সন্ধ্যা হলেই মুখর হয়ে ওঠে মাদকসেবীদের আড্ডা, প্রকাশ্য বসছে জুয়ার আসর
ভোলার চরফ্যাশনে নির্মাণাধীন আধুনিক মানের দৃষ্টিনন্দন বাসটার্মিনালটি এখন ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নভেম্বর মাস থেকে অদৃশ্য কারণে বাসটার্মিনাল থেকে কোনো বাস আসা যাওয়া না করায় অযতেœ অবহেলায় পরিত্যক্ত পড়ে আছে আধুনিক বাসটার্মিনালটি। পরিত্যক্ত হওয়ায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই হয়ে ওঠে মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য। মাদকের আখড়া ও জুয়াড়িদের জলসা। নির্জন বাসটার্মিনালে ভিড় জমান যুবক-কিশোরসহ নানান শ্রেণী পেশার মানুষ। মোমের আলোতে জমে ওঠে জুয়াড় আসর ও মাদকসেবীদের আড্ডা। এতে বিপাকে পড়েছেন বাস টার্মিনাল এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দারা। নির্জন বাসটার্মিনালে জুয়াড়ি ও মাদকসেবীদের আনাগোনার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। বাসটার্মিনালে বাস আসা যাওয়া বন্ধ করে বাজারের ভেতরে বাসের যাত্রী ওঠানামা ও স্টেশন স্থাপন করায় তীব্র যানজটে নাকাল হয়ে পড়েছে বাজারের ব্যসাসায়ীসহ পথচারীরা।
যদিও বাসচালকদের দাবি বাজারের ভেতরে একটি সিএনজি স্টেশন হওয়ার কারণে চরফ্যাশন থেকে ভোলাগামী বাসে যাত্রী কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বাসমালিকরা। এ জন্যই তারা বাসটার্মিনাল ছেড়ে আগের ন্যায় সদর বাজারে বাসস্টেশন করেছেন।
তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের ব্যক্তি ও পথচারীদের দাবি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়েছে আধুনিক মানের এই বাসটার্মিনালটি।
চরফ্যাশন পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, পৌর সদরের যানজট নিরসনের জন্য সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পৌরসভার অর্থায়নে তিন একর জমির ওপর প্রায় ২০ কোটি টাকায় ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় অত্যাধুনিক মানের একটি আধুনিক বাসটার্মিনাল। এই টার্মিনালে রয়েছে সাড়ে ৭ হাজার স্কয়ার ফুটের উন্নতমানের কাচে মোড়ানো তিনতলা ভবন। যে ভবনে সাধারণ যাত্রীদের বিশ্রামাগার ছাড়াও অত্যাধুনিক সুবিধার ভিআইপি বিশ্রামাগার, রেস্টুরেন্ট, মসজিদ, হলরুম, মিটিং রুম, দশটি চায়ের স্টল, পর্যাপ্ত শৌচাগারসহ প্রত্যেক রুটের জন্য পৃথক টিকেট কাউন্টারের ব্যবস্থা।
বাসমালিকদের সূত্রে জানা যায়, চরফ্যাশন ভোলা-বরিশাল, চট্টগ্রামসহ উপজেলার দক্ষিণ আইচা, দুলারহাট, চেয়ারম্যান বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন রুটে দৈনিক ২ শতাধিক বাস চলাচল করে থাকে।
জানা যায়, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০১৮ সালে টার্মিনালটি নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর ওই বছরের ২ আগস্ট মাসে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর ৭ বছর উৎসবমুখর পরিবেশে টার্মিনালে বাস আসা-যাওয়া করলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুখ থুবড়ে পড়েছে বাসটার্মিনালটি।
সরেজমিন দেখা যায়, চারতলা বিশিষ্ট বাসটার্মিনালের ভবনের কোটি টাকার আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাসটার্মিনালের চারপাশসহ মূল ভবনের বেশ কিছু স্থানে ময়লা-আবর্জনায় ভাগাড়ে পরিণত হয়ে গেছে। ভেতর বাহিরে জমে আছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এছাড়াও টার্মিনালটির পশ্চিম পাশে সাধারণ মানুষ অবাধে বিচরণ করায় স্থানীয়রা ময়লা ফেলার কারণে বাস টার্মিনালজুড়ে পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে। টিকেট কাউন্টারগুলোতে জমেছে ধুলোর স্তূপ।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ হাওলাদার জানান, বাসটার্মিনালটি ২ মাস যাবত বন্ধ থাকায় ওই এলাকায় ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। সন্ধ্যা হলেই আনাগোনা বেড়ে যায় বহিরাগত যুবকদের। পাশাপাশি মোটরসাইকেলে যুবকরা এসে ভিড় জমান বাসটার্মিনালে। স্থানীয় শিশু-কিশোররা উঁকিঝুঁকি দিলে মাদকসেবীদের মারধরের শিকার হয়েছেন অনেকেই।
ওই গ্রামের বাসিন্দা সোহেল জানান, রাতে হলে বাসটার্মিনালের পরিত্যক্ত রুমে জ¦লে মিটমিটে আলো। তামাক পোঁড়া গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে বাসটার্মিনাল এলাকার আকাশ বাতাস। রাত হলেই হাঁকডাক দিয়ে বসে জুয়ার আসর ও মাদকের আখড়া। পুলিশের উপস্থিতি টের পেলে ক্ষণিকেই পালিয়ে যায় এসব মাদকসেবী ও জুয়াড়িরা। জুয়াড়ি ও মাদকসেবীদের উপদ্রবে বাসটার্মিনাল সংলগ্ন এলাকার সড়কে বেড়েছে ছিনতাই ও গৃহস্থের বাড়িতে বেড়েছে চোরের উপদ্রব। এতে বিপাকে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
বাসমালিক সমিতির আঞ্চলিক চরফ্যাশন শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ মিয়া জানান, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এতে সদর থেকে অটোরিকশায় বাসটার্মিনাল যেতে যাত্রীসাধারণের আরও অতিরিক্ত ৫০ টাকা বেশি গুনতে হয়। এতে বিপাকে পড়তে হয় যাত্রীদের এবং সদর থেকে দূরত্ব হওয়ার কারণে অনেক সময় ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। সবদিক বিবেচনা করে পৌর সদর বাজার সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডেই তারা বাস রেখে সব রুটে চলাচল করছেন।
চরফ্যাশন থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, দুই মাস ধরে বাসটার্মিনালটিতে কোনো বাস আসা যাওয়া না করায় ওই এলাকায় কিছু অপরাধপ্রবণতা দেখা দেয়ার মতো আশংকা রয়েছে। সেদিক বিবোচনা করে রাতে প্রায় সময় ওইসব এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক রাসনা শারমিন মিথি জানান, বিগত বছরে বাসটার্মিনালটি পৌরসভা ইজারা দিয়েছে। ওই ইজারার মেয়াদ এখনও চলমান রয়েছে। তবে যেহেতু বাসমালিকরা তাদের নিজস্ব স্ট্যান্ডে বাস রেখে পরিচালনা করছেন সেহেতু পৌরসভার পক্ষ থেকে বাসমালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে ফের ওই বাসটার্মিনালে বাস স্থানান্তর করার জন্য আলোচনা চলছে।
সন্ধ্যা হলেই মুখর হয়ে ওঠে মাদকসেবীদের আড্ডা, প্রকাশ্য বসছে জুয়ার আসর
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ভোলার চরফ্যাশনে নির্মাণাধীন আধুনিক মানের দৃষ্টিনন্দন বাসটার্মিনালটি এখন ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নভেম্বর মাস থেকে অদৃশ্য কারণে বাসটার্মিনাল থেকে কোনো বাস আসা যাওয়া না করায় অযতেœ অবহেলায় পরিত্যক্ত পড়ে আছে আধুনিক বাসটার্মিনালটি। পরিত্যক্ত হওয়ায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই হয়ে ওঠে মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য। মাদকের আখড়া ও জুয়াড়িদের জলসা। নির্জন বাসটার্মিনালে ভিড় জমান যুবক-কিশোরসহ নানান শ্রেণী পেশার মানুষ। মোমের আলোতে জমে ওঠে জুয়াড় আসর ও মাদকসেবীদের আড্ডা। এতে বিপাকে পড়েছেন বাস টার্মিনাল এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দারা। নির্জন বাসটার্মিনালে জুয়াড়ি ও মাদকসেবীদের আনাগোনার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। বাসটার্মিনালে বাস আসা যাওয়া বন্ধ করে বাজারের ভেতরে বাসের যাত্রী ওঠানামা ও স্টেশন স্থাপন করায় তীব্র যানজটে নাকাল হয়ে পড়েছে বাজারের ব্যসাসায়ীসহ পথচারীরা।
যদিও বাসচালকদের দাবি বাজারের ভেতরে একটি সিএনজি স্টেশন হওয়ার কারণে চরফ্যাশন থেকে ভোলাগামী বাসে যাত্রী কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বাসমালিকরা। এ জন্যই তারা বাসটার্মিনাল ছেড়ে আগের ন্যায় সদর বাজারে বাসস্টেশন করেছেন।
তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের ব্যক্তি ও পথচারীদের দাবি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়েছে আধুনিক মানের এই বাসটার্মিনালটি।
চরফ্যাশন পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, পৌর সদরের যানজট নিরসনের জন্য সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পৌরসভার অর্থায়নে তিন একর জমির ওপর প্রায় ২০ কোটি টাকায় ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় অত্যাধুনিক মানের একটি আধুনিক বাসটার্মিনাল। এই টার্মিনালে রয়েছে সাড়ে ৭ হাজার স্কয়ার ফুটের উন্নতমানের কাচে মোড়ানো তিনতলা ভবন। যে ভবনে সাধারণ যাত্রীদের বিশ্রামাগার ছাড়াও অত্যাধুনিক সুবিধার ভিআইপি বিশ্রামাগার, রেস্টুরেন্ট, মসজিদ, হলরুম, মিটিং রুম, দশটি চায়ের স্টল, পর্যাপ্ত শৌচাগারসহ প্রত্যেক রুটের জন্য পৃথক টিকেট কাউন্টারের ব্যবস্থা।
বাসমালিকদের সূত্রে জানা যায়, চরফ্যাশন ভোলা-বরিশাল, চট্টগ্রামসহ উপজেলার দক্ষিণ আইচা, দুলারহাট, চেয়ারম্যান বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন রুটে দৈনিক ২ শতাধিক বাস চলাচল করে থাকে।
জানা যায়, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০১৮ সালে টার্মিনালটি নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর ওই বছরের ২ আগস্ট মাসে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর ৭ বছর উৎসবমুখর পরিবেশে টার্মিনালে বাস আসা-যাওয়া করলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুখ থুবড়ে পড়েছে বাসটার্মিনালটি।
সরেজমিন দেখা যায়, চারতলা বিশিষ্ট বাসটার্মিনালের ভবনের কোটি টাকার আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাসটার্মিনালের চারপাশসহ মূল ভবনের বেশ কিছু স্থানে ময়লা-আবর্জনায় ভাগাড়ে পরিণত হয়ে গেছে। ভেতর বাহিরে জমে আছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এছাড়াও টার্মিনালটির পশ্চিম পাশে সাধারণ মানুষ অবাধে বিচরণ করায় স্থানীয়রা ময়লা ফেলার কারণে বাস টার্মিনালজুড়ে পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে। টিকেট কাউন্টারগুলোতে জমেছে ধুলোর স্তূপ।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ হাওলাদার জানান, বাসটার্মিনালটি ২ মাস যাবত বন্ধ থাকায় ওই এলাকায় ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। সন্ধ্যা হলেই আনাগোনা বেড়ে যায় বহিরাগত যুবকদের। পাশাপাশি মোটরসাইকেলে যুবকরা এসে ভিড় জমান বাসটার্মিনালে। স্থানীয় শিশু-কিশোররা উঁকিঝুঁকি দিলে মাদকসেবীদের মারধরের শিকার হয়েছেন অনেকেই।
ওই গ্রামের বাসিন্দা সোহেল জানান, রাতে হলে বাসটার্মিনালের পরিত্যক্ত রুমে জ¦লে মিটমিটে আলো। তামাক পোঁড়া গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে বাসটার্মিনাল এলাকার আকাশ বাতাস। রাত হলেই হাঁকডাক দিয়ে বসে জুয়ার আসর ও মাদকের আখড়া। পুলিশের উপস্থিতি টের পেলে ক্ষণিকেই পালিয়ে যায় এসব মাদকসেবী ও জুয়াড়িরা। জুয়াড়ি ও মাদকসেবীদের উপদ্রবে বাসটার্মিনাল সংলগ্ন এলাকার সড়কে বেড়েছে ছিনতাই ও গৃহস্থের বাড়িতে বেড়েছে চোরের উপদ্রব। এতে বিপাকে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
বাসমালিক সমিতির আঞ্চলিক চরফ্যাশন শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ মিয়া জানান, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এতে সদর থেকে অটোরিকশায় বাসটার্মিনাল যেতে যাত্রীসাধারণের আরও অতিরিক্ত ৫০ টাকা বেশি গুনতে হয়। এতে বিপাকে পড়তে হয় যাত্রীদের এবং সদর থেকে দূরত্ব হওয়ার কারণে অনেক সময় ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। সবদিক বিবেচনা করে পৌর সদর বাজার সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডেই তারা বাস রেখে সব রুটে চলাচল করছেন।
চরফ্যাশন থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, দুই মাস ধরে বাসটার্মিনালটিতে কোনো বাস আসা যাওয়া না করায় ওই এলাকায় কিছু অপরাধপ্রবণতা দেখা দেয়ার মতো আশংকা রয়েছে। সেদিক বিবোচনা করে রাতে প্রায় সময় ওইসব এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক রাসনা শারমিন মিথি জানান, বিগত বছরে বাসটার্মিনালটি পৌরসভা ইজারা দিয়েছে। ওই ইজারার মেয়াদ এখনও চলমান রয়েছে। তবে যেহেতু বাসমালিকরা তাদের নিজস্ব স্ট্যান্ডে বাস রেখে পরিচালনা করছেন সেহেতু পৌরসভার পক্ষ থেকে বাসমালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে ফের ওই বাসটার্মিনালে বাস স্থানান্তর করার জন্য আলোচনা চলছে।