গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গুপ্তমণি চরে ছাগল পরিচর্যা করছেন এক নারী -সংবাদ
গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চর আর চর। এসব চরে বন্যা ও নদীভাঙনের সাথে সংগ্রাম করে বসবাস করে বাস্তুহারা অন্যন্তপক্ষে সাড়ে তিন লাখ মানুষজন। তবে, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে জীবনযাত্রা উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হলেও এখন সেই প্রেক্ষাপট অনেকটাই সহনশীল করে নিয়েছে চরের মানুষজন। পরিকল্পিতভাবে ও উন্নত পদ্ধতিতে ছাগল লালনপালন করে শতশত নারীপ্রধান পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। দরিদ্র্যতার বৃত্ত থেকে মুক্তও হয়েছেন হাজারো পরিবার।
গাইবান্ধা ফুলছড়ি উপজেলার বৃহ্মপুত্র নদে জেগে ওঠা গুপ্তমণি চরে দেখা যায় হালিমা খাতুনকে (৫০) কে। ছোট্ট বাড়িতে যেন তার এখন ক্ষুদ্র ছাগলের খামার। ছোট-বড় ১৯টি ছাগল। আগামী মাসের মধ্যে আরো ৫টি ছাগল বাচ্চা দিবে। খোলা চরের প্রকৃতির ঘাসপালা খেয়ে লাফালাফি করে বড় হয়ে উঠছে ছাগলগুলো। ইতোমধ্যে ৬টি বিক্রিও করেছেন। সারাদিন অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ছাগলপালন করে তিনি প্রায় লক্ষাধিক টাকার মালিক। এই সম্পদ হয়েছে মাত্র দু’বছরেই।
তিনি তার সাফল্যের নেপথ্যে কথা জানিয়ে বলেন, প্রতিবছর নদীভ্ঙান আর বন্যায় সংসারের অভাব-অনটন কেটে উঠছিলনা। কী করে অভাব অনটন থেকে মুক্ত হবেন এর পরিকল্পনা না থাকায় হত্যাশার জীবন থেকে স্বপ্নের পথ খুঁজে পান বেসরকারি সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রে এর প্রস্পারিটি প্রকল্পর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে।
হালিমা হাস্যজ্জ্বল কন্ঠে বলেন. আমি একজন স্বপ্ন জয়ী নারী, আমি এখন অনেকটাই চিন্তামুক্ত। আমার বাড়িতে ছোট্ট ছাগলের খামার। এডব্লিউও এর সহায়তায় গণউন্নয়ন কেন্দ্র থেকে পাওয়া ৪টি ছাগল থেকে আমার ১৯টি ছাগল হয়েছে। ৬টি বিক্রি করে ৩১ হাজার টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেছি। এবছর আরো ৬টি বাচ্চা দিবে, এভাবেই আমার শতাধিক ছাগলের খামার গড়ে তোলার ইচ্ছে আছে। তিনি আরো বলেন জানান, প্রশিক্ষণ থেকে ধারনাই আমাকে আজকে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। এখন আর আমার পরিবারের অভাব নেই। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। আপদ বিপদ হলে ছাগল বিক্রি তা মোকাবেলা করি।
গুপ্তমণি চরের লিলি বেগম, আঞ্জুয়ারা, রমিচা বেগম এর মতো আরো ৪০টি পরিবারের সাথে কথা হলে তারাও জানান প্রায় একই ধরণের সাফল্যের কাহিনী। এরকম তিন শতাধিক নারী প্রকল্পটি প্রশিক্ষণ পরবর্তী ছাগল পেয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। তাঁদের কষ্টের দিন আর নেই। এদিকে স্বামী-স্ত্রী নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসাও শুরু করেছেন অনেকে। কেউ বসে নেই। সন্তানদের স্কুল দিচ্ছেন। দুর্যোগের পুর্বপ্রস্ততি বিষয়ে সবাই সচেতন এবং দুর্যোগকালীন ও পরবর্তীতে কী করতে হবে সে বিষয়েও অবগত।
প্রকল্পটির ফোকাল জয়া প্রসাদ জানান, গাইবান্ধার জেলার ৬টি ইউনিয়নে দুর্যোগের সাথে বসবাস করছে এবং যারা জলবায়ুর কারণে স্থানান্তরিত হয় এসব ক্ষতিগ্রস্ত ২হাজার ১২০টি দরিদ্র পরিবারের জীবনমানের উন্নয়ন প্রস্পারিটি প্রকল্পটি কাজ করছে। দরিদ্র মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধি করে বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি কিছু পরিবারকে ছাগল দেয়া হয়। আর চরের মানুষজন ছাগল পালন করে মাত্র দু থেকে তিন বছরের মধ্যে সফলতা পেয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. জহিরুল ইসলাম জানান, প্রশিক্ষণ নিয়ে ছাগল লালন পালন করলে সাফল্য আসবেই। কেননা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ছাগল লালন পালনের পদ্ধতি, রোগবালাই প্রতিরোধে করণীয়, ছাগলের জাত চেনা, দুর্যোগকালীন করণীয় এসব বিষয়াদি জানানো হয়। এজন্য তিনি বলেন, যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে ছাগল লালন পালন করছেন তারা লাভবান হয়েছেন।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গুপ্তমণি চরে ছাগল পরিচর্যা করছেন এক নারী -সংবাদ
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চর আর চর। এসব চরে বন্যা ও নদীভাঙনের সাথে সংগ্রাম করে বসবাস করে বাস্তুহারা অন্যন্তপক্ষে সাড়ে তিন লাখ মানুষজন। তবে, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে জীবনযাত্রা উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হলেও এখন সেই প্রেক্ষাপট অনেকটাই সহনশীল করে নিয়েছে চরের মানুষজন। পরিকল্পিতভাবে ও উন্নত পদ্ধতিতে ছাগল লালনপালন করে শতশত নারীপ্রধান পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। দরিদ্র্যতার বৃত্ত থেকে মুক্তও হয়েছেন হাজারো পরিবার।
গাইবান্ধা ফুলছড়ি উপজেলার বৃহ্মপুত্র নদে জেগে ওঠা গুপ্তমণি চরে দেখা যায় হালিমা খাতুনকে (৫০) কে। ছোট্ট বাড়িতে যেন তার এখন ক্ষুদ্র ছাগলের খামার। ছোট-বড় ১৯টি ছাগল। আগামী মাসের মধ্যে আরো ৫টি ছাগল বাচ্চা দিবে। খোলা চরের প্রকৃতির ঘাসপালা খেয়ে লাফালাফি করে বড় হয়ে উঠছে ছাগলগুলো। ইতোমধ্যে ৬টি বিক্রিও করেছেন। সারাদিন অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ছাগলপালন করে তিনি প্রায় লক্ষাধিক টাকার মালিক। এই সম্পদ হয়েছে মাত্র দু’বছরেই।
তিনি তার সাফল্যের নেপথ্যে কথা জানিয়ে বলেন, প্রতিবছর নদীভ্ঙান আর বন্যায় সংসারের অভাব-অনটন কেটে উঠছিলনা। কী করে অভাব অনটন থেকে মুক্ত হবেন এর পরিকল্পনা না থাকায় হত্যাশার জীবন থেকে স্বপ্নের পথ খুঁজে পান বেসরকারি সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রে এর প্রস্পারিটি প্রকল্পর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে।
হালিমা হাস্যজ্জ্বল কন্ঠে বলেন. আমি একজন স্বপ্ন জয়ী নারী, আমি এখন অনেকটাই চিন্তামুক্ত। আমার বাড়িতে ছোট্ট ছাগলের খামার। এডব্লিউও এর সহায়তায় গণউন্নয়ন কেন্দ্র থেকে পাওয়া ৪টি ছাগল থেকে আমার ১৯টি ছাগল হয়েছে। ৬টি বিক্রি করে ৩১ হাজার টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেছি। এবছর আরো ৬টি বাচ্চা দিবে, এভাবেই আমার শতাধিক ছাগলের খামার গড়ে তোলার ইচ্ছে আছে। তিনি আরো বলেন জানান, প্রশিক্ষণ থেকে ধারনাই আমাকে আজকে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। এখন আর আমার পরিবারের অভাব নেই। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। আপদ বিপদ হলে ছাগল বিক্রি তা মোকাবেলা করি।
গুপ্তমণি চরের লিলি বেগম, আঞ্জুয়ারা, রমিচা বেগম এর মতো আরো ৪০টি পরিবারের সাথে কথা হলে তারাও জানান প্রায় একই ধরণের সাফল্যের কাহিনী। এরকম তিন শতাধিক নারী প্রকল্পটি প্রশিক্ষণ পরবর্তী ছাগল পেয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। তাঁদের কষ্টের দিন আর নেই। এদিকে স্বামী-স্ত্রী নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসাও শুরু করেছেন অনেকে। কেউ বসে নেই। সন্তানদের স্কুল দিচ্ছেন। দুর্যোগের পুর্বপ্রস্ততি বিষয়ে সবাই সচেতন এবং দুর্যোগকালীন ও পরবর্তীতে কী করতে হবে সে বিষয়েও অবগত।
প্রকল্পটির ফোকাল জয়া প্রসাদ জানান, গাইবান্ধার জেলার ৬টি ইউনিয়নে দুর্যোগের সাথে বসবাস করছে এবং যারা জলবায়ুর কারণে স্থানান্তরিত হয় এসব ক্ষতিগ্রস্ত ২হাজার ১২০টি দরিদ্র পরিবারের জীবনমানের উন্নয়ন প্রস্পারিটি প্রকল্পটি কাজ করছে। দরিদ্র মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধি করে বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি কিছু পরিবারকে ছাগল দেয়া হয়। আর চরের মানুষজন ছাগল পালন করে মাত্র দু থেকে তিন বছরের মধ্যে সফলতা পেয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. জহিরুল ইসলাম জানান, প্রশিক্ষণ নিয়ে ছাগল লালন পালন করলে সাফল্য আসবেই। কেননা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ছাগল লালন পালনের পদ্ধতি, রোগবালাই প্রতিরোধে করণীয়, ছাগলের জাত চেনা, দুর্যোগকালীন করণীয় এসব বিষয়াদি জানানো হয়। এজন্য তিনি বলেন, যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে ছাগল লালন পালন করছেন তারা লাভবান হয়েছেন।