কক্সবাজারে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে দুইজন মারা গেছেন। পুড়েছে পাঁচ শতাধিক বসত ঘরসহ নানা স্থাপনা। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে লম্বাশিয়া ১-ওয়েস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-ব্লকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের দুই ঘণ্টার চেষ্টায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। এসব তথ্য জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি মো. আরিফ হোসাইন।
আগুনে পুড়ে নিহতরা হলেন- লম্বাশিয়া ১-ওয়েস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-ব্লকের বাসিন্দা আবুল খায়ের (৬০) ও মুস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মো. রাসেল (৫)। নিখোঁজ রয়েছে আরেক রোহিঙ্গা শিশু (৫)। ভয়াবহ এই অগ্নিকা-ে ক্যাম্পের ৫৮৫ বসতি ভস্মীভূত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ক্যাম্পের কয়েকজন বাসিন্দা একটি রান্নাঘরের চুল্লি থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানালেও রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি আধিপত্য বিস্তারের জেরে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘এই ক্যাম্পে মায়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) শক্ত অবস্থান রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় সময়ই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাদের বিরোধের জের ধরে গত তিন বছরে আশ্রয় শিবিরে অন্তত পাঁচবার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে।’
২০২৩ সালের ২৪ মে ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় তিন শতাধিক রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে ছাই হয়। গত ১ জুন দুপুরে উখিয়ার তানজিমারখোলা ক্যাম্প-১৩-এ আগুনের ঘটনায় ৫৪৫ রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে যায়। এতে অন্তত ১ হাজার ৬০০ রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে পড়েছিলন। রোহিঙ্গা নেতাদের মতে, সেটি ছিল নাশকতার আগুন। আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক চোরাচালানকে ঘিরে মায়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
তবে অগ্নিকা-ের সঠিক কারণ নিশ্চিত করতে পারেননি কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের উপ-পরিচালক মো. তানহারুল ইসলাম। তিনি জানান, আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তদন্ত কাজ চালাচ্ছে। তদন্ত কাজ শেষে চূড়ান্ত ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট অথবা রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, মঙ্গলবারের এই অগ্নিকাণ্ডে ৫৮৫ পরিবারের অন্তত ৫ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় হারিয়ে প্রচণ্ড শীতে খোলা আকাশের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। এই আশ্রয়শিবিরে অন্তত ৭০ হাজার রোহিঙ্গার বাস।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, এ ঘটনার পর সেনাবাহিনী, বিজিবি, এপিবিএন, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের স্বেচ্ছাসেবীরা তৎপরতা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। গৃহহীন ও ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজও চলছে।
ওসি আরিফ হোসেন বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শিশুসহ দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। রান্নাঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেলেও এর পেছনে নাশকতা আছে কি না, অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। এ পরিস্থিতিতে গেল সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মায়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। উল্টো দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। গত দুই মাসে এ ক্যাম্পগুলোতে নতুন করে ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকেছেন বলে নিশ্চিত করেছে সরকারের একটি সূত্র।
বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
কক্সবাজারে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে দুইজন মারা গেছেন। পুড়েছে পাঁচ শতাধিক বসত ঘরসহ নানা স্থাপনা। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে লম্বাশিয়া ১-ওয়েস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-ব্লকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের দুই ঘণ্টার চেষ্টায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। এসব তথ্য জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি মো. আরিফ হোসাইন।
আগুনে পুড়ে নিহতরা হলেন- লম্বাশিয়া ১-ওয়েস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-ব্লকের বাসিন্দা আবুল খায়ের (৬০) ও মুস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মো. রাসেল (৫)। নিখোঁজ রয়েছে আরেক রোহিঙ্গা শিশু (৫)। ভয়াবহ এই অগ্নিকা-ে ক্যাম্পের ৫৮৫ বসতি ভস্মীভূত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ক্যাম্পের কয়েকজন বাসিন্দা একটি রান্নাঘরের চুল্লি থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানালেও রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি আধিপত্য বিস্তারের জেরে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘এই ক্যাম্পে মায়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) শক্ত অবস্থান রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় সময়ই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাদের বিরোধের জের ধরে গত তিন বছরে আশ্রয় শিবিরে অন্তত পাঁচবার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে।’
২০২৩ সালের ২৪ মে ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় তিন শতাধিক রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে ছাই হয়। গত ১ জুন দুপুরে উখিয়ার তানজিমারখোলা ক্যাম্প-১৩-এ আগুনের ঘটনায় ৫৪৫ রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে যায়। এতে অন্তত ১ হাজার ৬০০ রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে পড়েছিলন। রোহিঙ্গা নেতাদের মতে, সেটি ছিল নাশকতার আগুন। আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক চোরাচালানকে ঘিরে মায়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
তবে অগ্নিকা-ের সঠিক কারণ নিশ্চিত করতে পারেননি কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের উপ-পরিচালক মো. তানহারুল ইসলাম। তিনি জানান, আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তদন্ত কাজ চালাচ্ছে। তদন্ত কাজ শেষে চূড়ান্ত ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট অথবা রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, মঙ্গলবারের এই অগ্নিকাণ্ডে ৫৮৫ পরিবারের অন্তত ৫ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় হারিয়ে প্রচণ্ড শীতে খোলা আকাশের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। এই আশ্রয়শিবিরে অন্তত ৭০ হাজার রোহিঙ্গার বাস।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, এ ঘটনার পর সেনাবাহিনী, বিজিবি, এপিবিএন, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের স্বেচ্ছাসেবীরা তৎপরতা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। গৃহহীন ও ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজও চলছে।
ওসি আরিফ হোসেন বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শিশুসহ দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। রান্নাঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেলেও এর পেছনে নাশকতা আছে কি না, অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। এ পরিস্থিতিতে গেল সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মায়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। উল্টো দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। গত দুই মাসে এ ক্যাম্পগুলোতে নতুন করে ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকেছেন বলে নিশ্চিত করেছে সরকারের একটি সূত্র।