alt

সাময়িকী কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

সীমা ও অসীম
আসিফ নূর
ছোট্ট এক ডিঙিনৌকা, তাই নদীর সীমায় বাঁচি;

কখনোবা ছুটে গেলে মোহনার কিছু কাছাকাছি...

অসীমের অবয়ব দেখে, মত্ত সমুদ্রজোয়ারে;

ডিঙিরও বাসনা জাগে তীরহারা জলের সোয়ারে।

থরথর হিয়া-কায়া,ভাঙা হাল, শূন্যের ভরসা;

ভুলে গিয়ে জরজর পাটাতনের বেহাল দশা...

স্বাপ্নিক ফেরারি হই দিগন্তের অথৈ নীলিমায়-

আগুনের প্রেমে পতঙ্গ যেমন আত্মঘাতে যায়।

পারের হাওয়ায় ঝাপটা মারে অপারের দোলাচল,

অসীমের মুক্তমঞ্চে পর্দা ফেলে সীমার আঁচল।

ত্যাগেই যে খোঁজে সুখ
আরিফ মঈনুদ্দীন
অসম্ভব সুন্দরে তলিয়ে যাবার আগেই উঠে আসি,

উপভোগের নিমিত্ত- আবেগের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে

সাক্ষী দেয় দুটি চোখ-

তলিয়ে যেতে তো আসেনি সবাই

এমনও কেউ কেউ আছেন, সৃষ্টির

মাহাত্ম্য কীর্তনে পার করছেন

সকাল-সন্ধ্যা। প্রার্থনা সংগীতে সুরের ইন্দ্রজাল

রচনা করে উত্তীর্ণ শিল্পের উদ্বাহু প্রশংসায়

ফল ভারানত বৃক্ষের মতন নতমুখী সারাক্ষণ

ফুল ছিঁড়ে ঘ্রাণ নেওয়ার মতো

সম্ভোগেচ্ছায় ডুবে যাবার আগে

ইন্দ্রিয়ের করতলে উঠে আসে বিশ্বাসের বাণী-

আদেশ-নিষেধ আর ত্যাগের মহিমা দেখে

উল্লসিত প্রকৃতি ডানা ঝাপটায়- এ-ই তো মানুষ

যাঁর জন্য বরাদ্দ আমার পবিত্র বাতাস,

যে ফিরিয়ে নিয়েছে গন্ধম থেকে মুখ

নিষেধাজ্ঞায় প্রণাম ঢেলে ত্যাগেই যে খোঁজে সুখ।

বসে থাকে নম্র মনস্তাপ
আহমদ জামাল জাফরী
স্বপ্নের ভেতর ধ্বনিময় এই নির্ভার জীবন-

নিঃসহায় হৃদয় স্পর্শ করো প্রেমে ও অপ্রেমে

উদাসীন হাওয়ার মাঠে আমি এক নির্জন বাউল,

আমাকে হৃদয়-লগ্ন করো অন্ধ আলিঙ্গনে।

এই রোদ্র-ছায়া-মাটি, এই মগ্ন হাতছানি;

ঝরাপাতা, পাখির পালক, গৃহত্যাগী জ্যো¯œা

রাত্রির ডাক, অনন্ত প্রেম ও অবসাদ;

যা কিছু পাই দু’হাতে জড়াই-

একেকটি মায়াময় দিন সন্ধ্যার বাতাসে মিলায়

পথে লেগে থাকা সোনা?? ধুলোর মতো

বসে থাকে নম্র মনস্তাপ;

পাতার মর্মর ধ্বনি বুকের মধ্যে বাজে

জরাগ্রস্ত গৃহ ও বিবাদ ক্ষুব্ধ অন্ধকারে ডুবে যায়,

রাত্রির প্রবাহ থেকে জ্বলে ওঠে তারা

অধীর আকাশে দীর্ঘজীবী নক্ষত্রের গানে,

শূন্যতার চোখগুলি জেগে থাকে

স্খলিত নিদ্রার রুদ্ধ অভিমানে;

নশ্বর জীবন মুক্তিপণ মানি স্বপ্ন ও কবিতার,

অবর্তীণ আত্মার এই নিরর্থক ধ্যান

লুপ্তপ্রায় মানুষের নগরীতে বসে।

সেই দুখী বালকের প্রতি
সৌম্য সালেক
দীর্ঘদিন অভুক্ত থাকার পর কঙ্কালসার দেহ নিয়ে

সামান্য খাদ্যের জন্য তুমি বহুদূর হেঁটে এসেছিলে

ছেঁড়া বস্ত্র ও শীর্ণ পা দু’টি জানান দিচ্ছিল

কতটা করাল দিন তুমি পার করছ

খাবারের একটি পুঁটলি তোমাকে আনন্দিত করেছিল

এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে এতটুকু বিলম্ব না করে

বিতরণকারীকে চুমু খেয়েছিলে

ধন্যবাদ দিয়েছিলে তাকে;

এবং কোনো উপদ্রব সৃষ্টি না করে শান্তভাবে ফিরে যাচ্ছিলে

তবু তোমাকে ওরা হত্যা করেছে

তোমার করুণ মুখচ্ছবি ওদের দমাতে পারেনি

ওদের হাত কাঁপেনি, গুলি চালিয়েছে বুকে!

চার ক্রোশ হেঁটে আসা হে বিষণœ বালক

তোমার মৃত্যু আমাকে ছিঁড়ে ফেলেছে

আমার হৃদয়কে ছিন্ন-বিছিন্ন করে উড়িয়ে দিয়েছে ঝড়ে

তোমাকে হত্যার বিবরণ আমার অভ্যাস ও আরাধনাবিধি বদলে দিয়েছে

আমার অস্তিত্ব আজ অসংলগ্ন- জড়, খড়কুটো

আমির, যারা মুহূর্তের মধ্যে তোমার হাসিমুখে রক্ত ঝরিয়েছে

তুমি কি জানো, ওরা কারা?

ওরা সেই সম্প্রদায়, যারা ঈর্ষার বশে চাঁদের টুকরো ভাইকে কুয়ায় ফেলে দিয়েছে

ওরা তারা, যারা বিচ্ছেদে পাগলপ্রায় পিতার সামনে বছরের পর বছর মিথ্যা বলেছে

ওরা তারা, যারা হিংসা ও ঘৃণার অস্ত্রে মানবতাকে হত্যা করেছে

ওরা তারা, যারা অন্যের ভূমিতে নিজেদের নাম-ঠিকানা বসিয়েছে

ওরা তারা, যারা মানুষ্যত্বকে শূলে চড়িয়েছে

ওরা তারা, যারা চুক্তির শর্তকে তাচ্ছিল্য করে নিষিদ্ধ সময়ে হামলা করেছে

মানুষের কোনো বিশ্লেষণই ওদের বর্বরতাকে সংজ্ঞায়নের জন্য যথেষ্ট নয়!

তবে ওদের কুকীর্তিকে ঢেকে রাখার জন্য যত প্রচেষ্টাই জারি রাখা হোক না কেনো

কেলেঙ্কারি প্রকাশ পাবেই, ওদের পাপ দুর্গন্ধ ছড়াবেই

আজ হাত গুটিয়ে থাকলেও একদিন মানুষ জাগবেই

ওদের অপকর্মের প্রতিশোধ নেবেই

হে গাজার পবিত্র শিশু, তুমিও ওদের দুর্দশা দেখতে পাবে

দেখতে পাবে ওদের অন্তহীন শোকসভা

ওদের বিদীর্ণ আত্মার আহাজারি তুমিও শুনতে পাবে;

একটু অপেক্ষা করো, স্বর্গের প্রসন্ন পাখিটি

সময়ের সীমা ও সংকট থেকে তুমি আজ মুক্ত

কেননা একবার মৃত্যুর পর মানুষ কখনও আর মরে না!

চাঁদের নোটবুক
তানজীনা ফেরদৌস
কিছু কিছু ছায়া আছে বিকেলের মায়ার মতো।

তারা ডাকিনীর মতো জাদুবিদ্যা জানে,

কিংবা সাপিনীর মতো চোখে রাখে মন্ত্রের নেশা।

আমি রাগ, শোক, কাম- এসবের ঊর্ধ্বে নই,

তবু সংসারের ভেতর আমি এক জোসনাজমির বর্গাচাষী

অন্যের জমিতে ফসল ফলাই, নিজের ভেতর বৃষ্টির খবর রাখি না।

ডলফিনের শোকসভা দেখে যে মাছেরা আজ সমাজতন্ত্রী,

তাদের দলে আমিও আছি।

কিন্তু আমার কোনো সমুদ্রসংক্রান্ত স্মৃতি নেই-

শুধু মৃত চাঁদের আলোয় ভাত আর পোলাও-এর পার্থক্য জানি।

এই জন্মে কারও স্মৃতিতে আমি নেই,

কারণ আমি ছিলাম এক আঁকার খাতায়

ইরেজারে মুছে ফেলা ছবি।

তবু ভাবি-

যদি ইরেজার দিয়ে মোছা যেত মৃত্যুপ্রবণ অতীতও,

তবে কি আমরা সবাই একটা ইরেজারের দেশে বাঁচতে পারতাম?

মানবরক্তবীজ
শামীম আহমদ
একদিন আমারে ছাড়িয়া যাবে মনাই

অসাড় হয়ে রবে পড়ে এই বলিষ্ঠ তনাই...

জলমগ্ন দুটি চোখে

শ্যাওলার মতো ফেছরা জমবে জানি

¯্রােতের গহীনে আর একটি ¯্রােত

বহিবে অন্তরলোকে

আত্মার অনন্তবাস হবে রুহের মুলুকে

প্রগাঢ় অন্ধকারে

স্বজনেরা পুঁতে রাখবে মানবরক্তবীজ

আবার কী অঙ্কুরিত হবে চারা

মানব বৃক্ষ হয়ে অনন্ত চরাচরে...

ঘুম
জোবায়দুল ইসলাম
রাতের অন্ধকারে নেমে আসে নীরবতা,

তারার আলো মিশে যায় ক্লান্ত চোখের ভেতর।

শ্বাস-প্রশ্বাস ধীরে ধীরে বদলে যায়,

অচেনা এক নদীর মতো ভেসে যায় মন।

ঘুম, তুমি কি আশ্রয়?

নাকি নিঃশব্দ এক দরজা,

যেখানে শরীর থামে, অথচ আত্মা উড়ে যায় দূরে?

অর্ধেক মৃত্যু, অর্ধেক জীবন,

এক অদ্ভুত দোলনায় দুলে যায় সময়।

স্বপ্নেরা ভিড় জমায় জানালার পাশে,

কেউ ফিসফিস করে, কেউ আঁকে রঙিন মরীচিকা।

ঘুম, তুমি নিঃশব্দ বিদ্রোহ,

তুমি ক্লান্ত শরীরের আশীর্বাদ,

তুমি ভুলে থাকার আরেকটি নাম।

তবু, প্রতিটি ভোরে তুমি ভেঙে যাও

পাখির ডাকে,

অথবা ঘড়ির নির্মম শব্দে।

আর মানুষ আবার পা ফেলে

চেনা পৃথিবীর ভিড়ে।

ছবি

সত্যেন সেনের উপন্যাস: মিথ ও ইতিহাসলগ্ন মানুষ

ছবি

বিস্ময়ের সীমা নাই

ছবি

নগর বাউল ও ত্রিকালদর্শী সন্ত কবি শামসুর রাহমান

ছবি

ও বন্ধু আমার

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

শামসুর রাহমানের কবিতায় ‘মিথ’

ছবি

বহুমাত্রিক শামসুর রাহমান

ছবি

দূর-সময়ের সার্বভৌম কবি

ছবি

মাহফুজ আল-হোসেন-এর দশটি কবিতা

ছবি

মনোজগতের অন্বেষায়

সাময়িকী কবিতা

ছবি

এক ঘর রোদ

ছবি

দ্রোহের রম্য পঙ্ক্তিমালা

ছবি

সংবেদী রঙে ও রেখায় প্রাণের উন্মোচন

ছবি

অলস দিনের হাওয়া

ছবি

লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের মর্মস্পর্শী ও দূরদর্শী সাহিত্যকর্ম

ছবি

‘ভাষার আরোপিত কারুকাজে খেই হারিয়ে ফেলি’

ছবি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের জিন্দা লাশ কি প্রকৃত লাশ

ছবি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের শিক্ষা দর্শন ও অলস দিনের হাওয়া

ছবি

ধ্রুপদী বোধ ও ব্যাধির কবিতা

ছবি

সুকান্তর কবিতায় বিপ্লবী চেতনা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

মগ্নচৈতন্যে সৌন্দর্যধ্যান

ছবি

অধুনাবাদী নিরীক্ষার অগ্রসাধক

ছবি

‘বায়ান্নর আধুনিকতা ও প্রগতিশীল ধারাকে বহন করতে চেয়েছি’

ছবি

জাতীয় চেতনার অমলিন ধারক

ছবি

নক্ষত্রের অনন্ত যাত্রা

ছবি

আহমদ রফিক ও ভাষামুক্তি সাধনা

ছবি

কবি আসাদ চৌধুরী : ঘরে ফেরা হলো না তাঁর

ছবি

জীবনবোধের অনবদ্য চিত্ররূপ ‘স্বপ্নছোঁয়ার পদযাত্রা’

ছবি

অনালোকিত ইতিহাসের সন্ধানে

ছবি

কবিরের দোঁহা

ছবি

আকবর হোসেন ও ‘যৌবনটাই জীবন নয়’

ছবি

স্বোপার্জিত

ছবি

সংগ্রামের অগ্নিশিখা থেকে হেলাল হাফিজ

ছবি

কোনো এক শরৎসন্ধ্যা : কোথায় পাব তারে

tab

সাময়িকী কবিতা

বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

সীমা ও অসীম
আসিফ নূর
ছোট্ট এক ডিঙিনৌকা, তাই নদীর সীমায় বাঁচি;

কখনোবা ছুটে গেলে মোহনার কিছু কাছাকাছি...

অসীমের অবয়ব দেখে, মত্ত সমুদ্রজোয়ারে;

ডিঙিরও বাসনা জাগে তীরহারা জলের সোয়ারে।

থরথর হিয়া-কায়া,ভাঙা হাল, শূন্যের ভরসা;

ভুলে গিয়ে জরজর পাটাতনের বেহাল দশা...

স্বাপ্নিক ফেরারি হই দিগন্তের অথৈ নীলিমায়-

আগুনের প্রেমে পতঙ্গ যেমন আত্মঘাতে যায়।

পারের হাওয়ায় ঝাপটা মারে অপারের দোলাচল,

অসীমের মুক্তমঞ্চে পর্দা ফেলে সীমার আঁচল।

ত্যাগেই যে খোঁজে সুখ
আরিফ মঈনুদ্দীন
অসম্ভব সুন্দরে তলিয়ে যাবার আগেই উঠে আসি,

উপভোগের নিমিত্ত- আবেগের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে

সাক্ষী দেয় দুটি চোখ-

তলিয়ে যেতে তো আসেনি সবাই

এমনও কেউ কেউ আছেন, সৃষ্টির

মাহাত্ম্য কীর্তনে পার করছেন

সকাল-সন্ধ্যা। প্রার্থনা সংগীতে সুরের ইন্দ্রজাল

রচনা করে উত্তীর্ণ শিল্পের উদ্বাহু প্রশংসায়

ফল ভারানত বৃক্ষের মতন নতমুখী সারাক্ষণ

ফুল ছিঁড়ে ঘ্রাণ নেওয়ার মতো

সম্ভোগেচ্ছায় ডুবে যাবার আগে

ইন্দ্রিয়ের করতলে উঠে আসে বিশ্বাসের বাণী-

আদেশ-নিষেধ আর ত্যাগের মহিমা দেখে

উল্লসিত প্রকৃতি ডানা ঝাপটায়- এ-ই তো মানুষ

যাঁর জন্য বরাদ্দ আমার পবিত্র বাতাস,

যে ফিরিয়ে নিয়েছে গন্ধম থেকে মুখ

নিষেধাজ্ঞায় প্রণাম ঢেলে ত্যাগেই যে খোঁজে সুখ।

বসে থাকে নম্র মনস্তাপ
আহমদ জামাল জাফরী
স্বপ্নের ভেতর ধ্বনিময় এই নির্ভার জীবন-

নিঃসহায় হৃদয় স্পর্শ করো প্রেমে ও অপ্রেমে

উদাসীন হাওয়ার মাঠে আমি এক নির্জন বাউল,

আমাকে হৃদয়-লগ্ন করো অন্ধ আলিঙ্গনে।

এই রোদ্র-ছায়া-মাটি, এই মগ্ন হাতছানি;

ঝরাপাতা, পাখির পালক, গৃহত্যাগী জ্যো¯œা

রাত্রির ডাক, অনন্ত প্রেম ও অবসাদ;

যা কিছু পাই দু’হাতে জড়াই-

একেকটি মায়াময় দিন সন্ধ্যার বাতাসে মিলায়

পথে লেগে থাকা সোনা?? ধুলোর মতো

বসে থাকে নম্র মনস্তাপ;

পাতার মর্মর ধ্বনি বুকের মধ্যে বাজে

জরাগ্রস্ত গৃহ ও বিবাদ ক্ষুব্ধ অন্ধকারে ডুবে যায়,

রাত্রির প্রবাহ থেকে জ্বলে ওঠে তারা

অধীর আকাশে দীর্ঘজীবী নক্ষত্রের গানে,

শূন্যতার চোখগুলি জেগে থাকে

স্খলিত নিদ্রার রুদ্ধ অভিমানে;

নশ্বর জীবন মুক্তিপণ মানি স্বপ্ন ও কবিতার,

অবর্তীণ আত্মার এই নিরর্থক ধ্যান

লুপ্তপ্রায় মানুষের নগরীতে বসে।

সেই দুখী বালকের প্রতি
সৌম্য সালেক
দীর্ঘদিন অভুক্ত থাকার পর কঙ্কালসার দেহ নিয়ে

সামান্য খাদ্যের জন্য তুমি বহুদূর হেঁটে এসেছিলে

ছেঁড়া বস্ত্র ও শীর্ণ পা দু’টি জানান দিচ্ছিল

কতটা করাল দিন তুমি পার করছ

খাবারের একটি পুঁটলি তোমাকে আনন্দিত করেছিল

এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে এতটুকু বিলম্ব না করে

বিতরণকারীকে চুমু খেয়েছিলে

ধন্যবাদ দিয়েছিলে তাকে;

এবং কোনো উপদ্রব সৃষ্টি না করে শান্তভাবে ফিরে যাচ্ছিলে

তবু তোমাকে ওরা হত্যা করেছে

তোমার করুণ মুখচ্ছবি ওদের দমাতে পারেনি

ওদের হাত কাঁপেনি, গুলি চালিয়েছে বুকে!

চার ক্রোশ হেঁটে আসা হে বিষণœ বালক

তোমার মৃত্যু আমাকে ছিঁড়ে ফেলেছে

আমার হৃদয়কে ছিন্ন-বিছিন্ন করে উড়িয়ে দিয়েছে ঝড়ে

তোমাকে হত্যার বিবরণ আমার অভ্যাস ও আরাধনাবিধি বদলে দিয়েছে

আমার অস্তিত্ব আজ অসংলগ্ন- জড়, খড়কুটো

আমির, যারা মুহূর্তের মধ্যে তোমার হাসিমুখে রক্ত ঝরিয়েছে

তুমি কি জানো, ওরা কারা?

ওরা সেই সম্প্রদায়, যারা ঈর্ষার বশে চাঁদের টুকরো ভাইকে কুয়ায় ফেলে দিয়েছে

ওরা তারা, যারা বিচ্ছেদে পাগলপ্রায় পিতার সামনে বছরের পর বছর মিথ্যা বলেছে

ওরা তারা, যারা হিংসা ও ঘৃণার অস্ত্রে মানবতাকে হত্যা করেছে

ওরা তারা, যারা অন্যের ভূমিতে নিজেদের নাম-ঠিকানা বসিয়েছে

ওরা তারা, যারা মানুষ্যত্বকে শূলে চড়িয়েছে

ওরা তারা, যারা চুক্তির শর্তকে তাচ্ছিল্য করে নিষিদ্ধ সময়ে হামলা করেছে

মানুষের কোনো বিশ্লেষণই ওদের বর্বরতাকে সংজ্ঞায়নের জন্য যথেষ্ট নয়!

তবে ওদের কুকীর্তিকে ঢেকে রাখার জন্য যত প্রচেষ্টাই জারি রাখা হোক না কেনো

কেলেঙ্কারি প্রকাশ পাবেই, ওদের পাপ দুর্গন্ধ ছড়াবেই

আজ হাত গুটিয়ে থাকলেও একদিন মানুষ জাগবেই

ওদের অপকর্মের প্রতিশোধ নেবেই

হে গাজার পবিত্র শিশু, তুমিও ওদের দুর্দশা দেখতে পাবে

দেখতে পাবে ওদের অন্তহীন শোকসভা

ওদের বিদীর্ণ আত্মার আহাজারি তুমিও শুনতে পাবে;

একটু অপেক্ষা করো, স্বর্গের প্রসন্ন পাখিটি

সময়ের সীমা ও সংকট থেকে তুমি আজ মুক্ত

কেননা একবার মৃত্যুর পর মানুষ কখনও আর মরে না!

চাঁদের নোটবুক
তানজীনা ফেরদৌস
কিছু কিছু ছায়া আছে বিকেলের মায়ার মতো।

তারা ডাকিনীর মতো জাদুবিদ্যা জানে,

কিংবা সাপিনীর মতো চোখে রাখে মন্ত্রের নেশা।

আমি রাগ, শোক, কাম- এসবের ঊর্ধ্বে নই,

তবু সংসারের ভেতর আমি এক জোসনাজমির বর্গাচাষী

অন্যের জমিতে ফসল ফলাই, নিজের ভেতর বৃষ্টির খবর রাখি না।

ডলফিনের শোকসভা দেখে যে মাছেরা আজ সমাজতন্ত্রী,

তাদের দলে আমিও আছি।

কিন্তু আমার কোনো সমুদ্রসংক্রান্ত স্মৃতি নেই-

শুধু মৃত চাঁদের আলোয় ভাত আর পোলাও-এর পার্থক্য জানি।

এই জন্মে কারও স্মৃতিতে আমি নেই,

কারণ আমি ছিলাম এক আঁকার খাতায়

ইরেজারে মুছে ফেলা ছবি।

তবু ভাবি-

যদি ইরেজার দিয়ে মোছা যেত মৃত্যুপ্রবণ অতীতও,

তবে কি আমরা সবাই একটা ইরেজারের দেশে বাঁচতে পারতাম?

মানবরক্তবীজ
শামীম আহমদ
একদিন আমারে ছাড়িয়া যাবে মনাই

অসাড় হয়ে রবে পড়ে এই বলিষ্ঠ তনাই...

জলমগ্ন দুটি চোখে

শ্যাওলার মতো ফেছরা জমবে জানি

¯্রােতের গহীনে আর একটি ¯্রােত

বহিবে অন্তরলোকে

আত্মার অনন্তবাস হবে রুহের মুলুকে

প্রগাঢ় অন্ধকারে

স্বজনেরা পুঁতে রাখবে মানবরক্তবীজ

আবার কী অঙ্কুরিত হবে চারা

মানব বৃক্ষ হয়ে অনন্ত চরাচরে...

ঘুম
জোবায়দুল ইসলাম
রাতের অন্ধকারে নেমে আসে নীরবতা,

তারার আলো মিশে যায় ক্লান্ত চোখের ভেতর।

শ্বাস-প্রশ্বাস ধীরে ধীরে বদলে যায়,

অচেনা এক নদীর মতো ভেসে যায় মন।

ঘুম, তুমি কি আশ্রয়?

নাকি নিঃশব্দ এক দরজা,

যেখানে শরীর থামে, অথচ আত্মা উড়ে যায় দূরে?

অর্ধেক মৃত্যু, অর্ধেক জীবন,

এক অদ্ভুত দোলনায় দুলে যায় সময়।

স্বপ্নেরা ভিড় জমায় জানালার পাশে,

কেউ ফিসফিস করে, কেউ আঁকে রঙিন মরীচিকা।

ঘুম, তুমি নিঃশব্দ বিদ্রোহ,

তুমি ক্লান্ত শরীরের আশীর্বাদ,

তুমি ভুলে থাকার আরেকটি নাম।

তবু, প্রতিটি ভোরে তুমি ভেঙে যাও

পাখির ডাকে,

অথবা ঘড়ির নির্মম শব্দে।

আর মানুষ আবার পা ফেলে

চেনা পৃথিবীর ভিড়ে।

back to top