সুরভি ছড়ায় চারিদিকে
হাসান হাফিজ
নিশিন্দা পাতার ঘ্রাণ শুঁকতে শুঁকতে
সূর্য নিভতে থাকে
সান্ধ্য আয়োজন শুরু, মিইয়ে আসে পাখিদের
মিহিন কাকলি শব্দ
ঝিঁঝিঁ পোকা গা মোচড়ায়
গাছের কোটর থেকে উঁকি দেয় লক্ষ্মীপেঁচা
ফুটতে থাকে তারা একটি দু’টি
গোধূলি মিলিয়ে গেছে অনেক আগেই
ছায়ামন্দ্র অন্ধকার
আঁধারের জান্তব শরীর
বিস্তৃত চাদর হয়ে ঢেকে দিচ্ছে চরাচর
নিশাচর প্রাণিরা সচল
এমন সন্ধ্যার ক্ষণে রুগ্ণ এক বাউলের
একতারা কেঁদে ওঠে
সুরতৃষ্ণা কেঁপে ওঠে
নিভৃতির নিরালায়
অগোছালো জীবনের শান্তিসুধা
করুণ ক্রন্দন হয়ে
চতুর্দিকে সুরভি ছড়ায়।
সুরমা নদীটা কাঁদে
রবীন্দ্র গোপ
(সৌমিত্র দেব-এর বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন)
সুরমা নদীর ছলছল জল ডুকরে ডুকরে
কাঁদছে, কবির অকাল বিদায়কে জানত এতো
তাড়াতাড়ি কবি চলে যাবে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে
অসম্পূর্ণ কবিতার পা-ুলিপি যত লেখালেখি।
সবই থাকলো এখন নিথর নদীটা কাঁদছে
সুরমার এপার ওপার নির্জন নিবাস একা
তোমারি অপেক্ষায় ছিল জোনাকি জ্বলা তারাটি ও
কবির খাতায় যত লেখা ফোটায় নতুন ফুল।
মাতৃভূমি তোমার মতো সন্তানের জন্য গর্বিত
জীবনের প্রতি ক্ষণে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার
প্রতিবাদ করতে গিয়েই আহত হয়ে থামনি
এইতো সেদিন সাত মার্চ স্মরণ করতে গিয়ে
রক্তাক্ত প্রতিরোধে দাঁড়ালে বুক টান টান করে
আক্রান্ত স্বদেশে মাথানত করনি কখনো।
অস্বীকৃতি
আলী সিদ্দিকী
আমার হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে গেছে আজ
আমাকে ভালোবাসার কথা আর বলো না
ভালোবাসার অপর নাম বিষ
সেই বিষে নীল হয়ে গেছে আমার সবুজ মন।
আমার স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরচুর হয়ে গেছে
আমাকে আর স্বপ্নের কথা কখনো বলো না
স্বপ্নের অপর নাম মহা মরীচিকা
মরীচিকার পেছনে ছুটে আমি পথ হারিয়েছি।
আমার স্বাধীনতার সাধ ভেসে গেছে রক্ত¯্রােতে
আমাকে আর স্বাধীনতার গল্প কখনো বলো না
স্বাধীনতার অপর নাম বিভীষিকা
স্বাধীনতা খুঁজতে গিয়ে বিলীন হয়ে গেছে মাটি।
জীবন আমাকে যাচ্ছেতাই প্রতারণা করেছে
আমাকে জীবনের গৌরব নিয়ে বক্তৃতা দিয়ো না
জীবনের অপর নাম মৃত্যুর লুকোচুরি
জীবনের জন্যে লড়তে গিয়ে শুধু কবরই খুঁড়েছি।
হৃদয় আমার রক্তের বন্যায় ভেসে গেছে
রক্তাক্ত প্রান্তর হয়ে গেছে ইতিহাসের পবিত্র মাটি
রক্তদানের মহত্ত্বের গুণগান আমাকে শুনিয়ো না
রক্ত দিয়ে আমরা মেকি সভ্যতাকে কবর দিয়েছি।
ঘাতক
হাদিউল ইসলাম
গোলাপের সবগুলো কাঁটা ছেঁটে দিয়ে
কালো বোরখা পরিয়ে দিলাম
বেহায়া গোলাপ, তবু গন্ধ ছাড়ে বাতাসে অশ্লীল
চাঁদের নগ্নতা ঢাকবো কী দিয়ে
চাঁদের নগ্নতা দেখে নষ্ট হচ্ছে মোল্লারা সকল!
আমরা কতিপয় অন্ধকারের জাতক, আহা!
বই ও প্রকৃতি বিমুখ, প্রকৃত প্রস্তাবে আত্মার ঘাতক
শহুরে রাত
অদ্বৈত মারুত
শহুরে রাতের ভেতর কোনো রাত নেই
তুমি জানো, এখানে আলো মরে যায়
ছায়া ঢেকে নেয় রাস্তা, ফাঁকা আকাশ।
কেউ কেউ আছেন একা, গোপন সমুদ্রে
অথবা নিঃশব্দে ছুঁয়ে চলে স্বপ্ন।
তুমি জানো, এই রাতের সবকিছু
দৃশ্যমান নয়;
শুধু ঠোঁটের মাঝখানে লুকানো
ভোরের উন্মাদনা।
তুমি জানো, এমন রাতের পর
শরীরের ভাষা বদলে যায়।
অর্পণ
জীতেন্দ্র কুমার নাথ
তোমাকে যা দিতে চাই গোপন অন্তরে,
সঙ্কোচ জড়ায় শুধু, আসি ধীরে ধীরে।
ভয় হয়, দীন ভিক্ষু, ক্ষুদ্র এই দান,
তোমার অগম পথের পাবে কি সন্ধান।
তবু হৃদয়ে জাগে ব্যাকুল বাসনা,
যা কিছু সুন্দর আমার, যা কিছু কামনা।
লজ্জা পরিহারে আজ দাঁড়াই সম্মুখে,
দিই সেই অঞ্জলি, নত নম মস্তকে।
হে বিশ্ববিধাতা, অনন্ত অন্তর্যামী,
জান নাকি ক্ষুদ্র শক্তি, দীনতার স্বামী।
যা কিছু সাহস বাঁধে দুর্বল এ বুকে,
সে সাহস পায় যেন জয় জগতের মুখে ॥
আমার নীরব প্রীতি, আমার বিশ্বাস,
যেন আলো হয়ে ফোটে, ঘুচায় সন্ত্রাস।
যে সত্য হৃদয়ে জুড়ে থাকে জাগরণ,
সে সত্যের জয় হোক ভুবন ভুবন ॥
আমার সকল ভালো লাগা, যত গান,
সবার জীবনে যেন বহে সেই তান।
তোমারে যা দিতে চাই ভরিয়ে বাঁধ টুঁটে,
তাইই যেন বিলায় নিখিলের পটে ॥
আমার ক্ষুদ্র দান যদি পায় তোমার ঠাঁই,
তবে ধন্য হবে বিশ্ব, অন্য কিছু নাই।
তোমারে যা দিতে চাই আমি সাহস সঞ্চয়ে,
তাইই যেন করি দান আমি বিশ্ব-ভিখারি।
রানা প্লাজা: একটি ট্রাজেডি
রবিউল মাশরাফী
বেদনার জলে ভেজা চব্বিশে এপ্রিল, দু’হাজার তেরো।
সেদিনের সূর্যটাও আলো জ্বেলেছিল ঠিক আগের মতন
তবুও মরণ ফাঁদ লুক্কায়িত ছিল দিনের আলোয়।
সাভারের রানা প্লাজা বয়সের ভারে
ন্যুব্জ ছিল না মোটেই-
মিথ্যার উপরে গড়া শক্তিহীন মেরুদ-ে ভর
করে থাকা স্থ’ূল রানা প্লাজা,
কী এমন কষ্ট নিয়ে শুয়ে পড়েছিল?
জানেন সোহেল রানা!
ইট পাথরের গায়ে সিঁদুরের মতো লেগেছিল খুন।
পিয়াসে উরস ফাটে ওষ্ঠাগত প্রাণ !
শরমের মরমের নিঃসৃত পানিতে
গলা ভেজালেন কেউ।
যে মা তার শিশুটিকে দুধ পান না করায়ে রেখে এসেছিল
সে মায়ের ইচ্ছে হয়, একবার তাকে দুধ পান করাবেন।
কিন্তু একি হলো হায়!
যমদূত কুঠার হাতে শিয়রে দাঁড়িয়ে
তাতাল আগুনে পুড়ে, নিভে গেল প্রাণ।
রানা প্লাজার ছোবলে চিরতরে ঘুমিয়ে গেলেন
এগারোশো পঁচাত্তর রক্তিম শ্রমিক
তা-বের ভাঁজে ভাঁজে ঝরা শেফালির মতো পড়েছিল অগণিত লাশ,
দুই হাজারেরও বেশি, করেছিলো নিদারুণ পঙ্গুত্ব বরণ।
সাভারের রানা প্লাজা আজ আর নেই।
তবু নিস্তব্ধ আঁধারে শ্রমিকের লাশ এসে ভিড় করে
লাশেদের ফিসফাস! কে কাকে কি কথা বলে বুঝি অনুমানে
তারপর সারি বেঁধে দূর পথে চলে যায় বাতিহীন ঘরে।
এইসব ক্ষতচিহ্ন
ওমর ফারুক জীবন
ফিরে যাওয়ার জন্যও লাগে
ক্ষতচিহ্ন,
মুছে যাওয়া নদীপথ;
ভাবনায় পুরে নিয়ে পাথরের
স্মৃতি,
পাহাড়ের ওপারে গড়িয়ে যাওয়া
ভারাক্রান্ত সময়ের
মুখ,
গতায়ুর মতো দিকচিহ্নহীন
ধুলোর ভিতর ছড়িয়ে যেতে
যেতে মুছে যাওয়া পথ ও
প্রান্তরের পর,
ফিরে যেতে যেতে স্মৃতিতর্পণে
শোকবিহ্বল ভোরের মৌনতাকেও
সাথে নিতে হয়
দুপুর ও নিস্তব্ধতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে
নিঃসীম বিকেলের মতো
একা হয়ে যাবার পর,
গোধূলির সম্মোহন পেরিয়ে
সন্ধ্যার দিগন্ত পেরিয়ে যেতে
হয়... আকাশেরও ওপারে।
তালপাতায় লিখি দেবী প্রজ্ঞাপারমিতা
মিসির হাছনাইন
তোমাকে পালযুগের চিত্রকলা তালপাতার পুঁথিতে
লিখছি... দেবী প্রজ্ঞাপারমিতা। যে লিপি হাতে লিখে
শ্রীতাড় হারিয়ে গেছে, বুক নদীতে ডুবে থাকা আঙুলে
সহ¯্র বছর আমি শুধু তোমারে জড়িয়ে ধরি, তুমি হাসছো
কেয়া মল্লিকা ফুলে... দেখো, পূজার ফুল গাইছে জোৎস্নাভাঙা গান।
আর যে তাকিয়ে থাকতে পারি না, চোখ পুড়ে যায়
চোখের পলক মৎস্যদেবী এই যে তোমার চলে যাওয়া পথে
তালপাতার বাতাসে সুউচ্চ তুমি নেচো ওঠো হৃদয়ের গালিচায়
যে কষ্ট বুকে লয়ে বেঁচে থাকার সব সৌন্দর্য আয়ত্ত করেছো
তালপাতার সে ডানা তুমি পেয়েছিলে, এঁকেছিলে নিগূঢ় চিত্রকর্ম
বিষণœতায় পুড়ে যাওয়া চোখ নোনা পানির প্রবাল সমুদ্র দ্বীপ
সহ¯্র বছর তোমারে লিখি- বেঁচো থাকো দেবী প্রজ্ঞাপারমিতা
শিমুল ফুলের বাংলা অক্ষরের নরম সূতায় সাজানো গোছানো
তোমাকে পাওয়ার পর আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই পৃথিবীতে
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
সুরভি ছড়ায় চারিদিকে
হাসান হাফিজ
নিশিন্দা পাতার ঘ্রাণ শুঁকতে শুঁকতে
সূর্য নিভতে থাকে
সান্ধ্য আয়োজন শুরু, মিইয়ে আসে পাখিদের
মিহিন কাকলি শব্দ
ঝিঁঝিঁ পোকা গা মোচড়ায়
গাছের কোটর থেকে উঁকি দেয় লক্ষ্মীপেঁচা
ফুটতে থাকে তারা একটি দু’টি
গোধূলি মিলিয়ে গেছে অনেক আগেই
ছায়ামন্দ্র অন্ধকার
আঁধারের জান্তব শরীর
বিস্তৃত চাদর হয়ে ঢেকে দিচ্ছে চরাচর
নিশাচর প্রাণিরা সচল
এমন সন্ধ্যার ক্ষণে রুগ্ণ এক বাউলের
একতারা কেঁদে ওঠে
সুরতৃষ্ণা কেঁপে ওঠে
নিভৃতির নিরালায়
অগোছালো জীবনের শান্তিসুধা
করুণ ক্রন্দন হয়ে
চতুর্দিকে সুরভি ছড়ায়।
সুরমা নদীটা কাঁদে
রবীন্দ্র গোপ
(সৌমিত্র দেব-এর বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন)
সুরমা নদীর ছলছল জল ডুকরে ডুকরে
কাঁদছে, কবির অকাল বিদায়কে জানত এতো
তাড়াতাড়ি কবি চলে যাবে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে
অসম্পূর্ণ কবিতার পা-ুলিপি যত লেখালেখি।
সবই থাকলো এখন নিথর নদীটা কাঁদছে
সুরমার এপার ওপার নির্জন নিবাস একা
তোমারি অপেক্ষায় ছিল জোনাকি জ্বলা তারাটি ও
কবির খাতায় যত লেখা ফোটায় নতুন ফুল।
মাতৃভূমি তোমার মতো সন্তানের জন্য গর্বিত
জীবনের প্রতি ক্ষণে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার
প্রতিবাদ করতে গিয়েই আহত হয়ে থামনি
এইতো সেদিন সাত মার্চ স্মরণ করতে গিয়ে
রক্তাক্ত প্রতিরোধে দাঁড়ালে বুক টান টান করে
আক্রান্ত স্বদেশে মাথানত করনি কখনো।
অস্বীকৃতি
আলী সিদ্দিকী
আমার হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে গেছে আজ
আমাকে ভালোবাসার কথা আর বলো না
ভালোবাসার অপর নাম বিষ
সেই বিষে নীল হয়ে গেছে আমার সবুজ মন।
আমার স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরচুর হয়ে গেছে
আমাকে আর স্বপ্নের কথা কখনো বলো না
স্বপ্নের অপর নাম মহা মরীচিকা
মরীচিকার পেছনে ছুটে আমি পথ হারিয়েছি।
আমার স্বাধীনতার সাধ ভেসে গেছে রক্ত¯্রােতে
আমাকে আর স্বাধীনতার গল্প কখনো বলো না
স্বাধীনতার অপর নাম বিভীষিকা
স্বাধীনতা খুঁজতে গিয়ে বিলীন হয়ে গেছে মাটি।
জীবন আমাকে যাচ্ছেতাই প্রতারণা করেছে
আমাকে জীবনের গৌরব নিয়ে বক্তৃতা দিয়ো না
জীবনের অপর নাম মৃত্যুর লুকোচুরি
জীবনের জন্যে লড়তে গিয়ে শুধু কবরই খুঁড়েছি।
হৃদয় আমার রক্তের বন্যায় ভেসে গেছে
রক্তাক্ত প্রান্তর হয়ে গেছে ইতিহাসের পবিত্র মাটি
রক্তদানের মহত্ত্বের গুণগান আমাকে শুনিয়ো না
রক্ত দিয়ে আমরা মেকি সভ্যতাকে কবর দিয়েছি।
ঘাতক
হাদিউল ইসলাম
গোলাপের সবগুলো কাঁটা ছেঁটে দিয়ে
কালো বোরখা পরিয়ে দিলাম
বেহায়া গোলাপ, তবু গন্ধ ছাড়ে বাতাসে অশ্লীল
চাঁদের নগ্নতা ঢাকবো কী দিয়ে
চাঁদের নগ্নতা দেখে নষ্ট হচ্ছে মোল্লারা সকল!
আমরা কতিপয় অন্ধকারের জাতক, আহা!
বই ও প্রকৃতি বিমুখ, প্রকৃত প্রস্তাবে আত্মার ঘাতক
শহুরে রাত
অদ্বৈত মারুত
শহুরে রাতের ভেতর কোনো রাত নেই
তুমি জানো, এখানে আলো মরে যায়
ছায়া ঢেকে নেয় রাস্তা, ফাঁকা আকাশ।
কেউ কেউ আছেন একা, গোপন সমুদ্রে
অথবা নিঃশব্দে ছুঁয়ে চলে স্বপ্ন।
তুমি জানো, এই রাতের সবকিছু
দৃশ্যমান নয়;
শুধু ঠোঁটের মাঝখানে লুকানো
ভোরের উন্মাদনা।
তুমি জানো, এমন রাতের পর
শরীরের ভাষা বদলে যায়।
অর্পণ
জীতেন্দ্র কুমার নাথ
তোমাকে যা দিতে চাই গোপন অন্তরে,
সঙ্কোচ জড়ায় শুধু, আসি ধীরে ধীরে।
ভয় হয়, দীন ভিক্ষু, ক্ষুদ্র এই দান,
তোমার অগম পথের পাবে কি সন্ধান।
তবু হৃদয়ে জাগে ব্যাকুল বাসনা,
যা কিছু সুন্দর আমার, যা কিছু কামনা।
লজ্জা পরিহারে আজ দাঁড়াই সম্মুখে,
দিই সেই অঞ্জলি, নত নম মস্তকে।
হে বিশ্ববিধাতা, অনন্ত অন্তর্যামী,
জান নাকি ক্ষুদ্র শক্তি, দীনতার স্বামী।
যা কিছু সাহস বাঁধে দুর্বল এ বুকে,
সে সাহস পায় যেন জয় জগতের মুখে ॥
আমার নীরব প্রীতি, আমার বিশ্বাস,
যেন আলো হয়ে ফোটে, ঘুচায় সন্ত্রাস।
যে সত্য হৃদয়ে জুড়ে থাকে জাগরণ,
সে সত্যের জয় হোক ভুবন ভুবন ॥
আমার সকল ভালো লাগা, যত গান,
সবার জীবনে যেন বহে সেই তান।
তোমারে যা দিতে চাই ভরিয়ে বাঁধ টুঁটে,
তাইই যেন বিলায় নিখিলের পটে ॥
আমার ক্ষুদ্র দান যদি পায় তোমার ঠাঁই,
তবে ধন্য হবে বিশ্ব, অন্য কিছু নাই।
তোমারে যা দিতে চাই আমি সাহস সঞ্চয়ে,
তাইই যেন করি দান আমি বিশ্ব-ভিখারি।
রানা প্লাজা: একটি ট্রাজেডি
রবিউল মাশরাফী
বেদনার জলে ভেজা চব্বিশে এপ্রিল, দু’হাজার তেরো।
সেদিনের সূর্যটাও আলো জ্বেলেছিল ঠিক আগের মতন
তবুও মরণ ফাঁদ লুক্কায়িত ছিল দিনের আলোয়।
সাভারের রানা প্লাজা বয়সের ভারে
ন্যুব্জ ছিল না মোটেই-
মিথ্যার উপরে গড়া শক্তিহীন মেরুদ-ে ভর
করে থাকা স্থ’ূল রানা প্লাজা,
কী এমন কষ্ট নিয়ে শুয়ে পড়েছিল?
জানেন সোহেল রানা!
ইট পাথরের গায়ে সিঁদুরের মতো লেগেছিল খুন।
পিয়াসে উরস ফাটে ওষ্ঠাগত প্রাণ !
শরমের মরমের নিঃসৃত পানিতে
গলা ভেজালেন কেউ।
যে মা তার শিশুটিকে দুধ পান না করায়ে রেখে এসেছিল
সে মায়ের ইচ্ছে হয়, একবার তাকে দুধ পান করাবেন।
কিন্তু একি হলো হায়!
যমদূত কুঠার হাতে শিয়রে দাঁড়িয়ে
তাতাল আগুনে পুড়ে, নিভে গেল প্রাণ।
রানা প্লাজার ছোবলে চিরতরে ঘুমিয়ে গেলেন
এগারোশো পঁচাত্তর রক্তিম শ্রমিক
তা-বের ভাঁজে ভাঁজে ঝরা শেফালির মতো পড়েছিল অগণিত লাশ,
দুই হাজারেরও বেশি, করেছিলো নিদারুণ পঙ্গুত্ব বরণ।
সাভারের রানা প্লাজা আজ আর নেই।
তবু নিস্তব্ধ আঁধারে শ্রমিকের লাশ এসে ভিড় করে
লাশেদের ফিসফাস! কে কাকে কি কথা বলে বুঝি অনুমানে
তারপর সারি বেঁধে দূর পথে চলে যায় বাতিহীন ঘরে।
এইসব ক্ষতচিহ্ন
ওমর ফারুক জীবন
ফিরে যাওয়ার জন্যও লাগে
ক্ষতচিহ্ন,
মুছে যাওয়া নদীপথ;
ভাবনায় পুরে নিয়ে পাথরের
স্মৃতি,
পাহাড়ের ওপারে গড়িয়ে যাওয়া
ভারাক্রান্ত সময়ের
মুখ,
গতায়ুর মতো দিকচিহ্নহীন
ধুলোর ভিতর ছড়িয়ে যেতে
যেতে মুছে যাওয়া পথ ও
প্রান্তরের পর,
ফিরে যেতে যেতে স্মৃতিতর্পণে
শোকবিহ্বল ভোরের মৌনতাকেও
সাথে নিতে হয়
দুপুর ও নিস্তব্ধতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে
নিঃসীম বিকেলের মতো
একা হয়ে যাবার পর,
গোধূলির সম্মোহন পেরিয়ে
সন্ধ্যার দিগন্ত পেরিয়ে যেতে
হয়... আকাশেরও ওপারে।
তালপাতায় লিখি দেবী প্রজ্ঞাপারমিতা
মিসির হাছনাইন
তোমাকে পালযুগের চিত্রকলা তালপাতার পুঁথিতে
লিখছি... দেবী প্রজ্ঞাপারমিতা। যে লিপি হাতে লিখে
শ্রীতাড় হারিয়ে গেছে, বুক নদীতে ডুবে থাকা আঙুলে
সহ¯্র বছর আমি শুধু তোমারে জড়িয়ে ধরি, তুমি হাসছো
কেয়া মল্লিকা ফুলে... দেখো, পূজার ফুল গাইছে জোৎস্নাভাঙা গান।
আর যে তাকিয়ে থাকতে পারি না, চোখ পুড়ে যায়
চোখের পলক মৎস্যদেবী এই যে তোমার চলে যাওয়া পথে
তালপাতার বাতাসে সুউচ্চ তুমি নেচো ওঠো হৃদয়ের গালিচায়
যে কষ্ট বুকে লয়ে বেঁচে থাকার সব সৌন্দর্য আয়ত্ত করেছো
তালপাতার সে ডানা তুমি পেয়েছিলে, এঁকেছিলে নিগূঢ় চিত্রকর্ম
বিষণœতায় পুড়ে যাওয়া চোখ নোনা পানির প্রবাল সমুদ্র দ্বীপ
সহ¯্র বছর তোমারে লিখি- বেঁচো থাকো দেবী প্রজ্ঞাপারমিতা
শিমুল ফুলের বাংলা অক্ষরের নরম সূতায় সাজানো গোছানো
তোমাকে পাওয়ার পর আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই পৃথিবীতে