মাদারীপুর : ১০ মাস আগে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া আধুনিক ইকোপার্ক -সংবাদ
মাদারীপুরে পরিবেশ উন্নয়ন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য ৫ বছর আগে ৪০ কোটি টাকা খরচে আধুনিক ইকোপার্ক নির্মাণ কাজ শুরু করে সামাজিক বন বিভাগ। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের অর্থ না পাওয়ায় ১০ মাস আগে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। স্থানীয়দের বাঁধার মুখে ভয়ে চলে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটাই অসহায় সামাজিক বনবিভাগ। অবশ্য এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
মাদারীপুর বন বিভাগ ও স্থানীয় জানা গেছে, বিনোদনের খোরাক যোগাতে আর আড়াই হাজার বানরকে খাঁচায় বন্দি করতে মাদারীপুরে নির্মাণ শুরু হয় আধুনিক ইকোপার্ক। কিন্তু প্রকল্পের পময়াদ পশষ হলেও সম্পন্ন হয়নি নির্মাণ কাজ। সদর উপজেলার কুমড়াখালী মৌজার কুমার নদের পাড়ে নয়াচর এলাকায় ইকোপার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সামাজিক বন বিভাগ। প্রথম পর্যায়ে ৩১ কোটি ৭৪ লাখ টাকার অনুমোদন পেলে, পরে সংশোধনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকায়। ২০২০ সালে শুরু হওয়া নির্মাণ কাজ ২০২৫ সালের জুনে শেষ হবার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয় এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের অর্থ না দিলে আর করতে দেয়া হবে না প্রকল্পের কাজ। বাঁধার মুখে চলে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও।
ক্ষতিগ্রস্ত ২৪টি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা জমা দিয়েছে সামাজিক বন বিভাগ। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এই অর্থ প্রদান করার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। ইকোপার্কের নির্মাণকাজ শেষে এটি চালু হলে একদিকে বাড়বে জেলার পরিচিতি, অন্যদিকে বেকারদের হবে কর্মসংস্থান। তাই সব জটিলতা কাটিয়ে এটি দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও বিনোদন প্রেমীরা। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটাই অসহায় সামাজিক বনবিভাগের কর্মকর্তা। অবশ্য, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস উপজেলা প্রশাসনের।
বন বিভাগের তথ্য মতে, আধুনিক ইকোপার্ক প্রকল্পে থাকছে বিশাল বাধাইকরা বড় একটি পুকুর। চারটি পিকনিক স্পট, বানরের আবাসস্থল ও চিকিৎসা কেন্দ্র, চিলড্রেন কর্ণার, বহুতল পানির ট্যাংক, অর্কিড হাউজ, তিন তলাবিশিষ্ট অফিস ভবন, ইত্যাদি। জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত দেলোয়ার বেপারী বলেন, কয়েকবার আশ্বাস দিলেও আমরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছি না। একজন জেলা প্রশাসক আসে, আরেকজন যায়। তারা বদলি হলে আরও জটিলতা তৈরি হয়। আমরা ২৪টি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার ক্ষতিপূরণ পেলেও বাকি ২৩টি পরিবার কবে আলোর মুখ দেখবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন! আরেক ক্ষতিগ্রস্ত নাসির মোল্লা বলেন, আমাদের জমির ক্ষতিপূরণ না দিয়েই ইকোপার্কের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আমরা ভূক্তভোগী সবাই বাঁধা দিয়েছি। আমাদের জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ না দিলে আর কাজ করতে দিবো না। সুমি আক্তার বলেন, সরকার আমাদের জমি নিয়েছে, কিন্তু তার বিনিময়ে আমাদের কোনো ক্ষতিপূরণই দেয়নি। আমরা সারাজীবনের জমি হারিয়েছি, এর প্রাপ্য অর্থ পেলে খুশি হতাম। তা না হলে সবাই মিলে আন্দোলনে নামবো।
সামাজিক বন বিভাগের মাদারীপুর অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বন বিভাগ মাদারীপুর জেলা প্রশাসনকে ক্ষতিপূরণের অর্থ দিলেও তা পাচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্তরা। কাগজপত্র জটিলতা ও উচ্চ আদালতে একটি রিট থাকায় এই সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এই ইকোপার্কের কার্যক্রমের চালু করতে উচ্চপর্যায়ে একটি কমিটি গঠন হয়েছে। সেই কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, স্থানীয়দের বাঁধার কারণে ইকোপার্ক নির্মাণের কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। এটি দ্রুত চালু করতে সবধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। যাতে জেলাবাসী বিনোদন থেকে বঞ্চিত না হয়, আর বন্যপ্রাণীদেরও তাদের জীবন ধারনের পরিবেশ নিশ্চিত করে একস্থানে বন্দী করে রাখা যায়।
মাদারীপুর : ১০ মাস আগে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া আধুনিক ইকোপার্ক -সংবাদ
রোববার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫
মাদারীপুরে পরিবেশ উন্নয়ন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য ৫ বছর আগে ৪০ কোটি টাকা খরচে আধুনিক ইকোপার্ক নির্মাণ কাজ শুরু করে সামাজিক বন বিভাগ। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের অর্থ না পাওয়ায় ১০ মাস আগে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। স্থানীয়দের বাঁধার মুখে ভয়ে চলে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটাই অসহায় সামাজিক বনবিভাগ। অবশ্য এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
মাদারীপুর বন বিভাগ ও স্থানীয় জানা গেছে, বিনোদনের খোরাক যোগাতে আর আড়াই হাজার বানরকে খাঁচায় বন্দি করতে মাদারীপুরে নির্মাণ শুরু হয় আধুনিক ইকোপার্ক। কিন্তু প্রকল্পের পময়াদ পশষ হলেও সম্পন্ন হয়নি নির্মাণ কাজ। সদর উপজেলার কুমড়াখালী মৌজার কুমার নদের পাড়ে নয়াচর এলাকায় ইকোপার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সামাজিক বন বিভাগ। প্রথম পর্যায়ে ৩১ কোটি ৭৪ লাখ টাকার অনুমোদন পেলে, পরে সংশোধনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকায়। ২০২০ সালে শুরু হওয়া নির্মাণ কাজ ২০২৫ সালের জুনে শেষ হবার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয় এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের অর্থ না দিলে আর করতে দেয়া হবে না প্রকল্পের কাজ। বাঁধার মুখে চলে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও।
ক্ষতিগ্রস্ত ২৪টি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা জমা দিয়েছে সামাজিক বন বিভাগ। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এই অর্থ প্রদান করার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। ইকোপার্কের নির্মাণকাজ শেষে এটি চালু হলে একদিকে বাড়বে জেলার পরিচিতি, অন্যদিকে বেকারদের হবে কর্মসংস্থান। তাই সব জটিলতা কাটিয়ে এটি দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও বিনোদন প্রেমীরা। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটাই অসহায় সামাজিক বনবিভাগের কর্মকর্তা। অবশ্য, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস উপজেলা প্রশাসনের।
বন বিভাগের তথ্য মতে, আধুনিক ইকোপার্ক প্রকল্পে থাকছে বিশাল বাধাইকরা বড় একটি পুকুর। চারটি পিকনিক স্পট, বানরের আবাসস্থল ও চিকিৎসা কেন্দ্র, চিলড্রেন কর্ণার, বহুতল পানির ট্যাংক, অর্কিড হাউজ, তিন তলাবিশিষ্ট অফিস ভবন, ইত্যাদি। জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত দেলোয়ার বেপারী বলেন, কয়েকবার আশ্বাস দিলেও আমরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছি না। একজন জেলা প্রশাসক আসে, আরেকজন যায়। তারা বদলি হলে আরও জটিলতা তৈরি হয়। আমরা ২৪টি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার ক্ষতিপূরণ পেলেও বাকি ২৩টি পরিবার কবে আলোর মুখ দেখবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন! আরেক ক্ষতিগ্রস্ত নাসির মোল্লা বলেন, আমাদের জমির ক্ষতিপূরণ না দিয়েই ইকোপার্কের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আমরা ভূক্তভোগী সবাই বাঁধা দিয়েছি। আমাদের জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ না দিলে আর কাজ করতে দিবো না। সুমি আক্তার বলেন, সরকার আমাদের জমি নিয়েছে, কিন্তু তার বিনিময়ে আমাদের কোনো ক্ষতিপূরণই দেয়নি। আমরা সারাজীবনের জমি হারিয়েছি, এর প্রাপ্য অর্থ পেলে খুশি হতাম। তা না হলে সবাই মিলে আন্দোলনে নামবো।
সামাজিক বন বিভাগের মাদারীপুর অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বন বিভাগ মাদারীপুর জেলা প্রশাসনকে ক্ষতিপূরণের অর্থ দিলেও তা পাচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্তরা। কাগজপত্র জটিলতা ও উচ্চ আদালতে একটি রিট থাকায় এই সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এই ইকোপার্কের কার্যক্রমের চালু করতে উচ্চপর্যায়ে একটি কমিটি গঠন হয়েছে। সেই কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, স্থানীয়দের বাঁধার কারণে ইকোপার্ক নির্মাণের কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। এটি দ্রুত চালু করতে সবধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। যাতে জেলাবাসী বিনোদন থেকে বঞ্চিত না হয়, আর বন্যপ্রাণীদেরও তাদের জীবন ধারনের পরিবেশ নিশ্চিত করে একস্থানে বন্দী করে রাখা যায়।