alt

ফিলিস্তিনের তিনটি কবিতা

অনুবাদ : রাকিবুল রকি

: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

পাসপোর্ট
মাহমুদ দারবিশ
ছায়ায় ওরা আমাকে চিনতে পারেনি

যা পাসপোর্ট থেকে মুছে নিয়েছে আমার রঙ

কোনো পর্যটক যেমন ছবি সংগ্রহ করতে ভালোবাসে

ওদের কাছে আমার ক্ষত ছিল তেমনই এক প্রদর্শনী

ওরা চিনতে পারেনি আমাকে,

আহ... চলে যেও না

আমার হাতের তালু রোদশূন্য

কেননা গাছেরা আমাকে চেনে

বৃষ্টির সমস্ত সুর আমাকে চেনে

আমাকে ছেড়ে যেও না পা-ুর চাঁদের মতো!

সমস্ত পাখি যারা অনুসরণ করেছিল আমার হাতের তালু থেকে

দূরবর্তী বিমানবন্দরে দরোজা

সমস্ত গমের ক্ষেম

সমস্ত কারাগার

সমস্ত সাদা সমাধিফলক

সমস্ত কাঁটাতারে ঘেরা সীমানা

বাতাসে দুলতে থাকা সমস্ত রুমাল

আমার সঙ্গে থাকা

সমস্ত চোখ

ওরা মুছে দিয়েছে আমার পাসপোর্ট থেকে

কেড়ে নিতে চাও আমার নাম ও পরিচিতি?

মাটিতে পুষ্ট হওয়া আমার হাত?

আজ জ্যাকবের চিৎকারে

ভরে উঠেছে আকাশ:

আমাকে আর গিনিপিগ বানিও না!

হে ভদ্রমহোদয়গণ, নবীগণ,

গাছের কাছে তাদের নাম জিজ্ঞেস করো না

জিজ্ঞেস করো না উপত্যকাকে কে তাদের মা

আমার কপাল থেকে বিচ্ছুরিত হয় আলোর আলোর তরবারি

এবং আমার আঙুল থেকে বেরিয়ে আসা ঝর্নাই নদীর জল

সমস্ত মানুষের হৃদয়ই আমার পরিচয়

তাই নিয়ে যেতে পারো আমার পাসপোর্ট!

[মাহমুদ দারবিশ ১৯৪১ সালের ১৩ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি।]

আমরা আরও ভালোভাবে মৃত্যু প্রাপ্য ছিলাম
মোসাদ আবু তোহা
আমরা আরও ভালোভাবে মৃত্যু প্রাপ্য ছিলাম।

আমাদের দেহগুলো বিকৃত এবং দলা পাকানো,

বুলেট এবং শার্পনেল দিয়ে নকশা করা।

রেডিও এবং টিভিতে

আমাদের নাম ভুলভাবে উচ্চারণ করা হয়।

আমাদের ভবনের দেয়ালে লাগানো আমাদের ছবি

বিবর্ণ এবং ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।

মুছে গেছে কবরের ফলকে লেখা শিলালিপি

ঢাকা পড়ে গেছে পাখি এবং সরীসৃপের বিষ্ঠায়।

আমাদের কবরে যে গাছ ছায়া দেয়

কেউ জল দেয় না তার গোড়ায়।

করাল রৌদ্র ঢেকে রেখেছে

আমাদের পচনশীল দেহ।

[মোসাদ আবু তোহা ১৭ নভেম্বর, ১৯৯২ সালে ফিলিস্তিনের আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। ফিলিস্তিনের এই কবি একাধারে লেখক, প-িত এবং গ্রন্থাগারিক।]

বন্ধ করো শিল্প নিয়ে তোমার বক্তৃতা আমাদের মানুষ মারা যাচ্ছে
নুর হিন্দি
ঔপনিবেশিকেরা ফুল নিয়ে লেখে।

আমি তোমাদের বলবো ডেইজি ফোটার কয়েক সেকেন্ড আগে

ইসরায়েলি ট্যাংকের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারা শিশুদের কথা।

আমিও হতে চাই সেই কবিদের মতো যারা চাঁদ নিয়ে ভাবে।

কারাগার এবং

জেলখানা থেকে চাঁদ দেখতে পায় না ফিলিস্তিনিরা।

চাঁদ অনেক সুন্দর।

তারচেয়ে বেশি সুন্দর ফুলদল।

যখন আমার মন খারাপ হয়, মৃত বাবার জন্যে ফুল তুলি।

সারাদিন তিনি আল জাজিরা দেখতেন।

আমি চাই জেসিকা হ্যাপি রামাদান লিখে টেক্সট করা বন্ধ করুক।

জানি, আমি একজন আমেরিকান কারণ যখন রুমের মধ্যে হাঁটি

তখন কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে।

মৃত্যু সেই সব কবিদের কাছেই রূপক যারা ভাবে ভূত

শব্দ নিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা করে।

যখন আমি মারা যাবো, কসম, চিরকাল তোমাদের তাড়িয়ে বেড়াবো।

একদিন, আমিও ফুল নিয়ে এমন ভাবে লিখব যেন আমরাই এগুলোর মালিক।

[নুর হিন্দি একজন ফিলিস্তিন-আমেরিকান কবি এবং রিপোর্টার। তাঁর প্রথম কাব্য ‘ডিয়ার গড, ডিয়ার বোনস, ডিয়ার ইয়োলো’ প্রকাশিত হয় ২০২২ সালে।]

ছবি

দিনু বিল্লাহ: জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে

জেলার সিরিজ কবিতা

ছবি

লাল লুঙ্গি

সাময়িকী কবিতা

ছবি

নির্মলেন্দু গুণের রাজনৈতিক বলয় অতিক্রমের ক্ষমতা

ছবি

কেরাসিন বাত্তি ও লালচুলা মেয়েটি

ছবি

তাঁর সমকালীনদের চোখে

ছবি

নিজের মতো করেই সঠিক পথটি বেছে নিতে হবে

ছবি

সুকান্ত ভট্টাচার্য: বহুচর্চিত, বহুপঠিত এক অনন্য কবি

ছবি

চিত্রাঙ্গদা: দ্বৈত সত্তার শিল্পস্মারক

ছবি

খালেদ হামিদীর দৌত্যে ওরহান পামুক

সাময়িকী কবিতা

ছবি

মেঘলা আকাশ বৃষ্টি

ছবি

স্মৃতি ভদ্র

ছবি

হৃদয়রেখা

ছবি

সুরমা বুজি অথবা কাচপোকা

ছবি

শ্রাবণের জোছনায় হেসেছিল নার্গিস

ছবি

যোগাযোগ

ছবি

বাংলাদেশের স্বাপ্নিক কবি নজরুল

ছবি

ইলিয়াসের আশ্চর্য নিরীক্ষা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

মাটি ও মানুষের কথক

ছবি

অনাবিল প্রাচুর্যে ঋদ্ধ নজরুল প্রতিভা

ছবি

নজরুল: চির-বিস্ময়

ছবি

জীবনের সাথে সংযোগ ঘটল কই

পোয়েমস দ্যাট কেম টু মি

ছবি

লালন ও রবীন্দ্রনাথ অন্তর্জগতের আলাপন

ছবি

বংশধারা

ছবি

অনন্ত নক্ষত্র বিথিতে এক নির্বাসিত কবির যাত্রা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

তিন প্রহরের শকুন

ছবি

ইলিয়াসের আশ্চর্য নিরীক্ষা

ছবি

যতীন সরকার : সাম্যবাদের চেতনায় একজীবন

ছবি

‘প্রান্তিক মানুষের হারানোর কিছু নেই’

ছবি

ভাঙা ছাদ

ছবি

চন্দ্রাবতী : মধ্যযুগের প্রথম মহিলা কবি

tab

literature » samoeky

ফিলিস্তিনের তিনটি কবিতা

অনুবাদ : রাকিবুল রকি

বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

পাসপোর্ট
মাহমুদ দারবিশ
ছায়ায় ওরা আমাকে চিনতে পারেনি

যা পাসপোর্ট থেকে মুছে নিয়েছে আমার রঙ

কোনো পর্যটক যেমন ছবি সংগ্রহ করতে ভালোবাসে

ওদের কাছে আমার ক্ষত ছিল তেমনই এক প্রদর্শনী

ওরা চিনতে পারেনি আমাকে,

আহ... চলে যেও না

আমার হাতের তালু রোদশূন্য

কেননা গাছেরা আমাকে চেনে

বৃষ্টির সমস্ত সুর আমাকে চেনে

আমাকে ছেড়ে যেও না পা-ুর চাঁদের মতো!

সমস্ত পাখি যারা অনুসরণ করেছিল আমার হাতের তালু থেকে

দূরবর্তী বিমানবন্দরে দরোজা

সমস্ত গমের ক্ষেম

সমস্ত কারাগার

সমস্ত সাদা সমাধিফলক

সমস্ত কাঁটাতারে ঘেরা সীমানা

বাতাসে দুলতে থাকা সমস্ত রুমাল

আমার সঙ্গে থাকা

সমস্ত চোখ

ওরা মুছে দিয়েছে আমার পাসপোর্ট থেকে

কেড়ে নিতে চাও আমার নাম ও পরিচিতি?

মাটিতে পুষ্ট হওয়া আমার হাত?

আজ জ্যাকবের চিৎকারে

ভরে উঠেছে আকাশ:

আমাকে আর গিনিপিগ বানিও না!

হে ভদ্রমহোদয়গণ, নবীগণ,

গাছের কাছে তাদের নাম জিজ্ঞেস করো না

জিজ্ঞেস করো না উপত্যকাকে কে তাদের মা

আমার কপাল থেকে বিচ্ছুরিত হয় আলোর আলোর তরবারি

এবং আমার আঙুল থেকে বেরিয়ে আসা ঝর্নাই নদীর জল

সমস্ত মানুষের হৃদয়ই আমার পরিচয়

তাই নিয়ে যেতে পারো আমার পাসপোর্ট!

[মাহমুদ দারবিশ ১৯৪১ সালের ১৩ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি।]

আমরা আরও ভালোভাবে মৃত্যু প্রাপ্য ছিলাম
মোসাদ আবু তোহা
আমরা আরও ভালোভাবে মৃত্যু প্রাপ্য ছিলাম।

আমাদের দেহগুলো বিকৃত এবং দলা পাকানো,

বুলেট এবং শার্পনেল দিয়ে নকশা করা।

রেডিও এবং টিভিতে

আমাদের নাম ভুলভাবে উচ্চারণ করা হয়।

আমাদের ভবনের দেয়ালে লাগানো আমাদের ছবি

বিবর্ণ এবং ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।

মুছে গেছে কবরের ফলকে লেখা শিলালিপি

ঢাকা পড়ে গেছে পাখি এবং সরীসৃপের বিষ্ঠায়।

আমাদের কবরে যে গাছ ছায়া দেয়

কেউ জল দেয় না তার গোড়ায়।

করাল রৌদ্র ঢেকে রেখেছে

আমাদের পচনশীল দেহ।

[মোসাদ আবু তোহা ১৭ নভেম্বর, ১৯৯২ সালে ফিলিস্তিনের আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। ফিলিস্তিনের এই কবি একাধারে লেখক, প-িত এবং গ্রন্থাগারিক।]

বন্ধ করো শিল্প নিয়ে তোমার বক্তৃতা আমাদের মানুষ মারা যাচ্ছে
নুর হিন্দি
ঔপনিবেশিকেরা ফুল নিয়ে লেখে।

আমি তোমাদের বলবো ডেইজি ফোটার কয়েক সেকেন্ড আগে

ইসরায়েলি ট্যাংকের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারা শিশুদের কথা।

আমিও হতে চাই সেই কবিদের মতো যারা চাঁদ নিয়ে ভাবে।

কারাগার এবং

জেলখানা থেকে চাঁদ দেখতে পায় না ফিলিস্তিনিরা।

চাঁদ অনেক সুন্দর।

তারচেয়ে বেশি সুন্দর ফুলদল।

যখন আমার মন খারাপ হয়, মৃত বাবার জন্যে ফুল তুলি।

সারাদিন তিনি আল জাজিরা দেখতেন।

আমি চাই জেসিকা হ্যাপি রামাদান লিখে টেক্সট করা বন্ধ করুক।

জানি, আমি একজন আমেরিকান কারণ যখন রুমের মধ্যে হাঁটি

তখন কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে।

মৃত্যু সেই সব কবিদের কাছেই রূপক যারা ভাবে ভূত

শব্দ নিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা করে।

যখন আমি মারা যাবো, কসম, চিরকাল তোমাদের তাড়িয়ে বেড়াবো।

একদিন, আমিও ফুল নিয়ে এমন ভাবে লিখব যেন আমরাই এগুলোর মালিক।

[নুর হিন্দি একজন ফিলিস্তিন-আমেরিকান কবি এবং রিপোর্টার। তাঁর প্রথম কাব্য ‘ডিয়ার গড, ডিয়ার বোনস, ডিয়ার ইয়োলো’ প্রকাশিত হয় ২০২২ সালে।]

back to top