সৈয়দপুর (নীলফামারী) : রেল কারখানার সেডে মেরামতের অপেক্ষায় কোচ -সংবাদ
নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানায় সরঞ্জাম-যন্ত্রাংশের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় উৎপাদন বন্ধের উপক্রম হয়েছে দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। স্প্রিং ও অন্যান্য সরঞ্জাম সংকটের কারণে আমদানি করা কোচ মেরামত কাজ বিঘিœত হচ্ছে। বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানাটি পড়েছে উৎপাদন সংকটে।
সূত্র জানায়, এক সময়ের কর্মচঞ্চল কারখানাটি এখন স্থবির। শ্রমিক-কর্মচারীরা অধিকাংশ অলস সময় কাটাচ্ছেন। বন্ধ হয়ে আছে বড় বড় মেশিনগুলো। সরঞ্জাম নেই, যন্ত্রাংশ নেই এমন কথা বললেন শ্রমিকরা। রেলওয়ে কারখানার বগি শপের একজন জ্যেষ্ঠ শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শপে স্প্রিংসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ কিছুই নেই। কাজেই কাজও নেই, আমরা বসে আছি। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১১০ একর জমির উপর বৃহৎ এ কারখানাটিতে ২৯টি উপ-কারখানা (শপ) রয়েছে। এসব শপে রেলকোচ ও ওয়াগন মেরামত এমনকি ১২০০ রকমের যন্ত্রাংশ তৈরি হয়। যা ব্যবহার হয় রেলওয়ে লোকোমোটিভ, যাত্রী ও মালবাহী গাড়িতে। সৈয়দপুর রেলকারখানায় গড়ে প্রতিদিন তিনটি করে কোচ মেরামত হয়ে থাকে। রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এর কোচগুলো নিয়মিত মেরামতের প্রয়োজন দেখা দেয়। সময় মতো কোচ মেরামত না হলে লাইনচ্যূতি (ডি-রেল) ও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সূত্রটি আরও জানায়, সৈয়দপুর রেলকারখানায় মেরামত হওয়া কোচগুলো পরবর্তীতে রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। একই সূত্র জানায়, গত অর্থবছর থেকে সৈয়দপুর কারখানায় কোনো সরঞ্জাম বা যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হয়নি। স্থানীয়ভাবে (এলটিএম) দরপত্র বন্ধ রাখা হয়েছে। এরফলে দেখা দিয়েছে চরমভাবে সরঞ্জাম সংকট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমদানি নির্ভর হওয়ায় দরপত্রে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতায় এ রেল কারখানায় স্প্রিংয়ের অভাব দেখা দিয়েছে। এতে শুধু ওই তিনটি কোচই নয়; মেরামতযোগ্য অন্য কোচগুলোও সময়মতো মেরামত করা যাচ্ছে না। এতে কারখানায় ক্যারেজ মেরামতের প্রতিদিনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
রেলওয়ে কারখানার বগি শপের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহিনুর আলম শাহ জানান, ট্রেনের বগিগুলো স্থাপন করা থাকে ট্রলির ওপর। এই ট্রলি স্থাপন করা হয় চাকার ফ্রেমে। এর মাঝে থাকে স্প্রিং এবং সূক্ষ্ম কিছু যন্ত্রাংশ। চারটি স্প্রিং পুরো কোচের ওজন বহন করে। চলাচল করলে বল বিয়ারিং, স্প্রিং ও চাকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে আগুনেরও সূত্রপাত হয়। এগুলো নিয়মিত সার্ভিসিং করতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী ৫ বছর পরপর স্প্রিং পরিবর্তন করতে হয়। রেলওয়ের কোচের এসব স্প্রিং আমদানিনির্ভর। কিন্তু দরপত্রে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতায় রেল কারখানায় স্প্রিংয়ের অভাব দেখা দিয়েছে। এই কারণে কোচগুলো মেরামত করা যাচ্ছে না।
রেল শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়তুর রহমান জানান, মেটারিয়াল সংকটের কারণে কারখানা অনেকটা ডুবতে বসেছে। প্রশাসনিক অদক্ষতায় চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। এ মুহূর্তে টেন্ডার হলেও মালামাল পেতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, মেরামতের অভাবে চিলাহাটি-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে তিনটি কোচ খুলে রাখা হয়েছে। মাত্র ছয়টি কোচ নিয়ে চলছে ট্রেনটি। এতে বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে রেলওয়ে। অন্যান্য ট্রেনেও একই অবস্থা দেখা দিবে বলে জানান তিনি।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ শপের ইনচার্জ মমিনুল ইসলাম জানান, বর্তমানে আমাদের হাতে কোনো স্প্রিং, বিয়ারিং, চাকাসহ খুচরা যন্ত্রাংশ নেই। ফলে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা সমস্যা হচ্ছে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কর্মব্যবস্থাপক (ডাব্লিউএম) মমতাজুল ইসলাম সরঞ্জাম সংকটের কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ স্প্রীং সংকটসহ সরঞ্জাম সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চেষ্টা চলছে সমাধানের।
সৈয়দপুর (নীলফামারী) : রেল কারখানার সেডে মেরামতের অপেক্ষায় কোচ -সংবাদ
শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫
নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানায় সরঞ্জাম-যন্ত্রাংশের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় উৎপাদন বন্ধের উপক্রম হয়েছে দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। স্প্রিং ও অন্যান্য সরঞ্জাম সংকটের কারণে আমদানি করা কোচ মেরামত কাজ বিঘিœত হচ্ছে। বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানাটি পড়েছে উৎপাদন সংকটে।
সূত্র জানায়, এক সময়ের কর্মচঞ্চল কারখানাটি এখন স্থবির। শ্রমিক-কর্মচারীরা অধিকাংশ অলস সময় কাটাচ্ছেন। বন্ধ হয়ে আছে বড় বড় মেশিনগুলো। সরঞ্জাম নেই, যন্ত্রাংশ নেই এমন কথা বললেন শ্রমিকরা। রেলওয়ে কারখানার বগি শপের একজন জ্যেষ্ঠ শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শপে স্প্রিংসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ কিছুই নেই। কাজেই কাজও নেই, আমরা বসে আছি। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১১০ একর জমির উপর বৃহৎ এ কারখানাটিতে ২৯টি উপ-কারখানা (শপ) রয়েছে। এসব শপে রেলকোচ ও ওয়াগন মেরামত এমনকি ১২০০ রকমের যন্ত্রাংশ তৈরি হয়। যা ব্যবহার হয় রেলওয়ে লোকোমোটিভ, যাত্রী ও মালবাহী গাড়িতে। সৈয়দপুর রেলকারখানায় গড়ে প্রতিদিন তিনটি করে কোচ মেরামত হয়ে থাকে। রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এর কোচগুলো নিয়মিত মেরামতের প্রয়োজন দেখা দেয়। সময় মতো কোচ মেরামত না হলে লাইনচ্যূতি (ডি-রেল) ও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সূত্রটি আরও জানায়, সৈয়দপুর রেলকারখানায় মেরামত হওয়া কোচগুলো পরবর্তীতে রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। একই সূত্র জানায়, গত অর্থবছর থেকে সৈয়দপুর কারখানায় কোনো সরঞ্জাম বা যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হয়নি। স্থানীয়ভাবে (এলটিএম) দরপত্র বন্ধ রাখা হয়েছে। এরফলে দেখা দিয়েছে চরমভাবে সরঞ্জাম সংকট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমদানি নির্ভর হওয়ায় দরপত্রে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতায় এ রেল কারখানায় স্প্রিংয়ের অভাব দেখা দিয়েছে। এতে শুধু ওই তিনটি কোচই নয়; মেরামতযোগ্য অন্য কোচগুলোও সময়মতো মেরামত করা যাচ্ছে না। এতে কারখানায় ক্যারেজ মেরামতের প্রতিদিনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
রেলওয়ে কারখানার বগি শপের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহিনুর আলম শাহ জানান, ট্রেনের বগিগুলো স্থাপন করা থাকে ট্রলির ওপর। এই ট্রলি স্থাপন করা হয় চাকার ফ্রেমে। এর মাঝে থাকে স্প্রিং এবং সূক্ষ্ম কিছু যন্ত্রাংশ। চারটি স্প্রিং পুরো কোচের ওজন বহন করে। চলাচল করলে বল বিয়ারিং, স্প্রিং ও চাকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে আগুনেরও সূত্রপাত হয়। এগুলো নিয়মিত সার্ভিসিং করতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী ৫ বছর পরপর স্প্রিং পরিবর্তন করতে হয়। রেলওয়ের কোচের এসব স্প্রিং আমদানিনির্ভর। কিন্তু দরপত্রে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতায় রেল কারখানায় স্প্রিংয়ের অভাব দেখা দিয়েছে। এই কারণে কোচগুলো মেরামত করা যাচ্ছে না।
রেল শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়তুর রহমান জানান, মেটারিয়াল সংকটের কারণে কারখানা অনেকটা ডুবতে বসেছে। প্রশাসনিক অদক্ষতায় চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। এ মুহূর্তে টেন্ডার হলেও মালামাল পেতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, মেরামতের অভাবে চিলাহাটি-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে তিনটি কোচ খুলে রাখা হয়েছে। মাত্র ছয়টি কোচ নিয়ে চলছে ট্রেনটি। এতে বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে রেলওয়ে। অন্যান্য ট্রেনেও একই অবস্থা দেখা দিবে বলে জানান তিনি।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ শপের ইনচার্জ মমিনুল ইসলাম জানান, বর্তমানে আমাদের হাতে কোনো স্প্রিং, বিয়ারিং, চাকাসহ খুচরা যন্ত্রাংশ নেই। ফলে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা সমস্যা হচ্ছে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কর্মব্যবস্থাপক (ডাব্লিউএম) মমতাজুল ইসলাম সরঞ্জাম সংকটের কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ স্প্রীং সংকটসহ সরঞ্জাম সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চেষ্টা চলছে সমাধানের।