চশমা
কিছু প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজতে চাই না। পৃথিবীতে সব প্রশ্নেরই উত্তর থাকবে, এমন তো নয়। এই যেমন হুটহাট করে আমার সাথে অদ্ভুত কিছু ঘটে যায় কিংবা ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত কিছু; তবুও আমি অবাক হই না। কারণ ছাড়াই হয়তো এসব ঘটে আমার সাথে। এটা ভেবেই আমি নিজেকে প্রবোধ দেই।
সেদিন সবে খবরটা আমি শুনেছি। ভোররাতে মোবাইলের স্ক্রিনে খবরটা এলো। আমি বিছানা ছাড়লাম অন্য আর পাঁচটি দিনের মতোই। খুব স্বাভাবিক একজন মানুষের মতোই শুরু করলাম আমার দিন। গ্যাস বার্নারে আগুন জ্বালিয়ে হয়ে উঠলাম একজন সুগৃহিণী। খাবার টেবিলে সবার নিয়ম আর ইচ্ছামাফিক ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে নিজে বসলাম চায়ের কাপ হাতে নিয়ে।
কী স্বাভাবিক আমি! যেন কোথাও কিচ্ছু হয়নি। কোথাও ব্যত্যয় ঘটেনি পৃথিবীর কোনো নিয়মের।
আমি চিনিবিহীন চায়ের এক একটি ঢোক গিলছি একদম শব্দবিহীন, সব এটিকেট মেনে। মাঝে মাঝে স্ক্রল করছি ফেসবুক। নোটিফিকেশন ধরে ধরে উত্তর দিচ্ছি নিজের দেওয়া স্ট্যাটাসের মন্তব্যের। খুব স্বাভাবিক সকাল আমার।
খানিক পরে আমাকে বের হতে হবে। সারাদিনের কাজগুলো নোটপ্যাডের তালিকায় রাখতে রাখতে একবার মাত্র একবার দীর্ঘশ্বাস পড়েছিলো আমার। বাড়ির সকলের কাছে ধরা পড়ে যাবার ভয়ে নিজেকে সামলে নিলাম দ্রুত।
কী দরকার অহেতুক অন্য কারো দিন নষ্ট করে দেওয়া!
প্রতিদিন বের হবার আগে খুব দ্রুত শাওয়ার নেওয়া আমার অভ্যাস। কিন্তু সেদিন আমার বাথ নিতে ইচ্ছা করলো। বাথটাবে জল ভরে ইস্পম সল্ট ঢেলে পাশে জ্বালিয়ে দিলাম ইউক্যালিপটাস ফ্লেভারের মোমবাতি। মুহূর্তেই স্বর্গীয় ঘ্রাণে আমার ইন্দ্রিয় আরাম খুঁজে পেতে চাইলো। স্নানের জলে ক্যামোমাইল বাথ বোম ডুবিয়ে নিজে ডুবে গেলাম গলা অব্দি।
আচ্ছা, জলে কি তখন চোখ ভিজেছিলো? জানি না, সত্যিই জানি না। কারণ পাশ থেকে টেনে নেওয়া হ্যান্ড শাওয়ারের ঝিরিঝিরি জল তখন আমার মুখ থেকে ধুয়ে দিচ্ছিলো সকল শ্রান্তি। আমি চোখ বন্ধ করে ভাবতে চেষ্টা করছিলাম তোমার মুখ। জানো কিছুতেই তোমার মুখটা চোখে ভাসাতে পারছিলাম না! বরং তখন করোতোয়ার পাড় আর আঙিনার কদম ফুলের গাছটা স্পষ্ট হয়ে উঠছিলো বারবার।
কেন বলো তো তোমার সাথে আমার অদেখা এক দূরত্ব থেকেই গেলো। যুগের ব্যবধান নাকি চিরায়ত সংসারের নিয়ম? তুমি যেভাবে বলতে, যেভাবে ভাবাতে চাইতে কেন চিরকাল তার উল্টোটাই করে এসেছি আমি? জানি না।
উত্তর না খুঁজে জীবন কাটানোর এক অদ্ভুত বোহেমিয়ান আমি, সে তো তোমার জানা।
তাই করোতোয়ার পাড়কে বাথটাবের জলে রেখে আমাকে উঠতে হয়েছিলো ঘড়ির কাঁটায় তাল মিলিয়ে। আগের দিন রাতে গুছিয়ে রাখা অফিসের কাপড়গুলো সরিয়ে ক্লোজেট খুঁজে বের করলাম তোমার দেওয়া চিতা প্রিন্টের শাড়ি।
হাসি পায় জানো? সেটাই প্রথম আর শেষ ছিল যখন তুমি নিজে পছন্দ করে আমায় কিছু কিনে দিয়েছিলে। নয়তো কখনো খামে ভরা টাকা কিংবা আমার করে আনা শপিংয়ের দাম দিয়ে দেওয়া, এটাই ছিল নিয়ম। কিন্তু কী ভেবে সেদিন সঙ্গে গিয়েছিলে জানা নেই। যখন হ্যাঙ্গারে ঝোলানো শাড়ি সামনে নিয়ে এসে আমার চোখে প্রশ্ন দেখেছিলে তখন,রেগে গেলে তুমি বাঘ হয়ে যাও!
সেদিনই প্রথম আবিষ্কার করেছিলাম তোমার সেন্স অফ হিউমার!!শাড়িটা নিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু পরিনি কখনো। সেদিন পরলাম। আয়নায় নিজেকে বাঘ দেখবো ভেবেছিলাম কিন্তু চোখের কোণে জমে থাকা অন্ধকার লুকোতে একগাদা মেকাপ করে কেমন যেন বেড়ালের মতো দেখতে হয়ে গেলাম। হাতে সময় কম তাই ঘর থেকেই গাড়ি স্টার্ট করে দিলাম সঙ্গে হিটিং। ডিকেইফ ভরা থার্মোক্স নিয়ে উইন্টার বুটে ভোঁতা শব্দ তুলে যখন বাড়ি ছাড়লাম তখন শীত কাঁপানো শহরে অনেকদিন পর রোদ দেখেছিলাম। ট্রাফিক এড়াতে জিপিএস অন করে ফ্যাস্টেড রুট ধরতেই হোয়্যাটস্ এ্যাপে মুহুর্মুহু ভিডিও কল। ওরা কি বোকা! জানে তোমার নম্বর থেকে আসা কল আমি ধরবো না তবুও সেই নম্বরই স্ক্রিনে ভাসছিলো। কয়েকবারে ক্ষান্ত দিয়ে এলো টেক্সট,সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। ভিডিও কল রিসিভ করে আনুষ্ঠানিকতা দেখো।
আমি অজানা এক্সিট রুটে গাড়ি ঢুকিয়ে দিলাম। কোথায় থামবো জানা ছিল না। তবে ঝটপট সিন্ধান্ত নিয়েছিলাম কিছু সময় সবকিছু থেকে নিজেকে বিছিন্ন রাখবো।সেই যে আমি চিরকালের বোহেমিয়ান! একটু কম ব্যস্ত জায়গায় গাড়ি থামিয়ে গুগল ম্যাপে ‘পার্ক নেয়ারবাই’ খুঁজলাম। দশ মিনিটের দূরত্বে পার্কের ঠিকানা জিপিএসএ টাইপ করে ফোন করলাম অফিসে,আই হ্যাভ এ্যান ফ্যামিলি ইমার্জেন্সি! প্লিজ এক্সকিউজ মাই এ্যাবসেন্ট টুডে।তারপর সুইচ অফ ফোনের।
গাড়ির স্পিকারে আমজাদ আলী খানের সরোদ অন করতে গিয়ে চোখ পড়েছিলো রিয়ার ভিউ মিররে। না, তখনো চোখমুখ অবিচলিত ছিল!দশ মিনিটের পথ, খুব বেশি লম্বা নয়। প্রত্যাশার তুলনায় নিরিবিলি পার্ক। পাতাহীন লম্বাগাছের সারি পার হলে প্রায় বরফ জমা লেক। হু হু করা ঠা-া বাতাসে নিজেও বরফ জমা হয়ে যাবো জেনেও ওখানেই চলে গিয়েছিলাম। ঠা-ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে চিনিহীন তেতো ডিক্যাফে চুমুক দিয়ে ইয়ার মাফস পরে নিয়েছিলাম। তারপর বন্ধ চোখ। শীতল বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছিলো আমার অনাবরণ মুখ। আমি বন্ধ চোখে দেখতে পাচ্ছিলাম,পতাকায় ঢাকা হয়েছে তোমাকে। অজ¯্র ফুল তোমাকে ছুঁয়ে নির্বিকার পড়ে আছে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ওরা ডান হাতেউঁচিয়ে রেখেছে গান। সামরিক ব্যান্ড বাজছে সুরের এতোটুকু লয় না হারিয়ে। তোমার চোখ বন্ধ মুখের শীতলতায় তাল মিলিয়ে চারপাশের সবকিছু নিথর!আমি চিৎকার করে উঠলাম। কেতাদুরস্ত এই শহরের সব আদবকেতা বিসর্জন দিয়ে আমি চিৎকার করে উঠলাম,বাবা... বাবা... বাবা...
সেই প্রথম আমার পৃথিবী মেনে নিলো বাবাহীন নিজেকে। কতক্ষণ চিৎকার করেছিলাম জানি না। শুধু মনে পড়ে যখন ধাতস্থ হয়েছিলাম তখন শীতের রোদ মরে গিয়ে চারপাশ ধূসর হয়ে গিয়েছিলো। ঠা-া বাড়ছিলো। তেতো ডিকেইফে আরেকবার চুমুক দিয়েছিলাম একটু উষ্ণতার আশায়।এরপরেই অদ্ভুত করা ঘটনাটি ঘটলো। প্রথমবারের মতো ঘটলো। তোমার মৃতমুখ কল্পনার চোখ থেকে সরাতে এদিকওদিক তাকাতে লাগলাম। একটা দুটো পায়রা লেকের পাশে উড়ে আসছিলো। মরা গাছের শুকনো ডালে জমে থাকা বরফ বাতাসের টোকায় ঝুরঝুর ঝরে পড়ছিলো। কিছু না ভেবেই ব্যাগে হাত ঢুকিয়েছিলাম স্টিকিপ্যাড আর কলম খুঁজতে।ঘরে ফেরার আগে গ্রোসারির লিস্ট করা প্রয়োজন ছিল।কিন্তু হাতে উঠে এসেছিলো চশমা। তোমার সেই ফ্রেমভাঙা চশমা। যেটা না লুকোলে তুমি নতুন চশমাটা ধরতেই না।
ব্রাউন রঙের ফ্রেমে মাইনাস থ্রী লেন্সের চশমা। কিছু না ভেবেই চোখে পরেছিলাম পৃথিবী ব্লার দেখবো বলে। কিন্তু চমকে উঠেছিলাম। হঠাৎ চারপাশ বদলে গেলো। আমি ব্লার নয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম তোমাকে,দেশ থেকে কেন চলে গেলে? লড়াই করেই তো সবকিছু বদলাতে হয়। লড়াই করাটা শেখাতে পারিনি তোমায়। পালিয়ে গেলে তুমি...না আমি পালিয়ে আসিনি। অভিমানে চলে এসেছি। সবকিছু বদলাবে না বলে চলে এসেছি। আমি পালিয়ে আসিনি...
চিৎকার করছিলাম আমি। ততক্ষণে পার্কে দু’একজন পেট (পোষা প্রাণি) নিয়ে হাঁটতে চলে এসেছিলো। আমার চিৎকার শুনে অবাক হয়ে তাকিয়েই এটিকেট মেনে অন্যদিকে দ্রুত সরে গিয়েছিলো। আমি হ্যাঁচকা টানে চশমা খুলে ফেলেছিলাম।তোমার অভিযোগ শুনতে চাইনি তখন আর। যে অভিযোগ তোমাকে আর আমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলো তাকে মনে করতে চাইনি আমি।কিন্তু আমার চাওয়াকে তখন হয়তো প্রকৃতি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েছিলো। কারণ তারপর যে ফ্রেমভাঙা সে চশমাই আমার ন্যারো এস্কেপের পথ হবে সেটা বুঝতেই পারিনি সেদিন। ঘরে ফিরেছিলাম সব প্রশ্নের অনুত্তর চেহারায় সেঁটে। তাই কিঙ্কর মানে আমার বাচ্চাদের বাবা নীরবে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো শুধু। বাবাকে একবার শেষবার দেখতে কেন গেলাম না? অন্তত খবর পাবার পরেও কি আমার যাওয়া উচিৎ ছিল না? আর কতদিন এমন করে জেদ ধরে থাকবো?এসব প্রশ্নের জানা উত্তর কিঙ্করের সবসময় জানা,দেশে আমি ফিরবো না।তাইহয়তো কিঙ্কর আমাকে মাপতে চেয়েছিলো সেদিন সময়ের দাঁড়িপাল্লায়। কিন্তু আমি তখনো অনড়, ও দেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব না। আমি কিঙ্করের অর্থহীন অনুশোচনা সত্যিই বুঝি না। কেন নিজেকে সে এসব কিছুর জন্য দায়ী ভাবে। আমার সিদ্ধান্ত চিরকালই অর্গানিক। সেখানে কারো কোনো প্রভাব কিংবা অনুরণন নেই।
আমি বন্ধনহীন কিঙ্করকে বিয়ে করেছিলাম স্ব-ইচ্ছায়। নিজে উন্মুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছি, সেটাও নিজের ইচ্ছায়। তাহলে দেশ থেকে, পরিবার থেকে আমার বিচ্ছিন্নতায় কেন কিঙ্করের অন্তর্দাহ হবে? এসব সময়ে আমার কিঙ্করকে খুব অসহ্য লাগে। সেদিনও লেগেছিলো। তাই চুপচাপ এটিক রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
তারপর কয়েকদিন বেশ স্বাভাবিকভাবেই গেলো। আমার নিত্যদিনের স্ক্যাজুয়ালে হেরফের না করে মনোযোগী থাকতে চাইলাম একান্ত জীবনে। যেখানে সকাল থেকে রাত অবধি শুধুই ব্যস্ততা।তবুও জীবন নির্ঝঞ্ঝাট।কিন্তু ওই যে প্রকৃতির বৃদ্ধাঙ্গুলি!
তাই ক’দিন পরেই আরেকবার ঘটলো সেই অদ্ভুত ঘটনা। সাধারণত আমি রাতে ঘুমাতে যাবার আগে সময় করে সারাদিনের নিউজে চোখ বুলাই। সেদিনও তাই করছিলাম।ল্যাপটপের স্ক্রিনে নানারকম খবরের মাঝে হঠাৎ চোখে পড়লো দেশের একটা খবর। অন্য কোনো সময় হলে অনাগ্রহী আমি সে খবর এড়িয়ে যেতাম,কেয়োসইন বাংলাদেশ ওপেন ডোর টু এক্সট্রিমিস্ট... নতুন নয় কিছুই। এসব কারণেই দেশ ছেড়েছি।কিন্তু কেন জানি না সেদিন কিছু সময় চুপচাপ বসেছিলাম। ল্যাপটপের স্ক্রিন ফ্রিজ করে দিয়েছিলাম শুধুই দ্য ব্লুমবার্গ পত্রিকার নিউজের দিকে তাকিয়ে থাকবো বলে।
তারপর?
তারপর ইচ্ছে করেই ভাঙাফ্রেমের চশমা চোখে পরেছিলাম কিছু ঘটে কিনা দেখার জন্য। ঘটলো। আবার ঘটলো। আমাকে অবাক করে দিয়ে অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো,আমার পাশে বাবা বসে আছে। হাফ হাতা ফতুয়ায় সেই চিরচেনা বাবা। মুক্তিযুদ্ধের গল্প করছে। কীভাবে নয়দিন থেমে থেমে হেঁটে বর্ডার পার হয়ে ওপারে গিয়ে ট্রেনিং নিয়েছে, সেই গল্প। অপারেশনের দিনে পুড়ে যাওয়া কোনো বাড়িতে নিঃশ্বাস বন্ধ করে লুকিয়ে থাকার গল্প। গ্রেনেড চার্জ করার আগে পাটক্ষেতের নিচে সাপের পাশাপাশি শুয়ে থাকার গল্প।
সেসব তো শুনেছি। কিন্তু এমন দেশ চেয়েছিলে?আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে- এই কবিতা বিড়বিড় করতে করতে বাবা আমার পাশ থেকে উঠে চলে গেলো।আমি ফ্রেমভাঙা চশমা চোখ থেকে নামাতেই নিশ্চিত হলাম বাবা সত্যিই এসেছিলো। কারণ ভাঙা চশমা ছাড়াই আমি ল্যাপটপের স্ক্রিনে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম টুকরো টুকরো ছড়িয়ে থাকা কোনো এক স্মৃতিস্তম্ভের ইট!অনেকদিন পর সেদিন আমার কান্না পেয়েছিলো। ছেড়ে আসা দেশের জন্য কান্না পেয়েছিলো।যেদিন আমি দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বাবা উত্তেজিত হয়নি। রাগ করেনি। অস্থির হয়নি। খুব শান্তভাবে বলেছিলো, বেশ, চলে যাও। কিন্তু ফিরে এসো তখন যখন শুধুই দেশের কাছে ফিরতে চাইবে। আমার মৃত্যু কিংবা আনুষঙ্গিকতায় কখনো এই আদেশ উপেক্ষা করবে না। কথা দাও।
এ কেমন শাস্তি! শুধুমাত্র দেশ ছাড়তে চাইছি বলে আমাকেই ছেড়ে দিচ্ছে বাবা!আমিও বাবার মেয়ে। আমারও রাগ হয়নি সেদিন। আর অভিমানে তো আমি সবসময়ই আনাড়ি। নির্লিপ্তভাবে বলেছিলাম,ফেরা হবে না আর!
কিন্তু না ফিরতে চাওয়া দেশের জন্য কেন আজকাল আমার চোখ পোড়ে? কেন কারণে অকারণে ভাঙাফ্রেমের চশমা পরে আমি বাবাকে দেখতে চাই শুধু দেশে ফেরার অজুহাত খুঁজতে? কেন আমি বারবার বাবার মুখে মুক্তির গল্প শুনতে চাই?এবার বাবা এলে জিজ্ঞাসা করবো আঙিনার কদম গাছ কি এখনো শেষ বর্ষায় ফুল ফোঁটায়?
চশমা
বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কিছু প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজতে চাই না। পৃথিবীতে সব প্রশ্নেরই উত্তর থাকবে, এমন তো নয়। এই যেমন হুটহাট করে আমার সাথে অদ্ভুত কিছু ঘটে যায় কিংবা ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত কিছু; তবুও আমি অবাক হই না। কারণ ছাড়াই হয়তো এসব ঘটে আমার সাথে। এটা ভেবেই আমি নিজেকে প্রবোধ দেই।
সেদিন সবে খবরটা আমি শুনেছি। ভোররাতে মোবাইলের স্ক্রিনে খবরটা এলো। আমি বিছানা ছাড়লাম অন্য আর পাঁচটি দিনের মতোই। খুব স্বাভাবিক একজন মানুষের মতোই শুরু করলাম আমার দিন। গ্যাস বার্নারে আগুন জ্বালিয়ে হয়ে উঠলাম একজন সুগৃহিণী। খাবার টেবিলে সবার নিয়ম আর ইচ্ছামাফিক ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে নিজে বসলাম চায়ের কাপ হাতে নিয়ে।
কী স্বাভাবিক আমি! যেন কোথাও কিচ্ছু হয়নি। কোথাও ব্যত্যয় ঘটেনি পৃথিবীর কোনো নিয়মের।
আমি চিনিবিহীন চায়ের এক একটি ঢোক গিলছি একদম শব্দবিহীন, সব এটিকেট মেনে। মাঝে মাঝে স্ক্রল করছি ফেসবুক। নোটিফিকেশন ধরে ধরে উত্তর দিচ্ছি নিজের দেওয়া স্ট্যাটাসের মন্তব্যের। খুব স্বাভাবিক সকাল আমার।
খানিক পরে আমাকে বের হতে হবে। সারাদিনের কাজগুলো নোটপ্যাডের তালিকায় রাখতে রাখতে একবার মাত্র একবার দীর্ঘশ্বাস পড়েছিলো আমার। বাড়ির সকলের কাছে ধরা পড়ে যাবার ভয়ে নিজেকে সামলে নিলাম দ্রুত।
কী দরকার অহেতুক অন্য কারো দিন নষ্ট করে দেওয়া!
প্রতিদিন বের হবার আগে খুব দ্রুত শাওয়ার নেওয়া আমার অভ্যাস। কিন্তু সেদিন আমার বাথ নিতে ইচ্ছা করলো। বাথটাবে জল ভরে ইস্পম সল্ট ঢেলে পাশে জ্বালিয়ে দিলাম ইউক্যালিপটাস ফ্লেভারের মোমবাতি। মুহূর্তেই স্বর্গীয় ঘ্রাণে আমার ইন্দ্রিয় আরাম খুঁজে পেতে চাইলো। স্নানের জলে ক্যামোমাইল বাথ বোম ডুবিয়ে নিজে ডুবে গেলাম গলা অব্দি।
আচ্ছা, জলে কি তখন চোখ ভিজেছিলো? জানি না, সত্যিই জানি না। কারণ পাশ থেকে টেনে নেওয়া হ্যান্ড শাওয়ারের ঝিরিঝিরি জল তখন আমার মুখ থেকে ধুয়ে দিচ্ছিলো সকল শ্রান্তি। আমি চোখ বন্ধ করে ভাবতে চেষ্টা করছিলাম তোমার মুখ। জানো কিছুতেই তোমার মুখটা চোখে ভাসাতে পারছিলাম না! বরং তখন করোতোয়ার পাড় আর আঙিনার কদম ফুলের গাছটা স্পষ্ট হয়ে উঠছিলো বারবার।
কেন বলো তো তোমার সাথে আমার অদেখা এক দূরত্ব থেকেই গেলো। যুগের ব্যবধান নাকি চিরায়ত সংসারের নিয়ম? তুমি যেভাবে বলতে, যেভাবে ভাবাতে চাইতে কেন চিরকাল তার উল্টোটাই করে এসেছি আমি? জানি না।
উত্তর না খুঁজে জীবন কাটানোর এক অদ্ভুত বোহেমিয়ান আমি, সে তো তোমার জানা।
তাই করোতোয়ার পাড়কে বাথটাবের জলে রেখে আমাকে উঠতে হয়েছিলো ঘড়ির কাঁটায় তাল মিলিয়ে। আগের দিন রাতে গুছিয়ে রাখা অফিসের কাপড়গুলো সরিয়ে ক্লোজেট খুঁজে বের করলাম তোমার দেওয়া চিতা প্রিন্টের শাড়ি।
হাসি পায় জানো? সেটাই প্রথম আর শেষ ছিল যখন তুমি নিজে পছন্দ করে আমায় কিছু কিনে দিয়েছিলে। নয়তো কখনো খামে ভরা টাকা কিংবা আমার করে আনা শপিংয়ের দাম দিয়ে দেওয়া, এটাই ছিল নিয়ম। কিন্তু কী ভেবে সেদিন সঙ্গে গিয়েছিলে জানা নেই। যখন হ্যাঙ্গারে ঝোলানো শাড়ি সামনে নিয়ে এসে আমার চোখে প্রশ্ন দেখেছিলে তখন,রেগে গেলে তুমি বাঘ হয়ে যাও!
সেদিনই প্রথম আবিষ্কার করেছিলাম তোমার সেন্স অফ হিউমার!!শাড়িটা নিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু পরিনি কখনো। সেদিন পরলাম। আয়নায় নিজেকে বাঘ দেখবো ভেবেছিলাম কিন্তু চোখের কোণে জমে থাকা অন্ধকার লুকোতে একগাদা মেকাপ করে কেমন যেন বেড়ালের মতো দেখতে হয়ে গেলাম। হাতে সময় কম তাই ঘর থেকেই গাড়ি স্টার্ট করে দিলাম সঙ্গে হিটিং। ডিকেইফ ভরা থার্মোক্স নিয়ে উইন্টার বুটে ভোঁতা শব্দ তুলে যখন বাড়ি ছাড়লাম তখন শীত কাঁপানো শহরে অনেকদিন পর রোদ দেখেছিলাম। ট্রাফিক এড়াতে জিপিএস অন করে ফ্যাস্টেড রুট ধরতেই হোয়্যাটস্ এ্যাপে মুহুর্মুহু ভিডিও কল। ওরা কি বোকা! জানে তোমার নম্বর থেকে আসা কল আমি ধরবো না তবুও সেই নম্বরই স্ক্রিনে ভাসছিলো। কয়েকবারে ক্ষান্ত দিয়ে এলো টেক্সট,সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। ভিডিও কল রিসিভ করে আনুষ্ঠানিকতা দেখো।
আমি অজানা এক্সিট রুটে গাড়ি ঢুকিয়ে দিলাম। কোথায় থামবো জানা ছিল না। তবে ঝটপট সিন্ধান্ত নিয়েছিলাম কিছু সময় সবকিছু থেকে নিজেকে বিছিন্ন রাখবো।সেই যে আমি চিরকালের বোহেমিয়ান! একটু কম ব্যস্ত জায়গায় গাড়ি থামিয়ে গুগল ম্যাপে ‘পার্ক নেয়ারবাই’ খুঁজলাম। দশ মিনিটের দূরত্বে পার্কের ঠিকানা জিপিএসএ টাইপ করে ফোন করলাম অফিসে,আই হ্যাভ এ্যান ফ্যামিলি ইমার্জেন্সি! প্লিজ এক্সকিউজ মাই এ্যাবসেন্ট টুডে।তারপর সুইচ অফ ফোনের।
গাড়ির স্পিকারে আমজাদ আলী খানের সরোদ অন করতে গিয়ে চোখ পড়েছিলো রিয়ার ভিউ মিররে। না, তখনো চোখমুখ অবিচলিত ছিল!দশ মিনিটের পথ, খুব বেশি লম্বা নয়। প্রত্যাশার তুলনায় নিরিবিলি পার্ক। পাতাহীন লম্বাগাছের সারি পার হলে প্রায় বরফ জমা লেক। হু হু করা ঠা-া বাতাসে নিজেও বরফ জমা হয়ে যাবো জেনেও ওখানেই চলে গিয়েছিলাম। ঠা-ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে চিনিহীন তেতো ডিক্যাফে চুমুক দিয়ে ইয়ার মাফস পরে নিয়েছিলাম। তারপর বন্ধ চোখ। শীতল বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছিলো আমার অনাবরণ মুখ। আমি বন্ধ চোখে দেখতে পাচ্ছিলাম,পতাকায় ঢাকা হয়েছে তোমাকে। অজ¯্র ফুল তোমাকে ছুঁয়ে নির্বিকার পড়ে আছে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ওরা ডান হাতেউঁচিয়ে রেখেছে গান। সামরিক ব্যান্ড বাজছে সুরের এতোটুকু লয় না হারিয়ে। তোমার চোখ বন্ধ মুখের শীতলতায় তাল মিলিয়ে চারপাশের সবকিছু নিথর!আমি চিৎকার করে উঠলাম। কেতাদুরস্ত এই শহরের সব আদবকেতা বিসর্জন দিয়ে আমি চিৎকার করে উঠলাম,বাবা... বাবা... বাবা...
সেই প্রথম আমার পৃথিবী মেনে নিলো বাবাহীন নিজেকে। কতক্ষণ চিৎকার করেছিলাম জানি না। শুধু মনে পড়ে যখন ধাতস্থ হয়েছিলাম তখন শীতের রোদ মরে গিয়ে চারপাশ ধূসর হয়ে গিয়েছিলো। ঠা-া বাড়ছিলো। তেতো ডিকেইফে আরেকবার চুমুক দিয়েছিলাম একটু উষ্ণতার আশায়।এরপরেই অদ্ভুত করা ঘটনাটি ঘটলো। প্রথমবারের মতো ঘটলো। তোমার মৃতমুখ কল্পনার চোখ থেকে সরাতে এদিকওদিক তাকাতে লাগলাম। একটা দুটো পায়রা লেকের পাশে উড়ে আসছিলো। মরা গাছের শুকনো ডালে জমে থাকা বরফ বাতাসের টোকায় ঝুরঝুর ঝরে পড়ছিলো। কিছু না ভেবেই ব্যাগে হাত ঢুকিয়েছিলাম স্টিকিপ্যাড আর কলম খুঁজতে।ঘরে ফেরার আগে গ্রোসারির লিস্ট করা প্রয়োজন ছিল।কিন্তু হাতে উঠে এসেছিলো চশমা। তোমার সেই ফ্রেমভাঙা চশমা। যেটা না লুকোলে তুমি নতুন চশমাটা ধরতেই না।
ব্রাউন রঙের ফ্রেমে মাইনাস থ্রী লেন্সের চশমা। কিছু না ভেবেই চোখে পরেছিলাম পৃথিবী ব্লার দেখবো বলে। কিন্তু চমকে উঠেছিলাম। হঠাৎ চারপাশ বদলে গেলো। আমি ব্লার নয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম তোমাকে,দেশ থেকে কেন চলে গেলে? লড়াই করেই তো সবকিছু বদলাতে হয়। লড়াই করাটা শেখাতে পারিনি তোমায়। পালিয়ে গেলে তুমি...না আমি পালিয়ে আসিনি। অভিমানে চলে এসেছি। সবকিছু বদলাবে না বলে চলে এসেছি। আমি পালিয়ে আসিনি...
চিৎকার করছিলাম আমি। ততক্ষণে পার্কে দু’একজন পেট (পোষা প্রাণি) নিয়ে হাঁটতে চলে এসেছিলো। আমার চিৎকার শুনে অবাক হয়ে তাকিয়েই এটিকেট মেনে অন্যদিকে দ্রুত সরে গিয়েছিলো। আমি হ্যাঁচকা টানে চশমা খুলে ফেলেছিলাম।তোমার অভিযোগ শুনতে চাইনি তখন আর। যে অভিযোগ তোমাকে আর আমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলো তাকে মনে করতে চাইনি আমি।কিন্তু আমার চাওয়াকে তখন হয়তো প্রকৃতি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েছিলো। কারণ তারপর যে ফ্রেমভাঙা সে চশমাই আমার ন্যারো এস্কেপের পথ হবে সেটা বুঝতেই পারিনি সেদিন। ঘরে ফিরেছিলাম সব প্রশ্নের অনুত্তর চেহারায় সেঁটে। তাই কিঙ্কর মানে আমার বাচ্চাদের বাবা নীরবে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো শুধু। বাবাকে একবার শেষবার দেখতে কেন গেলাম না? অন্তত খবর পাবার পরেও কি আমার যাওয়া উচিৎ ছিল না? আর কতদিন এমন করে জেদ ধরে থাকবো?এসব প্রশ্নের জানা উত্তর কিঙ্করের সবসময় জানা,দেশে আমি ফিরবো না।তাইহয়তো কিঙ্কর আমাকে মাপতে চেয়েছিলো সেদিন সময়ের দাঁড়িপাল্লায়। কিন্তু আমি তখনো অনড়, ও দেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব না। আমি কিঙ্করের অর্থহীন অনুশোচনা সত্যিই বুঝি না। কেন নিজেকে সে এসব কিছুর জন্য দায়ী ভাবে। আমার সিদ্ধান্ত চিরকালই অর্গানিক। সেখানে কারো কোনো প্রভাব কিংবা অনুরণন নেই।
আমি বন্ধনহীন কিঙ্করকে বিয়ে করেছিলাম স্ব-ইচ্ছায়। নিজে উন্মুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছি, সেটাও নিজের ইচ্ছায়। তাহলে দেশ থেকে, পরিবার থেকে আমার বিচ্ছিন্নতায় কেন কিঙ্করের অন্তর্দাহ হবে? এসব সময়ে আমার কিঙ্করকে খুব অসহ্য লাগে। সেদিনও লেগেছিলো। তাই চুপচাপ এটিক রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
তারপর কয়েকদিন বেশ স্বাভাবিকভাবেই গেলো। আমার নিত্যদিনের স্ক্যাজুয়ালে হেরফের না করে মনোযোগী থাকতে চাইলাম একান্ত জীবনে। যেখানে সকাল থেকে রাত অবধি শুধুই ব্যস্ততা।তবুও জীবন নির্ঝঞ্ঝাট।কিন্তু ওই যে প্রকৃতির বৃদ্ধাঙ্গুলি!
তাই ক’দিন পরেই আরেকবার ঘটলো সেই অদ্ভুত ঘটনা। সাধারণত আমি রাতে ঘুমাতে যাবার আগে সময় করে সারাদিনের নিউজে চোখ বুলাই। সেদিনও তাই করছিলাম।ল্যাপটপের স্ক্রিনে নানারকম খবরের মাঝে হঠাৎ চোখে পড়লো দেশের একটা খবর। অন্য কোনো সময় হলে অনাগ্রহী আমি সে খবর এড়িয়ে যেতাম,কেয়োসইন বাংলাদেশ ওপেন ডোর টু এক্সট্রিমিস্ট... নতুন নয় কিছুই। এসব কারণেই দেশ ছেড়েছি।কিন্তু কেন জানি না সেদিন কিছু সময় চুপচাপ বসেছিলাম। ল্যাপটপের স্ক্রিন ফ্রিজ করে দিয়েছিলাম শুধুই দ্য ব্লুমবার্গ পত্রিকার নিউজের দিকে তাকিয়ে থাকবো বলে।
তারপর?
তারপর ইচ্ছে করেই ভাঙাফ্রেমের চশমা চোখে পরেছিলাম কিছু ঘটে কিনা দেখার জন্য। ঘটলো। আবার ঘটলো। আমাকে অবাক করে দিয়ে অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো,আমার পাশে বাবা বসে আছে। হাফ হাতা ফতুয়ায় সেই চিরচেনা বাবা। মুক্তিযুদ্ধের গল্প করছে। কীভাবে নয়দিন থেমে থেমে হেঁটে বর্ডার পার হয়ে ওপারে গিয়ে ট্রেনিং নিয়েছে, সেই গল্প। অপারেশনের দিনে পুড়ে যাওয়া কোনো বাড়িতে নিঃশ্বাস বন্ধ করে লুকিয়ে থাকার গল্প। গ্রেনেড চার্জ করার আগে পাটক্ষেতের নিচে সাপের পাশাপাশি শুয়ে থাকার গল্প।
সেসব তো শুনেছি। কিন্তু এমন দেশ চেয়েছিলে?আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে- এই কবিতা বিড়বিড় করতে করতে বাবা আমার পাশ থেকে উঠে চলে গেলো।আমি ফ্রেমভাঙা চশমা চোখ থেকে নামাতেই নিশ্চিত হলাম বাবা সত্যিই এসেছিলো। কারণ ভাঙা চশমা ছাড়াই আমি ল্যাপটপের স্ক্রিনে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম টুকরো টুকরো ছড়িয়ে থাকা কোনো এক স্মৃতিস্তম্ভের ইট!অনেকদিন পর সেদিন আমার কান্না পেয়েছিলো। ছেড়ে আসা দেশের জন্য কান্না পেয়েছিলো।যেদিন আমি দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বাবা উত্তেজিত হয়নি। রাগ করেনি। অস্থির হয়নি। খুব শান্তভাবে বলেছিলো, বেশ, চলে যাও। কিন্তু ফিরে এসো তখন যখন শুধুই দেশের কাছে ফিরতে চাইবে। আমার মৃত্যু কিংবা আনুষঙ্গিকতায় কখনো এই আদেশ উপেক্ষা করবে না। কথা দাও।
এ কেমন শাস্তি! শুধুমাত্র দেশ ছাড়তে চাইছি বলে আমাকেই ছেড়ে দিচ্ছে বাবা!আমিও বাবার মেয়ে। আমারও রাগ হয়নি সেদিন। আর অভিমানে তো আমি সবসময়ই আনাড়ি। নির্লিপ্তভাবে বলেছিলাম,ফেরা হবে না আর!
কিন্তু না ফিরতে চাওয়া দেশের জন্য কেন আজকাল আমার চোখ পোড়ে? কেন কারণে অকারণে ভাঙাফ্রেমের চশমা পরে আমি বাবাকে দেখতে চাই শুধু দেশে ফেরার অজুহাত খুঁজতে? কেন আমি বারবার বাবার মুখে মুক্তির গল্প শুনতে চাই?এবার বাবা এলে জিজ্ঞাসা করবো আঙিনার কদম গাছ কি এখনো শেষ বর্ষায় ফুল ফোঁটায়?