রংপুর নগরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় ‘অকৃতকার্য’ হওয়ায় শ্রেণিকক্ষে ঢুকে অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)-এর এক নেতার বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে ৪ সেপ্টেম্বর নগরের হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ে, তবে এটি প্রকাশ্যে এসেছে মঙ্গলবার। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
পরশুরাম থানার ওসি মাইদুল ইসলাম জানান, এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বাগছাস নেতার বিরুদ্ধে অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু বাগছাস নেতা ইমতিয়াজ আহম্মদ (ইমতি)। তিনি রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক এবং হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক।
ঘটনার ১৯ দিন পার হলেও বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখনও কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রংপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, “বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতনের কোনও সুযোগ নেই। এটি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে বিষয়টি জানাননি। আমি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয়রা জানান, ইমতিয়াজ ফেব্রুয়ারিতে হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক হন। তখন তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর ১৮ জুলাই বাগছাসের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক হন তিনি।
হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২৩০ শিক্ষার্থী রয়েছে। মারধরের শিকার দশম শ্রেণির এক ছাত্র জানিয়েছেন, “ঘটনার দিন বিদ্যালয়ের টিফিন শেষে কৃষি ক্লাস চলছিল। এ সময় ইমতিয়াজ মোটরসাইকেল নিয়ে বিদ্যালয়ে এসে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির কক্ষে যান। সেখানে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফল জানতে চান। যেসব শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের একে একে ডেকে বেধড়ক পেটান তিনি। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ছিলেন, কিন্তু তারা প্রতিবাদ করেননি।”
অন্য এক দশম শ্রেণির ছাত্র বলেন, “ক্লাস চলাকালে পেছনের দরজা দিয়ে উনি ঢুকে বলেন, ‘কে কে ফেল করছ, দাঁড়াও’। আমরা দাঁড়াইলে একেকজন করে ডাকতে থাকেন এবং মারতে থাকেন। মেয়েদেরও মারছে। আমাদের শরীরের অংশ লাল হয়ে গেছে। অষ্টম ও নবম ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মারতে মারতে বেত ভেঙে ফেলেছেন। আমাদের অশ্লীল ভাষায়ও কথা বলেছেন।”
একই শ্রেণির আরও একজন ছাত্র বলেন, “আমরা বই পেয়েছি এপ্রিলে। ক্লাস করতে পেরেছি অল্প কয়েক দিন। আবার প্রশ্ন ছিল নতুন। এ কারণে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা কঠিন ছিল। বই দেরিতে দেওয়া ও পাঠ্যক্রম নতুন হওয়ায় ক্লাসের তিন ভাগের আড়াই ভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়।”
এক ছাত্রী বলেন, “ক্লাস চলছিল, হঠাৎ পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়েন। আমাদের বলেন, কে কে ফেল করছো, দাঁড়াও। আমরা দাঁড়াইলে একে একে মারতে থাকেন।”
এক দশম শ্রেণির ছাত্র জানিয়েছেন, মারধরের বিষয়টি বাড়িতে পরিবারকে না বলতে এক স্যার নিষেধ করেছিলেন। তাই তারা বিষয়টি বাড়িতে বলেননি।
বিদ্যালয়ের পাশের এলাকার বাসিন্দা আনিচুর রহমান বলেন, “ইমতিয়াজ আমার ভাতিজাকেও মারছে। সে মারার কে, সে কি শিক্ষক? আমরা তার বিচার চাই। এটা কী ধরনের কথা, ক্লাসে ঢুকে মারবে!”
হারাটি উচ্চবিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য জাহেদুল ইসলাম বলেন, “আমি তো টানা দুইবার সদস্য ছিলাম। আমাদের সভাপতি বা আমরা কখনও এমন করিনি। সে (ইমতিয়াজ) একটা বাচ্চা ছেলে। কীসের ক্ষমতা বলে আমাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের পেটায়?”
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা দাবি করেছেন, ঘটনাস্থলে ৫০ এর বেশি শিক্ষার্থীকে পেটানো হয়েছে। এর মধ্যে ১০–১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন। জ্বর ও ব্যথা না কমায় এক ছাত্রীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। বেতের আঘাতে অনেকের হাত ফুলে গেছে।
ঘটনার দুই দিন পর অভিভাবক ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের কাছে বিচার ও জবাব চান। তবে প্রধান শিক্ষক কোনো পদক্ষেপ নেননি।
ইমতিয়াজ আহম্মদের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমানের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি জরুরি কাজে ব্যস্ত ছিলেন বলে ফোন কেটে দেন। পরে ফোন করলে তিনি আর ধরেননি।
হারাটি এলাকার বাসিন্দা ও মহানগর বিএনপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, “এটি কোনোভাবেই শাসন নয়, এটি শিক্ষার্থী নির্যাতন; একইসঙ্গে ফৌজদারি অপরাধ। প্রধান শিক্ষকের উচিৎ ছিল বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু তিনি তা না করে ধামাচাপা দিয়েছেন।”
পরশুরাম থানার ওসি মাইদুল ইসলাম বলেন, “ইমতিয়াজ সভাপতি হিসেবে বিদ্যালয়ে গিয়ে শাসন করেছিলেন। একজন অভিভাবক অনলাইনে জিডি করেছেন। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।”
মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রংপুর নগরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় ‘অকৃতকার্য’ হওয়ায় শ্রেণিকক্ষে ঢুকে অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)-এর এক নেতার বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে ৪ সেপ্টেম্বর নগরের হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ে, তবে এটি প্রকাশ্যে এসেছে মঙ্গলবার। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
পরশুরাম থানার ওসি মাইদুল ইসলাম জানান, এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বাগছাস নেতার বিরুদ্ধে অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু বাগছাস নেতা ইমতিয়াজ আহম্মদ (ইমতি)। তিনি রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক এবং হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক।
ঘটনার ১৯ দিন পার হলেও বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখনও কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রংপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, “বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতনের কোনও সুযোগ নেই। এটি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে বিষয়টি জানাননি। আমি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয়রা জানান, ইমতিয়াজ ফেব্রুয়ারিতে হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক হন। তখন তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর ১৮ জুলাই বাগছাসের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক হন তিনি।
হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২৩০ শিক্ষার্থী রয়েছে। মারধরের শিকার দশম শ্রেণির এক ছাত্র জানিয়েছেন, “ঘটনার দিন বিদ্যালয়ের টিফিন শেষে কৃষি ক্লাস চলছিল। এ সময় ইমতিয়াজ মোটরসাইকেল নিয়ে বিদ্যালয়ে এসে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির কক্ষে যান। সেখানে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফল জানতে চান। যেসব শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের একে একে ডেকে বেধড়ক পেটান তিনি। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ছিলেন, কিন্তু তারা প্রতিবাদ করেননি।”
অন্য এক দশম শ্রেণির ছাত্র বলেন, “ক্লাস চলাকালে পেছনের দরজা দিয়ে উনি ঢুকে বলেন, ‘কে কে ফেল করছ, দাঁড়াও’। আমরা দাঁড়াইলে একেকজন করে ডাকতে থাকেন এবং মারতে থাকেন। মেয়েদেরও মারছে। আমাদের শরীরের অংশ লাল হয়ে গেছে। অষ্টম ও নবম ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মারতে মারতে বেত ভেঙে ফেলেছেন। আমাদের অশ্লীল ভাষায়ও কথা বলেছেন।”
একই শ্রেণির আরও একজন ছাত্র বলেন, “আমরা বই পেয়েছি এপ্রিলে। ক্লাস করতে পেরেছি অল্প কয়েক দিন। আবার প্রশ্ন ছিল নতুন। এ কারণে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা কঠিন ছিল। বই দেরিতে দেওয়া ও পাঠ্যক্রম নতুন হওয়ায় ক্লাসের তিন ভাগের আড়াই ভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়।”
এক ছাত্রী বলেন, “ক্লাস চলছিল, হঠাৎ পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়েন। আমাদের বলেন, কে কে ফেল করছো, দাঁড়াও। আমরা দাঁড়াইলে একে একে মারতে থাকেন।”
এক দশম শ্রেণির ছাত্র জানিয়েছেন, মারধরের বিষয়টি বাড়িতে পরিবারকে না বলতে এক স্যার নিষেধ করেছিলেন। তাই তারা বিষয়টি বাড়িতে বলেননি।
বিদ্যালয়ের পাশের এলাকার বাসিন্দা আনিচুর রহমান বলেন, “ইমতিয়াজ আমার ভাতিজাকেও মারছে। সে মারার কে, সে কি শিক্ষক? আমরা তার বিচার চাই। এটা কী ধরনের কথা, ক্লাসে ঢুকে মারবে!”
হারাটি উচ্চবিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য জাহেদুল ইসলাম বলেন, “আমি তো টানা দুইবার সদস্য ছিলাম। আমাদের সভাপতি বা আমরা কখনও এমন করিনি। সে (ইমতিয়াজ) একটা বাচ্চা ছেলে। কীসের ক্ষমতা বলে আমাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের পেটায়?”
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা দাবি করেছেন, ঘটনাস্থলে ৫০ এর বেশি শিক্ষার্থীকে পেটানো হয়েছে। এর মধ্যে ১০–১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন। জ্বর ও ব্যথা না কমায় এক ছাত্রীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। বেতের আঘাতে অনেকের হাত ফুলে গেছে।
ঘটনার দুই দিন পর অভিভাবক ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের কাছে বিচার ও জবাব চান। তবে প্রধান শিক্ষক কোনো পদক্ষেপ নেননি।
ইমতিয়াজ আহম্মদের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমানের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি জরুরি কাজে ব্যস্ত ছিলেন বলে ফোন কেটে দেন। পরে ফোন করলে তিনি আর ধরেননি।
হারাটি এলাকার বাসিন্দা ও মহানগর বিএনপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, “এটি কোনোভাবেই শাসন নয়, এটি শিক্ষার্থী নির্যাতন; একইসঙ্গে ফৌজদারি অপরাধ। প্রধান শিক্ষকের উচিৎ ছিল বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু তিনি তা না করে ধামাচাপা দিয়েছেন।”
পরশুরাম থানার ওসি মাইদুল ইসলাম বলেন, “ইমতিয়াজ সভাপতি হিসেবে বিদ্যালয়ে গিয়ে শাসন করেছিলেন। একজন অভিভাবক অনলাইনে জিডি করেছেন। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।”