alt

দ্রোহের রম্য পঙ্ক্তিমালা

প্রণব চৌধুরী

: বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

দুর্মর আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। সেখানে যাঁদের ‘বিপন্ন বিস্ময়’; তাঁদের কবিতায় শুদ্ধ সৌন্দর্য নয়, চারপাশের তিক্ত বাস্তবতা অনিবার্য। শশিভূষণ তেমনই একজন কবি। তাঁর কাব্য ‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ’র নামকরণ, উৎসর্গ-পত্র থেকে শেষাবধি তা অব্যাহত : “উৎসর্গ/ অভাগি সেই মা/ যিনি কুসন্তান পেটে ধরেছেন।”

৫১টি কবিতা নিয়ে এ কাব্য। রয়েছে পদ্য, ছড়া, কখনও সিরিয়াস কবিতারও আঙ্গিক-কাব্যভাষা-চিত্রকল্প। পুরো কাব্যের মধ্যে বিদ্যমান সমাজের বিচিত্র প্রেক্ষিত, দেশ-জাতি-নাগরিক-দাম্পত্য আবহে একটির পর একটি কবিতা: দেশ আমার, হঠাৎ যদি, সাপ ওরে, তোমার হাতটা নাকি, পরিণতি, তেল... খবর, সামলে খা, তুই ঠিক বলেছিস।

সত্যভাষণে কবির আড়াল নেই : “নকলের দেশ, ধকলের দেশ/ কর্ষণ আর বর্ষণের/ ভিখিরির আর ফিকিরির দেশ/ দর্শন আর ধর্ষণের।” (দেশ আমার) চারদিকের ছলচাতুরি, গডফাদার-কাঞ্চন-কামিনীর কাড়াকাড়ির বাংলাদেশে কবির ভালোবাসা উৎসারিত প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধতায়, ব্যঙ্গে। শশিভূষণের স্বদেশ, স্বজাতির প্রতি প্রাণের আর্তিও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে : “সবুজ-শ্যামল দূর্বাঘাসের/ দেশ আমার, আমারি দেশ।”

কবির মাত্রাবৃত্ত ছন্দের রীতি যতটা অনুসৃত, তার চেয়ে বেশি স্বরবৃত্তের উল্লম্ফন গতি। ছড়ার গঠনে অধিকাংশ কবিতা : সাপ ওরে, পরিণতি, তেল, তোমরা সবই পারো প্রভৃতি এ পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য। ‘তেল’ কবিতা থেকে সামান্য উদ্ধৃতি : “বড়োবাড়ির পিঁড়িখানায় বসতে/ কঠিন কঠিন অঙ্ক হবে কষতে।/ মোসাহেবি করতে হবে/ নইলে সে টোপ গিলবে না/ পদ-পদবি পুরস্কারও/ কোনোটা আর মিলবে না।”

সমাজ কিছু হলেও জাগছে, অন্তত শ্রমজীবী মানুষ। তারা দেখতে চায় না এই দুর্নীতিগ্রস্ত অসম উৎপাদন-ব্যবস্থা: “কুলি-মজুর, কামলা-কিষান/ সব জনতার বায়না/ এক দফা আর এক দাবি আজ/ দুর্নীতিবাজ চায় না।” (পরিণতি) এখানে ‘কামলা’ শব্দটির অনায়াস প্রয়োগ লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। নাগরিক জীবনের প্রতি বীতস্পৃহা ‘ঢাকায় থাকি’ কবিতায় তির্যক রসে উপভোগ্য হয়ে ওঠে : “তবুও খায়েশ, আমরা সবাই ঢাকায় যেন থাকি।” তবে শশিভূষণ আপামর জনতার স্বদেশের জন্য গর্ববোধ উচ্চকিত করেছেন বারবার; যেমন : “গানের যেমন প্রাণ আছে/ জ্ঞানীগুণির মান আছে/ দেশেরও-যে গান আছে/ বিশ্বসভায় স্থান আছে।” (ইটের পরে ইট) তিনি কেবল সহ্য করতে পারেন না রাজনৈতিক অসাধুতা, দেশপ্রেমের নামে সুবিধাবাদ: “দুষ্ট দমন করবে কি আর/ উলটো সে পায় শেল্টার/ হাবভাব কেউ বুঝতে না পায়/ দেশপিরিতি খেলটার।” (দেশপিরিতি) এখানে ‘শেল্টার’ শব্দটির প্রয়োগ ও ‘খেলটার’ অন্ত্যমিল চমৎকার।

নির্ভুল মুদ্রণ, শোভন প্রচ্ছদ। আগামীতেও কবির কাব্যসুষমাম-িত কাব্যও পাঠকের কাছে পৌঁছাক।

কানামাছি ভোঁ ভোঁ : শশিভূষণ। প্রকাশক : এডুসেন্ট্রিক। প্রচ্ছদ : অরণ্য মমাই (পেইন্টিং সংগৃহীত) প্রথম প্রকাশ : একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪। মূল্য : ২০০ টাকা।

ছবি

মনোজগতের অন্বেষায়

সাময়িকী কবিতা

ছবি

এক ঘর রোদ

ছবি

সংবেদী রঙে ও রেখায় প্রাণের উন্মোচন

ছবি

অলস দিনের হাওয়া

ছবি

লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের মর্মস্পর্শী ও দূরদর্শী সাহিত্যকর্ম

ছবি

‘ভাষার আরোপিত কারুকাজে খেই হারিয়ে ফেলি’

ছবি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের জিন্দা লাশ কি প্রকৃত লাশ

ছবি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের শিক্ষা দর্শন ও অলস দিনের হাওয়া

ছবি

ধ্রুপদী বোধ ও ব্যাধির কবিতা

ছবি

সুকান্তর কবিতায় বিপ্লবী চেতনা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

মগ্নচৈতন্যে সৌন্দর্যধ্যান

ছবি

অধুনাবাদী নিরীক্ষার অগ্রসাধক

ছবি

‘বায়ান্নর আধুনিকতা ও প্রগতিশীল ধারাকে বহন করতে চেয়েছি’

ছবি

জাতীয় চেতনার অমলিন ধারক

ছবি

নক্ষত্রের অনন্ত যাত্রা

ছবি

আহমদ রফিক ও ভাষামুক্তি সাধনা

ছবি

কবি আসাদ চৌধুরী : ঘরে ফেরা হলো না তাঁর

ছবি

জীবনবোধের অনবদ্য চিত্ররূপ ‘স্বপ্নছোঁয়ার পদযাত্রা’

ছবি

অনালোকিত ইতিহাসের সন্ধানে

ছবি

কবিরের দোঁহা

ছবি

আকবর হোসেন ও ‘যৌবনটাই জীবন নয়’

ছবি

স্বোপার্জিত

ছবি

সংগ্রামের অগ্নিশিখা থেকে হেলাল হাফিজ

ছবি

কোনো এক শরৎসন্ধ্যা : কোথায় পাব তারে

শারদ পদাবলি

ছবি

লক্ষীপুর-হ

ছবি

যে জীবন ফড়িংয়ের

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বিশাল ডানাওলা এক থুত্থুরে বুড়ো মানুষ

ছবি

খুদে গল্পের যাদুকর ওসামা অ্যালোমার

ছবি

নিমগ্ন লালন সাধক ফরিদা পারভীন

ছবি

কেন তিনি লালনকন্যা

ছবি

টি এস এলিয়টের সংস্কৃতি চিন্তার অভিমুখ

ছবি

আধুনিক বাংলা কবিতার একশ’ বছর

tab

দ্রোহের রম্য পঙ্ক্তিমালা

প্রণব চৌধুরী

বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

দুর্মর আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। সেখানে যাঁদের ‘বিপন্ন বিস্ময়’; তাঁদের কবিতায় শুদ্ধ সৌন্দর্য নয়, চারপাশের তিক্ত বাস্তবতা অনিবার্য। শশিভূষণ তেমনই একজন কবি। তাঁর কাব্য ‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ’র নামকরণ, উৎসর্গ-পত্র থেকে শেষাবধি তা অব্যাহত : “উৎসর্গ/ অভাগি সেই মা/ যিনি কুসন্তান পেটে ধরেছেন।”

৫১টি কবিতা নিয়ে এ কাব্য। রয়েছে পদ্য, ছড়া, কখনও সিরিয়াস কবিতারও আঙ্গিক-কাব্যভাষা-চিত্রকল্প। পুরো কাব্যের মধ্যে বিদ্যমান সমাজের বিচিত্র প্রেক্ষিত, দেশ-জাতি-নাগরিক-দাম্পত্য আবহে একটির পর একটি কবিতা: দেশ আমার, হঠাৎ যদি, সাপ ওরে, তোমার হাতটা নাকি, পরিণতি, তেল... খবর, সামলে খা, তুই ঠিক বলেছিস।

সত্যভাষণে কবির আড়াল নেই : “নকলের দেশ, ধকলের দেশ/ কর্ষণ আর বর্ষণের/ ভিখিরির আর ফিকিরির দেশ/ দর্শন আর ধর্ষণের।” (দেশ আমার) চারদিকের ছলচাতুরি, গডফাদার-কাঞ্চন-কামিনীর কাড়াকাড়ির বাংলাদেশে কবির ভালোবাসা উৎসারিত প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধতায়, ব্যঙ্গে। শশিভূষণের স্বদেশ, স্বজাতির প্রতি প্রাণের আর্তিও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে : “সবুজ-শ্যামল দূর্বাঘাসের/ দেশ আমার, আমারি দেশ।”

কবির মাত্রাবৃত্ত ছন্দের রীতি যতটা অনুসৃত, তার চেয়ে বেশি স্বরবৃত্তের উল্লম্ফন গতি। ছড়ার গঠনে অধিকাংশ কবিতা : সাপ ওরে, পরিণতি, তেল, তোমরা সবই পারো প্রভৃতি এ পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য। ‘তেল’ কবিতা থেকে সামান্য উদ্ধৃতি : “বড়োবাড়ির পিঁড়িখানায় বসতে/ কঠিন কঠিন অঙ্ক হবে কষতে।/ মোসাহেবি করতে হবে/ নইলে সে টোপ গিলবে না/ পদ-পদবি পুরস্কারও/ কোনোটা আর মিলবে না।”

সমাজ কিছু হলেও জাগছে, অন্তত শ্রমজীবী মানুষ। তারা দেখতে চায় না এই দুর্নীতিগ্রস্ত অসম উৎপাদন-ব্যবস্থা: “কুলি-মজুর, কামলা-কিষান/ সব জনতার বায়না/ এক দফা আর এক দাবি আজ/ দুর্নীতিবাজ চায় না।” (পরিণতি) এখানে ‘কামলা’ শব্দটির অনায়াস প্রয়োগ লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। নাগরিক জীবনের প্রতি বীতস্পৃহা ‘ঢাকায় থাকি’ কবিতায় তির্যক রসে উপভোগ্য হয়ে ওঠে : “তবুও খায়েশ, আমরা সবাই ঢাকায় যেন থাকি।” তবে শশিভূষণ আপামর জনতার স্বদেশের জন্য গর্ববোধ উচ্চকিত করেছেন বারবার; যেমন : “গানের যেমন প্রাণ আছে/ জ্ঞানীগুণির মান আছে/ দেশেরও-যে গান আছে/ বিশ্বসভায় স্থান আছে।” (ইটের পরে ইট) তিনি কেবল সহ্য করতে পারেন না রাজনৈতিক অসাধুতা, দেশপ্রেমের নামে সুবিধাবাদ: “দুষ্ট দমন করবে কি আর/ উলটো সে পায় শেল্টার/ হাবভাব কেউ বুঝতে না পায়/ দেশপিরিতি খেলটার।” (দেশপিরিতি) এখানে ‘শেল্টার’ শব্দটির প্রয়োগ ও ‘খেলটার’ অন্ত্যমিল চমৎকার।

নির্ভুল মুদ্রণ, শোভন প্রচ্ছদ। আগামীতেও কবির কাব্যসুষমাম-িত কাব্যও পাঠকের কাছে পৌঁছাক।

কানামাছি ভোঁ ভোঁ : শশিভূষণ। প্রকাশক : এডুসেন্ট্রিক। প্রচ্ছদ : অরণ্য মমাই (পেইন্টিং সংগৃহীত) প্রথম প্রকাশ : একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪। মূল্য : ২০০ টাকা।

back to top