ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
ডিমলা বাসীর চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রতিদিন শত শত রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসার নেয়ার জন্য আসে। ডাক্তার ও পর্যাপ্ত ঔষধ না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হয় । রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, ডাক্তার ও ঔষধের অভাব, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার কারণে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে গিয়ে তারা আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সাধারন রোগীরা । চিকিৎসা নিতে আসা এ সব রোগীরা পদে পদে সীমাহীন হয়রানী ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ।
উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের তিস্তার বিধৌত এলাকার ঝাড়সিংহেশ্বর গ্রামের দিনমজুর কেরামত আলী বলেন, আমি গরিব মানুষ, ভ্যানে চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই পরিবারের ৭ জনের খাবার কোন রকমে যোগাড় করি । মাসে একদিনও ভাল তরকারী ছেলে পেলেদের মুখে উঠেনা। আমার মাতার ডায়রিয়া শুরু হলে তাকে ডিমলা হাসপাতালে ভর্তি করাই । ডাক্তার দেখেছেন, কিন্তু কোনো ওষুধ দেননি । সবকিছু বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। হাসপাতালের খাবারও ভালো নয়। সরকারি হাসপাতালে যদি চিকিৎসা ও ঔষধ না পাই, তাহলে আমরা গরিব মানুষ চিকিৎসার জন্য আসবো কেন? এ প্রশ্নের জবাব চান তিনি।
গয়াবাড়ী ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের ছাইদুল মাজেদুল ইসলাম জানান, আমার স্ত্রী প্রসব ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু ডেলিভারির সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ থেকে শুরু করে গ্লোবস পর্যন্ত সবকিছু বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। এমনকি স্যালাইনও হাসপাতালে নেই।
চিকিৎসা নিতে আসা পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের মৃত আ: রহমানের ছেলে মামুদ আলী বলেন, ডাক্তারের দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। অনেক সময় নার্স বা ওয়ার্ড বয়ই রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। আমরা যদি বেসরকারি হাসপাতালে যেতে পারতাম, তাহলে এখানে আসার প্রয়োজন হতো না।
বালাপাড়া ইউনিয়নের শোভানগঞ্জ গুচ্ছগ্রাম এলাকার মৃত কাদিমুদ্দিনের স্ত্রী হনুফা বেগম ৯০ পেড়োনো বয়সি বৃদ্ধা। কোন সন্তানাদি নাই তার। ভিক্ষা বৃত্তি ও অন্যের কাছে হাত পেতে কোন রকমের দুমুটো জোটে কপালে। শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে ৫ দিনে ২ দিন মাত্র ডাক্তারের দেখা পেয়েছেন । হাসপাতালে ভালমত না পাওয়ার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে জানাতে উপজেলা চত্বরে এসেছেন।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে রোগীদের ভোগান্তি প্রকট আকার ধারন করেছে । অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং জনবলের অভাব ও তদারকির ঘাটতির কারণে হাসপাতালটি সেবা দেওয়ার পরিবর্তে বিড়ম্বনার কারখানায় পরিণত হয়েছে। হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ঔষধ, ডাক্তার ও কর্মচারীর সংকট এবং জরুরি সরঞ্জামের অকার্যকারিতা রোগীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে ।
এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১০ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও, ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও উপজেলার ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৪৬ জন মানুষ কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । কাগজে-কলমে ৩২ টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও, বর্তমানে কার্যত উপস্থিত আছেন মাত্র একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ১ জন মেডিকেল অফিসার সহ ৩ জন । এছাড়া ডা: রিপন কুমার সরকার, ডা: নিরঞ্জন কুমার রায়, ডা: আসমানী সুলতানা, ডা: মো. আশিকুর রহমান ও ডা: মৌসুমী বৈষ্ণব সহ পাঁচজন চিকিৎসক অন্যত্র প্রেষণে থাকলেও বেতন ও সকল সুবিধাদি এই হাসপাতাল থেকেই নিচ্ছেন।
সরকারি প্রজ্ঞাপনের পরও হাসপাতালের প্রাঙ্গণে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের আনাগোনা উল্লেখযোগ্য লক্ষ্যনীয়, যা আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দেয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আউটডোরে ডাক্তার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত থাকার কথা থাকলেও দুপুর ১টার পর ডাক্তার থাকে না। তখন তারা প্রাইভেট চিকিৎসা সেবায় ব্যস্ত থাকেন । হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় প্রতিদিন দুই বেলা—অর্থাৎ সকাল-সন্ধ্যা অথবা রাতে রাউন্ড দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও এখানে সেটা হয় না। বেশিরভাগ ডাক্তার বাইরে সিজারিয়ান রোগী ও ব্যক্তিগত চেম্বার খুলে সেখানে ব্যস্ত থাকেন। অধিকাংশ ডাক্তার আবাসিক কোয়ার্টারে থাকেন না; সেখানে সন্ধ্যার পর উঠতি বয়সী তরুণদের আড্ডা লক্ষ্য করা যায়, যা হাসপাতালের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।
জেনারেটর দীর্ঘদিন ধরে অচল। বিদ্যুৎ চলে গেলে জরুরি বিভাগে মোমবাতি ও মোবাইলের আলোতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালের জুনিয়র মেকানিক ২৪ ঘণ্টা থাকার কথা থাকলেও থাকেন না। অকেজো হয়ে আছে এনালগ এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি সুবিধা। ফলে রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করাচ্ছেন ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত ।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য বরাদ্দ থাকলেও বাথরুম থেকে পানি সিঁড়ি দিয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে। দুর্গন্ধে আশপাশে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নার্সদের বিরুদ্ধেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে; তারা নাকি হর হামেশা রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এছাড়া নার্স ডিউটি রুমের পাশে ব্যবহৃত ইনজেকশনের সুচ, স্যালাইনের বোতল, গজ ও ওষুধের বাক্স ফেলে রাখা হয়। পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা অপরিচ্ছন্ন। লাইট ও পাখা মেরামতের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকল হয়ে যায়। রোগীদের খাবারের মানও নিম্নমানের; যা দেওয়া হয় তা খাওয়ার উপযুক্ত নয়। হাসপাতালের প্রবেশদ্বারসহ আশপাশ ময়লা-আবর্জনায় ভরা।
টিকিট ও ভর্তি ফি নিয়েও চলছে নিয়মবিরোধী কার্যক্রম। আউটডোর টিকিটের মূল্য সরকারি নিয়মে ৩ টাকা হলেও বাস্তবে নেওয়া হচ্ছে ৫ টাকা। ভর্তি ফি ৭ টাকা হওয়ার কথা, নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। দুটি অ্যাম্বুলেন্সের একটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। সরকারি ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা হলেও বাস্তবে ডিমলা থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (৮০ কিমি) পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকাপর্যন্ত । সকল প্রকার অনিয়মের কোন সূরাহা হচ্ছেনা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প, প, কর্মকর্তা অফিসে আসেন প্রয়োজনের কাগজপত্র স্বাক্ষর করেন মাত্র হাসপাতালে সমস্যা নিয়ে তেমন একটা মাথা ব্যাথা নেই তার। সমাধানের কথা বলে কালক্ষেপণ করছেন হাসপাতালের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। সকল অনিময়ের বিষয়ে স্থানীয় সচেতন যুবকরা আন্দোলন করে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে। আন্দোলনকারীরা হাসপাতালে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদুজ্জামান এর প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়েও বিষারাগাদ করেন । সম্প্রতি আন্দোলনকারী যুবকরা সক্রিয় হয়ে তাদের আন্দোলন জোরদার করেন। তাদেরই ন্যায্য দাবি কাল হয়ে দাঁড়ায়। গত ১ লা সেপ্টেম্বর মব সৃষ্টির নামে মামলা করা হয় নামীয় ৬ জন সহ অজ্ঞাত ২০ জনের নামে । গ্রেপ্তার করা হয় আন্দোলনকারী সদস্য হাবিবুর রহমান নামের এক যুবককে।
ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প,প কর্মকর্তা ডা: রাশেদুজ্জামান জানান, চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি আমি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছে। যারা পোস্টিং নিয়ে এই হাসপাতালে আসে তারা আবার উপর মহলে যোগাযোগ করে নিজের সুবিধামত স্থানে প্রেষণে চলে যায়। দায়ের কৃত মামলার বিষয়ে তিনি কথা বলতে নারাজ কারন এ বিষয়ে কথা বলতে উপর মহলের নিষেধ আছে বলে জানান তিনি ।
নীলফামারী সিভিল সার্জন আব্দুর রাজ্জাক জানান, ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডাক্তার ও ঔষধ সংকটের বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে। সম্প্রতি ডিমলা হাসপাতাল কর্তৃক দ্বায়ের কৃত মামলার বিষয়ে তিনি জানান, মব জাস্টিস তৈরি করে হাসপাতালে চিকিৎসা কাজে বাধা প্রদান করায় মামলা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। আশা করি স্বল্প সময়ের মধ্যে হাসপাতালে সকল জটিলতার অবসান হবে।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ডিমলা বাসীর চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রতিদিন শত শত রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসার নেয়ার জন্য আসে। ডাক্তার ও পর্যাপ্ত ঔষধ না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হয় । রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, ডাক্তার ও ঔষধের অভাব, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার কারণে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে গিয়ে তারা আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সাধারন রোগীরা । চিকিৎসা নিতে আসা এ সব রোগীরা পদে পদে সীমাহীন হয়রানী ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ।
উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের তিস্তার বিধৌত এলাকার ঝাড়সিংহেশ্বর গ্রামের দিনমজুর কেরামত আলী বলেন, আমি গরিব মানুষ, ভ্যানে চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই পরিবারের ৭ জনের খাবার কোন রকমে যোগাড় করি । মাসে একদিনও ভাল তরকারী ছেলে পেলেদের মুখে উঠেনা। আমার মাতার ডায়রিয়া শুরু হলে তাকে ডিমলা হাসপাতালে ভর্তি করাই । ডাক্তার দেখেছেন, কিন্তু কোনো ওষুধ দেননি । সবকিছু বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। হাসপাতালের খাবারও ভালো নয়। সরকারি হাসপাতালে যদি চিকিৎসা ও ঔষধ না পাই, তাহলে আমরা গরিব মানুষ চিকিৎসার জন্য আসবো কেন? এ প্রশ্নের জবাব চান তিনি।
গয়াবাড়ী ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের ছাইদুল মাজেদুল ইসলাম জানান, আমার স্ত্রী প্রসব ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু ডেলিভারির সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ থেকে শুরু করে গ্লোবস পর্যন্ত সবকিছু বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। এমনকি স্যালাইনও হাসপাতালে নেই।
চিকিৎসা নিতে আসা পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের মৃত আ: রহমানের ছেলে মামুদ আলী বলেন, ডাক্তারের দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। অনেক সময় নার্স বা ওয়ার্ড বয়ই রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। আমরা যদি বেসরকারি হাসপাতালে যেতে পারতাম, তাহলে এখানে আসার প্রয়োজন হতো না।
বালাপাড়া ইউনিয়নের শোভানগঞ্জ গুচ্ছগ্রাম এলাকার মৃত কাদিমুদ্দিনের স্ত্রী হনুফা বেগম ৯০ পেড়োনো বয়সি বৃদ্ধা। কোন সন্তানাদি নাই তার। ভিক্ষা বৃত্তি ও অন্যের কাছে হাত পেতে কোন রকমের দুমুটো জোটে কপালে। শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে ৫ দিনে ২ দিন মাত্র ডাক্তারের দেখা পেয়েছেন । হাসপাতালে ভালমত না পাওয়ার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে জানাতে উপজেলা চত্বরে এসেছেন।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে রোগীদের ভোগান্তি প্রকট আকার ধারন করেছে । অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং জনবলের অভাব ও তদারকির ঘাটতির কারণে হাসপাতালটি সেবা দেওয়ার পরিবর্তে বিড়ম্বনার কারখানায় পরিণত হয়েছে। হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ঔষধ, ডাক্তার ও কর্মচারীর সংকট এবং জরুরি সরঞ্জামের অকার্যকারিতা রোগীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে ।
এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১০ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও, ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও উপজেলার ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৪৬ জন মানুষ কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । কাগজে-কলমে ৩২ টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও, বর্তমানে কার্যত উপস্থিত আছেন মাত্র একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ১ জন মেডিকেল অফিসার সহ ৩ জন । এছাড়া ডা: রিপন কুমার সরকার, ডা: নিরঞ্জন কুমার রায়, ডা: আসমানী সুলতানা, ডা: মো. আশিকুর রহমান ও ডা: মৌসুমী বৈষ্ণব সহ পাঁচজন চিকিৎসক অন্যত্র প্রেষণে থাকলেও বেতন ও সকল সুবিধাদি এই হাসপাতাল থেকেই নিচ্ছেন।
সরকারি প্রজ্ঞাপনের পরও হাসপাতালের প্রাঙ্গণে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের আনাগোনা উল্লেখযোগ্য লক্ষ্যনীয়, যা আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দেয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আউটডোরে ডাক্তার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত থাকার কথা থাকলেও দুপুর ১টার পর ডাক্তার থাকে না। তখন তারা প্রাইভেট চিকিৎসা সেবায় ব্যস্ত থাকেন । হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় প্রতিদিন দুই বেলা—অর্থাৎ সকাল-সন্ধ্যা অথবা রাতে রাউন্ড দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও এখানে সেটা হয় না। বেশিরভাগ ডাক্তার বাইরে সিজারিয়ান রোগী ও ব্যক্তিগত চেম্বার খুলে সেখানে ব্যস্ত থাকেন। অধিকাংশ ডাক্তার আবাসিক কোয়ার্টারে থাকেন না; সেখানে সন্ধ্যার পর উঠতি বয়সী তরুণদের আড্ডা লক্ষ্য করা যায়, যা হাসপাতালের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।
জেনারেটর দীর্ঘদিন ধরে অচল। বিদ্যুৎ চলে গেলে জরুরি বিভাগে মোমবাতি ও মোবাইলের আলোতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালের জুনিয়র মেকানিক ২৪ ঘণ্টা থাকার কথা থাকলেও থাকেন না। অকেজো হয়ে আছে এনালগ এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি সুবিধা। ফলে রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করাচ্ছেন ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত ।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য বরাদ্দ থাকলেও বাথরুম থেকে পানি সিঁড়ি দিয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে। দুর্গন্ধে আশপাশে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নার্সদের বিরুদ্ধেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে; তারা নাকি হর হামেশা রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এছাড়া নার্স ডিউটি রুমের পাশে ব্যবহৃত ইনজেকশনের সুচ, স্যালাইনের বোতল, গজ ও ওষুধের বাক্স ফেলে রাখা হয়। পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা অপরিচ্ছন্ন। লাইট ও পাখা মেরামতের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকল হয়ে যায়। রোগীদের খাবারের মানও নিম্নমানের; যা দেওয়া হয় তা খাওয়ার উপযুক্ত নয়। হাসপাতালের প্রবেশদ্বারসহ আশপাশ ময়লা-আবর্জনায় ভরা।
টিকিট ও ভর্তি ফি নিয়েও চলছে নিয়মবিরোধী কার্যক্রম। আউটডোর টিকিটের মূল্য সরকারি নিয়মে ৩ টাকা হলেও বাস্তবে নেওয়া হচ্ছে ৫ টাকা। ভর্তি ফি ৭ টাকা হওয়ার কথা, নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। দুটি অ্যাম্বুলেন্সের একটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। সরকারি ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা হলেও বাস্তবে ডিমলা থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (৮০ কিমি) পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকাপর্যন্ত । সকল প্রকার অনিয়মের কোন সূরাহা হচ্ছেনা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প, প, কর্মকর্তা অফিসে আসেন প্রয়োজনের কাগজপত্র স্বাক্ষর করেন মাত্র হাসপাতালে সমস্যা নিয়ে তেমন একটা মাথা ব্যাথা নেই তার। সমাধানের কথা বলে কালক্ষেপণ করছেন হাসপাতালের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। সকল অনিময়ের বিষয়ে স্থানীয় সচেতন যুবকরা আন্দোলন করে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে। আন্দোলনকারীরা হাসপাতালে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদুজ্জামান এর প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়েও বিষারাগাদ করেন । সম্প্রতি আন্দোলনকারী যুবকরা সক্রিয় হয়ে তাদের আন্দোলন জোরদার করেন। তাদেরই ন্যায্য দাবি কাল হয়ে দাঁড়ায়। গত ১ লা সেপ্টেম্বর মব সৃষ্টির নামে মামলা করা হয় নামীয় ৬ জন সহ অজ্ঞাত ২০ জনের নামে । গ্রেপ্তার করা হয় আন্দোলনকারী সদস্য হাবিবুর রহমান নামের এক যুবককে।
ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প,প কর্মকর্তা ডা: রাশেদুজ্জামান জানান, চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি আমি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছে। যারা পোস্টিং নিয়ে এই হাসপাতালে আসে তারা আবার উপর মহলে যোগাযোগ করে নিজের সুবিধামত স্থানে প্রেষণে চলে যায়। দায়ের কৃত মামলার বিষয়ে তিনি কথা বলতে নারাজ কারন এ বিষয়ে কথা বলতে উপর মহলের নিষেধ আছে বলে জানান তিনি ।
নীলফামারী সিভিল সার্জন আব্দুর রাজ্জাক জানান, ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডাক্তার ও ঔষধ সংকটের বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে। সম্প্রতি ডিমলা হাসপাতাল কর্তৃক দ্বায়ের কৃত মামলার বিষয়ে তিনি জানান, মব জাস্টিস তৈরি করে হাসপাতালে চিকিৎসা কাজে বাধা প্রদান করায় মামলা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। আশা করি স্বল্প সময়ের মধ্যে হাসপাতালে সকল জটিলতার অবসান হবে।