alt

মাহফুজ আল-হোসেন-এর দশটি কবিতা

: শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

মাহফুজ আল-হোসেন

কবিপাখি
অনুসমর্থিত জেনেও চেনা গান কণ্ঠে রোচেনি,
উপেক্ষার দগ্ধ প্রহরে ভাসে প্রিয়তির মুখচ্ছবি।
তবুও ঐশ্বর্যময় অপূর্ণতায় আচ্ছন্ন সেই কবি।
হ্যালোজেন জ্বেলেও বুঝিবা আঁধার ঘোচেনি!

পাখিটাও ভীষণ ক্লান্ত এড়াতে শিকারীর তীর,
স্বপ্ন দেখাবে বলে সেও নির্ঘুম রাত্রি দ্বিপ্রহরে।
মুহূর্তেই বক্ষ বিদীর্ণ তার ব্যাধের বিষাক্ত শরে,
পড়ে রইলো নিষ্প্রাণ দেহ আর রক্তাক্ত শির!!

পাথরে চুঁইয়ে প’ড়ে সে রক্ত মিশে যায় জলে,
পাহাড়-মাঠ কাঁপিয়ে ছুটে চলে ঝর্নাধারায়।
গেয়ে ওঠে সুকণ্ঠে- শুনে স্রোতার মন হারায়,
সে দরাজ কণ্ঠের বুলন্দ আওয়াজ কী বলে?

কবিই পাখি না পাখিটা কবি মাহফুজ জানে;
সে সুলুকে আর নাই কাজ সুরটাই মন টানে...

অমলকান্তি সকাশে
গত শনিবার বায়ুশূন্য বৈশাখী মধ্যদুপুরে স্ফোটনোন্মুখ সূর্যের ডিম্বাশয় থেকে অবিরাম গড়িয়ে পড়ছিল চব্বিশ ক্যারেটের সুবর্ণ শরবত; ঘর্মাক্ত পরিশ্রান্ত রিকশাচালক, মাথামোটা তরমুজওয়ালা আর টিফিনব্রেকে বুক টান করে মিলিটারি মেজাজে পদব্রজে মার্চ করতে করতে এগিয়ে যাওয়া দুর্বার সেলাই দিদিমণিসহ সকলেই এ মহাজাগতিক রৌদ্র পানোৎসবে হঠাৎ হয়েছিল শামিল; শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ধাবমান গাড়ির উইন্ডশিল্ড চুরমার করে সামন্ততান্ত্রিক রোদের ধূমায়িত পেগ হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ছিল আমুদে আমলার পানপাত্রে; এ অভাবিত অচিন্ত্যনীয় রাজসিক দৃশ্যাবলির সাক্ষী হতে পারাটা যে বিত্তবিলাসী পুরবাসীর বৃক্ষবলিজনিত পরম পুণ্যার্জনের সুমিষ্ট ফল সেটি মেধাবী মেফিস্টোফেলিসও জানে!

এরই এক ফাঁকে সৌম্যদর্শন অমলকান্তির সঙ্গে অভাজনের অনির্ধারিত সৌজন্য সাক্ষাৎ-
মূর্ছা যাবার আগমুহূর্তে ফিসফিস করে
সে আমার ডান কানে বোধহয় বলছিল:
ভাবিস না মর্কট, খুব শিগগিরই রোদ্দুর হয়ে যাবি...

রাসেলস্ ভাইপার
কী সোৎসাহে বিষখালি নদীতে মধুচন্দ্রিমা যাপন শেষে প্রতিস্পর্ধী ছোটকাগজের মতো স্রোতের বিপরীতে পাড়ি দিয়ে এসেছো তুমি অনেকটা পথ!

অবশ্য, অমাবস্যা-পূর্ণিমার রাতে দুই তীরের সন্ত্রস্ত জনপদে তোমাকে নিয়ে প্রায়শই জমে উঠে চাঁদ সওদাগরের পালা আর বেহুলা লক্ষিন্দরের সকরুণ পুঁথিপাঠ।

অথচ, টোপাপানার মতো কী যে অনিশ্চিত জীবন তোমার- আর ততটাই গোলমেলে- যেরূপে দিনশেষে ম্যালা হাঁকডাকের পর ডিএসই সেনসেক্স কিংবা ডাওয়ের মতোই হঠাৎ চিৎপাত!!

শুধু নির্বোধ আর গোঁড়া লোকেরাই তো তোমাকে আবশ্যিকভাবে হিংস্র বানিয়ে রেখেছে, যেভাবে কসভো, কিয়েভ কিংবা গাজায় চলেছে বল্গাহীন খুনোৎসব।

বার্ট্রান্ডের কাছে অযথাই শেখা তোমার যুক্তিজর্জর চিন্তাশীলতা কিংবা জলজ যুদ্ধবিরোধী মনোভাবই কি শেষাবধি তোমার চিরকালীন প্রবল প্রতিপক্ষ আত্মস্বীকৃত শত্রু মনুষ্যকুলকে উস্কে দিচ্ছে,
আর ওদের শান্তি-সংহিতার প্রতিটি পাতা প্রতিনিয়ত পাল্টে দিচ্ছে গোয়েবলসীয় অপব্যাখ্যায়?

উপপাদ্য
মনে করি, এবিসি একটা ত্রিভুজ;
না- এটা মনে করা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না।

হয়তো কেউ কেউ ভাবছেন
তোমার আমার মাঝখানে
যতটুকু স্পেস
তৃতীয় কেউ একজন তো আছেনই-
লোকচক্ষু কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার অন্তরালে;

আরে বাপু, অসুবিধাই বা কোথায়?
যা খুশি যে কেউ ভেবে নিতে পারেন।

আর লেজ কাটা ভাবনার
অবশিষ্ট পরিসর যেটুকু আছে
কিশোর গ্যাংয়ের মতো সিনেম্যাটিক স্টাইলে
যদি ছিনতাই হয়েও যায়
তদুপরি লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলি
সত্যি সত্যিই স্বকীয়া আছেন একজন।

প্রায়ান্ধ বলে হয়তো-
ঠাহর করে উঠতে পারিনি অ্যাদ্দিনে!

ভাষার শিয়রে
উৎপ্রেক্ষার নকশী চাদরে মুড়ে
উৎপীড়িত প্রতিরাতে জেগে থাকে
অর্বাচীন সেইজন- অতন্দ্র অনুক্ষণ।

অযৌক্তিক উপপাদ্যটা তাহলে
শুরু করা যাক পুনর্বার :
মনে করি, এবিসি একটা ত্রিভুজ..

পাখি পুরাণ
পাখিটার তো একটাই হাউশ ছিল- শৃঙ্খলমুক্ত প্রসারিত ডানা মেলে উড়বে সে নীলাকাশ জুড়ে সর তোলা হৈমন্তিক রোদ্দুরে;

এখন আর আদৌ কোনো উড়ান চায় কিনা পাখিটা- সে শোলক হয়তো খাঁচাও জানে!
অথচ বর্বর ব্যাধের ছোঁড়া বিষাক্ত তীরে
শরাহত পাখিটি কী যন্ত্রণাই না সয়ে গেছে কাউকে কিছু না বলে;
তবুও সংরক্ত ডানায় কখনো সে থামায়নি তার ক্রমাগত উড়ান।

একদা দানাপানির যোগাড়যন্তর নিয়েও তো ছিল তার হেলেনিক অনিশ্চয়তা;

সেসব ভাবনা যে পুরোপুরি উবে গেছে কর্পুরের শিশি থেকে তাও তো নয়।

জানি না কোন আলস্যের আলপথ থেকে সে
চরণ তুলে নিয়েছে প্রবোধের প্রভাত সংগীতে?

অবশ্য কলাঝাড়ের ফোঁড়ানো কানে ঝালাপালা ধরানো ওর ঝুমকো কিচিরমিচির ছিল নানা অনুষঙ্গে, মাঝেমধ্যেই চড়ে আসতো সেইসব স্বর নায্যতা আর সমবন্টনের সারি গানে।

জানিনা কোন রংঢঙের রম্য সিরিয়াল তাকে নির্বিচারে বিনোদিত করে চলেছে প্রত্যহ প্রতিদিন গার্হস্থ্য যৌনাবেদনে।

কবিতা কিন্তু আমাকেও শোনায়
হ্যাঁ, কবিতা কিন্তু আমাকেও শোনায়,
পথচলতি এফ ব্যান্ডের মতো-
বাধ্য করে শুনতে।
নিজের?
না, একদম নয়;
বোধহয় চেনা কারোর?
হ্যাঁ, সেটা মাঝেসাঝে-
একদম দমকা হাওয়ার মতোই
অর্বাচীন কারোরই হবে।
গুগল তো জানে না অনেক কিছুই-
পড়–য়ারাও কি সবকিছু জানে?

স্বভাষায় হলে তো ভালই,
না, ব্যাপারটা যতোটা ভাষার
তারও অধিক ভালোবাসার,
কিংবা ক্ষীয়মাণ আশার!

মাঝেসাঝে তেড়েফুঁড়ে আসে
শব্দের নীরব ডালপালা নিয়ে,
টুঁটি চেপে ধরলেও
না- চিৎকার করে না একটুও;
বরং প্রেমিকার মতো চোখে চোখ রেখে-
বলে : চশমা খোলো প্রায়ান্ধ কবি;
সুন্দর চোখজোড়া তোমার!
একেবারে আলো হারাবার আগে,
আমাকেও একটুখানি দ্যাখো,
ঠোঁটে ঠোঁট লাগাও- সাথে জিহ্বামূলও;
আরে- আরে এ কী করছো?
না এটা অসভ্যতা তো নয়-
বরং সভ্যতার সংযোগ,
একান্তই তোমাদের।

এবার দরাজ কণ্ঠ ছাড়ো আর
কুলোর মতো কান দুটো খোলা রাখো;
অনন্তর অনালোক বিচ্ছুরিত হোক-
অপ্রস্তুত বিদ্যুচ্চমকের মতো,
কিংবা কমলাতপ্ত ক্রোধাগ্নি-
চলিষ্ণু লাভাস্রোতের মতো!!
যা কিনা তুমি তোষামোদের তুষে জ্বেলেও
জ্বলতে দ্যাখোনি বহু ব হু কা ল ধরে...

ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি?
বোধহয়, আড়ি পেতে আমায় শুনছো।

তোমাকেও তো শুনতে হবে আমায়
ভুল করে নিজেকে চিনতে...
আমাকেও তো শুনতে হবে তোমায়
নাহ্, টেনে তুলতে নয়
আমায় নতুন করে ভুলতে!!

বর্ষার মনোসিজ ধ্রুপদী গান

পাষাণী মন ভিজাও বর্ষা মাভৈঃ
ভিজাও রমণীয় পথঘাট
ভিজাও ওষ্ঠাধার ললাট
পূর্ণ করো প্রণয়ের পাত্র
পূর্ণ করো মাধুকরী রাত্র
বাসনার আরক নিয়ে ঘর যাবৈ

ত্রাসুক কিম্ভূত বজ্র-বিদ্যুৎ
আসুক না অন্তরে অবধূত
অকূল পাথারে আজ পার পাবৈ
পাষাণী মন ভিজাও বর্ষা মাভৈঃ

কবিতার পক্ষে তেমন কাউকে দরকার নেই
কবিতার পক্ষে কোথাও দাঁড়াবার কেউ নেই বলে নিষ্প্রদীপ মৃতগৃহে করুণ রাগাশ্রিত বিলাপোৎসবের কীইবা প্রয়োজন?
কবিতাই তো পারে কৃষ্ণপক্ষের নিকষ অন্ধকারে শেষ সলতের আলোটুকু পরম নির্ভরতায় জ্বেলে দিতে; হতে পারে সে আলো কখনো সখনো স্নিগ্ধতা দোষে দুষ্ট!

যদি কোনো এক মহারাত্রিতে পৃথিবীর সব আলো নিভেও যায়
নিশ্চিত জেনো কবিতার অলৌকিক অঙ্গুলি প্রক্ষালণে কৃঞ্চগহ্বরের ওলান থেকে অঝোর ধারায় নেমে আসবে সত্যাশ্রয়ী আলোকবৃষ্টি।

আলোকিত মানুষের পক্ষে হয়তো কেউ কেউ থাকে অমনুষ্যের পক্ষেও কিন্তু আজকাল অনেকেই দুর্ভেদ্য ঢাল হয়ে দাঁড়ায়!

কবিতার পক্ষে কাউকে কিন্তু সেভাবে থাকবার দরকার নেই।

চক্ষুষ্মানের দৃষ্টি ধূসর হয়ে এলে ব্রেইলের ছিদ্রমালায় কবিতার ¤্রয়িমাণ শব্দাবলি হঠাৎ করেই সরব হয়ে ওঠে মুখাপেক্ষী ভিড় ঠেলে!!

‘মানুষ’ শীর্ষক ভুক্তি
ঋতুবৈচিত্র্যের মতো প্রাকৃতিক সত্যে আস্থাবান হয়ে আজন্ম গড়পড়তা মানুষের বোধগম্য থাকতে চেয়েছিলেন একদা এক প্রাজ্ঞ প্রবীণ কবি;
অথচ, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’...- অবশ্যপাঠ্য এ অর্ধসত্যের ঘোরপ্যাঁচ বুঝতে না বুঝতেই কয়েক সহস্রাব্দ গড়িয়ে গেল সভ্যতার বালুঘড়ি থেকে।

এরই ফাঁকে অকাট্য যুক্তিতর্কের আবেদন ফুরিয়ে গেলে কতিপয় সশস্ত্র যুদ্ধবাজকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো পণবন্দি সন্ত্রস্ত ধ্বনি আর নিসর্গের বিপরীতে;

ইত্যবসরে, দিগন্ত বিস্তৃত রক্তপাত আর বিপন্নতা নাক্ষত্রিক সত্যকে আড়াল করে দিলো বধ্যভূমিতে অপেক্ষমাণ বিশ্বাসী ব্যাসবাক্যের বানান থেকে।
এতদসত্ত্বেও, অস্থিরমতি হাওয়া আর স্বাপদসঙ্কুল ঘূর্ণিজল রোদ্দুরের ঠোঁটে সম্ভবত কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো দ্বিপদ মানুষের বোধগম্য অস্ফুট স্বরে;
শেষাবধি, সওদাগরী অভিধানের কোত্থাও ‘মানুষ’ শীর্ষক কোনো ভুক্তি কিংবা এর এঁটোকাঁটার অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে গলদঘর্ম কবি সত্যের এক সারবান প্রতিশব্দ হঠাৎ কুড়িয়ে পেলেন হাইব্রিড কাঁঠালের আমসত্ত্বে!

অনির্দেশ্য অভিমুখের পানতুম
অনুভবের নীলাদ্রি জুড়ে নেই কোনো কাঁটাতার
কিংবা নেই চোখরাঙানো চৌকির সতর্ক প্রহরা
সুরঞ্জনা শোনে না বারণ বলো কী দোষ তাহার

হৃদয়ের ঝাঁপি খুলে সত্যিসত্যিই হবে কি মুখরা
কিংবা নেই চোখরাঙানো চৌকির সতর্ক প্রহর
বাসনার চৌকাঠ পেরিয়ে দেখো নেই অবগুণ্ঠন
নিষ্প্রদীপ জলসায় কোন গোপন মাধুরী অধরা

অচেনা তস্করের হাতেই হোক তবে সর্বস্ব লুণ্ঠন
বাসনার চৌকাঠ পেরিয়ে দেখো নেই অবগুণ্ঠন
নক্ষত্রেরও নেই জানা আগন্তুকের নাম-পরিচয়
অচেনা তস্করের হাতেই হোক তবে সর্বস্ব লুণ্ঠন
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য সে আজ দৃষ্টিতে বরাভয়

নক্ষত্রেরও নেই জানা আগন্তুকের নাম-পরিচয়
অনির্দেশ্য অভিমুখের পানতুমে নেই ব্যথাভার
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য সে আজ দৃষ্টিতে বরাভয়
অনুভবের নীলাদ্রি জুড়ে নেই কোনো কাঁটাতার

কবি পরিচিতি
মাহফুজ আল-হোসেন গত শতকের নব্বইয়ের দশকের প্রথিতযশা কবি, নন্দনতাত্ত্বিক ও অনুবাদক। ১৯৬৮ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার নওদাখাঁড়ারা গ্ৰামে মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। শৈশবের কিছুকাল কেটেছে পৈত্রিক নিবাস চুয়াডাঙ্গা জেলার গড়চাপড়া গ্ৰামে। বেড়ে ওঠা, লেখাপড়া ও বসবাস ঢাকা শহরে। তিনি অধুনাবাদী চিন্তার লিটল ম্যাগাজিন ‘শালুক’-এর সহযোগী সম্পাদক এবং ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত দ্বিভাষিক লিটারারি জার্নাল Litinfinite-এর এডিটোরিয়াল বোর্ড মেম্বার। এছাড়া তিনি ২০২১ সাল থেকে Poetry and Literature World Vision-এর এক্সিকিউটিভ বোর্ড মেম্বার এবং এডমিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্ৰন্থসমূহ হলো : সুবাসিত শব্দের ঘুমঘোর, প্রতীচ্যের বিউগল, কালকেউটের ট্যাক্সিডার্মি, Probably Poems Or May Not, দুঃখবিলাসের পুলিৎজার, সিজোফ্রেনিক রাখালবালিকা ও মনের বাঘ এবং নিজের হাতে খুন করেছি গতকাল, একগুচ্ছ কুচিলা ফুলের সমীপে এবং ভালোবাসলে বুকে বিপ্লব বেঁধে রাখতে হয় । এছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লেখা কবির শতাধিক অগ্ৰন্থিত কবিতা , কাব্যানুবাদ এবং প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে স্বদেশ ও বিশ্বের অসংখ্য লিটল্ ম্যাগাজিন, লিটারারি জার্নাল, পত্রপত্রিকাসহ কয়েকটি গ্লোবাল অ্যান্থোলজিতে। তাঁর বেশ কিছু কবিতা অনূদিত হয়েছে ইংরেজি, সুইডিশ এবং স্প্যানিশ ভাষায়। তিনি ২০১৯ সালে তাঁর কাব্যগ্ৰন্থ ‘সুবাসিত শব্দের ঘুমঘোর’ -এর জন্য বেহুলাবাংলা বেস্টসেলার পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া দ্বিভাষিক কবি হিসেবে তিনি এবছর কিরগিজস্তানের প্রবীণ কবি Rahim Karim Karimov-এর নামে নবপ্রবর্তিত Rahim Karim World Prize 2022-এর জন্য মনোনীত হয়েছেন। হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং আইনশাস্ত্রে স্নাতক কবি কর্মজীবনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে নিয়োজিত রয়েছেন। আইনজীবী পিতা ও সমাজসেবী মাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে মাহফুজ দ্বিতীয় এবং একটি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ছায়াসঙ্গী মাহবুবা রহমানের সাথে বিগত একত্রিশ বছর ধরে প্রেমময় ও সুখী দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করছেন।

ইমেইল: mahfuzalhossain.bd2018@gmail.com

ছবি

মনোজগতের অন্বেষায়

সাময়িকী কবিতা

ছবি

এক ঘর রোদ

ছবি

দ্রোহের রম্য পঙ্ক্তিমালা

ছবি

সংবেদী রঙে ও রেখায় প্রাণের উন্মোচন

ছবি

অলস দিনের হাওয়া

ছবি

লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের মর্মস্পর্শী ও দূরদর্শী সাহিত্যকর্ম

ছবি

‘ভাষার আরোপিত কারুকাজে খেই হারিয়ে ফেলি’

ছবি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের জিন্দা লাশ কি প্রকৃত লাশ

ছবি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের শিক্ষা দর্শন ও অলস দিনের হাওয়া

ছবি

ধ্রুপদী বোধ ও ব্যাধির কবিতা

ছবি

সুকান্তর কবিতায় বিপ্লবী চেতনা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

মগ্নচৈতন্যে সৌন্দর্যধ্যান

ছবি

অধুনাবাদী নিরীক্ষার অগ্রসাধক

ছবি

‘বায়ান্নর আধুনিকতা ও প্রগতিশীল ধারাকে বহন করতে চেয়েছি’

ছবি

জাতীয় চেতনার অমলিন ধারক

ছবি

নক্ষত্রের অনন্ত যাত্রা

ছবি

আহমদ রফিক ও ভাষামুক্তি সাধনা

ছবি

কবি আসাদ চৌধুরী : ঘরে ফেরা হলো না তাঁর

ছবি

জীবনবোধের অনবদ্য চিত্ররূপ ‘স্বপ্নছোঁয়ার পদযাত্রা’

ছবি

অনালোকিত ইতিহাসের সন্ধানে

ছবি

কবিরের দোঁহা

ছবি

আকবর হোসেন ও ‘যৌবনটাই জীবন নয়’

ছবি

স্বোপার্জিত

ছবি

সংগ্রামের অগ্নিশিখা থেকে হেলাল হাফিজ

ছবি

কোনো এক শরৎসন্ধ্যা : কোথায় পাব তারে

শারদ পদাবলি

ছবি

লক্ষীপুর-হ

ছবি

যে জীবন ফড়িংয়ের

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বিশাল ডানাওলা এক থুত্থুরে বুড়ো মানুষ

ছবি

খুদে গল্পের যাদুকর ওসামা অ্যালোমার

ছবি

নিমগ্ন লালন সাধক ফরিদা পারভীন

ছবি

কেন তিনি লালনকন্যা

ছবি

টি এস এলিয়টের সংস্কৃতি চিন্তার অভিমুখ

tab

মাহফুজ আল-হোসেন-এর দশটি কবিতা

মাহফুজ আল-হোসেন

শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

কবিপাখি
অনুসমর্থিত জেনেও চেনা গান কণ্ঠে রোচেনি,
উপেক্ষার দগ্ধ প্রহরে ভাসে প্রিয়তির মুখচ্ছবি।
তবুও ঐশ্বর্যময় অপূর্ণতায় আচ্ছন্ন সেই কবি।
হ্যালোজেন জ্বেলেও বুঝিবা আঁধার ঘোচেনি!

পাখিটাও ভীষণ ক্লান্ত এড়াতে শিকারীর তীর,
স্বপ্ন দেখাবে বলে সেও নির্ঘুম রাত্রি দ্বিপ্রহরে।
মুহূর্তেই বক্ষ বিদীর্ণ তার ব্যাধের বিষাক্ত শরে,
পড়ে রইলো নিষ্প্রাণ দেহ আর রক্তাক্ত শির!!

পাথরে চুঁইয়ে প’ড়ে সে রক্ত মিশে যায় জলে,
পাহাড়-মাঠ কাঁপিয়ে ছুটে চলে ঝর্নাধারায়।
গেয়ে ওঠে সুকণ্ঠে- শুনে স্রোতার মন হারায়,
সে দরাজ কণ্ঠের বুলন্দ আওয়াজ কী বলে?

কবিই পাখি না পাখিটা কবি মাহফুজ জানে;
সে সুলুকে আর নাই কাজ সুরটাই মন টানে...

অমলকান্তি সকাশে
গত শনিবার বায়ুশূন্য বৈশাখী মধ্যদুপুরে স্ফোটনোন্মুখ সূর্যের ডিম্বাশয় থেকে অবিরাম গড়িয়ে পড়ছিল চব্বিশ ক্যারেটের সুবর্ণ শরবত; ঘর্মাক্ত পরিশ্রান্ত রিকশাচালক, মাথামোটা তরমুজওয়ালা আর টিফিনব্রেকে বুক টান করে মিলিটারি মেজাজে পদব্রজে মার্চ করতে করতে এগিয়ে যাওয়া দুর্বার সেলাই দিদিমণিসহ সকলেই এ মহাজাগতিক রৌদ্র পানোৎসবে হঠাৎ হয়েছিল শামিল; শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ধাবমান গাড়ির উইন্ডশিল্ড চুরমার করে সামন্ততান্ত্রিক রোদের ধূমায়িত পেগ হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ছিল আমুদে আমলার পানপাত্রে; এ অভাবিত অচিন্ত্যনীয় রাজসিক দৃশ্যাবলির সাক্ষী হতে পারাটা যে বিত্তবিলাসী পুরবাসীর বৃক্ষবলিজনিত পরম পুণ্যার্জনের সুমিষ্ট ফল সেটি মেধাবী মেফিস্টোফেলিসও জানে!

এরই এক ফাঁকে সৌম্যদর্শন অমলকান্তির সঙ্গে অভাজনের অনির্ধারিত সৌজন্য সাক্ষাৎ-
মূর্ছা যাবার আগমুহূর্তে ফিসফিস করে
সে আমার ডান কানে বোধহয় বলছিল:
ভাবিস না মর্কট, খুব শিগগিরই রোদ্দুর হয়ে যাবি...

রাসেলস্ ভাইপার
কী সোৎসাহে বিষখালি নদীতে মধুচন্দ্রিমা যাপন শেষে প্রতিস্পর্ধী ছোটকাগজের মতো স্রোতের বিপরীতে পাড়ি দিয়ে এসেছো তুমি অনেকটা পথ!

অবশ্য, অমাবস্যা-পূর্ণিমার রাতে দুই তীরের সন্ত্রস্ত জনপদে তোমাকে নিয়ে প্রায়শই জমে উঠে চাঁদ সওদাগরের পালা আর বেহুলা লক্ষিন্দরের সকরুণ পুঁথিপাঠ।

অথচ, টোপাপানার মতো কী যে অনিশ্চিত জীবন তোমার- আর ততটাই গোলমেলে- যেরূপে দিনশেষে ম্যালা হাঁকডাকের পর ডিএসই সেনসেক্স কিংবা ডাওয়ের মতোই হঠাৎ চিৎপাত!!

শুধু নির্বোধ আর গোঁড়া লোকেরাই তো তোমাকে আবশ্যিকভাবে হিংস্র বানিয়ে রেখেছে, যেভাবে কসভো, কিয়েভ কিংবা গাজায় চলেছে বল্গাহীন খুনোৎসব।

বার্ট্রান্ডের কাছে অযথাই শেখা তোমার যুক্তিজর্জর চিন্তাশীলতা কিংবা জলজ যুদ্ধবিরোধী মনোভাবই কি শেষাবধি তোমার চিরকালীন প্রবল প্রতিপক্ষ আত্মস্বীকৃত শত্রু মনুষ্যকুলকে উস্কে দিচ্ছে,
আর ওদের শান্তি-সংহিতার প্রতিটি পাতা প্রতিনিয়ত পাল্টে দিচ্ছে গোয়েবলসীয় অপব্যাখ্যায়?

উপপাদ্য
মনে করি, এবিসি একটা ত্রিভুজ;
না- এটা মনে করা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না।

হয়তো কেউ কেউ ভাবছেন
তোমার আমার মাঝখানে
যতটুকু স্পেস
তৃতীয় কেউ একজন তো আছেনই-
লোকচক্ষু কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার অন্তরালে;

আরে বাপু, অসুবিধাই বা কোথায়?
যা খুশি যে কেউ ভেবে নিতে পারেন।

আর লেজ কাটা ভাবনার
অবশিষ্ট পরিসর যেটুকু আছে
কিশোর গ্যাংয়ের মতো সিনেম্যাটিক স্টাইলে
যদি ছিনতাই হয়েও যায়
তদুপরি লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলি
সত্যি সত্যিই স্বকীয়া আছেন একজন।

প্রায়ান্ধ বলে হয়তো-
ঠাহর করে উঠতে পারিনি অ্যাদ্দিনে!

ভাষার শিয়রে
উৎপ্রেক্ষার নকশী চাদরে মুড়ে
উৎপীড়িত প্রতিরাতে জেগে থাকে
অর্বাচীন সেইজন- অতন্দ্র অনুক্ষণ।

অযৌক্তিক উপপাদ্যটা তাহলে
শুরু করা যাক পুনর্বার :
মনে করি, এবিসি একটা ত্রিভুজ..

পাখি পুরাণ
পাখিটার তো একটাই হাউশ ছিল- শৃঙ্খলমুক্ত প্রসারিত ডানা মেলে উড়বে সে নীলাকাশ জুড়ে সর তোলা হৈমন্তিক রোদ্দুরে;

এখন আর আদৌ কোনো উড়ান চায় কিনা পাখিটা- সে শোলক হয়তো খাঁচাও জানে!
অথচ বর্বর ব্যাধের ছোঁড়া বিষাক্ত তীরে
শরাহত পাখিটি কী যন্ত্রণাই না সয়ে গেছে কাউকে কিছু না বলে;
তবুও সংরক্ত ডানায় কখনো সে থামায়নি তার ক্রমাগত উড়ান।

একদা দানাপানির যোগাড়যন্তর নিয়েও তো ছিল তার হেলেনিক অনিশ্চয়তা;

সেসব ভাবনা যে পুরোপুরি উবে গেছে কর্পুরের শিশি থেকে তাও তো নয়।

জানি না কোন আলস্যের আলপথ থেকে সে
চরণ তুলে নিয়েছে প্রবোধের প্রভাত সংগীতে?

অবশ্য কলাঝাড়ের ফোঁড়ানো কানে ঝালাপালা ধরানো ওর ঝুমকো কিচিরমিচির ছিল নানা অনুষঙ্গে, মাঝেমধ্যেই চড়ে আসতো সেইসব স্বর নায্যতা আর সমবন্টনের সারি গানে।

জানিনা কোন রংঢঙের রম্য সিরিয়াল তাকে নির্বিচারে বিনোদিত করে চলেছে প্রত্যহ প্রতিদিন গার্হস্থ্য যৌনাবেদনে।

কবিতা কিন্তু আমাকেও শোনায়
হ্যাঁ, কবিতা কিন্তু আমাকেও শোনায়,
পথচলতি এফ ব্যান্ডের মতো-
বাধ্য করে শুনতে।
নিজের?
না, একদম নয়;
বোধহয় চেনা কারোর?
হ্যাঁ, সেটা মাঝেসাঝে-
একদম দমকা হাওয়ার মতোই
অর্বাচীন কারোরই হবে।
গুগল তো জানে না অনেক কিছুই-
পড়–য়ারাও কি সবকিছু জানে?

স্বভাষায় হলে তো ভালই,
না, ব্যাপারটা যতোটা ভাষার
তারও অধিক ভালোবাসার,
কিংবা ক্ষীয়মাণ আশার!

মাঝেসাঝে তেড়েফুঁড়ে আসে
শব্দের নীরব ডালপালা নিয়ে,
টুঁটি চেপে ধরলেও
না- চিৎকার করে না একটুও;
বরং প্রেমিকার মতো চোখে চোখ রেখে-
বলে : চশমা খোলো প্রায়ান্ধ কবি;
সুন্দর চোখজোড়া তোমার!
একেবারে আলো হারাবার আগে,
আমাকেও একটুখানি দ্যাখো,
ঠোঁটে ঠোঁট লাগাও- সাথে জিহ্বামূলও;
আরে- আরে এ কী করছো?
না এটা অসভ্যতা তো নয়-
বরং সভ্যতার সংযোগ,
একান্তই তোমাদের।

এবার দরাজ কণ্ঠ ছাড়ো আর
কুলোর মতো কান দুটো খোলা রাখো;
অনন্তর অনালোক বিচ্ছুরিত হোক-
অপ্রস্তুত বিদ্যুচ্চমকের মতো,
কিংবা কমলাতপ্ত ক্রোধাগ্নি-
চলিষ্ণু লাভাস্রোতের মতো!!
যা কিনা তুমি তোষামোদের তুষে জ্বেলেও
জ্বলতে দ্যাখোনি বহু ব হু কা ল ধরে...

ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি?
বোধহয়, আড়ি পেতে আমায় শুনছো।

তোমাকেও তো শুনতে হবে আমায়
ভুল করে নিজেকে চিনতে...
আমাকেও তো শুনতে হবে তোমায়
নাহ্, টেনে তুলতে নয়
আমায় নতুন করে ভুলতে!!

বর্ষার মনোসিজ ধ্রুপদী গান

পাষাণী মন ভিজাও বর্ষা মাভৈঃ
ভিজাও রমণীয় পথঘাট
ভিজাও ওষ্ঠাধার ললাট
পূর্ণ করো প্রণয়ের পাত্র
পূর্ণ করো মাধুকরী রাত্র
বাসনার আরক নিয়ে ঘর যাবৈ

ত্রাসুক কিম্ভূত বজ্র-বিদ্যুৎ
আসুক না অন্তরে অবধূত
অকূল পাথারে আজ পার পাবৈ
পাষাণী মন ভিজাও বর্ষা মাভৈঃ

কবিতার পক্ষে তেমন কাউকে দরকার নেই
কবিতার পক্ষে কোথাও দাঁড়াবার কেউ নেই বলে নিষ্প্রদীপ মৃতগৃহে করুণ রাগাশ্রিত বিলাপোৎসবের কীইবা প্রয়োজন?
কবিতাই তো পারে কৃষ্ণপক্ষের নিকষ অন্ধকারে শেষ সলতের আলোটুকু পরম নির্ভরতায় জ্বেলে দিতে; হতে পারে সে আলো কখনো সখনো স্নিগ্ধতা দোষে দুষ্ট!

যদি কোনো এক মহারাত্রিতে পৃথিবীর সব আলো নিভেও যায়
নিশ্চিত জেনো কবিতার অলৌকিক অঙ্গুলি প্রক্ষালণে কৃঞ্চগহ্বরের ওলান থেকে অঝোর ধারায় নেমে আসবে সত্যাশ্রয়ী আলোকবৃষ্টি।

আলোকিত মানুষের পক্ষে হয়তো কেউ কেউ থাকে অমনুষ্যের পক্ষেও কিন্তু আজকাল অনেকেই দুর্ভেদ্য ঢাল হয়ে দাঁড়ায়!

কবিতার পক্ষে কাউকে কিন্তু সেভাবে থাকবার দরকার নেই।

চক্ষুষ্মানের দৃষ্টি ধূসর হয়ে এলে ব্রেইলের ছিদ্রমালায় কবিতার ¤্রয়িমাণ শব্দাবলি হঠাৎ করেই সরব হয়ে ওঠে মুখাপেক্ষী ভিড় ঠেলে!!

‘মানুষ’ শীর্ষক ভুক্তি
ঋতুবৈচিত্র্যের মতো প্রাকৃতিক সত্যে আস্থাবান হয়ে আজন্ম গড়পড়তা মানুষের বোধগম্য থাকতে চেয়েছিলেন একদা এক প্রাজ্ঞ প্রবীণ কবি;
অথচ, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’...- অবশ্যপাঠ্য এ অর্ধসত্যের ঘোরপ্যাঁচ বুঝতে না বুঝতেই কয়েক সহস্রাব্দ গড়িয়ে গেল সভ্যতার বালুঘড়ি থেকে।

এরই ফাঁকে অকাট্য যুক্তিতর্কের আবেদন ফুরিয়ে গেলে কতিপয় সশস্ত্র যুদ্ধবাজকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো পণবন্দি সন্ত্রস্ত ধ্বনি আর নিসর্গের বিপরীতে;

ইত্যবসরে, দিগন্ত বিস্তৃত রক্তপাত আর বিপন্নতা নাক্ষত্রিক সত্যকে আড়াল করে দিলো বধ্যভূমিতে অপেক্ষমাণ বিশ্বাসী ব্যাসবাক্যের বানান থেকে।
এতদসত্ত্বেও, অস্থিরমতি হাওয়া আর স্বাপদসঙ্কুল ঘূর্ণিজল রোদ্দুরের ঠোঁটে সম্ভবত কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো দ্বিপদ মানুষের বোধগম্য অস্ফুট স্বরে;
শেষাবধি, সওদাগরী অভিধানের কোত্থাও ‘মানুষ’ শীর্ষক কোনো ভুক্তি কিংবা এর এঁটোকাঁটার অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে গলদঘর্ম কবি সত্যের এক সারবান প্রতিশব্দ হঠাৎ কুড়িয়ে পেলেন হাইব্রিড কাঁঠালের আমসত্ত্বে!

অনির্দেশ্য অভিমুখের পানতুম
অনুভবের নীলাদ্রি জুড়ে নেই কোনো কাঁটাতার
কিংবা নেই চোখরাঙানো চৌকির সতর্ক প্রহরা
সুরঞ্জনা শোনে না বারণ বলো কী দোষ তাহার

হৃদয়ের ঝাঁপি খুলে সত্যিসত্যিই হবে কি মুখরা
কিংবা নেই চোখরাঙানো চৌকির সতর্ক প্রহর
বাসনার চৌকাঠ পেরিয়ে দেখো নেই অবগুণ্ঠন
নিষ্প্রদীপ জলসায় কোন গোপন মাধুরী অধরা

অচেনা তস্করের হাতেই হোক তবে সর্বস্ব লুণ্ঠন
বাসনার চৌকাঠ পেরিয়ে দেখো নেই অবগুণ্ঠন
নক্ষত্রেরও নেই জানা আগন্তুকের নাম-পরিচয়
অচেনা তস্করের হাতেই হোক তবে সর্বস্ব লুণ্ঠন
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য সে আজ দৃষ্টিতে বরাভয়

নক্ষত্রেরও নেই জানা আগন্তুকের নাম-পরিচয়
অনির্দেশ্য অভিমুখের পানতুমে নেই ব্যথাভার
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য সে আজ দৃষ্টিতে বরাভয়
অনুভবের নীলাদ্রি জুড়ে নেই কোনো কাঁটাতার

কবি পরিচিতি
মাহফুজ আল-হোসেন গত শতকের নব্বইয়ের দশকের প্রথিতযশা কবি, নন্দনতাত্ত্বিক ও অনুবাদক। ১৯৬৮ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার নওদাখাঁড়ারা গ্ৰামে মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। শৈশবের কিছুকাল কেটেছে পৈত্রিক নিবাস চুয়াডাঙ্গা জেলার গড়চাপড়া গ্ৰামে। বেড়ে ওঠা, লেখাপড়া ও বসবাস ঢাকা শহরে। তিনি অধুনাবাদী চিন্তার লিটল ম্যাগাজিন ‘শালুক’-এর সহযোগী সম্পাদক এবং ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত দ্বিভাষিক লিটারারি জার্নাল Litinfinite-এর এডিটোরিয়াল বোর্ড মেম্বার। এছাড়া তিনি ২০২১ সাল থেকে Poetry and Literature World Vision-এর এক্সিকিউটিভ বোর্ড মেম্বার এবং এডমিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্ৰন্থসমূহ হলো : সুবাসিত শব্দের ঘুমঘোর, প্রতীচ্যের বিউগল, কালকেউটের ট্যাক্সিডার্মি, Probably Poems Or May Not, দুঃখবিলাসের পুলিৎজার, সিজোফ্রেনিক রাখালবালিকা ও মনের বাঘ এবং নিজের হাতে খুন করেছি গতকাল, একগুচ্ছ কুচিলা ফুলের সমীপে এবং ভালোবাসলে বুকে বিপ্লব বেঁধে রাখতে হয় । এছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লেখা কবির শতাধিক অগ্ৰন্থিত কবিতা , কাব্যানুবাদ এবং প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে স্বদেশ ও বিশ্বের অসংখ্য লিটল্ ম্যাগাজিন, লিটারারি জার্নাল, পত্রপত্রিকাসহ কয়েকটি গ্লোবাল অ্যান্থোলজিতে। তাঁর বেশ কিছু কবিতা অনূদিত হয়েছে ইংরেজি, সুইডিশ এবং স্প্যানিশ ভাষায়। তিনি ২০১৯ সালে তাঁর কাব্যগ্ৰন্থ ‘সুবাসিত শব্দের ঘুমঘোর’ -এর জন্য বেহুলাবাংলা বেস্টসেলার পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া দ্বিভাষিক কবি হিসেবে তিনি এবছর কিরগিজস্তানের প্রবীণ কবি Rahim Karim Karimov-এর নামে নবপ্রবর্তিত Rahim Karim World Prize 2022-এর জন্য মনোনীত হয়েছেন। হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং আইনশাস্ত্রে স্নাতক কবি কর্মজীবনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে নিয়োজিত রয়েছেন। আইনজীবী পিতা ও সমাজসেবী মাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে মাহফুজ দ্বিতীয় এবং একটি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ছায়াসঙ্গী মাহবুবা রহমানের সাথে বিগত একত্রিশ বছর ধরে প্রেমময় ও সুখী দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করছেন।

ইমেইল: mahfuzalhossain.bd2018@gmail.com

back to top