অনুবাদ : রাকিবুল রকি
পাসপোর্ট
মাহমুদ দারবিশ
ছায়ায় ওরা আমাকে চিনতে পারেনি
যা পাসপোর্ট থেকে মুছে নিয়েছে আমার রঙ
কোনো পর্যটক যেমন ছবি সংগ্রহ করতে ভালোবাসে
ওদের কাছে আমার ক্ষত ছিল তেমনই এক প্রদর্শনী
ওরা চিনতে পারেনি আমাকে,
আহ... চলে যেও না
আমার হাতের তালু রোদশূন্য
কেননা গাছেরা আমাকে চেনে
বৃষ্টির সমস্ত সুর আমাকে চেনে
আমাকে ছেড়ে যেও না পা-ুর চাঁদের মতো!
সমস্ত পাখি যারা অনুসরণ করেছিল আমার হাতের তালু থেকে
দূরবর্তী বিমানবন্দরে দরোজা
সমস্ত গমের ক্ষেম
সমস্ত কারাগার
সমস্ত সাদা সমাধিফলক
সমস্ত কাঁটাতারে ঘেরা সীমানা
বাতাসে দুলতে থাকা সমস্ত রুমাল
আমার সঙ্গে থাকা
সমস্ত চোখ
ওরা মুছে দিয়েছে আমার পাসপোর্ট থেকে
কেড়ে নিতে চাও আমার নাম ও পরিচিতি?
মাটিতে পুষ্ট হওয়া আমার হাত?
আজ জ্যাকবের চিৎকারে
ভরে উঠেছে আকাশ:
আমাকে আর গিনিপিগ বানিও না!
হে ভদ্রমহোদয়গণ, নবীগণ,
গাছের কাছে তাদের নাম জিজ্ঞেস করো না
জিজ্ঞেস করো না উপত্যকাকে কে তাদের মা
আমার কপাল থেকে বিচ্ছুরিত হয় আলোর আলোর তরবারি
এবং আমার আঙুল থেকে বেরিয়ে আসা ঝর্নাই নদীর জল
সমস্ত মানুষের হৃদয়ই আমার পরিচয়
তাই নিয়ে যেতে পারো আমার পাসপোর্ট!
[মাহমুদ দারবিশ ১৯৪১ সালের ১৩ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি।]
আমরা আরও ভালোভাবে মৃত্যু প্রাপ্য ছিলাম
মোসাদ আবু তোহা
আমরা আরও ভালোভাবে মৃত্যু প্রাপ্য ছিলাম।
আমাদের দেহগুলো বিকৃত এবং দলা পাকানো,
বুলেট এবং শার্পনেল দিয়ে নকশা করা।
রেডিও এবং টিভিতে
আমাদের নাম ভুলভাবে উচ্চারণ করা হয়।
আমাদের ভবনের দেয়ালে লাগানো আমাদের ছবি
বিবর্ণ এবং ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
মুছে গেছে কবরের ফলকে লেখা শিলালিপি
ঢাকা পড়ে গেছে পাখি এবং সরীসৃপের বিষ্ঠায়।
আমাদের কবরে যে গাছ ছায়া দেয়
কেউ জল দেয় না তার গোড়ায়।
করাল রৌদ্র ঢেকে রেখেছে
আমাদের পচনশীল দেহ।
[মোসাদ আবু তোহা ১৭ নভেম্বর, ১৯৯২ সালে ফিলিস্তিনের আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। ফিলিস্তিনের এই কবি একাধারে লেখক, প-িত এবং গ্রন্থাগারিক।]
বন্ধ করো শিল্প নিয়ে তোমার বক্তৃতা আমাদের মানুষ মারা যাচ্ছে
নুর হিন্দি
ঔপনিবেশিকেরা ফুল নিয়ে লেখে।
আমি তোমাদের বলবো ডেইজি ফোটার কয়েক সেকেন্ড আগে
ইসরায়েলি ট্যাংকের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারা শিশুদের কথা।
আমিও হতে চাই সেই কবিদের মতো যারা চাঁদ নিয়ে ভাবে।
কারাগার এবং
জেলখানা থেকে চাঁদ দেখতে পায় না ফিলিস্তিনিরা।
চাঁদ অনেক সুন্দর।
তারচেয়ে বেশি সুন্দর ফুলদল।
যখন আমার মন খারাপ হয়, মৃত বাবার জন্যে ফুল তুলি।
সারাদিন তিনি আল জাজিরা দেখতেন।
আমি চাই জেসিকা হ্যাপি রামাদান লিখে টেক্সট করা বন্ধ করুক।
জানি, আমি একজন আমেরিকান কারণ যখন রুমের মধ্যে হাঁটি
তখন কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে।
মৃত্যু সেই সব কবিদের কাছেই রূপক যারা ভাবে ভূত
শব্দ নিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা করে।
যখন আমি মারা যাবো, কসম, চিরকাল তোমাদের তাড়িয়ে বেড়াবো।
একদিন, আমিও ফুল নিয়ে এমন ভাবে লিখব যেন আমরাই এগুলোর মালিক।
[নুর হিন্দি একজন ফিলিস্তিন-আমেরিকান কবি এবং রিপোর্টার। তাঁর প্রথম কাব্য ‘ডিয়ার গড, ডিয়ার বোনস, ডিয়ার ইয়োলো’ প্রকাশিত হয় ২০২২ সালে।]
অনুবাদ : রাকিবুল রকি
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
পাসপোর্ট
মাহমুদ দারবিশ
ছায়ায় ওরা আমাকে চিনতে পারেনি
যা পাসপোর্ট থেকে মুছে নিয়েছে আমার রঙ
কোনো পর্যটক যেমন ছবি সংগ্রহ করতে ভালোবাসে
ওদের কাছে আমার ক্ষত ছিল তেমনই এক প্রদর্শনী
ওরা চিনতে পারেনি আমাকে,
আহ... চলে যেও না
আমার হাতের তালু রোদশূন্য
কেননা গাছেরা আমাকে চেনে
বৃষ্টির সমস্ত সুর আমাকে চেনে
আমাকে ছেড়ে যেও না পা-ুর চাঁদের মতো!
সমস্ত পাখি যারা অনুসরণ করেছিল আমার হাতের তালু থেকে
দূরবর্তী বিমানবন্দরে দরোজা
সমস্ত গমের ক্ষেম
সমস্ত কারাগার
সমস্ত সাদা সমাধিফলক
সমস্ত কাঁটাতারে ঘেরা সীমানা
বাতাসে দুলতে থাকা সমস্ত রুমাল
আমার সঙ্গে থাকা
সমস্ত চোখ
ওরা মুছে দিয়েছে আমার পাসপোর্ট থেকে
কেড়ে নিতে চাও আমার নাম ও পরিচিতি?
মাটিতে পুষ্ট হওয়া আমার হাত?
আজ জ্যাকবের চিৎকারে
ভরে উঠেছে আকাশ:
আমাকে আর গিনিপিগ বানিও না!
হে ভদ্রমহোদয়গণ, নবীগণ,
গাছের কাছে তাদের নাম জিজ্ঞেস করো না
জিজ্ঞেস করো না উপত্যকাকে কে তাদের মা
আমার কপাল থেকে বিচ্ছুরিত হয় আলোর আলোর তরবারি
এবং আমার আঙুল থেকে বেরিয়ে আসা ঝর্নাই নদীর জল
সমস্ত মানুষের হৃদয়ই আমার পরিচয়
তাই নিয়ে যেতে পারো আমার পাসপোর্ট!
[মাহমুদ দারবিশ ১৯৪১ সালের ১৩ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি।]
আমরা আরও ভালোভাবে মৃত্যু প্রাপ্য ছিলাম
মোসাদ আবু তোহা
আমরা আরও ভালোভাবে মৃত্যু প্রাপ্য ছিলাম।
আমাদের দেহগুলো বিকৃত এবং দলা পাকানো,
বুলেট এবং শার্পনেল দিয়ে নকশা করা।
রেডিও এবং টিভিতে
আমাদের নাম ভুলভাবে উচ্চারণ করা হয়।
আমাদের ভবনের দেয়ালে লাগানো আমাদের ছবি
বিবর্ণ এবং ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
মুছে গেছে কবরের ফলকে লেখা শিলালিপি
ঢাকা পড়ে গেছে পাখি এবং সরীসৃপের বিষ্ঠায়।
আমাদের কবরে যে গাছ ছায়া দেয়
কেউ জল দেয় না তার গোড়ায়।
করাল রৌদ্র ঢেকে রেখেছে
আমাদের পচনশীল দেহ।
[মোসাদ আবু তোহা ১৭ নভেম্বর, ১৯৯২ সালে ফিলিস্তিনের আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। ফিলিস্তিনের এই কবি একাধারে লেখক, প-িত এবং গ্রন্থাগারিক।]
বন্ধ করো শিল্প নিয়ে তোমার বক্তৃতা আমাদের মানুষ মারা যাচ্ছে
নুর হিন্দি
ঔপনিবেশিকেরা ফুল নিয়ে লেখে।
আমি তোমাদের বলবো ডেইজি ফোটার কয়েক সেকেন্ড আগে
ইসরায়েলি ট্যাংকের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারা শিশুদের কথা।
আমিও হতে চাই সেই কবিদের মতো যারা চাঁদ নিয়ে ভাবে।
কারাগার এবং
জেলখানা থেকে চাঁদ দেখতে পায় না ফিলিস্তিনিরা।
চাঁদ অনেক সুন্দর।
তারচেয়ে বেশি সুন্দর ফুলদল।
যখন আমার মন খারাপ হয়, মৃত বাবার জন্যে ফুল তুলি।
সারাদিন তিনি আল জাজিরা দেখতেন।
আমি চাই জেসিকা হ্যাপি রামাদান লিখে টেক্সট করা বন্ধ করুক।
জানি, আমি একজন আমেরিকান কারণ যখন রুমের মধ্যে হাঁটি
তখন কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে।
মৃত্যু সেই সব কবিদের কাছেই রূপক যারা ভাবে ভূত
শব্দ নিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা করে।
যখন আমি মারা যাবো, কসম, চিরকাল তোমাদের তাড়িয়ে বেড়াবো।
একদিন, আমিও ফুল নিয়ে এমন ভাবে লিখব যেন আমরাই এগুলোর মালিক।
[নুর হিন্দি একজন ফিলিস্তিন-আমেরিকান কবি এবং রিপোর্টার। তাঁর প্রথম কাব্য ‘ডিয়ার গড, ডিয়ার বোনস, ডিয়ার ইয়োলো’ প্রকাশিত হয় ২০২২ সালে।]