রাজশাহীর পদ্মা নদীতীরে প্রাতঃকালীন বাজারে মিলছে টাটকা মাছ, চাহিদা প্রচুর
রাজশাহী শহরের কোল ঘেষে বয়ে চলেছে পদ্মা নদী। দীর্ঘ সময়ের নিরবতা ভেঙে বর্ষায় জীবন ফিরে পায় এই পদ্মা। আর সেই সঙ্গে জেগে ওঠে পদ্মা পাড়ের জেলে পল্লীগুলো। জাল ছুড়লেই ওঠে আশা ভোরের নরম সূর্যের আলোয় ভেসে ওঠে ঝিলমিল করে মাছ। ভোরের হাওয়ায় ভেসে ওঠে আনন্দের কলরব। শুকিয়ে যাওয়ার দিনগুলো মুছে নদী যেনো নতুন করে বাঁচতে শেখায় সবাইকে ।
রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুরে পদ্মা নদীর তীরে জমে উঠেছে মাছের পল্লী। জেলেদের জালে ওঠা টাটকা নদীর মাছ সাজানো ঝুড়িতে ভোরের আলোয় সেই মাছ কিনতে ক্রেতাদের কোলাহলে মুখরিত নদী তীরে টাটকা মাছের গন্ধে ভরে ওঠেছে সকাল। নদী যেনো ফিরিয়ে দিয়েছে প্রাণ আর উৎসবের আনন্দ ।
নদী তীরে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এক বিশেষ আয়োজন। প্রতিদিন লালন শাহ পার্ক থেকে টি-বাধে বসে প্রাতঃকালীন মাছের বাজার। ভোর ৫টা-৮টা পর্যন্ত চলে এই বাজার। মাত্র তিন ঘণ্টার এই বাজারকে ঘিরে নদী পাড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। এই বাজার শুধু জেলেদের জীবিকার ভরসা নয়, ক্রেতাদের কাছে তাজা মাছ পাওয়ার একমাত্র নির্ভরযোগ্য স্থান।
সরেজমিনে গিয়ে গত শনিবার ভোরে দেখা যায়, নদীর ঘাটে ভিড় করেছেন জেলেরা। রাতভর পদ্মায় মাছ ধরে তারা হাড়িভর্তি মাছ নিয়ে বাজারে হাজির হচ্ছেন। বাজারের এক পাশে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, আরেক পাশে দরদাম করছেন ক্রেতারা। পদ্মার মনোরম বাতাস, ভোরের আলো আর মাছের গন্ধে যেনো ভিন্ন এক আমেজ তৈরি হয়। এই বাজারে মূলত পদ্মার টাটকা মাছ বিক্রি হয়। বাঘাইড়, গুচি, গজার, শোল, পাবদা, চিতল, রিটা, মলা, টেংরা, পিয়ালি, বাছা, পাতাশি, বেলে, পুটি ও ছোট চিংড়িসহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। জেলেদের মতে, মাঝে মাঝে ইলিশও ধরা পড়ে। মাছের আকার ও মান অনুযায়ী দাম প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। এখানকার বিশেষ সুবিধা হলো ক্রেতারা মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে প্রতি কেজি মাছ কেটে, ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন।
রিমা ও পলি নামের দুই নারী বাজারে মাছ কেটে পরিষ্কার করার কাজ করেন। তারা বলেন, ‘‘প্রতিদিনই খুচরা ক্রেতারা আসেন। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আসেন পদ্মার তাজা মাছ কিনতে। আমরা মাছ কেটে দিয়ে তাদের সুবিধা দিচ্ছি।’’
রাজশাহীর পবা উপজেলার মনিরুল হক দম্পতি মাছ কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আজ তিন কেজি মাছ কিনেছি। আমরা প্রায়ই এখানে পদ্মার টাটকা মাছ কিনতে আসি। কারণ পদ্মার টাটকা মাছের স্বাদ আলাদা, কোনো ফরমালিন নেই। দামও বাজারের চেয়ে কম। এখানে মাছ কেটে-ধুয়ে পরিষ্কার করার সুযোগ রয়েছে। বাড়িতে আর মাছ কাটার ঝামেলা থাকে না।’’
পুলিশ সদস্য এনামুল হক পরিবার নিয়ে মাছ কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ব্যস্ততার কারণে বাজারে যেতে পারি না। তাই একসঙ্গে তিন কেজি মাছ কিনলাম। দামও বেশ সাশ্রয়ী। ছোট মাছ কাটতে ঝামেলা মনে হয়। তাই মাছ কেটে পরিষ্কার করে নিলাম। এক সপ্তাহের জন্য ফ্রিজে রেখে খাবো।’’
রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সাহেব আলী বন্ধুদের সঙ্গে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ভোরে নদীর পাড়ে এসে মাছ কেনার আনন্দই আলাদা। দর-দাম করে মাছ কিনলাম, আর পদ্মার শীতল হাওয়া উপভোগ করলাম।’’
বাজারে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক জেলে মাছ বিক্রি করেন। জেলেরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন গড়ে লাখ টাকার বেশি লেনদেন হয়। এই বাজার তাদের জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস।
পদ্মাপাড়ের জেলে জামিল হোসেন বলেন, ‘‘পদ্মার পানি বাড়লে মাছ কম ধরা পড়ে। আর পানি কমলে বেশি মাছ পাওয়া যায়। শীতের সময় ইলিশ বেশি পাওয়া যায়। গত সপ্তাহে দুটি জাটকা ইলিশ ধরা পড়েছিল।’’
জেলে রহমান বলেন, ‘‘আজ তিনটি গজার মাছ পেয়েছিলাম। ছয়শ’ টাকা কেজি দরে সাড়ে চার কেজি মাছ ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করেছি। সোমবার,(০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) তিন হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি।’’
অন্য এক জেলে শান্ত বলেন, ‘‘পদ্মায় এখন পানি বেড়েছে তাই মাছ একটু কম পাওয়া যাচ্ছে। চিংড়ি, পিয়ালি, গুচি, টেংরা ও পুঁটিমাছ মিলে ৬ কেজি মাছ পেয়েছিলাম। সাড়ে আটশ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।’’
রবিউল ইসলাম নামে এক জেলে বলেন, ‘‘পদ্মায় মাছ ধরা শুরু হয় রাত থেকেই। আবহাওয়া ভালো থাকলে সন্ধ্যার পর প্রস্তুতি নেই। রাত ১০টার দিকে নৌকা নিয়ে নদীতে যাই, সারারাত মাছ ধরি। ভোরে বাজারে এনে বিক্রি করি। আড়ৎ বাদ দিয়ে সরাসরি ক্রেতার কাছে বিক্রি করায় লাভ বেশি হয়। খাজনাও নেই, তাই খরচ কম।’’
প্রতিদিন ভোরে পদ্মার পাড়ের এই মাছের বাজার এখন রাজশাহীর মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। শুধু মাছ কেনা নয়, অনেকে ভোরের সৌন্দর্য উপভোগ করতেও আসেন। ভোরের নরম রোদ, পদ্মার সতেজ হাওয়া আর মাছের গন্ধ মিলে তৈরি হয় অনন্য পরিবেশ।
রাজশাহীর পদ্মা নদীতীরে প্রাতঃকালীন বাজারে মিলছে টাটকা মাছ, চাহিদা প্রচুর
সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাজশাহী শহরের কোল ঘেষে বয়ে চলেছে পদ্মা নদী। দীর্ঘ সময়ের নিরবতা ভেঙে বর্ষায় জীবন ফিরে পায় এই পদ্মা। আর সেই সঙ্গে জেগে ওঠে পদ্মা পাড়ের জেলে পল্লীগুলো। জাল ছুড়লেই ওঠে আশা ভোরের নরম সূর্যের আলোয় ভেসে ওঠে ঝিলমিল করে মাছ। ভোরের হাওয়ায় ভেসে ওঠে আনন্দের কলরব। শুকিয়ে যাওয়ার দিনগুলো মুছে নদী যেনো নতুন করে বাঁচতে শেখায় সবাইকে ।
রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুরে পদ্মা নদীর তীরে জমে উঠেছে মাছের পল্লী। জেলেদের জালে ওঠা টাটকা নদীর মাছ সাজানো ঝুড়িতে ভোরের আলোয় সেই মাছ কিনতে ক্রেতাদের কোলাহলে মুখরিত নদী তীরে টাটকা মাছের গন্ধে ভরে ওঠেছে সকাল। নদী যেনো ফিরিয়ে দিয়েছে প্রাণ আর উৎসবের আনন্দ ।
নদী তীরে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এক বিশেষ আয়োজন। প্রতিদিন লালন শাহ পার্ক থেকে টি-বাধে বসে প্রাতঃকালীন মাছের বাজার। ভোর ৫টা-৮টা পর্যন্ত চলে এই বাজার। মাত্র তিন ঘণ্টার এই বাজারকে ঘিরে নদী পাড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। এই বাজার শুধু জেলেদের জীবিকার ভরসা নয়, ক্রেতাদের কাছে তাজা মাছ পাওয়ার একমাত্র নির্ভরযোগ্য স্থান।
সরেজমিনে গিয়ে গত শনিবার ভোরে দেখা যায়, নদীর ঘাটে ভিড় করেছেন জেলেরা। রাতভর পদ্মায় মাছ ধরে তারা হাড়িভর্তি মাছ নিয়ে বাজারে হাজির হচ্ছেন। বাজারের এক পাশে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, আরেক পাশে দরদাম করছেন ক্রেতারা। পদ্মার মনোরম বাতাস, ভোরের আলো আর মাছের গন্ধে যেনো ভিন্ন এক আমেজ তৈরি হয়। এই বাজারে মূলত পদ্মার টাটকা মাছ বিক্রি হয়। বাঘাইড়, গুচি, গজার, শোল, পাবদা, চিতল, রিটা, মলা, টেংরা, পিয়ালি, বাছা, পাতাশি, বেলে, পুটি ও ছোট চিংড়িসহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। জেলেদের মতে, মাঝে মাঝে ইলিশও ধরা পড়ে। মাছের আকার ও মান অনুযায়ী দাম প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। এখানকার বিশেষ সুবিধা হলো ক্রেতারা মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে প্রতি কেজি মাছ কেটে, ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন।
রিমা ও পলি নামের দুই নারী বাজারে মাছ কেটে পরিষ্কার করার কাজ করেন। তারা বলেন, ‘‘প্রতিদিনই খুচরা ক্রেতারা আসেন। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আসেন পদ্মার তাজা মাছ কিনতে। আমরা মাছ কেটে দিয়ে তাদের সুবিধা দিচ্ছি।’’
রাজশাহীর পবা উপজেলার মনিরুল হক দম্পতি মাছ কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আজ তিন কেজি মাছ কিনেছি। আমরা প্রায়ই এখানে পদ্মার টাটকা মাছ কিনতে আসি। কারণ পদ্মার টাটকা মাছের স্বাদ আলাদা, কোনো ফরমালিন নেই। দামও বাজারের চেয়ে কম। এখানে মাছ কেটে-ধুয়ে পরিষ্কার করার সুযোগ রয়েছে। বাড়িতে আর মাছ কাটার ঝামেলা থাকে না।’’
পুলিশ সদস্য এনামুল হক পরিবার নিয়ে মাছ কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ব্যস্ততার কারণে বাজারে যেতে পারি না। তাই একসঙ্গে তিন কেজি মাছ কিনলাম। দামও বেশ সাশ্রয়ী। ছোট মাছ কাটতে ঝামেলা মনে হয়। তাই মাছ কেটে পরিষ্কার করে নিলাম। এক সপ্তাহের জন্য ফ্রিজে রেখে খাবো।’’
রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সাহেব আলী বন্ধুদের সঙ্গে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ভোরে নদীর পাড়ে এসে মাছ কেনার আনন্দই আলাদা। দর-দাম করে মাছ কিনলাম, আর পদ্মার শীতল হাওয়া উপভোগ করলাম।’’
বাজারে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক জেলে মাছ বিক্রি করেন। জেলেরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন গড়ে লাখ টাকার বেশি লেনদেন হয়। এই বাজার তাদের জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস।
পদ্মাপাড়ের জেলে জামিল হোসেন বলেন, ‘‘পদ্মার পানি বাড়লে মাছ কম ধরা পড়ে। আর পানি কমলে বেশি মাছ পাওয়া যায়। শীতের সময় ইলিশ বেশি পাওয়া যায়। গত সপ্তাহে দুটি জাটকা ইলিশ ধরা পড়েছিল।’’
জেলে রহমান বলেন, ‘‘আজ তিনটি গজার মাছ পেয়েছিলাম। ছয়শ’ টাকা কেজি দরে সাড়ে চার কেজি মাছ ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করেছি। সোমবার,(০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) তিন হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি।’’
অন্য এক জেলে শান্ত বলেন, ‘‘পদ্মায় এখন পানি বেড়েছে তাই মাছ একটু কম পাওয়া যাচ্ছে। চিংড়ি, পিয়ালি, গুচি, টেংরা ও পুঁটিমাছ মিলে ৬ কেজি মাছ পেয়েছিলাম। সাড়ে আটশ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।’’
রবিউল ইসলাম নামে এক জেলে বলেন, ‘‘পদ্মায় মাছ ধরা শুরু হয় রাত থেকেই। আবহাওয়া ভালো থাকলে সন্ধ্যার পর প্রস্তুতি নেই। রাত ১০টার দিকে নৌকা নিয়ে নদীতে যাই, সারারাত মাছ ধরি। ভোরে বাজারে এনে বিক্রি করি। আড়ৎ বাদ দিয়ে সরাসরি ক্রেতার কাছে বিক্রি করায় লাভ বেশি হয়। খাজনাও নেই, তাই খরচ কম।’’
প্রতিদিন ভোরে পদ্মার পাড়ের এই মাছের বাজার এখন রাজশাহীর মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। শুধু মাছ কেনা নয়, অনেকে ভোরের সৌন্দর্য উপভোগ করতেও আসেন। ভোরের নরম রোদ, পদ্মার সতেজ হাওয়া আর মাছের গন্ধ মিলে তৈরি হয় অনন্য পরিবেশ।