ডিমলা (নীলফামারী) : খেত থেকে ভুট্টা সংগ্রহ করা হচ্ছে -সংবাদ
ভুট্টার দানা ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভুট্টা চাষিরা। এদিক সেদিক তাকানোর মত এতটুকু সময় নেই তাদের হাতে। ভুট্টার দানা ঘরে তোলার এখনই উপযুক্ত সময়। আবহাওয়া অনুকূলে হওয়ায় ভুট্টা চাষিরা প্রখর রোদ থাকা সত্ত্বেও তা উপেক্ষা করে মাঠে ভুট্টার গাছ থেকে মোছা ছেড়ার কাজে মহাব্যস্ত কৃষক কৃষানিরা। ধান চাষের চেয়ে ভুট্টা চাষে দ্বিগুন লাভজনক হওয়ায় বর্তমান সময়ে কৃষকরা ভুট্টা চাষেবাদে ঝুঁকে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে মাঠের পর মাঠ ভুট্টা ক্ষেতের সমারাহ। এ যেন দিগন্তজুড়ে ভুট্টার ক্ষেতের মাঠের পর মাঠ। চোখ জুড়ানো সবুজ আর সোনালীর সমারহের মিলন মেলা। সর্বোপরি ভুট্টা চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করলেও ভুট্টার ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশায় ভূগছেন ভুট্টা চাষিরা। তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন প্রতিক্রিয়া।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নীলফামারী জেলা ডিমলা উপজেলায় ১৪ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক লাখ ৮৪ হাজার মে. টন। কিন্তু এর লক্ষ্যমাত্রা ছারিয়ে ভুট্টা চাষাবাদ হয় ১৫ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে যাহা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৩০ হে. জমিতে বেশি ভুট্টা চাষাবাদ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ডিমলা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে নদীবেষ্টিত ৮টি ইউনিয়নে রেকর্ড পরিমাণ ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে ধূনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন, খালিশা চাপানি ইউনিয়ন, টেপা খড়িবাড়ি ইউনিয়ন, খগা খড়িবাড়ি ইউনিয়ন, পূর্ব ছলাতনাই ইউনিয়ন, বালাপাড়া ইউনিয়ন ও নাউতারা ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়ন নদীবেষ্টিত হওয়ায় পলি ও বালু মাটি পড়ে জমির উর্বরতা বৃদ্ধির কারণে ভুট্টা চাষাবাদের জন্য উপযোগী বেশি। এ সব এলাকার জমি বেশি উর্বরতার কারণে প্রতি বিঘা (৩০ শতক) জমিতে ৪০ থেকে ৪৫ মন ভুট্টার ফলন হয়ে থাকে মর্মে কৃষকরা জানান।
ঝুনাগাছ চাপানির ছাতুনামার চড়ের বাসিন্দা আক্কেল আলী (৫০) জানান, চলতি মৌসুমে সে ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছেন, তার মধ্যে ৩ বিঘা জমির ভুট্টা ঘরে তুলেছেন। প্রতিদীঘা জমিতে ভুট্টার ফলন পেয়েছেন ৪৩ মন করে। আশা করছেন বাকি ২ বিঘাতেও একই পরিমাণ ফসল পাবেন।
বালাপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সুন্দর খাতা গ্রামের আলি নেওয়াজ (৫৫) বলেন, তিনি এ বছর ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। অন্যান্য বছরে তুলনায় এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভুট্টার ফলনও ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি অর্ধেক জমির ভুট্টা ঘরে তুলতে পেরেছেন। বাকি জমির ভুট্টা ঘরে তোলার জন্য সারাদিন মাঠে আছেন।
পূর্বাছাতনাই ইউনিয়নের ঝাঁড়সিংহেশ্বর গ্রামের হোসনে আরা বেগম জানান, তিনি এবারে ৯ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন আবাদও ভালো হয়েছে। আশা করছেন বিঘপ্রতি ৪০-৪৫ মণ করে ভুট্টার ফলন পাবেন। তবে তিনি অভিযোগ করেন, গত বছরের তুলনায় এবারে ভুট্টার বীজ বেশি দামে কিনতে হয়েছে। প্রতি কেজি বীজে ৫-৬শ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। তা ছাড়া কয়েক বছরের তুলনায় এবছর রসায়নিক সারের মূল্য নিয়ন্ত্রণহীন থাকায় ভুট্টা ক্ষেতে সার প্রয়োগে হিমশিম খেতে হয়েছে।
অনেক চাষি অভিযোগ করে বলেন, এবারে ভুট্টার ফলন ভালো হলেও বাজারে ভুট্টার দাম কম। গত বছর এই সময়ে প্রতি মণ ভুট্টা বজার মূল্য ছিল ১২শত থেকে ১৪শ টাকা সেখানে এ বছর একই সময়ে প্রতি মণ ভুট্টা ১ হাজার থেকে ১১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাও সেটা বাকিতে দিতে হচ্ছে। আবার ৪০ কেজিতে ১ মন হলেও ভুট্টা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে ৪২-৪৩ কেজিতে মণ নিচ্ছে হিসেবের চেয়ে ২-৩ কেজি বেশি নিচ্ছে।
সদর ইউনিয়নের জমদ্দির চৌপতির হামিদুল ইসলাম (৪৪) বলেন, ভুট্টার ফলন হয়েছে প্রতি বিঘায় ৩৫ মণ। ৩ বিঘায় ভুট্টা চাষ করেছি, দেড় বিঘা জমির ভুট্টা বাড়িতে নিয়েছি।
দেড় বিঘা জমির ভুট্টা বাড়িত আনতে খরচ হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দামও কম ফলনও কম কিন্তু সার ও বীজের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কম হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে ভুট্টার আবাদ ভালো হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। বর্তমানে কৃষকরা ভুট্টা ঘরে তুলতে ব্যস্ত। সঠিক সময়মত উন্নত মানের জাতের ভূট্টা বীজ সরবরাহ করে জমিতে রোপনে নিয়মিত পরামর্শ, সময় মতো সরবরাহ করে সার্বিক সহযোগিতা আমরা কৃষি দপ্তর থেকে করেছি। তবে ভুট্টার দাম নিয়ে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে কৃষকদের সঙ্গে ছল চাতুরি করছে। কৃষকরা যাতে ভুট্টার ন্যায্য দাম পায় সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে তিনি জানান।
ডিমলা (নীলফামারী) : খেত থেকে ভুট্টা সংগ্রহ করা হচ্ছে -সংবাদ
রোববার, ১১ মে ২০২৫
ভুট্টার দানা ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভুট্টা চাষিরা। এদিক সেদিক তাকানোর মত এতটুকু সময় নেই তাদের হাতে। ভুট্টার দানা ঘরে তোলার এখনই উপযুক্ত সময়। আবহাওয়া অনুকূলে হওয়ায় ভুট্টা চাষিরা প্রখর রোদ থাকা সত্ত্বেও তা উপেক্ষা করে মাঠে ভুট্টার গাছ থেকে মোছা ছেড়ার কাজে মহাব্যস্ত কৃষক কৃষানিরা। ধান চাষের চেয়ে ভুট্টা চাষে দ্বিগুন লাভজনক হওয়ায় বর্তমান সময়ে কৃষকরা ভুট্টা চাষেবাদে ঝুঁকে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে মাঠের পর মাঠ ভুট্টা ক্ষেতের সমারাহ। এ যেন দিগন্তজুড়ে ভুট্টার ক্ষেতের মাঠের পর মাঠ। চোখ জুড়ানো সবুজ আর সোনালীর সমারহের মিলন মেলা। সর্বোপরি ভুট্টা চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করলেও ভুট্টার ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশায় ভূগছেন ভুট্টা চাষিরা। তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন প্রতিক্রিয়া।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নীলফামারী জেলা ডিমলা উপজেলায় ১৪ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক লাখ ৮৪ হাজার মে. টন। কিন্তু এর লক্ষ্যমাত্রা ছারিয়ে ভুট্টা চাষাবাদ হয় ১৫ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে যাহা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৩০ হে. জমিতে বেশি ভুট্টা চাষাবাদ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ডিমলা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে নদীবেষ্টিত ৮টি ইউনিয়নে রেকর্ড পরিমাণ ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে ধূনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন, খালিশা চাপানি ইউনিয়ন, টেপা খড়িবাড়ি ইউনিয়ন, খগা খড়িবাড়ি ইউনিয়ন, পূর্ব ছলাতনাই ইউনিয়ন, বালাপাড়া ইউনিয়ন ও নাউতারা ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়ন নদীবেষ্টিত হওয়ায় পলি ও বালু মাটি পড়ে জমির উর্বরতা বৃদ্ধির কারণে ভুট্টা চাষাবাদের জন্য উপযোগী বেশি। এ সব এলাকার জমি বেশি উর্বরতার কারণে প্রতি বিঘা (৩০ শতক) জমিতে ৪০ থেকে ৪৫ মন ভুট্টার ফলন হয়ে থাকে মর্মে কৃষকরা জানান।
ঝুনাগাছ চাপানির ছাতুনামার চড়ের বাসিন্দা আক্কেল আলী (৫০) জানান, চলতি মৌসুমে সে ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছেন, তার মধ্যে ৩ বিঘা জমির ভুট্টা ঘরে তুলেছেন। প্রতিদীঘা জমিতে ভুট্টার ফলন পেয়েছেন ৪৩ মন করে। আশা করছেন বাকি ২ বিঘাতেও একই পরিমাণ ফসল পাবেন।
বালাপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সুন্দর খাতা গ্রামের আলি নেওয়াজ (৫৫) বলেন, তিনি এ বছর ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। অন্যান্য বছরে তুলনায় এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভুট্টার ফলনও ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি অর্ধেক জমির ভুট্টা ঘরে তুলতে পেরেছেন। বাকি জমির ভুট্টা ঘরে তোলার জন্য সারাদিন মাঠে আছেন।
পূর্বাছাতনাই ইউনিয়নের ঝাঁড়সিংহেশ্বর গ্রামের হোসনে আরা বেগম জানান, তিনি এবারে ৯ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন আবাদও ভালো হয়েছে। আশা করছেন বিঘপ্রতি ৪০-৪৫ মণ করে ভুট্টার ফলন পাবেন। তবে তিনি অভিযোগ করেন, গত বছরের তুলনায় এবারে ভুট্টার বীজ বেশি দামে কিনতে হয়েছে। প্রতি কেজি বীজে ৫-৬শ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। তা ছাড়া কয়েক বছরের তুলনায় এবছর রসায়নিক সারের মূল্য নিয়ন্ত্রণহীন থাকায় ভুট্টা ক্ষেতে সার প্রয়োগে হিমশিম খেতে হয়েছে।
অনেক চাষি অভিযোগ করে বলেন, এবারে ভুট্টার ফলন ভালো হলেও বাজারে ভুট্টার দাম কম। গত বছর এই সময়ে প্রতি মণ ভুট্টা বজার মূল্য ছিল ১২শত থেকে ১৪শ টাকা সেখানে এ বছর একই সময়ে প্রতি মণ ভুট্টা ১ হাজার থেকে ১১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাও সেটা বাকিতে দিতে হচ্ছে। আবার ৪০ কেজিতে ১ মন হলেও ভুট্টা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে ৪২-৪৩ কেজিতে মণ নিচ্ছে হিসেবের চেয়ে ২-৩ কেজি বেশি নিচ্ছে।
সদর ইউনিয়নের জমদ্দির চৌপতির হামিদুল ইসলাম (৪৪) বলেন, ভুট্টার ফলন হয়েছে প্রতি বিঘায় ৩৫ মণ। ৩ বিঘায় ভুট্টা চাষ করেছি, দেড় বিঘা জমির ভুট্টা বাড়িতে নিয়েছি।
দেড় বিঘা জমির ভুট্টা বাড়িত আনতে খরচ হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দামও কম ফলনও কম কিন্তু সার ও বীজের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কম হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে ভুট্টার আবাদ ভালো হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। বর্তমানে কৃষকরা ভুট্টা ঘরে তুলতে ব্যস্ত। সঠিক সময়মত উন্নত মানের জাতের ভূট্টা বীজ সরবরাহ করে জমিতে রোপনে নিয়মিত পরামর্শ, সময় মতো সরবরাহ করে সার্বিক সহযোগিতা আমরা কৃষি দপ্তর থেকে করেছি। তবে ভুট্টার দাম নিয়ে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে কৃষকদের সঙ্গে ছল চাতুরি করছে। কৃষকরা যাতে ভুট্টার ন্যায্য দাম পায় সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে তিনি জানান।