alt

সাময়িকী কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

কান্নার স্বরগ্রাম
আতাউর রহমান মিলাদ
ছিঁড়ে গ্যাছে স্বর,অন্ধকার এ বিদ্যুতের শহর

পলকে পলকে ভয়,

ফিসফিস,কানাকানি

সন্দেহ চোখে ও মনে...

উৎকণ্ঠিত খিড়কির মুখ

মাকড়সার জালে বিভ্রান্ত সন্ধ্যা এক

পাহারায় উন্মাদ দল

অস্তিত্ব স্পর্ধায় যাত্রার আয়োজন

দুর্বোধ্য মন্ত্রপাঠ,রাতের বন্দনা

এমনও সময় আসে কুয়াশার কান্না

ভারি হয়ে ওঠে...

মনে হয় সবই মনের ভ্রম
খালেদ হোসাইন
তুমি খুব সরলভাবে জটিল

তুমি খুব বিষণœ সুন্দর

তুমি এক মাঝ-সমুদ্রে দ্বীপ

তুমি এক নির্জন বন্দর।

তুমি এক রৌদ্রাভ কুয়াশা

তুমি কৃষ্ণপক্ষের আলো

তুমি এক অতন্দ্রপ্রতিভা

স্বভাবে প্রচ- ঝাঁজালো।

তোমাকে ভালোবাসা দায়।

কার আছে এত পরাক্রম?

যদিও জ্বাজল্যমান

মনে হয়, সবই মনের ভ্রম।

গালের রং হলুদ
শিহাব শাহরিয়ার
এসো বেদনার দাগে কুমড়োগাছ লাগাই

হলুদ ফুল ফুটলে আমরা বাতাসা খাবো

তখন বাতাসে আর উড়বে না কণ্ঠনালী

তখন গোয়ালন্দে নামবে না সন্ধ্যার কুয়াশা

কেউ কেউ ফুটপাত দখল করে

শুয়ে থাকতেই পারে, থাকুক না

যেমন তুমি স্কার্ফের সাথে মনোভূমিকেও রেখেছ

যেমন শরীর বিকিয়ে অনেকেই ঘরে ফিরে যায়

জানো তো?

কৃষ্ণচূড়া আর ধঞ্চেপাতার আয়তন একই

কিন্তু শব্দ দুটি আলাদা ব্যঞ্জনায় অভিষিক্ত

ধঞ্চে নদীবাহিত আর কৃষ্ণচূড়া রাবীন্দ্রিক

তোমাদের টিনের চালের রিমঝিম শব্দ

শেষ হয়েছিল বলেই

আমরা শহরের রিকশায় ঘুরতে পেরেছিলাম

তারপরঃ এই শহর সন্ধি-বিচ্ছেদের মতো

আলাদা হয়ে গেছে, হোক

তবু খুব মনে আছে

তোমার গালের রং ছিল

কুমড়ো ফুলের মতো হলুদ

আমার শারদীয়া
পিয়াস মজিদ
আমারও শরৎ ছিল;

শেফালির স্তূপ, কাশের গুচ্ছ

আর আলোর অরুণ।

বড় হতে গিয়ে মানুষ যেভাবে

গলা টিপে হত্যা করে

তার ভেতরের সরল শরৎ,

এভাবে আমিও

মধুবাগান মোড়ে

হাঁটতে গিয়ে দেখি

হারিয়ে ফেলেছি

জীবনের জরুরি সব

বিষাক্ত লাবণি।

অথচ আমার ভেতরবাড়ির মাঠেও

হাঁক দিত

অপু ও দুর্গার শারদীয় ফেরিঅলা,

‘সন্দেশ, তিলগজা, বাতাসা...।’

আবারও শরৎ এল,

এইবার জীবনের

ঋতুহীন যত জটিল অর্জন

খুন করে, লাল রক্তমাখা আমি

অপু ও দুর্গার সাথে ছুটতে থাকব

শরৎশোভা মাঠে;

অনন্তের শাদা বাতাসার দিকে।

অটোফেজি
রফিকুল ইসলাম আধার
রক্তমাখা সময়ের অন্ধগলিতে

বিবেকের মুখোশে জমে ওঠে শৈত্য,

রুচির শহরে দুর্ভিক্ষ-

ভালোবাসা আজ করাতের দাঁত

বিদ্ধ করে মনস্তত্ত্ব।

 

আমি ধীরে ধীরে নিজেকেই গ্রাস করি,

ভেতরের শূন্যতা চিবিয়ে খাই,

অভিমান, ক্লান্তি, বেদনাবোধ

সবকিছু গলাধঃকরণ করি প্রতিদিন।

 

সময়ের নিঃসঙ্গ আগুনে

প্রতি শ্বাসে জমে ওঠে অবিশ্বাসের ছাই,

অগত্যা অস্তিত্বের অভুক্ত কোষ

নিগূঢ় নিয়মে নিজেকেই গিলে খায়

যেমন সিয়ামের তপস্যায়

শরীর বাঁচে নিজের ক্ষয়েই।

 

ওশিনরি ওসুমি জানতেন,

বেঁচে থাকার জন্য

মৃত্যুকে শোষণ করাও এক শিল্প

একধরনের আত্মজৈবনিক অনুশাসন।

শরতের মোহময় রাত
চঞ্চল শাহরিয়ার
জানালায় চোখ রেখে দেখি শিউলি ফুলেরা দূর্বাঘাস আর গাড়ি বারান্দায় টুপটাপ ঝরে যাচ্ছে। সেই সাথে ঝরে যাচ্ছে শিশিরের ফোঁটা। চন্দন গন্ধের বনে হারাবার আগে আমি এই দৃশ্য মন ভরে দেখি। জানি ভোরবেলা আমি জেগে উঠবার আগে ফুলগুলো যতœ করে কুড়িয়ে কুড়িয়ে নেবে ঘোষেদের মেয়ে। সাহাদের রাসমণি দিদি। শিশিরের ছোঁয়া পায়ে মেখে মালা গেঁথে গান গাবে জেসমিন জুঁই।

রাত জেগে শরতের আপন সৌন্দর্য আমাকে আগলে রাখে লাজুক কিশোরী হয়ে। ক্রমশ খুলতে থাকে উপন্যাসের দরোজা। কাশবন ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমি খুঁজি প্রিয় নদীটির নাম।

বৃক্ষশৃঙ্খল
পারভেজ আহসান
করাত চালালো অশ্বত্থের

ডালপালায় ও কা-ে-

অঙ্গ থেকে রক্তপাত

পাতার ঠোঁটে বিষাদের কোরাস

ভোর ফোটে-

ঘুম শেষে ছেলেটি বিস্ময়ে তাকায়-

কর্তিত অশ্বত্থ গাছে সবুজ উৎসব

উঁচু ও প্রসারিক বৃক্ষের কাছে

ন্যুব্জ বৃক্ষসমাজ।

শরৎ বন্দনা
মুমির সরকার
পরিত্যক্ত শশ্মানঘাটে

শরৎ বন্দনায় ব্রতী-

একজোড়া তক্ষক,

রতিক্রিয়ায় নাছোড়বান্দা!

শিরীষ-মগডালে

ক’খান ছাইরঙা শকুন,

একসনা দৃষ্টি হানে

অই দূরের কাশবন।

ঊর্ধ্বাকাশ বিস্তীর্ণ-

যে নীল আগুন জ্বলে,

ইচ্ছামতীর স্বচ্ছ বুকে,

আর কোন চলচ্চিত্র না

শারদীয় সাজে

নীল আঁচল দুলে ওঠে,

কেহবা একলা দাঁড়ায়ে

কী নিবিড় সে অপেক্ষা!

জীবন এক মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
মহসিন খোন্দকার
আমি ভাতশালিক পুষে বড় করেছি,ডানা মেলে উড়ার সময় দেখি এটি গুশালিক,একটি সকালকে খুব যতেœ চোখে ঠেসে রেখেছিলাম, শিহরনের সময় শিশির খাব,গতকাল খুলে দেখি এটি পড়ন্ত বিকেল

যে স্যার পড়িয়েছিলেন- পৃথিবী ঘুরে, সে স্যার সেদিনমাথাঘুরে পড়ে গেলেন, তার অক্ষিগোলক দু’বার ঘুরে চির নিস্তব্ধ হয়ে গেল, যে মেয়ে বলে গেছে,অপেক্ষা করুন ভোর হবে, তার নাম রাত্রি, সে থাকে আমার হাঁড়ের ভেতর

যে ডাক্তার আমার হাঁড়ক্ষয়ের চিকিৎসা করেছেন

তিনিও বিস্মিত হলেন- কেউ একজন বসে বসে

আপনার হাড় খেয়েছে,আমি জানি আমার পরিণতির

কথা,জীবন এক মধ্যপদলোপী কর্মধারয়

কোথায় তারে বসাই
ডালিয়া চৌধুরী
বিকেল কড়া নেড়েছিলো দরজায়

অপ্রস্তুত আমি খুলিনি,

আলোটা কৃষ্ণচূড়া রঙে

এমনভাবে দখলে রেখেছিলো

কোথায় তারে বসাই,

সন্ধ্যা গাঢ় হলো বাইরের দরজায়।

রক্তিম রোদে দুঃখটা ঘণীভূত হয়ে

ছড়িয়ে পড়ে করিডোরে,

দূরবর্তী জীর্ণ বনের ভারি আওয়াজ

বাতাসে ভেসে অব্যর্থ দীর্ঘশ্বাসে

দীর্ঘ পরিভ্রমণ শেষে

সময়ের রঙে গোধূলির জটাজালে,

প্রতিধ্বনিময় অতীতের উন্মাদনায়

বিষাদ বেজে ওঠে বুকের গিটারে।

বিকেল কড়া নেড়েছিলে দরজায়,

শূন্যতার মতো আকাশ ধরে

বিস্তৃত নীলের ব্যথিত আবহে

অপাংক্তেয় এতোসব সরঞ্জামে

কোথায় তারে বসাই,

সন্ধ্যা গাঢ় হলো বাইরের দরজায়।

জীবনের যৌবন
ফজিলা ফয়েজ
খাস্তা শরতের সকাল

পায়ের তলায় কুচকে যায় গাছের পাতা।

পথের উত্তপ্ত পূর্ণ যৌবনা ধূলির হাড়গোড়

ভেঙে পড়েছে হিম কুয়াশার আবরণে।

তাকিয়ে থাকি সেই ফেলে আসা পথের প্রান্তরে

জীবনের যৌবন বয়ে গেছে হাতের নাগালে।

কী রহস্যময় জীবন ও সময় অদ্ভুত দেহঘড়ি।

স্প্রিংয়ের মত জটিল নকশার কারুকাজ

যেখানে অসংখ্য না বোঝা শব্দগুচ্ছ দিয়ে তৈরি হয় গল্প।

হৃদস্পন্দন যখন অবশ হয়ে পড়ে

তখন ছোট ছোট গিয়ারগুলি টিক টিক শব্দে নাড়াচাড়া করে

উজ্জীবিত হয় সময় কিন্তু উজ্জীবিত হয় না জীবনের যৌবন।

শরতের দূত শুভ্ররূপা
সৌপর্ণ মাছুম
সুবাসিনী নও তবুও সুহাসিনীর বয়ন

শরতের দূত শুভ্ররূপা রূপে রূপে চয়ন ॥

চেয়ে চেয়ে যায় যে বেলা

ব্যোমে ভাসে ধবল ভেলা

তোমার শ্বেতাম্বরী রূপে আটকে পড়ে নয়ন ॥

রুক্ষ চিরল পাতায় দু’ধার শাণিত খঞ্জরি

মুগ্ধ করা প্রসারিত দোলে শ্বেত মঞ্জরি

আসে দুর্গতিনাশিনী

খড়গ হাতে যেন চিনি

দূর করে সব ঘোর-অশনি শূন্যে করে শয়ন ॥

ছবি

ধ্রুপদী বোধ ও ব্যাধির কবিতা

ছবি

সুকান্তর কবিতায় বিপ্লবী চেতনা

ছবি

মগ্নচৈতন্যে সৌন্দর্যধ্যান

ছবি

অধুনাবাদী নিরীক্ষার অগ্রসাধক

ছবি

‘বায়ান্নর আধুনিকতা ও প্রগতিশীল ধারাকে বহন করতে চেয়েছি’

ছবি

জাতীয় চেতনার অমলিন ধারক

ছবি

নক্ষত্রের অনন্ত যাত্রা

ছবি

আহমদ রফিক ও ভাষামুক্তি সাধনা

ছবি

কবি আসাদ চৌধুরী : ঘরে ফেরা হলো না তাঁর

ছবি

জীবনবোধের অনবদ্য চিত্ররূপ ‘স্বপ্নছোঁয়ার পদযাত্রা’

ছবি

অনালোকিত ইতিহাসের সন্ধানে

ছবি

কবিরের দোঁহা

ছবি

আকবর হোসেন ও ‘যৌবনটাই জীবন নয়’

ছবি

স্বোপার্জিত

ছবি

সংগ্রামের অগ্নিশিখা থেকে হেলাল হাফিজ

ছবি

কোনো এক শরৎসন্ধ্যা : কোথায় পাব তারে

শারদ পদাবলি

ছবি

লক্ষীপুর-হ

ছবি

যে জীবন ফড়িংয়ের

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বিশাল ডানাওলা এক থুত্থুরে বুড়ো মানুষ

ছবি

খুদে গল্পের যাদুকর ওসামা অ্যালোমার

ছবি

নিমগ্ন লালন সাধক ফরিদা পারভীন

ছবি

কেন তিনি লালনকন্যা

ছবি

টি এস এলিয়টের সংস্কৃতি চিন্তার অভিমুখ

ছবি

আধুনিক বাংলা কবিতার একশ’ বছর

ছবি

বিশ্বসাহিত্যে এর প্রতিফলন

ছবি

মোজগান ফারামানেশ-এর কবিতা

ছবি

চোখ

ছবি

যোগফল শূন্য

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লাল লুঙ্গি

ছবি

শ্বেতা শতাব্দী এষের কবিতা

ছবি

বিপন্ন মানুষের মনোবাস্তবতার স্বরূপ

ছবি

দিনু বিল্লাহ: জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে

জেলার সিরিজ কবিতা

tab

সাময়িকী কবিতা

বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

কান্নার স্বরগ্রাম
আতাউর রহমান মিলাদ
ছিঁড়ে গ্যাছে স্বর,অন্ধকার এ বিদ্যুতের শহর

পলকে পলকে ভয়,

ফিসফিস,কানাকানি

সন্দেহ চোখে ও মনে...

উৎকণ্ঠিত খিড়কির মুখ

মাকড়সার জালে বিভ্রান্ত সন্ধ্যা এক

পাহারায় উন্মাদ দল

অস্তিত্ব স্পর্ধায় যাত্রার আয়োজন

দুর্বোধ্য মন্ত্রপাঠ,রাতের বন্দনা

এমনও সময় আসে কুয়াশার কান্না

ভারি হয়ে ওঠে...

মনে হয় সবই মনের ভ্রম
খালেদ হোসাইন
তুমি খুব সরলভাবে জটিল

তুমি খুব বিষণœ সুন্দর

তুমি এক মাঝ-সমুদ্রে দ্বীপ

তুমি এক নির্জন বন্দর।

তুমি এক রৌদ্রাভ কুয়াশা

তুমি কৃষ্ণপক্ষের আলো

তুমি এক অতন্দ্রপ্রতিভা

স্বভাবে প্রচ- ঝাঁজালো।

তোমাকে ভালোবাসা দায়।

কার আছে এত পরাক্রম?

যদিও জ্বাজল্যমান

মনে হয়, সবই মনের ভ্রম।

গালের রং হলুদ
শিহাব শাহরিয়ার
এসো বেদনার দাগে কুমড়োগাছ লাগাই

হলুদ ফুল ফুটলে আমরা বাতাসা খাবো

তখন বাতাসে আর উড়বে না কণ্ঠনালী

তখন গোয়ালন্দে নামবে না সন্ধ্যার কুয়াশা

কেউ কেউ ফুটপাত দখল করে

শুয়ে থাকতেই পারে, থাকুক না

যেমন তুমি স্কার্ফের সাথে মনোভূমিকেও রেখেছ

যেমন শরীর বিকিয়ে অনেকেই ঘরে ফিরে যায়

জানো তো?

কৃষ্ণচূড়া আর ধঞ্চেপাতার আয়তন একই

কিন্তু শব্দ দুটি আলাদা ব্যঞ্জনায় অভিষিক্ত

ধঞ্চে নদীবাহিত আর কৃষ্ণচূড়া রাবীন্দ্রিক

তোমাদের টিনের চালের রিমঝিম শব্দ

শেষ হয়েছিল বলেই

আমরা শহরের রিকশায় ঘুরতে পেরেছিলাম

তারপরঃ এই শহর সন্ধি-বিচ্ছেদের মতো

আলাদা হয়ে গেছে, হোক

তবু খুব মনে আছে

তোমার গালের রং ছিল

কুমড়ো ফুলের মতো হলুদ

আমার শারদীয়া
পিয়াস মজিদ
আমারও শরৎ ছিল;

শেফালির স্তূপ, কাশের গুচ্ছ

আর আলোর অরুণ।

বড় হতে গিয়ে মানুষ যেভাবে

গলা টিপে হত্যা করে

তার ভেতরের সরল শরৎ,

এভাবে আমিও

মধুবাগান মোড়ে

হাঁটতে গিয়ে দেখি

হারিয়ে ফেলেছি

জীবনের জরুরি সব

বিষাক্ত লাবণি।

অথচ আমার ভেতরবাড়ির মাঠেও

হাঁক দিত

অপু ও দুর্গার শারদীয় ফেরিঅলা,

‘সন্দেশ, তিলগজা, বাতাসা...।’

আবারও শরৎ এল,

এইবার জীবনের

ঋতুহীন যত জটিল অর্জন

খুন করে, লাল রক্তমাখা আমি

অপু ও দুর্গার সাথে ছুটতে থাকব

শরৎশোভা মাঠে;

অনন্তের শাদা বাতাসার দিকে।

অটোফেজি
রফিকুল ইসলাম আধার
রক্তমাখা সময়ের অন্ধগলিতে

বিবেকের মুখোশে জমে ওঠে শৈত্য,

রুচির শহরে দুর্ভিক্ষ-

ভালোবাসা আজ করাতের দাঁত

বিদ্ধ করে মনস্তত্ত্ব।

 

আমি ধীরে ধীরে নিজেকেই গ্রাস করি,

ভেতরের শূন্যতা চিবিয়ে খাই,

অভিমান, ক্লান্তি, বেদনাবোধ

সবকিছু গলাধঃকরণ করি প্রতিদিন।

 

সময়ের নিঃসঙ্গ আগুনে

প্রতি শ্বাসে জমে ওঠে অবিশ্বাসের ছাই,

অগত্যা অস্তিত্বের অভুক্ত কোষ

নিগূঢ় নিয়মে নিজেকেই গিলে খায়

যেমন সিয়ামের তপস্যায়

শরীর বাঁচে নিজের ক্ষয়েই।

 

ওশিনরি ওসুমি জানতেন,

বেঁচে থাকার জন্য

মৃত্যুকে শোষণ করাও এক শিল্প

একধরনের আত্মজৈবনিক অনুশাসন।

শরতের মোহময় রাত
চঞ্চল শাহরিয়ার
জানালায় চোখ রেখে দেখি শিউলি ফুলেরা দূর্বাঘাস আর গাড়ি বারান্দায় টুপটাপ ঝরে যাচ্ছে। সেই সাথে ঝরে যাচ্ছে শিশিরের ফোঁটা। চন্দন গন্ধের বনে হারাবার আগে আমি এই দৃশ্য মন ভরে দেখি। জানি ভোরবেলা আমি জেগে উঠবার আগে ফুলগুলো যতœ করে কুড়িয়ে কুড়িয়ে নেবে ঘোষেদের মেয়ে। সাহাদের রাসমণি দিদি। শিশিরের ছোঁয়া পায়ে মেখে মালা গেঁথে গান গাবে জেসমিন জুঁই।

রাত জেগে শরতের আপন সৌন্দর্য আমাকে আগলে রাখে লাজুক কিশোরী হয়ে। ক্রমশ খুলতে থাকে উপন্যাসের দরোজা। কাশবন ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমি খুঁজি প্রিয় নদীটির নাম।

বৃক্ষশৃঙ্খল
পারভেজ আহসান
করাত চালালো অশ্বত্থের

ডালপালায় ও কা-ে-

অঙ্গ থেকে রক্তপাত

পাতার ঠোঁটে বিষাদের কোরাস

ভোর ফোটে-

ঘুম শেষে ছেলেটি বিস্ময়ে তাকায়-

কর্তিত অশ্বত্থ গাছে সবুজ উৎসব

উঁচু ও প্রসারিক বৃক্ষের কাছে

ন্যুব্জ বৃক্ষসমাজ।

শরৎ বন্দনা
মুমির সরকার
পরিত্যক্ত শশ্মানঘাটে

শরৎ বন্দনায় ব্রতী-

একজোড়া তক্ষক,

রতিক্রিয়ায় নাছোড়বান্দা!

শিরীষ-মগডালে

ক’খান ছাইরঙা শকুন,

একসনা দৃষ্টি হানে

অই দূরের কাশবন।

ঊর্ধ্বাকাশ বিস্তীর্ণ-

যে নীল আগুন জ্বলে,

ইচ্ছামতীর স্বচ্ছ বুকে,

আর কোন চলচ্চিত্র না

শারদীয় সাজে

নীল আঁচল দুলে ওঠে,

কেহবা একলা দাঁড়ায়ে

কী নিবিড় সে অপেক্ষা!

জীবন এক মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
মহসিন খোন্দকার
আমি ভাতশালিক পুষে বড় করেছি,ডানা মেলে উড়ার সময় দেখি এটি গুশালিক,একটি সকালকে খুব যতেœ চোখে ঠেসে রেখেছিলাম, শিহরনের সময় শিশির খাব,গতকাল খুলে দেখি এটি পড়ন্ত বিকেল

যে স্যার পড়িয়েছিলেন- পৃথিবী ঘুরে, সে স্যার সেদিনমাথাঘুরে পড়ে গেলেন, তার অক্ষিগোলক দু’বার ঘুরে চির নিস্তব্ধ হয়ে গেল, যে মেয়ে বলে গেছে,অপেক্ষা করুন ভোর হবে, তার নাম রাত্রি, সে থাকে আমার হাঁড়ের ভেতর

যে ডাক্তার আমার হাঁড়ক্ষয়ের চিকিৎসা করেছেন

তিনিও বিস্মিত হলেন- কেউ একজন বসে বসে

আপনার হাড় খেয়েছে,আমি জানি আমার পরিণতির

কথা,জীবন এক মধ্যপদলোপী কর্মধারয়

কোথায় তারে বসাই
ডালিয়া চৌধুরী
বিকেল কড়া নেড়েছিলো দরজায়

অপ্রস্তুত আমি খুলিনি,

আলোটা কৃষ্ণচূড়া রঙে

এমনভাবে দখলে রেখেছিলো

কোথায় তারে বসাই,

সন্ধ্যা গাঢ় হলো বাইরের দরজায়।

রক্তিম রোদে দুঃখটা ঘণীভূত হয়ে

ছড়িয়ে পড়ে করিডোরে,

দূরবর্তী জীর্ণ বনের ভারি আওয়াজ

বাতাসে ভেসে অব্যর্থ দীর্ঘশ্বাসে

দীর্ঘ পরিভ্রমণ শেষে

সময়ের রঙে গোধূলির জটাজালে,

প্রতিধ্বনিময় অতীতের উন্মাদনায়

বিষাদ বেজে ওঠে বুকের গিটারে।

বিকেল কড়া নেড়েছিলে দরজায়,

শূন্যতার মতো আকাশ ধরে

বিস্তৃত নীলের ব্যথিত আবহে

অপাংক্তেয় এতোসব সরঞ্জামে

কোথায় তারে বসাই,

সন্ধ্যা গাঢ় হলো বাইরের দরজায়।

জীবনের যৌবন
ফজিলা ফয়েজ
খাস্তা শরতের সকাল

পায়ের তলায় কুচকে যায় গাছের পাতা।

পথের উত্তপ্ত পূর্ণ যৌবনা ধূলির হাড়গোড়

ভেঙে পড়েছে হিম কুয়াশার আবরণে।

তাকিয়ে থাকি সেই ফেলে আসা পথের প্রান্তরে

জীবনের যৌবন বয়ে গেছে হাতের নাগালে।

কী রহস্যময় জীবন ও সময় অদ্ভুত দেহঘড়ি।

স্প্রিংয়ের মত জটিল নকশার কারুকাজ

যেখানে অসংখ্য না বোঝা শব্দগুচ্ছ দিয়ে তৈরি হয় গল্প।

হৃদস্পন্দন যখন অবশ হয়ে পড়ে

তখন ছোট ছোট গিয়ারগুলি টিক টিক শব্দে নাড়াচাড়া করে

উজ্জীবিত হয় সময় কিন্তু উজ্জীবিত হয় না জীবনের যৌবন।

শরতের দূত শুভ্ররূপা
সৌপর্ণ মাছুম
সুবাসিনী নও তবুও সুহাসিনীর বয়ন

শরতের দূত শুভ্ররূপা রূপে রূপে চয়ন ॥

চেয়ে চেয়ে যায় যে বেলা

ব্যোমে ভাসে ধবল ভেলা

তোমার শ্বেতাম্বরী রূপে আটকে পড়ে নয়ন ॥

রুক্ষ চিরল পাতায় দু’ধার শাণিত খঞ্জরি

মুগ্ধ করা প্রসারিত দোলে শ্বেত মঞ্জরি

আসে দুর্গতিনাশিনী

খড়গ হাতে যেন চিনি

দূর করে সব ঘোর-অশনি শূন্যে করে শয়ন ॥

back to top