শিরোনামহীন
নাসির আহমেদ
ভেঙে পড়ে সম্পর্কের সাঁকো একদিন
গভীর গোপন সেই সম্পর্ক নিবিড়!
ছিল না ভাঙার কথা, তবু তা বিলীন!
বিশ্বাসের শেষ চিহ্নটুকু যেন নদী, ভিন্ন দুই তীর।
তোমাকে দেখতে দিয়েছি হৃদয়-
নিংড়ানো কিছু কথা
তারুণ্যে তুমি, তাই অভিমত কাম্য।
সন্দেহে তুমি নষ্ট করলে প্রিয় কবিতার
শিল্প-সুষমা সাম্য!
আমি যে তাকাবো তোমার দিকেই
কী করে এমন ভাবলে!
ক্ষণিকের এই রূপসুধা বৃথা,
নদী কি দেখার সময় কবির থাকে
সুধার সাগরে নামলে?
বাতাস বহন করে ফুলের সৌরভ
এমনকি পচা-গলা ঘ্রাণও
বাতাসকে ভালো-মন্দ দায় দেয়া ঠিক নয়,
বাতাস না হলে বাঁচে কখনো কি প্রাণও!
৫ ডিসেম্বর কবি নাসির আহমেদের জন্মদিন। শুভেচ্ছা
অদৃশ্য কাছে দৃশ্যত একা
রোকেয়া ইসলাম
তুমি বলেছিলে-
প্রেম মানে সহজ কিছু,
এক কাপ কাপচিনো কফি,
দু’জনের চোখে নীরবতা,
এক ছাতার নিচে বৃষ্টির গন্ধ।
ফুরফুরে হাওয়ায় ভেসে বুঝেছি,
প্রেম এক হিমালয়, রোদ মেঘের খেলা
আড়াল আর প্রকাশ্যের লীলা
তোমার অনুপস্থিতি জানায় প্রতিরাতে
তুমিহীন দুঃসহ দীর্ঘ যাপন
নির্ঘুম রাতের শেষ প্রান্তে
স্বপ্নে তুমি এসে
আমার সমস্ত নিষেধের দেয়াল ভেঙে দাও।
ভালোবাসা মানে হার না মানা
অন্তহীন স্বপ্ন সরণি গড়া
একটি অসম্ভবের দিকে হাঁটা।
তুমি আছো, কিন্তু অধরা
আমিও আছি, কিন্তু ফিরি না।
এই দূরত্বটাই হয়তো
আমাদের একান্ত সংলাপ-
দৃশ্যত একা থাকা।
তবুও অপেক্ষা...
প্রেম অপেক্ষার অভিযাত্রী
অদৃশ্য তুমি আছো অন্তরে বাহিরে...
বন-পাহাড়ের গান
মতিন রায়হান
বেড়াতে যাবার কথা, যাবো; পাহাড়ে ও বনে...
হৃদয়ে হৃদয় ঘষে জ্বালাবো আগুন প্রেমে! সকল
অশুচি ধুয়ে নেবো ঝরনার জলে; সতেজ সবুজে
চোখ রেখে ওড়াবো প্রেমের পতাকা! জানো তো,
মনে মনে বিশ্ব জয় করে যারা ঘরে ফেরে, তারা
ডুমুরের ফুলে খুঁজে পায় উপাদেয় মধু! আমিও কি
যোগ দেবো সেই দলে? না। আমাকে কারা তবে
নিয়ে যাবে হেমন্তের বনে? মনের শুশ্রƒষা পেতে
আমিও দিগন্ত ছোঁবো, পাহাড়ে দাঁড়িয়ে ছোঁবো
আকাশের নীল। কখনো উড়ন্ত মেঘ যদি ছুঁয়ে যায়
বনের কুসুম, তুমি তার ঘ্রাণ পাবে! জলে ভেজা
রোদ্দুরে যদি-বা হেসে ওঠে আকাশের ঠোঁট, তুমিও
মিলাও তাতে তোমার অধর আর কোমল চিবুক!
শব্দে ছন্দে অনুপ্রাসে গমকে গমকে খোঁজো
প্রকৃতিকে; শান্তি পাবে, স্বস্তিও; উতলা এই মনে!
বেড়াতে যাবার কথা, যাবো; পাহাড়ে ও বনে...
হেমন্তি কাঁচা রোদ
রাহমান ওয়াহিদ
শুকনো পাতার ডানায় ঝরে পড়া ঝুমকো বকুল
আর নিঝুম দুপুরের মৌন অবসাদ গিলে খায়
হেমন্তি কাঁচা রোদ। এমত ধূসর জলছবি পেরিয়ে
এ ঘর থেকে ও ঘরে যেতে চাই, যাবো একটুখানি।
শুনেছি হাজারটা ঘর নাকি উঠেছে ঘরের ভেতর;
ভাতগন্ধ বিকেল সে ঘরে জ্বালাবে আজ নবান্ন ময়ূখ।
যাবো আমি একটুখানি শিশিরের নৈঃশব্দ্য ছুঁয়ে
ও’পাড়ার আলপথ ধরে পৌঁছুবো কিষাণির স্বপ্নচোখে।
কোথা পথ? অজ¯্র শব্দ বুনিতেছে মাঠে ধুলোট পাঠ
যেতে হবে অন্য কোথাও ছেড়েছুড়ে প্রাচীন মলাট
যদিও কার্তিকের পথের আদলে বিনিদ্র শুয়ে আছে
গন্তব্যহীন, নির্লিপ্ত মেঘল নদী সবিস্ময়!
ভারসাম্য
অলীক বিহঙ্গ
তুমি দেখো রঙ
আমি দেখি হৃদয়
তোমার হিসাব লাভ ক্ষতি
আমার প্রেম, প্রণয়
তোমার ওপরে আমার শ্রেষ্ঠত্ব নাই
আমার ওপরে নাই তোমারও
সৃষ্টিতে বড় হলেও সাধ্য কি ওড়ারও
মানুষ হলেও কি আর ডুবে থাকা যায়
জলজের বাস জলের নিচেই মানায়
চাঁদকে পায় রাত যেমন
সূর্য আলোকে, নয় কি
ভারসাম্য আছে বৈষম্যহীন ধরায়
ভাবতে হবে বৈকি!!!
স্তব্ধ প্রতিবিম্ব
মিলু শামস
শান বাঁধানো ঘাটের
লালচে পৈঠার মতো
জীবনের ধাপ পেরোতে পেরোতে
ক্রমশ নিঃসঙ্গ হবে তুমি
অজ¯্র জ্যোৎস্না রাত জ্বলজ্বলে চাঁদোয়া হবে
মাথার ওপর
পানসি নায়ের বহর জীবনের ছন্দ তুলে
বয়ে যাবে নব বরবধূ নিয়ে
কলার খোলে মানতের ধান
কিংবা শাপলার মালা, ছাপা শাড়ি পরা
গৃহস্থবধূর ঘড়া নিয়ে ফিরে যাওয়া
দেখতে দেখতে
কখন যে নেমে যাবে তুমি
জলের একেবারে কিনারে
আর দেখবে-
শরীর থেকে পোশাক খোলার মতো
খসে পড়ছে একেকটা সম্পর্ক জীবনের,
শেষ অন্তর্বাসটি খসে পড়ার আগে
চমকে উঠবে- একি, এটাও!
প্রিয়তম যে হাতে রেখেছিলে হাত একদা
মমতা ও নির্ভরতায়
আমৃত্যু ধরে থাকবে বলে
খসে যাচ্ছে তাও...
তখন জলে দেখবে
একা এবং একমাত্র প্রতিবিম্ব নিজের
সম্পর্কের মালাগুলো
খড়কুটো হয়ে কবেই মিলিয়ে গিয়েছে বাতাসে।
চেতনা
শারমিন সুলতানা রীনা
তন্দ্রাচ্ছন্ন পড়ে থাকি এক কোণে
নিস্তব্ধ গভীরতায় ঝাঁকে ঝাঁকে
স্বপ্ন এসে তাড়িত করে
প্রতিশ্রুতির মুগ্ধতায় চোখে বুনে দেয়
সবুজ ফসলের সম্ভার
কোনো একদিন
আশ্বাসের বিভোরতায় স্বযতেœ
তুলে নিয়ে যায় হৃৎপি-
অসমাপ্ত গল্পের ফাঁদে
শতশত কাকের করুণ আর্তনাদ
বেজে ওঠে নিউরনে
অনুভূতির মর্মরতা থেমে গিয়ে
মৃত মাছের মতো নিষ্প্রভ
জীবনের পা-ুলিপি...
এনার্কি
রনক জামান
ঘরে যে ফিরব-
নামে না কোথাও
এমন সন্ধ্যা।
নামে ঝরা পাতা
ঋতুর বিরাগে
লাগে না মন্দ।
এ কেমন পাপ-
মানব-বহরে
মরণশিথিল,
প্রকৃতি-লগ্ন
লাগে খটোমটো-
আত্ম-আলাপ:
মাছ ভাজে মা ও
এইদিকে টিভি
দেখতেছে আর
পড়ছে পেপার-
আত্ম-বিলাপ-
বয়সে যে ছোট
এ কেমন বাপ?
আমার মৃত্যুর পর
এহসানুল ইয়াসিন
ভুলে যাবে, যাও
তবে এতটা সহজ নয়।
আমাকে মনে রাখবে পৃথিবী
ভোরের কুয়াশা অথবা
বৃষ্টির ফোঁটায় জেগে ওঠা প্রতিটি প্রাণ।
আমি কারও প্রেমিক হয়ে বেঁচে থাকব
কারও পিতা
কারও ভাই।
এমনকী অচেনা মানুষের আপনজন।
আমার কবিতার মতোই বারবার উচ্চারিত হবো
গণমানুষের ভিড়েহতাশায় নুয়ে পড়া
বৃদ্ধের হাতের লাঠি হয়ে।
আমাকে মনে রাখবে
নরম কাঁদা মাটি জল
মানুষের দীর্ঘশ্বাস
অপেক্ষমান যুগলের প্রতিটি মুহূর্ত।
আমাকে মনে রাখবে এইপথ
বহমান নদী, ঘূর্ণায়মান দিনরাত
অনন্তের পথে হেঁটে যাওয়া
শিশুর নিষ্পাপ হাসি কিংবা
হঠাৎ দেখা আগন্তক।
আমার মৃত্যু জীবনের মতোই দীপ্তমান
আমাকে মনে পড়বে ফুলের পরাগায়নে
নতুন জীবনের উৎসে-সূর্যোদয়-অস্তে।
সর্বস্ব
আসমা চৌধুরী
পাখির পায়ের মতো গুটিয়ে উড়ালের সংসার
বাজার এক কানা রাজত্ব, ওঠা নামার তেলবাঁশ
এসবের ভেতরে থেকো না, তুমি বরং আঁকো
কেমন করে একটা নদী নৌকাকে বলে, আয়
পাল উড়িয়ে বগুদূর যাই যেখানে মেঘ নামে
রোদ হাসতে হাসতে সিকি হয়, চোখ মিষ্টি হাসে
সর্বস্ব হারানোর ভয় থেকে আয় বেরিয়ে পড়ি...
যদি দেখা হয় বহুদিন পরে
শাহাদত হোসেন সুজন
হালকা কুয়াশা জড়ানো সকালে খড়ভর্তি নৌকায়
চলো উঠে পড়ি- হেমন্তের নবান্ন উৎসবে
পাশ দিয়ে কেটে যাবে বাঁশভর্তি নাও
আমাদের আগমনে জেগে যাবে পুরো গাঁও...
চলতে চলতে দুজন পৌঁছে যাবো সরিষা ক্ষেতে
হারাবে সে ফুলে কানের যুগল দুল যেতে যেতে
কাকতাড়–য়া বলবে ডেকে কানে কানে-
চলো মেতে উঠি, খেজুরের রস পিঠা পুলি গানে...
যদি দেখা হয় তোমার আমার বহুদিন পরে
হেমন্তের কোনো এক কাক ডাকা ভোরে-
শুকিয়ে যাবে যমুনার জল হাঁটবো তারি বুকে
নরম পলিমাটি লাগবে নরম পায়ে পরম সুখে...
যদি দেখা হয় তোমার আমার বহুদিন পরে
বাবলা পাতার ফাঁকে উঠবে শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ
শাদা বকের পাখায় জেগে রবে নক্ষত্রের রাত
পথভোলা পাখিরা ফিরবে নীড়ে বহুদিন পরে...
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
শিরোনামহীন
নাসির আহমেদ
ভেঙে পড়ে সম্পর্কের সাঁকো একদিন
গভীর গোপন সেই সম্পর্ক নিবিড়!
ছিল না ভাঙার কথা, তবু তা বিলীন!
বিশ্বাসের শেষ চিহ্নটুকু যেন নদী, ভিন্ন দুই তীর।
তোমাকে দেখতে দিয়েছি হৃদয়-
নিংড়ানো কিছু কথা
তারুণ্যে তুমি, তাই অভিমত কাম্য।
সন্দেহে তুমি নষ্ট করলে প্রিয় কবিতার
শিল্প-সুষমা সাম্য!
আমি যে তাকাবো তোমার দিকেই
কী করে এমন ভাবলে!
ক্ষণিকের এই রূপসুধা বৃথা,
নদী কি দেখার সময় কবির থাকে
সুধার সাগরে নামলে?
বাতাস বহন করে ফুলের সৌরভ
এমনকি পচা-গলা ঘ্রাণও
বাতাসকে ভালো-মন্দ দায় দেয়া ঠিক নয়,
বাতাস না হলে বাঁচে কখনো কি প্রাণও!
৫ ডিসেম্বর কবি নাসির আহমেদের জন্মদিন। শুভেচ্ছা
অদৃশ্য কাছে দৃশ্যত একা
রোকেয়া ইসলাম
তুমি বলেছিলে-
প্রেম মানে সহজ কিছু,
এক কাপ কাপচিনো কফি,
দু’জনের চোখে নীরবতা,
এক ছাতার নিচে বৃষ্টির গন্ধ।
ফুরফুরে হাওয়ায় ভেসে বুঝেছি,
প্রেম এক হিমালয়, রোদ মেঘের খেলা
আড়াল আর প্রকাশ্যের লীলা
তোমার অনুপস্থিতি জানায় প্রতিরাতে
তুমিহীন দুঃসহ দীর্ঘ যাপন
নির্ঘুম রাতের শেষ প্রান্তে
স্বপ্নে তুমি এসে
আমার সমস্ত নিষেধের দেয়াল ভেঙে দাও।
ভালোবাসা মানে হার না মানা
অন্তহীন স্বপ্ন সরণি গড়া
একটি অসম্ভবের দিকে হাঁটা।
তুমি আছো, কিন্তু অধরা
আমিও আছি, কিন্তু ফিরি না।
এই দূরত্বটাই হয়তো
আমাদের একান্ত সংলাপ-
দৃশ্যত একা থাকা।
তবুও অপেক্ষা...
প্রেম অপেক্ষার অভিযাত্রী
অদৃশ্য তুমি আছো অন্তরে বাহিরে...
বন-পাহাড়ের গান
মতিন রায়হান
বেড়াতে যাবার কথা, যাবো; পাহাড়ে ও বনে...
হৃদয়ে হৃদয় ঘষে জ্বালাবো আগুন প্রেমে! সকল
অশুচি ধুয়ে নেবো ঝরনার জলে; সতেজ সবুজে
চোখ রেখে ওড়াবো প্রেমের পতাকা! জানো তো,
মনে মনে বিশ্ব জয় করে যারা ঘরে ফেরে, তারা
ডুমুরের ফুলে খুঁজে পায় উপাদেয় মধু! আমিও কি
যোগ দেবো সেই দলে? না। আমাকে কারা তবে
নিয়ে যাবে হেমন্তের বনে? মনের শুশ্রƒষা পেতে
আমিও দিগন্ত ছোঁবো, পাহাড়ে দাঁড়িয়ে ছোঁবো
আকাশের নীল। কখনো উড়ন্ত মেঘ যদি ছুঁয়ে যায়
বনের কুসুম, তুমি তার ঘ্রাণ পাবে! জলে ভেজা
রোদ্দুরে যদি-বা হেসে ওঠে আকাশের ঠোঁট, তুমিও
মিলাও তাতে তোমার অধর আর কোমল চিবুক!
শব্দে ছন্দে অনুপ্রাসে গমকে গমকে খোঁজো
প্রকৃতিকে; শান্তি পাবে, স্বস্তিও; উতলা এই মনে!
বেড়াতে যাবার কথা, যাবো; পাহাড়ে ও বনে...
হেমন্তি কাঁচা রোদ
রাহমান ওয়াহিদ
শুকনো পাতার ডানায় ঝরে পড়া ঝুমকো বকুল
আর নিঝুম দুপুরের মৌন অবসাদ গিলে খায়
হেমন্তি কাঁচা রোদ। এমত ধূসর জলছবি পেরিয়ে
এ ঘর থেকে ও ঘরে যেতে চাই, যাবো একটুখানি।
শুনেছি হাজারটা ঘর নাকি উঠেছে ঘরের ভেতর;
ভাতগন্ধ বিকেল সে ঘরে জ্বালাবে আজ নবান্ন ময়ূখ।
যাবো আমি একটুখানি শিশিরের নৈঃশব্দ্য ছুঁয়ে
ও’পাড়ার আলপথ ধরে পৌঁছুবো কিষাণির স্বপ্নচোখে।
কোথা পথ? অজ¯্র শব্দ বুনিতেছে মাঠে ধুলোট পাঠ
যেতে হবে অন্য কোথাও ছেড়েছুড়ে প্রাচীন মলাট
যদিও কার্তিকের পথের আদলে বিনিদ্র শুয়ে আছে
গন্তব্যহীন, নির্লিপ্ত মেঘল নদী সবিস্ময়!
ভারসাম্য
অলীক বিহঙ্গ
তুমি দেখো রঙ
আমি দেখি হৃদয়
তোমার হিসাব লাভ ক্ষতি
আমার প্রেম, প্রণয়
তোমার ওপরে আমার শ্রেষ্ঠত্ব নাই
আমার ওপরে নাই তোমারও
সৃষ্টিতে বড় হলেও সাধ্য কি ওড়ারও
মানুষ হলেও কি আর ডুবে থাকা যায়
জলজের বাস জলের নিচেই মানায়
চাঁদকে পায় রাত যেমন
সূর্য আলোকে, নয় কি
ভারসাম্য আছে বৈষম্যহীন ধরায়
ভাবতে হবে বৈকি!!!
স্তব্ধ প্রতিবিম্ব
মিলু শামস
শান বাঁধানো ঘাটের
লালচে পৈঠার মতো
জীবনের ধাপ পেরোতে পেরোতে
ক্রমশ নিঃসঙ্গ হবে তুমি
অজ¯্র জ্যোৎস্না রাত জ্বলজ্বলে চাঁদোয়া হবে
মাথার ওপর
পানসি নায়ের বহর জীবনের ছন্দ তুলে
বয়ে যাবে নব বরবধূ নিয়ে
কলার খোলে মানতের ধান
কিংবা শাপলার মালা, ছাপা শাড়ি পরা
গৃহস্থবধূর ঘড়া নিয়ে ফিরে যাওয়া
দেখতে দেখতে
কখন যে নেমে যাবে তুমি
জলের একেবারে কিনারে
আর দেখবে-
শরীর থেকে পোশাক খোলার মতো
খসে পড়ছে একেকটা সম্পর্ক জীবনের,
শেষ অন্তর্বাসটি খসে পড়ার আগে
চমকে উঠবে- একি, এটাও!
প্রিয়তম যে হাতে রেখেছিলে হাত একদা
মমতা ও নির্ভরতায়
আমৃত্যু ধরে থাকবে বলে
খসে যাচ্ছে তাও...
তখন জলে দেখবে
একা এবং একমাত্র প্রতিবিম্ব নিজের
সম্পর্কের মালাগুলো
খড়কুটো হয়ে কবেই মিলিয়ে গিয়েছে বাতাসে।
চেতনা
শারমিন সুলতানা রীনা
তন্দ্রাচ্ছন্ন পড়ে থাকি এক কোণে
নিস্তব্ধ গভীরতায় ঝাঁকে ঝাঁকে
স্বপ্ন এসে তাড়িত করে
প্রতিশ্রুতির মুগ্ধতায় চোখে বুনে দেয়
সবুজ ফসলের সম্ভার
কোনো একদিন
আশ্বাসের বিভোরতায় স্বযতেœ
তুলে নিয়ে যায় হৃৎপি-
অসমাপ্ত গল্পের ফাঁদে
শতশত কাকের করুণ আর্তনাদ
বেজে ওঠে নিউরনে
অনুভূতির মর্মরতা থেমে গিয়ে
মৃত মাছের মতো নিষ্প্রভ
জীবনের পা-ুলিপি...
এনার্কি
রনক জামান
ঘরে যে ফিরব-
নামে না কোথাও
এমন সন্ধ্যা।
নামে ঝরা পাতা
ঋতুর বিরাগে
লাগে না মন্দ।
এ কেমন পাপ-
মানব-বহরে
মরণশিথিল,
প্রকৃতি-লগ্ন
লাগে খটোমটো-
আত্ম-আলাপ:
মাছ ভাজে মা ও
এইদিকে টিভি
দেখতেছে আর
পড়ছে পেপার-
আত্ম-বিলাপ-
বয়সে যে ছোট
এ কেমন বাপ?
আমার মৃত্যুর পর
এহসানুল ইয়াসিন
ভুলে যাবে, যাও
তবে এতটা সহজ নয়।
আমাকে মনে রাখবে পৃথিবী
ভোরের কুয়াশা অথবা
বৃষ্টির ফোঁটায় জেগে ওঠা প্রতিটি প্রাণ।
আমি কারও প্রেমিক হয়ে বেঁচে থাকব
কারও পিতা
কারও ভাই।
এমনকী অচেনা মানুষের আপনজন।
আমার কবিতার মতোই বারবার উচ্চারিত হবো
গণমানুষের ভিড়েহতাশায় নুয়ে পড়া
বৃদ্ধের হাতের লাঠি হয়ে।
আমাকে মনে রাখবে
নরম কাঁদা মাটি জল
মানুষের দীর্ঘশ্বাস
অপেক্ষমান যুগলের প্রতিটি মুহূর্ত।
আমাকে মনে রাখবে এইপথ
বহমান নদী, ঘূর্ণায়মান দিনরাত
অনন্তের পথে হেঁটে যাওয়া
শিশুর নিষ্পাপ হাসি কিংবা
হঠাৎ দেখা আগন্তক।
আমার মৃত্যু জীবনের মতোই দীপ্তমান
আমাকে মনে পড়বে ফুলের পরাগায়নে
নতুন জীবনের উৎসে-সূর্যোদয়-অস্তে।
সর্বস্ব
আসমা চৌধুরী
পাখির পায়ের মতো গুটিয়ে উড়ালের সংসার
বাজার এক কানা রাজত্ব, ওঠা নামার তেলবাঁশ
এসবের ভেতরে থেকো না, তুমি বরং আঁকো
কেমন করে একটা নদী নৌকাকে বলে, আয়
পাল উড়িয়ে বগুদূর যাই যেখানে মেঘ নামে
রোদ হাসতে হাসতে সিকি হয়, চোখ মিষ্টি হাসে
সর্বস্ব হারানোর ভয় থেকে আয় বেরিয়ে পড়ি...
যদি দেখা হয় বহুদিন পরে
শাহাদত হোসেন সুজন
হালকা কুয়াশা জড়ানো সকালে খড়ভর্তি নৌকায়
চলো উঠে পড়ি- হেমন্তের নবান্ন উৎসবে
পাশ দিয়ে কেটে যাবে বাঁশভর্তি নাও
আমাদের আগমনে জেগে যাবে পুরো গাঁও...
চলতে চলতে দুজন পৌঁছে যাবো সরিষা ক্ষেতে
হারাবে সে ফুলে কানের যুগল দুল যেতে যেতে
কাকতাড়–য়া বলবে ডেকে কানে কানে-
চলো মেতে উঠি, খেজুরের রস পিঠা পুলি গানে...
যদি দেখা হয় তোমার আমার বহুদিন পরে
হেমন্তের কোনো এক কাক ডাকা ভোরে-
শুকিয়ে যাবে যমুনার জল হাঁটবো তারি বুকে
নরম পলিমাটি লাগবে নরম পায়ে পরম সুখে...
যদি দেখা হয় তোমার আমার বহুদিন পরে
বাবলা পাতার ফাঁকে উঠবে শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ
শাদা বকের পাখায় জেগে রবে নক্ষত্রের রাত
পথভোলা পাখিরা ফিরবে নীড়ে বহুদিন পরে...