alt

মায়াকন্যা

নাহিদ পারভেজ

: বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

শিল্পী : সঞ্জয় দে রিপন

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে আছি।

পুষ্পিতার বান্ধবী পারুল আসতে বলেছে। তার কী যেন একটা জরুরি কথা আছে।

আমি অবশ্য কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি। আমার মতো সাধারণ মানুষ, যার পকেটে মাত্র দুইশ’ টাকা আছে- তাকে তেমন কিছু বলে লাভ নেই।

আমার পৃথিবী বলতে গেলে এখন পুরাই গদ্যময়, রাতদিন কাটছে কেবল ক্ষুধার যন্ত্রণায়।

-পরশ ভাই আপনাকে এরকম লাগছে কেন? চুল-দাড়ি কাটেন নাই কতদিন?

-কী জন্যে ডেকেছো বলো।

-আরে বসেন, এত তাড়া কীসের।

-না মানে একটু ধানম-ি যেতে হবে। চাকরির একটা দরখাস্ত জমা দেওয়া লাগবে।

-দেখে তো মনে হচ্ছে সকালে নাশতাও করেন নাই। মুখটা একদম শুকনো লাগছে।

এই যে মামা, লুচি, ডাল, ডিম আর কিছুক্ষণ পরে এক কাপ কফি দিয়ে যাবেন। আর এখন দ্রুত এক প?্যাকেট সিগারেট দিয়ে যান।

-আরে করছো কী, আমি কিছু খাব না।

-চুপ থাকেন, আপনাকে বিল দিতে হবে না।

সব মেয়েই জন্ম থেকেই মায়া নিয়ে জন্মায়, আর তারা সবসময়ই এক ধরনের কতৃত্বপূর্ণ আচরণ পায়; যা ছেলেরা অনেক বড়ো হয়েও অর্জন করতে পারে না। তাই আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ চারপাশটা দেখতে লাগলাম।

ঢাকা শহরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখলে কেউ বলতে পারবে না, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের মৌলিক চাহিদা এখনো পূরণ হয়নি। নিয়মিত জীবনযুদ্ধ করছে সবাই।

দেখে মনে হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকায় আছি।

কী সুন্দর পরিষ্কার ক্যান্টিন। আধুনিক চেয়ার-টেবিল, বোঝাই যাচ্ছে সব বাইরে থেকে ইম্পোর্ট করা। এখানকার সব ছেলেমেয়ের বাবা কোটিপতি অথবা শিল্পপতি।

-কী ভাবছেন, আপনার চেহারা এরকম ভচকায় গেছে কেন?

আমি জানি, পারুল আমাকে পছন্দ করে। মেয়েদের মধ্যে এই একটা জিনিস খুব প্রবল। তারা জেনেবুঝেও সবসময় বান্ধবীদের প্রেমিকের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

তবে এতে আমার মতো রাস্তার ছেলের কিছু যায় আসে না।

-শোন, কাজ আছে, এখনই যেতে হবে, তোমার জরুরি কথাটা দ্রুত বলে ফেলো।

-এত তাড়া কীসের আপনার! সিভি তো যেকোনো সময় জমা দিয়ে আসতে পারবেন। আর একটা কথা ঠিক করে বলেন, পুষ্পিতার মধ্যে কী এমন দেখছেন আপনি! যেটা আমার মধ্যে নেই। একটু ভালোমতো খেয়াল করেন, ওর চেয়ে কি কম সুন্দরী আমি, হাহা...।

মজা করলাম, কিছু মনে করবেন না।

ও হ?্যাঁ, ভালো কথা... আগামীকাল পুষ্পিতার বিয়ে। সারারাত অনেক কান্নাকাটি করেছে বেচারি। তার করুণ চেহারা দেখে একদম কান্না চলে আসছে আমার। বাধ্য হয়েই তাই ডেকেছি আপনাকে।

বলেছে, আজ রাতেই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসবে সে। টাকাপয়সা নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না।

আমার কাছে বেশকিছু গচ্ছিত টাকা, আর পুষ্পিতার কাছে আপাতত যা আছে তা দিয়ে কয়েক মাস ভালোভাবেই চলতে পারবেন আপনারা।

আর এর মধ্যে আশা করছি সবকিছু একদম নরমাল হয়ে যাবে।

-কী হলো চুপ করে আছেন কেন? কী এত ভাবছেন আপনি?

-না মানে, উপরের ফ্যানের বাতাসটা কেন যেন গায়ে লাগছে না। নষ্ট নাকি?

পুরো বিল্ডিং সেন্ট্রাল এসি। আপনি খুব সম্ভবত টেনশন করছেন ভাই।

বেশি চিন্তা না করে এই খামটা ধরেন। এখানে পঞ্চাশ হাজার টাকা আছে। লোন হিসেবে দিচ্ছি। সময়মতো সুদে-আসলে ফেরত দিয়ে দিবেন কিন্তু।

আর এখন গিয়ে আজ রাতের কক্সবাজারের দুটো ট্রেনের টিকেট কিনবেন।

আমি ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় পুষ্পিতাকে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে আসবো।

ট্যাক্সি নিয়ে সেখান থেকে সোজা কাজী অফিস যাব আমরা। তারপর আপনাদের ট্রেনে উঠায় দিয়ে আসবো।

একটা সিগারেট ধরিয়ে পর পর দুটি সার্কেল শূন্যে পাঠিয়ে দিলাম।

-আশ্চর্য, গত এক বছর ধরে পুষ্পিতাকে এই জিনিসটা দেখানোর চেষ্টা করছি আমি। অথচ আজ সে যখন পাশে নেই... তখনই সফল হলাম আমি।

-পারুল, পুষ্পিতা আমার জীবনে ঠিক এই ধোঁয়ার মতো। আমি ঠিক জানি তাকে একবার ছাড়লে আর কখনো পাবো না। হয়তো আজীবনের জন্যে হারাতে হবে।

কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো, ধোঁয়া বা কুয়াশাকে ধরাছোঁয়ার চেষ্টা করাটাই হলো চরম বোকামি।

-পাগল হয়ে গেছেন, কী অবোল-তাবোল বলছেন আপনি!

-ঠিকই বলছি, টাকাগুলো রাখো। এগুলো নিতে পারবো না আমি। আর মাথা ঠা-া করে একটু ভাবো তো...!

পুষ্পিতাকে বিয়ে করলে এই মুহূর্তে তাকে কী দিতে পারবো আমি। আর রাখবো কোথায়, খাওয়াবো কী? আমার নিজেরই তো চালচুলা নেই। কতদিনে হবে সেটাও অনিশ্চিত।

পুষ্পিতার মতো মেয়েদের জন্যে সব ছেলে আজীবন লাইন ধরে থাকে। সেরকম একটা মেয়ের জীবন কি আমি জেনেবুঝে নষ্ট করতে পারি?

-কিন্তু এগুলো এখন বলছেন কেন আপনি, প্রেম করার সময় মনে ছিল না!

আর আপনাদের সুন্দর ভালোবাসাটাকে পূর্ণতা দিবেন না?

-শোন পারুল। জানি আমাকে খুব খারাপ মানুষ মনে হচ্ছে তোমার। এ জন্যে একদম আপসোস নেই।

আমার জায়গায় তুমি হলেও আজ হয়তো ঠিক একই কাজ করতে। সত্যি বলতে, চাকরির জন্যে দরখাস্ত জমা দেবার টাকা পকেটে নেই যেই ব্যক্তির, সে কী করে একটা সোনার চামচ নিয়ে জন্মানো মেয়ের জীবন নষ্ট করবে!

-একটা ছোট্ট অনুরোধ করবো, রাখবে...

-জি, বলুন-

-পুষ্পিতাকে বলবে, পরশ ভাইয়ের সাথে দেখা হয়নি, তার মোবাইলও বন্ধ। তোর দেওয়া মেসের ঠিকানায় গিয়ে শুনলাম, গতকাল রাতেই তিনি দেশের বাড়ি গিয়েছেন। তোর জন্যে ছোট্ট এই চিরকুটটা রেখে গেছেন তিনি,

পুষ্প,

কেমন আছ?

আমাদের আর কোনোদিন দেখা হবে না।

আব্বা ফোন করেছিলেন, দ্রুত বাড়ি যেতে বলেছেন। তাই যাচ্ছি।

চেয়ারম্যান চাচার কাছে দীর্ঘদিন যাবৎ আব্বার বেশকিছু জমি বন্ধক আছে। সেই টাকার জন্যে বার বার চাপ দিচ্ছেন তিনি। আসলে আমাকে পড়াতে গিয়ে জীবনের সবকিছু বাজি ধরেছিলেন। বিনিময়ে এ পর্যন্ত কিছুই দিতে পারিনি। ভবিষ্যতে পারবো এটাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

তাই সেই ঋণ শোধ করতে নিজেকে বিক্রি করতে হচ্ছে আমাকে।

চেয়ারম্যান চাচার একমাত্র মেয়ে তনুর সাথে বিয়ে ঠিক করেছেন। এই পরিস্থিতিতে আব্বাকে ফিরিয়ে দেবার ক্ষমতা নেই আমার।

তুমি জানো, তাদের খুশির জন্যে আমি সবকিছু করতে পারি।

আমাকে কোনোদিন ক্ষমা করো না তুমি।

মনে রেখো, পৃথিবীতে পরশ নামে একজন খারাপ মানুষ আছে, যে তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। কিন্তু কী করবো, ভালোবাসা দিয়ে তো আর পেট ভরে না।

তোমার সাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলো সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি তাই।

বিদায়!

আর তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি, খুব সুন্দর ফুটফুটে চাঁদের আলোর মতো একটা মেয়ে হবে তোমার। যার আমি একটা নাম রেখেছি, স্পর্শী।

ভালো থেকো।

ইতি

পরশ- যে তোমার কোনোদিন কেউ ছিল না!

পারুলের দিকে না তাকিয়েই বের হয়ে এলাম আমি।

চিঠি পড়া শেষে, তার দৃষ্টি এখন আমার দিকে, খুব সম্ভবত সে কাঁদছে..

সূর্যটা আজ খাড়াভাবে মাথার উপর উঠেছে। যেই উত্তাপে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি। আমার চোখের ভেতর বোধ হয় কিছু একটা পড়েছে। অনবরত অশ্রু ঝরছে...

আজকে কান্নার দিন। আগামীকাল থেকে হবে নতুন সূর্যোদয়...

ছবি

কমলা দাশের প্রেমের কবিতা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

হননের আগে

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

প্রেম ও নারীর বিষণ্ণ কুহক

ছবি

অস্তিত্ববাদী দীর্ঘশ্বাসের অন্তর্গত ছায়ালোক

ছবি

বুভুক্ষা শিল্পী ও একথালা ভাত

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

কয়েকটি নির্ঘণ্ট

ছবি

নূরুল হকের অপ্রকাশিত কবিতা

ছবি

বিষাদমাখা সুন্দরের ডাকহরকরা

শিশিরস্নাত পদাবলি

ছবি

শিল্পের স্বাধীনতা মানেই মানুষের স্বাধীনতা

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

বনানীর ঢালু রাস্তা বেয়ে

দিলারা হাফিজ-এর কবিতা

ছবি

বাংলা কবিতার উদ্ভাসিত স্বর

ছবি

শরীরী অশরীরী

ছবি

বিষণ্ণতার কবি আবুল হাসান

ছবি

উত্তরাধুনিক সাহিত্যের সুলুক সন্ধান

দূরের পথ বাতিঘর

কচুরিপানা

অল্প-স্বল্প : মিথ্যা-সত্য

মানুষ চাই

বাঘ

বিষাদমন্ত্রী

বুকের রেহেলে

নবান্ন

জলের নক্ষত্র

সততাও লুপ্ত হচ্ছে লুপ্তবংশে

ছবি

বিলেতে বাঙালির শিল্পসাহিত্যের প্রতিনিধি

ছবি

বিপন্ন সময়ের জীবনশিল্পী

ছবি

লাল ফুলের খোঁপা

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

জনপ্রিয় সাহিত্যের জাদুকর

ছবি

দেশ ভাগের আর্তনাদ

tab

মায়াকন্যা

নাহিদ পারভেজ

শিল্পী : সঞ্জয় দে রিপন

বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে আছি।

পুষ্পিতার বান্ধবী পারুল আসতে বলেছে। তার কী যেন একটা জরুরি কথা আছে।

আমি অবশ্য কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি। আমার মতো সাধারণ মানুষ, যার পকেটে মাত্র দুইশ’ টাকা আছে- তাকে তেমন কিছু বলে লাভ নেই।

আমার পৃথিবী বলতে গেলে এখন পুরাই গদ্যময়, রাতদিন কাটছে কেবল ক্ষুধার যন্ত্রণায়।

-পরশ ভাই আপনাকে এরকম লাগছে কেন? চুল-দাড়ি কাটেন নাই কতদিন?

-কী জন্যে ডেকেছো বলো।

-আরে বসেন, এত তাড়া কীসের।

-না মানে একটু ধানম-ি যেতে হবে। চাকরির একটা দরখাস্ত জমা দেওয়া লাগবে।

-দেখে তো মনে হচ্ছে সকালে নাশতাও করেন নাই। মুখটা একদম শুকনো লাগছে।

এই যে মামা, লুচি, ডাল, ডিম আর কিছুক্ষণ পরে এক কাপ কফি দিয়ে যাবেন। আর এখন দ্রুত এক প?্যাকেট সিগারেট দিয়ে যান।

-আরে করছো কী, আমি কিছু খাব না।

-চুপ থাকেন, আপনাকে বিল দিতে হবে না।

সব মেয়েই জন্ম থেকেই মায়া নিয়ে জন্মায়, আর তারা সবসময়ই এক ধরনের কতৃত্বপূর্ণ আচরণ পায়; যা ছেলেরা অনেক বড়ো হয়েও অর্জন করতে পারে না। তাই আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ চারপাশটা দেখতে লাগলাম।

ঢাকা শহরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখলে কেউ বলতে পারবে না, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের মৌলিক চাহিদা এখনো পূরণ হয়নি। নিয়মিত জীবনযুদ্ধ করছে সবাই।

দেখে মনে হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকায় আছি।

কী সুন্দর পরিষ্কার ক্যান্টিন। আধুনিক চেয়ার-টেবিল, বোঝাই যাচ্ছে সব বাইরে থেকে ইম্পোর্ট করা। এখানকার সব ছেলেমেয়ের বাবা কোটিপতি অথবা শিল্পপতি।

-কী ভাবছেন, আপনার চেহারা এরকম ভচকায় গেছে কেন?

আমি জানি, পারুল আমাকে পছন্দ করে। মেয়েদের মধ্যে এই একটা জিনিস খুব প্রবল। তারা জেনেবুঝেও সবসময় বান্ধবীদের প্রেমিকের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

তবে এতে আমার মতো রাস্তার ছেলের কিছু যায় আসে না।

-শোন, কাজ আছে, এখনই যেতে হবে, তোমার জরুরি কথাটা দ্রুত বলে ফেলো।

-এত তাড়া কীসের আপনার! সিভি তো যেকোনো সময় জমা দিয়ে আসতে পারবেন। আর একটা কথা ঠিক করে বলেন, পুষ্পিতার মধ্যে কী এমন দেখছেন আপনি! যেটা আমার মধ্যে নেই। একটু ভালোমতো খেয়াল করেন, ওর চেয়ে কি কম সুন্দরী আমি, হাহা...।

মজা করলাম, কিছু মনে করবেন না।

ও হ?্যাঁ, ভালো কথা... আগামীকাল পুষ্পিতার বিয়ে। সারারাত অনেক কান্নাকাটি করেছে বেচারি। তার করুণ চেহারা দেখে একদম কান্না চলে আসছে আমার। বাধ্য হয়েই তাই ডেকেছি আপনাকে।

বলেছে, আজ রাতেই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসবে সে। টাকাপয়সা নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না।

আমার কাছে বেশকিছু গচ্ছিত টাকা, আর পুষ্পিতার কাছে আপাতত যা আছে তা দিয়ে কয়েক মাস ভালোভাবেই চলতে পারবেন আপনারা।

আর এর মধ্যে আশা করছি সবকিছু একদম নরমাল হয়ে যাবে।

-কী হলো চুপ করে আছেন কেন? কী এত ভাবছেন আপনি?

-না মানে, উপরের ফ্যানের বাতাসটা কেন যেন গায়ে লাগছে না। নষ্ট নাকি?

পুরো বিল্ডিং সেন্ট্রাল এসি। আপনি খুব সম্ভবত টেনশন করছেন ভাই।

বেশি চিন্তা না করে এই খামটা ধরেন। এখানে পঞ্চাশ হাজার টাকা আছে। লোন হিসেবে দিচ্ছি। সময়মতো সুদে-আসলে ফেরত দিয়ে দিবেন কিন্তু।

আর এখন গিয়ে আজ রাতের কক্সবাজারের দুটো ট্রেনের টিকেট কিনবেন।

আমি ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় পুষ্পিতাকে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে আসবো।

ট্যাক্সি নিয়ে সেখান থেকে সোজা কাজী অফিস যাব আমরা। তারপর আপনাদের ট্রেনে উঠায় দিয়ে আসবো।

একটা সিগারেট ধরিয়ে পর পর দুটি সার্কেল শূন্যে পাঠিয়ে দিলাম।

-আশ্চর্য, গত এক বছর ধরে পুষ্পিতাকে এই জিনিসটা দেখানোর চেষ্টা করছি আমি। অথচ আজ সে যখন পাশে নেই... তখনই সফল হলাম আমি।

-পারুল, পুষ্পিতা আমার জীবনে ঠিক এই ধোঁয়ার মতো। আমি ঠিক জানি তাকে একবার ছাড়লে আর কখনো পাবো না। হয়তো আজীবনের জন্যে হারাতে হবে।

কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো, ধোঁয়া বা কুয়াশাকে ধরাছোঁয়ার চেষ্টা করাটাই হলো চরম বোকামি।

-পাগল হয়ে গেছেন, কী অবোল-তাবোল বলছেন আপনি!

-ঠিকই বলছি, টাকাগুলো রাখো। এগুলো নিতে পারবো না আমি। আর মাথা ঠা-া করে একটু ভাবো তো...!

পুষ্পিতাকে বিয়ে করলে এই মুহূর্তে তাকে কী দিতে পারবো আমি। আর রাখবো কোথায়, খাওয়াবো কী? আমার নিজেরই তো চালচুলা নেই। কতদিনে হবে সেটাও অনিশ্চিত।

পুষ্পিতার মতো মেয়েদের জন্যে সব ছেলে আজীবন লাইন ধরে থাকে। সেরকম একটা মেয়ের জীবন কি আমি জেনেবুঝে নষ্ট করতে পারি?

-কিন্তু এগুলো এখন বলছেন কেন আপনি, প্রেম করার সময় মনে ছিল না!

আর আপনাদের সুন্দর ভালোবাসাটাকে পূর্ণতা দিবেন না?

-শোন পারুল। জানি আমাকে খুব খারাপ মানুষ মনে হচ্ছে তোমার। এ জন্যে একদম আপসোস নেই।

আমার জায়গায় তুমি হলেও আজ হয়তো ঠিক একই কাজ করতে। সত্যি বলতে, চাকরির জন্যে দরখাস্ত জমা দেবার টাকা পকেটে নেই যেই ব্যক্তির, সে কী করে একটা সোনার চামচ নিয়ে জন্মানো মেয়ের জীবন নষ্ট করবে!

-একটা ছোট্ট অনুরোধ করবো, রাখবে...

-জি, বলুন-

-পুষ্পিতাকে বলবে, পরশ ভাইয়ের সাথে দেখা হয়নি, তার মোবাইলও বন্ধ। তোর দেওয়া মেসের ঠিকানায় গিয়ে শুনলাম, গতকাল রাতেই তিনি দেশের বাড়ি গিয়েছেন। তোর জন্যে ছোট্ট এই চিরকুটটা রেখে গেছেন তিনি,

পুষ্প,

কেমন আছ?

আমাদের আর কোনোদিন দেখা হবে না।

আব্বা ফোন করেছিলেন, দ্রুত বাড়ি যেতে বলেছেন। তাই যাচ্ছি।

চেয়ারম্যান চাচার কাছে দীর্ঘদিন যাবৎ আব্বার বেশকিছু জমি বন্ধক আছে। সেই টাকার জন্যে বার বার চাপ দিচ্ছেন তিনি। আসলে আমাকে পড়াতে গিয়ে জীবনের সবকিছু বাজি ধরেছিলেন। বিনিময়ে এ পর্যন্ত কিছুই দিতে পারিনি। ভবিষ্যতে পারবো এটাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

তাই সেই ঋণ শোধ করতে নিজেকে বিক্রি করতে হচ্ছে আমাকে।

চেয়ারম্যান চাচার একমাত্র মেয়ে তনুর সাথে বিয়ে ঠিক করেছেন। এই পরিস্থিতিতে আব্বাকে ফিরিয়ে দেবার ক্ষমতা নেই আমার।

তুমি জানো, তাদের খুশির জন্যে আমি সবকিছু করতে পারি।

আমাকে কোনোদিন ক্ষমা করো না তুমি।

মনে রেখো, পৃথিবীতে পরশ নামে একজন খারাপ মানুষ আছে, যে তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। কিন্তু কী করবো, ভালোবাসা দিয়ে তো আর পেট ভরে না।

তোমার সাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলো সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি তাই।

বিদায়!

আর তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি, খুব সুন্দর ফুটফুটে চাঁদের আলোর মতো একটা মেয়ে হবে তোমার। যার আমি একটা নাম রেখেছি, স্পর্শী।

ভালো থেকো।

ইতি

পরশ- যে তোমার কোনোদিন কেউ ছিল না!

পারুলের দিকে না তাকিয়েই বের হয়ে এলাম আমি।

চিঠি পড়া শেষে, তার দৃষ্টি এখন আমার দিকে, খুব সম্ভবত সে কাঁদছে..

সূর্যটা আজ খাড়াভাবে মাথার উপর উঠেছে। যেই উত্তাপে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি। আমার চোখের ভেতর বোধ হয় কিছু একটা পড়েছে। অনবরত অশ্রু ঝরছে...

আজকে কান্নার দিন। আগামীকাল থেকে হবে নতুন সূর্যোদয়...

back to top