ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা, মুড়াপাড়া, গোলাকান্দাইল, তারাবো, দাউদপুর ও ভোলাবোসহ আশপাশের এলাকার নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছে। পোল্ট্রি, লেয়ার, ব্রয়লার, ফাউমি, সোনালী, ব্রাহমা, রোড আইল্যান্ড রেড, উইয়ান্ডট, লেগহর্ন, সুবর্ণ, মাল্টি কালার টেবিল চিকেন, প্লেমাউথ রক, সাদা লেগহর্ন, আসিল, বাউ চিকেন ও দেশি মুরগি পালন করে নারীদের এ সফলতা আসছে। পাশাপাশি স্বাবলম্বী হয়েছেন ৭/৮টি গ্রামের দুই শতাধিতক যুবক-যুবতী। বিভিন্ন জাতের মুরগি পালন করেই সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন তারা। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওয়ান থাউজেন্ড প্রকল্পের আওতায় এক হাজার যুবক-যুবতী প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে নারীদের এ সফলতা এখন দৃশ্যমান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শরতের ভোরে গ্রামীণ জনপদের মেঠোপথে হাঁটলেই চোখে পড়ে টিন-কাঠের তৈরি ছোট ছোট ঘরবাড়ি। সেখান থেকেই ভেসে আসে মোরগ-মুরগির কলকাকলি। প্রতিটি বাড়িতে মুরগি পালন, তাদের পরিচর্যা এবং ডিমের বাজারজাত নিয়ে ব্যস্ত সবাই। এ দৃশ্য রূপগঞ্জের ভোলাবো ও মুড়াপাড়াসহ আশপাশের এলাকার গ্রামের।
কথা হয় জীবন সংগ্রামে হার না মানা ইছামিন আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে পরিবারের সদস্যদের পরামর্শে ইয়াছমিন আক্তার পোল্ট্রি মুরগি পালনের কার্যক্রম শুরু করেন। ব্যবসার শুরুতেই করোনা ভাইরাসের কারনে তিনি লোকসানের মুখে পড়েন। অর্থে কষ্টে ২০২১ সালে তিনি একটি এনজিওতে চাকরি নেন। ২০২৩ সালে মাতৃত্বের ছুটি চাহিদা মতো না পাওয়ায় তিনি এনজিও থেকে চাকরি ছেড়ে দেন। ২০২৪ সালে আওয়ামী সরকার পতনের পর তিনি রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলামের সহযোগিতায় ওয়ান থাউজেন্ড প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে হাঁস, মুরগি, গরু-ছাগল পালনের প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশি ও ফাউমি মুরগি পালন শুরু করেন। তার খামারে বর্তমানে দুই শতাধিক দেশি ও চার শাতাধিক ফাউমি মুরগি রয়েছে।
ইয়াছমিন আক্তার প্রথমে মিসরীয় ফাউমি মুরগির বাচ্চা কিনে এনে খামার গড়ে তোলেন। প্রথমদিকে ছোটখাটো খামার ছিল। কিন্তু এখন তার খামারে চার শতাধিক মুরগি রয়েছে। প্রতিদিন উৎপাদিত হয় ৩০০ পিস ডিম। ফাউমি মুরগির বড় ও ছোট সাইজের ডিমগুলো বিক্রি করেন। আর মাঝারি সাইজের ডিমগুলো ইনকিউবেটর মেশিনে রেখে তিনি নতুন বাচ্চা ফুটিয়ে তোলেন। সে সকল বাচ্চা নিজেই পালন করেন। আবার চাহিদার বেশি ১দিন থেকে ১৫দিন বয়সের বাচ্চা বিক্রি করে দেন। এসব কাজ তিনি এখন নিজেই করতে পারেন। ইয়াছমিনের মতো মৈকুলী গ্রামের লিপি আক্তার ও মঙ্গলখালী গ্রামের শান্তা আক্তার মুরগি পালনে স্বাবলম্বী হয়েছে। ইয়াছমিন আক্তারের সেই যে শুরু আর পিছনে ফিরতে তাকাতে হয়নি তাকে। লাভের টাকা দিয়ে তিনি সংসারে স্বচ্ছলতা আনার পাশাপাশি খামার বড় করছেন। মুরগি পালনের মাধ্যমে তাদের জীবনে এসেছে ব্যাপক সফলতা ।
এছাড়া ওয়ান থাউজেন্ড প্রকল্পের আওতায় বিউটি পার্লার করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন ভিংরাবো গ্রামের উর্মী আক্তার, আফরোজা ইসলাম, রিনা আক্তার, জাঙ্গীর গ্রামের মিথিলা আক্তার, গ্রাফিক্স ডিজাইনে গোলাকান্দাইলের রাবেয়া আক্তার, ইলেক্ট্রিশিয়ানে দীঘিবরাবো গ্রামের সুলতানা আক্তার, সেলাই কাজে শিবগঞ্জ গ্রামের মুক্তা আক্তার, মুড়াপাড়ার রিনা বেগম, গন্ধর্বপুর গ্রামের সুলতানা আক্তার, মঙ্গলখালী গ্রামের মমতাজ বেগম, এমব্রয়ডারীতে কলাতলী গ্রামের সোনালী আক্তার, টঙ্গীরঘাট গ্রামের শিরিনা আক্তার, শিবগঞ্জ গ্রামের মোর্শেদ জামান মীম, বানিয়াদী গ্রামের জান্নাতুন মাওয়া জিম, মাহমুদাবাদ গ্রামের সিনহা আক্তার, সরকারপাড়া গ্রামের হাজেরা আক্তারসহ আরো অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
ফাউমি মুরগি পালন করতে গিয়ে ইয়াছমিন আক্তার যে বড় সফলতা পেয়েছেন, তার কারণ হলো মুরগির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। তিনি জানান, ফাউমি মুরগি খুব কমই রোগে আক্রান্ত হয়। তাদের জন্য বিশেষ করে ভ্যাকসিনের প্রয়োজন পড়ে না। মুরগিগুলোকে তিন বেলা খাবার দেওয়া হয়, দানাদার খাবারের পাশাপাশি প্রাকৃতিক খাবারও থাকে। এতে করে মুরগির বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং রোগবালাইয়ের ঝুঁকি কম থাকে।
বর্তমানে ইয়াছমিন আক্তারের খামার থেকে মুরগি, ডিম ও বাচ্চার চাহিদা বাড়ছে স্থানীয় বাজারে। প্রত্যেক পিস বাচ্চা ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তার খামারের মুরগির ডিম স্থানীয়ভাবে খুব জনপ্রিয়। বাজারে ফাউমি মুরগি ও ডিমের চাহিদা অনেক বেশি। শেড বাড়িয়ে ভবিষ্যতে উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, যদি প্রত্যেক বাড়িতে একটি খামার স্থাপিত হয়, তবে দেশের উন্নতির পাশাপাশি পরিবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
বাউ মুরগির বিশেষত্ব হচ্ছে, বাউ মুরগির সাধ অনেক টাই দেশি মুরগির মতো। এই মুরগি দ্রুত বর্ধনশীল, মাত্র ৪২-৪৫ দিনে ১ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজন হয়। পাশাপাশি বাউ চিকেন মুরগি জলবায়ু সহিষ্ণু, তাই অধিক ঠান্ডা বা অধিক গরমেও বাউ মুরগির প্রভাব ফেলতে পারে না তাই এই মুরগির রোগবালাই খুবই কম আর যেহেতু রোগবালাই কম তাই বাউ মুরগির উপর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয় খুব কম তাই বাউ মুরগির মাংস বাজারের অন্য মুরগির মাংসের চেয়ে অনেকাংশে নিরাপদ। উপজেলায় বাউ ও ফাউমি মুরগি পালনে আগ্রহ বেড়েছে খামারিদের। সুস্বাদু ও পুষ্টিমান হওয়ায় বাউ মুরগির চাহিদাও প্রচুর। বর্তমানে সোনালী ২৭০-২৮০টাকা, লেয়ার ৩২০টাকা, ব্রয়লার ১৬০টাকা, ফাউমি ৩০০-৩৫০টাকা ও দেশি মুরগি ৫৫০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেশি মুরগি পালন করে ভাগ্য বদলের পাশাপাশি সফলতার স্বপ্নও বুনছেন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। ঘুরে দাঁড়ানো ও সামনে পথচলা। নিজের মুরগির খামার থেকে এখন বাণিজ্যিকভাবে ডিম ও মুরগি বাজারে বিক্রি করে নারীরা সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন।
অনেক নারীরা মুরগি পালনে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বল্প পুঁজিতে গড়ে তুলছেন খামার। স্বল্প পুঁজিতে দেশি মুরগি পালন করা যায় আবার বাড়তি কোনো ঝামেলাও নেই। বাড়ির বাইরে ছেড়ে দিলে ঘাস পোকা মাকড় খেয়ে থাকে। তুলনামূলক রোগ বালাইও কম। সে কারণে দেশি মুরগি চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তারা।
ইয়াছমিন আক্তার বলেন, তার খামারে এখন মুরগির পাশাপাশি ডিম ও বাচ্চা বিক্রিও শুরু হয়েছে। মুরগি থেকে উৎপাদিত ডিমের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, আর এর মাধ্যমে পরিবারের আয়ের পথ উন্মোচিত হয়েছে। রূপগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেহানা পারভীন বলেন, নারীদের সাফল্যের পেছনে রয়েছে তাদের অবিচল প্রচেষ্টা এবং দক্ষতা।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ইয়াছমিন আক্তারের মতো উদ্যোক্তা সৃষ্টি হলে রূপগঞ্জে মাংস ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে এক নতুন যুগের সূচনা হবে। রূপগঞ্জের নারী-পুরুষদের স্বাবলম্বী করতে ওয়ান থাউজেন্ড প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে যুবক-যুবতীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে আরো বৃহৎ আকারে প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।
শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫
ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা, মুড়াপাড়া, গোলাকান্দাইল, তারাবো, দাউদপুর ও ভোলাবোসহ আশপাশের এলাকার নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছে। পোল্ট্রি, লেয়ার, ব্রয়লার, ফাউমি, সোনালী, ব্রাহমা, রোড আইল্যান্ড রেড, উইয়ান্ডট, লেগহর্ন, সুবর্ণ, মাল্টি কালার টেবিল চিকেন, প্লেমাউথ রক, সাদা লেগহর্ন, আসিল, বাউ চিকেন ও দেশি মুরগি পালন করে নারীদের এ সফলতা আসছে। পাশাপাশি স্বাবলম্বী হয়েছেন ৭/৮টি গ্রামের দুই শতাধিতক যুবক-যুবতী। বিভিন্ন জাতের মুরগি পালন করেই সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন তারা। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওয়ান থাউজেন্ড প্রকল্পের আওতায় এক হাজার যুবক-যুবতী প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে নারীদের এ সফলতা এখন দৃশ্যমান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শরতের ভোরে গ্রামীণ জনপদের মেঠোপথে হাঁটলেই চোখে পড়ে টিন-কাঠের তৈরি ছোট ছোট ঘরবাড়ি। সেখান থেকেই ভেসে আসে মোরগ-মুরগির কলকাকলি। প্রতিটি বাড়িতে মুরগি পালন, তাদের পরিচর্যা এবং ডিমের বাজারজাত নিয়ে ব্যস্ত সবাই। এ দৃশ্য রূপগঞ্জের ভোলাবো ও মুড়াপাড়াসহ আশপাশের এলাকার গ্রামের।
কথা হয় জীবন সংগ্রামে হার না মানা ইছামিন আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে পরিবারের সদস্যদের পরামর্শে ইয়াছমিন আক্তার পোল্ট্রি মুরগি পালনের কার্যক্রম শুরু করেন। ব্যবসার শুরুতেই করোনা ভাইরাসের কারনে তিনি লোকসানের মুখে পড়েন। অর্থে কষ্টে ২০২১ সালে তিনি একটি এনজিওতে চাকরি নেন। ২০২৩ সালে মাতৃত্বের ছুটি চাহিদা মতো না পাওয়ায় তিনি এনজিও থেকে চাকরি ছেড়ে দেন। ২০২৪ সালে আওয়ামী সরকার পতনের পর তিনি রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলামের সহযোগিতায় ওয়ান থাউজেন্ড প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে হাঁস, মুরগি, গরু-ছাগল পালনের প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশি ও ফাউমি মুরগি পালন শুরু করেন। তার খামারে বর্তমানে দুই শতাধিক দেশি ও চার শাতাধিক ফাউমি মুরগি রয়েছে।
ইয়াছমিন আক্তার প্রথমে মিসরীয় ফাউমি মুরগির বাচ্চা কিনে এনে খামার গড়ে তোলেন। প্রথমদিকে ছোটখাটো খামার ছিল। কিন্তু এখন তার খামারে চার শতাধিক মুরগি রয়েছে। প্রতিদিন উৎপাদিত হয় ৩০০ পিস ডিম। ফাউমি মুরগির বড় ও ছোট সাইজের ডিমগুলো বিক্রি করেন। আর মাঝারি সাইজের ডিমগুলো ইনকিউবেটর মেশিনে রেখে তিনি নতুন বাচ্চা ফুটিয়ে তোলেন। সে সকল বাচ্চা নিজেই পালন করেন। আবার চাহিদার বেশি ১দিন থেকে ১৫দিন বয়সের বাচ্চা বিক্রি করে দেন। এসব কাজ তিনি এখন নিজেই করতে পারেন। ইয়াছমিনের মতো মৈকুলী গ্রামের লিপি আক্তার ও মঙ্গলখালী গ্রামের শান্তা আক্তার মুরগি পালনে স্বাবলম্বী হয়েছে। ইয়াছমিন আক্তারের সেই যে শুরু আর পিছনে ফিরতে তাকাতে হয়নি তাকে। লাভের টাকা দিয়ে তিনি সংসারে স্বচ্ছলতা আনার পাশাপাশি খামার বড় করছেন। মুরগি পালনের মাধ্যমে তাদের জীবনে এসেছে ব্যাপক সফলতা ।
এছাড়া ওয়ান থাউজেন্ড প্রকল্পের আওতায় বিউটি পার্লার করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন ভিংরাবো গ্রামের উর্মী আক্তার, আফরোজা ইসলাম, রিনা আক্তার, জাঙ্গীর গ্রামের মিথিলা আক্তার, গ্রাফিক্স ডিজাইনে গোলাকান্দাইলের রাবেয়া আক্তার, ইলেক্ট্রিশিয়ানে দীঘিবরাবো গ্রামের সুলতানা আক্তার, সেলাই কাজে শিবগঞ্জ গ্রামের মুক্তা আক্তার, মুড়াপাড়ার রিনা বেগম, গন্ধর্বপুর গ্রামের সুলতানা আক্তার, মঙ্গলখালী গ্রামের মমতাজ বেগম, এমব্রয়ডারীতে কলাতলী গ্রামের সোনালী আক্তার, টঙ্গীরঘাট গ্রামের শিরিনা আক্তার, শিবগঞ্জ গ্রামের মোর্শেদ জামান মীম, বানিয়াদী গ্রামের জান্নাতুন মাওয়া জিম, মাহমুদাবাদ গ্রামের সিনহা আক্তার, সরকারপাড়া গ্রামের হাজেরা আক্তারসহ আরো অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
ফাউমি মুরগি পালন করতে গিয়ে ইয়াছমিন আক্তার যে বড় সফলতা পেয়েছেন, তার কারণ হলো মুরগির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। তিনি জানান, ফাউমি মুরগি খুব কমই রোগে আক্রান্ত হয়। তাদের জন্য বিশেষ করে ভ্যাকসিনের প্রয়োজন পড়ে না। মুরগিগুলোকে তিন বেলা খাবার দেওয়া হয়, দানাদার খাবারের পাশাপাশি প্রাকৃতিক খাবারও থাকে। এতে করে মুরগির বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং রোগবালাইয়ের ঝুঁকি কম থাকে।
বর্তমানে ইয়াছমিন আক্তারের খামার থেকে মুরগি, ডিম ও বাচ্চার চাহিদা বাড়ছে স্থানীয় বাজারে। প্রত্যেক পিস বাচ্চা ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তার খামারের মুরগির ডিম স্থানীয়ভাবে খুব জনপ্রিয়। বাজারে ফাউমি মুরগি ও ডিমের চাহিদা অনেক বেশি। শেড বাড়িয়ে ভবিষ্যতে উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, যদি প্রত্যেক বাড়িতে একটি খামার স্থাপিত হয়, তবে দেশের উন্নতির পাশাপাশি পরিবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
বাউ মুরগির বিশেষত্ব হচ্ছে, বাউ মুরগির সাধ অনেক টাই দেশি মুরগির মতো। এই মুরগি দ্রুত বর্ধনশীল, মাত্র ৪২-৪৫ দিনে ১ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজন হয়। পাশাপাশি বাউ চিকেন মুরগি জলবায়ু সহিষ্ণু, তাই অধিক ঠান্ডা বা অধিক গরমেও বাউ মুরগির প্রভাব ফেলতে পারে না তাই এই মুরগির রোগবালাই খুবই কম আর যেহেতু রোগবালাই কম তাই বাউ মুরগির উপর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয় খুব কম তাই বাউ মুরগির মাংস বাজারের অন্য মুরগির মাংসের চেয়ে অনেকাংশে নিরাপদ। উপজেলায় বাউ ও ফাউমি মুরগি পালনে আগ্রহ বেড়েছে খামারিদের। সুস্বাদু ও পুষ্টিমান হওয়ায় বাউ মুরগির চাহিদাও প্রচুর। বর্তমানে সোনালী ২৭০-২৮০টাকা, লেয়ার ৩২০টাকা, ব্রয়লার ১৬০টাকা, ফাউমি ৩০০-৩৫০টাকা ও দেশি মুরগি ৫৫০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেশি মুরগি পালন করে ভাগ্য বদলের পাশাপাশি সফলতার স্বপ্নও বুনছেন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। ঘুরে দাঁড়ানো ও সামনে পথচলা। নিজের মুরগির খামার থেকে এখন বাণিজ্যিকভাবে ডিম ও মুরগি বাজারে বিক্রি করে নারীরা সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন।
অনেক নারীরা মুরগি পালনে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বল্প পুঁজিতে গড়ে তুলছেন খামার। স্বল্প পুঁজিতে দেশি মুরগি পালন করা যায় আবার বাড়তি কোনো ঝামেলাও নেই। বাড়ির বাইরে ছেড়ে দিলে ঘাস পোকা মাকড় খেয়ে থাকে। তুলনামূলক রোগ বালাইও কম। সে কারণে দেশি মুরগি চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তারা।
ইয়াছমিন আক্তার বলেন, তার খামারে এখন মুরগির পাশাপাশি ডিম ও বাচ্চা বিক্রিও শুরু হয়েছে। মুরগি থেকে উৎপাদিত ডিমের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, আর এর মাধ্যমে পরিবারের আয়ের পথ উন্মোচিত হয়েছে। রূপগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেহানা পারভীন বলেন, নারীদের সাফল্যের পেছনে রয়েছে তাদের অবিচল প্রচেষ্টা এবং দক্ষতা।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ইয়াছমিন আক্তারের মতো উদ্যোক্তা সৃষ্টি হলে রূপগঞ্জে মাংস ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে এক নতুন যুগের সূচনা হবে। রূপগঞ্জের নারী-পুরুষদের স্বাবলম্বী করতে ওয়ান থাউজেন্ড প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে যুবক-যুবতীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে আরো বৃহৎ আকারে প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।