বাংলা অনুবাদ: চরু হক
কবীর একজন ভারতীয় সাধক। তাঁর ঈশ্বর-সাধনার কাহিনি এখনো উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে কিংবদন্তির মতো ছড়িয়ে আছে। তাঁর রচিত দোঁহার গভীরতায় মুগ্ধ হয়ে ইংরেজি অনুবাদের মাধ্যমে কিছু কবিতা রবীন্দ্রনাথ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেন। ইন্টারনেট থেকে পাওয়া একটি ইংরেজি সংকলন থেকে বর্তমান কবিতাগুলি অনূদিত। অনুবাদকের নাম অজ্ঞাত -চরু হক।
এক.
তুমি কোথায় খুঁজছো আমাকে?
আমি আছি তোমার পাশেই।
মসজিদেও না, মন্দিরেও না
কাবায়ও না, কৈলাসেও না,
না দোল-পূর্ণিমায় বা যোগে-ধ্যানে।
যদি খুঁজতে জানো
তবে এক্ষুণি পাবে আমাকে
সময়েরও দরকার হবে না
কবীর ভনে, ‘ঈশ্বর যে নিঃশ্বাসেরও নিশ্বাস।’
দুই.
চাঁদ আলো ঢেলে দেয় আমার এই দেহে
কিন্তু আমার অন্ধ চোখ তা দেখতে পায় না
আমার ভেতরেই তো চাঁদ; আমার ভেতরেই তো সূর্য।
অসীমের নীরব সঙ্গীত বেজে চলেছে আমার ভেতর
কিন্তু আমার বধির কান তা শুনতে পায় না
যতদিন মানুষ শুধু ‘আমি’ আর ‘আমার’ ধ্বনির ঝনঝনানি
নিয়েই অস্থির থাকবে
ততদিন সব কাজই নিষ্ফল।
‘আমি’ আর ‘আমার’ শব্দের টান যখন ফুরাবে
তখনই বুঝবে কাজের কাজ যা ছিল তা হয়ে গেছে।
কারণ সকল কাজের মূল উদ্দেশ্য একটাই-
তাকে জানা।
এই জ্ঞান যখন আসে তখন সব কাজ আস্তে করে
সরিয়ে রাখতে হয়।
কুসুম প্রস্ফুটিত হয় ফলের কামনায়
ফল যখন দেখা দেয় কুসুম তখন আপনা থেকেই
ঝরে যায়,
হরিণের রয়েছে মহামূল্যবান মৃগনাভি
কিন্তু সে তার খোঁজ না করে কেবল
পথে পথে ঘাসের খোঁজে দৌড়ায়।
তিন.
হায়, গোপন কথাটি আমি কী করে বলব?
হায়, কী করে বলব যে সে এরকমও নয়, সেরকমও নয়
যদি বলি, সে তো আমার মধ্যেই আছে,
তাহলে জগৎ পাবে লজ্জা।
যদি বলি, সে আমার মধ্যে নেই
তাহলে হবে তা ডাহা মিথ্যা
ভেতরে ও বাইরে সবখানেই সে অদৃশ্য এবং অভিন্ন হয়ে থাকে,
চেতনে বা অচেতনে সবখানেই তার পায়ের দাগ পড়ে,
লুকিয়েও থাকে না, বাইরেও আসে না
কেমন করে বলব, সে যে কেমন!
চার,
‘তোমার জাত কী’ এই প্রশ্ন করাই তো অর্বাচীন
কারণ যোদ্ধা বা বণিক বা যাজক যার কথাই বলো
কিংবা আরো যত অগণন জাতিরা রয়েছে তাদের কথাও যদি ধরো
ঈশ্বরের খোঁজে গেলে সকলকেই অভিন্ন পথেই যেতে হবে।
তাহলে সাধুর কাছে জাত জানা কতই না অর্থহীন, দেখ।
নাপিত যেমন করে খুঁজছে স্রোষ্টাকে
এমনিভাবে খুঁজছে তো ধোপানি কি কাঠমিস্ত্রিও
রাইদাসও তোমাকেই খুঁজেছিল প্রভু।
স্বপচ ঋষি তো ছিলেন চামড়ার কারবারি
তুমিই তো ঠিকানা দেখালে তাকে
হিন্দু বলো কিংবা মুসলিম বলো সবাই তো মিশেছে তোমাতে
তোমার নিকটে তাই বাছবিচার কই?
পাঁচ.
ফুলের বাগানে যেয়ো না বন্ধু, ওখানে যেয়ো না।
তোমার সত্তার মাঝখানেই সব লুকিয়ে আছে
সহস্র পদ্মের আসন, সেখানে তুমি বসো,
তাহলে দেখবে সেখানে দুলছে পারাপারহীন শ্রী।
বাংলা অনুবাদ: চরু হক
বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫
কবীর একজন ভারতীয় সাধক। তাঁর ঈশ্বর-সাধনার কাহিনি এখনো উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে কিংবদন্তির মতো ছড়িয়ে আছে। তাঁর রচিত দোঁহার গভীরতায় মুগ্ধ হয়ে ইংরেজি অনুবাদের মাধ্যমে কিছু কবিতা রবীন্দ্রনাথ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেন। ইন্টারনেট থেকে পাওয়া একটি ইংরেজি সংকলন থেকে বর্তমান কবিতাগুলি অনূদিত। অনুবাদকের নাম অজ্ঞাত -চরু হক।
এক.
তুমি কোথায় খুঁজছো আমাকে?
আমি আছি তোমার পাশেই।
মসজিদেও না, মন্দিরেও না
কাবায়ও না, কৈলাসেও না,
না দোল-পূর্ণিমায় বা যোগে-ধ্যানে।
যদি খুঁজতে জানো
তবে এক্ষুণি পাবে আমাকে
সময়েরও দরকার হবে না
কবীর ভনে, ‘ঈশ্বর যে নিঃশ্বাসেরও নিশ্বাস।’
দুই.
চাঁদ আলো ঢেলে দেয় আমার এই দেহে
কিন্তু আমার অন্ধ চোখ তা দেখতে পায় না
আমার ভেতরেই তো চাঁদ; আমার ভেতরেই তো সূর্য।
অসীমের নীরব সঙ্গীত বেজে চলেছে আমার ভেতর
কিন্তু আমার বধির কান তা শুনতে পায় না
যতদিন মানুষ শুধু ‘আমি’ আর ‘আমার’ ধ্বনির ঝনঝনানি
নিয়েই অস্থির থাকবে
ততদিন সব কাজই নিষ্ফল।
‘আমি’ আর ‘আমার’ শব্দের টান যখন ফুরাবে
তখনই বুঝবে কাজের কাজ যা ছিল তা হয়ে গেছে।
কারণ সকল কাজের মূল উদ্দেশ্য একটাই-
তাকে জানা।
এই জ্ঞান যখন আসে তখন সব কাজ আস্তে করে
সরিয়ে রাখতে হয়।
কুসুম প্রস্ফুটিত হয় ফলের কামনায়
ফল যখন দেখা দেয় কুসুম তখন আপনা থেকেই
ঝরে যায়,
হরিণের রয়েছে মহামূল্যবান মৃগনাভি
কিন্তু সে তার খোঁজ না করে কেবল
পথে পথে ঘাসের খোঁজে দৌড়ায়।
তিন.
হায়, গোপন কথাটি আমি কী করে বলব?
হায়, কী করে বলব যে সে এরকমও নয়, সেরকমও নয়
যদি বলি, সে তো আমার মধ্যেই আছে,
তাহলে জগৎ পাবে লজ্জা।
যদি বলি, সে আমার মধ্যে নেই
তাহলে হবে তা ডাহা মিথ্যা
ভেতরে ও বাইরে সবখানেই সে অদৃশ্য এবং অভিন্ন হয়ে থাকে,
চেতনে বা অচেতনে সবখানেই তার পায়ের দাগ পড়ে,
লুকিয়েও থাকে না, বাইরেও আসে না
কেমন করে বলব, সে যে কেমন!
চার,
‘তোমার জাত কী’ এই প্রশ্ন করাই তো অর্বাচীন
কারণ যোদ্ধা বা বণিক বা যাজক যার কথাই বলো
কিংবা আরো যত অগণন জাতিরা রয়েছে তাদের কথাও যদি ধরো
ঈশ্বরের খোঁজে গেলে সকলকেই অভিন্ন পথেই যেতে হবে।
তাহলে সাধুর কাছে জাত জানা কতই না অর্থহীন, দেখ।
নাপিত যেমন করে খুঁজছে স্রোষ্টাকে
এমনিভাবে খুঁজছে তো ধোপানি কি কাঠমিস্ত্রিও
রাইদাসও তোমাকেই খুঁজেছিল প্রভু।
স্বপচ ঋষি তো ছিলেন চামড়ার কারবারি
তুমিই তো ঠিকানা দেখালে তাকে
হিন্দু বলো কিংবা মুসলিম বলো সবাই তো মিশেছে তোমাতে
তোমার নিকটে তাই বাছবিচার কই?
পাঁচ.
ফুলের বাগানে যেয়ো না বন্ধু, ওখানে যেয়ো না।
তোমার সত্তার মাঝখানেই সব লুকিয়ে আছে
সহস্র পদ্মের আসন, সেখানে তুমি বসো,
তাহলে দেখবে সেখানে দুলছে পারাপারহীন শ্রী।