি সারি মানুষ আশ্রয় চাচ্ছে

স্টপ সেনোসাইড: রক্তাক্ত দেহ শুশ্রƒষা চাইছে

স্টপ সেনোসাইড: বুভুক্ষু মুখ অন্ন খুঁজছে

স্টপ সেনোসাইড: মুমূর্ষু প্রাণ অক্সিজেন চাচ্ছে

স্টপ জেনোসাইড: হত্যার বিপরীতে মানুষ কাঁদছে

স্টপ জেনোসাইড: অসহায় প্রাণ ক্রন্দন করছে

স্টপ জেনোসাইড: আকাশে লাশের গন্ধ ভাসছে

স্টপ জেনোসাইড: ঊষর জমিনে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে

স্টপ সেনোসাইড: ... ... ...

স্টপ সেনোসাইড: ... ... ...

স্টপ সেনোসাইড: ... ... ...

মাহমুদ দারবিশের চশমা
চয়ন শায়েরী

একটা শিশুর মুখে ঝরা শিউলির মৃত্যুস্বাদ- এক দুই তিন চার... হাজারো হাজার- চারিপাশে জাতিগত নির্মূলের বোমারু অসুর!

-আল-কুদস কতদূর?

একটা আশার পিছে পুরোটা জীবন- আহা! এই আইডেনটিটি, স্বদেশের মাটির ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠা- ওই আশা আশাভঙ্গে কবর খুঁড়ছে;

এই আইডেনটিটি ক্রাইসিসে- আল-কুদস আরও দূরে সরে যাচ্ছে;

মৃত্যুর মিছিল বড় হতে হতে আকাশে উড়ছে বোমার আঘাতে- বাতাসে বারুদ আর অসুরের ঘ্রাণ- রক্তবীজে আমিও ফিলিস্তিনি!

মাহমুদ দারবিশের কবিতার চশমাটা খুঁজি- চশমার গোল গোল কাচের ভিতর দিয়ে দেখি: কবিতা লেখার জন্য যে-শিশুটি আদালতে গিয়েছিল, সে-ও পথ খুঁজে ফেরে ওই গোল চশমাটা পরে-

আল-কুদস, কতদূর, আর কতদূর!

একদিন স্বাধীন হবে ফিলিস্তিন
রকিবুল হাসান

আমার জন্ম কোথায়-পৃথিবী কোথায়-কতদূর!

পৃথিবীর মানুষেরা দেখতে কেমন

আদৌ কি মানুষ আছে এই পৃথিবীতে

 

আমি-তুমি ফিলিস্তিনি-আমাকে-তোমাকে

দিনরাত হত্যা করা হচ্ছে-

খ-বিখ- করছে

বুক জুড়ে অগ্নিকু--পোড়া গন্ধ-বিভীষিকাময়

 

মানুষের কি হাত থাকে? শরীর-পা থাকে? বুক থাকে?

ক্ষুধা ও যন্ত্রণা থাকে? মৃত্যু ও আর্তনাদ থাকে?

আমি ফিলিস্তিনি-কোন গ্রহে জন্ম আমাদের

ফিলিস্তিন ও পৃথিবী অনেক দূরের কোনো গ্রহ?

 

আমরা হয়তো আর খাবারের জন্য দাঁড়াবো না-

পানির জন্যও নয়।

রক্তাক্ত চোখের জলে তাকাবো না করুণ আর্তিতে!

তবুুও শেষ হবে না- ফিলিস্তিন।

নতুন রক্তের লালে লাল হবে ফিলিস্তিন

পৃথিবী, তোমার বুকে একদিন স^াধীনতা পাবে

রক্তলাল ফিলিস্তিন।

 

তখন দেখবে

আমরা এক গ্রহের মানুষ ছিলাম-

শুধু আর আমাদের সন্তানেরা ফিরবে না ঘরে।

জলপাইয়ের নতুন মওসুম
জুনান নাশিত

গাজার যে ভূমিতে তোমাদের নির্মূল করা হচ্ছে

সে ভূমির কসম

আমরা তোমাদের ভুলবো না

যে পিতার কাঁধে কন্যার মস্তকবিহীন লাশ

রক্তাক্ত যে শিশুটি ভয়ার্ত কান্নায় কেঁপে কেঁপে

ভাঁপিয়ে তুলছে রাত

সে শিশু, সে পিতা স্বপ্নের ভেতর এসে তাড়া দিচ্ছে আমাদের

আমরা ঘৃণার আগুন বুকে নিয়ে জেগে উঠি

বিকৃত, ভগ্ন বিশ্ব মানবতার ঢালে যে মিথ্যার আহাজারি

পাথরে বাঁধা হাত নিয়ে তার থেকে ছিটকে সরিয়ে ফেলি নিজেদের

ভাবি, পাথরগুলো গাজা ভাসিয়ে নেয়া টকটকে রক্তের সমুদ্র শুষে নিক

যে সমুদ্র দেখে

আমরা হাহাকার করি, আর্তনাদে ভরিয়ে দেই চরাচর।

দাবার ঘুঁটিতে তা দেয়া সকল বিশ্ব নেতাকে আমরা ঘৃণা করি

ভালোবাসি তোমাদের।

ওরা ভাবে, তোমরাতো মানুষ নও

যোগ্য নও এ ভূমির

পিতৃভূমি থেকে বিতাড়িত

এই তোমরাই তো আমাদের ভাই, আমাদের বোন, পিতা ও মাতা

অন্তহীন নাকবায় কেবলি তোমরা অদৃষ্টে জড়িয়ে যাও

নিজ ভূমেই ঘটে তোমাদের পরবাস।

তোমাদের রক্তাক্ত মুখ, সাদা কাফনে ঢাকা লাশের সারি

আমাদের ভেতর ঝড় তোলে

শীতল বাতাসেও আমরা উত্তপ্ত

ক্ষোভে আর ক্ষুব্ধতায় বিদীর্ণ হই।

ভাবি, একঝাঁক রক্তের সিঁড়ি বেয়ে

গাজার উঠোনে কবে নামবে রঙধনু বিকেল?

সূর্যাস্তের লাল আভায় কবে চিকচিক করবে

জলপাইয়ের নতুন মওসুম?

পরিস্থিতি
পিয়াস মজিদ

তুলার বালিশে শুয়ে

ঘুমাতে ঘুমাতে

স্বপ্নের হামলা

আমার বিছানা

এটা কি ঢাকা?

নাকি এই দুনিয়া

রক্তের বালিশে

শুয়ে থাকা গাজা!

গাজা
সৌম্য সালেক

লক্ষ লক্ষ পবিত্র পদচিহ্নের স্মৃতি বিজড়িত

লক্ষ-কোটি পুণ্যার্থীর প্রার্থনায় সিক্ত

হে ব্যথিত নগরী

দেখো, পৃথিবীর হৃদয়ে তোমার আসন

তুমি যেন বনি-ইসরাইলের প্রিয়তম পুত্র ইউসুফ

যার প্রতি মানুষের সংহতি দেখে, ঈর্ষার আগুনে পুড়ছে বৈমাত্রেয় বামনেরা!

নির্ভীক যুবাদের হে নির্ঘুম নগরী

দেখো তোমার যন্ত্রণায়, তোমার সংকটে, সীমাহীন সংগ্রামে

তোমার অনিদ্রায়, তোমার চিৎকারে

দিকে দিকে কাঁদছে মানুষ

প্রতিটি নির্মল হৃদয় তোমার মুক্তির প্রত্যাশায় প্রহর গুনছে

তোমার জন্য আরাধনায় ডুবে গম্ভীর হয়ে থাকে প্রতিটি সকাল!

হে পৃথিবী, তুমি শান্তি ও স্থিরতার কথা ভেবে হয়রান

অথচ তুমি তোমার হৃদয়ের দিকে তাকাচ্ছ না

দৃষ্টিপাত করছ না হৃদয়ের অসুখের দিকে!

আমাকে বলো, হৃদয়ের জখম না সারিয়ে

কিংবা হৃদয়কে অভুক্ত রেখে কেউ কি শান্তিতে থাকতে পারে?

গোলাপের ক্রন্দন
আদিত্য নজরুল

শাখা থেকে

একটি গোলাপ কেউ কেটে নিতে

উদ্যত হতেই

হাসিমুখে গোলাপটি এগিয়ে দিলো বাহু

অন্য একটি শাখায়

ফুটে আছে যে গোলাপ-

বিষণœ সে,

অশ্রু দিয়ে অলঙ্কৃত চোখ তার!

লোকটি জানতে চাইলো

‘তোমাদের পারস্পরিক

বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি কি?’

প্রথম গোলাপ টগবগিয়ে বললো,

‘ফিলিস্তিনি শিশুদের সহযাত্রী হবার

আনন্দে হাসছি’,

অন্য গোলাপটি বললো,

‘পৃথিবীতে থেকেই আমাকে দেখতে হবে

গোলাপ গোলাপ

শিশুদের মৃত্যু

এই অসহায়ত্বই আমাকে কাঁদাচ্ছে!’

শুভ্র বসনে শুয়ে আছে সমুদ্র গর্জন
শেলী সেনগুপ্তা

কে বললো

ফিলিস্তিনি শিশুদের এতো ন্যায়নিষ্ঠ হতে?

কী চমৎকার

সারি সারি শুয়ে আছে

শুভ্র বসনে! নেই কোনো কলকাকলি, চঞ্চলতা

এ মর্মান্তিক ঘুমিয়ে থাকা কি ঘুম ভাঙ্গাবে

বিশ্বের,

জাতিসংঘ-মহাসচিবের,

নাকি

পৃথিবী পুষ্পহীন হবে, সব ফুল ঝরে যাবে

গাজা ও রাফাহ দিকে চেয়ে

ফুলেরাও কি শিখে নিয়েছে

ফিলিস্তিনি শিশুর ন্যায়নিষ্ঠতা!

থোকা থোকা ফুল
ফরিদা রানু

সোনালু বা জারুল, দোলন চাঁপা অথবা পারুল

থোকায় থোকায় ফুটে আছে যেন শাখায় বকুল

যে ভাবেই আমি দেখি না কেন?

যে নামেই তোদের ডাকি না কেন?

তোরা আমার সন্তান

তোদের নিয়ে সৃষ্টি হবে নতুন উপাখ্যান।

চোখ ঝলসানো দৃশ্য

আর নরম ফুলের স্পর্শ।

এই বিরানভূমিতে গোলাপের চেয়েও তীব্র সুবাস তোদের

শত ফুলের দলে বান বয়েছে তোদের রক্তের ¯্রােতের,

সাদা সাদা কাফনে মোড়ানো কচি কচি শরীর

আমরা দেখছি,শুনছি কিন্তু আমরা অন্ধ ও বধির।

অবুঝ বোনের খণ্ড খণ্ড শরীর পলিথিনে শিরনির মতো তুলছে

বিস্ফোরণের সাথে হাজার হাজার মানুষ রডের সাথে ঝুলছে

আর নারকীয়তায়,পাশবিকতায়

ছাপিয়ে গেছে পঙ্কিলতম অধ্যায়।

নব্বই শতাংশ ধ্বংস আবাস্থল এখন রাফায়

দফায় দফায় চুক্তি ভেঙে বোমা ফাটছে গাজায়।

দখলদারিত্ব আর অপরাধীনতার শিকল পড়িয়ে

রাখতে পারতে না কেও ইতিহাস থামিয়ে।

পারবে না কারও ভালবাসা পেতে

ডুবে যাবে একদিন অমানিশার রাতে,

প্রতিটি ক্রিয়ার বিপরীতে যেমন প্রতিক্রিয়া থাকে

তেমনি শতাব্দী শেষে নতুন করে নতুন কিছু আঁকে।

ভুলে গেলে চলবে না যুদ্ধ কখনও সমাধান নয়

যুদ্ধ শেষ হবে পরাজয় অথবা জয়

তবে দিন শেষে শুধু থাকে রক্তক্ষয়

মানবিকতা ও সম্পদের অবক্ষয়।

ছবি

নিউ নেদারল্যান্ডস: জার্র্সি এবং লেনাপি জনগোষ্ঠী

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বকুলীর সেইরাত

ছবি

আকাশের প্রান্ত

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

মুখ

ছবি

বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি

ছবি

অগ্রজ দাউদ হায়দারের মহাপ্রয়াণ

ছবি

নারী যখন পাঠক নারী যখন লেখক

সাময়িকী কবিতা

মিত্র

ছবি

মৃত্যুর মৃদু উত্তাপ : পথের শেষ কোথায়

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

বেলাল চৌধুরীর কবিতা

ছবি

পাঠের আগ্রহ থাকলে বইয়ের অভাব হয় না

ছবি

রবীন্দ্রগানে শঙ্খ ঘোষের মন

ছবি

ফার্স্ট টিউসডে’স : আমার প্রথম মঙ্গলবার সন্ধ্যার গন্তব্য

ছবি

আজ লাবণ্যর বিয়ে

ছবি

সংস্কৃতির পরম্পরা, অভিঘাত-অভিজ্ঞান ইতিহাস বিচার-বিশ্লেষণ

ছবি

তুষার গায়েন-এর কবিতা

ছবি

লোরকার দেশে

ফিলিস্তিনের তিনটি কবিতা

ছবি

এক বিস্ময় প্রতিভা

ছবি

দিওয়ান-ই-মাখফি : জেব-উন-নিশা

ছবি

বৈচিত্র্যে ভরা ‘যদিও উত্তরমেঘ’

ছবি

রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের কথা

ছবি

মোহ কাঠের নৌকা : জীবন-সংগ্রামের এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি

ছবি

শাঁকচুন্নি

ছবি

মেঘনাদবধ, এক নতুন দৃশ্যভাষা

ছবি

নতুন কবিতার সন্ধানে

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘ভাঙানৌকা’

ছবি

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বায়োস্কোপ

ছবি

জরিনা আখতারের কবিতা আত্ম-আবিষ্কার ও মুক্তি

ছবি

শহীদ সাবেরের সাহিত্য চিন্তা ও জীবনের সমন্বয়

tab

সাময়িকী

গণহত্যার বিরুদ্ধে কবিতা

প্রচ্ছদ সূত্র ইন্টারনেট

শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫

অস্ত্র নয়, কলমই সংখ্যায় অধিক
ফারুক মাহমুদ

মূলছিন্ন মানুষের ঠিকানা থাকে না

দায় শুধু অনুগ্রহের পথচিহ্ন আঁকা

করুণা, তাচ্ছিল্যঝড়- আসে ঝাঁকে-ঝাঁকে

মাটিদেশ, চিন্তামূলে অস্তিত্ববিহীন

নররক্ত, নারীরক্ত, শিশুরক্তধারা

সকল উদ্যান আজ হাড়ের পাহাড়

ধ্বংসভাষা উচ্চকিত বিষাক্ত-প্রকট

মৃত্যুর পেছনে মৃত্যু অন্ধ অন্ধকার

তবু সত্য- যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়

ভুল চালে হেরে যায় দাবাড়–র ঘুঁটি

সম্ভাবনা জেগে থাকে- দাঁড়িয়ে দাঁড়াও

দূরে রাখো ক্ষত-ক্ষতি, রুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস

অস্ত্র নয়, কলমই সংখ্যায় অধিক

এসো জন্ম, এসো স্বপ্ন- দলবদ্ধ বাঁচি

উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে
জিললুর রহমান

বিস্ফারিত লাল রঙে ভাসছে আকাশ-

কমলা মেঘের ফাঁকে ফাঁকে

ধোঁয়ার কু-লী সব গগন ছুঁয়েছে,

তার সাথে পাল্লা দিয়ে ওড়ে মানুষ- বোকাট্টা ঘুড়ি,

ধোঁয়ার স্তম্ভের চারপাশে চলে মু-ুহীন মানুষের

অশেষ তওয়াফ উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে-

সুফিনৃত্যে নিমগ্ন সামান্য লোক

অসামান্য এবাদতের ভঙ্গিতে...

শত শাদা পুঁটলির ভেতরে

শায়িত নিস্তব্ধ শিশু-

কারও হাত কারও পা কারওবা মাথাই উড়েছে লাল আসমানে,

যেন সব ভলিবল নেতানিয়াহুর।

গর্জমান বিমানের ফুঁয়ে ধ্বসে পড়ে

সুউচ্চ দালানগুলো, বালুকাবেলার ঘর-

কালের পাউডার...

আমার মেয়ের কসম
মোহাম্মদ হোসাইন

কাঁদতে কাঁদতে আমার ছোট্ট শিশুটি ফিলিস্তিনের বিধ্বস্ত মাটির কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছে। তার মায়ের ছিন্নভিন্ন দেহের পাশে। আমার মেয়ের নাম ফাতেমা। তার দাদু খুব আদর করে এই নাম রেখেছিল। ফাতেমা মানে বিরত রাখা বা দুধ ছাড়ানো। ফাতেমা এখন ঘুমুচ্ছে। গতকালও সে গম খেতে দৌড়াতে চেয়েছে, হাওয়ার পিছন পিছন, প্রজাপতি কিংবা ভেড়ার পিছন পিছন।

এখন সে ঘুমুচ্ছে...ঘুমুচ্ছে কি না ঠিক বলতে পারব না

তবে সে জাগছে না। তার চোখগুলো খোলা আকাশের দিকে, মেঘের দিকে, তারার দিকে চেয়ে আছে যেন দেব শিশু যেন সে সমগ্র পৃথিবী... পৃথিবী মানে ফাতেমা...জগতের সমস্ত নির্মমতার চিহ্ন।

একটু আগে ফাতেমার মা পৃথিবীর গরাদ ভেঙে জালিমের কারাগার ভেঙে ঊর্ধ্ব আকাশের দিকে উড়ে গেছে- পাষ- ইসরাইলীদের বোমার আঘাতে। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার ছিন্নভিন্ন দেহ, তার রক্ত, পাঁজর, অস্থি-মজ্জাসমেত ফিলিস্তিনের মমতা মাখা গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল, রক্তশোভিত ফুলেল সৌরভ...

আমি এখনো বেঁচে আছি।

ফিলিস্তিন আমার জন্মভূমি। ফাতেমা আমার একমাত্র মেয়ে। গাজা কিংবা ফিলিস্তিনই শেষ কথা নয়।

আমার মেয়ের কসম পবিত্র জেরুজালেমের কসম

আমি আমার দেহকে ছড়িয়ে দেব ফিনিক্স পাখির মতো সমস্ত ধ্বংসের বিরুদ্ধে...!

অশ্রুত এই ক্রন্দন
তাপস গায়েন

আহা কী যে এক উন্মাদনা

রক্তের মধ্যে রঙের উন্মেষ, তার আন্দোলিত উদ্ভাস

সুর এসে তাকে ভাঙ্গে, তাকে করে ব্যাপ্ত

কে যে নাচে, আর কী যে নেচে ওঠে

দুপুর ভেসে গেছে দিনান্তে, আর ভাঙ্গা আয়নায়

প্রতিফলিত জগৎ ভেসে যায় অনন্ত জোয়ারে

এই মধ্যরাতে কে একাকী- তুমি না তুমিহীন এই জগৎ

কেউ আর তোমার নাম ধরে ডাকে না

অনেক নক্ষত্রের ভিড়ে তুমি কি আর এক নক্ষত্র

এখনো রয়ে গেছে অনেক অসমাপ্ত যুদ্ধ

মৃত শিশুর মুষ্টিবদ্ধ হাত-

তুমিহীন এই গ্রহ ভেসে যায় অদৃশ্যমান এই নক্ষত্র বাতাসে...

হারানো বিজ্ঞপ্তি
ভাগ্যধন বড়ুয়া

শিশু নেই, ঘর নেই, চেনা মানচিত্র উধাও

চারিদিকে ধোঁয়া আর রক্তের গন্ধ

শ্বাস নিতে পারছি না,

মা গো... পুড়ে যাচ্ছি...

কেউ শোনে না ক্ষীণ ডাক!

বোমার আঘাতে বোবা ক্ষণ, শোকের স্তূপ!

কান্না-হাহাকার, পোড়া ছাই, জ্বলন্ত জনপদ

কোথায় আশ্রয়? কার কাছে যাই? ছিন্নভিন্ন স্বপ্ন

অন্ধকারে মিসাইল আলো; দানবের ধনুক

বুকে চাপ, বেঁচে আছি কি?

শরণার্থী মন প্রিয়জন খোঁজে,

অথচ খবর আসে শুধু হারানোর...

দারবিশের স্বপ্ন
মাহফুজ আল-হোসেন

কালরাতে স্বপ্নে দারবিশকে দেখলাম

রক্তের নদী সাঁতরে রিটার বাড়ির দিকে যেতে;

ওদের মাঝখানে গাজায় দাঁড়িয়ে থাকা গালিল এইস্ অ্যাসল্ট রাইফেলটা নদীটিকে মুহূর্তেই মহাসাগর বানিয়ে দিলো।

আর তারই পাড় ঘেঁষে ক’দিন আগে রাফায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স কনভয়ের মধ্যে পড়ে থাকা কয়েক জোড়া কানের দুল থেকে মাথা তোলা এক আজদাহা অজগর তরু দত্তের ক্যাসুয়ারিনার মতোই স্মৃতিকাতরতায় ভুগছে!

সেই সরীসৃপ এখন মুক্তি উপত্যকার দ্বারপ্রান্তে;

আর দারবিশকে নাকি হিস হিস শব্দে জানিয়ে দিয়েছে প্রণয়ী রিটার কাছে পাওয়া বিষাক্ত প্রতিটি চুমুই সে অবধারিতভাবে ফিরিয়ে দেবে এডওয়ার্ড সাঈদীয় অপরতায়...

স্টপ জেনোসাইড
ওবায়েদ আকাশ

স্টপ জেনোসাইড: বাস্তুচ্যুত নারী সন্তান প্রসব করছে

স্টপ জেনোসাইড: মা তাঁর নবজাত খুঁজছে

স্টপ জেনোসাইড: অগণ্য সদ্যোজাত মাতৃস্তন খাচ্ছে

স্টপ জেনোসাইড: শিশুটি মাতৃক্রোড়ে নিভৃতে আছে

স্টপ জেনোসাইড: বাবার আতঙ্ক ফুঁড়ে পৃথিবী ঘামছে

স্টপ জেনোসাইড: বৃদ্ধটি ইতিউতি আশ্রয় খুঁজছে

স্টপ জেনোসাইড: কিশোরটি খেলার মাঠ দাবড়ে বেড়াচ্ছে

স্টপ জেনোসাইড: যুবকটি বিভোর স্বপ্নে আগামী দেখছে

স্টপ জেনোসাইড: সদ্য পরিণীতা মধুচন্দ্রিমার প্রহর গুনছে

স্টপ জেনোসাইড: কৃষক দুহাতে ফসল তুলছে

স্টপ সেনোসাইড: শ্রমিক কপালের ঘাম মুছছে

স্টপ জেনোসাইড: ¯্রষ্টার সৃষ্টিতে পৃথিবী ভরছে

স্টপ জেনোসাইড: বিজ্ঞানীর চোখে বিস্ময় জাগছে

স্টপ জেনোসাইড: কবির কলমে কবিতা নামছে

স্টপ জেনোসাইড: পিতামাতাশিক্ষক মানুষ গড়ছে

স্টপ জেনোসাইড: বোমার আঘাতে উড়ছে হাত-পা-মগজ

স্টপ সেনোসাইড: সারি সারি মানুষ আশ্রয় চাচ্ছে

স্টপ সেনোসাইড: রক্তাক্ত দেহ শুশ্রƒষা চাইছে

স্টপ সেনোসাইড: বুভুক্ষু মুখ অন্ন খুঁজছে

স্টপ সেনোসাইড: মুমূর্ষু প্রাণ অক্সিজেন চাচ্ছে

স্টপ জেনোসাইড: হত্যার বিপরীতে মানুষ কাঁদছে

স্টপ জেনোসাইড: অসহায় প্রাণ ক্রন্দন করছে

স্টপ জেনোসাইড: আকাশে লাশের গন্ধ ভাসছে

স্টপ জেনোসাইড: ঊষর জমিনে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে

স্টপ সেনোসাইড: ... ... ...

স্টপ সেনোসাইড: ... ... ...

স্টপ সেনোসাইড: ... ... ...

মাহমুদ দারবিশের চশমা
চয়ন শায়েরী

একটা শিশুর মুখে ঝরা শিউলির মৃত্যুস্বাদ- এক দুই তিন চার... হাজারো হাজার- চারিপাশে জাতিগত নির্মূলের বোমারু অসুর!

-আল-কুদস কতদূর?

একটা আশার পিছে পুরোটা জীবন- আহা! এই আইডেনটিটি, স্বদেশের মাটির ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠা- ওই আশা আশাভঙ্গে কবর খুঁড়ছে;

এই আইডেনটিটি ক্রাইসিসে- আল-কুদস আরও দূরে সরে যাচ্ছে;

মৃত্যুর মিছিল বড় হতে হতে আকাশে উড়ছে বোমার আঘাতে- বাতাসে বারুদ আর অসুরের ঘ্রাণ- রক্তবীজে আমিও ফিলিস্তিনি!

মাহমুদ দারবিশের কবিতার চশমাটা খুঁজি- চশমার গোল গোল কাচের ভিতর দিয়ে দেখি: কবিতা লেখার জন্য যে-শিশুটি আদালতে গিয়েছিল, সে-ও পথ খুঁজে ফেরে ওই গোল চশমাটা পরে-

আল-কুদস, কতদূর, আর কতদূর!

একদিন স্বাধীন হবে ফিলিস্তিন
রকিবুল হাসান

আমার জন্ম কোথায়-পৃথিবী কোথায়-কতদূর!

পৃথিবীর মানুষেরা দেখতে কেমন

আদৌ কি মানুষ আছে এই পৃথিবীতে

 

আমি-তুমি ফিলিস্তিনি-আমাকে-তোমাকে

দিনরাত হত্যা করা হচ্ছে-

খ-বিখ- করছে

বুক জুড়ে অগ্নিকু--পোড়া গন্ধ-বিভীষিকাময়

 

মানুষের কি হাত থাকে? শরীর-পা থাকে? বুক থাকে?

ক্ষুধা ও যন্ত্রণা থাকে? মৃত্যু ও আর্তনাদ থাকে?

আমি ফিলিস্তিনি-কোন গ্রহে জন্ম আমাদের

ফিলিস্তিন ও পৃথিবী অনেক দূরের কোনো গ্রহ?

 

আমরা হয়তো আর খাবারের জন্য দাঁড়াবো না-

পানির জন্যও নয়।

রক্তাক্ত চোখের জলে তাকাবো না করুণ আর্তিতে!

তবুুও শেষ হবে না- ফিলিস্তিন।

নতুন রক্তের লালে লাল হবে ফিলিস্তিন

পৃথিবী, তোমার বুকে একদিন স^াধীনতা পাবে

রক্তলাল ফিলিস্তিন।

 

তখন দেখবে

আমরা এক গ্রহের মানুষ ছিলাম-

শুধু আর আমাদের সন্তানেরা ফিরবে না ঘরে।

জলপাইয়ের নতুন মওসুম
জুনান নাশিত

গাজার যে ভূমিতে তোমাদের নির্মূল করা হচ্ছে

সে ভূমির কসম

আমরা তোমাদের ভুলবো না

যে পিতার কাঁধে কন্যার মস্তকবিহীন লাশ

রক্তাক্ত যে শিশুটি ভয়ার্ত কান্নায় কেঁপে কেঁপে

ভাঁপিয়ে তুলছে রাত

সে শিশু, সে পিতা স্বপ্নের ভেতর এসে তাড়া দিচ্ছে আমাদের

আমরা ঘৃণার আগুন বুকে নিয়ে জেগে উঠি

বিকৃত, ভগ্ন বিশ্ব মানবতার ঢালে যে মিথ্যার আহাজারি

পাথরে বাঁধা হাত নিয়ে তার থেকে ছিটকে সরিয়ে ফেলি নিজেদের

ভাবি, পাথরগুলো গাজা ভাসিয়ে নেয়া টকটকে রক্তের সমুদ্র শুষে নিক

যে সমুদ্র দেখে

আমরা হাহাকার করি, আর্তনাদে ভরিয়ে দেই চরাচর।

দাবার ঘুঁটিতে তা দেয়া সকল বিশ্ব নেতাকে আমরা ঘৃণা করি

ভালোবাসি তোমাদের।

ওরা ভাবে, তোমরাতো মানুষ নও

যোগ্য নও এ ভূমির

পিতৃভূমি থেকে বিতাড়িত

এই তোমরাই তো আমাদের ভাই, আমাদের বোন, পিতা ও মাতা

অন্তহীন নাকবায় কেবলি তোমরা অদৃষ্টে জড়িয়ে যাও

নিজ ভূমেই ঘটে তোমাদের পরবাস।

তোমাদের রক্তাক্ত মুখ, সাদা কাফনে ঢাকা লাশের সারি

আমাদের ভেতর ঝড় তোলে

শীতল বাতাসেও আমরা উত্তপ্ত

ক্ষোভে আর ক্ষুব্ধতায় বিদীর্ণ হই।

ভাবি, একঝাঁক রক্তের সিঁড়ি বেয়ে

গাজার উঠোনে কবে নামবে রঙধনু বিকেল?

সূর্যাস্তের লাল আভায় কবে চিকচিক করবে

জলপাইয়ের নতুন মওসুম?

পরিস্থিতি
পিয়াস মজিদ

তুলার বালিশে শুয়ে

ঘুমাতে ঘুমাতে

স্বপ্নের হামলা

আমার বিছানা

এটা কি ঢাকা?

নাকি এই দুনিয়া

রক্তের বালিশে

শুয়ে থাকা গাজা!

গাজা
সৌম্য সালেক

লক্ষ লক্ষ পবিত্র পদচিহ্নের স্মৃতি বিজড়িত

লক্ষ-কোটি পুণ্যার্থীর প্রার্থনায় সিক্ত

হে ব্যথিত নগরী

দেখো, পৃথিবীর হৃদয়ে তোমার আসন

তুমি যেন বনি-ইসরাইলের প্রিয়তম পুত্র ইউসুফ

যার প্রতি মানুষের সংহতি দেখে, ঈর্ষার আগুনে পুড়ছে বৈমাত্রেয় বামনেরা!

নির্ভীক যুবাদের হে নির্ঘুম নগরী

দেখো তোমার যন্ত্রণায়, তোমার সংকটে, সীমাহীন সংগ্রামে

তোমার অনিদ্রায়, তোমার চিৎকারে

দিকে দিকে কাঁদছে মানুষ

প্রতিটি নির্মল হৃদয় তোমার মুক্তির প্রত্যাশায় প্রহর গুনছে

তোমার জন্য আরাধনায় ডুবে গম্ভীর হয়ে থাকে প্রতিটি সকাল!

হে পৃথিবী, তুমি শান্তি ও স্থিরতার কথা ভেবে হয়রান

অথচ তুমি তোমার হৃদয়ের দিকে তাকাচ্ছ না

দৃষ্টিপাত করছ না হৃদয়ের অসুখের দিকে!

আমাকে বলো, হৃদয়ের জখম না সারিয়ে

কিংবা হৃদয়কে অভুক্ত রেখে কেউ কি শান্তিতে থাকতে পারে?

গোলাপের ক্রন্দন
আদিত্য নজরুল

শাখা থেকে

একটি গোলাপ কেউ কেটে নিতে

উদ্যত হতেই

হাসিমুখে গোলাপটি এগিয়ে দিলো বাহু

অন্য একটি শাখায়

ফুটে আছে যে গোলাপ-

বিষণœ সে,

অশ্রু দিয়ে অলঙ্কৃত চোখ তার!

লোকটি জানতে চাইলো

‘তোমাদের পারস্পরিক

বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি কি?’

প্রথম গোলাপ টগবগিয়ে বললো,

‘ফিলিস্তিনি শিশুদের সহযাত্রী হবার

আনন্দে হাসছি’,

অন্য গোলাপটি বললো,

‘পৃথিবীতে থেকেই আমাকে দেখতে হবে

গোলাপ গোলাপ

শিশুদের মৃত্যু

এই অসহায়ত্বই আমাকে কাঁদাচ্ছে!’

শুভ্র বসনে শুয়ে আছে সমুদ্র গর্জন
শেলী সেনগুপ্তা

কে বললো

ফিলিস্তিনি শিশুদের এতো ন্যায়নিষ্ঠ হতে?

কী চমৎকার

সারি সারি শুয়ে আছে

শুভ্র বসনে! নেই কোনো কলকাকলি, চঞ্চলতা

এ মর্মান্তিক ঘুমিয়ে থাকা কি ঘুম ভাঙ্গাবে

বিশ্বের,

জাতিসংঘ-মহাসচিবের,

নাকি

পৃথিবী পুষ্পহীন হবে, সব ফুল ঝরে যাবে

গাজা ও রাফাহ দিকে চেয়ে

ফুলেরাও কি শিখে নিয়েছে

ফিলিস্তিনি শিশুর ন্যায়নিষ্ঠতা!

থোকা থোকা ফুল
ফরিদা রানু

সোনালু বা জারুল, দোলন চাঁপা অথবা পারুল

থোকায় থোকায় ফুটে আছে যেন শাখায় বকুল

যে ভাবেই আমি দেখি না কেন?

যে নামেই তোদের ডাকি না কেন?

তোরা আমার সন্তান

তোদের নিয়ে সৃষ্টি হবে নতুন উপাখ্যান।

চোখ ঝলসানো দৃশ্য

আর নরম ফুলের স্পর্শ।

এই বিরানভূমিতে গোলাপের চেয়েও তীব্র সুবাস তোদের

শত ফুলের দলে বান বয়েছে তোদের রক্তের ¯্রােতের,

সাদা সাদা কাফনে মোড়ানো কচি কচি শরীর

আমরা দেখছি,শুনছি কিন্তু আমরা অন্ধ ও বধির।

অবুঝ বোনের খণ্ড খণ্ড শরীর পলিথিনে শিরনির মতো তুলছে

বিস্ফোরণের সাথে হাজার হাজার মানুষ রডের সাথে ঝুলছে

আর নারকীয়তায়,পাশবিকতায়

ছাপিয়ে গেছে পঙ্কিলতম অধ্যায়।

নব্বই শতাংশ ধ্বংস আবাস্থল এখন রাফায়

দফায় দফায় চুক্তি ভেঙে বোমা ফাটছে গাজায়।

দখলদারিত্ব আর অপরাধীনতার শিকল পড়িয়ে

রাখতে পারতে না কেও ইতিহাস থামিয়ে।

পারবে না কারও ভালবাসা পেতে

ডুবে যাবে একদিন অমানিশার রাতে,

প্রতিটি ক্রিয়ার বিপরীতে যেমন প্রতিক্রিয়া থাকে

তেমনি শতাব্দী শেষে নতুন করে নতুন কিছু আঁকে।

ভুলে গেলে চলবে না যুদ্ধ কখনও সমাধান নয়

যুদ্ধ শেষ হবে পরাজয় অথবা জয়

তবে দিন শেষে শুধু থাকে রক্তক্ষয়

মানবিকতা ও সম্পদের অবক্ষয়।

back to top