alt

সাতশ’ মণ্ডপ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বললো সনাতনী জোট, সিসি ক্যামেরার পরামর্শ ধর্ম উপদেষ্টার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক ও চট্টগ্রাম ব্যুরো : মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

দুর্গাপূজায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, রাতে অনেক সময় হামলা করে, অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় আছে।

মঙ্গলবার,(২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর গোলপাহাড় মহাশ্মশান কালীমন্দিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় দুর্গাপূজা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় এখন জাতিসংঘে ভাষণ দেয়ার জন্য নিউইয়র্কে আছেন। উনি যাবার সময় আমাকে ডেকে বলে গেছেন- আমার আসতে আসতে তো দশমী হয়ে যাবে, তুমি সতর্ক থাক, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ করে যাতে মানুষ সুন্দরভাবে নির্বিঘ্নে পূজাটা উদ্যাপন করতে পারে, এ ব্যাপারে তোমাকে রাত-দিন পরিশ্রম করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা মোতাবেক দুর্গাপূজা নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করেছি। নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা নিশ্চিত করেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি।

বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে, এগুলো অনেকটা পলিটিক্যালি মোটিভেটেড, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়। মাজারে হামলা চালায়, মন্দিরকেও অপবিত্র করার চেষ্টা করে, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে আমাদের এই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশকে কেউ বিনষ্ট করতে না পারে। আমি সব সময় বলে থাকি, যারা উপাসনালয়, যে কোনো ধর্মের উপাসনালয়, মাজার, ধর্মীয় স্থাপনায় যারা পাথর নিক্ষেপ করে অথবা অপবিত্র করতে চায়, তারা কালপ্রিট, তারা অপরাধী, তাদের কোনো ধর্মীয় পরিচয় নেই।

পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা খালিদ বলেন, দুর্গাপূজা উদ্যাপন যেখানে হবে, মণ্ডপে-মন্দিরে সিসি ক্যামেরা বসান। রাতে অনেক সময় হামলা হয়, অন্ধকারের মধ্যে ঢিল মারে, অপবিত্র করতে চায়। এ ব্যাপারে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় আছে। গোয়েন্দারাও বিভিন্ন জায়গায় তৎপরতা চালাবে। আমি জেলা প্রশাসকদের বলে দিয়েছি, হটলাইন চালু থাকবে। আপনারা যদি কোনো আশঙ্কা অনুভব করেন, তাহলে হটলাইনে জানালে মুহূর্তের মধ্যে তারা আপনাদের পাশে এসে দাঁড়াবে।

ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষকে পূজায় সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আরেকটা কথা বলবো, লোকাল পিপলকে আপনারা ইনভলব করেন। আপনাদের ডানে-বামে যেসব মানুষেরা আছেন, যে ধর্মেরই হোক, তাদের সহযোগিতা আপনারা চান। তাহলে দুর্গাপূজাটা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে আপনারা উদ্যাপন করতে পারবেন।

৭০০ পূজামণ্ডপ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’, সেনা মোতায়েন দাবি সনাতনী জোটের

এবার দুর্গাপূজায় দেশের বিভিন্ন জেলার সাত শতাধিক মণ্ডপ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট। পূজা উদযাপন ‘নির্বিঘ্নে’ করতে প্রতিটি মণ্ডপে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সম্মেলনে সংগঠনটির প্রতিনিধি প্রদীপ কান্তি দে এ দাবি জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে তথ্য এসেছে পাঁচটি জেলার সাতটি পূজামণ্ডপে প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি, এ বছর ৭০০-এর ওপরে পূজামণ্ডপ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।’

ঝুঁকিপূর্ণ পূজামণ্ডপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাতক্ষীরা জেলার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার ৫৫টি পূজামণ্ডপ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীসহ সামগ্রিকভাবে প্রত্যেকটা জেলাতেই ঝুঁকিপূর্ণ পূজামণ্ডপ রয়েছে।’

ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি সরকারি খরচে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা রাখার দাবি জানিয়ে প্রদীপ কান্তি দে বলেন, ‘যেহেতু আর্মি বর্তমানে সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে। সে কারণে আমরা দাবি জানিয়েছি, এবারের পূজাতেও যেন আর্মি মোতায়েন করা হয়। যাতে আমরা নিরাপদে ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা পালন করতে পারি।’

সংগঠনের আরেক প্রতিনিধি পিযুষ দাস বলেন, ‘মণ্ডপে যে ঘটনাগুলো ঘটছে বাংলাদেশের বাইরে থেকে তো কেউ এসে হামলা করেনি। বাংলাদেশের ভেতর থেকেই ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে। তারপরেও প্রশাসন কেন ঠেকাচ্ছে না? কারা এই দুষ্কৃতিকারী তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেয়া হোক।’

লিখিত বক্তব্যে আরেক প্রতিনিধি প্রসেজিৎ কুমার হালদার রাষ্ট্রের কাছে

জানিয়ে আসা তাদের আট দফার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

১. সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য ‘নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন’ গঠনের মাধ্যমে ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল’ গঠনপূর্বক দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ২. অনতিবিলম্বে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করতে হবে। ৩. ‘সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করতে হবে। ৪. সংখ্যালঘু হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ‘হিন্দু ফাউন্ডেশনে’ উন্নীত করা এবং বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। ৫. ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬. সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনাকক্ষ বরাদ্দ করতে হবে। ৭. ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড’ আধুনিকায়ন করতে হবে। ৮. শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি দিতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটি প্রদান করতে হবে।

পঞ্জিকা অনুযায়ী এবার মহালয়ার সপ্তম দিন অর্থাৎ আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।

এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর অষ্টমী, অক্টোবরের ১ তারিখ নবমী এবং ২ অক্টোবর দশমীর সন্ধ্যায় বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সমাপ্তি হবে।

নিরাপত্তার দায়িত্বে ২ লাখ আনসার সদস্য

আজ থেকে সারাদেশের ৩১ হাজার ৫৭৬টি পূজামণ্ডপে ২ লাখ আনসার-ভিডিপির সদস্য মোতায়েন করা হবে। এর মধ্যে যেসব পূজামণ্ডপ ঝুঁকিপূর্ণ সেসব মণ্ডপে ৮ জন, দ্বিতীয় পর্যায়ের ঝুঁকিপূর্ণগুলোতে ৬ জন ও সাধারণ পূজামণ্ডপে ৬ জন করে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-পরিচালক (গণসংযোগ) আশিকউজ্জামান জানান, আনসার বাহিনী শারদীয় দুর্গাপূজাকে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই উৎসব সফলভাবে উদযাপিত হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন।

দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে পূজাম-পগুলোকে নিরাপত্তা ঝুঁকির ভিত্তিতে তিন শ্রেণিতে ভাগ করে নিরাপত্তা দেয়া হবে। একই সঙ্গে দেশের ৬৪ জেলায় ৯২টি ব্যাটালিয়ন আনসার স্ট্রাইকিং ফোর্স টিম মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি টিমে ৬ জন করে সদস্য থাকবে। তারা নিয়মিত টহল ছ্ড়া ও আপদকালিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবেন।

এবার নিরাপত্তা কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে মোতায়েনকৃত সদস্যরা তাদের নির্ধারিত দায়িত্বের পাশাপাশি ‘শারদীয় সুরক্ষা অ্যাপস’-এর মাধ্যমে দূর্ঘটনা, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে রিপোর্ট করবেন। এসব তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্য বাহিনীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আনসার বাহিনীর চলমান সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ২ লাখ তরুণকে ইতোমধ্যে গণপ্রতিরক্ষার নতুন ধারায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হিসেবে বাহিনীতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।

ছবি

নেত্রকোনার খালিয়াজুরিতে পীরের আস্তানা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

ছবি

মুকসুদপুরে দীর্ঘ ৯০ বছর পর থানার বেদখল জমি উদ্ধার

ছবি

ডেঙ্গু: আরও ৬৬৪ জন হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু ১

ছবি

ভোটাভুটিতে সিপিবি’র ৪৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি

ছবি

টঙ্গিতে দগ্ধ হওয়া ফায়ার ফাইটার শামীম হার মানলেন মৃত্যুর কাছে

ছবি

মহাখালীতে পেট্রোল পাম্পে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৭

ছবি

শরণখোলায় বিরল সুন্ধি কচ্ছপ উদ্ধার

শরণখোলায় বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জনমনে আতঙ্ক,২ দিনে কুকুরের কামড়ে আহত ১৪ শিশু,হাসপাতালে নেই ভ্যাকসিন

ছবি

রংপুরের হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় ৫০ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

ছবি

আলোচনা সভায় বক্তারা, ব্যক্তিগত গাড়ি কমাতে মানসম্পন্ন গণপরিবহন বাড়াতে হবে

ছবি

গোয়ালন্দে মাদ্রাসা ছাত্রীর আত্মহত্যা

ছবি

গজারিয়ায় বাস-ট্রলির সংঘর্ষে নিহত ১

ছবি

নিখোঁজের ৩ দিন পর যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

তারাগঞ্জে মাংস ব্যবসায়ী-প্রশাসনের আলোচনা

ছবি

কালীগঞ্জকে ‘জঙ্গল’ বলায় মুফতি নাসিরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

ছবি

একই রশিতে স্বামী ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর আত্মহত্যা

ছবি

পুঠিয়ায় সারের কৃত্রিম সংকট, কৃষকের হাহাকার

ছবি

সিংগাইরে কর্মস্থলে থাকেন না আবাসিক মেডিকেল অফিসার

ছবি

রেশম প্রকল্পে কোটি কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ

ছবি

দোহারে জব্দ করা তিনটি ড্রেজার পুড়িয়ে ধ্বংস

ছবি

ওএমএসের চাল বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ

ছবি

হরিণের দেখা মিলেছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে

ছবি

প্রশিক্ষণের গাড়ি পানিতে ডুবে নিহত ১

ছবি

দেবহাটার দুর্গাপূজার আগে রাস্তা সংস্কারের দাবি

ছবি

প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের দায়ে বৃদ্ধের যাবজ্জীবন

ছবি

দশমিনায় রাসায়নিকের ব্যবহারে শাপলা এখন অস্তিত্ব সংকটে

ছবি

ওমানে ছাদ থেকে পড়ে চুনারুঘাটের যুবকের মৃত্যু

ছবি

নোয়াখালীতে পানিতে ডুবে একদিনে তিন শিশুর মৃত্য

ছবি

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চা দোকানীর মৃত্যু

ছবি

চা-বাগানে গোলমরিচ চাষের নতুন সম্ভাবনা

ছবি

শার্শায় পেট্রলপাম্প দখলের চেষ্টা বিএনপির নেতা বহিষ্কার

ছবি

দামুড়হুদায় ওএমএসের বিক্রয় কেন্দ্রে আটার পরিমান বৃদ্ধির দাবি

ছবি

চান্দিনা উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান

ছবি

আবারো পদ্মায় ভাঙন, ছোট হয়ে যাচ্ছে লৌহজংয়ের মানচিত্র

ছবি

কীটনাশক প্রয়োগে নষ্ট হচ্ছে মাটির উর্বরতা

ছবি

কোটচাঁদপুরে নকল পোল্ট্রি ফিডের ব্যবসা জমজমাট

tab

সাতশ’ মণ্ডপ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বললো সনাতনী জোট, সিসি ক্যামেরার পরামর্শ ধর্ম উপদেষ্টার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক ও চট্টগ্রাম ব্যুরো

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দুর্গাপূজায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, রাতে অনেক সময় হামলা করে, অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় আছে।

মঙ্গলবার,(২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর গোলপাহাড় মহাশ্মশান কালীমন্দিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় দুর্গাপূজা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় এখন জাতিসংঘে ভাষণ দেয়ার জন্য নিউইয়র্কে আছেন। উনি যাবার সময় আমাকে ডেকে বলে গেছেন- আমার আসতে আসতে তো দশমী হয়ে যাবে, তুমি সতর্ক থাক, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ করে যাতে মানুষ সুন্দরভাবে নির্বিঘ্নে পূজাটা উদ্যাপন করতে পারে, এ ব্যাপারে তোমাকে রাত-দিন পরিশ্রম করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা মোতাবেক দুর্গাপূজা নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করেছি। নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা নিশ্চিত করেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি।

বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে, এগুলো অনেকটা পলিটিক্যালি মোটিভেটেড, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়। মাজারে হামলা চালায়, মন্দিরকেও অপবিত্র করার চেষ্টা করে, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে আমাদের এই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশকে কেউ বিনষ্ট করতে না পারে। আমি সব সময় বলে থাকি, যারা উপাসনালয়, যে কোনো ধর্মের উপাসনালয়, মাজার, ধর্মীয় স্থাপনায় যারা পাথর নিক্ষেপ করে অথবা অপবিত্র করতে চায়, তারা কালপ্রিট, তারা অপরাধী, তাদের কোনো ধর্মীয় পরিচয় নেই।

পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা খালিদ বলেন, দুর্গাপূজা উদ্যাপন যেখানে হবে, মণ্ডপে-মন্দিরে সিসি ক্যামেরা বসান। রাতে অনেক সময় হামলা হয়, অন্ধকারের মধ্যে ঢিল মারে, অপবিত্র করতে চায়। এ ব্যাপারে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় আছে। গোয়েন্দারাও বিভিন্ন জায়গায় তৎপরতা চালাবে। আমি জেলা প্রশাসকদের বলে দিয়েছি, হটলাইন চালু থাকবে। আপনারা যদি কোনো আশঙ্কা অনুভব করেন, তাহলে হটলাইনে জানালে মুহূর্তের মধ্যে তারা আপনাদের পাশে এসে দাঁড়াবে।

ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষকে পূজায় সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আরেকটা কথা বলবো, লোকাল পিপলকে আপনারা ইনভলব করেন। আপনাদের ডানে-বামে যেসব মানুষেরা আছেন, যে ধর্মেরই হোক, তাদের সহযোগিতা আপনারা চান। তাহলে দুর্গাপূজাটা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে আপনারা উদ্যাপন করতে পারবেন।

৭০০ পূজামণ্ডপ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’, সেনা মোতায়েন দাবি সনাতনী জোটের

এবার দুর্গাপূজায় দেশের বিভিন্ন জেলার সাত শতাধিক মণ্ডপ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট। পূজা উদযাপন ‘নির্বিঘ্নে’ করতে প্রতিটি মণ্ডপে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সম্মেলনে সংগঠনটির প্রতিনিধি প্রদীপ কান্তি দে এ দাবি জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে তথ্য এসেছে পাঁচটি জেলার সাতটি পূজামণ্ডপে প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি, এ বছর ৭০০-এর ওপরে পূজামণ্ডপ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।’

ঝুঁকিপূর্ণ পূজামণ্ডপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাতক্ষীরা জেলার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার ৫৫টি পূজামণ্ডপ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীসহ সামগ্রিকভাবে প্রত্যেকটা জেলাতেই ঝুঁকিপূর্ণ পূজামণ্ডপ রয়েছে।’

ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি সরকারি খরচে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা রাখার দাবি জানিয়ে প্রদীপ কান্তি দে বলেন, ‘যেহেতু আর্মি বর্তমানে সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে। সে কারণে আমরা দাবি জানিয়েছি, এবারের পূজাতেও যেন আর্মি মোতায়েন করা হয়। যাতে আমরা নিরাপদে ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা পালন করতে পারি।’

সংগঠনের আরেক প্রতিনিধি পিযুষ দাস বলেন, ‘মণ্ডপে যে ঘটনাগুলো ঘটছে বাংলাদেশের বাইরে থেকে তো কেউ এসে হামলা করেনি। বাংলাদেশের ভেতর থেকেই ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে। তারপরেও প্রশাসন কেন ঠেকাচ্ছে না? কারা এই দুষ্কৃতিকারী তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেয়া হোক।’

লিখিত বক্তব্যে আরেক প্রতিনিধি প্রসেজিৎ কুমার হালদার রাষ্ট্রের কাছে

জানিয়ে আসা তাদের আট দফার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

১. সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য ‘নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন’ গঠনের মাধ্যমে ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল’ গঠনপূর্বক দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ২. অনতিবিলম্বে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করতে হবে। ৩. ‘সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করতে হবে। ৪. সংখ্যালঘু হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ‘হিন্দু ফাউন্ডেশনে’ উন্নীত করা এবং বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। ৫. ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬. সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনাকক্ষ বরাদ্দ করতে হবে। ৭. ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড’ আধুনিকায়ন করতে হবে। ৮. শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি দিতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটি প্রদান করতে হবে।

পঞ্জিকা অনুযায়ী এবার মহালয়ার সপ্তম দিন অর্থাৎ আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।

এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর অষ্টমী, অক্টোবরের ১ তারিখ নবমী এবং ২ অক্টোবর দশমীর সন্ধ্যায় বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সমাপ্তি হবে।

নিরাপত্তার দায়িত্বে ২ লাখ আনসার সদস্য

আজ থেকে সারাদেশের ৩১ হাজার ৫৭৬টি পূজামণ্ডপে ২ লাখ আনসার-ভিডিপির সদস্য মোতায়েন করা হবে। এর মধ্যে যেসব পূজামণ্ডপ ঝুঁকিপূর্ণ সেসব মণ্ডপে ৮ জন, দ্বিতীয় পর্যায়ের ঝুঁকিপূর্ণগুলোতে ৬ জন ও সাধারণ পূজামণ্ডপে ৬ জন করে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-পরিচালক (গণসংযোগ) আশিকউজ্জামান জানান, আনসার বাহিনী শারদীয় দুর্গাপূজাকে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই উৎসব সফলভাবে উদযাপিত হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন।

দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে পূজাম-পগুলোকে নিরাপত্তা ঝুঁকির ভিত্তিতে তিন শ্রেণিতে ভাগ করে নিরাপত্তা দেয়া হবে। একই সঙ্গে দেশের ৬৪ জেলায় ৯২টি ব্যাটালিয়ন আনসার স্ট্রাইকিং ফোর্স টিম মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি টিমে ৬ জন করে সদস্য থাকবে। তারা নিয়মিত টহল ছ্ড়া ও আপদকালিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবেন।

এবার নিরাপত্তা কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে মোতায়েনকৃত সদস্যরা তাদের নির্ধারিত দায়িত্বের পাশাপাশি ‘শারদীয় সুরক্ষা অ্যাপস’-এর মাধ্যমে দূর্ঘটনা, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে রিপোর্ট করবেন। এসব তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্য বাহিনীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আনসার বাহিনীর চলমান সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ২ লাখ তরুণকে ইতোমধ্যে গণপ্রতিরক্ষার নতুন ধারায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হিসেবে বাহিনীতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।

back to top