alt

সিলেট-আখাউড়া রেলপথ: ১৭৯ কিলোমিটারে ১৩টি ‘ডেড স্টপ’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, সিলেট : বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

ট্রেনকে বলা হয় নিরাপদ বাহন। সড়কপথে ঘনঘন দুর্ঘটনার কারণে ট্রেনে যাত্রায় অপেক্ষাকৃত স্বস্তিও বোধ করেন যাত্রীরা। তবে সিলেট-আখাউড়া রেলপথের জন্য এসব প্রযোজ্য নয়। ট্রেনের এই রুটটি হয়ে ওঠেছে যাত্রীদের জন্য আতঙ্কের নাম। এই রুটে বারবার ঘটছে দুর্ঘটনা। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার সকালে সিলেটের মোগলাবাজারে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’-এর চারটি বগি।

সিলেট-আখাউড়া রেলপথের দৈর্ঘ্য ১৭৯ কিলোমিটার। জরাজীর্ণ হয়ে পড়া এই সেকশনে রয়েছে ১৩টি মহাঝুঁকিপূর্ণ সেতু। রেলওয়ের ভাষায় যা ‘ডেডস্টপ’। এছাড়া ট্রেন লাইনও ত্রুটিপূর্ণ। এসবের সঙ্গে রয়েছে ট্রেনের পুরনো ইঞ্জিন আর বগি। এসব মিলিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে সিলেট-আখাউড়া রেলপথে ট্রেন ভ্রমণ।

ঘনঘন দুর্ঘটনার কারণে এই সেকশনে ট্রেনের সময়সূচিও ঠিক থাকছে না। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, সিলেট-কুলাউড়া-আখাউড়া সেকশনে আগে ট্রেন চলতো ৭০-৮০ কিলোমিটার গতিতে। এখন সেই গতি অর্ধেকে অর্থাৎ ৪০ কিলোমিটারে নেমে এসেছে।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, পাহাড়ি ও আঁকাবাকা সড়ক হওয়ায় আখাউড়া-সিলেট সেকশনের রশিপুর থেকে মাইজগাঁও পর্যন্ত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে জরাজীর্ণ লাইন, মেয়াদোত্তীর্ণ সেতু ও পুরনো কোচের কারণে এই সেকশনে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের তথ্যমতে, আখাউড়া-সিলেট রেলপথে পারাবত, জয়ন্তিকা, পাহাড়িকা, উদয়ন, উপবন ও কালনি এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রতিদিন ১২-১৫ হাজার যাত্রী সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-চট্টগ্রাম যাতায়াত করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (নসাক) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ট্রেনকে বলা হয় নিরাপদ বাহন। তবে ট্রেনের এই তকমা প্রশ্নের মুখে পড়েছে সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের কারণে। এই সেকশনে ঘনঘন দুর্ঘটনা ট্রেন যাত্রাকে করে তুলেছে অনিরাপদ। ট্রেনলাইন ও ট্রেনের বগি দ্রুত আধুনিকায়নের দাবি জানান তিনি।

ত্রুটিপূর্ণ রেলপথ, ঝুঁকিপূর্ণ সেতু

সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের মোগলাবাজার-মাইজগাঁও পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ জায়গায় স্লিপারের নাট-বল্টু খুলে গেছে। আবার কোথাও কোথাও নাট-বল্টু ঢিলে থাকায় রেললাইন নড়বড়ে হয়ে আছে। রেলের দুই স্লিপারের মাঝখানে নেই পর্যাপ্ত পাথর।

এই সেকশনের সেতুগুলোর অবস্থা আরও নাজুক। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, নির্মাণের ৫০-৫৫ বছর পরই সেতুর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। অথচ এ রুটের ৯০ শতাংশ সেতুর বয়সই ৭০ বছর পেরিয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এরকম ১৩টি স্পটকে ‘ডেড স্টপ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেট-মোগলাবাজার স্টেশন পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৮টি এবং মোগলাবাজার-আখাউড়া পর্যন্ত ১৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে ৫টি সেতু ‘ডেড স্টপ’ হিসেবে চিহ্নিত।

রেলওয়ের প্রকৌশল শাখা জানায়, সিলেট-আখাউড়া সেকশনের অতিঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর মধ্যে রয়েছে- শমসেরনগর-টিলাগাঁও সেকশনের ২০০ নম্বর সেতু, মোগলাবাজার-মাইজগাঁও সেকশনের ৪৩, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর সেতু, কুলাউড়া-বরমচাল সেকশনের ৫ ও ৭ নম্বর সেতু, সাতগাঁও-শ্রীমঙ্গল সেকশনের ১৪১ নম্বর সেতু, শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সেকশনের ১৫৭ নম্বর সেতু, মাইজগাঁও-ভাটেরাবাজার সেকশনের ২৯ নম্বর সেতু এবং মনতলা-ইটাখোলা সেকশনের ৫৬ নম্বর

সেতু। এই সেতুগুলো সংস্কারের কোনো প্রকল্প না থাকায় এখনই এগুলো সংস্কারের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

লাইনচ্যুত উদয়ন

গতকাল মঙ্গলবার সকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজারে ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’-এর ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে।

সকাল ৭টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকার পর সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে লাইন সচল হয়। এরপর আটকে পড়া ‘কালনি এক্সপ্রেস’ মোগলাবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

এদিকে এ ঘটনায় দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনে দায়িত্বরত দুজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন, দুর্ঘটনাকবলিত উদয়ন এক্সপ্রেসের লোকো মাস্টার মো. ইলিয়াস ও সহকারী লোকো মাস্টার জহিরুল ইসলাম নোমান।

দুর্ঘটনার পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। তবে কমিটির সদস্যদের নাম জানাননি তিনি।

এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক, ঢাকা এ কমিটি গঠন করেন।

কমিটির সদস্যরা হলেন- রেলওয়ের ঢাকা অঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা, বিভাগীয় প্রকৌশলী-২, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী, বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী। এই কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

ডুয়েল গেজ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি, ঢাকা-আখাউড়া পর্যন্ত রয়েছে ডুয়েল গেজ লাইন। কিন্তু আখাউড়া-সিলেট পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলের রেললাইনেই চলছে ট্রেন। ২০১৯ সালে সিলেট-আখাউড়া রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরিত করার জন্য একনেকে ১৬ হাজার ১৪৪ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে এ প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি।

এই দাবিতে সম্প্রতি আন্দোলনেও নেমেছে কয়েকটি সংগঠন।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, এই রুটে ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সিলেটের যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে ট্রেন ও বগি বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।

ছবি

সিকৃবিতে বানরের আক্রমণে শতাধিক ছাত্রী আহত, প্রধান বন সংরক্ষকের সাথে সিকৃবি ভিসির বৈঠক

ছবি

ডেঙ্গু: ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭শ’ জন হাসপাতালে, ৩ জনের মৃত্যু

ছবি

সুন্দরগঞ্জে টিকাদানকারী জনবল সংকট, গবাদিপশু নিয়ে শঙ্কা

ছবি

জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের বেতন-ভাতা চালুর নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের

ছবি

জোয়ারে খুলনায় উচ্চ বেড়িবাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে স্থানীয়রা

‘প্রত্যেক মামলায় নাম থাকবে’— সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিককে বিএনপি নেতার হুমকি

ছবি

ধামরাইয়ে উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৫ জন গ্রেপ্তার

ছবি

যশোরে পৌনে আট লাখ শিশুকে টাইফয়েড টিকা দানের লক্ষ্যমাত্রা

ছবি

টেকনাফে ১৭০ রোহিঙ্গা আটক, ক্যাম্প মাঝিদের হাতে হস্তান্তর

ছবি

জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে মহেশপুরে র‌্যালি ও আলোচনা সভা

ছবি

টাঙ্গাইলে চারাবাড়ী এসডিএস সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক ধসে যানবাহন চলাচল বন্ধ

ছবি

শ্রীনগরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতি আনুমানিক ১০ লাখ টাকা

ছবি

কুড়িগ্রামে পানিবন্দি ৩ হাজার মানুষ, নদীতে ১৬ বাড়ি ও ৪ মসজিদ

ছবি

নড়াইলে পুকুরে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু

ছবি

মানিকগঞ্জে এনজিও কর্মীর মরদেহ উদ্ধার

ছবি

মাগুরায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামগঞ্জে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব

ছবি

প্রকাশ্যে চলছে শোলমারী নদী দখলের মহোৎসব

ছবি

শরণখোলায় মা ইলিশ রক্ষায় মোবাইল কোর্টের অভিযানে

ছবি

সরাইলে তিতাস নদীতে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

ছবি

সড়ক দুর্ঘটনায় হেফাজত নেতার মৃত্যু, কর্মীদের সড়ক অবরোধ

ছবি

ঝালকাঠিতে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত

ছবি

‘সরকার যে টিকা দিচ্ছে তা নিরাপদ’

ছবি

লৌহজংয়ে সরকারি খাসজমি উদ্ধার

ছবি

রামু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব সম্পন্ন

ছবি

যশোরে পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু

ছবি

কিডনি বিকলে জীবনযুদ্ধে নাইমুল

ছবি

১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ১৫ জন

ছবি

পার্বতীপুর মধ্যপাড়া রেঞ্জ বন বিভাগের ১১০০ একর বনভূমি দখল

ছবি

নবাবগঞ্জে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালিত

ছবি

টঙ্গীবাড়ীতে রাস্তা সংস্কারের দাবীতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

ছবি

পাঁচবিবিতে গ্রাম পুলিশদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা

ছবি

গঙ্গাচড়ায় ঘূর্ণিঝড়ের চারদিনেও ফেরেনি বিদ্যুৎ

ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকের মাঝে শীতকালীন সবজি বীজ-সার বিতরণ

ছবি

ঝিনাইগাতীতে কৃষিনীতি বাস্তবায়নের জন্য অ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত

ছবি

বৃদ্ধা নীলিমার দুঃখ ঘুচলো না

ছবি

খানাখন্দে ভরা ঢাকা-পাথরঘাটা মহাসড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

tab

সিলেট-আখাউড়া রেলপথ: ১৭৯ কিলোমিটারে ১৩টি ‘ডেড স্টপ’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, সিলেট

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

ট্রেনকে বলা হয় নিরাপদ বাহন। সড়কপথে ঘনঘন দুর্ঘটনার কারণে ট্রেনে যাত্রায় অপেক্ষাকৃত স্বস্তিও বোধ করেন যাত্রীরা। তবে সিলেট-আখাউড়া রেলপথের জন্য এসব প্রযোজ্য নয়। ট্রেনের এই রুটটি হয়ে ওঠেছে যাত্রীদের জন্য আতঙ্কের নাম। এই রুটে বারবার ঘটছে দুর্ঘটনা। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার সকালে সিলেটের মোগলাবাজারে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’-এর চারটি বগি।

সিলেট-আখাউড়া রেলপথের দৈর্ঘ্য ১৭৯ কিলোমিটার। জরাজীর্ণ হয়ে পড়া এই সেকশনে রয়েছে ১৩টি মহাঝুঁকিপূর্ণ সেতু। রেলওয়ের ভাষায় যা ‘ডেডস্টপ’। এছাড়া ট্রেন লাইনও ত্রুটিপূর্ণ। এসবের সঙ্গে রয়েছে ট্রেনের পুরনো ইঞ্জিন আর বগি। এসব মিলিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে সিলেট-আখাউড়া রেলপথে ট্রেন ভ্রমণ।

ঘনঘন দুর্ঘটনার কারণে এই সেকশনে ট্রেনের সময়সূচিও ঠিক থাকছে না। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, সিলেট-কুলাউড়া-আখাউড়া সেকশনে আগে ট্রেন চলতো ৭০-৮০ কিলোমিটার গতিতে। এখন সেই গতি অর্ধেকে অর্থাৎ ৪০ কিলোমিটারে নেমে এসেছে।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, পাহাড়ি ও আঁকাবাকা সড়ক হওয়ায় আখাউড়া-সিলেট সেকশনের রশিপুর থেকে মাইজগাঁও পর্যন্ত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে জরাজীর্ণ লাইন, মেয়াদোত্তীর্ণ সেতু ও পুরনো কোচের কারণে এই সেকশনে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের তথ্যমতে, আখাউড়া-সিলেট রেলপথে পারাবত, জয়ন্তিকা, পাহাড়িকা, উদয়ন, উপবন ও কালনি এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রতিদিন ১২-১৫ হাজার যাত্রী সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-চট্টগ্রাম যাতায়াত করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (নসাক) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ট্রেনকে বলা হয় নিরাপদ বাহন। তবে ট্রেনের এই তকমা প্রশ্নের মুখে পড়েছে সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের কারণে। এই সেকশনে ঘনঘন দুর্ঘটনা ট্রেন যাত্রাকে করে তুলেছে অনিরাপদ। ট্রেনলাইন ও ট্রেনের বগি দ্রুত আধুনিকায়নের দাবি জানান তিনি।

ত্রুটিপূর্ণ রেলপথ, ঝুঁকিপূর্ণ সেতু

সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের মোগলাবাজার-মাইজগাঁও পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ জায়গায় স্লিপারের নাট-বল্টু খুলে গেছে। আবার কোথাও কোথাও নাট-বল্টু ঢিলে থাকায় রেললাইন নড়বড়ে হয়ে আছে। রেলের দুই স্লিপারের মাঝখানে নেই পর্যাপ্ত পাথর।

এই সেকশনের সেতুগুলোর অবস্থা আরও নাজুক। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, নির্মাণের ৫০-৫৫ বছর পরই সেতুর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। অথচ এ রুটের ৯০ শতাংশ সেতুর বয়সই ৭০ বছর পেরিয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এরকম ১৩টি স্পটকে ‘ডেড স্টপ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেট-মোগলাবাজার স্টেশন পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৮টি এবং মোগলাবাজার-আখাউড়া পর্যন্ত ১৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে ৫টি সেতু ‘ডেড স্টপ’ হিসেবে চিহ্নিত।

রেলওয়ের প্রকৌশল শাখা জানায়, সিলেট-আখাউড়া সেকশনের অতিঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর মধ্যে রয়েছে- শমসেরনগর-টিলাগাঁও সেকশনের ২০০ নম্বর সেতু, মোগলাবাজার-মাইজগাঁও সেকশনের ৪৩, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর সেতু, কুলাউড়া-বরমচাল সেকশনের ৫ ও ৭ নম্বর সেতু, সাতগাঁও-শ্রীমঙ্গল সেকশনের ১৪১ নম্বর সেতু, শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সেকশনের ১৫৭ নম্বর সেতু, মাইজগাঁও-ভাটেরাবাজার সেকশনের ২৯ নম্বর সেতু এবং মনতলা-ইটাখোলা সেকশনের ৫৬ নম্বর

সেতু। এই সেতুগুলো সংস্কারের কোনো প্রকল্প না থাকায় এখনই এগুলো সংস্কারের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

লাইনচ্যুত উদয়ন

গতকাল মঙ্গলবার সকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজারে ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’-এর ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে।

সকাল ৭টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকার পর সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে লাইন সচল হয়। এরপর আটকে পড়া ‘কালনি এক্সপ্রেস’ মোগলাবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

এদিকে এ ঘটনায় দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনে দায়িত্বরত দুজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন, দুর্ঘটনাকবলিত উদয়ন এক্সপ্রেসের লোকো মাস্টার মো. ইলিয়াস ও সহকারী লোকো মাস্টার জহিরুল ইসলাম নোমান।

দুর্ঘটনার পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। তবে কমিটির সদস্যদের নাম জানাননি তিনি।

এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক, ঢাকা এ কমিটি গঠন করেন।

কমিটির সদস্যরা হলেন- রেলওয়ের ঢাকা অঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা, বিভাগীয় প্রকৌশলী-২, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী, বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী। এই কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

ডুয়েল গেজ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি, ঢাকা-আখাউড়া পর্যন্ত রয়েছে ডুয়েল গেজ লাইন। কিন্তু আখাউড়া-সিলেট পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলের রেললাইনেই চলছে ট্রেন। ২০১৯ সালে সিলেট-আখাউড়া রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরিত করার জন্য একনেকে ১৬ হাজার ১৪৪ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে এ প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি।

এই দাবিতে সম্প্রতি আন্দোলনেও নেমেছে কয়েকটি সংগঠন।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, এই রুটে ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সিলেটের যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে ট্রেন ও বগি বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।

back to top