# নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের দৌড়ে সামিল
# দুদকের মামলায় চার বছর জেল খেটেছেন, আরও তিন মামলা বিচারাধীন
তিনি নিজেকে ‘ডন সেলিম’ নামে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। তাকে অনলাইন ক্যাসিনোর মূল হোতা বলা হয়। সেই কারনে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলায় চার বছর জেলও খেটেছেন। এবার খবরে এসেছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের দৌড়ে সামিল হয়ে।
তবে সেই সেলিম প্রধান এবার সংবাদ সম্মেলন করে বললেন তিনি ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’। আর তার অভিযোগ সাবেক এক সেনাপ্রধানের দুই ভাই ‘ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে’ অনলাইন ক্যাসিনো কান্ডে তাকে ‘ফাঁসিয়েছেন’। আইনের ‘ব্যত্যয় ঘটিয়ে’, ক্ষমতার ‘অপব্যবহার করে’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘ব্যবহার করে’ তাকে হয়রানি করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ তার।
আজ শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তোলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা বিচারাধীন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা এলাকার বাসিন্দা সেলিম প্রধান। আসন্ন রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।
নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর পার না হলে যে কোনো ব্যাক্তির নির্বাচনে বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে সেলিমের আইনজীবী কামাল হোসেন বলেন, ‘দুদক যেমন সাজা বাড়ানোর জন্য আপিল করেছে তেমনি আমরাও সাজার বিদুদ্ধে আপিল করেছি। বিষয়টি চলমান। যতক্ষণ মামলা শেষ না হয় ততক্ষণ কাউকে দোষী বলতে পারেন না।’
তবে ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছে, কোনো ব্যক্তির দুই বছরের বেশি সাজা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, সাজা স্থগিত থাকলেও না। সাজা উপযুক্ত আদালতে বাতিল হলেই নির্বাচনে অংশ নেয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে সেলিম প্রধানের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়েন তার আইনজীবী কামাল হোসেন। এই সময় তার স্ত্রী আনা প্রধান ও তিন শিশু সন্তানও উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। একটি বাহিনীর সাবেক প্রধান কর্মকর্তার দুই ভাই (হারিছ আহমেদ ও জোসেফ আহমেদ) পরিকল্পিতভাবে আমাকে ফাঁসিয়েছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া আল জাজিরায় তাদের নিয়ে ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে হারিছ স্পষ্ট করে বলেছেন, আমাকে কীভাবে ফাঁসানো হয়েছে, কীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে র্যাব দিয়ে আমাকে প্লেন থেকে আটক করা হয়েছে।‘
‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে তাকে চার বছর জেলে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘আমি জেল থেকে বেরিয়ে এইসব ষড়যন্ত্রের কথা গণমাধ্যমে বলে এসেছি। আমি ওই ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার চাই।‘
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানকালে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাইল্যান্ডগামী বিমান থেকে নামিয়ে এনে সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর তার বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে দেশি–বিদেশি মুদ্রা ও ‘বিপুল পরিমাণ’ বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলেছিল, সেলিম প্রধান বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনো বা অনলাইন জুয়ার মূল হোতা। তিনি প্রচুর টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত বলছে, সেলিম প্রধান বাংলাদেশে প্রথম অনলাইন ক্যাসিনো চালু করেন। গুলশান ও বনানীতে পি ২৪ এবং টি ২১ অনলাইন নামে ভিডিও গেম খেলার প্ল্যাটফর্ম চালু করেন। পরে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সেগুলোকে অনলাইন ক্যাসিনোয় রূপান্তর করেন। আর ওই অনলাইন ক্যাসিনোর প্রধান কেন্দ্র ছিলো ফিলিপাইনে।
তবে আজ সেলিম প্রধান দাবি করলেন তিনি ‘কখনোই’ অনলাইন ক্যাসিনো কার্যক্রমের সাথে ‘জড়িত ছিলেন না’। দীর্ঘদিন জাপানে থাকা সেলিম ‘ট্রেডিং ব্যবসা’ করেন বলে জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, ‘আমাকে এত এত ক্যাসিনো ডন বললো কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কোন ক্যাসিনোর মামলা হয় নাই। আর ক্যাসিনোটা কোথায় আছে বলেন তো? আমিও জানতে চাই। আমি যাদের কথা বলছি তারা কী ধরনের ব্যক্তি তা তো আপনারা ভালো করেই জানেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে লড়বো, সেই প্রক্রিয়া অন-প্রসেসিং আছে।’
সেলিমের অভিযোগ, ‘আমাকে প্লেন থেকে নামানোর আগে পর্যন্ত ওয়ারেন্ট তো দূরের কথা আমার বিরুদ্ধে কোন জিডিও ছিল না। এইখানে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। বিমান থেকে নামানোর পরই সব মামলা দেওয়া হয়েছে।’
তার কাছে কোন ‘অবৈধ অর্থ’ নেই দাবি করে অনলাইন ক্যাসিনো কার্যক্রমে আলোচিত সেলিম বলেন, ‘আমি তো ছোটবেলা থেকে দেশের বাইরে। জাপানে আমি বড় হয়েছি, জাপান থেকে আমেরিকা ও থাইল্যান্ডে থেকেছি। আমার টাকা তো দেশে থাকবে না এইটাই স্বাভাবিক। আমি যা ইনকাম করেছি তা সবই বিদেশে। আমার একটি টাকাও অবৈধ না।’
অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের দুই ধারায় সেলিম প্রধানকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেয় আদালত ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল । সাজাভোগ শেষ হওয়ায় এবং বাকি মামলায় জামিন পাওয়ায় গত বছরের অক্টোবরে মুক্তি পান সেলিম। সাজার বিরুদ্ধে তার আপিল হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
# নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের দৌড়ে সামিল
# দুদকের মামলায় চার বছর জেল খেটেছেন, আরও তিন মামলা বিচারাধীন
তিনি নিজেকে ‘ডন সেলিম’ নামে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। তাকে অনলাইন ক্যাসিনোর মূল হোতা বলা হয়। সেই কারনে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলায় চার বছর জেলও খেটেছেন। এবার খবরে এসেছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের দৌড়ে সামিল হয়ে।
তবে সেই সেলিম প্রধান এবার সংবাদ সম্মেলন করে বললেন তিনি ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’। আর তার অভিযোগ সাবেক এক সেনাপ্রধানের দুই ভাই ‘ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে’ অনলাইন ক্যাসিনো কান্ডে তাকে ‘ফাঁসিয়েছেন’। আইনের ‘ব্যত্যয় ঘটিয়ে’, ক্ষমতার ‘অপব্যবহার করে’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘ব্যবহার করে’ তাকে হয়রানি করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ তার।
আজ শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তোলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা বিচারাধীন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা এলাকার বাসিন্দা সেলিম প্রধান। আসন্ন রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।
নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর পার না হলে যে কোনো ব্যাক্তির নির্বাচনে বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে সেলিমের আইনজীবী কামাল হোসেন বলেন, ‘দুদক যেমন সাজা বাড়ানোর জন্য আপিল করেছে তেমনি আমরাও সাজার বিদুদ্ধে আপিল করেছি। বিষয়টি চলমান। যতক্ষণ মামলা শেষ না হয় ততক্ষণ কাউকে দোষী বলতে পারেন না।’
তবে ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছে, কোনো ব্যক্তির দুই বছরের বেশি সাজা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, সাজা স্থগিত থাকলেও না। সাজা উপযুক্ত আদালতে বাতিল হলেই নির্বাচনে অংশ নেয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে সেলিম প্রধানের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়েন তার আইনজীবী কামাল হোসেন। এই সময় তার স্ত্রী আনা প্রধান ও তিন শিশু সন্তানও উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। একটি বাহিনীর সাবেক প্রধান কর্মকর্তার দুই ভাই (হারিছ আহমেদ ও জোসেফ আহমেদ) পরিকল্পিতভাবে আমাকে ফাঁসিয়েছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া আল জাজিরায় তাদের নিয়ে ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে হারিছ স্পষ্ট করে বলেছেন, আমাকে কীভাবে ফাঁসানো হয়েছে, কীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে র্যাব দিয়ে আমাকে প্লেন থেকে আটক করা হয়েছে।‘
‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে তাকে চার বছর জেলে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘আমি জেল থেকে বেরিয়ে এইসব ষড়যন্ত্রের কথা গণমাধ্যমে বলে এসেছি। আমি ওই ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার চাই।‘
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানকালে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাইল্যান্ডগামী বিমান থেকে নামিয়ে এনে সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর তার বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে দেশি–বিদেশি মুদ্রা ও ‘বিপুল পরিমাণ’ বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলেছিল, সেলিম প্রধান বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনো বা অনলাইন জুয়ার মূল হোতা। তিনি প্রচুর টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত বলছে, সেলিম প্রধান বাংলাদেশে প্রথম অনলাইন ক্যাসিনো চালু করেন। গুলশান ও বনানীতে পি ২৪ এবং টি ২১ অনলাইন নামে ভিডিও গেম খেলার প্ল্যাটফর্ম চালু করেন। পরে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সেগুলোকে অনলাইন ক্যাসিনোয় রূপান্তর করেন। আর ওই অনলাইন ক্যাসিনোর প্রধান কেন্দ্র ছিলো ফিলিপাইনে।
তবে আজ সেলিম প্রধান দাবি করলেন তিনি ‘কখনোই’ অনলাইন ক্যাসিনো কার্যক্রমের সাথে ‘জড়িত ছিলেন না’। দীর্ঘদিন জাপানে থাকা সেলিম ‘ট্রেডিং ব্যবসা’ করেন বলে জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, ‘আমাকে এত এত ক্যাসিনো ডন বললো কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কোন ক্যাসিনোর মামলা হয় নাই। আর ক্যাসিনোটা কোথায় আছে বলেন তো? আমিও জানতে চাই। আমি যাদের কথা বলছি তারা কী ধরনের ব্যক্তি তা তো আপনারা ভালো করেই জানেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে লড়বো, সেই প্রক্রিয়া অন-প্রসেসিং আছে।’
সেলিমের অভিযোগ, ‘আমাকে প্লেন থেকে নামানোর আগে পর্যন্ত ওয়ারেন্ট তো দূরের কথা আমার বিরুদ্ধে কোন জিডিও ছিল না। এইখানে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। বিমান থেকে নামানোর পরই সব মামলা দেওয়া হয়েছে।’
তার কাছে কোন ‘অবৈধ অর্থ’ নেই দাবি করে অনলাইন ক্যাসিনো কার্যক্রমে আলোচিত সেলিম বলেন, ‘আমি তো ছোটবেলা থেকে দেশের বাইরে। জাপানে আমি বড় হয়েছি, জাপান থেকে আমেরিকা ও থাইল্যান্ডে থেকেছি। আমার টাকা তো দেশে থাকবে না এইটাই স্বাভাবিক। আমি যা ইনকাম করেছি তা সবই বিদেশে। আমার একটি টাকাও অবৈধ না।’
অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের দুই ধারায় সেলিম প্রধানকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেয় আদালত ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল । সাজাভোগ শেষ হওয়ায় এবং বাকি মামলায় জামিন পাওয়ায় গত বছরের অক্টোবরে মুক্তি পান সেলিম। সাজার বিরুদ্ধে তার আপিল হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।