পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) : সবুজ পাতার ফাঁকে ঝুলছে থোকা থোকা গোলাপি রঙের লিচু -সংবাদ
মঙ্গলবাড়িয়া, কুমারপুর, হোসেন্দী ও নারান্দী এই চার গ্রাম জুড়েই বাড়ির আঙিনায় ও জমির আইলসহ বাড়ির সামনের কাঁচা-পাকা সড়কের দুই পাশে সারি সারি লিচু গাছ। সবুজ পাতার ফাঁকে ঝুলছে থোকা থোকা গোলাপি রঙের লিচু। নয়নাভিরাম এ লিচু পাখি ও শিশু-কিশোররা যাতে নষ্ট করতে না পারে সেজন্য দিন ও রাত জেগে গাছের নিচে বসে পাহারা দিচ্ছেন চাষিরা। আবার সড়কের দুই পাশে বসে লিচু বিক্রিও করছেন খুচরা বিক্রেতারা। এমন সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সী নারী-পুরুষরা ভিড় করছেন গ্রামটিতে। স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা গাছের ঝুলন্ত লিচুর সঙ্গে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া, কুমারপুর, হোসেন্দী ও নারান্দী গ্রামের চিত্র এটি। উপজেলা সদর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে এগোলেই এমন দৃশ্য নজরে পড়বে। পরিবারের চাহিদা মেটাতে একসময় বাড়ির আঙিনায় চাষ হতো লিচু। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন বাণিজ্যিকভিত্তিতে লিচু চাষ করছেন চাষিরা। প্রত্যাশা অনুযায়ী সাফল্য পাওয়ায় গ্রামের শতভাগ মানুষই এখন লিচু চাষের সঙ্গে জড়িত। শুধু লিচু চাষ করেই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে এ গ্রামের শতাধিক মানুষ। গ্রামটি এখন লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত।
সরেজমিনে উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া, কুমারপুর, হোসেন্দী ও নারান্দী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি লিচুই গোলাপী রঙের, শাঁস মোটা ও রসে ভরপুর। খেতে ভারি মজা। গন্ধও অতুলনীয়। লাল ও গোলাপি রঙের লিচুতে পুরো গ্রামটি এখন রঙিন।
থোকায় থোকায় বাহারি লিচু সবার মন কাড়ছে। সেই সঙ্গে লিচুর ম-ম গন্ধ আর ছোট ছোট পাখির কিচির-মিচির শব্দ এবং দর্শক-ক্রেতাদের পদচারণে গ্রামটি এখন মুখরিত। লিচুচাষীরা গাছ থেকে লিচু সংগ্রহ করে গাছের নিচে মাচায় বসে ৫০টি করে লিচুর আঁটি বেঁধে রাখছেন যেন সহজেই তারা সেগুলো বিক্রয় করতে পারেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুইশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ গ্রামে লিচু চাষ হচ্ছে। প্রথমে শখের বসে বাড়ির আঙিনায় লিচু চাষ শুরু করলেও এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লিচু চাষ শুরু করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন তারা। বর্তমানে মঙ্গলবাড়িয়া, কুমারপুর, হোসেন্দী ও নারান্দী গ্রামে প্রায় দশ হাজার লিচু গাছ রয়েছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত পর্যটক এসে গ্রামটিতে ভিড় করছে। শুধু তাই নয়, বাগান থেকেই তারা লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তবে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে।
লিচু চাষিরা জানান, দুইশ বছর আগে এ গ্রামে লিচু চাষ শুরু করেন তাদের পূর্ব পুরুষরা। পরে তা পুরো গ্রামসহ আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। তবে এটা কী জাতের লিচু, তা জানেন না চাষিরা। তাই গ্রামের নামেই এ লিচু পরিচিতি পেয়ে গেছে। তারা জানান, দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় বাজারে সাধারণ লিচুর চেয়ে এ লিচুর দাম অনেক বেশি। এ বছর ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রয় করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন লিচু চাষীরা।
মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষি তৌহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকায়। বাজারের অন্যান্য লিচুর চেয়ে মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর বাড়তি চাহিদা রয়েছে। লিচুর মৌসুমে স্থানীয় বাজারে এ লিচু পাওয়া যায় না। ক্রেতারা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু আকারে যেমন বড় হয়, তেমনি রঙে, স্বাদে-গন্ধেও হয় ব্যতিক্রমী গুণের অধিকারী। যে কারণে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর একটি বাড়তি কদর রয়েছে।
পার্শ্ববর্তী আজলদী গ্রামের মদিনা খাতুন তার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন লিচু কিনতে। তিনি বলেন প্রতি বছরই আমি এ গ্রাম থেকে লিচু কিনে থাকি। এ লিচু খুবই রসালো ও সুস্বাদু। খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যায়। এ বছর ১০০ লিচু আমি ৫০০ টাকা দিয়ে কিনেছি।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর-ই-আলম বলেন, এ গ্রামের মাটি লিচু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। পাকুন্দিয়া উপজেলার ঐতিহ্য মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু, পাশাপাশি কুমারপুর, হোসেন্দী ও নারান্দী গ্রামের লিচুও অনেক ভালো। কৃষি অফিসের পরামর্শেই সকল লিচুচাষীগণ পর্যায়ক্রমে হরমোন জাতীয় ঔষধ, লিচুর রঙ ও আকার অক্ষুন্ন রাখতে ছত্রাক নাশক স্প্রে করেছে। তিনি আরও জানান, পাশপাশি চারটি গ্রামে ১০ হাজারের মতো লিচু গাছ রয়েছে। এ থেকে এ বছর দশ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।
পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) : সবুজ পাতার ফাঁকে ঝুলছে থোকা থোকা গোলাপি রঙের লিচু -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
মঙ্গলবাড়িয়া, কুমারপুর, হোসেন্দী ও নারান্দী এই চার গ্রাম জুড়েই বাড়ির আঙিনায় ও জমির আইলসহ বাড়ির সামনের কাঁচা-পাকা সড়কের দুই পাশে সারি সারি লিচু গাছ। সবুজ পাতার ফাঁকে ঝুলছে থোকা থোকা গোলাপি রঙের লিচু। নয়নাভিরাম এ লিচু পাখি ও শিশু-কিশোররা যাতে নষ্ট করতে না পারে সেজন্য দিন ও রাত জেগে গাছের নিচে বসে পাহারা দিচ্ছেন চাষিরা। আবার সড়কের দুই পাশে বসে লিচু বিক্রিও করছেন খুচরা বিক্রেতারা। এমন সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সী নারী-পুরুষরা ভিড় করছেন গ্রামটিতে। স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা গাছের ঝুলন্ত লিচুর সঙ্গে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া, কুমারপুর, হোসেন্দী ও নারান্দী গ্রামের চিত্র এটি। উপজেলা সদর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে এগোলেই এমন দৃশ্য নজরে পড়বে। পরিবারের চাহিদা মেটাতে একসময় বাড়ির আঙিনায় চাষ হতো লিচু। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন বাণিজ্যিকভিত্তিতে লিচু চাষ করছেন চাষিরা। প্রত্যাশা অনুযায়ী সাফল্য পাওয়ায় গ্রামের শতভাগ মানুষই এখন লিচু চাষের সঙ্গে জড়িত। শুধু লিচু চাষ করেই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে এ গ্রামের শতাধিক মানুষ। গ্রামটি এখন লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত।
সরেজমিনে উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া, কুমারপুর, হোসেন্দী ও নারান্দী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি লিচুই গোলাপী রঙের, শাঁস মোটা ও রসে ভরপুর। খেতে ভারি মজা। গন্ধও অতুলনীয়। লাল ও গোলাপি রঙের লিচুতে পুরো গ্রামটি এখন রঙিন।
থোকায় থোকায় বাহারি লিচু সবার মন কাড়ছে। সেই সঙ্গে লিচুর ম-ম গন্ধ আর ছোট ছোট পাখির কিচির-মিচির শব্দ এবং দর্শক-ক্রেতাদের পদচারণে গ্রামটি এখন মুখরিত। লিচুচাষীরা গাছ থেকে লিচু সংগ্রহ করে গাছের নিচে মাচায় বসে ৫০টি করে লিচুর আঁটি বেঁধে রাখছেন যেন সহজেই তারা সেগুলো বিক্রয় করতে পারেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুইশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ গ্রামে লিচু চাষ হচ্ছে। প্রথমে শখের বসে বাড়ির আঙিনায় লিচু চাষ শুরু করলেও এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লিচু চাষ শুরু করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন তারা। বর্তমানে মঙ্গলবাড়িয়া, কুমারপুর, হোসেন্দী ও নারান্দী গ্রামে প্রায় দশ হাজার লিচু গাছ রয়েছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত পর্যটক এসে গ্রামটিতে ভিড় করছে। শুধু তাই নয়, বাগান থেকেই তারা লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তবে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে।
লিচু চাষিরা জানান, দুইশ বছর আগে এ গ্রামে লিচু চাষ শুরু করেন তাদের পূর্ব পুরুষরা। পরে তা পুরো গ্রামসহ আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। তবে এটা কী জাতের লিচু, তা জানেন না চাষিরা। তাই গ্রামের নামেই এ লিচু পরিচিতি পেয়ে গেছে। তারা জানান, দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় বাজারে সাধারণ লিচুর চেয়ে এ লিচুর দাম অনেক বেশি। এ বছর ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রয় করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন লিচু চাষীরা।
মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষি তৌহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকায়। বাজারের অন্যান্য লিচুর চেয়ে মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর বাড়তি চাহিদা রয়েছে। লিচুর মৌসুমে স্থানীয় বাজারে এ লিচু পাওয়া যায় না। ক্রেতারা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু আকারে যেমন বড় হয়, তেমনি রঙে, স্বাদে-গন্ধেও হয় ব্যতিক্রমী গুণের অধিকারী। যে কারণে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর একটি বাড়তি কদর রয়েছে।
পার্শ্ববর্তী আজলদী গ্রামের মদিনা খাতুন তার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন লিচু কিনতে। তিনি বলেন প্রতি বছরই আমি এ গ্রাম থেকে লিচু কিনে থাকি। এ লিচু খুবই রসালো ও সুস্বাদু। খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যায়। এ বছর ১০০ লিচু আমি ৫০০ টাকা দিয়ে কিনেছি।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর-ই-আলম বলেন, এ গ্রামের মাটি লিচু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। পাকুন্দিয়া উপজেলার ঐতিহ্য মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু, পাশাপাশি কুমারপুর, হোসেন্দী ও নারান্দী গ্রামের লিচুও অনেক ভালো। কৃষি অফিসের পরামর্শেই সকল লিচুচাষীগণ পর্যায়ক্রমে হরমোন জাতীয় ঔষধ, লিচুর রঙ ও আকার অক্ষুন্ন রাখতে ছত্রাক নাশক স্প্রে করেছে। তিনি আরও জানান, পাশপাশি চারটি গ্রামে ১০ হাজারের মতো লিচু গাছ রয়েছে। এ থেকে এ বছর দশ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।