গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) : লোকসানের ঝুঁকির আশঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা -সংবাদ
চলতি বছর আলু বিক্রি মৌসুমে দরপতনের কারণে গজারিয়ার আলু চাষী ও ব্যবসায়ীরা লোকসানের ঝুঁকির আশঙ্কায় রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, গত আলু রোপণ মৌসুমে গজারিয়া উপজেলায় দুইসহস্রাধিক হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এর আগের বছর আলুর দাম ভালো পাওয়ায় গত বছর উল্লিখিত পরিমান জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল, অনুকুল আবহাওয়ার কারণে হেক্টর প্রতি জমিতে আলির ফলনও ছিল আশাতীত ভালো।
সাধারণত, মাঘ ফাল্গুন মাসে কৃষক জমি থেকে আলু সংগ্রহ করে কিছু আলু বিক্রি করে অধিক পরিমাণ আলু পরবর্তী সময়ে বেশি দামে বিক্রির উদ্দেশ্যে হিমাগারে সংরক্ষণ করে থাকেন।
আলু চাষী কৃষক ও সংশ্লিষ্ট আলু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর আলু বিক্রি মৌসুমে আলুর অত্যাধিক দর পতনের কারণে তারা আর্থিক ভাবে লোকসানের ঝুঁকির মুখে রয়েছেন।
রোববার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫ কয়েক জন আলু চাষী ও ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয়। তাদের মধ্যে উপজেলার মাথাভাঙ্গা গ্রামের আলু চাষী আব্দুল খালেক ব্যাপারী, গত রোপণ মৌসুমে ১১ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করে প্রতি বিঘায় বীজ সার ও জমির পরিচর্যা মিলিয়ে একুনে প্রতি বিঘায় ব্যয় হয়েছিল ৫০ থেকে ৫২ হাজার টাকা, প্রতি বিঘায় আলুর ফলন ছিল ৫০ থেকে ৫৮ বস্তা (প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি হিসাব) তাহলে গড়ে প্রতিবস্তা আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছিল গড়ে ১ হাজার টাকা। আট থেকে দশ মাস প্রতি বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষন ব্যয় ৩শ’ টাকা যোগ করলে দশমাস পর ১৩শ’ টাকার আলুর প্রতি বস্তা বিক্রি করতে হচ্ছে ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫ টাকায়। এতে করে প্রতি বস্তায় লোকসান গুনতে হচ্ছে ৮শ’ হতে ৯শ’ টাকা।
একই কথা বললেন করিম খাঁ গ্রামের আলু চাষী মিন্টু মিয়া তিনি বলেন, নিজে জমির উৎপাদিত ও ক্রয় করে মুনাফার আশায় হিমাগারে ৩ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করেছিলেন তিনি।
দরপতনের পর ৩০ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মিন্টু মিয়া।
উপজেলা সদরে অবস্থিত মেঘনা মাল্টিপারপাস হিমাগারের ব্যবস্থাপক মো. সাহাদাত হোসেন জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানের ধারণ ক্ষমতা ১০ হাজার মে.টন অর্থাৎ ১ লাখ ৮৯ হাজার বস্তা। গত বছর আলুর উৎপাদন ভালো হওয়ায়, ১ লাখ ৯০ হাজর বস্তা আলু সংরক্ষিত ছিল হিমাগারে। রসুলপুর এলাকায় অবস্থিত অপর একটি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছিল ৮ হাজার মে.টন আলু।
দুটি হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারী অধিকাংশ চাষী ও ব্যবসায়ীদের দাবি, গড়ে প্রতি বস্তা আলু ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকায় বিক্রি করে বিশাল অংকের টাকা লোকশানের মুখে পড়েছেন।
গত মৌসুমের ন্যায় চলতি বিক্রি মৌসুমে আলুর উচ্চ দাম পাওয়ার আসায় মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অধিক সংখ্যক কৃষক আলুর আবাদ করেছিলেন। কিন্তু আলুর দাম নিম্নমুখী হওয়ায় এখন লোকসানের আশঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।
জানা যায়, উপজেলায় বোগদাদিয়া বহুমুখী ও মেঘনা মাল্টিপারপাস নামে দুটি হিমাগার রয়েছে।
দুটি হিমাগারে আলুর ধারণ ক্ষমতা ১৮ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন বর্তমানে ১৩ হাজার ৬৩৫ মেট্রিক টন খাবার আলুর পাশাপাশি বীজ আলু রয়েছে বলে জানান হিমাগার কর্তৃপক্ষ।
গতকাল রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, মাথাভাঙা ও রসুলপুর এলাকার দুটি হিমাগারের শেডের মেঝেতে বিছানো শত শত মণ আলু, ভেতরে মজুত করা রয়েছে বস্তায় বস্তায়। শেডে নারী শিশুসহ নানা বয়সী শ্রমিকলরা পঁচে যাওয়া আলু বাছাইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলার কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে এ উপজেলায় ২ হাজার ৪ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। আলু উৎপাদন হয়েছিল ৬২ হাজার ৬৫৩ মেট্রিক টন।
কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, উপজেলার দুটি হিমাগারের একই চিত্র। বিক্রিতে ভাটা পড়ায় সময়ের সঙ্গে হিমাগার থেকে কাক্সিক্ষত পরিমাণে আলু যাচ্ছে না খুচরা বাজারে। এর মধ্যে আসছে আলু আবাদের মৌসুম। তাই মজুত এই বিপুল পরিমাণ আলু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
তারা আরও বলছেন, খুচরা বাজারে ভালো দাম থাকলেও হিমাগার পর্যায়ে মিলছে না ন্যায্যমূল্য। প্রতি কেজি আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণে ব্যয় ২৫-৩০টাকা। বর্তমানে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকায়। এতে কেজিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ১৫-২০ টাকা। তাই ভারী হচ্ছে লোকসানের পাল্লা।
কয়েকজন আলু চাষী বলেন, গত আলু রোপণ মৌসুমে অধিক পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়ায় অধিকাংশ জমিতে রোপণ করা বীজ আলু পচে যাওয়ায় ধারদেনা করে জমিতে দ্বিতীয় দফায় বীজ দিতে খরচ দ্বিগুণ হয়েছিল।
হিমাগার সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি মৌসুমেএই সময়ের মধ্যে হিমাগারের তিন ভাগের দুই ভাগ আলু বের হয়ে যায়। কিন্তু এবার যে পরিস্থিতি, তাতে মনে হয় না দুই ভাগ আলু বের হবে। কৃষকদের কথা চিন্তা করে আমরা হিমাগার ভাড়াও কমিয়ে দিয়েছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল আরাফাত বিন সিদ্দিক জানান, আলুর মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে কৃষকের রোপণ করা আলুর বীজ নষ্ট হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় বীজ আলু রোপণ করতে হয়েছিল।এতে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর আলু উৎপাদন চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণ ফলন হওয়ায় মূল্য কম মূল্য পাচ্ছেন কৃষকরা।
তবে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সরকারি ভাবে আলু ক্রয় ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) : লোকসানের ঝুঁকির আশঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা -সংবাদ
রোববার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫
চলতি বছর আলু বিক্রি মৌসুমে দরপতনের কারণে গজারিয়ার আলু চাষী ও ব্যবসায়ীরা লোকসানের ঝুঁকির আশঙ্কায় রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, গত আলু রোপণ মৌসুমে গজারিয়া উপজেলায় দুইসহস্রাধিক হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এর আগের বছর আলুর দাম ভালো পাওয়ায় গত বছর উল্লিখিত পরিমান জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল, অনুকুল আবহাওয়ার কারণে হেক্টর প্রতি জমিতে আলির ফলনও ছিল আশাতীত ভালো।
সাধারণত, মাঘ ফাল্গুন মাসে কৃষক জমি থেকে আলু সংগ্রহ করে কিছু আলু বিক্রি করে অধিক পরিমাণ আলু পরবর্তী সময়ে বেশি দামে বিক্রির উদ্দেশ্যে হিমাগারে সংরক্ষণ করে থাকেন।
আলু চাষী কৃষক ও সংশ্লিষ্ট আলু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর আলু বিক্রি মৌসুমে আলুর অত্যাধিক দর পতনের কারণে তারা আর্থিক ভাবে লোকসানের ঝুঁকির মুখে রয়েছেন।
রোববার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫ কয়েক জন আলু চাষী ও ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয়। তাদের মধ্যে উপজেলার মাথাভাঙ্গা গ্রামের আলু চাষী আব্দুল খালেক ব্যাপারী, গত রোপণ মৌসুমে ১১ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করে প্রতি বিঘায় বীজ সার ও জমির পরিচর্যা মিলিয়ে একুনে প্রতি বিঘায় ব্যয় হয়েছিল ৫০ থেকে ৫২ হাজার টাকা, প্রতি বিঘায় আলুর ফলন ছিল ৫০ থেকে ৫৮ বস্তা (প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি হিসাব) তাহলে গড়ে প্রতিবস্তা আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছিল গড়ে ১ হাজার টাকা। আট থেকে দশ মাস প্রতি বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষন ব্যয় ৩শ’ টাকা যোগ করলে দশমাস পর ১৩শ’ টাকার আলুর প্রতি বস্তা বিক্রি করতে হচ্ছে ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫ টাকায়। এতে করে প্রতি বস্তায় লোকসান গুনতে হচ্ছে ৮শ’ হতে ৯শ’ টাকা।
একই কথা বললেন করিম খাঁ গ্রামের আলু চাষী মিন্টু মিয়া তিনি বলেন, নিজে জমির উৎপাদিত ও ক্রয় করে মুনাফার আশায় হিমাগারে ৩ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করেছিলেন তিনি।
দরপতনের পর ৩০ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মিন্টু মিয়া।
উপজেলা সদরে অবস্থিত মেঘনা মাল্টিপারপাস হিমাগারের ব্যবস্থাপক মো. সাহাদাত হোসেন জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানের ধারণ ক্ষমতা ১০ হাজার মে.টন অর্থাৎ ১ লাখ ৮৯ হাজার বস্তা। গত বছর আলুর উৎপাদন ভালো হওয়ায়, ১ লাখ ৯০ হাজর বস্তা আলু সংরক্ষিত ছিল হিমাগারে। রসুলপুর এলাকায় অবস্থিত অপর একটি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছিল ৮ হাজার মে.টন আলু।
দুটি হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারী অধিকাংশ চাষী ও ব্যবসায়ীদের দাবি, গড়ে প্রতি বস্তা আলু ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকায় বিক্রি করে বিশাল অংকের টাকা লোকশানের মুখে পড়েছেন।
গত মৌসুমের ন্যায় চলতি বিক্রি মৌসুমে আলুর উচ্চ দাম পাওয়ার আসায় মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অধিক সংখ্যক কৃষক আলুর আবাদ করেছিলেন। কিন্তু আলুর দাম নিম্নমুখী হওয়ায় এখন লোকসানের আশঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।
জানা যায়, উপজেলায় বোগদাদিয়া বহুমুখী ও মেঘনা মাল্টিপারপাস নামে দুটি হিমাগার রয়েছে।
দুটি হিমাগারে আলুর ধারণ ক্ষমতা ১৮ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন বর্তমানে ১৩ হাজার ৬৩৫ মেট্রিক টন খাবার আলুর পাশাপাশি বীজ আলু রয়েছে বলে জানান হিমাগার কর্তৃপক্ষ।
গতকাল রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, মাথাভাঙা ও রসুলপুর এলাকার দুটি হিমাগারের শেডের মেঝেতে বিছানো শত শত মণ আলু, ভেতরে মজুত করা রয়েছে বস্তায় বস্তায়। শেডে নারী শিশুসহ নানা বয়সী শ্রমিকলরা পঁচে যাওয়া আলু বাছাইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলার কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে এ উপজেলায় ২ হাজার ৪ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। আলু উৎপাদন হয়েছিল ৬২ হাজার ৬৫৩ মেট্রিক টন।
কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, উপজেলার দুটি হিমাগারের একই চিত্র। বিক্রিতে ভাটা পড়ায় সময়ের সঙ্গে হিমাগার থেকে কাক্সিক্ষত পরিমাণে আলু যাচ্ছে না খুচরা বাজারে। এর মধ্যে আসছে আলু আবাদের মৌসুম। তাই মজুত এই বিপুল পরিমাণ আলু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
তারা আরও বলছেন, খুচরা বাজারে ভালো দাম থাকলেও হিমাগার পর্যায়ে মিলছে না ন্যায্যমূল্য। প্রতি কেজি আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণে ব্যয় ২৫-৩০টাকা। বর্তমানে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকায়। এতে কেজিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ১৫-২০ টাকা। তাই ভারী হচ্ছে লোকসানের পাল্লা।
কয়েকজন আলু চাষী বলেন, গত আলু রোপণ মৌসুমে অধিক পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়ায় অধিকাংশ জমিতে রোপণ করা বীজ আলু পচে যাওয়ায় ধারদেনা করে জমিতে দ্বিতীয় দফায় বীজ দিতে খরচ দ্বিগুণ হয়েছিল।
হিমাগার সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি মৌসুমেএই সময়ের মধ্যে হিমাগারের তিন ভাগের দুই ভাগ আলু বের হয়ে যায়। কিন্তু এবার যে পরিস্থিতি, তাতে মনে হয় না দুই ভাগ আলু বের হবে। কৃষকদের কথা চিন্তা করে আমরা হিমাগার ভাড়াও কমিয়ে দিয়েছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল আরাফাত বিন সিদ্দিক জানান, আলুর মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে কৃষকের রোপণ করা আলুর বীজ নষ্ট হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় বীজ আলু রোপণ করতে হয়েছিল।এতে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর আলু উৎপাদন চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণ ফলন হওয়ায় মূল্য কম মূল্য পাচ্ছেন কৃষকরা।
তবে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সরকারি ভাবে আলু ক্রয় ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।