alt

জোয়ারে খুলনায় উচ্চ বেড়িবাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে স্থানীয়রা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা : বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

দাকোপ উপজেলার বটবুনিয়া হরিসভা মন্দির এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত -সংবাদ

খুলনার দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়া হরিসভা মন্দির এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

তিলডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন গাজী জানান, গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বটবুনিয়া বাজারের পাশে হরিসভা মন্দির এলাকার বেড়িবাঁধের প্রায় ২৫ মিটার এলাকায় এ ভাঙন দেখা দেয়। উচ্চ জোয়ারের চাপে মুহূর্তেই ঢাকি নদীসংলগ্ন বাঁধ ভেঙে যায়। আগে থেকে বেড়িবাঁধের জায়গাটি বেশ দুর্বল থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড তা গুরুত্ব দেয়নি।

ইউপি চেয়ারম্যান জালাল বলেন, এতে উত্তর কামিনীবাসিয়া, বটবুনিয়া, নিশানখালী ও আড়াখালী গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি, মৎস্যঘের, পুকুর ও ৩ হাজার বিঘা জমির আমন ফসলের খেত পানিতে তলিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। পরবর্তী জোয়ারগুলো নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

জালাল বলেন, বাঁধ আটকাতে না পারলে দক্ষিণ কামিনীবাসিয়া, ভাদলাবুনিয়া, মশামারী, গড়খালী ও কাকড়া বুনিয়াসহ প্রায় গোটা ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় প্রায়ই তারা বেড়িবাঁধ ভেঙে ক্ষতির মুখে পড়েন। বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া জায়গায় এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমত হোসেন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ পরিবারের মাঝে শুকনো চিড়া, গুড়, চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, বটবুনিয়া হরিসভা মন্দির এলাকার বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশে আগে থেকেই জিও টিউব দেয়া ছিল। তবে তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় উচ্চ জোয়ারের চাপে ২৫ মিটারের মতো জায়গায় বাঁধ ভেঙে যায়।

আশরাফুল বলেন, নতুন করে ‘জরুরি পরিস্থিতি’র সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আশাকরি দ্রুত বাঁধটি মেরামত হয়ে যাবে।

আশরাফুল বলেন, আগে দাকোপের ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারে বিশ্বব্যাংকের ঋণকৃত প্রায় ১৫০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে, যা চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি বাস্তবায়ন করেছে। এছাড়া ৩১ নম্বর পোল্ডারে জাইকার অর্থায়নে প্রায় ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয় ৩ হাজার ৭৫০ মিটার স্থায়ী নদীশাসনের কাজ চলমান রয়েছে। দাকোপের ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে ৩১ নম্বর পোল্ডারের আওতায় পড়েছে পানখালী ও তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন এবং চালনা পৌরসভা।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের কাজের ধীরগতিতে সংকট আরো তীব্র হয়েছে। এতে প্রশাসনেরও কোনো তদারকি নেই।

চলমান প্রকল্পের কাজে ধীরগতি সম্পর্কে আশরাফুল বলেন, বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায় সংস্কার বা মেরামতের প্রস্তবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর তা অনুমোদন হয়ে আসতে সময় লাগে। তাছাড়া উপকূলীয় এলাকায় নির্মাণ কাজের মাটি ও বালুর সংকট রয়েছে। এজন্য কাজে ধীরগতি দেখা দেয়।

আশরাফুল আরও বলেন, ৩১ নম্বর পোল্ডারে ২২ কোটি টাকার একটি মেগাপ্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৪৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ এবং ২০ কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ হবে। একইসঙ্গে ৩১টি ছোট-বড় জলকাপাট সংস্কার ও নির্মাণ করা হবে।

এদিকে এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে সুন্দরবন উপকলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ সংস্কার ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে নেয়া প্রকল্পগুলোর কাজে ধীরগতি, দুর্নীতি ও লুটপাটের চিত্র দেখা যায়। বিশেষকরে ‘জরুরি পরিস্থিতি’র কাজে।

উপকূলীয় এলাকার লোকজন, জনপ্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘জরুরি পরিস্থিতি’র কাজই হলো ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে সোনার হরিণ। এসব কাজে সমানে চলে দুর্নীতি, লুটপাট ও পুকুরচুরি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী- সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদ খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলায় প্রতিবছরই অন্তত ৩০ কোটি টাকার ‘জরুরি পরিস্থিতি’র কাজ করা হয়। তবে এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তাই বিস্তারিত তথ্য জানাতে চাননি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে কোনো প্রকার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ‘জরুরি পরিস্থিতি’র কাজে নিজেদের পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ দেন। আর এ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অংশের টাকা চলে যায় তাদের পকেটে।

বেড়িবাঁধ সংস্কার ও প্রকল্পের নামে চলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা আর ঠিকাদারদের দুর্নীতি ও লুটপাট। কাজে মাটির পরিবর্তে বালু ব্যবহার, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ব্লক ও জিওব্যাগ তৈরি, জিওব্যাগ ডাম্পিং এ গণনায় কারচুপির অভিযোগ স্থানীয়দের। মাঠপর্যায়ের কয়েকজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী ঠিকাদারদের সঙ্গে মিলে এসব কাজে গোপনে অর্থলগ্নি করে বছরের পর বছর ব্যবসা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসবে প্রশাসনের কোনো প্রকার নজরদারি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।

নাগরিক সংগঠন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের দাকোপ উপজেলা সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফা খান বলেন, উপকূলীয় এলাকায় পরিকল্পিত ও স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মিত না হওয়ায় প্রতি বছরই ভাঙন দেখা দেয়। আর বেড়িবাঁধ লাভ হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা আর ঠিকাদারদের।

কারণ, মানুষ তখন জন্মভিটায় টিকে থাকার স্বার্থে স্বেচ্ছাশ্রমে রিং-বাঁধ দেয়, অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এসব কাজের কোটি কোটি টাকা ব্যয় দেখায়।

মোস্তফা অভিযোগ করেন, বেশিরভাগ কাজে মাটির সঙ্গে স্থানীয় নদীর বালু আর লোক দেখানো মানহীন কিছু জিওব্যাগ ফেলেই দায়সারাভাবে এক একটি প্রকল্পের কাজ শেষ করে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হয়। অপরিকল্পিত ও নিম্নমানের কাজের কারণে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে প্রতিবছরই নতুন সংকট তৈরি করছে।

মোস্তফা বলেন, সুন্দরবন ও নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে অব্যাহতভাবে বালু তোলায় ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে। এতে বিলীন হচ্ছে উপকূলীয় নদীপাড়ের বনের অংশ, লোকালয় ও সুন্দরবন এলাকা আরও ঝুঁকিতে পড়ছে। একইভাবে ঝুঁকিতে পড়ছে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধও। অথচ অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের প্রভাবে সৃষ্ট ভাঙন রোধে প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিপুল অর্থ খরচ দেখিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে নদীতীর রক্ষা বাঁধ।

কিন্তু সংস্কারের অল্পদিনেই ফের ধসে পড়ছে সেই বাঁধ। বছর না ঘুরতেই ওই স্থানে আবারও নেয়া হচ্ছে প্রকল্প। এভাবে সরকারের বিপুল অর্থ লুটপাট হচ্ছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ-২ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মশিউল আবেদীন এবং গোপাল কুমার দত্ত এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আসলে কোনো কিছুতে আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা নির্বাহী স্যারদের।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল দাবি করেন, বালুর বস্তা ডাম্পিংয়ের আগে টাস্কফোর্সের সদস্যরা গণনা করে নাম্বারিং করেন। পরে সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ডাম্পিং করা হয়। তবে বালু ও জিওব্যাগের মান নিয়ে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

ছবি

সিকৃবিতে বানরের আক্রমণে শতাধিক ছাত্রী আহত, প্রধান বন সংরক্ষকের সাথে সিকৃবি ভিসির বৈঠক

ছবি

ডেঙ্গু: ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭শ’ জন হাসপাতালে, ৩ জনের মৃত্যু

ছবি

সুন্দরগঞ্জে টিকাদানকারী জনবল সংকট, গবাদিপশু নিয়ে শঙ্কা

ছবি

জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের বেতন-ভাতা চালুর নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের

‘প্রত্যেক মামলায় নাম থাকবে’— সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিককে বিএনপি নেতার হুমকি

ছবি

সিলেট-আখাউড়া রেলপথ: ১৭৯ কিলোমিটারে ১৩টি ‘ডেড স্টপ’

ছবি

ধামরাইয়ে উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৫ জন গ্রেপ্তার

ছবি

যশোরে পৌনে আট লাখ শিশুকে টাইফয়েড টিকা দানের লক্ষ্যমাত্রা

ছবি

টেকনাফে ১৭০ রোহিঙ্গা আটক, ক্যাম্প মাঝিদের হাতে হস্তান্তর

ছবি

জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে মহেশপুরে র‌্যালি ও আলোচনা সভা

ছবি

টাঙ্গাইলে চারাবাড়ী এসডিএস সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক ধসে যানবাহন চলাচল বন্ধ

ছবি

শ্রীনগরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতি আনুমানিক ১০ লাখ টাকা

ছবি

কুড়িগ্রামে পানিবন্দি ৩ হাজার মানুষ, নদীতে ১৬ বাড়ি ও ৪ মসজিদ

ছবি

নড়াইলে পুকুরে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু

ছবি

মানিকগঞ্জে এনজিও কর্মীর মরদেহ উদ্ধার

ছবি

মাগুরায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামগঞ্জে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব

ছবি

প্রকাশ্যে চলছে শোলমারী নদী দখলের মহোৎসব

ছবি

শরণখোলায় মা ইলিশ রক্ষায় মোবাইল কোর্টের অভিযানে

ছবি

সরাইলে তিতাস নদীতে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

ছবি

সড়ক দুর্ঘটনায় হেফাজত নেতার মৃত্যু, কর্মীদের সড়ক অবরোধ

ছবি

ঝালকাঠিতে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত

ছবি

‘সরকার যে টিকা দিচ্ছে তা নিরাপদ’

ছবি

লৌহজংয়ে সরকারি খাসজমি উদ্ধার

ছবি

রামু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব সম্পন্ন

ছবি

যশোরে পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু

ছবি

কিডনি বিকলে জীবনযুদ্ধে নাইমুল

ছবি

১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ১৫ জন

ছবি

পার্বতীপুর মধ্যপাড়া রেঞ্জ বন বিভাগের ১১০০ একর বনভূমি দখল

ছবি

নবাবগঞ্জে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালিত

ছবি

টঙ্গীবাড়ীতে রাস্তা সংস্কারের দাবীতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

ছবি

পাঁচবিবিতে গ্রাম পুলিশদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা

ছবি

গঙ্গাচড়ায় ঘূর্ণিঝড়ের চারদিনেও ফেরেনি বিদ্যুৎ

ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকের মাঝে শীতকালীন সবজি বীজ-সার বিতরণ

ছবি

ঝিনাইগাতীতে কৃষিনীতি বাস্তবায়নের জন্য অ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত

ছবি

বৃদ্ধা নীলিমার দুঃখ ঘুচলো না

ছবি

খানাখন্দে ভরা ঢাকা-পাথরঘাটা মহাসড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

tab

জোয়ারে খুলনায় উচ্চ বেড়িবাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে স্থানীয়রা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা

দাকোপ উপজেলার বটবুনিয়া হরিসভা মন্দির এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত -সংবাদ

বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

খুলনার দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়া হরিসভা মন্দির এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

তিলডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন গাজী জানান, গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বটবুনিয়া বাজারের পাশে হরিসভা মন্দির এলাকার বেড়িবাঁধের প্রায় ২৫ মিটার এলাকায় এ ভাঙন দেখা দেয়। উচ্চ জোয়ারের চাপে মুহূর্তেই ঢাকি নদীসংলগ্ন বাঁধ ভেঙে যায়। আগে থেকে বেড়িবাঁধের জায়গাটি বেশ দুর্বল থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড তা গুরুত্ব দেয়নি।

ইউপি চেয়ারম্যান জালাল বলেন, এতে উত্তর কামিনীবাসিয়া, বটবুনিয়া, নিশানখালী ও আড়াখালী গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি, মৎস্যঘের, পুকুর ও ৩ হাজার বিঘা জমির আমন ফসলের খেত পানিতে তলিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। পরবর্তী জোয়ারগুলো নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

জালাল বলেন, বাঁধ আটকাতে না পারলে দক্ষিণ কামিনীবাসিয়া, ভাদলাবুনিয়া, মশামারী, গড়খালী ও কাকড়া বুনিয়াসহ প্রায় গোটা ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় প্রায়ই তারা বেড়িবাঁধ ভেঙে ক্ষতির মুখে পড়েন। বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া জায়গায় এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমত হোসেন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ পরিবারের মাঝে শুকনো চিড়া, গুড়, চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, বটবুনিয়া হরিসভা মন্দির এলাকার বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশে আগে থেকেই জিও টিউব দেয়া ছিল। তবে তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় উচ্চ জোয়ারের চাপে ২৫ মিটারের মতো জায়গায় বাঁধ ভেঙে যায়।

আশরাফুল বলেন, নতুন করে ‘জরুরি পরিস্থিতি’র সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আশাকরি দ্রুত বাঁধটি মেরামত হয়ে যাবে।

আশরাফুল বলেন, আগে দাকোপের ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারে বিশ্বব্যাংকের ঋণকৃত প্রায় ১৫০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে, যা চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি বাস্তবায়ন করেছে। এছাড়া ৩১ নম্বর পোল্ডারে জাইকার অর্থায়নে প্রায় ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয় ৩ হাজার ৭৫০ মিটার স্থায়ী নদীশাসনের কাজ চলমান রয়েছে। দাকোপের ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে ৩১ নম্বর পোল্ডারের আওতায় পড়েছে পানখালী ও তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন এবং চালনা পৌরসভা।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের কাজের ধীরগতিতে সংকট আরো তীব্র হয়েছে। এতে প্রশাসনেরও কোনো তদারকি নেই।

চলমান প্রকল্পের কাজে ধীরগতি সম্পর্কে আশরাফুল বলেন, বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায় সংস্কার বা মেরামতের প্রস্তবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর তা অনুমোদন হয়ে আসতে সময় লাগে। তাছাড়া উপকূলীয় এলাকায় নির্মাণ কাজের মাটি ও বালুর সংকট রয়েছে। এজন্য কাজে ধীরগতি দেখা দেয়।

আশরাফুল আরও বলেন, ৩১ নম্বর পোল্ডারে ২২ কোটি টাকার একটি মেগাপ্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৪৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ এবং ২০ কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ হবে। একইসঙ্গে ৩১টি ছোট-বড় জলকাপাট সংস্কার ও নির্মাণ করা হবে।

এদিকে এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে সুন্দরবন উপকলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ সংস্কার ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে নেয়া প্রকল্পগুলোর কাজে ধীরগতি, দুর্নীতি ও লুটপাটের চিত্র দেখা যায়। বিশেষকরে ‘জরুরি পরিস্থিতি’র কাজে।

উপকূলীয় এলাকার লোকজন, জনপ্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘জরুরি পরিস্থিতি’র কাজই হলো ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে সোনার হরিণ। এসব কাজে সমানে চলে দুর্নীতি, লুটপাট ও পুকুরচুরি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী- সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদ খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলায় প্রতিবছরই অন্তত ৩০ কোটি টাকার ‘জরুরি পরিস্থিতি’র কাজ করা হয়। তবে এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তাই বিস্তারিত তথ্য জানাতে চাননি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে কোনো প্রকার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ‘জরুরি পরিস্থিতি’র কাজে নিজেদের পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ দেন। আর এ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অংশের টাকা চলে যায় তাদের পকেটে।

বেড়িবাঁধ সংস্কার ও প্রকল্পের নামে চলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা আর ঠিকাদারদের দুর্নীতি ও লুটপাট। কাজে মাটির পরিবর্তে বালু ব্যবহার, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ব্লক ও জিওব্যাগ তৈরি, জিওব্যাগ ডাম্পিং এ গণনায় কারচুপির অভিযোগ স্থানীয়দের। মাঠপর্যায়ের কয়েকজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী ঠিকাদারদের সঙ্গে মিলে এসব কাজে গোপনে অর্থলগ্নি করে বছরের পর বছর ব্যবসা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসবে প্রশাসনের কোনো প্রকার নজরদারি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।

নাগরিক সংগঠন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের দাকোপ উপজেলা সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফা খান বলেন, উপকূলীয় এলাকায় পরিকল্পিত ও স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মিত না হওয়ায় প্রতি বছরই ভাঙন দেখা দেয়। আর বেড়িবাঁধ লাভ হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা আর ঠিকাদারদের।

কারণ, মানুষ তখন জন্মভিটায় টিকে থাকার স্বার্থে স্বেচ্ছাশ্রমে রিং-বাঁধ দেয়, অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এসব কাজের কোটি কোটি টাকা ব্যয় দেখায়।

মোস্তফা অভিযোগ করেন, বেশিরভাগ কাজে মাটির সঙ্গে স্থানীয় নদীর বালু আর লোক দেখানো মানহীন কিছু জিওব্যাগ ফেলেই দায়সারাভাবে এক একটি প্রকল্পের কাজ শেষ করে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হয়। অপরিকল্পিত ও নিম্নমানের কাজের কারণে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে প্রতিবছরই নতুন সংকট তৈরি করছে।

মোস্তফা বলেন, সুন্দরবন ও নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে অব্যাহতভাবে বালু তোলায় ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে। এতে বিলীন হচ্ছে উপকূলীয় নদীপাড়ের বনের অংশ, লোকালয় ও সুন্দরবন এলাকা আরও ঝুঁকিতে পড়ছে। একইভাবে ঝুঁকিতে পড়ছে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধও। অথচ অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের প্রভাবে সৃষ্ট ভাঙন রোধে প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিপুল অর্থ খরচ দেখিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে নদীতীর রক্ষা বাঁধ।

কিন্তু সংস্কারের অল্পদিনেই ফের ধসে পড়ছে সেই বাঁধ। বছর না ঘুরতেই ওই স্থানে আবারও নেয়া হচ্ছে প্রকল্প। এভাবে সরকারের বিপুল অর্থ লুটপাট হচ্ছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ-২ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মশিউল আবেদীন এবং গোপাল কুমার দত্ত এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আসলে কোনো কিছুতে আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা নির্বাহী স্যারদের।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল দাবি করেন, বালুর বস্তা ডাম্পিংয়ের আগে টাস্কফোর্সের সদস্যরা গণনা করে নাম্বারিং করেন। পরে সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ডাম্পিং করা হয়। তবে বালু ও জিওব্যাগের মান নিয়ে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

back to top