চায়ের স্বর্গরাজ্য মৌলভীবাজার জেলার বিস্তীর্ণ চা-বাগান শুধু চা উৎপাদনেই নয়, ধীরে ধীরে বহুমুখী কৃষি উদ্যোগের ক্ষেত্রেও পরিচিত হয়ে ওঠছে। সাম্প্রতিক সময়ে জেলার বিভিন্ন চা-বাগানে চায়ের পাশাপাশি সাথি ফসল হিসেবে গোলমরিচ চাষ শুরু হয়েছে। পাহাড়ি উঁচু-নিচু জমি, উর্বর মাটি এবং আর্দ্র আবহাওয়া গোলমরিচ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় স্থানীয়ভাবে এ নিয়ে আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে।
গোলমরিচ একটি লতানো উদ্ভিদ, যা সাধারণত বড় গাছকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে। চা-বাগানের ছায়াদানকারী গাছগুলো এ জন্য আদর্শ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাধারণত আগস্ট মাস থেকে গাছে ফল ধরতে শুরু করে এবং কয়েক মাসের মধ্যে তা সংগ্রহযোগ্য হয়। ফেব্রুয়ারির দিকে ফল পরিপূর্ণভাবে পাকে। প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক লতা থেকে গড়ে চার থেকে পাঁচ কেজি গোলমরিচ পাওয়া যায়। সংগ্রহের পর ফলগুলো ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করে শুকাতে হয়। এক সপ্তাহ রোদে শুকানোর পর বাজারজাতের উপযোগী হয় কালো বা সাদা গোলমরিচ।
জেলার শ্রীমঙ্গল, রাজনগর, কমলগঞ্জ এবং বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন চা-বাগানে সীমিত আকারে গোলমরিচ চাষ হচ্ছে। চা-বাগানের বাংলো এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষামূলকভাবে এই মসলার চাষ হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উদ্যোগে প্রদর্শনী প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যার ফলে চাষের প্রতি নতুন করে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন চা-বাগান ও গ্রামীণ এলাকায় প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে গোলমরিচ চাষ করা হচ্ছে। গোলমরিচ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় মসলা। রান্নায় স্বাদ ও ঘ্রাণ বৃদ্ধির জন্য এটি অপরিহার্য। বর্তমানে দেশের চাহিদার প্রায় পুরো অংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বৃদ্ধি হলে তা শুধু আমদানি নির্ভরতা কমাবে না, বরং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়েও সহায়ক হবে।
বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি কালো গোলমরিচের দাম প্রায় ১,২০০ টাকা এবং সাদা গোলমরিচের দাম প্রায় ১,৬০০ টাকা। অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় কৃষকেরা সাথি ফসল হিসেবে এর চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠছেন। চা-বাগানের অবকাঠামো গোলমরিচ চাষের জন্য উপযোগী। বাগানের ছায়া প্রদানকারী গাছগুলো প্রাকৃতিকভাবে লতাগাছের আশ্রয় হিসেবে কাজ করছে। ফলে অতিরিক্ত জমি বা অবকাঠামো ছাড়াই সহজে চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ মনে করছে, পাহাড়ি এলাকার মাটি ও মৌলভীবাজারের জলবায়ু এই মসলাজাতীয় ফসলের জন্য আদর্শ। সঠিক পরিকল্পনা ও কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রমের মাধ্যমে গোলমরিচ চাষকে বাণিজ্যিকভাবে প্রসারিত করা সম্ভব। এতে জেলার কৃষি অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। মৌলভীবাজারে গোলমরিচ চাষ সেই বহুমুখীকরণের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এটি কেবল অতিরিক্ত আয়ের উৎস নয়, বরং দেশের মসলা উৎপাদন ও স্বনির্ভরতার পথকেও শক্তিশালী করতে পারে। স্থানীয়রা মনে করেন,সঠিক পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা পাওয়া গেলে মৌলভীবাজারের চা-বাগানগুলোতে গোলমরিচ চাষ আগামী দিনে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন অধ্যায় রচনা করতে পারে।
মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
চায়ের স্বর্গরাজ্য মৌলভীবাজার জেলার বিস্তীর্ণ চা-বাগান শুধু চা উৎপাদনেই নয়, ধীরে ধীরে বহুমুখী কৃষি উদ্যোগের ক্ষেত্রেও পরিচিত হয়ে ওঠছে। সাম্প্রতিক সময়ে জেলার বিভিন্ন চা-বাগানে চায়ের পাশাপাশি সাথি ফসল হিসেবে গোলমরিচ চাষ শুরু হয়েছে। পাহাড়ি উঁচু-নিচু জমি, উর্বর মাটি এবং আর্দ্র আবহাওয়া গোলমরিচ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় স্থানীয়ভাবে এ নিয়ে আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে।
গোলমরিচ একটি লতানো উদ্ভিদ, যা সাধারণত বড় গাছকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে। চা-বাগানের ছায়াদানকারী গাছগুলো এ জন্য আদর্শ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাধারণত আগস্ট মাস থেকে গাছে ফল ধরতে শুরু করে এবং কয়েক মাসের মধ্যে তা সংগ্রহযোগ্য হয়। ফেব্রুয়ারির দিকে ফল পরিপূর্ণভাবে পাকে। প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক লতা থেকে গড়ে চার থেকে পাঁচ কেজি গোলমরিচ পাওয়া যায়। সংগ্রহের পর ফলগুলো ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করে শুকাতে হয়। এক সপ্তাহ রোদে শুকানোর পর বাজারজাতের উপযোগী হয় কালো বা সাদা গোলমরিচ।
জেলার শ্রীমঙ্গল, রাজনগর, কমলগঞ্জ এবং বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন চা-বাগানে সীমিত আকারে গোলমরিচ চাষ হচ্ছে। চা-বাগানের বাংলো এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষামূলকভাবে এই মসলার চাষ হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উদ্যোগে প্রদর্শনী প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যার ফলে চাষের প্রতি নতুন করে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন চা-বাগান ও গ্রামীণ এলাকায় প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে গোলমরিচ চাষ করা হচ্ছে। গোলমরিচ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় মসলা। রান্নায় স্বাদ ও ঘ্রাণ বৃদ্ধির জন্য এটি অপরিহার্য। বর্তমানে দেশের চাহিদার প্রায় পুরো অংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বৃদ্ধি হলে তা শুধু আমদানি নির্ভরতা কমাবে না, বরং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়েও সহায়ক হবে।
বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি কালো গোলমরিচের দাম প্রায় ১,২০০ টাকা এবং সাদা গোলমরিচের দাম প্রায় ১,৬০০ টাকা। অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় কৃষকেরা সাথি ফসল হিসেবে এর চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠছেন। চা-বাগানের অবকাঠামো গোলমরিচ চাষের জন্য উপযোগী। বাগানের ছায়া প্রদানকারী গাছগুলো প্রাকৃতিকভাবে লতাগাছের আশ্রয় হিসেবে কাজ করছে। ফলে অতিরিক্ত জমি বা অবকাঠামো ছাড়াই সহজে চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ মনে করছে, পাহাড়ি এলাকার মাটি ও মৌলভীবাজারের জলবায়ু এই মসলাজাতীয় ফসলের জন্য আদর্শ। সঠিক পরিকল্পনা ও কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রমের মাধ্যমে গোলমরিচ চাষকে বাণিজ্যিকভাবে প্রসারিত করা সম্ভব। এতে জেলার কৃষি অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। মৌলভীবাজারে গোলমরিচ চাষ সেই বহুমুখীকরণের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এটি কেবল অতিরিক্ত আয়ের উৎস নয়, বরং দেশের মসলা উৎপাদন ও স্বনির্ভরতার পথকেও শক্তিশালী করতে পারে। স্থানীয়রা মনে করেন,সঠিক পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা পাওয়া গেলে মৌলভীবাজারের চা-বাগানগুলোতে গোলমরিচ চাষ আগামী দিনে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন অধ্যায় রচনা করতে পারে।