সাহিত্য প্রতিনিয়ত বদলায়। আবার অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় সময় প্রবহমান হলেও সাহিত্য হয়ে পড়ে স্থবির। আবার কখনো কখনো সাহিত্য সময়কে অতিক্রম করে অগ্রসর হয়। তবে সব সময়েই সাহিত্যাঙ্গনে বিচরণ করেন অসংখ্য কবি-লেখক। তাদের হাতেই সাহিত্যের নিয়তি। সাম্প্রতিক সময়ে অসংখ্য তরুণ তরুণী কবিতা লিখছেন। বাংলা কবিতার ধারাবাহিকতায় তাদের অবস্থান ঠিক কোথায়, আজকের মুদ্রিত কবিতাগুলো পাঠ করলে পাঠক পেয়ে যাবেন তাদের যথার্থ উত্তর। এর বাইরেও এসময়ে লিখছেন আরও অনেকে। কিন্তু তাদের সবাইকে স্থান দেয়া সম্ভব হলো না। -বি. স.
উদীর্ণ স্মারক
আমেনা তাওসিরাত
ডিসেম্বর, তাই আজ শুধু উদয়নই দেখি।
‘কি চাহ শঙ্খচিল’ বলে পরিহাস করি। ‘নিষিদ্ধ লোবান’-এর মতো ধাঁ করে জ্বলি।
ঋণগ্রস্ত মনে হয় না আর, আমার রাষ্ট্রীয় ট্রেজারি।
‘মাইনর’, ‘এথনিক’- বলা বিশেষণ, বিভাজন, ভস্মিত হোক আজই। মুক্তিযোদ্ধা আর তাঁদের অদিতিসম মায়েদের কোনো জাত ছিল কি?
না ডিঙিয়ে ভিটেবাড়ি, মৃত দাদাঠাকুর; চকিতে ভেঙে যাওয়া শাঁখা, সাধের সিঁদুর- এই দেশ আসেনি।
শব্দরা ভিজে আসে কেন? ভালো থাকা তিথি, চলো তবে নতুন গল্প শুনি...।
বালিয়াড়ি
শাখাওয়াত তানভীর
হৃদয়টা-
তোমার কাছে রেখে গিয়েছিলাম,
এসে দেখি- নদী ভুলে তুমি সমুদ্র দিচ্ছো পাড়ি;
ওদিকে-
লুট হয়ে গেছে ভালোবাসার নুড়ি-পাথর
নদী তীরে পড়ে আছে- দুঃখের বালিয়াড়ি!
সাবরাং
মুশাররাত
আমরা কি একটু দেখবো না
কুমারিকার বয়ে চলা
সূর্যাস্তের রক্তরাগ ক্যানভাসে
আমরা পবিত্র ভোরের বাতাসেও
মাখামাখি হয়ে আলিঙ্গন করব
জীবনানন্দে বিহ্বল প্রতিটি দিনকে
আমরা কি ফিরে যাবোনা একটি ঘরে
এক সাথে চার হাতে দরজা সরিয়ে
আমরা কি বসব না সাবরাংয়ের রহস্যালোকিত
সেই অবারিত ব্যালকনিতে
নাতি দূর মথেকে বঙ্গোপসাগরের বজ্রকণ্ঠ
আমাদের স্বপ্নকে আরও মজবুত করবে
তুমি কোমল হাতে লাভ লক সরিয়ে দিবে
এক প্রান্তে ভাবালু দৃষ্টিতে
আমরা ভালোবাসার কাছে দায়বদ্ধ
থেকে জীবনকে ফিরিয়ে দিতে চাই
অনাগত সুখের সঞ্জীবনী শত শতবার
বারবার আমরাই ফিরে আসবো
রমনা পার্কের বকুলতলায় আকণ্ঠ
সুগন্ধ শিকারী প্রেমিক-প্রেমিকা হয়ে।
স্লিপিং পিলের কার্যকারিতা
অপার অরণ্য
আত্মহত্যা ভুলে যাই, বাঁচি।
মগজে বিতৃষ্ণার মগ্নতা, নগ্নতা...
বাথরুমে জল ঢালতে ঢালতে দুটো লাইন
কবিতার মতো মনে আসে- বেরিয়ে নোট করবো।
এ মাসে অনেক অ্যাবসেন্ট। আর ক’টাকা পাবো?
সংসারটা বাবার পকেটে প্যাঁচানো পৃথিবীর ম্যাপ
আম্মার বোবা চোখে পৃথুলার অন্ধ ঠোঁট
বৈরাগ্য হতো যদি মুক্তির লাবণ্য লতা?
বাথরুম থেকে বেরিয়ে স্লিপিং পিল গিলে খায় কবিতার খাতা
চতুর্দিকে নিস্তেজ ও নীরদ আবহাওয়া দপ্তর
প্রসিদ্ধ কোম্পানি, নির্ভেজাল ঘুমের নিশ্চয়তা
তাহলে উপভোগ করুন, স্লিপিং পিলের কার্যকারিতা...
মোহের ঘুড়ি
সঞ্জয় দেওয়ান
চৈতী বিকাল ডুবে সুরের মূর্ছনায়
সুরের ধূ¤্রজালে বন্দি বাওড় মন।
গৃহী চাঁদ উঁকি দেয় সাঁজবেলায়
কান পাতে নদীখাতে
শুনে ঘামজলের গান।
সুরের আগুনে পুড়ি দিনরাত
হাতে রাখি হাত
কপোলে কপোল।
মুগ্ধতার ছদ্মবেশে বাসনার ঘুড়ি
এলোমেলো উড়ে মরুপথে
চোরা ¯্রােতে ভেসে যাই
মোহের আঙটা ঝুলে থাকে রুহে।
মনুষ্যত্ব
আবির হাসান
বাহিরে তুমুল আর্তনাদ, কে শব্দ করছে-
মানুষ নাকি কাক? ভীষণ সংশয়
অতঃপর দৃশ্যের কাছে যাই
দেখি কয়েকজন মানুষ বিলবোর্ডের মতো
দাঁড়িয়ে আছি স্থির
মুখগুলো কাকের মতো
স্বরগুলো কাকের মতো
তবুও মানুষ মানুষ লাগে সবকিছু!
মানুষ ভেবেই কাছে যাই
আচানক তারা কাক হয়ে আমার
সমস্ত শব্দকে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে
পর সমাচার এই যে
তরুন ইউসুফ
আমরা আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছি
আমাদের মন ও মগজ, শিরা উপশিরা
আমাদের নিউরনে নিউরন, রক্তে
আমরা আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছি,
আমাদের স্পর্শের বিমুখতা চুমুর বিমুখতা
আমাদের হাত ধরার বিমুখতা
আমাদের কলবের কলিং বেল
কবে থেকে নষ্ট খোঁজ নেই-
রোজ নেই সমাচার তোমার আমার
খোঁজ নেই আত্মার অসুখের ডাক্তার।
আমরা বেঁচে নেই মরে গেছে আত্মা
এখন তুমি আমি আমরা প্রেতাত্মা
আমাদের খোঁজ নেই খোঁজ নেই ফেরারি
চারিদিকে নিখোঁজের সমন জারি,
আমরা খুঁজে ফিরি আমাদের মিছামিছি
আমরা আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছি!
কে তুমি অবাধ্য ছেলে?
অলভী সরকার
আমি কি তোমাকে বাসি ভালো?
তুমি কি আমাকে দাও তাড়া?
বলো তো সবুজ প্রিয় পাখি,
কে দিলো এমন আস্কারা?
কে ভেঙেছে সীমানা প্রাচীর?
জেগেছে প্রাচীন ভলকানো;
বলো তো হে অবাধ্য ছেলে,
আদৌ সীমানা ছিল কোনো?
মেঘেরা পাহাড় কেটে কেটে
পুরনো ঘরেই ফিরে যাবে;
ব্যর্থ, ব্যর্থ হলো সব-
নিদারুণ তোমার অভাবে!
একাকীত্ব
মোর্শেদা মৌ
মাটির গহ্বরও আজ অসহায়
আমার একাকীত্বের কাছে,
প্রতিটি নিঃশ্বাস ধারালো ছুরির মতন
সঙ্গী বলতে অভিশপ্ত স্মৃতিগুলো
আর তীক্ষè কাঁটার সাথে রোমন্থন,
চোখে অশ্রু নয়, শুধু দুঃসহ হোমানল
যা নিমিষেই ঝলসে দেয় অন্তঃস্থল।
প্রতিমুহূর্তের নীরবতা মৃত্যুর প্রহরে
জমাটবদ্ধ কালো রক্ত শিরা-উপশিরায়,
নিভৃত বনের কোমল সবুজ বনানীরা;
যেন ফিসফিস করে বলে-
তোমার ব্যথায় পুড়ছি আমি
দেখো এই বুকটা চিরে
কেন বোঝ না যন্ত্রণার মাঝেও
জীবন পথের নীড়ে।
সন্ধ্যার আগেই
মুজাহীদুল ইসলাম নাজিম
রোদ ঘুমিয়ে যাওয়ার পর
তীব্র আচ্ছন্নতায় গন্ধরাজের জীবন লিখছিলে হয়তো
হঠাৎ কী এমন ঘটেছিলো তোমার!
সেদিনের হেমন্ত বিকেল আজকের মহাকাব্য
সেই থেকে আমার গন্ধরাজের পাঠ কেবল তোমাতেই
হিম হাওয়ার জীবনী লিখতে লেখা হয় তোমার চুল
আমি নবান্ন লিখতে গেলে লিখে ফেলি কেবল
তোমার হাতের যৌগিক রঙের কোলাজ
কী যেনো কী ভেবে অমলিন দাঁতের বর্ণনায়
লিখি কার্তিক অগ্রহায়ণের প্রসন্ন বুক
এ জীবন এক জটিল অংক যেনো
আমি শিউলি কামিনী ছাতিম বকুলের গল্প লিখতে যাই
কেবল হয়ে যায় হেমন্ত, কেবল তুমি,
সন্ধ্যের আগেই ফিরে এসো...।
জোছনা বৃষ্টি
মামুন অপু
এক জোছনাময় বৃষ্টি-সন্ধ্যায়
ঘন মেঘের মত নেমে আসে কদম ফুলের স্নিগ্ধ নিম্ফ
তখন বুকের ভেতর আত্মার কোলাহলে-
জেগে ওঠে নির্বাক কথাগুলো
যে কথাগুলো খরতাপে শুকিয়ে ঠোঁটের
মতো রক্তাক্ত-জ্বলজ্বল করছিলো।
নির্জন বাতাসে নিবিড় অরণ্যের কাঁচা পাতার আর্তনাদে
জমে ক্ষীর চাঁদের শুভ্র লাবণ্য
তখন জোছনা হয়ে ওঠে রক্তাক্ত ডাইনোসর
হাতড়ে হাতড়ে চশমাটা চোখে পরে দেখি
আমার মস্তিষ্ক উড়ছে মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে; মেঘ হয়ে-
আর আত্মা হাসতে হাসতে অথবা কাঁদতে কাঁদতে
চলে যাচ্ছে বৃষ্টি ফোঁটার হাত ধরে
যেন মায়ের হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে সুবোধ বালক
আর পা দুটো বরফকলে ঢুকে গিয়েছিলো তা¤্রযুগে।
অসার দেহে তাকালাম খোলা বারান্দায়
দেখি আমার ছেলেবেলা কাটছে তোমার সাথে
জামাই-বৌ... জামাই-বৌ... খেলতে... খেলতে...
কী অদ্ভুত অথচ খুব স্বাভাবিকভাবেই
সায়হ্নের চেরাগ নিভে গেলো; চেয়ে আছি নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে...
উত্তমাশা
নিজাম বিশ্বাস
ম্যান্ডেলার হাসির মতন রোদ নেমে আসে
হিম সকালের ঘাসে, চিমনির ধোঁয়া উড়ে,
ইট ভাঁটা- পৃথিবীর চিতায় পুড়ছে জ্যান্ত মাটি-
চিৎকার আসে কানে, এ আর্তনাদের ভাষা
কান্না ধ্বনি, অশ্রুর অক্ষর জেনে গেছে উত্তমাশা,
সোনা পুড়ে মরে যায়, হয় খাঁটি ভুল প্রবাদে
মিথ্যা আশ্বাস
ফারজানা ইয়াসমিন
মরীচিকার মতো এ জীবনে
সুখ খুঁজে পাবো বলে হেঁটে গেছি,
অগণিত গলিপথ মহাকালের
অচেনা হয়েছে আপন ভুবন আমার।
মরুভূমির মতো শুকিয়ে গেছে
সবুজ যৌবনা জীবন নিমেষেই,
পূর্ণ হয়েছে বলে আস্থা রেখেও
ভুল পথে হেঁটে গেছি বহুবার।
আলো নয় আলেয়া স্বপ্নগুলো
মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে গেছে,
ছুঁতে গেলেই ফড়িং হয়ে উড়ে গেছে
বুকের ভিতরের রক্ত কুঁকড়ে গেছে।
দীর্ঘশ্বাস বিদ্যুতের মতো ঝলকে ওঠে
বজ্রপাতের শব্দ হৃৎপি-টা ঝলসে যায়,
দিন হিসাব কষে কষে জীবনের পাতাজুড়ে
শুধুই অপ্রাপ্তি আর শূন্যতা লিখে যায়।
রাঙামাটির কবিতা
তানভীর হায়দার
ছলাকলা নদীর মতো-
আমাদের যৌবন এখন
প্রগাঢ় প্রৌঢ়ত্বের অভিমুখে-
তবু লুকোচুরি জীবনের ক্যানভাসে
মাতাল শিল্পীর রংতুলিতে
আঁকিবুঁকি হয়ে জেগে ওঠে-
তোমার আমার রঙিন শৈশব,
আমাদের চঞ্চল কিশোরবেলা।
অচেনা প্রগাঢ় প্রৌঢ়ত্ব ভুলে আজ
ডালিম-রাঙা যৌবনে
বহুকাল বেঁচে থাকার নেশায়
তুমি আমি আবার মুখোমুখি হই
রাঙামাটির মায়াবী লাভ লেকে
হৃদয়গহীন অরণ্যে শৃঙ্খলিত
পুরনো গল্পগুলোর বাঁধন
খুলে দিতে থাকি।
মেহগনি বাগানের প্রতœ ইতিহাস
সাদিয়া আফরোজ
দারুচিনি বাকলের ঝাঁজ আর চিনিগুড়া চালের সুগন্ধ
সঙ্গমে যে কবিতা সৃষ্টি হয় তার রূপরস খুঁজতে হয় না-
এমতেই সেরূপ প্রকাশিত হয়।
চালাক দিন শিশিরমাখা রাতকে উসকে দেয়,
নির্বিকার অন্ধকার আলোতে পানসি ভাসাতে।
বৃষ্টিভেজা কচিপাতার মতো মনকে সরিয়ে
ডুবতে থাকো আকাশের কান্নাজলে।
রাক্ষসপুরি আর কতোদিন গন্ধ শুকবে!
যদি নির্জনতায় বিশুদ্ধ জ্ঞান জেগে ওঠে;
মেহগনি বাগানে অমৃত পাবার প্রতœ ইতিহাস,
সেই কবে মলিন হয়েছে!
পোষ্যপ্রাণ
সাহিনা মিতা
হৃদয় ক্রমশ হয়েছে পোষ্য প্রাণ- ‘আপনার’
রোজকার দৈর্ঘ্যে নিয়ম করে একবার কথা নাহয় যদি,
দুষ্ট প্রেতাত্মা হয়ে মন ঘুরপাক খায় আপনার আত্মার
চারদিকে, ছুঁড়েছুঁড়ে দেয় ফুল-পাতা, গানের খাতা,
কবিতার পঙ্ক্তি!
পোষা পায়রার মতো, বেড়াল বা কুকুরের মতো-
তাচ্ছিল্যে হয়েছি নেড়ী, অবহেলায় আগ্রসী, প্রেমের!
কাঙ্গাল হয়েছি-স্পর্শের, কণ্ঠের, চোখের, ঠোঁট আর
হাসির! শরীরে যদিও বাঁচি, মনিবের কণ্ঠ না পাই যদি
মন মরে ভূত হয়ে থাকি!
সমুদ্রের শূন্যতার ভিড়ে
মামুন চাকলাদার
আমার মন অরণ্যের ক্লান্ত পথিক,
নদী যৌবন জ্বালার ভারে যেমন ছুটে সমুদ্রের পানে
তেমনই শুষ্ক অনুভূতির চাদর গায়ে দৌড়ায়
খুবই নির্লিপ্ত- শীতের উলঙ্গ হাওয়ার ডানায় ঝরাপাতার নৃত্যকুহকে
খুঁজে পায় না কিছু- সমুদ্রের শূন্যতার ভিড়ে!
মাছের পিঠে চড়ে ভোরের রোদ যেভাবে হারায় নিজেকে জলগৃহে
অবাধ্য মন হারায় অচেনা এক মনের তরে অর্বাচীন শেওলা প্রহরে।
রোদের পাণ্ডুলিপি
মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম
কতবার পড়া হলো বিলীন হওয়া রোদের পা-ুলিপি।
চিত্রকল্পে ভরে গেল মর্মের বাগানের ইঁদারা,
যেখানে খেলা করে কিছু প্রাচীন অ্যামিবা।
যেখানে সীমফুলের কম্পমান বিভায়
দাঁড়িয়ে আছে একটি হলুদ বিকেল-
সেখানে প্রতিফলিত হচ্ছে আমার আত্মা।
যে ঘুঘু মরে গেছে এই শীতে, তার স্বর,
তার ডাকের মথিত উদাস,
গেঁথে আছে রোদের প্রলেপে।
রোদের অলস ছায়াগুলো বহুকাল থেকে উঠে এসে
মাঝরাতে দাঁড়িয়ে আছে স্বপ্নের ভেতর।
গলিত সময় থেকে
চুঁইয়ে আসে আলো।
বরফ-গলা সময়ের সমুদ্র থেকে
কুড়িয়ে এনে স্মৃতি
বানায় কুলফি মালাই-
চুষে খাবে
নির্ঘুম রাতের তারা-
হেমন্তের হাত ধরে
মোঃ আশতাব হোসেন
মেঘমালা কেঁদে বিদায় নেয়
হেমন্তের হাত ধরে,
শীত আসছে আতঙ্কে সবুজ
মরণ ভাবনা করে।
শীতবস্ত্রহীন দরিদ্রে পাচ্ছে
শীত কামড়ের ভয়,
তাদের ছিন্ন প্রাণের অশান্তি
আরও খ্যাপা হয়।
উৎসব হবে বিত্তের পাড়াতে
রসনার হবে বান,
পথশিশু বস্তির ছেঁড়া বস্ত্রে
নীলাভ হবে জান।
দুস্থদের সাথে উৎস বণ্টনে
হোক আনন্দময়,
সবার কষ্ট পরাজয়ে আসুক
মানবতার বিজয়।
শরতের নীল আক্ষেপ
সুমন সাহা
শুকনো কথায় চিড়ে ভিজে না। শুনেই
অস্থিরতা লুকিয়ে গেল। দেখলাম
নানান রঙের ফুল। সুগন্ধির ওড়না।
নানান দিকে ঘুরপাক খেয়ে। দেখল
চাটুকারিতা দেখতেও মন্দ লাগে না!
অনেকদিন প্রেমও দেখি না, আক্ষেপ
বৈশাখে; নিজেকে নিমন্ত্রণ
মিঠুন দত্ত
দিবসে দিবসে বাড়ছে পোড়া শরীরের ঋণ
ঘনিয়ে আসছে যবনিকা
কবে যেন বেজে উঠে সেই করুণ বীণ
গহীনে খেলে যায় সেই বারতা
এই বুঝি চলে যেতে হবে!
চোখে ভাসে জবাবের কাঠগড়া...
পুরনো রাক্ষসের দেহ
আর কত খাবলে খাবলে খাব
চল না এবার মানুষ হওয়ার ধ্যানে,
শপথে জাগি
এবারের পহেলা বৈশাখের দিনে।
বৈশাখ ধর্মে চূর্ণ-বিচূর্ণ হই
ভেঙে ভেঙে গড়ি
মানুষ হওয়ার সামিয়ানা
ভুলে যাই বিভেদের কন্ঠক লহরি
তোমাতে আমাতে গান ধরি
এবার বৈশাখী ঝড়ে উড়িয়ে দাও প্রভু
কালিমায় বেঁধেছে যতটুকু দানা
জীবন্ত মমি
আলমগীর খোরশেদ
একটা বিবর্ণ সময়
ওঁৎ পেতে আছে বেহুলার হাহাজারিতে
বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে আত্মোপলব্ধি
থমকে দাঁড়ায় জীবনের ভুলগুলো
ঘর বাঁধে সুনসান নীরবতা,
শূন্যতায় চলে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশান
পরমাণুগত হিসেবে কম্পমান বিহ্বল চেয়ে থাকা,
নিউমোরলোজি রাহুর হিসেবের গ্যাঁড়াকল
হয়তো ছিল পাপের শাস্তি,
কসমস থেকে আসা নিয়মের ফেরে
বেঁচে থাকা যেনো জীবন্ত মমি।
রিগর মর্টিস
বশির আহমেদ
কাঁচা ফুলে সজ্জিত গাড়ির বহর, একটি বিশেষ দিন,
পাল্টে যায় অনূঢ় জীবন।
আমি মাঝে মাঝে সবজির দোকানে যাই,
অনুবাদ করি পটলের সবুজ রঙ।
বরবটির মতো ঝুলে আছে সফর, সামনে অজানা সন্ধ্যা।
ধর্মশাস্ত্রে জাতের ভিন্নতা খুঁজি,
জলের কোনো জাত নেই।
মানুষকে স্বীকৃতি দেয় হৃদয়ের জ্যোতি, মনেরও মৃত্যু ঘটে,
দেহের মৃত্যু হলে ধীরে ধীরে রিগর মর্টিস।