অনেক কিছু দেখি-
দিলারা হাফিজ
আজকাল অনেক কিছু দেখি- অদেখা মনে করে!
তোমার না থাকাও দেখতে পাই-
এতকাল না থেকেও পাশে ছিলে যেমন ঊনবর্ণে সপ্তরঙ
গন্ধে-স্পর্শে-স্মৃতি-পিঁপড়েদের দংশনেও তো ছিলে
কী যে হলো- জলজ্যান্ত দুঃখের দুইখানা কবিতায়
হাতে রেখেও মনে হয় কত সহ¯্র বছর পূর্বে
কেউ ফেলে গেছে এসব- যেমন অভিশপ্ত
ও অস্থির কোনো লুপ্ত সভ্যতার গল্প শুনে-
ভগ্নবুক হাহাকারে লম্বমান আমি ঘুম যাই
প্রাচীন এক অদেখা মিশরের মমি!
কথার কথা
সম্পদ বড়ুয়া
কথা না দিয়েও আমি কতদিন রেখেছি যে কথা
হাজারো কথার ভিড়ে তোমাকেই দিয়েছি মৌনতা।
ঝর্না কি দিয়েছে কথা শুধে যাবে সমুদ্রের ঋণ?
ফেনায় ফেনায় ভেসে বুকে নিয়ে বেদনার বীণ?
কাঁকর পাথর নুড়ি- কথা ছিল হবে সহচর,
তারাও রাখেনি কথা, মাথা গুঁজে মাটির ভেতর।
মেঘের আড়ালে বসে বৃষ্টি ধারা কথা দেয় মেলা,
নিদাঘ রৌদ্রের সাথে খেলে যাবে লুকোচুরি খেলা।
মেঘের চাদরে ঝুলে অন্ধকার সা¤্রাজ্য বাড়ায়,
কথা শুধু কথা থাকে, রোদ-বৃষ্টি সুদূরে হারায়।
কত কথা ছিল বলা, কত কথা থাকে আরও বাকি
তোমার মনের কথা কথাচ্ছলে দেয় শুধু ফাঁকি।
সন্ধান
মুশাররাত
একটা শব্দের সন্ধানে
দিন রাত, বছরের পর বছর,
যুগের পর যুগ আমার পার
হয়ে গেলো, ফিরে যাবার দারপ্রান্তেও
আশার প্রদীপ জ্বলছে নিভু নিভু
সেই অল্প আলোর তীব্র জ্যোতিতে
সূর্যের মতো মুখখানা আমি মনে হয়
দেখে যেতে পারবো, কারণ ছাড়াই।
মনে হয় বারান্দার মানি প্ল্যান্টগুলো তৃষ্ণা
মিটিয়ে আবার সজীব হয়ে উঠবে
টিভির রিমোটটা যত লুকোচুরিই খেলুক
একদিন লক্ষ্মী মেয়ের মতো, ভদ্রভাবে
সেন্টার টেবিলটাতেই থাকবে
ধূলিভরা মনিটরে আর আঁকতে হবে না
গগার সানফ্লাওয়ারের মলিন মুখ
দেয়ালে ফিটফাট ঝুলবে নকশিকাঁথার ফ্রেমখানা
কোন পাগল যে দিয়েছিলো
এই অগোছালো মানুষটার জন্মদিনে! সে ভেবেছিলো
আমি হয়তো স্রোতস্বিনী সন্ধ্যা নদীর মতোই গতিশীল
ভেতরটা দেখার চোখ ছিলো না তার
তাকিয়েছে শুধু, দেখেনি সেখানে খর¯্রােতার কালো অন্ধকার
বোকা মানুষের পৃথিবীজুড়ে স্বপ্নেরা
আঁকা থাকে আমৃত্যু, আমি অতোটা বোকা নই
মাত্র একটা আঁচড় দিয়ে রেখেছি রঙ আর
তুলির ব্যয়সাপেক্ষ জীবনে
আমার ঘরের নিশ্চিন্ত আবাসে
শ’খানেক মাকড়সা আর টিকটিকির সুখময় আবাস
অথচ এখানে গড়ে ওঠেনি এখনও মনুষ্য বসতি
শূন্য পড়ে থাকে ডাইনিংয়ে মাখানো বাসি
ঝোলমাখা ভাত আরশোলাদের গোল্লাছুটের মাঠ হয়ে
তবু আমি অপেক্ষায় থাকি বিস্মৃত
ঝর্নার সুললিত শব্দের মতো
আরাধ্য পূর্ণিমার আলো চুয়ে চুয়ে পড়া
অনুভূতি নিয়ে- ঠক ঠক ঠক।
নির্জনতায় অস্পৃশ্য
রাহমান ওয়াহিদ
তার কণ্ঠনালী থেকেই তুলে আনি
প্রিয় শব্দাবলি, নিপাট পংক্তিমালা
তার ভেতর থেকেই কতবার যে
ডেকে ডেকে যাই দিঘিজল মৌনতায়
রাতদিন কত যে ভাসাই তাকে
জলজোছনার ঢেউ মোহনায়...
কেবল আটপৌরে নারীর মতোন
আমারি কণ্ঠলগ্ন হয়ে, বাহুলগ্ন হয়ে
ছায়ার মতো অসহ্য ঘন হয়ে রাতদিন
আমাকেই সে দিচ্ছে বাহুল্য প্রক্ষেপণ।
আমি যে তার ভেতরেই একা হতে থাকি
তার কণ্ঠহার থেকে, বাহুডোর থেকে
মসৃণ তলপেট থেকে ক্রমশ যে অযৌন
হতে হতে নির্জনতায় অস্পৃশ্য হতে থাকি-
কার সাধ্য জানবে কোন্ সে সাঁতারু ঈশ্বর?
ঘুণে খাওয়া পাহাড়গুলো
রুদ্র রায়হান
তোমাদের মিথ্যে দাবিগুলো
এতোবার বেজেছে মাইক, মাইক্রোফোন আর যন্ত্রেতন্ত্রে
শুনতে শুনতে নষ্ট হয়ে গেছে লক্ষ কোটি শ্রবণশক্তি
দূরদর্শন, পেপার, ম্যাগাজিন, ফেসবুক কিংবা
ইনস্টাগ্রামে এতোবার ভেসে এসেছে
দেখতে দেখতে নষ্ট হয়েছে সব নিরপরাধ চোখ
অথচ সবার সব শোনার কিংবা দেখার ইচ্ছেই ছিল না।
তোমাদের প্রতারণা থেকে পায়নি রেহাই অবুঝ শিশুগুলো।
পাঠ্যসূচিতে মিথ্যার ফুলঝুরিতে, কথায়, কাব্যে তোমাদের
নিনাদ অযাচিত ঝংকার তুলেছে কৃত্রিম বসন্তে;
সাজানো প্রকৃতিতে ভাড়াটে পাপিয়ার সঙ্গীত শুনিয়েছো নিজেদের নামে;
অসত্য বইমেলার সমস্ত স্টল তোমাদের মিথ্যা মিথে ভরা গ্রন্থে;
মুখোশে আচ্ছাদিত তোমাদের আদর্শ;
স্বার্থের দূরবীনে তোমরা দেখো দুনিয়ার চৌকাঠ।
কিন্তু কিছুতেই রক্ষে হয় না ঘুণে খাওয়া পাহাড়গুলো;
তুচ্ছ প্রতিরোধেই ভেঙ্গে পড়ে চুরমার হয়ে;
সাথে তোমাদের অহমিকা; মিথ্যা মসনদ।
ত্রিষ্টুপ
শেখর দেব
১.
এই ক্ষয়িষ্ণু সূর্যের পথে
কেন যাবে দূর অস্তাচলে
সন্ধ্যা প্রদীপের অবিকল
উদ্ভাসিত হও পলে পলে...
২.
বৃষ্টি ঝরে যায় অবিরত
এ বুঝি বরষার মনোবাস
বুকের ভেতর শুষ্ক নদী
এ কোন ঋতু এই পরিহাস!
৩.
বৃষ্টি বৃষ্টি তুমুল ভাঙে
এমন ঝরে নদীর মায়ায়
দূর পাহাড়ের অনল আয়ু
শান্ত হয়ে বইছে হাওয়ায়।
৪.
নামছে সন্ধ্যা মদির ধীরে
সবুজে সবুজে নামে আঁধার
নীড়ের পাখিরা ফিরছে ঘরে
ফিরছে না মন ঘরে যে আর!
৫.
দূরের ঐ উদ্ভাসিত আলো
পরস্পর আলোকিত সব
সবুজ হয়েছে সবুজ আরো
ঐ নীলে পাখিদের কলরব।
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
অনেক কিছু দেখি-
দিলারা হাফিজ
আজকাল অনেক কিছু দেখি- অদেখা মনে করে!
তোমার না থাকাও দেখতে পাই-
এতকাল না থেকেও পাশে ছিলে যেমন ঊনবর্ণে সপ্তরঙ
গন্ধে-স্পর্শে-স্মৃতি-পিঁপড়েদের দংশনেও তো ছিলে
কী যে হলো- জলজ্যান্ত দুঃখের দুইখানা কবিতায়
হাতে রেখেও মনে হয় কত সহ¯্র বছর পূর্বে
কেউ ফেলে গেছে এসব- যেমন অভিশপ্ত
ও অস্থির কোনো লুপ্ত সভ্যতার গল্প শুনে-
ভগ্নবুক হাহাকারে লম্বমান আমি ঘুম যাই
প্রাচীন এক অদেখা মিশরের মমি!
কথার কথা
সম্পদ বড়ুয়া
কথা না দিয়েও আমি কতদিন রেখেছি যে কথা
হাজারো কথার ভিড়ে তোমাকেই দিয়েছি মৌনতা।
ঝর্না কি দিয়েছে কথা শুধে যাবে সমুদ্রের ঋণ?
ফেনায় ফেনায় ভেসে বুকে নিয়ে বেদনার বীণ?
কাঁকর পাথর নুড়ি- কথা ছিল হবে সহচর,
তারাও রাখেনি কথা, মাথা গুঁজে মাটির ভেতর।
মেঘের আড়ালে বসে বৃষ্টি ধারা কথা দেয় মেলা,
নিদাঘ রৌদ্রের সাথে খেলে যাবে লুকোচুরি খেলা।
মেঘের চাদরে ঝুলে অন্ধকার সা¤্রাজ্য বাড়ায়,
কথা শুধু কথা থাকে, রোদ-বৃষ্টি সুদূরে হারায়।
কত কথা ছিল বলা, কত কথা থাকে আরও বাকি
তোমার মনের কথা কথাচ্ছলে দেয় শুধু ফাঁকি।
সন্ধান
মুশাররাত
একটা শব্দের সন্ধানে
দিন রাত, বছরের পর বছর,
যুগের পর যুগ আমার পার
হয়ে গেলো, ফিরে যাবার দারপ্রান্তেও
আশার প্রদীপ জ্বলছে নিভু নিভু
সেই অল্প আলোর তীব্র জ্যোতিতে
সূর্যের মতো মুখখানা আমি মনে হয়
দেখে যেতে পারবো, কারণ ছাড়াই।
মনে হয় বারান্দার মানি প্ল্যান্টগুলো তৃষ্ণা
মিটিয়ে আবার সজীব হয়ে উঠবে
টিভির রিমোটটা যত লুকোচুরিই খেলুক
একদিন লক্ষ্মী মেয়ের মতো, ভদ্রভাবে
সেন্টার টেবিলটাতেই থাকবে
ধূলিভরা মনিটরে আর আঁকতে হবে না
গগার সানফ্লাওয়ারের মলিন মুখ
দেয়ালে ফিটফাট ঝুলবে নকশিকাঁথার ফ্রেমখানা
কোন পাগল যে দিয়েছিলো
এই অগোছালো মানুষটার জন্মদিনে! সে ভেবেছিলো
আমি হয়তো স্রোতস্বিনী সন্ধ্যা নদীর মতোই গতিশীল
ভেতরটা দেখার চোখ ছিলো না তার
তাকিয়েছে শুধু, দেখেনি সেখানে খর¯্রােতার কালো অন্ধকার
বোকা মানুষের পৃথিবীজুড়ে স্বপ্নেরা
আঁকা থাকে আমৃত্যু, আমি অতোটা বোকা নই
মাত্র একটা আঁচড় দিয়ে রেখেছি রঙ আর
তুলির ব্যয়সাপেক্ষ জীবনে
আমার ঘরের নিশ্চিন্ত আবাসে
শ’খানেক মাকড়সা আর টিকটিকির সুখময় আবাস
অথচ এখানে গড়ে ওঠেনি এখনও মনুষ্য বসতি
শূন্য পড়ে থাকে ডাইনিংয়ে মাখানো বাসি
ঝোলমাখা ভাত আরশোলাদের গোল্লাছুটের মাঠ হয়ে
তবু আমি অপেক্ষায় থাকি বিস্মৃত
ঝর্নার সুললিত শব্দের মতো
আরাধ্য পূর্ণিমার আলো চুয়ে চুয়ে পড়া
অনুভূতি নিয়ে- ঠক ঠক ঠক।
নির্জনতায় অস্পৃশ্য
রাহমান ওয়াহিদ
তার কণ্ঠনালী থেকেই তুলে আনি
প্রিয় শব্দাবলি, নিপাট পংক্তিমালা
তার ভেতর থেকেই কতবার যে
ডেকে ডেকে যাই দিঘিজল মৌনতায়
রাতদিন কত যে ভাসাই তাকে
জলজোছনার ঢেউ মোহনায়...
কেবল আটপৌরে নারীর মতোন
আমারি কণ্ঠলগ্ন হয়ে, বাহুলগ্ন হয়ে
ছায়ার মতো অসহ্য ঘন হয়ে রাতদিন
আমাকেই সে দিচ্ছে বাহুল্য প্রক্ষেপণ।
আমি যে তার ভেতরেই একা হতে থাকি
তার কণ্ঠহার থেকে, বাহুডোর থেকে
মসৃণ তলপেট থেকে ক্রমশ যে অযৌন
হতে হতে নির্জনতায় অস্পৃশ্য হতে থাকি-
কার সাধ্য জানবে কোন্ সে সাঁতারু ঈশ্বর?
ঘুণে খাওয়া পাহাড়গুলো
রুদ্র রায়হান
তোমাদের মিথ্যে দাবিগুলো
এতোবার বেজেছে মাইক, মাইক্রোফোন আর যন্ত্রেতন্ত্রে
শুনতে শুনতে নষ্ট হয়ে গেছে লক্ষ কোটি শ্রবণশক্তি
দূরদর্শন, পেপার, ম্যাগাজিন, ফেসবুক কিংবা
ইনস্টাগ্রামে এতোবার ভেসে এসেছে
দেখতে দেখতে নষ্ট হয়েছে সব নিরপরাধ চোখ
অথচ সবার সব শোনার কিংবা দেখার ইচ্ছেই ছিল না।
তোমাদের প্রতারণা থেকে পায়নি রেহাই অবুঝ শিশুগুলো।
পাঠ্যসূচিতে মিথ্যার ফুলঝুরিতে, কথায়, কাব্যে তোমাদের
নিনাদ অযাচিত ঝংকার তুলেছে কৃত্রিম বসন্তে;
সাজানো প্রকৃতিতে ভাড়াটে পাপিয়ার সঙ্গীত শুনিয়েছো নিজেদের নামে;
অসত্য বইমেলার সমস্ত স্টল তোমাদের মিথ্যা মিথে ভরা গ্রন্থে;
মুখোশে আচ্ছাদিত তোমাদের আদর্শ;
স্বার্থের দূরবীনে তোমরা দেখো দুনিয়ার চৌকাঠ।
কিন্তু কিছুতেই রক্ষে হয় না ঘুণে খাওয়া পাহাড়গুলো;
তুচ্ছ প্রতিরোধেই ভেঙ্গে পড়ে চুরমার হয়ে;
সাথে তোমাদের অহমিকা; মিথ্যা মসনদ।
ত্রিষ্টুপ
শেখর দেব
১.
এই ক্ষয়িষ্ণু সূর্যের পথে
কেন যাবে দূর অস্তাচলে
সন্ধ্যা প্রদীপের অবিকল
উদ্ভাসিত হও পলে পলে...
২.
বৃষ্টি ঝরে যায় অবিরত
এ বুঝি বরষার মনোবাস
বুকের ভেতর শুষ্ক নদী
এ কোন ঋতু এই পরিহাস!
৩.
বৃষ্টি বৃষ্টি তুমুল ভাঙে
এমন ঝরে নদীর মায়ায়
দূর পাহাড়ের অনল আয়ু
শান্ত হয়ে বইছে হাওয়ায়।
৪.
নামছে সন্ধ্যা মদির ধীরে
সবুজে সবুজে নামে আঁধার
নীড়ের পাখিরা ফিরছে ঘরে
ফিরছে না মন ঘরে যে আর!
৫.
দূরের ঐ উদ্ভাসিত আলো
পরস্পর আলোকিত সব
সবুজ হয়েছে সবুজ আরো
ঐ নীলে পাখিদের কলরব।