ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
মুখের চামড়া ভাঁজে ভাঁজে ঢেউয়ে মতো। ফর্সা সুন্দর মুখখানি ভাঁজের ফাঁকে হাসি মাখা। যেন মেঘের আড়াল কেটে গেলে সূর্যের প্রখরতা। সব সময় পড়নে থাকে তাদের আদি ঐতিহ্য পোশাক দকমান্দা আর দকশাড়ী। কখন বা গায়ে হাতাকাটা গোল গলার গেঞ্জি পড়নে থাকে।
সকালে ঘুম উঠে কিশোরীর মত কাজ শুরু করে। কোন কাজ তাকে বলে দিতে হয় না। সব দেখে শোনে বুঝে নিজের মত করে সাজিয়ে গুছিয়ে করে। উঠান বাড়ি ঝাড়ু থেকে শুরু করে সব যেন তার মুখস্থ। সকালের খাবার খেয়ে বাড়ির গরু ছাগলের খাবার যোগাতে কেটে যায় বেলা। বাড়ির পাশ ছুটে তাদের জুংগা নিয়ে। হাতে কাস্তে আর মাথা ছোট কাপড় নিয়ে। বসে বসে আস্তে আস্ত নরম হাতে কাটেন ঘাস। নিরিবিলি নিরলস ভাবে ঘাস কেটে নিজেই মাথায় করে নিয়ে আসে জুংআ ভরা ঘাস। বাড়িতে এনে কেটে দেন গরু ছাগলকে। গোসল সেরে খেয়ে নেন সামান্য খাবার। অবসরে বসে বসে চা খান। কাউকে দেখেই হাসেন।
কানে না শোনা এ মানুষটি সব সময় হাসি মাখা মুখে কথা বলে। তার বাড়তি কোন চাহিদা না থাকলেও কাজে তার অলসতা নেই। কাজ না করলে তার মন ভালো থাকে না। পরিবারের কেউ তাকে কাজ করতেও মানা করে না। শিশুর মতো তাকে তার কাজ করার সুযোগ দেয়। যাতে তার শরীর মন ভালো থাকে। বলছিলাম টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ধরাটী গ্রামের বানদ্রি নকরেকের কথা। তার বয়স প্রায় শতকের কোঁঠায়। স্বামী চলে গেছে আরো আগেই। তার ছয় ছেলে দুই মেয়ের সংসার। এখনও তিনি তার মান্দি সংস্কৃতির নিয়মেই চলে। কি পোশাক কি খাবার। সব কিছুতেই তার জানা। অজানা নেই কোন কিছুই। তবে অনেকেই কিছুই তিনি মনে করতে পারে না। ভুলে যান। তবুও তিনি ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে রাতে সুখের নিদ্রায় যান।
মধুপুর শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে কুড়াগাছা ইউনিয়নের ধরাটী গ্রাম। এ গ্রামের বেশির ভাগ বসতি গারো সম্প্রদায়ের। তবে পূর্ব দিকে কোনাবাড়ি এলাকায় তাদের বসতি বেশি। পশ্চিম পাশেই কম। কোনাবাড়ি বাজারের কাছেই তার বাড়ি। বাড়ির পূর্ব দিকে বাইদ। দক্ষিণে বাড়ি কলার বাগান। পশ্চিমে কৃষি বাগান। গ্রামটিতে মাঝে মাঝেই রয়েছে দোকানপাট। স্থানীয়রা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আবার কেউ কেউ ফসল চাষ করে, চাকরিজীবী এনজিও কর্মী বেসরকারি কর্মজীবীও রয়েছে। শহর থেকে বাজার পর্যন্ত পাকা সড়ক। তবে আশপাশের সড়কগুলো কাঁচা। এ গ্রামেই বানদ্রি নকরকের জন্ম। বিয়েও করেছেন এ গ্রামেই। তার স্বামীর নাম ছিল দীনেশ হাগিদক। স্বামী মারা গেছে অনেক আগেই। ছেলে মেয়ে নাতি পুতি নিয়ে চলে তার দিন কাল।
তার বাড়িতে বসে কথা হলে জানা যায়, বানদ্রি ননকরেকের জানেন তাদের সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয়। ওয়ানগালা, রংচুগালাসহ না পর্বের নানা তথ্য। দেখেছেন মধুপুর বনের অনেক ঐতিহ্য। দেখেছেন তাদের সংস্কৃতির নানা দিক। শোনেছেন ঐতিহ্যের রেঁরেঁ আজিয়া সেরেনজিং এর মত গান। নিজের কন্ঠে তোলেছেন সুর। নানা উৎসব পার্বনে নিজের সংস্কৃতির প্রতি ছিল তার অঘাত প্রেম আর ভালবাসা। এখন বয়সের ভারে ক্লান্ত বানদ্রি নকরেক। তাদের নিয়ম অনুযায়ী মেয়েকে বাড়িতে এনেছেন। জামাই এনেছে। ছোট মেয়ে অর্চনা নকরেক। তিনি নকনা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই বার সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হিসেবে পাশ করেন।
তার ছোট মেয়ে অর্চনা নকরেক জানান, তার বয়স প্রায় একশ’র মতো। সে তার মন মতো কাজ করে। ঘাস কাটে। বাড়ি ঘর ঝাড়ু দেয়। তাকে তারা কাজ করতে না করে না, কারণ হিসেবে তিনি জানান কাজ বন্ধ করলে শরীর খারাপ হতে পারে। সচল থেকে কাজ করে সুস্থ থাকে । মা হিসেবে তার মা খুব প্রিয়, খুব ভালো। সারা দিন কাজ করে। কোন ক্লান্তি নেই।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫
মুখের চামড়া ভাঁজে ভাঁজে ঢেউয়ে মতো। ফর্সা সুন্দর মুখখানি ভাঁজের ফাঁকে হাসি মাখা। যেন মেঘের আড়াল কেটে গেলে সূর্যের প্রখরতা। সব সময় পড়নে থাকে তাদের আদি ঐতিহ্য পোশাক দকমান্দা আর দকশাড়ী। কখন বা গায়ে হাতাকাটা গোল গলার গেঞ্জি পড়নে থাকে।
সকালে ঘুম উঠে কিশোরীর মত কাজ শুরু করে। কোন কাজ তাকে বলে দিতে হয় না। সব দেখে শোনে বুঝে নিজের মত করে সাজিয়ে গুছিয়ে করে। উঠান বাড়ি ঝাড়ু থেকে শুরু করে সব যেন তার মুখস্থ। সকালের খাবার খেয়ে বাড়ির গরু ছাগলের খাবার যোগাতে কেটে যায় বেলা। বাড়ির পাশ ছুটে তাদের জুংগা নিয়ে। হাতে কাস্তে আর মাথা ছোট কাপড় নিয়ে। বসে বসে আস্তে আস্ত নরম হাতে কাটেন ঘাস। নিরিবিলি নিরলস ভাবে ঘাস কেটে নিজেই মাথায় করে নিয়ে আসে জুংআ ভরা ঘাস। বাড়িতে এনে কেটে দেন গরু ছাগলকে। গোসল সেরে খেয়ে নেন সামান্য খাবার। অবসরে বসে বসে চা খান। কাউকে দেখেই হাসেন।
কানে না শোনা এ মানুষটি সব সময় হাসি মাখা মুখে কথা বলে। তার বাড়তি কোন চাহিদা না থাকলেও কাজে তার অলসতা নেই। কাজ না করলে তার মন ভালো থাকে না। পরিবারের কেউ তাকে কাজ করতেও মানা করে না। শিশুর মতো তাকে তার কাজ করার সুযোগ দেয়। যাতে তার শরীর মন ভালো থাকে। বলছিলাম টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ধরাটী গ্রামের বানদ্রি নকরেকের কথা। তার বয়স প্রায় শতকের কোঁঠায়। স্বামী চলে গেছে আরো আগেই। তার ছয় ছেলে দুই মেয়ের সংসার। এখনও তিনি তার মান্দি সংস্কৃতির নিয়মেই চলে। কি পোশাক কি খাবার। সব কিছুতেই তার জানা। অজানা নেই কোন কিছুই। তবে অনেকেই কিছুই তিনি মনে করতে পারে না। ভুলে যান। তবুও তিনি ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে রাতে সুখের নিদ্রায় যান।
মধুপুর শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে কুড়াগাছা ইউনিয়নের ধরাটী গ্রাম। এ গ্রামের বেশির ভাগ বসতি গারো সম্প্রদায়ের। তবে পূর্ব দিকে কোনাবাড়ি এলাকায় তাদের বসতি বেশি। পশ্চিম পাশেই কম। কোনাবাড়ি বাজারের কাছেই তার বাড়ি। বাড়ির পূর্ব দিকে বাইদ। দক্ষিণে বাড়ি কলার বাগান। পশ্চিমে কৃষি বাগান। গ্রামটিতে মাঝে মাঝেই রয়েছে দোকানপাট। স্থানীয়রা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আবার কেউ কেউ ফসল চাষ করে, চাকরিজীবী এনজিও কর্মী বেসরকারি কর্মজীবীও রয়েছে। শহর থেকে বাজার পর্যন্ত পাকা সড়ক। তবে আশপাশের সড়কগুলো কাঁচা। এ গ্রামেই বানদ্রি নকরকের জন্ম। বিয়েও করেছেন এ গ্রামেই। তার স্বামীর নাম ছিল দীনেশ হাগিদক। স্বামী মারা গেছে অনেক আগেই। ছেলে মেয়ে নাতি পুতি নিয়ে চলে তার দিন কাল।
তার বাড়িতে বসে কথা হলে জানা যায়, বানদ্রি ননকরেকের জানেন তাদের সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয়। ওয়ানগালা, রংচুগালাসহ না পর্বের নানা তথ্য। দেখেছেন মধুপুর বনের অনেক ঐতিহ্য। দেখেছেন তাদের সংস্কৃতির নানা দিক। শোনেছেন ঐতিহ্যের রেঁরেঁ আজিয়া সেরেনজিং এর মত গান। নিজের কন্ঠে তোলেছেন সুর। নানা উৎসব পার্বনে নিজের সংস্কৃতির প্রতি ছিল তার অঘাত প্রেম আর ভালবাসা। এখন বয়সের ভারে ক্লান্ত বানদ্রি নকরেক। তাদের নিয়ম অনুযায়ী মেয়েকে বাড়িতে এনেছেন। জামাই এনেছে। ছোট মেয়ে অর্চনা নকরেক। তিনি নকনা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই বার সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হিসেবে পাশ করেন।
তার ছোট মেয়ে অর্চনা নকরেক জানান, তার বয়স প্রায় একশ’র মতো। সে তার মন মতো কাজ করে। ঘাস কাটে। বাড়ি ঘর ঝাড়ু দেয়। তাকে তারা কাজ করতে না করে না, কারণ হিসেবে তিনি জানান কাজ বন্ধ করলে শরীর খারাপ হতে পারে। সচল থেকে কাজ করে সুস্থ থাকে । মা হিসেবে তার মা খুব প্রিয়, খুব ভালো। সারা দিন কাজ করে। কোন ক্লান্তি নেই।