রাজশাহী : বাড়ির আঙিনায় ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলা ফুলের বাগান -সংবাদ
বাড়ির আঙিনায় ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলেন ফুলের বাগান। সেই বাগানেই অর্থ এনে দিল জাফর ইকবালকে। এরপর আর থেমে থাকা নয়। ফুলেই ধ্যান-জ্ঞান, ফুলেই জীবিকা। একটু একটু করে এখন তার প্রায় ১০-১৫ বিঘা ফুলের আবাদ। তা ছাড়াও বাড়ির ছাদে ও আশপাশেও ফুল ফলের সমাহার।
আর পেছনে ফিরে তাকানো নয়-শুধুই সামনে চলা। বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি। এলাকার শ্রমিক তার খামারের বিভিন্ন কাজ করেন। তার স্বপ্ন ভবিষ্যতে এলাকার ছিন্নমূল নারী, গরিব বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তদের কর্মসংস্থান করা। দর্শনার্থীরাও আসেন ফুলের গাছ ও ফুল দেখতে। আবার অনেকে বিনামূল্যে ফুল নেন। এতে জাফরের ভালই লাগে। এখন তার প্রতিদিনে আয় হচ্ছে ৫ হাজার টাকা।
রাজশাহী পবা উপজেলার দামকুড়া ইাউনিয়নের হরিষারডাইং গ্রামের বাসিন্দা জাফর ইকবাল। রাজশাহী শহর থেকে মোল্লাপাড়ার মোড় (লিলি হলের মোড়) মাত্র ১০ টাকা ভাড়াতে চার্জার গাড়িতে যাওয়া যাবে জাফরের ফুলের বাগানে।
ছোটবেলা থেকেই ফুলের বাগান জাফর ইকবালের মন কেড়ে নিত। সংসারে ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে শেষে সিদ্ধান্ত নেন একটি ফুলের বাগান করার। কয়েক প্রজাতির ফুলের চারা সংগ্রহ করে বাড়ির উঠানে ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলেন একটি ফুলের বাগান। সেই থেকে এই পথচলা।
সরেজমিনে জানা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে তার ফুলের চাষ। উন্মুক্ত প্রান্তর সবটা জুড়েই চোখে পড়ে বাহারি ফুলের রঙিন সমাহার। বর্গা জমিতে উৎপাদন করেছেন নানান রকমের ফুল। আর এতে ভাগ্য বদলেছে তার। এখন প্রতিদিন তার ফুল বিক্রি ৫ হাজার টাকা।
জানা যায়, কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতায় কয়েক বছরে তিনি ১৫ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করে এখন স্বাবলম্বী। ওই বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে রজনীগন্ধা, জারবেরা, বিভিন্ন জাতের গোলাপ, গেন্ডারিয়া, ক্যানডুলার, বিভিন্ন জাতের ও কালারের গাঁদা, জিপসি, কালার স্টিক, বাগান বিলাসসহ নানা প্রজাতির মূল্যবান ফুল।
স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, মাতৃভাষা দিবস ও ভ্যালেন্টাইন ডে ছাড়াও বিশেষ দিবসগুলোতে ৫০ হাজার টাকারও বেশি ফুল বিক্রি হয়। বিশেষ করে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফুলের মৌসুম। তবে রমজান মাস ছাড়া বছরের প্রায় সময়ই ফুল বিক্রি হয়ে থাকে।
ফুলচাষি জাফর ইকবাল বলেন, বাণিজ্যিকভাবে নিজ জমিতে ফুল চাষ শুরু করি এবং এতে করে আমিসহ আমার পরিবার আজ সবাই স্বাবলম্বী। বীজ সংগ্রহ কোথায় থেকে করেন ও এক বিঘা জমিতে ফুল চাষ করতে কেমন খরচ হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন প্রথম প্রথম অনেক দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে গোলাপ চাষে প্রথম অবস্থায় খরচ হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা আর চন্দ্র মল্লিকা চাষে বিঘা প্রতি খরচ হয় ৬০ হাজার টাকা। কৃষি অফিস থেকে কোন সহযোগিতা কিংবা পরামর্শ দেয় কিনা জানতে চাইলে বলেন, না কৃষি অফিস হতে কোনো রকম সহযোগিতা আমি কখনোই পাইনি।
এখন ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে- কে টার্গেট করে গোলাপের যতœ চলছে। সাধারণভাবে প্রতিটি গোলাপের দাম ৬-১০ টাকা হলেও ভালোবাসা দিবসে তা বেড়ে গিয়ে ২০-৩০-৫০ টাকাও হয়ে যায়। স্ত্রী, এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে জাফর ইকবালের সুখি সংসার। ছেলে এবারে ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিবে। মেয়ে কেবল স্কুলমুখি হয়েছে। তবে ফুলচাষে স্ত্রী নুশরাত জাহার লিপিও কম যান না। বাড়ির ছাদভর্তি ফুল-ফলের গাছ ও চারা। লিপি জানান, রাজশাহীর প্রতিটি ফুল ও বৃক্ষমেলায় এখান থেকে চারা নিয়ে যায়।
পবা কৃষি অফিস বলেন, ‘এই উপজেলায় ফুল চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে। কৃষকদের ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের বীজ দিয়ে সহায়তা দেওয়া হয়। অনেক সময় ফুলচাষে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও দেয়া হয়। ফুল বিক্রির পর কৃষকেরা বীজও বিক্রি করে থাকেন। এমনকি তিন শতক জমি থেকে অন্তত ১০ হাজার টাকার চারা বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। অল্প জমিতে স্বল্প সময়ে এই ফুল চাষ করে অধিক উপার্জন করা সম্ভব।’
রাজশাহী : বাড়ির আঙিনায় ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলা ফুলের বাগান -সংবাদ
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
বাড়ির আঙিনায় ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলেন ফুলের বাগান। সেই বাগানেই অর্থ এনে দিল জাফর ইকবালকে। এরপর আর থেমে থাকা নয়। ফুলেই ধ্যান-জ্ঞান, ফুলেই জীবিকা। একটু একটু করে এখন তার প্রায় ১০-১৫ বিঘা ফুলের আবাদ। তা ছাড়াও বাড়ির ছাদে ও আশপাশেও ফুল ফলের সমাহার।
আর পেছনে ফিরে তাকানো নয়-শুধুই সামনে চলা। বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি। এলাকার শ্রমিক তার খামারের বিভিন্ন কাজ করেন। তার স্বপ্ন ভবিষ্যতে এলাকার ছিন্নমূল নারী, গরিব বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তদের কর্মসংস্থান করা। দর্শনার্থীরাও আসেন ফুলের গাছ ও ফুল দেখতে। আবার অনেকে বিনামূল্যে ফুল নেন। এতে জাফরের ভালই লাগে। এখন তার প্রতিদিনে আয় হচ্ছে ৫ হাজার টাকা।
রাজশাহী পবা উপজেলার দামকুড়া ইাউনিয়নের হরিষারডাইং গ্রামের বাসিন্দা জাফর ইকবাল। রাজশাহী শহর থেকে মোল্লাপাড়ার মোড় (লিলি হলের মোড়) মাত্র ১০ টাকা ভাড়াতে চার্জার গাড়িতে যাওয়া যাবে জাফরের ফুলের বাগানে।
ছোটবেলা থেকেই ফুলের বাগান জাফর ইকবালের মন কেড়ে নিত। সংসারে ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে শেষে সিদ্ধান্ত নেন একটি ফুলের বাগান করার। কয়েক প্রজাতির ফুলের চারা সংগ্রহ করে বাড়ির উঠানে ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলেন একটি ফুলের বাগান। সেই থেকে এই পথচলা।
সরেজমিনে জানা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে তার ফুলের চাষ। উন্মুক্ত প্রান্তর সবটা জুড়েই চোখে পড়ে বাহারি ফুলের রঙিন সমাহার। বর্গা জমিতে উৎপাদন করেছেন নানান রকমের ফুল। আর এতে ভাগ্য বদলেছে তার। এখন প্রতিদিন তার ফুল বিক্রি ৫ হাজার টাকা।
জানা যায়, কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতায় কয়েক বছরে তিনি ১৫ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করে এখন স্বাবলম্বী। ওই বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে রজনীগন্ধা, জারবেরা, বিভিন্ন জাতের গোলাপ, গেন্ডারিয়া, ক্যানডুলার, বিভিন্ন জাতের ও কালারের গাঁদা, জিপসি, কালার স্টিক, বাগান বিলাসসহ নানা প্রজাতির মূল্যবান ফুল।
স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, মাতৃভাষা দিবস ও ভ্যালেন্টাইন ডে ছাড়াও বিশেষ দিবসগুলোতে ৫০ হাজার টাকারও বেশি ফুল বিক্রি হয়। বিশেষ করে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফুলের মৌসুম। তবে রমজান মাস ছাড়া বছরের প্রায় সময়ই ফুল বিক্রি হয়ে থাকে।
ফুলচাষি জাফর ইকবাল বলেন, বাণিজ্যিকভাবে নিজ জমিতে ফুল চাষ শুরু করি এবং এতে করে আমিসহ আমার পরিবার আজ সবাই স্বাবলম্বী। বীজ সংগ্রহ কোথায় থেকে করেন ও এক বিঘা জমিতে ফুল চাষ করতে কেমন খরচ হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন প্রথম প্রথম অনেক দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে গোলাপ চাষে প্রথম অবস্থায় খরচ হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা আর চন্দ্র মল্লিকা চাষে বিঘা প্রতি খরচ হয় ৬০ হাজার টাকা। কৃষি অফিস থেকে কোন সহযোগিতা কিংবা পরামর্শ দেয় কিনা জানতে চাইলে বলেন, না কৃষি অফিস হতে কোনো রকম সহযোগিতা আমি কখনোই পাইনি।
এখন ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে- কে টার্গেট করে গোলাপের যতœ চলছে। সাধারণভাবে প্রতিটি গোলাপের দাম ৬-১০ টাকা হলেও ভালোবাসা দিবসে তা বেড়ে গিয়ে ২০-৩০-৫০ টাকাও হয়ে যায়। স্ত্রী, এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে জাফর ইকবালের সুখি সংসার। ছেলে এবারে ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিবে। মেয়ে কেবল স্কুলমুখি হয়েছে। তবে ফুলচাষে স্ত্রী নুশরাত জাহার লিপিও কম যান না। বাড়ির ছাদভর্তি ফুল-ফলের গাছ ও চারা। লিপি জানান, রাজশাহীর প্রতিটি ফুল ও বৃক্ষমেলায় এখান থেকে চারা নিয়ে যায়।
পবা কৃষি অফিস বলেন, ‘এই উপজেলায় ফুল চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে। কৃষকদের ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের বীজ দিয়ে সহায়তা দেওয়া হয়। অনেক সময় ফুলচাষে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও দেয়া হয়। ফুল বিক্রির পর কৃষকেরা বীজও বিক্রি করে থাকেন। এমনকি তিন শতক জমি থেকে অন্তত ১০ হাজার টাকার চারা বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। অল্প জমিতে স্বল্প সময়ে এই ফুল চাষ করে অধিক উপার্জন করা সম্ভব।’