ঘিওর (মানিকগঞ্জ) : ভাঙন আতঙ্কে কয়েকটি পরিবার -সংবাদ
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ধলেশ্বরী নদীর ভাঙন ভয়াবহ রুপ ধারন করেছে। এবারের ধলেশ^রী নদীর ভাঙ্গনে ৮টি গ্রামের বহু ঘড়, বাড়ি ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের স্বপ্ন ও শেকড়ের আশ্রয়। ঘিওর পূর্বপাড়া রাস্তাটি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে।
গ্রামবাসীদের আশঙ্কা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পুরো গ্রামটি মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে। এলাকার লোকজন ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে মানববন্ধন করেছে।
ঘিওর উপজেলার ৫টি এবং বালিয়াখোড়া ইউনিয়নে ৩টি গ্রামের অন্তত ৩ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিম কুমুল্লী গ্রাম। ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে অন্যত্র সরে যাচ্ছেন এ গ্রামের মানুষজন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় ভাঙন এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঘিওর পূর্বপাড়া রাস্তাটি ৮০ ভাগ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। তাদের আশঙ্কা অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে পুরো গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার কুস্তা, শ্রীধরনগর, ঘিওর পূর্বপাড়া, মাইলাগী, বৈলট এবং বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের পশ্চিম কুমুল্লী, পেচারকান্দা, পশ্চিম জাবরা ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। কালীগঙ্গার ভাঙনে গত তিন বছরে অর্ধশত পরিবার ভিটেহারা হয়েছে, শতাধিক পরিবার অর্ধ ভাঙনের কবলে কেউ ভিটে, কেউ ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চলতি মাসে ভাঙনের কবলে পড়েছে অন্তত ৮০টি বসতভিটা, ১৬০ বিঘা আবাদি জমি, ২টি রাস্তা, মসজিদ, দুটি স্থাপনা।
ঘিওর পূর্বপাড়া গ্রামের মোহন মিয়া জানান, ধলেশ^রী নদীর ভাঙনে আমাদের যাতায়াতের রাস্তাটি বিলিন হয়ে যাচ্ছে। তার পরেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আমাদের গ্রামটিও নদীতে বিলিন হয়ে যাবে। বালিয়াখোড়া গ্রামের পশ্চিম কুমুল্লী গ্রামের ভুক্তভোগী ছোরহাব উদ্দিন (৭০) বলেন, আমার ৬০ শতাংশ পৈতৃক ভিটেবাড়ির ৪০ শতাংশই নদীতে গেছে। বাকিটুকুও যায় যায়। আবাদি জমি, ফল গাছের বাগান সবকিছু নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো, সে চিন্তায় দিন কাটছে। সরকারের কাছে আকুল আবেদন আমাদের পুনর্বাসন ও নদীশাসনের ব্যবস্থা করা হোক।
লাভলু মিয়া বলেন, আমরা গরীব মানুষ। বৌ বাচ্ছা নিয়ে এখন কই যামু? ভিটেমাটি নাই, থাকমু কই, খামু কি?
গৃহবধূ রাশেদা বেগমের ভাষ্য, নদীর মাঝখানে আমাদের বাড়ি ছিল। সব গিলে খেয়ে ফেলেছে নদী। তিনবার সরিয়েছি। সরতে সরতে আর জায়গা নেই। এখন আশ্রয়েরও জায়গা নাই। ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা নিয়ে এক আতœীয়ের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেছি। প্রবীণ হাফিজ উদ্দিনের অভিযোগ, প্রতিদিন নদীতে শত শত বাল্কহেড বালু পরিবহন করায় ভাঙন আরও ভয়াবহ হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করলে তারা আমাদের উপর চড়াও হন। এই নদীর ভাঙনে নান্নু, ইদুল, দুদু, ইদ্রিস আলী, নোয়াব আলী, সুজাত মিয়া, নজরুল ইসলাম, খোরশেদ, আক্তার, মোক্তার হোসেন, আলমগীর, ইমান আলীসহ আরো বেশ কয়েকজনের বসত বাড়ি, গ্রামের রাস্তা, আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।
বালিয়াখোড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আওয়াল খান বলেন, কুমুল্লী গ্রামের মানুষ আজ দিশেহারা। তাদের ভিটেমাটি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। দ্রুত কার্যকর নদীশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আমরা ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। তারা জানিয়েছেন, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিবেন।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা নদীর কয়েকটি অংশে ভাঙন রোধে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। কুমুল্লী এলাকায় ভাঙনরোধে
সম্ভাব্য ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনকবলিত স্থানগুলোতে জিওব্যাগ ফেলা এবং দীর্ঘমেয়াদি নদীশাসন পরিকল্পনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। আশা করছি দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলার মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু হবে।
ঘিওর (মানিকগঞ্জ) : ভাঙন আতঙ্কে কয়েকটি পরিবার -সংবাদ
সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ধলেশ্বরী নদীর ভাঙন ভয়াবহ রুপ ধারন করেছে। এবারের ধলেশ^রী নদীর ভাঙ্গনে ৮টি গ্রামের বহু ঘড়, বাড়ি ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের স্বপ্ন ও শেকড়ের আশ্রয়। ঘিওর পূর্বপাড়া রাস্তাটি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে।
গ্রামবাসীদের আশঙ্কা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পুরো গ্রামটি মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে। এলাকার লোকজন ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে মানববন্ধন করেছে।
ঘিওর উপজেলার ৫টি এবং বালিয়াখোড়া ইউনিয়নে ৩টি গ্রামের অন্তত ৩ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিম কুমুল্লী গ্রাম। ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে অন্যত্র সরে যাচ্ছেন এ গ্রামের মানুষজন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় ভাঙন এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঘিওর পূর্বপাড়া রাস্তাটি ৮০ ভাগ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। তাদের আশঙ্কা অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে পুরো গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার কুস্তা, শ্রীধরনগর, ঘিওর পূর্বপাড়া, মাইলাগী, বৈলট এবং বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের পশ্চিম কুমুল্লী, পেচারকান্দা, পশ্চিম জাবরা ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। কালীগঙ্গার ভাঙনে গত তিন বছরে অর্ধশত পরিবার ভিটেহারা হয়েছে, শতাধিক পরিবার অর্ধ ভাঙনের কবলে কেউ ভিটে, কেউ ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চলতি মাসে ভাঙনের কবলে পড়েছে অন্তত ৮০টি বসতভিটা, ১৬০ বিঘা আবাদি জমি, ২টি রাস্তা, মসজিদ, দুটি স্থাপনা।
ঘিওর পূর্বপাড়া গ্রামের মোহন মিয়া জানান, ধলেশ^রী নদীর ভাঙনে আমাদের যাতায়াতের রাস্তাটি বিলিন হয়ে যাচ্ছে। তার পরেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আমাদের গ্রামটিও নদীতে বিলিন হয়ে যাবে। বালিয়াখোড়া গ্রামের পশ্চিম কুমুল্লী গ্রামের ভুক্তভোগী ছোরহাব উদ্দিন (৭০) বলেন, আমার ৬০ শতাংশ পৈতৃক ভিটেবাড়ির ৪০ শতাংশই নদীতে গেছে। বাকিটুকুও যায় যায়। আবাদি জমি, ফল গাছের বাগান সবকিছু নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো, সে চিন্তায় দিন কাটছে। সরকারের কাছে আকুল আবেদন আমাদের পুনর্বাসন ও নদীশাসনের ব্যবস্থা করা হোক।
লাভলু মিয়া বলেন, আমরা গরীব মানুষ। বৌ বাচ্ছা নিয়ে এখন কই যামু? ভিটেমাটি নাই, থাকমু কই, খামু কি?
গৃহবধূ রাশেদা বেগমের ভাষ্য, নদীর মাঝখানে আমাদের বাড়ি ছিল। সব গিলে খেয়ে ফেলেছে নদী। তিনবার সরিয়েছি। সরতে সরতে আর জায়গা নেই। এখন আশ্রয়েরও জায়গা নাই। ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা নিয়ে এক আতœীয়ের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেছি। প্রবীণ হাফিজ উদ্দিনের অভিযোগ, প্রতিদিন নদীতে শত শত বাল্কহেড বালু পরিবহন করায় ভাঙন আরও ভয়াবহ হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করলে তারা আমাদের উপর চড়াও হন। এই নদীর ভাঙনে নান্নু, ইদুল, দুদু, ইদ্রিস আলী, নোয়াব আলী, সুজাত মিয়া, নজরুল ইসলাম, খোরশেদ, আক্তার, মোক্তার হোসেন, আলমগীর, ইমান আলীসহ আরো বেশ কয়েকজনের বসত বাড়ি, গ্রামের রাস্তা, আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।
বালিয়াখোড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আওয়াল খান বলেন, কুমুল্লী গ্রামের মানুষ আজ দিশেহারা। তাদের ভিটেমাটি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। দ্রুত কার্যকর নদীশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আমরা ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। তারা জানিয়েছেন, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিবেন।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা নদীর কয়েকটি অংশে ভাঙন রোধে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। কুমুল্লী এলাকায় ভাঙনরোধে
সম্ভাব্য ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনকবলিত স্থানগুলোতে জিওব্যাগ ফেলা এবং দীর্ঘমেয়াদি নদীশাসন পরিকল্পনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। আশা করছি দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলার মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু হবে।