image

সাময়িকী কবিতা

জীবনের রস
ফারহানা রহমান
রাতের অশ্রুর সাথে মৃদুমন্দ শব্দ

নিয়ে আসে অজস্র আঁধার! তাহলে কি

তুমি শুনতে পাও এর গূঢ় আস্ফালন?

এভাবেই একেক মুহূর্তে জানালায়

টোকা দেয় রাত। মেঘ কাঁপে, নিদারুণ

কাঁপে ধ্যানী চাঁদ পৃথিবীর অশরীর

অবগুণ্ঠনের মাঝে, তবু পুড়ে ছাই

হয় স্মৃতি। আলিঙ্গনের ঘূর্ণন ঠোঁটে;

হাই তোলে দুঃখ আর বিমূর্ত ভাবনা;

তখন মূর্ছনা অতর্কিতে হানা দেয়

হৃদয় কাঁপানো রাতের বাতাসে ঘোর

বিস্ময়ে ঘুমন্ত চোখে ঋতুর চৌকাঠ!

একাকি বিষণœ বাগানে দাঁড়িয়ে থাকে

যে অচেনা বন্দী জল, তার কানেকানে

বসন্তের গান গায় নগ্ন দেহ-মন

ঝর্নায় স্নানের শেষে তাকে দিও কিছু

ফুল ও ক্রুশের চিহ্ন: দুর্দান্ত ইচ্ছের

সাথে উন্মাদনা মিশে গেলে তাকে বলো

অশান্ত শব্দের মূল থেকে পুনরায়

জেগে ওঠে অনির্বাণ জীবনের রস...

এই মাটি আমার
মনিজা রহমান
মাটির ভেতর থেকে উঠে এল এক অনঙ্গ কণ্ঠস্বর-

এই মাটি আমার। এই নিরন্তর

বয়ে যাওয়া বাতাস আমার। এই সাপ-শামুক

প্রজাপতি ফড়িং আলো অন্ধকার কুয়াশা ও জ্যোৎস্নার মুখ

এই জলবায়ু জট, হিংসা রাগ অনুরাগ সব

এই দুঃখ এবং সুখ। সব আমার।

আমি নিস্তরঙ্গ, নির্লিপ্ত অনীল, অনড়। তবুও আমি জীবিত।

আমিই পতাকা, আমিই বাউল কাঙাল হরিনাথ

মহানন্দা মেঘনা আগইলঝরা সন্ধ্যা, আমি স্থবির রাত

এই অথৈ মাটি থেকে উঠে আসে জীবনানন্দ রাহমান

শব্দ ও অক্ষর ভেসে যায় মেঘের ঘরে ঘরে

সব শব্দ ঘুরতে থাকে বধ্যভূমিতে কাকেদের মতো

শিল্পের যাবতীয় শব একা একা নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়ে।

সন্ধিহান মন বলে, তাহলে কি সবকিছুই মিছে?

আমাদের এতদিনের আবেগ জড়ানো গান

পাঁচ ওয়াক্তের মোনাজাত?

এতদিনের ভালোবাসা, আলতা মাখা পা, মান-অভিমান?

এতদিনের সিঁথি করা চুল, সযতেœ বসানো টিপ

সবই কি দমকা হাওয়ায় জ্বালিয়ে রাখা অনিশ্চিত দীপ?

নকশি আঁকা আঁচল, বর্ণমালা খচিত পানজাবি

আমাদের পান্তাভাত কাঁচা মরিচ-বেঁচে থাকার ন্যূনতম দাবি

আমাদের অতীত বর্তমান এবং ধূসর ভবিষ্যৎ?

এত প্রশ্ন, তবু বলব এই লতা-গুল্মময় মাটিই আমার জন্মদাতা

এই মাটিই আমার শপথ।

অপরিচিত
বাশার মাহফুজ
যাদের চিরকাল পাশাপাশি বাসছিল

শীতের রাতে একই আগুনে ভাগাভাগি যাদের

যারা আমাদের ঘরের দাওয়ায় বসে বসে

রোদ মেখে ছিল

তারা কেউ আর আমাদের পরিচিত নেই!

তাদের নাম ধরে ডাকলে উত্তরের জায়গায়

ভেসে আসে ব্যবধানের চিৎকার!

আমরা এখনো ঘুমপেলে রাত নিয়ে ঘুমাতে যায়

চোখের জলোচ্ছ্বাসে লিখে রাখি স্বপ্নের নাম

গল্পে গল্পে ঘুরে আসি না যাওয়া উৎসবে

মিথ্যে সদাই নিয়ে বাড়ি ফিরি

আমাদের রান্না ঘরে রান্না হয়

সূর্যের ওম, সমুদ্রের বিশালতা,আকাশের রঙ!

দীনতার উর্বরতায় দুঃখ ফুটে ওঠে আঙিনায়

সুবাসে সুবাসে মেতে ওঠে চতুর্দিক

তোমাদের দেয়াল ডিঙিয়ে সে ঘ্রাণ পার হতে পারে না

তোমরা আমাদের ফুলের সুবাস পাওনা

তোমরা আমাদের শীতার্ত সূর্যকে দেখো না

তোমাদের রঙিন আলোর ছটা বেড়িয়ে যায়

আমাদের উঠোন।

আমরা শীত নিয়ে বেড়াতে যাই চায়ের স্টলে

গল্পে গল্পে ভেসে ওঠে তোমাদের মুখ

তোমরা আমাদের গোত্রের ছিলে

আমাদের মতোই তোমাদের জীর্ণ পোশাক ছিল

আমাদের মতোই তোমাদের হাসি ছিল

অথচ এখন আর আমাদের শব্দগুলো তোমাদের নেই

আমাদের দারিদ্র্য তোমাদের নেই

আমরা তোমাদের অপরিচিত!

অতিবাহিত দিন
জারিফ আলম
অচেনা বাতাসের নিয়মিত উপস্থিতি থেকে

হৃদয়ের দীর্ঘ সংঘাত পেরিয়ে অবিকল জেগে আছে

চিরচেনা শান্তি আর সংঘের কবিতা।

একজন আত্মস্বীকৃত মানুষ এখনো রোজ রোজ

পাহাড় চূড়ায় নিজেকে ঘোষণা করছে উ™£ান্তের মতো।

বিদীর্ণ কিছু উৎসব আমিও পেছনে ফেলে এসেছি

যে নামেই ডাকো যেভাবেই ডাকো হয়তো থামবে

হয়তো থামবে না

এই উদাসীন পাখিদের নিয়মিত ডানা ঝাপটানো

হয়তো শূন্যে মিলাবে এইসব অতিবাহিত দিন।

যে কবিতা আর পাহাড় চূড়ার কথা বলছিলাম,

তাদের হয়তো কোথাও আমিও পেয়ে যেতে পারি-

প্রেমে অথবা ঘৃণায় কোনো অভ্যস্ত দুপুরের কাছে।

তবু তো আমি ফিরতে চেয়েছিলাম-

এই হৃদয় ভরা সংঘাতের কাছে

আমার সীমাবদ্ধতার কাছে।

সম্প্রতি